• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ভারতের ডিআরডিও এক প্রযুক্তি সাম্রাজ্য
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি বিপ্লব
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ভারতের ডিআরডিও এক প্রযুক্তি সাম্রাজ্য

ডিআরডিও। পুরো কথায় ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’। এ যেনো এক প্রযুক্তি সাম্রাজ্য। ভারতজুড়ে রয়েছে এর ৫২টি গবেষণাগার। এগুলোতে কাজ করছেন ৭ হাজার বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ। এর মূল দর্শন হচ্ছে, ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে স্বনির্ভর করে তোলা। এর বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদেরা কাজ করছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এর মধ্যে আছে বিমানবিদ্যা, যুদ্ধযানবিদ্যা, জীববিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান, রোবটবিদ্যা, নৌযানবিদ্যা ও ন্যানোটেকনোলজি।



এ প্রযুক্তি সাম্রাজ্যের তৈরি হাল্কা যুদ্ধবিমান ‘তেজাস’ আকাশে ভারতের স্বাক্ষর। এমনটিই দাবি করলেন ডিআরডিও’র লাইফ সায়েন্স বিভাগের প্রধান নিয়ন্ত্রক ডব্লিউ সিলভামূর্তি। গত ১০ জানুয়ারি, ২০১১ হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকসের এয়ারফিল্ডে স্বদেশে তৈরি তেজাস আকাশে ওড়ানোর সময় সমবেত শত শত মানুষের মাঝে তিনি একথা বলেন। তেজাস আকাশে বিলীন হয়ে গেলে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ.কে. অ্যান্টনি সে দেশের চিফ অব এয়ার স্টাফ এয়ার চিফ মার্শাল পি.ভি. নায়েকের কাছে ‘সার্টিফিকেট অব রিলিজ টু সার্ভিস’ হস্তান্তর করেন। এর মাধ্যমে হিন্দুস্থান অ্যারোনটিকস লিমিটেড বিশ্বের সবচেয়ে হাল্কা যুদ্ধবিমান তৈরি করতে সক্ষম হলো। যেকোনো ভারতীয়ের জন্য নিশ্চিতভাবেই এটি একটি আনন্দের বিষয়।

ভারতীয় প্রযুক্তির ফসল

সিলভামূর্তি বলেছেন, ‘তেজাস আমাদের প্রযুক্তির ফসল। এর অর্থ আমরা যেকোনো সময় এর মানোন্নয়ন করতে পারি।’ ভারতীয় বিমানবাহিনী এরই মধ্যে ৪০টি তেজাস বিমানের ক্রয়াদেশ দিয়েছে। এর প্রতিটি নির্মাণ করতে খরচ হবে ১৮০ কোটি ভারতীয় রুপি। ডিআরডিও এরই মধ্যে তেজাসের ২ আসনবিশিষ্ট প্রশিক্ষণ সংস্করণ তৈরি করেছে। কাজ চলছে এর নৌবাহিনী সংস্করণ তৈরির। তা ছাড়া ভারতের অ্যারোনটিকস ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিতে কাজ চলছে সে দেশের নিজস্ব অগ্রসরমানের মাঝারি যুদ্ধবিমান তৈরির। গত বিশ বছর ধরে ডিআরডিও’র বিভিন্ন ল্যাবরেটরি একসাথে কাজ করে এই তেজাস নির্মাণে সফল হলো।

এদিকে গত ২৪ এপ্রিল ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অনেকটা গোপনে ইউসিএভি তথা ‘আনম্যান্ড কমব্যাট এয়ারিয়েল ভেহিকল’ নির্মাণের পর ভারত চাইছে সৌরশক্তিচালিত গোয়েন্দা ড্রোন বিমান নির্মাণ করতে। এই ড্রোন বিমান এক উড্ডয়নে আকাশে ১৫ দিন উড়ে গোয়েন্দাকর্ম চালাতে সক্ষম হবে। সৌরবিদুৎচালিত এই HALE তথা ‘হাই-অলটিচ্যুড লং এনডুরেন্স’ মানববিহীন বিমান শুধু ভারতের কার্বন ফুটপ্রিন্টই কমিয়ে আনবে না, সেই সাথে ভারতকে দেবে নমনীয় ২৪x২৭ আইএসটিএআর তথা ‘ইন্টেলিজেন্স সার্ভিল্যান্স টার্গেট অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড রিকনেইস্যান্স’ ও ব্যয়সাশ্রয়ের সুযোগ। এটি যেনো একটি নকল উপগ্রহের মতো ভূপৃষ্ঠের সামান্য ওপর দিয়ে ঘুরে বেড়াবে। ডিআরডিও’র প্রধান নিয়ন্ত্রক ড. প্রহ্লাদ বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনী আমাদের বলেছে এ ড্রোন বিমান তৈরি করে দিতে। এর প্রাথমিক কাজ এগিয়ে চলেছে। এ বিমান ৩০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে একনাগাড়ে ১৫ দিন উড়তে সক্ষম। ভারত এ ড্রোন বিমান এমন সময় নির্মাণ করতে যাচ্ছে, যখন বেশ কয়েকটি বড় আন্তর্জাতিক বিমান নির্মাতা কোম্পানি মানববিহীন বিমান নির্মাণের ব্যাপারে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন বোয়িং কোম্পানি তৈরি করতে যাচ্ছে ৪০০ ফুট উইং স্প্যানের মানববিহীন বিমান। এর নাম ‘সোলার ঈগল’। এ বিমান একটানা ৫ বছর উড়তে সক্ষম। ডিআরডিও ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য এ ধরনের বিমান তৈরির বেশ কয়েকটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ভারতের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি Rustom-H MALE নামের মিডিয়াম-অল্টিচ্যুড লং-এনডুরেন্স বিমান তৈরির জন্য ডিআরডিও’র অনুকূলে ১৫০০ কোটি ভারতীয় রুপি বরাদ্দ দিয়েছে। আরো ছোট আকারের এ ধরনের বিমান রুস্তম-১ বিমান নির্মাণের পরিকল্পনাও তাদের মাথায় আছে। ভারতীয় প্রযুক্তিবিদেরা এ নিয়ে কাজ করছেন।

রোবট সৈনিক

‘আমরা আয়ত্ত করেছি চমৎকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি। আর আমাদের এ প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যান্য দেশর সমতুল্য’ বলেন ব্যাঙ্গালোরের ‘সেন্টার ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রোবটিকস’-এর ডিরেক্টর ভি.এস. মহালিঙ্গম। এ কেন্দ্রের কর্মকান্ডের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে : কমিউনিকেশন ও নেটওয়ার্কিং, কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম, কমিউনিকেশন সিক্রেসি এবং ইনফরমেশন সিকিউরিটি ও ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম। তা ছাড়া এ কেন্দ্র আরো কাজ করে এনক্রিপশন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, নিউরাল নেটওয়ার্ক, কমপিউটার ভিশন, সিগন্যাল প্রসেসিং, রোবটিক ও ভার্চু্যয়াল রিয়েলিটির ওপর।

এ কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর বিএম শিবশঙ্কর বলেন, এ কেন্দ্রের গবেষণাগারে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হচ্ছে ‘ফিউচারিস্টিক ইনফেন্ট্রি সোলজার এজ অ্যা সিস্টেম (এফআইএনএসএএস)-এর জন্য। এখানে সফটওয়্যার তৈরি করে সোলজারকে সুসজ্জিত করেছে সি৪আই (কমান্ড, কন্ট্রোল, কমিউনিকেশন, কমপিউটার এবং ইন্টেলিজেন্স) দিয়ে। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম ইন্ডিপেনডেন্ট সফটওয়্যার। এই কেন্দ্র উদ্ভাবন করেছে একটি ‘ব্যাটলফিল্ড ইনফরমেশন সিস্টেম’। এই সিস্টেম যুদ্ধক্ষেত্রের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে ফোর্স কমান্ডারকে জানিয়ে দেয়। এখানে উদ্ভাবন করা হয়েছে একটি কমপিউটার, যা সৈনিকদের কোমড়ে বেঁধে রাখা হয়, আর এর কীপ্যাড থাকে হাতের কব্জিতে। এ কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা ৭৫০ গ্রাম ওজনের ডেস্কটপ কমপিউটারও উদ্ভাবন করেছেন। তা ছাড়া নৌসেনাদের ওয়্যারলেস কথাবার্তা সংরক্ষণের জন্য এর সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞেরা উদ্ভাবন করেছেন একটি ‘সিকিউর ডাটা অ্যাডাপ্টার’। এ কেন্দ্রের বিজ্ঞানী এস রাজা জানিয়েছেন, এরা মাত্র ১১ মাসে এই ডিভাইসটি উদ্ভাবন করেছেন।

এ কেন্দ্র আরো উদ্ভাবন করেছে আর্টিলারি কমান্ড, কন্ট্রোল অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ও কমান্ড, ইনফরমেশন ও ডিসিশন-সাপোর্ট সিস্টেম। একটি রোবট প্রহরী হেঁটে বেড়ায় এ কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে। এটি প্রাঙ্গণের লোকজনের ওপর নজর রাখছে। আর এর ফিডব্যাক পাঠায় এর নির্মাতা সারতাজ সিংয়ের কাছে। এ কেন্দ্র একটি রোবট বানিয়েছে পারমাণবিক চুল্লি এলাকায় অতিমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য। তা ছাড়া এখানে তৈরি হচ্ছে অটোনোমাস রোবট। এগুলো তাদের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগাতে পারবে। একটি হচ্ছে ম্যান-পোর্টেবল রোবট। এটি নিজে নিজে চিন্তা করতে পারে, উঁচু-নিচু দেখে চলতে পারে, সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে পারে এবং ফিডব্যাক দিতে পারে। দ্বিতীয় আরেকটি রোবট পরিবহন করা যায় গাড়িতে করে। এটি সামনে থাকা কোনো বাধা চিহ্নিত করতে পারে। তৃতীয়টি হচ্ছে ওয়াল ক্লাইম্বিং রোবট। এটি ব্যবহার করা যাবে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে। আছে স্নেইক রোবট। এটি আবর্জনা দিয়ে সাপের মতো গড়িয়ে চলতে পারে। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসসত্মূপের নিচ দিয়ে চলে কেউ বেঁচে থাকলে তাকে উদ্ধারের সঙ্কেত দিতে পারে।

ডিআরডিও’র ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি

ডিআরডিও’র মিসাইল প্রোগ্রাম যেমনি সামরিক অভিযান জোরালো করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, তেমনি এর রয়েছে কৌশলগত লক্ষ্যও। আর সে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে যাচ্ছে। এর অগ্নি-১, অগ্নি-২, অগ্নি-৩ এবং পৃথ্বি আর এর ভিন্নরূপ ধনুশ ও পৃথ্বি-২ এগুলো সবই স্ট্র্যাটেজিক মিসাইল। এগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম। এগুলোকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অগ্নি-২-এর রেঞ্জ বা পাল্লা ২৫০০ কিলোমিটার। অগ্নি-১ সাতশ কিলোমিটারেরও বেশি। আর অগ্নি-৩-এর পাল্লা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার। অগ্নি-৫-এর মেইডেন লাঞ্চ হবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এবং এর পাল্লা হবে ৫ হাজার কিলোমিটার।

ব্রাহমস (BrahMos) উদ্ভাবন করেছে ভারত ও রাশিয়া যৌথভাবে। এটি বিশ্বের একমাত্র সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল। এটি ভূমি কিংবা যুদ্ধজাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এর ভিন্ন সংস্করণ যেটি করা হচ্ছে, সেটি নিক্ষেপ করা যাবে সাবমেরিন কিংবা যুদ্ধবিমান থেকে। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে অ্যাডভান্সড গাইডেন্স ও আপডেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্রাহমসের ২৪তম নিক্ষেপণ অনুষ্ঠিত হয়। পাহাড় এলাকার যুদ্ধে যথার্থ লক্ষ্যে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সক্ষমতা এর মাধ্যমে সুপ্রমাণিত হয়।

ডিআরডিও’র ইন্টারসেপ্টর মিসাইল মিশনও সফল প্রমাণ হয়েছে। এর এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল ‘অস্ত্র’ উদ্ভাবনের অগ্রসর পর্যায়ে। ভূমি থেকে এর ফ্লাইট টেস্ট সফল হলে এর ক্যারেজ ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হবে। ডিআরডিও সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ত্র’র দুটি নতুন সংস্করণ উদ্ভাবন করবে। ‘অস্ত্র মার্ক ওয়ান’ হবে ৪০ কিলোমিটার পাল্লার এবং ‘অস্ত্র মার্ক টু’ হবে ১০০ কিলোমিটার পাল্লার। তৃতীয় প্রজন্মের অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ‘নাগ’ সাম্প্রতিক ফ্লাইটে ভালো ফলাফল দিয়েছে। খুব শিগগির ভারতীয় সেনাবাহিনী তা গ্রহণ করবে। ডিআরডিও এখন কাজ করছে NAMICA (Nag Missile Czrrier)-এর ওপর। এটি একটি মডিআইড বিএমপি ইনফেন্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল, যা থেকে নাগ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা যাবে।

‘প্রটেক্ট দ্য প্রটেক্টর’- এই হচ্ছে ডিআরডিও’র ব্যাঙ্গালোরের বায়োইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ল্যাবরেটরির দর্শনবাক্য। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন এর ডিরেক্টর খি সি পাদকি এর উদ্ভাবিত পণ্যতালিকা তুলে ধরেন। এর মধ্যে আছে : ডুবে যাওয়া সাবমেরিনারদের রক্ষার পোশাক, অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি স্যুট, পোর্টেবল টেলিমেডিসিন সিস্টেম, ও এমনি আরো অনেক কিছু। এ ল্যাবরেটরি ভারতের অন্যান্য ইনস্টিটিউটের সাথে মিলে উদ্ভাবন করেছে রোগীদের জন্য একটি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ভেন্টিল্যাটর। এর দাম ৫ লাখ রুপি। এটি আমদানি করলে খরচ হতো ১০ লাখ রুপি।

বৈচিত্র্যময় উদ্ভাবন

মোটকথা স্বনির্ভর ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দর্শন নিয়ে ডিআরডিও মাঠে নেমেছে। তা কতটুকু সফলতা পেয়েছে, তা পরিসংখ্যানই বলে দেবে। শুধু বিগত ৫ বছরে ডিআরডিও যেসব সিস্টেম ডেভেলপ করেছে, তার অনুমিত উৎপাদন মূল্য ১ লাখ কোটি ভারতীয় রুপি। এসব সিস্টেমের মধ্যে আছে বেশ কয়েক ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র; মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক অর্জুন মার্ক-১; হাল্কা যুদ্ধবিমান তেজাস; পারমাণবিক, জৈবিক ও রাসায়নিক (পাজৈরা) যুদ্ধাস্ত্র; প্রতিরক্ষা-প্রযুক্তি; রাডার; সাবমেরিন ও অন্যান্য ডুবে থাকা বস্ত্ত চিহ্নিত করার যন্ত্র সোনার; রাইফেল; সাবমেশিন গান; আর্মার্ড অ্যাম্বুলেন্স; রোবট; ইনফেনট্রি কমব্যাট ভেহিকল; টর্পেডো; পোর্টেবল সিটকম টার্মিনাল; ভাইরাসরোধী কিট; প্যারাস্যুট; অ্যান্টি-ফউলিং পেইন্ট; অ্যান্টি-একজিমা ক্রিম; সৈনিকদের ‘রেডি-টু-ইট ফুড’, মশারোধী হার্বাল এবং আরো কত কী।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও ডিআরডিও’র ডিরেক্টর জেনারেল ভি. কে. সরস্বত বলেছেন, ‘আমাদের উদ্ভাবিত ও উৎপাদিত পণ্যবৈচিত্র্য খুবই সুপরিসর। কৃষিপণ্য থেকে শুরু করে অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র ও হাল্কা যুদ্ধবিমান- সবই আছে আমাদের পণ্যতালিকায়। তবে আমাদের সুনির্দিষ্ট মূল ব্যবহারকারী হচ্ছে সশস্ত্রবাহিনী। ডিআরডিও সবক্ষেত্রে ছাপ রাখতে পেরেছে।’

ডিআরডিও এ পর্যন্ত ১ লাখ কোটি রুপির বিভিন্ন ধরনের সিস্টেম উদ্বাবন করেছে, তার মধ্যে ৬০০ কোটি মূল্যমানের সিস্টেম কাজে লাগানো হয়েছে পাজৈরা যুদ্ধাস্ত্রের ক্ষেত্রে। সরকারি-বেসরকারি উভয় শিল্প খাতেই ডিআরডিও উদ্ভাবিত এসব পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। পাজৈরা যুদ্ধ মোকাবেলা করতে চাইলে একটি দেশকে চারটি ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে হয়। এ ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে : ০১. দ্রুত ও সুষ্ঠু তথ্য পাঠিয়ে স্বল্প সময়ে সাড়া পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারসহ প্রমিত পরিচালনা পদ্ধতি গড়ে তোলা; ০২. পাজৈরা যুদ্ধাস্ত্রের এজেন্টগুলো চিহ্নিত করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তোলা; ০৩. পাজৈরা যুদ্ধাস্ত্রের শিকার এলাকা থেকে লোকজন সরিয়ে নেয়া ও সংক্রমণ অকার্যকর করে দেয়ার সক্ষমতা অর্জন এবং ০৪. পাজৈরা যুদ্ধ থেকে সৃষ্ট বিপর্যয় ঠেকানোর উপযোগী চিকিৎসাপ্রযুক্তি আয়ত্ত করা, যাতে করে এ ধরনের বিপর্যয়ের সময় কার্যকরভাবে সামরিক ও বেসামরিক লোকদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়। ভারতের ডিআরডিও এ চারটি ক্ষেত্রেই অবদান রেখে চলেছে। ভারতের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি একটি গাইডলাইন সূত্রায়ন করেছে পাজৈরা যুদ্ধ লেগে গেলে এর বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য। তিনটি ডিআরডিও ল্যাবরেটরি- নয়াদিল্লির ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্সেস, গোয়ালিয়রের ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট (ডিআরডিই) এবং যোধপুরের ডিফেন্স ল্যাবরেটরি প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সেই সব লোককে, যারা পাজৈরা যুদ্ধের সময় এ ধরনের যুদ্ধে আক্রান্ত এলাকা চিহ্নিত করবে, লোকজন সরিয়ে নেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকবে, তাদের রক্ষা করবে পাজৈরা অস্ত্রের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা দেবে। ডিআরডিও উদ্ভাবন করেছে বেশ কয়েক ধরনের ডিটেকশন সিস্টেম। এসবের মাঝে আছে রোয়েন্টজেনোমিটার, পারমাণবিক বিকিরণের মাত্রা পরিমাপের জন্য পকেট ডোসিমিটার, গামা বিকিরণ পরিমাপের জন্য রেডিয়েশন ডিটেকশন মেজারমেন্ট অ্যান্ড কন্ট্রোল (আরএডিএমএসি) ইউনিট নামের একটি পারমাণবিক যন্ত্র এবং পারমাণবিক বিস্ফোরণের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য একটি গামা ফ্ল্যাশ সেন্সর। এটি উদ্ভাবন করেছে একটি বহনযোগ্য গ্যাস ক্রমেটোগ্রাফ, যা একই সাথে ২০ ধরনের রাসায়নিক এজেন্ট চিহ্নিত করতে পারে। এ ছাড়া ডিআরডিও উদ্ভাবন করেছে একটি নার্ভ এজেন্ট ডিটেকটরও- এটি তিনরঙা সাধারণ কাগজ। যেকেউ এটি ব্যবহার করতে পারবেন। সৈনিকদের শুধু এ কাগজটা আটকে রাখতে হবে তাদের পোশাকে। কোনো নার্ভ এজেন্টের উপস্থিতি পেলেই এ কাগজের রং বদলাবে। ডিআরডিও উদ্ভাবন করেছে (এইচ১এন১) সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, অ্যানথ্রাক্স, লেপটোস্পিরোসিস, ডেঙ্গু ও প্ল্যাগ চিহ্নিত করার ব্যয়সাশ্রয়ী ক্ষুদ্র যন্ত্র। এসব সরল ও সংবেদনশীল যন্ত্রপাতি যেমনি ব্যবহার করতে পারবে সৈনিকেরা, তেমনি গ্রামের সাধারণ মানুষও। ডিআরডিই উদ্ভাবন করেছে সোয়াইন ফ্লু ডিটেকটর কিট। ডিআরডিও পরিচালক আর. বিজয়রঙ্গবান এ কিটকে অভিহিত করেছেন একটি ‘পাওয়ারফুল টুল’ হিসেবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্ভাবিত প্রচলিত কিটের তুলনায় এটি অনেক বেশি শক্তিশালী। ডিআরডিও কিটে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়নি তা ঠিক, কিন্তু এতে ব্যবহার করা হয়েছে RT-LAMP তথা ‘রিভার্স ট্রানস্ক্রিপশন-লুপ-মেডিয়েটেড আইসোথারমাল অ্যামপ্লিফিকেশন’ নামের একটি কৌশল। উল্লিখিত দুটি কিট দিয়ে এক হাজারেরও বেশি নমুনা বিশ্লেষিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিটে যা ধরা পড়েনি, ডিআরডিও কিটে তা ধরা পড়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মডার্ন রিসার্চ (আইসিএমআর) এ ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিটের দাম ৮ হাজার রুপি এবং এ থেকে পরীক্ষার ফল পেতে সময় নেয় ৮-১০ ঘণ্টা। আর ডিআরডিও উদ্ভাবিত কিটের দাম ১৫০০ রুপি এবং এর মাধ্যমে পরীক্ষার ফল পাওয়া যায় মাত্র এক ঘণ্টায়। এ প্রযুক্তি স্থানান্তরিত হয়েছে ব্যাঙ্গালোরের বিগটেক ল্যাবরেটরিতে। এ ল্যাবরেটরি নিয়ে এসেছে একটি এ কিটের সরলাকায়িত ‘রেডি-টু-গো’ বা ‘কাজের-জন্য-প্রস্ত্তত’ সংস্করণ। এ সংস্করণটি নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে ব্যাঙ্গালোরের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস’, নয়াদিল্লির ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কমিউনিকেবল ডিজিজ’ এবং এবং চন্ডীগড়ের ‘পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এ। এসব পরীক্ষা এগিয়ে চলেছে এবং পরীক্ষা থেকে ডিআরডিও কিট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কিটের মধ্যে আমত্মঃসম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে। এ কিট চূড়ান্ত ছাড়ের আগে আইসিএমআর-এর ডিরেকটরের সব জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে বের করা হচ্ছে।

ডিআরডিও উদ্ভাবন করেছে একটি বায়ো-টয়লেট বা জৈব-পায়খানা। এটি এখন উৎপাদন করছে একটি বেসরকারি কোম্পানি। কিছুদিন আগে দিল্লিতে যে কমনওয়েলথ গেম হয়ে তাতে এ টয়লেটের জনপ্রিয় ব্যবহার চলেছে। ডিআরডিও এটি মূলত তৈরি করে বরফময় উঁচু পাহাড়ে নিয়োজিত সৈনিকদের জন্য। এই টয়লেটে ব্যবহার হয় একটি ব্যাকটেরিয়েল কনসোর্টিয়াম, যা মানববর্জ্যকে রূপান্তর করবে কার্বন ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন, মিথেন ও পানিতে। ভারতের ট্রেনের কোনো কোনো কোচে এই টয়লেট বসানো হয়েছে। লাক্ষাদ্বীপ প্রশাসন লাক্ষাদ্বীপ, কাভারাত্তি ও বাসগারাম দ্বীপে এ ধরনের ২১টি টয়লেট বসিয়েছে। এই প্রশাসন এ ধরনের ১০ হাজার টয়লেটের অর্ডার দিয়েছে। ডিআরডিও অ্যাডিস মশা দমনের জন্য উদ্ভাবন করেছে একটি লার্ভাসাইড। এই মশা ডেঙ্গুজ্বর ছড়ায়। সাধারণত লার্ভাসাইড পুকুর, হ্রদ ও অন্যান্য জলাধারে ফেলা হয় মশার বাচ্চা ফোটানো রোধের জন্য। কিন্তু ডিআরডিও আরো এগিয়ে গেছে। ফেরোমোন স্ত্রীমশাকে আকর্ষণ করে ডিম পাড়ার জন্য। ডিআরডিও ফেরোমোনকে বিশ্লেষণ করে একীভূত করেছে লার্ভাসাইডের সাথে। ফলে এটি এখন আর শুধু লার্ভাসাইড নয়, সেই সাথে অ্যাট্রাসাইডও। এটি স্ত্রীমশাকে আকর্ষণ করে ফাঁদে আটকে মেরে ফেলে।

ডিআরডিও উদ্ভাবন করেছে একটি আয়রন রিমোভাল ইউনিট (আইআরইউ)। এটি লোহামিশ্রিত পানিতে থাকা লোহা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী সরিয়ে দিতে পারে। ইউনিটটি সিলিন্ডার আকারের ও লম্বায় ১.৭৫ মিটার। এটি স্থাপন করাও সহজ। এটি এক ঘণ্টায় ৩০ লিটার বিশুদ্ধ পানি জোগাতে পারে। সেনাব্যারাক ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারী ছোট্ট জনগোষ্ঠীর জন্য এটি উপযোগী।

ব্যাঙ্গালোরের ‘ডিফেন্স বায়োইঞ্জিনয়ারিং অ্যান্ড ইলেকট্রোকেমিক্যাল ল্যাবরেটরি (ডিইবিইএল)’ উদ্ভাবন করেছে একটি অনন্য ‘অন-বোর্ড অক্সিজেন জেনারেশন সিস্টেম (ওবিওজিএস)’। বিভিন্ন উচ্চতায় যুদ্ধবিমানের পাইলটকে এটি অক্সিজেন সরবরাহ করতে সক্ষম। প্রবল অভিকর্ষবলের চাপে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার হাত থেকেও পাইলটদের এটি বাঁচাতে পারে। চাহিদামতো এ থেকে অক্সিজেন পাওয়া যাবে। ওবিওজিএস হবে যুদ্ধবিমানের পাইলটদের ইন্টিগ্রেটেড লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের একটি অংশ। শিগগিরই তেজাসের গ্রাউন্ড ট্রায়ালের সময় ওবিওজিএস পরীক্ষা করে এটি এর সাথে সমন্বিত করা হবে। এই ব্যবস্থা কাস্টমাইজ করা হবে সুখয়-৩০, জাগুয়ার, মিরেজ-২০০০ ও মিগ-২৯-এর সাথে সমন্বিত করার জন্য। ভারতীয় বিমানবাহিনী নিশ্চিতভাবে তা কাজে লাগাবে, কারণ আমদানি করা সংস্করণের তুলনায় এতে খরচ কম।

ডিআরডিও উদ্ভাবন করেছে একটি আনম্যান্ড এয়ারিয়েল ভেহিকল (ইউএভি) তথা মানববিহীন বিমান ‘নিশান্ত’ এবং একটি চালকবিহীন টার্গেট এয়ারক্র্যাফট ‘লক্ষ্য’। উভয় ধরনের বিমানই এখন উৎপাদনের পর্যায়ে। এগুলো ব্যবহার হবে যুদ্ধক্ষেত্র প্রহরা, পরিদর্শন-পরিক্রমা, লক্ষ্য চিহ্নিত করা ও গোলাবর্ষণ যথাযথভাবে করার কাজে। নিশান্ত একটানা সাড়ে ৪ ঘণ্টা উড়তে পারবে। ডিআরডিও গর্বিত এর চালকবিহীন বিমান ‘বিহঙ্গনেত্র’র জন্য। এ বিমান মনিটর করতে পারবে বরফঢাকা প্রত্যন্ত এলাকা ও হিমবাহ। ডিআরডিও’র সর্বসাম্প্রতিক চালকবিহীন বিমান হচ্ছে রুস্তম-১। এটি মাঝারি উচ্চতার দীর্ঘ দহনসহিষ্ণু বিমান। ২০১০ সালের অক্টোবরে এর পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করা হয়। রুস্তম-১ পঁচিশ হাজার মাইল উচ্চতায় ৭৫ কেজি ভার বহন করে একটানা ১৫ ঘণ্টা আকাশে উড়তে পারে। এটি আরো আধুনিক আনম্যান্ড কমব্যাট এয়ারিয়াল ভেহিকল রুস্তম-এইচ’র পূর্ববর্তী সংস্করণ।

নৌযুদ্ধ খুবই জটিল ও ব্যাপকভাবে প্রযুক্তিনির্ভর। সেজন্য ডিআরডিও কোচিতে অবস্থিত ন্যাভাল ফিজিক্যাল ওসেনোগ্রাফিক ল্যাবরেটরি, বিশাখাপওমের ন্যাভাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি এবং মুম্বাইয়ের লাগোয়া অমরনাথের ন্যাভাল ম্যাটেরিয়েলস রিসার্চ ল্যাবরেটরির কর্মকা এগুলো উদ্ভাবন করেছে একটি অ্যান্টি-সাবমেরিন টর্পেডো ‘টর্পেডো অ্যাডভান্সড লাইট (টিএএল)’। এটি জাহাজ বা হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপ করা যায়। এর গতি ঘণ্টায় ৩৩ নটিক্যাল মাইল। এর রয়েছে একটি প্যারাস্যুট ব্যবস্থা ও একটি স্টেট-অব-দ্য-আর্ট সেন্সর প্যাকেজ। এসবই ভারতে দেশীয়ভাবে তৈরি এবং সাগরে ব্যবহারে সুপ্রমাণিত।

‘বরুণাস্ত্র‘ হচ্ছে জাহাজ থেকে নিক্ষেপের একটি অ্যান্টি-সাবমেরিন টর্পেডো। এতে রয়েছে বৈদ্যুতিক প্রপালশন ও অগ্রসর মানের গাইডেন্স অ্যালগরিদম। এটি দূরপাল্লার উপযোগী ভয়াবহ এক যুদ্ধাস্ত্র। এর গতি ঘণ্টায় ৪০ নটিক্যাল মাইল। সোনার হচ্ছে সাবমেরিনের অবস্থান জানার যন্ত্র। হংস, নগন, উশুস ও মাচেন্দ্র নামের সোনারযন্ত্র উদ্ভাবন করে ডিআরডিও ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনে লাগিয়েছে। তা ছাড়া ভারত প্রথমবারের মতো দেশীয়ভাবে তৈরি করে যুদ্ধজাহাজে ব্যবহার করছে ‘অ্যাডভান্সড পেনোরমিক সোনার হাল মাউন্টেড সোনার সিস্টেম’।

আগ্রা সেনানিবাসের ‘এরিয়েল ডেলিভারি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট’ সৈনিকদের উপযোগী বিভিন্ন ধরনের প্যারাস্যুট, গান, হামলা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও এমনকি চালকবিহীন বিমান উদ্ধারের কাজে ব্যবহারের অস্ত্র তৈরিতে একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। এখানে তৈরি করা সম্ভব হয়েছে বিশেষ ধরনের কিছু প্যারাস্যুট। ২০০৭ সালে ভারতের মহাকাশ সংস্থার পুনরুদ্ধারযোগ্য স্যাটেলাইট মিশনে এ ধরনের তিনটি প্যারাস্যুট তৈরি করে ব্যালে নৃত্যের মতো এক আবহ। এসব প্যারাস্যুট ব্যবহার করে উপগ্রহ যথাযথভাবে বঙ্গোপসাগরে নামিয়ে আনা হয়।

আগ্রার এই এস্টাবলিশমেন্ট লাইটার-দেন-এয়ার টেকনোলজিতে বৈচিত্র্য এনে উদ্ভাবন করেছে ছোট ও মাঝারি আকারের এয়ারোস্টেট। এয়ারোস্টেট হচ্ছে এমন বিমান, যাতে ব্যবহার করা হয় এক বা একাধিক কন্টেইনার। আর এ কন্টেইনারগুলো ভর্তি থাকে বায়ুর চেয়ে হাল্কা গ্যাস দিয়ে বিমানের ওজন কমানোর জন্য। ভারতের উদ্ভাবিত এয়ারোস্টেট হিলিয়াম গ্যাসভর্তি গ্যাসাধার বা কন্টেইনার নিয়ে ২০১০ সালে দিল্লি ও আগ্রার ওপর দিয়ে সফল উড্ডয়ন সম্পাদন করে। এই এয়ারোস্টেট সহায়ক হবে আধাসামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক ক্ষেত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়। রয়েছে একটি ‘কমব্যাট ফ্রি ফল সিস্টেম’, যা সহায়ক হবে অতি উঁচু স্থান থেকে লাফ দিয়ে নিচে নামা, স্বল্প দূরত্বে উড়ে যাওয়া কিংবা সুনির্দিষ্ট কোনো স্থানে নামানোর ক্ষেত্রে। এতে আছে একটি র্যা ম-জেট প্যারাস্যুট, একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার, জাম্পস্যুট, কমিউনিকেশন সিস্টেম ও নেভিগেশনের যন্ত্রপাতি।

পুনেতে রয়েছে ডিআরডিও’র তিনটি ল্যাবরেটরি : রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট (ইঞ্জিনিয়ারিং), আর্মামেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট এবং হাই এনার্জি ম্যাটেরিয়েলস রিসার্চ ল্যাবরেটরি। এই তিনটি ল্যাবরেটরি উদ্ভাবন করেছে মাল্টি-ব্যারেল রকেট লাঞ্চিং সিস্টেম ‘পিনাকা’, ৭২ মিটার লম্বা ও ২৫ মিটার চওড়া সেতু দেড় ঘণ্টায় তৈরি করার ব্যবস্থা ‘সর্বত্র’, ব্যাটল ট্যাঙ্ক ও ট্রাক নদী পার করার উপযোগী ‘এম্পিবিয়াস ফ্লয়েটিং ব্রিজ অ্যান্ড ফেরি সিস্টেম (এএফএফএস), ব্রিজ-লেয়িং ট্যাঙ্ক (বিএলটি), ইন্ডিয়ান স্মল আর্মস সিস্টেম (আইএনএসএএস) রাইফেল, মিসাইলের প্রফেলেন্ট ও গোলা, রকেট আর ব্যাটেল ট্রাঙ্ক। ভারতীয় সেনাবাহিনী এরই মধ্যে কিনে নিয়েছে ১০ লাখেরও বেশি আইএনএসএএস রাইফেল।

কজ ওয়েব
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস