লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - সেপ্টেম্বর
জনপ্রিয় হচ্ছে স্মার্ট প্রিন্ট সার্ভিস
দেশের প্রিন্টিং সেক্টরে নতুন ধারণা ম্যানেজ প্রিন্ট সার্ভিস (এমপিএস) নিয়ে কাজ করছে ‘স্মার্ট প্রিন্টিং সলিউশনস লিমিটেড’। প্রতিষ্ঠানটি স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর যাত্রা শুরু করার পর প্রিন্টিং খাতে এই সেবা বেশ সাড়া ফেলেছে। এমপিএসের আদলে ‘স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস’ নিয়ে কমপিউটার জগৎ-এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো: মিজানুর রহমান সরকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহেল রানা।
কমপিউটার জগৎ : স্মার্ট প্রিন্টিং সলিউশনস লিমিটেডের শুরুর কথা বলুন?
মিজানুর রহমান : দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চলতি বছর যাত্রা শুরু করে স্মার্ট প্রিন্টিং সলিউশনস লিমিটেড। স্মার্ট টেকনোলজিস দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বসেরা নানা ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করছে। সেখান থেকে কাস্টমারদের যাবতীয় প্রিন্টিং সেবা দিতে আমরা নতুন এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করি। স্মার্ট প্রিন্টিং সলিউশনস রিকো ব্র্যান্ডের পণ্য দিয়ে আমরা পরিচালনা করছি। আপাতত আমরা এই একটি ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করছি। রিকোর এমএফপি (মাল্টিফাংশনাল প্রিন্টার), লেজার প্রিন্টার নিয়ে আমরা কাজ করি। দেশের প্রিন্টিং সেক্টরে প্রথমবারে মতো আমরাই ম্যানেজ প্রিন্ট সার্ভিস (এমপিএস) চালু করেছি। আমরা নিজস্ব ব্র্যান্ড হিসেবে এর নাম দিয়েছি ‘স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস’।
কমপিউটার জগৎ : ম্যানেজ প্রিন্ট সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন?
মিজানুর রহমান : বাংলাদেশে নতুন হলেও এটি গ্লোবাল একটি ধারণা এবং এই ধারণার পথিকৃৎ রিকো। ম্যানেজ প্রিন্ট সার্ভিস হচ্ছে কর্পোরেট হাউসগুলোর যে প্রিন্টিং চাহিদা তা আউটসোর্সের ভিত্তিতে ম্যানেজ করা। এমপিএস সেবা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা পায়। যেমন- প্রিন্টার, টোনারসহ অন্যান্য প্রিন্টিং অ্যাক্সেসরিজ কেনার ঝামেলা থাকে না, আলাদা জনবল লাগে না, মেইনটেন্যান্স ও সার্ভিসিংয়ের কোনো ঝামেলা নেই। সবচেয়ে বড় কথা, প্রিন্টিং নিয়ে আলাদা কোনো বিনিয়োগ করতে হয় না। ফলে এই খাতে অ্যাসেট ব্যবস্থাপনারও কোনো ঝামেলা হয় না। প্রতিষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী আমরা সবকিছু ম্যানেজ করে কাস্টমারদের প্রিন্টিং সেবা দিই। অনেক প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় প্রিন্টিংয়ের জন্য একাধিক ব্র্যান্ডের নানা মডেলের প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়। ফলে ডিভাইস, টোনারসহ অন্যান্য অ্যাক্সেসরিজ আলাদা আলাদা ভেন্ডরের কাছ থেকে কিনতে হয়। আবার প্রিন্টারে সমস্যা দেখা দিলে নির্দিষ্ট ভেন্ডরের কাছে যেতে হয়। এককথায় শুধু প্রিন্টিংয়ের জন্য বড় ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। এতে মূল ব্যবসায়ের অনেক সময় ক্ষতি হয়ে যায়। ব্যবসায় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে প্রিন্টিং চাহিদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। প্রিন্টিং চাহিদা পূরণে কোনো প্রতিষ্ঠান যখন বিনিয়োগ করে, তা অনেক সময় সঠিক পন্থায় হয় না। দেখা যায়, যেখানে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রিন্টার প্রয়োজন, সেখানে হয়তো তুলনামূলক কমমাত্রার প্রিন্টার কেনা হয় বা যেখানে কমমাত্রার দরকার, সেখানে বড় কেনা হয়। এতে সঠিক বিনিয়োগ হয় না। আবার দেখা যায়, কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সমাধান করতে সময় অপচয় হলে ব্যবসায়ের ক্ষতি হয়। ফটোকপি ও প্রিন্টিংয়ের পাশাপাশি আমরা স্ক্যানিং সার্ভিস ফ্রি দিয়ে থাকি।
কমপিউটার জগৎ : স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিসের ক্ষেত্রে ব্যয় কেমন হয়?
মিজানুর রহমান : স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা আগ্রহী প্রতিষ্ঠানে সর্বপ্রথম প্রিন্টিং খাত নিয়ে ফ্রি কনসালট্যান্সি ও সার্ভে করি। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রিন্টিং চাহিদা, পরিবেশ, ব্যবহারকারীর সংখ্যাসহ যাবতীয় বিষয় বিবেচনা করে আমরা সঠিক একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করে ব্যয়ের হিসাব দিই। এই সেবা দেয়ার আগে আমরা হিসাব করে দেখেছি স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিসের মাধ্যমে প্রিন্টিং খাতে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হয়। প্রতি পেজ প্রিন্ট হিসেবে আমরা বিল নির্ধারণ করি ও প্রতি মাসে এই বিল পরিশাধ করতে হয়। স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমরা চার বছরের চুক্তিতে কাজ করি। স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস নিতে কোনো ধরনের ডাউন পেমেন্ট কিংবা কোনো ইন্টাররেস্ট দিতে হয় না। প্রিন্টিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আউটসোর্স করলে এতে বিনা বিনিয়োগে একদিকে অর্থ যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি নির্ঝাঞ্ঝাট প্রিন্টিং সেবা পাওয়া যাবে। ফলে মূল ব্যবসায়ের দিকে পূর্ণাঙ্গ ফোকাস থাকে।
কমপিউটার জগৎ : দেশে ম্যানেজ প্রিন্ট সার্ভিসের সম্ভাবনা কেমন?
মিজানুর রহমান : বাংলাদেশের প্রিন্টিং বাজার অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। আমরা দেখেছি, শুধু ঢাকা শহরেই প্রতি মাসে প্রায় ৫০ কোটি পেজ প্রিন্ট হয়। দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়বে। এই প্রিন্টিং বাজারে প্রায় সব প্রতিষ্ঠান নিজেরা ডিভাইস কিনে এ চাহিদা পূরণ করছে। আমরা চাই এই প্রিন্টিং চাহিদার ৭০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিসের আওতায় নিয়ে আসতে।
স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস আমরা দেশে শুরু করার পর ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো এই সেবার সাথে আগেই পরিচিত থাকায় আমরা তাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। পাশাপাশি দেশী অনেক প্রতিষ্ঠানেও আমাদের কাজ হচ্ছে। প্রতি মাসে তিন লাখ পেজ প্রিন্ট হয় এ ধরনের একটি দেশী কোম্পানিতে সম্প্রতি কনসালট্যান্সি করে আমরা দেখেছি ম্যানেজ প্রিন্ট সার্ভিসে প্রতি মাসে এই খাতে ৫ লাখ টাকা সাশ্রয় করাসহ আরও উন্নত প্রিন্টিং সেবা পাওয়া সম্ভব। ফলে বছরে ওই কোম্পানির সাশ্রয় হবে ন্যূনতম ৬০ লাখ টাকা এবং কোনো ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই।
কমপিউটার জগৎ : বর্তমানে স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস দেশের কোথায় কোথায় চালু আছে?
মিজানুর রহমান : আপাতত ঢাকায় স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস দিচ্ছি। ভবিষ্যতে এই সেবা আমরা চট্টগ্রামে চালু করব। তবে দেশব্যাপী রিকোর মাল্টিফাংশনাল প্রিন্টার, লেজার প্রিন্টারসহ অন্যান্য ডিভাইস আমাদের ব্রাঞ্চের মাধ্যমে বিক্রি হয় এবং আমরা বিক্রয়-পরবর্তী সেবা দিয়ে থাকি। ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী দেশব্যাপী স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস চালু করব।
কমপিউটার জগৎ : আপনাদের গ্রাহক সেবা সম্পর্কে জানাবেন?
মিজানুর রহমান : স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিসে সব বিনিয়োগ যেহেতু আমরা করি, ফলে গ্রাহকদের সন্তুষ্টির বিষয়টি সবার আগে প্রাধান্য দিই। আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে কাস্টমারদের সেবা করা। এ জন্য আমাদের কাস্টমার সার্ভিস নামে আলাদা বিভাগ আছে। ২৪ ঘণ্টা আমাদের হটলাইন সেবা আছে। গ্রাহক প্রতিষ্ঠানে প্রিন্টিং সমস্যা হলে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের সাপোর্ট টিম তা সমাধান করে। স্মার্ট ম্যানেজ সার্ভিস আমরা অটোমেটেড করেছি। ওয়েবের মাধ্যমে আমরা প্রিন্টারগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখি। কোনো প্রতিষ্ঠানে যদি মাসে এক লাখ পেজ প্রিন্ট হয় এবং সেখানে যদি দশটি প্রিন্টার থাকে, তাহলে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানে আলাদা করে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে দায়িত্বে রাখি। এ ছাড়া প্রতিটি ডিভাইসের গায়ে নম্বর থাকে। কোনো সমস্যা হলে ওই নম্বরে কল করলে তাৎক্ষণিক সমাধান দেয়া হয়