লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ২
বিকেন্দ্রায়নের এক ডজন প্রযুক্তি
বিকেন্দ্রায়ন বা ডিসেন্ট্র্যালাইজেশন হচ্ছে ক্ষমতার বা কর্তৃত্বের পুনর্বণ্টনের একটি প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় আজকের দুনিয়াজুড়ে নতুন নতুন টেকনোলজি ও বিজনেস মডেলের সুবাদে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিকেন্দ্রায়িত হয়ে কেন্দ্র থেকে চলে যাচ্ছে কমিউনিটি কিংবা ব্যক্তির হাতে। এই বিকেন্দ্রায়নের লক্ষ্যকে সামনে রেখে উদ্ভাবিত এ ধরনের প্রযুক্তি ও বিজনেস মডেলের সংখ্যা অনেক। এবারের প্রচ্ছদে বিকেন্দ্রায়নের তেমনিই এক ডজন প্রযুক্তি ও বিজনেস মডেলের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। আগামী কোনো সংখ্যায় বিকেন্দ্রায়নের আরও কয়েকটি প্রযুক্তির ওপর আলোকপাতের প্রত্যাশা রইল।
ফার্ম হ্যাক
অলাভজনক ফার্ম হ্যাক (www.farmhack.net) নিজেকে পরিচয় দেয় একটি ‘ওপেনসোর্স কমিউনিটি ফর অ্যা রেজিলিয়েন্ট অ্যাগ্রিকালচার’ হিসেবে। এর জন্ম ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির একটি ডিজাইন ওয়ার্কশপ চলার সময়ে। এ ওয়ার্কশপে যোগ দিয়েছিলেন কতিপয় প্রকৌশলী ও তরুণ। ফার্ম হ্যাক দ্রুত রূপ নেয় ফার্ম টুল ডকুমেন্ট করা, শেয়ার করা উন্নয়নের একটি অনলাইন প্লাটফর্মে। আপনি যদি একজন তরুণ কৃষক হন কিংবা যদি হন অভিজ্ঞ কৃষক আর আপনি চান নতুন কৃষিযন্ত্র; কিংবা যদি হন এমন কেউ, যিনি নতুন কিছু উদ্ভাবন করেছেন; কিংবা আপনার মাথায় আছে নতুন কোনো ধারণা- তবে আপনার যাওয়ার উত্তম জায়গা এই ফার্ম হ্যাক। এই ওয়েবসাইটে একটু উঁকি মারলে আপনি ‘হাউ টু’ ইনফরমেশন, থেকে পেয়ে যাবেন- কী করে পাবেন গাজরের সঠিক বীজ, কী করে বাস্তবায়ন করবেন একটি ওয়েব-কানেকটেড সেচ ব্যবস্থা, কী করে চালাবেন পেডেল-চালিত রুটওয়াশার কিংবা কী করে ফার্মে ছবি তোলার জন্য ব্যবহার করবেন কম খরচের ওভারহেড বেলুন-মাউন্টেড ক্যামেরা এবং এমনি আরও অনেক কিছু।
ফার্ম হ্যাক এমনটি একটি জায়গা, যেখানে তরুণ কৃষকেরা কথা বলা শুরু করতে পারেন অভিজ্ঞ কৃষিবিদদের সাথে। সফল ফার্মগুলোর কেস স্টাডি খুব শিগগিরই ফার্ম হ্যাক সাইটে পাওয়া যাবে। অধিকন্তু, এই সাইট কাজ করে একটি টেকসই হালনাগাদ কৃষি গবেষণার একটি প্লাটফরম হিসেবে। এটি সমমনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগও ঘটিয়ে দিতে পারে। ন্যাশনাল ইয়ং ফার্মার্স কোয়ালিশন (এনওয়াইএফসি) ২০১০ সালে নিউইয়র্কে জন্ম দেয় ‘ফার্ম হ্যাক’ নামের এই অলাভজনক সাইট। আর তরুণ কৃষকদের জন্য করা হয় www.youngfarmers.org। এনওয়াইএফসি তরুণ কৃষক, প্রতিষ্ঠিত কৃষক, কৃষি সেবাদাতা, সুখাদ্য সমর্থক, আলোচনাকারী ও সচেতন ভোক্তার সমন্বয়ে গঠিত। এই সাইটের লক্ষ্য এদের সার্বিক সহযোগিতা।
ওয়্যারলেস রেজিস্ট্রি
২০১৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ‘দি ওয়্যারলেস রেজিস্ট্রি ইনক’ নামের কোম্পানি ওয়্যারলেস নেমের জন্য বিশ্বের প্রথম গ্লোবাল রেজিস্ট্রির উদ্বোধন ঘোষণা করে। একইভাবে ডোমেইন নেম সিস্টেম (ডিএনএস) উন্মুক্ত করেছিল ইন্টারনেট নামের শক্তির। ‘ওয়্যারলেস রেজিস্ট্রি’ উন্মোচন করেছে ইন্টারনেট অব থিংসের ক্ষমতা। উদ্বোধনের দিন থেকে যেকোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রি করতে পারবে ওয়্যারলেস নেম (wirelessregistry.com), এসব নামের অ্যাসোসিয়েট কনটেন্ট এবং সরবরাহ করতে পারবে এসবের অর্থ। নতুন এ রেজিস্ট্রি যেকোনো জনকে সুযোগ করে দেবে তাদের প্রক্সিমাল আইডেন্টিটিগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ দখলের। সুযোগ দেবে নতুন সেবা ও অ্যাপ্লিকেশন সৃষ্টি ও ব্যবহারের, যা এর আগে সম্ভব ছিল না।
যেসব বস্ত্ত (যেমন : স্মার্টফোন, হোম রাউটার, এমনকি আপনার গাড়ি) ওয়াই-ফাই বা ব্লুটুথ ওয়্যারলেস টেকনোলজি ব্যবহার করে, সেগুলোর রয়েছে অনন্য এক সিগনেচার ও প্রক্সিমাল আইডেন্টিটি। আপনার ওয়্যারলেস নেম রেজিস্টার বা এসএসআইডি আপনাকে সুযোগ দেবে ‘ওয়্যারলেস রেজিস্ট্রি’তে আপনার প্রক্সিমাল আইডেন্টিটির মালিক হওয়ার এবং একটি ভার্চু্যয়াল বাবল সৃষ্টির, যা থাকতে পারে একটি স্থানে কিংবা যেতে পারে সেখানে, যেখানে আপনি যাবেন। ওয়্যারলেস রেজিস্ট্রি ইঙ্কের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও প্যাট্রিক প্যারোডি বলেন, আমরা গড়ে তুলেছি একটি সিস্টেম- দি ডিএনএস অব থিংস। এই ব্যবস্থা মানুষ ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওয়্যারলেস সিগন্যালের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। সেই সাথে তাদের ওয়্যারলেস সিগন্যালকে অর্থবহ করে তোলার সুযোগও সৃষ্টি করে। বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও এজেন্সির জন্য ওয়্যারলেস রেজিস্ট্রি তাৎক্ষণিকভাবে সৃষ্টি করবে লাখ লাখ ভার্চু্যয়াল প্রক্সিমাল বিলবোর্ড। এগুলোতে কোনো ওয়াই-ফাই সংযোগ ছাড়াই খুচরা বিক্রেতাদের জন্য প্রতিদিনের বেচাকেনায়, কুপনে ও অন্য ধরনের বাণিজ্যিক লেনেদেনে ভোক্তাদের সংশ্লিষ্ট করার একটি সহজ-সরল উপায় এনে দেয়। ব্যক্তির ক্ষেত্রে ওয়্যারলেস রেজিস্ট্রি তাদের সুযোগ দেয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ইন্টারেকশনের একটি প্রক্সিমাল ডাইমেনশনের। একই সাথে তাদের হাতে তুলে দেয় এমন এক হাতিয়ার, যার মাধ্যমে এরা ঘোষণা দিতে পারে, এরা কীভাবে প্রক্সিমাল আইডেন্টিটিগুলো ব্যবহার করতে চান।
উন্ডারবার
রিলেয়ার। ইউরোপের একটি নতুন হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কোম্পানি। এর সদর দফতর আমস্টারডামে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় গত বছরের জানুয়ারিতে। এ কোম্পানি ডিভাইস ম্যানুফেকচারার, অ্যাপ ডেভেলপার ও সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেট অব থিংসের সুবিধা বাড়াতে সহায়তা করে। এই কোম্পানি ডেভেলপারদের জন্য তৈরি একটি হার্ডওয়্যার কিটের ক্রাউডফান্ডিং ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। এরা এই কিটের নাম দিয়েছে WunderBar।
ধরুন, আপনি বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন, কিন্তু বাড়িতে ভুলে ফেলে গেছেন মানিব্যাগ বা অফিসের চাবি কিংবা এমনি কোনো দরকারি বস্ত্ত। কিংবা ভুলে গেছেন প্রিয় ফুল গাছটিতে পানি দিতে, পানির জন্য হাহাকার করছে বেচারি ফুলগাছ। যদি কোনো অ্যাপ একটি তাগিদি নোটিস দিয়ে আপনাকে এসব ভুলে যাওয়া বিষয় সময়মতো জানিয়ে দেয়, তবে নিশ্চয় ঝামেলা কমে। রিলেয়ারের উন্ডারবার কিট ঠিক সেই কাজটিই করবে। এর কনফিগারেশন ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে, যেনো এটি দেখতে মনে হয় একটি চকলেট বারের মতো। বলা যায়, এটি আসলে কতগুলো সেন্সরে ভর্তি একটি ত্রিমাত্রিক চকলেট বাক্স। উন্ডারবার হচ্ছে ইন্টারনেট অব থিংসের অ্যাপ শুরু করার সবচেয়ে সহজ উপায়, যেখানে প্রয়োজন নেই হার্ডওয়্যার সম্পর্কে জানার। অ্যাপ ডেভেলপারেরা উন্ডারবারের ইজি-টু-ইউজ এসডিকেগুলো ব্যবহার করে কিংবা তাদের সরল REST API দিয়ে দ্রুত ভৌত দুনিয়ার ডাটায় প্রবেশ করতে পারবে। উন্ডারবার প্যাকে আছে Bluetooth Low Energy (Beacon), WiFi, SDKs for iOS, Android and Node.js!
উন্ডারবারে রয়েছে ছয়টি শক্তিশালী স্মার্ট মডিউল। তিনটি মডিউলে আছে টেম্পারেচার, প্রক্সিমিটি, লাইট, কালার, হিউমিডিটি ও মুভমেন্ট মনিটর করার সেন্সর। চতুর্থ মডিউলটি একটি অবলোহিত ট্র্যান্সমিটারের সাহায্যে সহায়তা করবে আপনার হোম এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে। শেষ দু’টি মডিউল বেছে নেবেন আপনি এবং আপনার ক্রাউড। সবগুলো অ্যাপ-রেডি অবস্থায় সোজা বাক্স থেকে বেরিয়ে আসে কয়েক মিনিটের মধ্যে। যেহেতু উন্ডারবার এখনও একটি ডেভ কিট, এর যেকোনোটিকে আপনি আরও স্মার্টার করে তুলতে পারেন।
ওপেন গার্ডেন
ওপেন গার্ডেন ইঙ্ক। যুক্তরাষ্ট্রে ২০১১ সালে এ কোম্পানিটি যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেন ব্যবসায়ী মিকা বেনোলিয়েল, সিস্টেম আর্কিটেক্ট টেলর অনগারো, ইন্টারনেট আর্কিটেক্ট স্ট্যানিসলাভ শ্যালুনভ এবং সফটওয়্যার ডেভেলপার গ্রেগ হ্যাজেল। কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতাদের সবাই ইন্টারনেট অবকাঠামো ও পিয়ার-টু-পিয়ার টেকনোলজিতে মোটামুটি সমভাবে অভিজ্ঞ। বেনোলিয়েল কাজ করেছেন স্কাইপির সাথে। অনগারো কর্মজীবনের বেশিরভাগই কাটিয়েছেন আইবিএমের ফেডারেল চিপ টেকনোলজি অফিসে। শ্যালুনভ কাজ করেছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট অবকাঠামোর ক্ষেত্রে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ওপেন গার্ডেন খুবই জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তা বিবেচনায় এর পরেই রয়েছে যথাক্রমে ভারত, মেক্সিকো, ফ্রান্স, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন ও জার্মানির স্থান। ইন্টারন্যাশনাল ডাটা কর্পোরেশনের সিনিয়র অ্যানালিস্ট কেভিন রেস্টিভো বলেন, আফ্রিকার মতো বিকাশমান মোবাইল মার্কেটগুলোতে ওপেন গার্ডেন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা। কারণ, যেখানে তুলনামূলকভাবে কম লোকের সেলফোন রয়েছে আর আয়ের হার কম, সেখানে লোকেরা ফোন সার্ভিস শেয়ার করতে বেশি আগ্রহী।
এই কোম্পানি ‘ওপেন গার্ডেন’ নামে একটি সফটওয়্যার সলিউশন বাজারে ছেড়েছে। এটি একটি প্রোপ্রাইটরি ইন্টারনেট কমিউনিটি-বেজড কানেকশন শেয়ারিং সফটওয়্যার সলিউশন, যা ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ ব্যবহারকারী ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও মোবাইল ফোনের মধ্যে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস শেয়ার করে। এখানে কোনো রুট অ্যাক্সেস দরকার হয় না। এটি ওয়াই-ফাই হটস্পটের মতো, তবে এটি ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ ব্যবহার করে সরাসরি। ওপেন গার্ডেন ব্যবহার করতে এটি আপনার ফোন, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেটে ইনস্টল করে নিন, যাতে এগুলোকে এর সাথে কানেক্ট করা যায়। একবার কোনো ডিভাইসে ওপেন গার্ডেন ইনস্টল হয়ে গেলে ডিভাইসটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুই মিনিটের মধ্যে কানেক্ট হয়ে যাবে। যেখানে ওয়াই-ফাই পাওয়া যায়, সেখানে তা সাপোর্ট করবে সরাসরি। Android 4.4.x (KitKat)-এর রয়েছে বেশ কিছু VPN bugs, ফলে এতে ওপেন গার্ডেন কাজ করবে না। যদি আপনার ক্যারিয়ারে ওপেন গার্ডেন পাওয়া না যায়, তবে পেতে পারেন এই ঠিকানায় : opengarden.com/download
যখন কোনো ব্যবহারকারীর ওপেন গার্ডেন নেটওয়ার্কে সরাসরি কোনো ইন্টারনেট কানেকশন থাকে না, তখন তাকে এই অ্যাপ্লিকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইন্টারনেটে কানেক্ট করে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। যার ইন্টারনেট কানেকশন শেয়ার করা হচ্ছে, সে ব্যক্তি যখন নেটওয়ার্ক ছেড়ে যাবেন, তখন এই অ্যাপ্লিকেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা ধরে ফেলে এবং পরবর্তী প্রাপ্তব্য সর্বোত্তম কানেকশনের সাথে কানেক্ট করে দেবে মাল্টিপল চ্যানেল ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের মাধ্যমে। নতুন পাওয়া এই কানেকশনে ইন্টারনেটের গতি ও নির্ভরশীলতা আরও উন্নত হয়। এ ধরনের নেটওয়ার্ক সেলফ-হিলিং ও সেলফ-ফর্মিং, যেখানে প্রতিটি নোড কাজ করে লোকাল নলেজের ওপর। আর একই সাথে এরা প্রবাবিলিস্টিক ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যালগরিদম ব্যবহার করে তৈরি করে একটি বিল্ট অন নেটওয়ার্ক। যেহেতু ওপেন গার্ডেনের সলিউশন বিল্ট অন হার্ডওয়্যার না হয়ে বরং একটি বিল্ট অন সফটওয়্যার, ফলে এর কোনো পরিচালনাগত খরচ নেই। বিকল্প ফেমটোসেল ও মাইক্রোসেলের তুলনায় মোবাইল অপারেটরদের মূলধন খরচও কম।
ইথেরিয়াম
ইথেরিয়াম হচ্ছে ক্রিপটোগ্রাফিক্যালি-সিকিউর ট্র্যানজেকশনের একটি সফটওয়্যার প্লাটফরম ও প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ। এ প্লাটফরমে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ক্রিপটোকারেনন্সি এবং একটি তুরিং-কমপ্লিট প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ, যা ট্র্যানজেকশনে ব্যবহার করা যাবে ডিজিটাল কন্ট্র্যাক্ট, ডিসেন্ট্র্যালাইজড ডিএনএস এবং ডিসেন্ট্র্যালাইজড কারেন্সি এক্সচেঞ্জ বাস্তবায়নে। এর মাধ্যমে যেকোনো ডেভেলপার নেক্সট জেনারেশনের ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি ও প্রকাশ করতে পারেন। ইথেরিয়ামের ক্রিপটোফুয়েল ইথারের শক্তিতে চলে এর অ্যাপ্লিকেশন। এটি ডিসেন্ট্র্যালাইজড নেটওয়ার্কে একটি ‘টোকেন অব এক্সচেঞ্জ’ হিসেবে কাজ করে। যেকোনো কিছুর (ভোটিং, ডোমেইন নেম, ফিন্যান্সিয়াল এক্সচেইঞ্জ, ক্রাউডফান্ডিং, কোম্পানি গভর্ন্যান্স, সব ধরনের কন্ট্র্যাক্ট ও অ্যাগ্রিমেন্ট, ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রোপার্টি, এমনকি স্মার্ট প্রোপার্টি) হার্ডওয়ার ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে কোডিফাই, ডিসেন্ট্র্যালাইজ, সিকিউর ও ট্রেডিংয়ের কাজে এই প্লাটফরম ব্যবহার করা যাবে।
উপরে উল্লিখিত কারেন্সির মৌলিক ইউনিটকে বলা হয় ইথার। ইথার আবার বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্রতর ইউনিটে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে : finney, szabo, shannon, babbage, lovelace, and wei। এই প্রতিটি ক্ষুদ্রতর ইউনিট এর পরবর্তী বড় ইউনিটের .০০১ গুণ। অতএব ১ ফিনি = ০.০০১ ইথার, আর ১ সাজাবো = ০.০০১ ফিনি।
প্রশ্ন হচ্ছে, কেনো ইথেরিয়াম? আসলে আজকের দিনে যেসব সার্ভিস আমরা ব্যবহার করি, এগুলোর মধ্যে একটা সাধারণ মিল আছে। এগুলো সেন্ট্র্যালাইজড বা কেন্দ্রীভূত। যেমন- আপনি যখন আপনার ব্যাংকে টাকা জমান, তখন এদের ওপর এই আস্থা রাখেন যে, এরা সততার সাথে চলবে। আপনার জমানো রাখা টাকা নিরাপদ থাকবে এবং এর হিসাব-নিকাশের নিরীক্ষা চলবে স্বাধীনভাবে। এই বিষয়টি সত্য ফেসবুকে পোস্ট করা আপনার ছবির বেলায় এবং ড্রপবক্সে গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র রাখার বেলায়ও। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, এই মডেল ত্রুটিপূর্ণ হলেও প্রয়োজনীয়। কারণ, আস্থাহীন বা ট্রাস্টলেস প্রতিষ্ঠানগুলো একদিকে যেমন বরাবর অলাভজনক, তেমনি এগুলো বাস্তবায়ন করাও খুব জটিল। ইথেরিয়ামের ওপর তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন হয় না তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও তহবিলের জন্য ডেভেলপারের ওপর আস্থা রাখার। ইথেরিয়াম শুধু ওপরে বর্ণিত সমস্যারই সমাধান দেয় না, এটি একই সাথে নতুন ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের দুয়ারও খুলে দেয়, যা এর আগে কখনই দেখা যায়নি।
এর পেছনে দু’টি দর্শন কাজ করে : agility and simplicity- ক্ষিপ্রতা ও সরলতা। অ্যাজিলিটির ক্ষেত্রে বলা যায়- এরা ইথেরিয়াম প্রটোকলের হাই লেভেল কনস্ট্রাক্ট মডিফিকেশনের ব্যাপারে খুবই সতর্ক ও বিচক্ষণ। পরবর্তী সময়ে ডেভেলপমেন্ট প্রসেসে চলা কমপিউটিশনাল কাজগুলো তাদেরকে সুনির্দিষ্ট অ্যালগরিদম বা স্ক্রিপটিং ল্যাঙ্গুয়েজ মডিফিকেশনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে তা হয়ে উঠতে পারে আরও স্কেলেবিলিটি এবং সিকিউরিটির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটতে পারে। এমন সুযোগ পেলে নিশ্চয় এরা সে সুযোগ কাজে লাগাবে। সিমপ্লিসিটির প্রসঙ্গে বলা যায়- ইথেরিয়াম প্রটোকল সবার জন্য উন্মুক্ত। যেকোনো প্রোগ্রামার তার পরিচিত ল্যাঙ্গুয়েজে লিখতে পারবেন স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ও ইথেরিয়াম অ্যাপ্লিকেশন। কোনো ব্যক্তি বা গ্রম্নপের প্রটোকলের ওপর প্রভাব কমিয়ে আনার লক্ষে প্রোগ্রামারেরা তুলনামূলকভাবে সহজে পুরো স্পেসিফিকেশন বাস্তবায়ন করতে পারবেন। ইথেরিয়াম প্রটোকল হবে যথাসম্ভব সরল। জটিলতা বাড়ায় এমন অপটিমাইজেশন এতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না, যদি না তা উল্লেখযোগ্য কোনো সুযোগের সৃষ্টি করে।
ইথার থেকে আপনি কী সৃষ্টি করতে পারবেন? এর মাধ্যমে কারেন্সি ক্রিয়েট ও শেয়ার ইস্যু করতে পারবেন। কন্ট্রাক্টগুলো হচ্ছে ইথেরিয়ামের মূল বিল্ডিং বস্নক। কন্ট্রাক্ট হচ্ছে একটি কমপিউটার প্রোগ্রাম, যার বসবাস ডিস্ট্রিবিউটেড ইথেরিয়াম নেটওয়ার্ক ও এর নিজস্ব ইথার ব্যালেন্স মেমরি ও কোডের ভেতরে। যতবার আপনি একটি কন্ট্রাক্টে একটি ট্র্যানজেকশন পাঠাবেন, এটি এর কোড বাস্তবায়ন করবে, যা স্টোর করতে পারবে এর ডাটা, পাঠাতে পারবে ট্র্যানজেকশন এবং অন্যান্য কন্ট্রাক্টের সাথে আমত্মঃক্রিয়া করতে পারবে। কোনো কেন্দ্রীয় মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই কন্ট্রাক্টগুলো পরিচালনা করা হয় নেটওয়র্কের মাধ্যমে। কন্ট্রাক্টগুলো লেখা হয় প্রোগ্রামারদের তাৎক্ষণিকভাবে পরিচিত ল্যাঙ্গুয়েজে দিয়ে।
পি-টু-পি পেমেন্ট
Person-to-Person (P2P) Payments হচ্ছে একটি অনলাইন টেকনোলজি। এর মাধ্যম গ্রাহকেরা সুযোগ পাবেন তাদের ব্যাংক হিসাব কিংবা ক্রেডিট কার্ড থেকে তহবিল অন্য কোনো ব্যক্তির হিসাবে ইন্টারনেটের বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্থানান্তর করার। কীভাবে এই পি-টু-পি কাজ করে তার উদাহরণ দেয়া যাক।
পারসন-টু-পারসন পেমেন্ট চালু করার দু’টি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথম পদ্ধতিটি সফল paypal-ভিত্তিক। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা এই মর্মে একটি অ্যাকাউন্ট প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বস্ত থার্ড পার্টি ভেন্ডরের সাথে, যাতে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ড ইনফরমেশন ব্যবহার করে তহবিল স্থানান্তর বা গ্রহণ চলবে। থার্ড পার্টির ওয়েবসাইট অথবা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তি তহবিল পাঠানো ও গ্রহণের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে পারবেন। সাধারণত ইউজারেরা পরিচিত হবেন তাদের ই-মেইলের মাধ্যমে। ইউজার এর মাধমে এই নেটওয়ার্কের যেকোনো সদস্যের কাছে তহবিল পাঠাতে পারবেন।
দ্বিতীয় পদ্ধতির ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা হস্তান্তরের অর্থের পরিমাণ নির্ধারণের জন্য ব্যবহার করেন একটি অনলাইন ইন্টারফেস অথবা মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, যা ডেভেলপ করে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। গ্রহীতার পরিচয় জানতে ব্যবহার করা হয় তার ই-মেইল ঠিকানা বা ফোন নম্বর। একবার প্রেরক তহবিল হস্তান্তর চালু শুরু করে দিলে, তহবিল গ্রহণ করার জন্য গ্রহীতা তখন তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ইনফরমেশন ও রাউটিং নম্বর ইনপুট করতে অনলাইন ইন্টারফেস ব্যবহার করার নোটিস পান। এই প্রক্রিয়ায় পাঠানো তহবিল গ্রহণের জন্য প্রেরকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রহীতার কোনো অ্যাকাউন্ট থাকার প্রয়োজন নেই।
পি-টু-পি পেমেন্ট কেনো গুরুত্বপূর্ণ? ভোক্তারা ক্রমবর্ধমান হারে অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং ও ই-কমার্সে সংশ্লিষ্ট হওয়ার ফলে আরও বৃহত্তর পরিসরে পি-টু-পি’র পথ খুলে গেছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পেপাল সদর্পে চলার পর এখন বড় বড় ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ড কোম্পানি শেষ পর্যন্ত পি-টু-পি’র দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। এ ধরনের সক্ষমতা বিশ্বের অনেক দেশেই চালু ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে ধীর গতিতে। কিন্তু এখন ইউএস ব্যাংকগুলো দ্রুত এই নয়া পেমেন্ট সলিউশন ব্যবহার করছে ই-মেইল বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুদের কাছে অর্থ পাঠাতে। পি-টু-পি গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার বড় কারণ নতুন এই মোবাইল পেমেন্ট সলিউশন গ্রাহকদের জন্য সুবিধাজনক।
পি-টু-পি লেন্ডিং
Peer-to-Peer (P2P) Lending-এর আরেক নাম ক্রাউড লেন্ডিং। এসব ওয়েবসাইট হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল-স্কেল অনলাইন ফিন্যান্সিয়াল ম্যাচমেকার। এই ম্যাচমেকিং চলে ব্যক্তি পর্যায়ের ঋণগ্রহীতা বা কোম্পানির সাথে সেইসব সঞ্চয়কারীর, যারা দীর্ঘ সময় অর্থ ফেলে রেখে একটা ভালো মুনাফা পেতে চান। এখানে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কোনো ব্যাংক থাকে না।
পি-টু-পি দেখতে সঞ্চয়ের মতো, আমেজেও সঞ্চয়ের মতোই। কিন্তু এখানে যেহেতু সঞ্চয়ের গ্যারান্টি নেই, তাই এতে পাওয়া যায় এক ধরনের বিনিয়োগের গন্ধ। এসব ওয়েবসাইট আপনার পক্ষে সব পেমেন্ট চেজিংয়ের কাজ করে। অতএব এখানে তথ্য সংগ্রহের জন্য আপনাকে কোনো কাজ করার প্রয়োজন নেই, যেমনটি প্রয়োজন অন্যান্য লেন্ডিংয়ের বেলায়। আপনি যে সুদ অর্জন করবেন, তা আর সব আয়ের মতোই আয়করযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
অনেকের জন্য এটি ভালোভাবে কাজ করলেও পিটুপি লেন্ডিংয়ে রিটার্ন পাওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। অবশ্য প্রাথমিক ঝুঁকিটা হচ্ছে রিপেইড না হওয়া। প্রতিটি পি-টু-পি সাইটের ঝুঁকি মোকাবেলার নিজস্ব উপায় রয়েছে। এসব বেশিরভাগ উপায়ই ভালোভাবে কাজ করে। অতএব একটি সাইট বেছে নেয়ার বেলায় এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপরও শুধু এ বিষয়টিই বিবেচ্য নয়।
পি-টু-পি এখন রেগুলেটেড : ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটি ইন্ডাস্ট্রিকে রেগুলেটেড করার পর থেকে কনজ্যুমারদের ব্যবহারের পি-টু-পি সাইট এখন আরও বেশি সুরÿÿত। নতুন বিধিতে বলা আছে- পি-টু-পি ফার্মগুলোকে সুস্পষ্টভাবে তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। ঝুঁকির ব্যাপারে সততা প্রদর্শন করতে হবে। সব পি-টু-পি ফার্মকে বিধিবিধান অবশ্যই মেনে চলতে হবে, নয়তো নিষেধাজ্ঞা কিংবা বড় অঙ্কের জরিমানার মুখে পড়তে হবে। ২০১৭ সালের এপ্রিলের মধ্যে ফার্মগুলোকে কমপক্ষে ৫০ হাজার পাউন্ডের মূলধন (বড় ফার্মের ক্ষেত্রে আরও বেশি মূলধন) গড়ে তুলতে হবে।
আপনার ক্যাশ সরাসরি ধার দেয়া নাও হতে পারে : আপনার অর্থ ঋণ দেয়ার জন্য অপেক্ষমাণ থাকলে কোনো সুদ দেয়া হয় না। কয়েক হাজার পাউন্ড দ্রুত ঋণ দিতে হবে। কিন্তু আপনার যদি নগদ অর্থ থাকার সৌভাগ্য হয়, আর যদি ৫০ হাজারের চেয়ে বেশি অর্থ আপনার থাকে, তবে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে লেন্ডিংয়ের জন্য। লেন্ডিংয়ে গতি আনার উপায়ও আছে, তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণত সুদের হার কম হয়।
সঞ্চয় নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই : যুক্তরাজ্যে স্বাভাবিক সঞ্চয়ে সরকার-সমর্থিত ‘ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস কমপেনসেশন স্কিম’ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইনস্টিটিউশন বিনষ্ট হলে জনপ্রতি ইনস্টিটিউশন পিছু ৮৫ হাজার পাউন্ড করে দেবে। পি-টু-পি লেন্ডারেরা এখনও তা পায়নি, যদিও এরা রেগুলেটেড।
পি-টু-পি সাইটে লালবাতি জ্বললে কে ঋণ সংগ্রহ করবে : টেকনিক্যালি ঋণটি সম্পাদিত হয়েছে আপনি এবং ঋণগ্রহীতার মাঝে। অতএব পি-টু-পি সাইটে লালবাতি জ্বললে আপনি ঋণী থাকবেন। সব ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের বলা হয় বীমা করতে একটি থার্ড পার্টি কালেকশন এজেন্সির কাছে।
কোন পি-টু-পি লেন্ডার সাইট ব্যবহার করা উচিত : মার্কেট বেড়ে উঠছে দ্রুত। আসছে প্রচুর নতুন লেন্ডার সাইট। তা সত্ত্বেও বর্তমানে সুস্পষ্টভাবে তিনটি পি-টু-পি লেন্ডার সাইট রয়েছে, যারা কার্যত বাজার দখলে রেখেছে। আর এসব সাইটেই সবচেয়ে বেশি রিটার্ন আসছে। এগুলো হচ্ছে : Zopa , Ratesetter I Funding Circle।
স্মার্ট প্রপার্টি
স্মার্ট প্রপার্টি হচ্ছে সেগুলো, যেগুলোর মালিকানা ‘কন্ট্রাক্ট’ ব্যবহার করে বিটকয়েন বস্নকচেইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই প্রপার্টির উদাহরণে গাড়ি, বাড়ি কিংবা ফোনের মতো ভৌত সম্পদকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়। স্মার্ট প্রপার্টিতে একটি কোম্পানির শেয়ার কিংবা রিমোট কমপিউটারে প্রবেশের অধিকারের মতো অভৌত সম্পদও অন্তর্ভুক্ত। প্রপার্টিকে স্মার্ট করে তুললে বৈপস্নবিকভাবে কম আস্থা নিয়েও তা ট্রেড করা যায়। এর ফলে প্রতারণা ও মেডিয়েশন ফি কমে। এর ফলে ট্রেডারদের নিজেদের মধ্যে এমন মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতার সুযোগ এনে দেয়, যা আর কোনোভাবে ঘটা সম্ভব ছিল না। উদাহরণ টেনে বলা যায়, এটি আপনাকে সুযোগ করে দেবে আপনার স্মার্ট প্রপার্টি বন্ধক রেখে একজন অজানা-অচেনা মানুষের কাছ থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঋণ নেয়ার। এটি ঋণদানকে আরও প্রতিযোগিতাময় করে তুলবে, ঋণকে করবে আরও সস্তা।
স্মার্ট প্রপার্টির বিষয়টি ১৯৯৭ সালে প্রথম প্রস্তাব করেন Nick Szabo, তার ‘দি আইডিয়া অব স্মার্ট কন্ট্রাক্ট’ শীর্ষক নিবন্ধের মাধ্যমে। তবে এ আইডিয়ার এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
প্রাথমিক পর্যায়ের স্মার্ট প্রপার্টিগুলো এরই মধ্যে আমাদের জানা হয়ে গেছে। ধরুন, ইমমোবিলাইজারসহ আপনার একটি গাড়ি আছে। ইমমোবিলাইজার গাড়ির ভৌত চাবিকে একটি প্রটোকল এক্সচেঞ্জের সাহায্যে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। এটি নিশ্চিত করে যে, যার কাছে সঠিক ক্রিপটোগ্রাপিক টোকেন থাকবে, শুধু তিনিই ইঞ্জিন সক্রিয় করে তুলতে পাববেন। ইমমোবিলাইজার ব্যাপকভাবে গাড়ি চুরি কমিয়ে এনেছে। অস্ট্রেলিয়ার ৪৫ শতাংশ গাড়িতে ইমমোবিলাইজার লাগানো আছে। ফলে সেখানে মাত্র ৭ শতাংশ গাড়ি চুরির ঘটনা ঘটে।
আজকের অনেক আধুনিক সম্পদের চুরি ঠেকানো সম্ভব হয়েছে ক্রিপটোগ্রাফি ব্যবহার করে। যেমন : কিছু স্মার্টফোন সুনির্দিষ্ট কিছু রিলিজ করতে অস্বীকার করবে, যদি না সঠিক PIN unlock এতে ঢোকানো হয়। ক্রিপটোগ্রাফি একটি চুরি হওয়া ডিভাইসকে শুধু ব্যবহারের অনুপযোগীই করে তোলে না, সেই সাথে তা কারও ফোন নম্বর চুরিকেও অসম্ভব করে তুলেছে।
এগুলো ক্রিপটোগ্রাফির বিজয় হলেও ক্রিপটোগ্রাফিক্যালি অ্যাক্টিভেটেড প্রপার্টির সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি উন্মোচিত করা হয়নি। চাবি বা সিমকার্ডের মতো ফিজিক্যাল কন্টেইনারে রাখা ‘প্রাইভেট কী’ সহজে হস্তান্তর ও ম্যানিপুলেট করা যাবে না। স্মার্ট প্রপার্টি এই পরিবর্তন এনেছে। বিটকয়েন মাইনরদের মাধ্যমে মালিকানা মধ্যস্থতা করা সম্ভব।
স্মার্টফোন একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে স্মার্ট প্রপার্টিতে। কারণ, স্মার্টফোন ব্লুটুথ বা এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) রেডিও ব্যবহার করে নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেসেরে মাধ্যমে বিভিন্ন ডিভাইস ও নেটওয়ার্কের মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে সক্ষম। যেমন : বাড়ির দরজায় একটি স্মার্ট লকের জন্য ইন্টারনেট অ্যাক্সেস খুবই ব্যয়বহুল ও বাস্তবে ব্যবহারের উপযোগী নয়। তা সত্ত্বেও এনএফসি টাচপয়েন্টওয়ালা একটি লক বাস্তবে খুবই সম্ভব। এই লক বুঝতে পারে কী করে বস্নক হেডার প্রগ্রেশন চেক করতে হয়। এতে বিটকয়েনলিঙ্কড স্মার্ট প্রপার্টি ইমপ্লিমেন্টে প্রয়োজনীয় একমাত্র অপারেশন হচ্ছে হেশিং ইসিডিএসএ (ইলিপটিক কার্ভ ডিজিটাল সিগনেচার অ্যালগরিদম) ও সামান্য পরিমাণ স্টোরেজ। স্মার্টকার্ড প্রয়োজনীয় সবকিছু বাস্তবায়ন করে এবং তা খুবই সাধারণ ও সস্তা। কমপিউটার প্রোগ্রামারেরা কয়েক দশক ধরেই ব্যবহার করে আসছেন হেশিং ফাংশন। এসব ফাংশন বিশেষত ব্যবহার হয় সিকিউরিটি, ডাটা অ্যাক্সেস অথবা ডাটা ভ্যালিডেশনের ক্ষেত্রে। হেশিং অ্যালগরিদম হচ্ছে একটি গাণিতিক ফাংশন, যা ভেরিয়েবল-লেন্থের কারেক্টার স্ট্রিংকে কনভার্ট করে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যামানে। আজকের দিনে বহু ধরনের অ্যালগরিদম পাওয়া যায়। প্রতিটি অ্যালগরিদমের ডিজাইন করা হয় সুনির্দিষ্ট লÿ্যকে সামনে রেখে।
স্মার্ট কন্ট্রাক্ট
স্মার্ট কন্ট্রাক্ট হচ্ছে কমপিউটারাইজড ট্র্যানজেকশন প্রটোকল। এই প্রটোকল কন্ট্রাক্ট বা চুক্তি শর্তগুলোর বাস্তবায়ন করে। স্মার্ট কন্ট্রাক্ট ডিজাইনের সাধারণ উদ্দেশ্য হচ্ছে চুক্তির সাধারণ শর্তগুলোকে- যেমন পেমেন্টের শর্ত, লিয়েন, গোপনীয়তা ও এমনকি বাস্তবায়নকে সমেত্মাষজনক করে তোলা, বিদ্বেষপূর্ণ ও দুর্ঘটনাজনিত ব্যতিক্রম কমিয়ে আনা এবং বিশ্বস্ত মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনা। সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক লÿ্যগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে : প্রতারণার কারণে সৃষ্ট লোকসান কমিয়ে আনা, খরচের ও বাস্তবায়নের ব্যাপারে মধ্যস্থতা করা। আজকের দিনে চালু আছে এমন কয়েকটি টেকনোলজিকে অপরিপক্ব স্মার্ট কন্ট্রাক্ট হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যেমন : পিওএস টার্মিনাল ও কার্ড, ইডিআই ইত্যাদি। ইলেকট্রনিক পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) হচ্ছে সেই জায়গা, যেখানে রিটেইল ট্র্যানজেকশন সম্পন্ন হয়। আর ইডিআই (ইলেকট্রনিক ডাটা ইন্টারচেঞ্জ) হচ্ছে বিজনেস ডাটা এক্সচেঞ্জের একটি স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট।
ডিজিটাল ক্যাশ প্রটোকলগুলো হচ্ছে স্মার্ট কন্ট্রাক্টের কতগুলো সুন্দর উদাহরণ। এগুলো পেপার ক্যাশের বৈশিষ্ট্যগুলো (আনফরজেবিলিটি, কনফিডেনশিয়েলিবিলিটি এবং ডিভিজিবিলিটি) মেনে চলে অনলাইন পেমেন্ট এনাবল করে। স্মার্ট কন্ট্রাক্টে ডিজাইনের বৃহত্তর পরিসরে ডিজিটাল ক্যাশ নেটওয়ার্কের দিকে তাকালে আমরা দেখি এসব প্রটোকল ব্যবহার করা যাবে শুধু ক্যাশ নয়, বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক বেয়ারার সিকিউরিটি বাস্তবায়নেও। আমরা আরও দেখি, পুরোপুরি কাস্টমার-ভেন্ডর ট্র্যানজেকশন বাস্তবায়ন করতে আমাদের প্রয়োজন ডিজিটাল ক্যাশ প্রটোকলের চেয়েও কিছু বেশি। আমাদের দরকার এমন একটি প্রটোকল, যা এটি নিশ্চিত করে যে- পেমেন্ট হওয়ার পর প্রোডাক্ট সরবরাহ করা হবে, কিংবা প্রোডাক্ট সরবরাহ হয়ে গেলে পেমেন্ট দেয়া হবে। এ কাজটি সম্পন্ন করার জন্য বর্তমান কমার্শিয়াল সিস্টেমগুলো বিভিন্ন ধরনের কৌশল ব্যবহার করে। যেমন : সার্টিফায়েড মেইল, ফেস টু ফেস এক্সচেঞ্জ, কালেকশন এজেন্সি ইত্যাদি।
স্মার্ট কন্ট্রাক্টের সমর্থকদের দাবি, অনেক ধরনের কন্ট্রাকচ্যুয়াল ক্লজকে এভাবে আংশিক বা পুরোপুরি সেলফ-এক্সিকিউটিং, সেলফ-এনফোর্সিং কিংবা উভয়ই করা যায়। প্রচলিত সাধারণ চুক্তি আইন যে নিরাপত্তা দেয়, স্মার্ট কন্ট্রাক্টের লÿ্য এর চেয়ে আর অনেক উন্নতমানের নিরাপত্তা দেয়া এবং চুক্তি-সংক্রান্ত অন্যান্য ট্র্যানজেকশন কস্ট বা লেনদেন খরচ বা বাস্তবায়ন খরচ কমিয়ে আনা। সেই সাথে ব্যাপকভাবে কমায় প্রতারণার পরিমাণও। ডিজিটাল ক্যাশ প্রটোকলগুলো ব্যবহার করে ক্রিপটোগ্রাফি ও কমপিউটার বিজ্ঞান সূত্রে বেশ কিছু সমৃদ্ধ নতুন বিল্ডিং বস্নক। চুক্তি ব্যবস্থার সহায়তায় এগুলোর বেশিরভাগ উপাদানকে এখন পর্যন্ত কাজে লাগানো না গেলেও এর ব্যাপক সম্ভাবনা কিন্তু রয়ে গেছে। এসব সাব-প্রটোকলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে : বাইজেন্টাইন অ্যাগ্রিমেন্ট, সিস্টেমেটিক ও অ্যাসাইমেট্রিক এনক্রিপশন, ডিজিটর সিগনেচার, বস্নাইন্ড সিগনেচার, কাট অ্যান্ড চুজ, বিট কমিটমেন্ট, মাল্টিপার্টি সিকিউর কমপিউটেশন, সিক্রেট শেয়ারিং এবং অবলিবিয়াস ট্রান্সফার।
চুক্তি আইন, অর্থনীতির ও স্ট্র্যাটেজিক কন্ট্রাক্ট ড্রাফটিংয়ের ওপর স্মার্ট কন্ট্রাক্টের প্রভাব (কিংবা এর উল্টোটি) এখন পর্যন্ত কমই উদঘাটন করা গেছে। এরপরও এর ফলে বেশ কিছু কন্ট্রাক্ট বাস্তবায়নের খরচ ব্যাপক কমেছে, স্মার্ট কন্ট্রাক্ট-ভিত্তিক নতুন ধরনের বিজনেস ও সোশ্যাল ইনস্টিটিউশন সৃষ্টির ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
১৯৭০ ও ১৯৮০-র দশকে অকশন থেকে শুরু করে কমপিউটেশনাল রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট পর্যন্ত যাবতীয় মার্কেট মেকানিজম আনার জন্য ‘অ্যাগরিক কমপিউটেশন’ নামে একটি আন্দোলন দেখা যায়। এরই মধ্যে পাবলিক কী ক্রিপটোগ্রাফি জন্ম দেয় এক বিপস্নবের, যা সম্ভব ছিল অনলাইন সিকিউরিটিতে। সম্ভবত ১৯৯৩ সালের দিকে কমপিউটার বিজ্ঞানী Nick Szabo ‘স্মার্ট কন্ট্রাক্ট’ পদবাচ্যটি প্রথম চালু করেন। এ ক্ষেত্রে তার লÿ্য ছিল ইন্টারনেটের ইলেকট্রনিক কমার্স প্রটোকলে কন্ট্রাক্ট ল ও সংশ্লিষ্ট বিজনেস প্র্যাকটিসের ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটানো। সিক জাবো অনেক গবেষককে অনুপ্রাণিত করেন। সেই সূত্রে আজ স্মার্ট কন্ট্রাক্টের বিকাশ ঘটছে। এর প্রয়োগ চলছে আজকের বিভিন্ন ফিন্যান্সিয়াল ইনস্ট্রুমেন্টে, যেমন : বন্ড, শেয়ার, অ্যাশুরেন্স কন্ট্রাক্টসহ অন্যান্য আর্থিক দলিল ও লেনদেনে। এ ক্ষেত্রে নোড মনিটর করতে পারে লেনদেনের ঘটনাবলি, যেগুলো চলে স্মার্ট কন্ট্রাক্টের শর্তের ওপর
ডট-বিট
FreeSpeechMe হচ্ছে ফায়ারফক্সের জন্য একটি সফটওয়্যার প্লাগ-ইন। এর মাধ্যমে আপনি কোনো ঝামেলা ছাড়াই দেখতে পারবেন Dot-Bit ওয়েবসাইটগুলো। ডট-বিট হচ্ছে একটি নতুন টপ লেভেল ডোমেইন, যা কোনো সরকার অথবা কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণ করে না। আপনি আজকেই সস্তা ক্রিপটোকারেন্সি নেইমকয়েন (বিটকয়েন থেকে উৎপন্ন শব্দ) ব্যবহার করে রেজিস্টার করতে পারেন একটি ডট-বিট ডোমেইন। মাত্র কয়েক পেনি খরচ করেই ডট-বিট ডোমেইন রেজিস্টার করা যায়।
ডট-বিট ডোমেইন সম্পূর্ণভাবেই এমন শঙ্কা থেকে মুক্ত যে, এটি কোনো সরকার বা অপরাধী গোষ্ঠী কোনোভাবেই বন্ধ বা হাইজ্যাক করতে পারবে না। ডটকমে অথবা অন্যান্য টপ লেভেল ডোমেইনে আপনার পুরো ওয়েব প্রেজেন্স গড়ে তোলার ডিসেন্ট্র্যালাইজড বিকল্প হচ্ছে এই ডট-বিট ডোমেইনগুলো। ডটকম অথবা অন্য টপ লেভেল ডোমোইনগুলো কোনো বৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করেই যেকোনো সরকার যেকোনো সময় বন্ধ করে দিতে পারে। ফ্রিস্পিচমি’র সাথে ডট-বিট ব্যবহার করে ডিএনএস ও এইচটিটিপি হাইজ্যাকিং রোধ করা যায়। নরমাল টপ লেভেল ডোমেইনে এ ধরনের হাইজ্যাকিং খুবই সাধারণ ব্যাপার ও তা অহরহ ঘটে থাকে। যখন কেউ আপনার ট্রাফিক একটি ইমপোস্টার ওয়েবসাইটে রিডিরেক্ট করে, তখন হাইজ্যাকের ঘটনা ঘটে। এর মাধমে এরা আপনার পাসওয়ার্ড চুরি করে কিংবা ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে। ডট-বিট ডোমেইনগুলো বিশ্বব্যাপী দ্রুত প্রপাগেট বা পরিবাহিত হয়। অতএব নতুন এ ডট-বিট ওয়েবসাইট সবার জন্যই মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে শো-আপ হয়। অন্যান্য ডোমেইনের বেলায় এই শো-আপের সময় ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা। ডট-বিট ওয়েবসাইটগুলো সহজে ক্রিয়েট ও কনফিগার করা যায়।
এডিসন
ইন্টেল এডিসন ডেভেলপমেন্ট প্লাটফরম হচ্ছে প্রথম লো-কস্ট প্রোডাক্ট-রেডি জেনারেল পারপাস কমপিউট প্লাটফরম, যা প্রোমেকার থেকে শুরু করে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস ও ইন্টারনেট অব থিংসে নিয়োজিত কোম্পানিগুলোর ছোট-বড় সব উদ্যোক্তার অ্যান্ট্রির ক্ষেত্রের প্রবেশের পথে বাধাগুলো কমিয়ে আনায় সহায়তা করে। ছোট আকারের ইন্টেল এডিসন প্যাকে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একগুচ্ছ শক্তিশালী ফিচার। এই ফিচারগুলো টেকসই ভালো পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে। আর এগুলো ব্যাপকভাবে ইন্টারনেট অব থিংস ও সফটওয়্যার সাপোর্ট করবে। এসব কুশলী ফিচার নানা ধরনের গ্রাহকের চাহিদা মেটায়।
২০১৪ সালে উন্মুক্ত করা ইন্টেল এডিসন হচ্ছে এসডি (সিকিউর ডিজিটাল) কার্ড আকারের একটি ২২ ন্যানোমিটার ৪০০ মেগাহার্টজ কমপিউটার বোর্ড। এডিসন চিপ লিনআক্স সাপোর্ট করে এবং এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে একটি ডুয়াল-কোর সিপিইউ, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ এলই (লো এনার্জি) ও একটি ইন্টিগ্রেটেড অ্যাপ স্টোর। এটি চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছবে। এটি এডিসনের প্রসেসিং পাওয়ার সংযুক্ত করে হার্ডওয়্যার পণ্য তৈরিকারকদের সুযোগ করে দেবে তাদের বিদ্যমান বা নতুন সিস্টেমের ফাংশনালিটি জোরালো করে তুলতে। এর একটি উদাহরণ সৃষ্টি করেছে এমআইটি’র ‘রেস্ট ডিভাইস’। এরা এর নাম দিয়েছে ‘মিমো বেবি মনিটর’। এটি সেন্সরে ভর্তি একটি ‘টার্টেল ডিভাইস’-সমৃদ্ধ এক ওয়ানসি (শিশুদের ওয়ানপিসের পোশাক, যা ডায়াপারের ওপর পরানো হয়)। এটি মনিটর করে রাতে শিশুর এদিক-ওদিক নড়াচড়া করার সময় শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস কীভাবে চলছে, নাড়ির স্পন্দন পরিস্থিতি কেমন এবং আরও অনেক কিছু। এডিসন এই সিস্টেমে শক্তি জোগায় এবং বাড়ির অন্যসব এডিসন-পাওয়ার্ড ডিভাইসের সাথে (যেমন : স্মার্ট মিল্ক বটল) একে সংযুক্ত করে। যদি এই সিস্টেমে ধরা পড়ে যে, শিশুটি খাবারের জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠেছে, এটি সতর্ক করবে বটলকে এবং ব্যবহারের জন্য তৈরি করতে বটলকে ওয়ার্নিং দিতে থাকবে। এই সিস্টেমটি এখন এ মাসেই ইউরোপে চালুর জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। আশা করা হচ্ছে, ছয় মাসের মধ্যেই তা ইউরোপের বাজারে পৌঁছবে। যুক্তরাষ্ট্রে এর দাম পড়বে ১৯৯ ডলার (প্রায় ১২০ পাউন্ড) এবং এতে থাকছে তিনটি ওয়ানসি, একটি টার্টল এবং চার্জিং স্টেশন হিসেবে কাজ করার মতো একটি ডিভাইস। ইন্টেল এর প্রোডাক্টের জন্য ‘রেস্ট ডিভাইস’কে স্টেজ টাইম দিয়েছে, কিন্তু বলেছে ইন্টেল ‘মেইক ইট ওয়্যারেবল প্রাইজ’ হিসেবে ১৩ লাখ ইউএস ডলার (৭ লাখ ৯২ হাজার পাউন্ড) সেই ডেভেলপার ও কোম্পানি পাবে, যারা এডিসনের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের সিস্টেমকে আরও স্মার্ট, গুরুত্বপূর্ণ ও ওয়্যারেবল করে তুলতে পারবে।
শুধু কমপিউটার ফোন ও ট্যাবলেটেই নয়, এটিকে কফিমেকার ও এমনকি কফিকাপের মতো আরও অনেক কিছুতেই কাজ করার মতো উপযোগী করে ডিজাইন করা যাবে। আকার, শক্তি ও সমৃদ্ধ সক্ষমতার অনন্য সমন্বয় ঘটিয়ে তৈরি ইন্টেলের এডিসন বোর্ড আসলেই একটি গেম চেঞ্জার, যা হাজার হাজার ভিশনারির অ্যান্ট্রির বাধা কমিয়ে এনেছে। ইন্টেল এডিসন বোর্ড-পাওয়ার্ড ডিভাইস হাইলি কাস্টমাইজড ও অভিজাত উপায়ে সহায়তা করতে পারে। এগুলোতে চলবে মাল্টিপল অ্যাপ। আর এসব আমরা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করতে পারব, ঠিক যেভাবে করা হয় ফোন ও ট্যাবলেটের ক্ষেত্রে।
বিটক্লাউড
‘আমরা প্রমাণিত ব্যান্ডউইডথ-ভিত্তিক ডিসেন্ট্র্যালাইজড অ্যাপের মাধ্যমে রিপ্লেস করতে চাই ইউটিউব, ড্রপবক্স, ফেসবুক, স্পটিফাই, আইএসপি এবং আরও অনেক কিছু’- গত জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে এক বিবৃতি দিয়ে ডিস্ট্রিবিউটেড অটোনমাস করপোরেশন BitCloud এ কথা প্রকাশ করে। এই কর্পোরেশন আশা করছে এরা বর্তমান ইন্টারনেটকে ডিসেন্ট্র্যালাইজ করবে, যাতে করে আজকের ইন্টারনেটের জায়গায় আসবে নতুন ধরনের ইন্টারনেট। বিটক্লাউড একটি ফ্রি সফটওয়া্যার প্লাটফরম। এর প্রটোকল যেকেউ ব্যবহার করতে পারবেন, এমনকি বাণিজ্যিক কাজেও। বিটক্লাউড ফাউন্ডেশনের ডেভেলপ করা সব প্লাটফরম সফটওয়্যার ব্যবহার করে ওপেনসোর্স সফটওয়্যার এবং সব সময় পাবলিক ডোমেইনের জন্য লাইসেন্সকৃত হবে। বিটক্লাউড একটি ওপেনসোর্স ডিস্ট্রিবিউটেড ডাটাবেজ ও এসকিউ এজেন্ট, যা মানুষকে দেয় ডাটা শেয়ার ও ডিস্ট্রিবিউটেড অ্যাপ্লিকেশন সৃষ্টির সুযোগ। বিটক্লাউডের ডিসেন্ট্র্যালাইজড প্রকৃতির কারণে এটি যেকাউকে বড় আকারের কনটেন্ট পাবলিশের সুযোগ দেয়। অর্থাৎ এটি সেন্সরশিপ, ব্যয়বাহুল্য ও প্রোপ্রাইটরিমুক্ত। বিটক্লাউড ডিসেন্ট্র্যালাইজড অ্যাপ্লিকেশনের ভিত্তি হতে পারে, যাতে দরকার হবে ডাটা স্টোরেজ ও ব্যান্ডউইডথ।
ঠিক এই সময়ে অনেক বিটকয়েন ২.০ প্রজেক্ট চালু রয়েছে। কিন্তু এগুলো এখনও নির্ভরশীল কোনো না কোনো ধরনের বস্নকচেইনের ওপর। তবে বিটক্লাউডে বস্নকচেইনের জায়গায় এসেছে ডাটাবেজ, যা নোডপুল নামেও পরিচিত। বিটক্লাউড সৃষ্টি করে নতুন ধরনের এক ট্রাস্ট সিস্টেম, যেখানে সেন্ট্র্যালাইজড সার্ভার ছাড়াই পুরো ওয়েভ অ্যাপ্লিকেশন হোস্ট করা যাবে। ডিসেন্ট্র্যালাইজড অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে যেকোনো ল্যাঙ্গুয়েজ (জাভা, পাইথন ইত্যাদি) ব্যবহার করা যাবে । সফটওয়্যারের বাইরে এটি একটি প্লাটফরম বা প্রটোকল, যা আজকের সবচেয়ে আধুনিক কমপিউটিং ফ্রেমওয়ার্কে বাস্তবায়ন করা যাবে।
এখন পর্যন্ত বিটক্লাউড একটি ধারণামাত্র। তবে এটি এরই মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তবে এর সবকিছুকে একসাথে করার জন্য এর প্রতিষ্ঠাতাদের দরকার অন্যদের সমর্থন। বিটক্লাউড চায় ডিজিটাল কারেন্সি চলাচলের জন্য প্রসেসিং পাওয়ার ব্যবহারের পরিবর্তে ইন্টারনেট সেবা জোগাতে অনেকটা এর মতোই একটি পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য। ক্রিপটোকয়েন মাইনিংয়ের বদলে বিটক্লাউড মাইনরেরা (আপনি এদের এ নাম দিতে পারেন) বরাদ্দ করবে তাদের হার্ডওয়্যার রিসোর্স, যা ব্যবহার হবে অন্যান্য কাজে; স্টোরেজ প্রোভাইডের, কমপিউটিংয়ের বা রাউটিংয়ের কাজে। এই নতুন ধরনের ইন্টারনেট একদম সোজা-সাপটাও নয়। তা সত্ত্বেও আপনি Tor, BitTorrent ও Cryptocurrency সম্পর্কে যদি অবগত থাকেন তবে নতুন এই ইন্টারনেটের ব্যাপারে আপনার এটি মৌল ধারণা হয়ে যাওয়ার কথা। এখন কাজ হচ্ছে সবগুলোকে যূথবদ্ধ করা। উল্লেখ্য, টর আপনার লোকেশন ও ব্রাউজিং হ্যাবিট অন্যদের জানতে বাধা সৃষ্টি করে, ওয়েব ব্রাউজার ও ইনস্ট্যান্ট ক্লায়েন্টটসহ অন্যদের ব্যবহারের টর উইন্ডোজ, ম্যাক, লিনআক্স/ইউনিক্স ও অ্যান্ড্রয়িডের জন্য ফ্রি ওপেনসোর্স। বিটটরেন্ট আপনার পিসির সুরক্ষা দেয়, ডাউনলোডের গতি বাড়ায়, যেকোনো ফাইল কনভার্ট করে এবং যেকোনো ডিভাইসে তা চলে। আর ক্রিপটোকারেন্সি হচ্ছে ক্রিপটোগ্রাফি নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত কারেন্সি বিনিময়ের একটি মাধ্যম।
আসলে বিটক্লাউড প্রস্তাব করছে টরের মতো একটি বেনামী ইন্টারনেট, যা তৈরি অসংখ্য নোড দিয়ে এবং বহন করে এনক্রিপটেড ডাটা। টর থেকে এর ব্যতিক্রম হলো, এ ক্ষেত্রে নোডগুলো ক্লাউডকয়েন (বিটক্লাউড ক্রিপটোকারেন্সি) মাইন করার জন্য যেকোনো ইনকামিং ট্রাফিক ব্যবহার করবে। পাবলিশার, ব্যবহারকারী ও নোড সরকারি বা বেসরকারি হতে পারে। আইডেন্টিটি হচ্ছে একটি মাইন্ড সার্টিফিকেট অথরিটি-ভিত্তিক, কোনো ধরনের অ্যাড্রেস-ভিত্তিক নয়। বিটক্লাউড নেটওয়ার্ক ও প্লাটফরম চালু রাখতে অন্তর্নিহিতভাবে কোনো প্রয়োজন হয় না কোনো স্ট্যাটিক বা ডিরেক্ট অ্যাড্রেস ইনফরমেশন। টর, প্রক্সি বা অন্যান্য হতবুদ্ধিকর যোগাযোগ কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যান্য ডিসেন্ট্র্যালাইজড ও কমিউনিটি প্রোভাইডেড নেটওয়ার্ক থেকে ব্যতিক্রম হলো, বিটক্লাউডে নোডদের বিটক্লাউডে সার্ভিস দেয়ার জন্য অর্থ পরিশোধ করা হবে। নোডেরা তাদের নেটওয়ার্ক সার্ভিস সেল করতে পারবে।
ব্রিটিশ সফটওয়্যার ডেভেলপার আমির তাকি এই ধারণায় অনেকটা চমৎকৃত, তবে এ ব্যাপারে তার কিছু রিজারভেশনও আছে- বিশেষ করে বিটক্লাউডের ব্যাপারে। তিনি বলেন, এই নতুন প্রযুক্তি দিয়ে আমরা অনেক কিছুই করতে পারব। আমরা একটি আইডেন্টিটি মেনটেইন করতে পারব, এই আইডেন্টিটিকে ঘিরে আমরা গড়ে তুলতে পারব একটি ডিস্ট্রিবিউটেড রেপুটেশন, আইডেন্টিটিগুলোর মধ্যে কন্ট্রাক্ট সমন্বিত করতে পারব, ডিস্ট্রিবিউট করতে পারব অ্যানোনিমাস বস্নগ ও ওয়েবপেজ। টর অন্যান্য সিস্টেমের চেয়ে হবে আরও দ্রুত এবং পাঠাতে পারব প্রাইভেট মেসেজ। আমির তাকি আরও বলেন, বিটক্লাউড প্রপোজেল ও টুইস্টারের মধ্যে অনেক মৌল মিল রয়েছে। কিন্তু টুইস্টার ডেভেলপমেন্টের এটি সপ্তম মাস। সাত মাস ধরে বিশ্বস্ত ডেভেলপার এটি অপারেট করছেন। আর বিটক্লাউড প্রোফাইলের ফেন্সি ভার্সনের চেয়েও কিছু বেশি। তা সত্ত্বেও এটি বৃহত্তর উদ্যোগের একটি অংশ, সম্ভবত এ ব্যাপারে আমাদের মনোযোগ দেয়া দরকার।
তাকি বলেন, একটি দ্রুতগতিসম্পন্ন বেনামী ও ডিসেন্ট্র্যালাইজড ইন্টারনেট অসম্ভব, তা নয়। আজকের দিনে বিটক্লাউড জবাব দেয়ার চেয়ে প্রশ্ন করে বেশি, কিন্তু এটি একটি আদর্শ ধারণা, আর এর রয়েছে অপরিমেয় সম্ভাবনা।