লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - ফেব্রুয়ারী
লেখার ধরণ:
কমপিউটারে বাংলা ব্যবহার
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
পিছিতে আছে প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার মেলবন্ধন
প্রযুক্তি ও ভাষা
আপাতদৃষ্টিতে প্রযুক্তি ও ভাষাকে দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা মনে হতে পারে। কিন্তু এ দু’য়ের মধ্যে আছে রেললাইনের মতোই সমামত্মরাল অবস্থান। ভাষা হচ্ছে মানুষের অভিব্যক্তি। আর যন্ত্রের বৈজ্ঞানিক বহির্প্রকাশ হচ্ছে প্রযুক্তি। উভয়ই একটি বাহন মাত্র। ভাষা যেমন মানুষের সাথে মানুষের ভাব বিনিময় করিয়ে দেয়, তেমনি প্রযুক্তি ভাব বিনিময় করে যন্ত্র আর মানুষের মধ্যে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, দীর্ঘদিনেও ভাব বিনিময়ের অন্যতম এই হাতিয়ারটিকে এখনও আমরা বশে আনতে পারিনি। মাতৃভাষা বাংলার সাথে জুটি বাঁধতে পিছিয়ে রয়েছি।
ভালোবাসায় বেঁচে আছে
ফেব্রম্নয়ারি ভাষার মাস। বিশ্বদরবারে বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠায় উন্নত শিরে সটান বুকে দাঁড়ানোর মাস। ফাগুনের আগুনঝরা এই মাসটি বাঙালি চেতনার বহিঃপ্রকাশের মাস। ১৯৫২ সালের এই মাসে রক্ত দিয়ে বাংলাভাষাকে আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করেছে দেশের মানুষ। বিজয়ের পরে উর্বরা এই ব-দ্বীপবাসীর প্রচেষ্টার ফলেই প্রতিবছর একুশে ফেব্রম্নয়ারি বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আমত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। কিন্তু বাংলায় কমপিউটিংয়ের মাধ্যমে বাংলাভাষাকে বিশ্ববাসীর সামনে অনন্য উচ্চতায় নিতে এক যুগ আগের শুরম্ন হওয়া সংগ্রামের ফসল থেকে এখনও বঞ্চিত আমরা। তথ্যপ্রযুক্তিতে অবদান রাখা অনেক বাঙালির নিরলস প্রচেষ্টা এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ বাংলা কমপিউটিংকে বহুদূর এগিয়ে নিলেও তা আজ নোঙর করতে পারছে না ঈপ্সিত বন্দরে। দীর্ঘমেয়াদী ও অমত্মর্ভেদী সুফল থাকলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই বোধোদয় যেনো শুধুই মরীচিকাময়। তবে মাতৃভাষার প্রতি সাধারণের ভালোবাসার টানে ব্যক্তি উদ্যোগে এগিয়ে চলছে বাংলা কমপিউটিংয়ের কাজ।
প্রাপ্তির খেরোখাতা
কমপিউটার, সেলফোন আর ইন্টারনেট- এই তিনে বদলে দিয়েছে আমাদের জীবনধারাকে। বৈচিত্র্যময় এবং গতিময় করেছে। বিজয় ও অভ্র’র মতো দুটি ডিজিটাল লিখন আমরা পেয়েছি অনেকদিন আগেই। নিয়মিত এর নতুন সংস্করণও বেরম্নচ্ছে। ব্যক্তি উদ্যোগে সেলফোন থেকে বাংলা লিখতে আসছে নিত্যনতুন অ্যাপস। বিচ্ছিন্নভাবে চলছে বাংলাভাষাকে আরও প্রযুক্তিবান্ধব করার প্রচেষ্টা। নিরমত্মর গবেষণা চলছে বাংলা অভিধান, শুদ্ধ বাংলা, ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলা হরফ পাঠের বন্দোবসত্ম নিয়ে। এগিয়ে চলছে আমাদের মুখের ভাষাকে যেনো একাকীই লিখিত আকারে রূপ দিতে পারে কমপিউটার। আবার একইভাবে আমাদের পড়ে শোনাতে পারে ওয়ার্ড ফাইলের লেখা থেকে।
অভ্র
বিদায়ী বছরে ওয়েবে জনপ্রিয় বাংলা সফটওয়্যার অভ্র’র আইওএস সংস্করণ অবমুক্ত করেছে অমিক্রোনল্যাব। মুক্ত সফটওয়্যার আইঅভ্রটি ১০ম সংস্করণের জন্য অভিধান সমর্থিত এবং উচ্চারণরীতিতে লিখতে সক্ষম প্রথম বাংলা সফটওয়্যার। এটি ম্যাক কমপিউটারের ওএস এক্স ১০.৯ ম্যাভেরিক্স, ওএস এক্স ১০.৮ মাউন্টেন লাওন এবং ওএস এক্স ১০.৭ লাওনে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করে।
একুশ আমার
কালজয়ী ইতিহাস নিয়ে ভাষার মাসে আত্মপ্রকাশ করে সেলফোন অ্যাপ্লিকেশান ‘একুশ আমার’। সাতটি স্বতন্ত্র ফিচারের এই অ্যাপটি ডেভেলপ করেছে এথিকস অ্যাডভান্স টেকনোলজি (ইএটিএল)। অ্যান্ড্রয়িড পস্নাটফর্মের জন্য তৈরি সেলফোন অ্যাপটিতে রয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। স্মার্টফোনের ‘একুশ আমার’ অ্যাপিস্নকেশন ব্যবহার করলে ব্যবহারকারী সহজেই জানতে পারবেন ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যমত্ম কখন কী ঘটেছিল। আন্দোলনে অংশ নেয়া সালাম, বরকত, রফিক, জববার, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তসহ সেই সব আত্ম-ত্যাগী সূর্য-সমত্মানের সংক্ষিপ্ত জীবনী। এর বাইরে শুনতে পারবেন ভাষার গান। দেখতে পাবেন একুশের ওপর নির্মিত বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র। অ্যাপটিতে আছে ভাষাভিত্তিক ওয়াল পেপার, দেশের গানের লিরিক এবং কবি-সাহিত্যিকদের কবিতা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের ওপর নির্মিত বিভিন্ন চিত্রায়ন, আর্কাইভ বা গ্যালারি, ওয়াল পেপার শেয়ার করার সুবিধা।
বিজয় বাংলা
বিদায়ী বছরে অ্যান্ড্রয়িড ও লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেমের জন্য নতুন বিজয় সফটওয়্যারের আপডেট ভার্সন উপহার দিয়েছেন আনন্দ কমপিউটার্সের প্রধান ও বিজয় বাংলা’র রূপকার মোসত্মাফা জববার। সমৃদ্ধতার ধারাবাহিকতায় ঋদ্ধ হয়েছে এর ফন্ট। ছাপা কাজে নান্দনিকতা দিতে স্পর্শ করেছে শতক ফন্টের মাইলফলক। ‘শিশুশিক্ষা-১’ ও ‘শিশুশিক্ষা-২’-এর ডিজিটাল ভার্সন ছাড়াও ইন্টারনেটে শিশুশিক্ষাকে পরিবর্ধিত করতে নতুন ওয়েবসাইট বিজয়ডিজিটাল ডটকম আত্মপ্রকাশ করে গেল বছরে। শিশুশিক্ষায় বাংলাভাষা ও প্রযুক্তির মেলবন্ধনে এভাবেই নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন মোস্তফা জববার। এ বিষয়ে চলমান পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নতুন এক যন্ত্র দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, যার নাম ট্যাবলেট পিসি প্রজেক্টর। অ্যান্ড্রয়িডভিত্তিক এসব ট্যাবলেটে বিল্টইন প্রজেক্টর রয়েছে। ব্যাটারিতে চলে চার ঘণ্টা। আগামীতে হয়তো উইন্ডোজভিত্তিক ট্যাবলেটও আসবে।
বাংলা মোড ডিটেক্টর
আগামীতে জরিপ ছাড়াই জানা যাবে সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি। অনলাইনে বিভিন্ন নিউজপোর্টালের খবরের নিচে বাংলায় লেখা পাঠকের মন্তব্য, ব্লগ বা ফেসবুকের আলাপন থেকে দেশের নেটিজেনদের হৃদয়ের কথা পড়ে সনাক্ত করতে পারবে কমপিউটার। বাংলাভাষায় প্রকাশ করা মানব হৃদয়ের ছয় ধরনের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে এই বাংলা মোড ডিটেক্টর সফটওয়্যার তৈরি করছেন আমির মুনতাক গানিম। তবে এ বিষয়ে সফলতার জন্য রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রয়োজন বলে জানান তিনি। যুক্তি হিসেবে ‘সফটওয়্যারটি সরকারকে জনপ্রত্যাশা’ যাচাই-বাছাইয়ে সহায়তা করবে বলে জানান স্যামসাং বাংলাদেশে কর্মরত এই সফটওয়্যার প্রকৌশলী। ড. কে এম আজহারম্নল হাসানের অধীনে এই গবেষণা কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঝালমুড়ি দলে দুই সদস্য গানিম ও প্রিতম।
রবি’র বাংলা আইএম
দেশে প্রথমবারের মতো চালু হয় সেলফোনে বাংলাভাষায় তাৎক্ষণিক বার্তা আদান প্রদানের। আর ভাষার মাসকে স্মরণীয় করে রাখতে ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেঞ্জার হিসেবে পরিচিত ‘বাংলা আইএম’ সেবা চালু করে সেলফোন অপারেটর রবি। অনলাইনে ছাড়াও অফলাইনেও এই সেবা নিশ্চিত করতে অ্যাপ্লিকেশনটি সিমকার্ডে বিল্টইন করেছে অপারেটরটি। ফলে স্মার্টফোনের পাশাপাশি ফিচারফোন থেকেও এই সেবা উপভোগ করতে পারবেন রবি গ্রাহকেরা। বাংলা অথবা ইংরেজি উভয় ভাষাতে ফেসবুকে চ্যাট করতে পারবেন। এ বিষয়ে রবির চিফ মার্কেট অফিসার-সিএমও প্রদীপ শ্রীবাস্তব বলেছেন, আমাদের মাতৃভাষাকে শ্রদ্ধা জানানোর মুহুর্তে এই সেবাটি চালু হয়েছে।
বাংলা লিখি
স্মার্টফোনে বাংলা হরফে ভাব আদান-প্রদানের জন্য ভাষার মাসে নতুন একটি অ্যাপিস্নকেশন উপহার দেয় দেশের সেলফোন অ্যপ্লিকেশন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট অ্যান্ড কমিউনিকেশনস লিমিটেড (এমসিসি)। অ্যান্ড্রয়িড অপারেটিং সিস্টেমের জন্য ডেভেলপ করা এই অ্যাপটি এখন বিনামূল্যেই ব্যবহার করতে পারবেন সেলফোন ব্যবহারকারীরা। ইন্টারনেটে সংযুক্ত হয়ে গুগল পেস্ন স্টোর, অপেরা, অ্যামাজন, সিম্ফোনি ফান স্টোরসহ কিংবা পছন্দের যেকোনো আন্তর্জাতিক অ্যান্ড্রয়িড মার্কেটপ্লেস থেকে ডাউনলোড করা যাচ্ছে। ফনেটিক পদ্ধতিতে ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লেখা যাচ্ছে এই অ্যাপটির মাধ্যমে। অ্যাপটি বিষয়ে এমসিসি’র ঊর্ধ্বতন সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, সহজ ও সুন্দর ইউজার ইন্টারফেসের এই অ্যাপটি অফলাইনেও ব্যবহার করা যায়। এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের সাইটেও বাংলা লেখা শেয়ার করা যাবে। মেহেদী হাসান বলেন, ‘বাংলা লিখি’ কিবোর্ড ব্যবহার করে লেখা কপি করে সুবিধাও সংযুক্ত করা অন্য যেকোনো অ্যাপ্লিকেশনে বাংলা লেখা যাবে। এতে অভিধানের হয়েছে।
হাতেখড়ি
প্রযুক্তির বিকাশে বিদায় নিতে চলেছে ‘আদর্শলিপি’। খড়িকাঠি আর সেস্নট জায়গা করে নিয়েছে জাদুঘরে। হালে কমপিউটার কিংবা ট্যাবের মাধ্যমে শুরম্ন হয়েছে শিশুশিক্ষা কার্যক্রম। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের কদর বেড়েছে আগেই। সঙ্গত কারণে ডিজিটাল ডিভাইসের জন্য বাংলা কনটেন্ট এবং ডিভাইসবান্ধব অ্যাপ্লিকেশনের অভাব এখনও প্রকট। তবে এবার আশার আলো জ্বেলে এমন পরিস্থিতিতে ‘হাতেখড়ি’ ডিজিটাল শিশুশিক্ষার অ্যাপ নিয়ে এসেছে সূর্যমুখী।
‘হাতেখড়ি’ অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপের মাধ্যমে শিশুরা বর্ণমালা শেখা, বর্ণ দিয়ে শব্দ ও বাক্য তৈরি, এমনকি হাতের লেখাও অনুশীলন করতে পরবে। অক্ষর নিয়ে আছে খেলার সুযোগ। বর্ণগুলোর ওপর হাত ঘুরিয়ে হাতের লেখা শেখার দারুণ মজা।
আগামী দিনের শিশুদের কথা ভেবে ৪ ফেরুয়ারি থেকে জনস্বার্থে এই অ্যাপটি বিনামূল্যে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। গুগল পেস্ন স্টোরের বাইরেও দেশের সৃজনশীল কাজের একমাত্র অনলাইন হাট সূর্যরাজ্য থেকেও ‘হাতেখড়ি’ ডাউনলোড করা যাবে।
এ বিষয়ে সূর্যমুখীর সিইও ফিদা হক জানান, আদর্শলিপিকে অনুসরণ করে প্রাক-স্কুল পর্যায়ের শিশুদের জন্য হাতেখড়ি অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। চারজনের টিম টানা এক বছর ধরে এটি ডেভেলপ করেছে। আপাতত অ্যান্ড্রয়িড সংস্করণ হলেও আইফোন ও উইন্ডোজ সংস্করণ নিয়েই পরবর্তী সংস্করণ প্রকাশ করা হবে।
উইন্ডোজের চন্দ্রবিন্দু
নদীর মতো স্রোতস্বিনী বাংলাভাষায় দিন দিনই ব্যবহার কমছে ‘চন্দ্রবিন্দু’ অক্ষরের। কিন্তু আজ যারা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম চালিত ফোনে বাংলা লিখতে চান, তাদেরকে আবার বুকে টেনে নিতে হবে এই চন্দ্রবিন্দুকে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের যেকোনো সেলফোন কিংবা ট্যাবে রক্তের দামে কেনা বাংলাভাষায় লিখতে এবং পড়তে পারবেন ব্যবহারকারীরা। কুয়েটের চার বন্ধুর প্রচেষ্টায় ডেভেলপ করা চন্দ্রবিন্দু’র শুরুটা হয়েছিল মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপ ২০১৩ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। আঞ্চলিক অ্যাপস পর্বে সেরা হয়েছিল উইন্ডোজ ফোনের জন্য ডেভেলপ করা প্রথম এই বাংলা অ্যাপটি। অ্যাপস নির্মাতা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ‘নার্ডক্যাট’-এর ডেভেলপ করা চন্দ্রবিন্দু এবারের আমত্মর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এগিয়ে যাবে আরও একধাপ। ঔপনিবেশিক রীতি থেকে বেরিয়ে যুক্ত হবে ফিক্সড লেআউট- বাংলা হরফের কিবোর্ড। এই বাংলা কিবোর্ডে আদর্শলিপির মতো থাকবে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, কার এবং যুক্তাক্ষরের জন্য নির্দিষ্ট ‘কি’।
আড়াই মাস নিরলস পরিশ্রম করে উইন্ডোজ মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের জন্য সম্মিলিতভাবে অ্যাপটি তৈরি করেছে স্বাগত প্রতীক, তানবিম ইসলাম সিয়াম, মুজাহিদুল ইসলাম ও দেব হালদার। বিদায়ী বছরের জুনে অবমুক্ত করা অ্যাপটির নিয়মিত আপডেটে সংযোজন করা হয়েছে ৩৫ হাজার শব্দের বাংলা অভিধান। আর আগামী মার্চ নাগাদ বাংলায় নতুন অ্যাপ উপহার দিতে কাজ করছে ‘ঢাকা বাস ম্যাপ’-এর এই রূপকারেরা। থেমে নেই ডেস্কটপ ও উইন্ডোজ মোবাইল উভয় ডিভাইসেই কার্যকর একটি ডিজিটাল বাংলা অভিধান উপহার দেয়ার প্রচেষ্টা। চলছে হাতের লেখাকে কমপিউটারের ভাষায় রূপামত্মরের কাজ। এই কাজে নার্ডক্যাট দলের সারথী হয়েছেন কুয়েটের সিএসই বিভাগের আরও এক শিক্ষার্থী ইমন বায়েজিদ।
বাংলা ওসিআর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে এ বিষয়ে স্বাগত প্রতীক বলেন, প্রতিটি অক্ষরকে আলাদা করতে সহায়ক জেনেরিক অ্যালগরিদম নেই, যা আছে তা রোমান হরফের জন্য কাজ করে। বাংলা হরফে মাত্রা থাকায় হরফগুলো আলাদা করা যায় না। আর এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে এখনও চেষ্টা চলছে।
‘প্রজন্ম’ থেকে ‘বৃত্ত-বাংলা’
অ্যান্ড্রয়িড অপারেটিং সিস্টেমে সহজে বাংলা লেখার সুবিধা নিয়ে গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর অ্যান্ড্রয়িড বাংলা অ্যাপ ‘প্রজন্ম’ অবমুক্ত করে ‘ঝালমুড়ি’। এটি ডেভেলপ করেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার অ্যান্ড সায়েন্স বিভাগের চার শিক্ষার্থী। ‘ঝালমুড়ি’ টিমের সদস্যরা হলেন : আমির মুনতাক গানিম, শেখ ইমরান হোসেন, প্রীতম বিশ্বাস ও ফাহিম হোসেন চৌধুরী। এই চারজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অ্যান্ড্রয়িড সিস্টেমে বাংলাবান্ধব অ্যাপিস্নকেশন ডেভেলপ হচ্ছে।
গুগল প্লে স্টোরে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘প্রজন্ম’ বাংলা কিবোর্ড বিষয়ে গানিম জানান, এই কিবোর্ড ১.৬ থেকে উপরের সব ভার্সনেই চলে। কিবোর্ডটির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- যেসব অ্যান্ড্রয়িড ডিভাইস বাংলা সাপোর্ট করে না, সেসব ডিভাইসে বাংলা লেখার সময় বাংলা দেখা যাবে। আর ইংরেজি লেখার জন্যও অন্য কিবোর্ডে যেতে হবে না, লেখা যাবে এ কিবোর্ড থেকেই।
বর্তমানে ফনেটিক পদ্ধতির হলেও এবার একুশে ফেব্রম্নয়ারি নিজেদের গবেষণালব্ধ ফিক্সড লেআউট (জিনজারবেড লেআউট), বানান শুদ্ধি এবং আগাম শব্দ ধারণা সুবিধাযুক্ত নতুন একটি বাংলা কিবোর্ড অবমুক্ত করবে ‘ঝালমুড়ি’। তবে এবার নাম বদলে যাবে। কিবোর্ডটির নাম হবে ‘বৃত্ত-বাংলা’। এসময় একই সাথে বাংলা ফ্লটিং ডিকশনারি উপহার দেবে এই চার তরম্নণ। অভিধানটি অ্যান্ড্রয়িড পদ্ধতিতে সমার্থক শব্দ দেখাবে। পিডিএফ করা বাংলা ডকুমেন্ট থেকেও শব্দার্থ জানাতে পারবে। এই ভাসমান লেআউটটি সব অ্যাপিস্নকেশনে সমানভাবে কাজ করবে। এজন্য অ্যাপটি বারবার রান করাতে হবে না। স্টিকি-নোটের মতো বাই ডিফল্ট কাজ করবে। একবার ইনস্টল করলে সবসময় সচল থাকবে।
এর পরপরই মার্চ নাগাদ আরও একটি বাংলা বিষয়ক অ্যাপিস্নকেশন আসবে বৃত্ত-বাংলায়। এই অ্যাপটি সেলফোন কিংবা ট্যাবের ওপর আঙুল বা পেন দিয়ে লিখলেই তা কম্পোজ করে দেবে। ইতোমধ্যেই এই বাংলা জেশচার কিবোর্ডের কাজ শেষ হলেও শুধু টিউটরিয়াল প্রস্ত্তত করতে সময় লাগায় স্বাধীনতা দিবসে তা আলোর মুখ দেখবে বলে প্রত্যাশা করছে ‘ঝালমুড়ি’।
অপ্রাপ্তির হতাশা
ব্যক্তি উদ্যোগে প্রযুক্তির আঙিনায় বাংলাভাষা নিয়ে কাজ চলছে। কিন্তু সার্বিক বিচারে গত এক বছরে প্রযুক্তিতে অবহেলার শিকার হয়েছে আমাদের হৃদয়ের ভাষা। অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন থেকে অ্যাপ নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিতে নির্বাচিত প্রকল্পে জায়গা হয়নি ‘ভাষাভিত্তিক’ কোনো প্রকল্পের।
মাতৃভাষা বাংলার সাথে প্রযুক্তির বন্ধন দৃঢ় করতে বিদায়ী বছরে নেয়া হয়নি নতুন কোনো উদ্যোগ। সংশিস্নষ্টদের অবহেলা আর অনাদরে উপেক্ষিত রয়েছে প্রযুক্তিতে বাংলাভাষা প্রয়োগের লালিত স্বপ্ন। এক যুগ আগে কাজ শুরম্ন হলেও মাঝপথে থমকে গেছে গৃহীত উদ্যোগ। পরিকল্পনা বাসত্মবায়নে কর্তৃপক্ষের উন্নাসিকতায় আলোর মুখ দেখেনি বাংলাভাষা আর মেশিনের ভাষার মধ্যে সখ্যতা গড়ার সুনির্দিষ্ট আটটি প্রকল্প।
ডিজিটাল বাংলা
সরকারি সহায়তায় ‘বাংলাভাষা প্রমিতকরণ’-এর অধীনে বাংলা টেক্সট টু স্পিচ ও স্পিচ টু টেক্সট, অপটিক্যাল ক্যারেক্টর রিকগনিশন (ওসিআর), বাংলা মরফোলজিক্যাল অ্যানালাইজার্স, ডিজিটাল বাংলা অভিধান ও শব্দকোষ, গ্রামার ও স্পেল চেকার, ফন্ট কনভার্টার (ট্রু টাইপ টু ইউনিকোড), বাংলা টেক্সট ক্যাটাগারাইজেশন ও প্রোনাউনসিয়েশন জেনারেটর্স এবং সর্বোপরি এর কাজের জন্য বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আশফাকুর হুসাইনের নেতৃত্বে অধ্যাপক মনসুর মুসা, মোসত্মাফা জববার, মুনির হাসানসহ ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু বিদায়ী বছরে এই কমিটি একটি বৈঠকও করেনি। সেলফোনের ১২ কি’র ন্যাশনাল মোবাইল বাংলা কিবোর্ড পাইনি আমরা।
বিচ্ছিন্নভাবে নানা কাজ হলেও এখন পর্যন্ত দেখা মেলেনি সফলতার মুখ। অর্থ বরাদ্দের আশ্বাস এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হলেও অদৃশ্য কারণে তা ঝুলে আছে দিনের পর দিন। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়াও ছিলো দুষ্কর। সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানই এর দায় নিতে নারাজ।
ইউএনএল সদস্যপদ
কমপিউটারের মাধ্যমে বিশ্বের অন্যান্য ভাষার সাথে বাংলাভাষার সন্ধি করতে প্রয়োজনীয় প্রাযুক্তিক বন্ধন তৈরিতে এখনও পিছিয়ে আছি আমরা। উর্দুসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি ভাষা ইউএনএলের সদস্য হয়ে নিজ ভাষার মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার সাথে যোগাযোগ করছে, কিন্তু ২০১৩-এর মে মাসে বাংলাদেশ সদস্য হলেও এরপর আর খুব একটা উন্নতি হয়নি। সূত্র মতে, ইউনিকোড বাংলা স্ট্যান্ডার্ড বাংলা কিবোর্ড প্রস্ত্তত করা হলেও তা এখনও পৌঁছানো হয়নি ইউএনএলের কাছে। সদস্য হওয়ার কিছু পূর্বপ্রস্ত্ততি হিসেবে ইউএনএল নির্মিত ছকে বাংলাভাষার একটি ডিজিটাল অভিধান ও একটি
ডিজিটাল শব্দকোষ নির্মাণ করা হয়নি।
ইউএনএল বা ইউনিভার্সাল নেটওয়ার্কিং ল্যাঙ্গুয়েজ এমন একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, যা ভাষাকে সহজেই স্বতন্ত্র অ্যালগরিদমে রূপান্তরের মাধ্যমে ভাষান্তর ঘটাতে কাজ করে। তবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সুবিধা পেতে হলে প্রাথমিক শর্ত হলো, অনুবাদের সুবিধা পাওয়ার আগে ওই ভাষার সম্পূর্ণ একটি অভিধান ও ব্যাকরণকে ইউনিকোডে ব্যবহারের উপযুক্ত করে তৈরি করতে হয়। অর্থাৎ এজন্য এমন একটি নির্দেশাবলী তৈরি করতে হবে, যা যেকোনো ভাষাকে সেই নির্দেশাবলীর আওতায় ইপ্সিত ভাষায় রূপান্তরিত করতে পারে। সেই লক্ষ্যে প্রযুক্তিবিদ ও ভাষাবিদের সমন্বয়ে জাতীয় পর্যায়ে একটি কমিটি গঠনের পর বছর গড়িয়ে গেলেও দৃশ্যত ফলাফলের দেখা মেলেনি এখন। কমিটির সদস্যরাও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর। ইউএনএলের সদস্য হওয়ার পূর্বশর্তে বাংলা ডিজিটাল শব্দকোষ ও অভিধান নির্মাণে একটি বড় কলাকুশলী দলের কাজ শুরুর কথা শোনা গেলেও তার দেখা মেলেনি আজও। বলতে গেলে সে অবহেলার জের-দুর্ভোগ আমাদেরকে স্বাভাবিকভাবেই পোহাতে হচ্ছে এখনও।
ওয়েবে বাংলার দুর্দশা
অনলাইনে তথ্যসেবা দিতে মন্ত্রণালয়গুলোর ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও এগুলোর নিরাপত্তায় দৃষ্টি দেয়া হয়নি। একইভাবে তথ্য হালনাগাদ করার পাশাপাশি এর বাংলা সংস্করণের বিষয়েও প্রতীয়মান হয়েছে সংশ্লিষ্টদের চরম উদাসীনতা। সরকারি অধিকাংশ ওয়েবসাইটেই বাংলাভাষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। পাঁচ বছরেও সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ওয়েবসাইটটি যেমন পূর্ণতা পায়নি, তেমনি তথ্য মন্ত্রণালয়, কমপিউটার কাউন্সিলসহ বেশিরভাগ ওয়েবের নেই ‘বাংলা’ সংস্করণ। দীর্ঘদিনেও ‘এরর’ মুক্ত হয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র ওয়েবের বাংলা সংস্করণ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবে ‘বাংলা’ লিঙ্ক থাকলেও তা টেনে নিয়ে যায় ইংরেজিতে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটিটও বাংলাবান্ধব নয়। অবশ্য বাংলা একাডেমি এই ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও ওয়েবটিতে মেনুবারে ‘হোম’-এর পরিবর্তে ‘প্রচ্ছদ’ কিংবা ‘ভিশন’-এর পরিবর্তে ‘লক্ষ্য’ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি ওয়েবেও বাংলাভাষা সাহিত্যচর্চায় পূর্ণতা দিতে পারে।
আলো-অধারির মুখোমুখি
বাংলার সাথে প্রযুক্তির ভাষার মেলবন্ধন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিজয়বাংলা সফটওয়্যার ও কিবোর্ডের রূপকার প্রযুক্তিবিদ মোসত্মাফা জববার বলেন, এ বিষয়ে দীর্ঘ এক বছরেও কোনো মিটিং যেমন হয়নি, তেমনি প্রকল্প তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ায় গবেষণাকাজে অর্থমন্ত্রী ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে চাইলেও তা হাতছাড়া হয়ে যায়। বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের চরম হতাশার কারণে আমরা প্রতিনিয়ত পিছিয়ে যাচ্ছি। এখনও মোবাইল ফোনের জন্য বাংলা কিবোর্ড লে-আউট পাইনি।
জবাবে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এসএম আশফাকুর হোসেন জানান, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল ইতোমধ্যেই (১৫ ফেব্রম্নয়ারি ২০১১) মোবাইল বাংলা প্রমিতকরণ কিবোর্ড বিএসটিআই থেকে নিবন্ধন করা হয়েছে। এর নিবন্ধন নং বিডিএস-১৮৩৪:২০১১। কমপিউটারের জন্য ইউনিকোড কিবোর্ডের নিবন্ধন নম্বর বিডিএস ১৫২০।
এ বিষয়ে আশফাকুর হোসেন বলেন, বিষয়টি এখন তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে আছে। ইতোমধ্যেই বাংলা ডিজিটাল শব্দকোষ প্রণয়ন করেছি। তবে জাতীয় কিবোর্ড-এর পেটেন্ট আইনি জটিলতায় আমাদের কাজ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। আমরা সব কাজ শেষ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ঠিকাদার নিয়োগ করে মন্ত্রণালয় কাজ শুরম্ন করেছে। এ বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানাতে তিনি মন্ত্রণালয় সচিবের পিএস-টু ড. মোহাম্মদ আবুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। ড. হাসান বলেন, মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব আলাউল কবীর ও যুগ্ম সচিব রফিকুল ইসলামের অধীনে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করছি জুন মাস নাগাদ ওসিআর-এর কাজ শেষ হবে। খুব শীঘ্রই ট্রান্সলেটরের কাজও শুরম্ন হবে। এজন্য যুগ্ম সচিব সুশান্ত কুমার সাহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ওয়েবে বাংলা কনটেন্ট বাড়াতে মন্ত্রণালয়গুলোকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে কিংবা ১০-১২ তারিখের মধ্যে বাংলাভাষা প্রমিতকরণ জাতীয় কমিটির বৈঠক হবে। এই বৈঠকে মূলত ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে যোগ দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। আর মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আগামী জুলাই নাগাদ ওসিআর, স্পিচ টু টেক্সটসহ অন্যান্য প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে টাকা চাওয়া হলেও তা এখনও পাওয়া যায়নি।
প্রত্যয় হোক এগিয়ে চলার
ভাষা একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। সময়ের সাথে এর এগিয়ে চলা সবসময় অব্যাহত থাকে। বাংলাভাষা এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যতিক্রম নয়। এখন প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তি ভাষাকে দিয়েছে অন্যরকম গতির সুযোগ। প্রযুক্তিতে বাংলাভাষা প্রয়োগের রয়েছে সমূহ সুযোগ। স্বীকার করতে হবে, এ ক্ষেত্রে অতীতে জাতি হিসেবে আমাদের সীমাহীন অবহেলা রয়েছে। তারপরও দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশে প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার বিভিন্ন ধরনের প্রয়োগ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। ব্যক্তি উদ্যোগে এসব প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার নানামুখী লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অনেক প্রযুক্তিবিদ, গবেষক ও প্রযুক্তিপ্রেমী ব্যক্তি। এদের গবেষণা ও সাধনা-সূত্রে প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।
বর্তমান ইন্টারনেটের জগতে সারাবিশ্বই যখন হাতের মুঠোয়, তখন ভাষাগত সমস্যায় অনেক সময় সহজ কাজটিও দুর্বোধ্য হয়ে উঠছে আমাদের। কিন্তু বাংলার পাশাপাশি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যদি ইউএনএলের আওতায় চলে আসে তাহলে আর্থিক লেনদেন থেকে শুরম্ন করে কূটনৈতিক যোগাযোগ বা সাংস্কৃতিক যোগাযোগ সব ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের নতুন জগতকে আরও সহজ ও গতিশীল করে তুলবে। এই প্রযুক্তিতে বাংলাভাষার অন্তর্ভুক্তি রাষ্ট্রিক-সামাজিক, গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ উন্মোচন করবে সন্দেহ নেই। বিশ্বের পঞ্চম ভাষা হিসেবে এর ব্যবহার হবে বহুমাত্রিক সেটাও স্বাভাবিক। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের বাংলাভাষী কোনো মানুষ সহজে অন্য ভাষাকে যেমন নিজের ভাষায় পড়তে পারবে, ঠিক তেমনি অন্য ভাষার মানুষও বাংলাভাষার রসাস্বাদন করতে পারবে নিজের ভাষায়। এখন সেই অপেক্ষার অবসান কবে হবে, জানা নেই। তবে এ কাজে গতি আনাই হবে বড় কাজ
ফিডব্যাক : netdut@gmail.com