• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > স্মার্টফোন ভাইরাস থেকে সাবধান
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: অনিমেষ চন্দ্র বাইন
মোট লেখা:১৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - এপ্রিল
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
স্মার্টফোন
তথ্যসূত্র:
মোবাইলপ্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
স্মার্টফোন ভাইরাস থেকে সাবধান


কমপিউটার ভাইরাসের মতো মোবাইল ভাইরাসও একটি ক্ষতিকর প্রোগ্রাম। এটি মোবাইলের নিরাপত্তা দেয়াল ভেঙে ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত সাইবার অপরাধীদের সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়। পরে এসব তথ্য-উপাত্ত কাজে লাগিয়ে অপরাধীরা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বড় ধরনের ক্ষতি করে। গত বছর মাঝামাঝি সময়ের কথা, জিউস নামের ট্রোজানের আক্রমণের বিষয়টি সবার জানা। এই কমপিউটার ভাইরাসের আক্রমণে প্রায় ৩ হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কমপক্ষে ৭ লাখ পাউন্ড সমমূল্যের মুদ্রা চুরি হয়ে যায়। জিউস-ভি থ্রি নামের এই ভাইরাসটি আক্রমণের যে পরিমাণ ক্ষতিসাধন করে তা এখন পর্যন্ত সাইবার আক্রমণের ফলে ক্ষয়ক্ষতির তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। উল্লিখিত জিউস ভাইরাসের ডেভেলপাররা এর মধ্যেই মোবাইল সংস্করণে জিটমো নামে আত্মপ্রকাশ করছে। এই ম্যালওয়্যারটি ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে আক্রমণ করে মোবাইল প্রযুক্তিতে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মোবাইল প্রযুক্তির পরিসীমা বাড়ার সাথে সাথে হ্যাকাররা বিশেষভাবে নজর দিতে শুরু করেছে এই দিকে। ইন্টারনেটবিষয়ক নিরাপত্তা সংস্থার কঠোর পর্যবেক্ষণকে এড়িয়ে এই ধরনের আক্রমণ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের আরো ভাবিয়ে তুলছে। এর ফলে নিরাপত্তাবিষয়ক প্রোগ্রামাররা নিরাপত্তা নিয়ে যেমন ভাবছে তেমনি হ্যাকাররা নিরাপত্তা দুর্বলতার বিভিন্ন হোল খুঁজতে তৈরি করছেন বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন। বিগত বছরগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়, মোবাইল প্রযুক্তিও বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস বিড়ম্বনায় পড়েছে এবং পাচার হয়ে গেছে ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য। এর মধ্যে CABIR, COMMWARRIOR, SKULLS ও LOCKNUT উল্লেখযোগ্য। তবে এসব ভাইরাসই আক্রমণ করে মোবাইলের সিম্বিয়ান অপারেটিং সিস্টেমে।



আইবিএমের মতো প্রতিষ্ঠান মনে করছে সাইবার অপরাধীরা প্রচলিত সাধারণ ধারা যেমন স্প্যামিং ও কোডগুলো এলোমেলো করার দিকে আর নজর দিচ্ছে না। বরং তারা তাদের গতিধারায় পরিবর্তন এনে মোবাইল ডিভাইস, সামাজিক যোগাযোগ ও ক্লাউড কমপিউটিংয়ের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাঙার দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে, এক্স-ফোর্স ট্রেন্ড অ্যান্ড রিস্ক রিপোর্ট ২০১১-এ এমন তথ্যই প্রকাশ করে। উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলোর প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রমের দিকে লক্ষ করলে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের প্রযুক্তিগুলো ক্লাউডে প্রতিস্থাপন করে মোবাইল প্রযুক্তি দিয়ে একে পরিচালনাও করেছে।

মোবাইল ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত নিজের ইচ্ছেমতো স্বাভাবিকভাবে যেসব টুল ব্যবহার করে থাকেন সেগুলো হলো- সিস্টেম টুল, গেম ইত্যাদি। এমনকি কখনো কখনো পর্নোগ্রাফি এই তালিকায় স্থান পায় অতিসহজে। এই ধরনের অ্যাপসগুলো খুব সহজেই আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও ব্যবহারকারীর মোবাইলের ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার তথা আইএমইআই বা আইএমএসআই খুব সহজে হ্যাকারদের সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়।

আধুনিক মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোনের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ব্রিটেনভিত্তিক কমপিউটার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান এমডব্লিউআর ইনফোসিকিউরিটি। প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যবিষয়ক পরিচালক অ্যালেক্স ফিজেন দৃঢ়ভাবে বলেন, টাকা-পয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি এখনো পর্যন্ত নিরাপদ নয়। এই বক্তব্যের পেছনে যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে স্মার্টফোনগুলো নিরাপত্তাহীন হয় ও বিভিন্ন তথ্য পাচার হয়। ট্রোজান বিভিন্নভাবে ব্যবহারকারীর মোবাইলে প্রবেশ করতে পারে। যখন একজন ফোন ব্যবহারকারী পাবলিক প্লেস বা সাইবার ক্যাফের ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, স্বাভাবিভাবেই তাকে ওই রাউটারের সাথে নিজের সংযোগ স্থাপন করতে হয়। বেশিরভাগ সময় এসব ক্ষেত্রে একটি লিঙ্কে ক্লিক করার প্রয়োজন হয়। এই লিঙ্কটি হতে পারে একটি টুইটারের লিঙ্ক। সমস্যা হচ্ছে এই লিঙ্কের সাথে যুক্ত থাকে ভাইরাস এবং সংযোগ স্থাপনের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ব্যবহারকারীর সব তথ্য-উপাত্তের সব নিয়ন্ত্রণ চলে যায় ভাইরাসের হাতে এবং সহজেই ব্যবহারকারীর ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড নিজ আয়ত্তে নিয়ে আসে। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের আক্রমণ খুবই কমই ঘটেছে, কিন্তু নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। নিরাপত্তাবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা মনে করছে, প্রতি ২০টি অ্যান্ড্রয়িড বা আইফোনের মধ্যে একটি ম্যালওয়্যার দিয়ে আক্রমণ হতে পারে আগামী দুই বছরের মধ্যে।

অ্যান্ড্রয়িড বা আইফোন কোনটি বেশি নিরাপদ? অ্যাপলের নিরাপত্তার সুনাম রয়েছে। কিন্তু এতে নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অ্যান্ড্রয়িড বা আইফোন দুটিতেই কিছু না কিছু সমস্যা রয়েছে। অ্যান্ড্রয়িড নিরাপত্তার জন্য প্রতিনিয়তই ম্যালওয়্যারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে তাদের গ্রাহকদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। অন্যদিকে অ্যাপল তাদের অ্যাপ স্টোরও কঠোরভাবে সুরক্ষিত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। অ্যান্ড্রয়িডের স্যান্ডবক্স নামে যে অ্যাপসে নিরাপত্তা বলয় রয়েছে তা এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি শক্তিশালী। ব্ল্যাকবেরি ফোনের নিরাপত্তা বলয় অন্য দুটির তুলনায় অনেক বেশি সুরক্ষিত। ব্ল্যাকবেরি প্রস্ত্ততকারী প্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত তাদের প্রযুক্তির ধরন প্রকাশ না করায় ম্যালওয়্যার রাইটারের জন্য প্রোগ্রাম লেখা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

অন্য দুটি প্লাটফরমের তুলনায় অ্যান্ড্রয়িডের দিকেই সাইবার অপারাধীদের নজর অনেক বেশি। এত কম সময়ের মধ্যে অ্যান্ড্রয়িডের জনপ্রিয়তা এবং মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম বাজারে শীর্ষ অবস্থান এর কারণ। উল্লেখ্য, মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম বাজারে অ্যান্ড্রয়িডের দখলে রয়েছে ৩৯ শতাংশ, যেখানে ওআইএস ২৮ শতাংশ এবং রিমের ব্ল্যাকবেরি ২০ শতাংশ।

এখন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মনে হতে পারে, অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করলেই তো এই ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে। কিন্তু বিষয়টা এভাবে ভাবলে চলবে না। কারণ স্মার্টফোনে যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যাবে না। আর বিশেষজ্ঞরা এমনই মনে করেন।

আমেরিকাভিত্তিক প্রযুক্তিবিষয়ক ম্যাগাজিন ইনফরমেশন উইকে গত মার্চে প্রকাশিত একটি সতর্কমূলক প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, জিউস বা জিটমো আক্রমণ করার জন্য নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। প্রথমে এটি ব্যবহারকারীর পিসিতে ডাউনলোড হয়ে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। যখন ব্যবহারকারী তার পিসি থেকে ব্যাংক ওয়েবসাইটে লগইন করে তখন এটি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং একটি বার্তা প্রেরণ করে। এই বার্তায় উল্লেখ করা হয়, আপনার লগইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি, এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে আপনার মোবাইল ফোনে একটি নিরাপত্তাবিষয় টুল ডাউনলোড করতে হবে। এই প্রহসনে আপনি একমত হলেই আপনার সব তথ্য চুরি হয়ে যাবে। সুতরাং মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : animesh@letbd.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস