• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > প্রজন্মের অগ্রদূত
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: আবীর হাসান
মোট লেখা:১৫০
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
অধ্যাপক আবদুল কাদের
তথ্যসূত্র:
স্মরণ
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
প্রজন্মের অগ্রদূত



পৃথিবীতে সবসময়ই কিছু মানুষ আছেন, যারা নিভৃতচারী। এদের বেশিরভাগই আবার ক্ষণজন্মা। তবে ত্যাগ এবং কর্মবীরত্বের জন্য তাদের কীর্তি অমর হয়ে থাকে। আমরা- এই বাংলাদেশের মানুষ যখন সভ্যতার সন্ধিক্ষণে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের পথনির্দেশ পাচ্ছিলাম না, সেই সময় এক নিভৃতচারীর দেখা পেলাম। কেবল আমি একা নই, সেই ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের অনেকেই জানতে পারল, কমপিউটার নামের রহস্যময় যন্ত্রটি জনগণের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন একজন। তাও কোনো বক্তৃতা-বিবৃতি বা লিফলেট কিংবা পোস্টারের মাধ্যমে নয়; একটা মাসিক পত্রিকার মাধ্যমে। এর অর্থ সাময়িক কোনো ব্যাপার নয়, অধ্যাপক আবদুল কাদের মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর মাধ্যমে জানান দিলেন, বাংলাদেশকে উন্নত করতে হলে কমপিউটার দিয়েই করতে হবে এবং এদেশের মানুষ, সরকার, বাণিজ্যিক পরিমন্ডল, শিক্ষা সবকিছুই কমপিউটারের আওতায় আনতে হবে। আর পত্রিকানির্ভর আন্দোলনটির স্থায়িত্বের ব্যাপারটাও নিশ্চিত হয়ে যায় সে সময়ই।

সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এটা ছিল এক মহান-সাহসী উচ্চারণ। কাজেই পেশায় অধ্যাপক, স্বভাবে নিভৃতচারী মানুষ আবদুল কাদের সমাজটাকে উচ্চকিত করে তুললেন। ‘সবার হাতে কমপিউটিং প্যানেল’- এটা ছিল সাইবারনেটিক্সের শাস্ত্রীয় স্লোগান। সেটাকেই বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে কেমন সহজে-অবলীলায় অধ্যাপক কাদের নতুন প্রজন্মের মনের ভাষা করে তুললেন। সে সময় আসলে ছিল এক বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি। কমপিউটারকে কেউ ভয় পাচ্ছিল, কেউ একে বেকারত্বের অফার বলে মনে করছিল। অধ্যাপক আবদুল কাদের বিষয়টাকে উল্টে দিলেন। মে মাসে (১৯৯১) বললেন, জনগণের হাতে কমপিউটার দেয়ার কথা আর জুন মাসে (১৯৯১) বর্ধিত ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বললেন, কমপিউটারই হয়ে উঠতে পারে বেকারত্ব দূর করার হাতিয়ার আর অর্থনৈতিক উন্নতির চালিকাশক্তি। এরপর থেকে বহুমাত্রিক হয়ে উঠল কমপিউটার জগৎ। তবে এ কাজটা করা সেই সময় খুব সহজ ব্যাপার ছিল না। কারণ এ ধরনের একটি মাসিক পত্রিকার কনটেন্ট জোগাড় করা বহির্বিশ্বের চলমান বিষয়গুলো বুঝে এবং বুঝিয়ে লেখার লোক বা লেখক পাওয়াও ছিল দুষ্কর। তার ওপর সোর্স পাওয়াও ছিল আরো দুরূহ, কারণ এখনকার মতো নেটের এমন রমরমা ব্যবহার তো ছিলই না, বিদেশেও পত্রপত্রিকায় আইসিটি বিষয়ক লেখালেখি খুব বেশি শুরু হয়নি। তবে মার্কিন ও ব্রিটিশ কিছু পত্রিকা চালু করেছিল আইসিটিবিষয়ক তথ্য দেয়া, বিশেষ করে বিজনেস উইক, দ্য ইকোনমিস্ট এবং দ্য গার্ডিয়ান ছিল অগ্রগণ্য। অধ্যাপক আবদুল কাদের এসব খবর রাখতেন এবং কোন সময়ের বিশ্ববাণিজ্য কোন ধারায় চলছে সে বিষয়গুলো নিয়ে লেখকদের সাথে আলোচনা করতেন। কেবল লেখকদের সাথেই নয়, মাঝে মাঝে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের লোকজন এবং বাণিজ্যিক পরিমন্ডলের নেতৃবৃন্দের সাথেও বিষয়গুলো নিয়ে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করতেন। উদাহরণ হিসেবে ডাটা এন্ট্রি শিল্পের কথা বলা যায়। নববইয়ের দশক জুড়েই এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালান তিনি। আসলে তিনি চাচ্ছিলেন দেশে আইসিটিনির্ভর শিল্প গড়ে উঠুক। কমপিউটার বেচাকেনায় সহায়ক পরিবেশের সাথে সাথে সফটওয়্যার শিল্প, গ্রাফিক্সভিত্তিক শিল্প বিস্তৃত হোক। এছাড়া সরকারি দফতরগুলোকে কমপিউটারায়ন, শিক্ষা ক্ষেত্রে কমপিউটারবিষয়ক এবং কমপিউটারভিত্তিক শিক্ষণ কার্যক্রম প্রচলনের নানা দিক নিয়ে নিয়মিত প্রচার চালিয়েছেন তিনি কমপিউটার জগৎ-এর মাধ্যমে।



অধ্যাপক আবদুল কাদের একাধারে ছিলেন শিক্ষাবিদও, ফলে কমপিউটারের মাধ্যমে শিক্ষাদান এবং কমপিউটারবিষয়ক শিক্ষা কিভাবে সম্প্রসারণ করা যায় তা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি করিয়েছেন তিনি। এ সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও তার নজর এড়ায়নি। আর লেখালেখির যে বিষয়টার কথা বললাম তা শুধু কমপিউটার জগৎ-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি, অন্যান্য দৈনিক পত্রিকাতে লিখতেও লেখক-সাংবাদিকদের, অধ্যাপক-বুদ্ধিজীবীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন তিনি।

কমপিউটার জগৎ-কে শুধু একটি পত্রিকা হিসেবেই গড়ে তোলেননি অধ্যাপক আবদুল কাদের। একে তিনি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন, এর মাধ্যমে নানাভাবে প্রতিভা অমেবষণের চেষ্টা করেছেন। এই প্রতিভা অমেবষণের তালিকায় যেমন লেখক-সাংবাদিকরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন প্রতিভাবান প্রযুক্তিবিদও। নতুন প্রজন্মের মেধাবীদের খুঁজে বের করতে নানা রকম প্রতিযোগিতা, মত বিনিময়সভা ইত্যাদির আয়োজন প্রায় নিয়মিত করেছেন এক সময়। তার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকার সুবাদেই বাংলাদেশ পেয়েছে অনেক প্রযুক্তিবিদ, অনেক নতুন পত্রিকার সম্পাদক-প্রকাশকও।

অনেক সময় প্রতিযোগিতার মুখে পড়া কমপিউটার জগৎ-কে নিয়ে কিন্তু অনেকটা নির্মোহ নিশ্চিন্তেই থাকতে দেখেছি তাকে। কারণ নিজের মাপটা তিনি জানতেন ভালোভাবেই। ফলে নির্লিপ্ত থেকে কাজ করে যাওয়া- কেবল বাণিজ্য না করা এটাই ছিল তার মূলমন্ত্র। আর সম্ভবত সে কারণেই কমপিউটার জগৎ এখন পর্যন্ত মহিমা নিয়েই টিকে রয়েছে।



অধ্যাপক আবদুল কাদেরের কীর্তি সম্ভবত তার অদর্শিক অবস্থানকে ছাপিয়ে উঠতে পারেনি। কারণ তার ইচ্ছে ছিল আরও বড় কিছু করা, আরও কিছু আদর্শ স্থাপন করা। কিন্তু অকালে চলে যাওয়া তার সেই যাত্রাকে অসময়ে থামিয়ে দিয়েছে। তার ব্যক্তিগত কোনো উচ্চাভিলাষ ছিল না, উচ্চাভিলাষটা ছিল দেশকে নিয়ে। বাংলাদেশকে তিনি চেয়েছিলেন ডিজিটাল প্রযুক্তির অগ্রগণ্যদের তালিকায় নিয়ে যেতে। খোলা মন আর দেশপ্রেমের এমন সমন্বয়- এই যুগে কোনো ব্যক্তির জীবনে দেখা পাওয়া দুর্লভ ব্যাপারই বলতে হবে। অধ্যাপক আবদুল কাদের তাই এদেশের বিরলপ্রজদের অন্যতম- যিনি আধুনিকতার পরশকে স্পর্শ করতে চেয়েছেন এবং তার সুফল ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সবার মধ্যে।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : abir59@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস