যোগাযোগের সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও সহজতম মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন পৃথিবীজুড়ে সবার মন জয় করে নিয়েছে। এক সময় যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেসব ঝামেলা পোহাতে হতো তা থেকে রেহাই দিয়েছে এই ছোট ডিভাইসটি। প্রথম দিকে মোবাইল ফোন তারযুক্ত টেলিফোনের বিকল্প হিসেবেই ব্যবহার হয়। পরে প্রযুক্তিবিদেরা মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ ও উন্নত করার লক্ষ্যে এই মোবাইল ফোনে একে একে সমন্বিত করেন ক্যালকুলেটর, ক্যালেন্ডার, টাস্ক, অ্যালার্ম, ঘড়ি ইত্যাদি।
মোবাইল ফোনের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন একে করে তুলেছে কমপিউটারের বিকল্প মাধ্যম। আজকাল যেসব মোবাইল দেখা যায়, এগুলোতে কমপিউটারের মতোই রয়েছে প্রসেসর, র্যাবম এমনকি অপারেটিং সিস্টেমও। এগুলোকে সাধারণত স্মার্টফোন বলা হয়ে থাকে। স্মার্টফোন ছাড়াও এক ধরনের মোবাইল পাওয়া যায়, যেগুলোকে জাভা-অ্যানাবলড হ্যান্ডসেট বলা হয়ে থাকে। স্মার্টফোনের চেয়ে এতে সুযোগ-সুবিধা কম থাকলেও এসব জাভা মোবাইল ফোন দিয়ে ইন্টারনেটের খুঁটিনাটি কাজ বেশ ভালোভাবেই করা যায়। কিছু কিছু জাভা মোবাইলকে মডেম হিসেবে ব্যবহার করে কমপিউটারেও ইন্টারনেট সংযোগ আনা যায়।
কমপিউটারে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সাধারণত ই-মেইল দেয়া-নেয়া, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বিচরণ এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে চ্যাট করে থাকেন। এসব কাজই স্বল্পমূল্যের জাভা সেটে করা যায়। এ লেখায় উপস্থাপন করা হয়েছে তেমনই কিছু বিনামূল্যের জাভা অ্যাপ্লিকেশন, যেগুলো ব্যবহার করে আপনি জাভা হ্যান্ডসেট থেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং কিংবা চ্যাট করতে পারবেন।
ই-বাডি
ই-বাডি মোবাইলের জনপ্রিয় একটি জাভা অ্যাপ্লিকেশন। এর মাধ্যমে জনপ্রিয় ও প্রথম শ্রেণীর প্রায় সব ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং বা চ্যাট সেবার সাথে যুক্ত হতে পারবেন। ইয়াহু, এমএসএন, এআইএম, গুগল টক, আইসিকিউ, মাইস্পেস এবং ফেসবুক ই-বাডি সাপোর্ট করে। উল্লেখ্য, ই-বাডির একটি ওয়েব সংস্করণও রয়েছে। আপনি চাইলে ই-বাডির সাইটে গিয়ে পছন্দমতো যেকোনো অ্যাকাউন্টে লগইন করতে পারবেন এবং বন্ধুদের সাথে চ্যাট করতে পারবেন। ফলে আপনার কমপিউটারে ইয়াহু মেসেঞ্জার ইনস্টল করা না থাকলে বা বন্ধুর কমপিউটারে বসেও চ্যাট করতে পারবেন ইয়াহুতে। এমনকি ই-বাডির মাধ্যমে ফেসবুক চ্যাটে লগইন থাকতে পারবেন।
ই-বাডি মোবাইলে ব্যবহারের সময় আপনাকে একটি ই-বাডি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করতে কোনো ফি লাগবে না এবং রেজিস্ট্রেশন করতে দরকার ই-মেইল ঠিকানা। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মোবাইল সংস্করণে লগইন করা যায় না। তবে রেজিস্ট্রেশনের ফলে ওয়েব সংস্করণেও সুবিধা পাবেন। কেননা, রেজিস্ট্রেশন করার পর আপনাকে অ্যাকাউন্টগুলো সেটআপ করতে হবে। যেমন- একই সাথে ইয়াহু, এমএসএন ও ফেসবুকে চ্যাট করতে চাইলে এই তিনটি সেবার ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাকাউন্ট সেটআপ করতে হবে। ফলে যখনই ই-বাডি আইডি দিয়ে লগইন করবেন, কাঙ্ক্ষিত সেবাগুলোয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে লগইন করবে ই-বাডি।
ই-বাডি ডাউনলোড করতে মোবাইল থেকে ব্রাউজ করুন http://get.ebuddy.com এবং মোবাইল সেটের ব্র্যান্ড ও মডেল নাম্বার সিলেক্ট করে ডাউনলোড করুন।
মিগ৩৩
মিগ৩৩ নামের এই অ্যাপ্লিকেশন আপনার মোবাইলেই ভালো চলবে। মিগ৩৩ শুধু একটি চ্যাটিং অ্যাপ্লিকেশনই নয়, বরং একই সাথে এটি একটি জনপ্রিয় ও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়া মোবাইল কমিউনিটি নেটওয়ার্ক। অর্থাৎ আপনার ইয়াহু বা ফেসবুকে লগইন করা পর্যন্তই মিগ৩৩ সীমাবদ্ধ নয়, দারুণ জনপ্রিয় এই অ্যাপ্লিকেশনটির কল্যাণে আপনি পাচ্ছেন চ্যাটরুম, গেমস, গ্রুপ ইত্যাদি উপভোগ করার সুযোগ। মিগ৩৩-তে রয়েছে নিজস্ব চ্যাটরুম। এসব চ্যাটরুমে আপনার মতোই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার মিগ৩৩ ব্যবহারকারী বসে আছেন বন্ধু বানানোর অপেক্ষায়। মিগ৩৩ ব্যবহারের জন্য প্রথমেই মিগ৩৩-তে বিনামূল্যে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং একটি নিজস্ব প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এই প্রোফাইল দেখেই চ্যাটরুমে মানুষ আপনার সাথে কথা বলতে উৎসাহী হতে পারেন। একইভাবে আপনিও অন্যদের প্রোফাইল দেখতে বা সার্চ করতে পারবেন।
মিগ৩৩ আইডিধারীরা নিজেদের মধ্যেই চ্যাট করতে পারেন বলে মিগ৩৩ ব্যবহারকারীরা তৈরি করতে পারেন নিজেদের গ্রুপও। গ্রুপের পাশাপাশি আপনি চাইলে একান্তই ব্যক্তিগত চ্যাটরুম তৈরি করতে পারবেন, যেখানে থাকবে শুধু আপনার বন্ধুরা। একে বড় আকারের কনফারেন্স চ্যাটও বলা যেতে পারে।
মিগ৩৩ ব্যবহারকারী হিসেবে রয়েছে মিগ লেভেল। অর্থাৎ কমিউনিটিতে আপনার জনপ্রিয়তা কতটুকু এই ভিত্তিতে আপনাকে দেয়া হয় মিগ লেভেল। এই লেভেল যত বেশি থাকবে, আপনি ধীরে ধীরে ততই বাড়তি সব সুযোগসুবিধা ভোগ করবেন।
মিগ৩৩ দিয়ে ফোন অথবা এসএমএস করা যায়। বলাবাহুল্য, সেক্ষেত্রে আপনাকে টাকা দিয়ে মিগ৩৩ ক্রেডিট কিনতে হয়। এর ফলে মিগ৩৩ টু মিগ৩৩ বিশেষ আন্তর্জাতিক কলরেটে কথা বলতে পারবেন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের যেকোনো বন্ধুর সাথে। শুধু এতটুকু সুবিধা ছাড়া মিগ৩৩-এর দুনিয়ায় আর সবই বিনামূল্যে উপভোগ্য। সুতরাং এখনই মোবাইল থেকে http://www.mig33.com ভিজিট করে ডাউনলোড করে নিন মিগ৩৩ অ্যাপ্লিকেশন। অ্যাপ্লিকেশন কাজ না করলেও ওয়াপ সাইটের মাধ্যমেই মিগ৩৩ ব্যবহার করতে পারবেন।
নিমবাজ
মোবাইলে চ্যাটিং ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের জগতে আরেকটি পরিচিত নাম হচ্ছে নিমবাজ। নিমবাজ ব্যবহার করে ইয়াহু, ফেসবুক, মাইস্পেস, গুগল টক ছাড়া আরও প্রচুর চ্যাট সার্ভিসের সাথে যুক্ত হতে পারবেন। দু’জন নিমবাজ ব্যবহারকারীর মধ্যে ভয়েস কল করাও সম্ভব নিমবাজ অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে। আর এই নিমবাজ টু নিমবাজ ভয়েস কল সম্পূর্ণ ফ্রি। এছাড়াও মোবাইল থেকে বিভিন্ন ফাইল এমএমএস ছাড়াই নিমবাজ টু নিমবাজে পাঠানো যাবে।
নিমবাজের রয়েছে ওয়েব, মোবাইল এবং ডেস্কটপ সংস্করণ। মোবাইল থেকে নিমবাজ ডাউনলোড করতে সাইটে ভিজিট করে http:// nimbuzz.com অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করুন।
খরচ
উপরের অ্যাপ্লিকেশনগুলো ব্যবহার করতে এর নির্মাতাদের কোনো টাকাপয়সা দিতে হয় না। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করতে মোবাইল ফোনে অবশ্যই ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। মোবাইলে সাধারণত দুই ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ থাকে। একটি হচ্ছে যত ব্যবহার করবেন তত চার্জ, অন্যটি হচ্ছে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভলিউম কিনে তারপর ব্যবহার। এসব চ্যাট করার অ্যাপ্লিকেশনে সাধারণত খুব অল্প পরিমাণ ডাটা ট্রান্সফার হয়, যার কারণে খুব বেশি খরচ হয় না। তবুও বেশি খরচ এড়াতে এসব অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ১০ বা ১৫ মেগাবাইটের ভলিউম কিনে নিয়েই ভালো।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : sajib@aisjournal.com