• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > পরিবর্তনের ধারায় ইন্টেলের চিপসেট
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: তৌহিদুল ইসলাম
মোট লেখা:২৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইন্টেল
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
পরিবর্তনের ধারায় ইন্টেলের চিপসেট
কমপিউটারের প্রাণ প্রসেসর। তাহলে মাদারবোর্ডকে কী বলা উচিত? প্রসেসর লাগানো থাকে মাদারবোর্ডের সকেটে। আর মাদারবোর্ডের প্রাণ ধরা হয় এর চিপসেটকে। তাই মাদারবোর্ড কেনা অথবা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবার আগে দেখা উচিত এর চিপসেটে কী কী সুবিধা রয়েছে। কেননা, ভালো চিপসেটযুক্ত মাদারবোর্ড না হলে আপনি মাদারবোর্ডের সাথে যুক্ত যন্ত্রাংশ থেকে বাড়তি অনেক সুবিধাই পাবেন না।

কমপিউটার ব্যবহারকারী অনেকেই জানেন মাদারবোর্ডের সবচেয়ে বড় যে আইসি/চিপ (বেশিরভাগ মাদারবোর্ডে এ আইসি’র ওপর বড় হিটসিঙ্ক লাগানো থাকে) তাকেই মাদারবোর্ডের চিপসেট বলে। আপনার মাদারবোর্ডে প্রসেসর, হার্ডডিস্ক, র্যাঙম, গ্রাফিক্স কার্ড, পেনড্রাইভ যাই কিছু যুক্ত করেন; চিপসেটে তা যোগ করার সুবিধা না থাকলে তা লাগিয়ে কাজ করতে পারবেন না। আবার অনেক ক্ষেত্রে কাজ করা গেলেও কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পাওয়া যায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সর্বশেষ ইউএসবি ৩.০ সংস্করণ এসেছে, যা আগের ২.০ সংস্করণ থেকে উন্নত ও বেশি সুবিধাসংবলিত। যদি আপনার মাদারবোর্ডের চিপসেট ইউএসবি ২.০ সংবলিত হয় তবে ইউএসবি পোর্টে কোনো ইউএসবি ডিভাইস যুক্ত করলে তা থেকে ইউএসবি ৩.০-এর সুবিধা পাবেন না।

প্রসেসর ও নতুন নতুন কমপিউটার যন্ত্রাংশ তৈরি হওয়ার কারণে কিছুদিন পর পর পরিবর্তন করতে হয় এই চিপসেট। আর এ কারণেই পুরনো প্রসেসর, র্যাকম ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ যেমন নতুন চিপসেটযুক্ত মাদারবোর্ডে কাজ করে না, তেমনি কমপিউটারের নতুন নতুন যন্ত্রাংশও পুরনো মাদারবোর্ডে কাজ করে না।



চিপসেট নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে ইন্টেল। গত এক বছরে ইন্টেল বাজারে ছেড়েছে ছয়টিরও বেশি চিপসেট- পি৫৫, এইচ৫৫, এইচ৫৭, পি৬৭, এইচ৬৭ ও জেড৬৮। সর্বশেষ গত ৮ মে ২০১১-তে ইন্টেল বাজারে ছেড়েছে সর্বশেষ প্রযুক্তিসমৃদ্ধ জেড৬৮ চিপসেট। এখন পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের মধ্যে খুব সাড়া জাগাতে না পারলেও ইন্টেলের ধারণা এ চিপসেটের মাধ্যমে তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রসেসর স্যান্ডি ব্রিজের সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠবে।

কয়েক বছর আগেও মাদারবোর্ডের চিপসেট কমপিউটারের মেমরি কন্ট্রোল, বিল্টইন গ্রাফিক্স, অডিও, ভিডিও, স্টোরেজ নেটওয়ার্কিং, আরো বিভিন্ন যন্ত্রাংশের সাথে যোগাযোগ রক্ষার কাজ করত। কিন্তু আসেত্ম আসেত্ম এ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে এখন চিপসেট নির্মাতারা বাইপাস করতে চাচ্ছেন। প্রধান দুই চিপসেট নির্মাতা কোম্পানি এএমডি ও ইন্টেলের চিপসেটগুলোর কাজ পর্যালোচনা করলে তা স্পষ্ট বোঝা যায়।

ইন্টেলের প্রথম ৬ কোর সমর্থিত চিপসেট ছিল এক্স৫৮। ৬ কোর সাপোর্ট করলেও এ চিপসেটে ডাইলেভেল প্রসেসিং টেকনোলজি না থাকায় এটি স্যান্ডি ব্রিজ প্রসেসর সাপোর্ট করেনি। ফলে এ প্রসেসরের জন্য নতুন করে ডিজাইন করা হলো পি৬৭, এইচ৬৭ ও কিউ৬৭ চিপসেট। আর এর চিপসেটগুলোই জায়গা দখল করল আগের ব্যবহার হওয়া পি৫৫, এইচ৫৫, এইচ৫৭ চিপসেটের।

পি৫৫ ও পি৬৭ চিপসেট দুটির সব সুবিধা একই রকম ছিল। শুধু পি৬৭ বাড়তি ডিএমআই (ডাইরেক্ট মিডিয়া ইন্টারফেস) ও ডুয়াল চ্যানেল ডিডিআর-৩ ১৩৩৩ মেগাহার্টজ সাপোর্ট করত। পি৬৭, এইচ৬৭, কিউ৬৭-এ নতুন করে যুক্ত হয় এক্স১৬ স্লট, যা পি৫৫, এইচ৫৫, এইচ৫৭-এ এক্স৮ স্লটে সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যদিকে এ চিপসেটগুলো ৩ জিবিপি/সে. গতির সাটা পোর্ট সাপোর্ট করত। কিন্তু পি৬৭ ও কিউ৬৭-এ ৬ জিবিপি/সে. গতির সাটা পোর্ট সমর্থন করে। এ চিপসেটগুলোতে আরো যুক্ত হয়েছিল পিসিআই-১ ৩.০ লেন, যা প্রতি সেকেন্ডে এক গিগা ডাটা দুই দিকের যেকোনো দিকে দেয়া-নেয়া করতে পারত।

এতসব বাড়তি সুবিধা যোগ করা সত্ত্বেও পি৬৭, এইচ৬৭ ও কিউ৬৭ চিপসেটে কোর আই সিরিজের সব সুবিধা দেয়া সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে প্রসেসরগুলোতে যে এইচডি গ্রাফিক্স বিল্টইন ছিল, সে সুবিধা ব্যবহারকারীরা পেতেন না শুধু চিপসেটের জন্য। ফলে প্রসেসরের এএইচডি সুবিধা (কুইক সিঙ্ক ভিডিও ট্রান্সকোডিং এক্সিলারেশন) আদায় করার জন্য আবার পরিবর্তন করতে হলো চিপসেট। তৈরি হলো জেড৬৮ চিপসেট।

জেড৬৮-এর প্রধান সুবিধাগুলোর মধ্যে এসআরটি (স্মার্ট রেসপন্স টেকনোলজি), লুসিড লজিক্স ভারচু জিপিইউ অন্যতম।

এসআরটি টেকনোলজি কী? মাল্টিকোরবিশিষ্ট প্রসেসরের কোরগুলো মেমরি থেকে আলাদা আলাদাভাবে ডাটা নিয়ে কাজ করে। যখন প্রসেসর কোনো ডাটা নিয়ে কাজ করে তখন প্রথমে সে ডাটা ক্যাশ মেমরিতে খোঁজ করে। ক্যাশ মেমরিতে না পেলে সিস্টেম মেমরিতে, না পেলে স্টোরেজ ডিভাইসে। আর এ তিন মেমরির মধ্যে বেশি দ্রুত কাজ করে ক্যাশ মেমরি, তারপর সিস্টেম মেমরি এবং স্টোরেজ ডিভাইস। অন্যদিকে ক্যাশ মেমরির পরিবর্তে হার্ডডিস্কে কোনো ডাটা থাকলে তা ক্যাশ মেমরিতে আনতেও কিছু সময় নষ্ট হয়। এসআরটিতে ব্যবহার হয়েছে নতুন ধরনের অ্যালগরিদম, যা ব্যবহারকারী কোন ডাটাগুলো নিয়ে বেশি কাজ করেন তা প্রসেসরের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে। এ ধরনের বেশি ব্যবহার হওয়া ডাটাগুলো এসআরটি ক্যাশে জমা রাখে। এক্ষেত্রে শুধু ওই ফাইল/ডাটা জমা না রেখে ফাইলটি যে ব্লকে থাকে; সে ব্লকটিই জমা রাখে। ফলে ক্যাশ করা ডাটাগুলো নিয়ে অনেক দ্রুত কাজ করতে পারে প্রসেসর। এ টেকনোলজিতে মাদারবোর্ডে সংযুক্ত এসএসডি কার্ডের একটি ছোট (৬৪ গিগার বেশি) জায়গা চিপসেট ক্যাশের কাজে ব্যবহার করে। মজার ব্যাপার হলো- এখানে প্রথমেই অপারেটিং সিস্টেম ক্যাশ করা হয়। ইন্টেলের সিনিয়র প্রসেসর মার্কেটিং ম্যানেজার ডেন বিংহামের মতে, ‘শুধু এ টেকনোলজির জন্যই প্রসেসরের কাজের গতি ২০ শতাংশ বেড়ে যাবে।’

লুসিড লজিক ভারচু টেকনোলজি? গত কয়েক সংখ্যা আগে হাইড্রা প্রযুক্তি নিয়ে লিখেছিলাম। সেই হাইড্রা ইঞ্জিনের ফিচার যুক্ত হয়েছে জেড৬৮ চিপসেটে। এ সুবিধার মাধ্যমে আপনি বিল্টইন গ্রাফিক্স কার্ড ও এক্সটারনাল গ্রাফিক্স কার্ডের মধ্যে সুইচ করতে পারবেন। যখন ব্যবহারকারী কমপিউটারে ডাটা এন্ট্রির মতো কোনো সাধারণ কাজ করবেন তখন নরমাল গ্রাফিক্স কার্ড এবং যখন গেম/মাল্টিমিডিয়া নিয়ে কাজ করবেন তখন হাইএন্ড গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে কাজ করবেন। এতে প্রচুর বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং কমপিউটারের প্রসেসর ও জিপিইউর ওপর চাপ কমে। বিংহামের মতে, ‘এ প্রযুক্তির ফলে ব্যবহারকারীর বিদ্যুৎ বিলের অনেক সাশ্রয় হবে।’

পি৬৭ চিপসেটও ওভারক্লকিং করতে পারত, কিন্তু প্রসেসরের ওভারক্লকিং চলা অবস্থায় গ্রাফিক্স অপশন পরিবর্তন করা যেত না, কিন্তু জেড৬৮-এ সম্ভব। ফলে ওভারক্লকিং মোডেও বাস্তব থ্রিডি ভিডিও পাওয়া যায় অনায়াসে। এর জন্য জেড৬৮-এ দুটি স্বাধীন ডিসপ্লে কন্ট্রোলার ব্যবহার করা হয়েছে; যা এফডিআই (ফ্ল্যাকজিবল ডিসপ্লে ইন্টারফেস) নামে পরিচিত। আর এক গ্রাফিক্স কার্ড থেকে অন্য গ্রাফিক্স কার্ডে পরিবর্তনের পর এ এফডিআই চ্যানেল কাজ করে। পি৬৭ ও এইচ৬৭-এ সুবিধা ছিল না।

ওভারক্লকিংয়ের ব্যাপারে কোর আই সিরিজের প্রসেসরগুলো লিমিটেড ওভারক্লকিং করতে পারে জেড৬৮ চিপসেট দিয়ে। কিন্তু কে সিরিজের প্রসেসরগুলো পুরোপুরি আনলক, যা পুরোপুরি ওভারক্লকিং করার সুযোগ দেয়। ইতোমধ্যেই গিগাবাইটের জেড সিরিজেও আসুসের এক্সট্রিমের মতো মাদারবোর্ডে জেড৬৮ ব্যবহার হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, ইন্টেলের জেড৬৮ চিপসেটে গতানুগতিক চিপসেটের বাইরে কিছু নতুনত্ব পাওয়া যায়, যা ব্যবহারকারীকে নতুন সুবিধাযুক্ত কমপিউটার উপহার দেবে।



কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sajib@aisjournal.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস