• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > মানব মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সাবরিনা নুজহাত
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
মানব মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তি
প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা এখন অনেক কিছু মানুষের নিয়ন্ত্রণে এনে দিয়েছে। হাতের মুঠোয় মাউসের ক্লিকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী নানা কার্যক্রম। সেখানে মানব মসিত্মষ্ক কেনো মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে! তাই গবেষকেরা মানব মসিত্মষ্ক নিয়ন্ত্রণ, নাড়ি-নক্ষত্রের খবর জানার জন্য প্রতিনিয়ত গবেষণা ও উদ্ভাবন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে এসেছে নানা উদ্ভাবন। এমনই দুটি প্রযুক্তি নিয়ে এ আয়োজন।

ব্রেন কমপিউটার ইন্টারফেস টেকনোলজি
ব্রেন কমপিউটার ইন্টারফেস টেকনোলজি তথা বিসিআই নামে এমন এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে, যা দিয়ে খুব সহজেই মানুষের মসিত্মষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে মেশিনের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কল্পনাতীত সব কাজ করা সম্ভব। এর জন্য দরকার ক্ষুদ্র এক ধরনের চিপ। এ চিপ মানব মসিত্মষ্কের সাথে সংযোজিত করে মসিত্মষ্কের প্রাণশক্তি নিউরনের কার্যপন্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ মাইক্রো চিপ নিয়ন্ত্রিত হয় এক ধরনের বিশেষ মাস্টার কমপিউটার দিয়ে।
বিজ্ঞান কখনই মানুষের অমঙ্গল আনে না। এটা মানুষ, যে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে স্বার্থসিদ্ধির জন্য। এ প্রক্রিয়াটি মূলত মানবকল্যাণের জন্য উদ্ভাবিত হয়েছে। জানা যায়, এ বিসিআই প্রযুক্তি দিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্থ কোনো ব্যক্তির নিষ্ক্রিয় নিউরনগুলোকে পুনরায় উজ্জীবিত করা সম্ভব। মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়ানো, দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি বা কোমায় কিংবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুস্থ করাসহ অসংখ্য উপকার এ প্রযুক্তি দিয়ে পাওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয়, তথ্য দেয়া-নেয়া বা যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এর উৎকর্ষ পাওয়া যাবে। দুরারোগ্য ব্যাধি বা মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এ প্রযুক্তি সফলতা লাভ করতে পারে। মানুষের পাশাপাশি জীব-জগতের অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও এটি আশীর্বাদ বয়ে আনতে পারে। বিসিআই প্রযুক্তির অপর নাম মাইন্ড-মেশিন ইন্টারফেস তথা এমএমআই। অনেকে একে ডিরেক্ট নিউরাল ইন্টারফেস বা ব্রেন মেশিন ইন্টারফেসও বলে থাকে।
বিসিআই প্রযুক্তি নিয়ে কাজ শুরম্ন হয় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৭০ সালে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের একটি প্রজেক্ট। প্রাথমিকভাবে এ প্রজেক্টের মূল লক্ষ্য ছিল নিউরোপ্রস্থেটিক সিস্টেমের উন্নতি ঘটানো অর্থাৎ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রণকারী নিউরনের কর্মক্ষমতা বাড়ানো এবং সেই সাথে এক মসিত্মষ্ক থেকে অন্য মসিত্মষ্কে তথ্য প্রেরণ করা। পরবর্তী কয়েক দশকে গবেষণাকারী দলটি এ বিষয়ে অভূতপূর্ব সফলতা অর্জন করে।
তবে এর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যে ব্যক্তিটির তিনি হচ্ছেন হ্যান্স বার্গারস। বার্গারস সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন মানব মসিত্মষ্কের ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্টিভিটি। ১৯২৪ সালে বার্গারস মসিত্মষ্কে চলমান ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্টিভিটি রেকর্ড করতে সক্ষম হন। তার এ গবেষণার নাম ছিল দ্য ইলেকট্রিক্যাল অ্যাক্টিভিটি অব দ্য হিউম্যান ব্রেন অ্যান্ড দ্য ডেভেলপমেন্ট অব দ্য ইলেকট্রোএন্স-ফ্যালোগ্রাফি সংক্ষেপে ইইজি। সেই সাথে তিনি মসিত্মষ্কের অবস্কিলেটরি অ্যাক্টিভিটি নির্ণয়েও সক্ষম হন। এ পরীক্ষণটির জন্য তিনি তার রোগীদের মসিত্মষ্কে এক ধরনের সিলভারের তার প্রবেশ করান। সম্পূর্ণ পরীক্ষাটি করার জন্য তিনি রম্নডিমেন্টারি নামের একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করেন। এ বিশেষ প্রক্রিয়ার পরীক্ষাটি দিয়ে তিনি মসিত্মষ্কে চলমান বৈদ্যুতিক গতিবিধি, তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং বিদ্যুতের ভোল্ট নির্ণয়ে সক্ষম হন। পরে তার উদ্ভাবিত এ প্রক্রিয়া এবং যন্ত্রের উন্নতি ঘটিয়ে বিসিআই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়।

মনের কথা জানা যাবে
মনের কথা পড়ার প্রবল ইচ্ছা মানুষের মধ্যে আছে, কিন্তু তা হয়ে ওঠে না। কারণ বিভিন্ন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ তার প্রকৃত মনের অবস্থা লুকিয়ে অন্য ধরনের আচরণ করে ওই পরিস্থিতি থেকে সুবিধা আদায়ের জন্য। বেশিরভাগ সময় তারা সুবিধা নেয় এবং তা অসৎভাবেই। মানসিক অবস্থা লুকিয়ে এ ধরনের সুবিধা নেয়ার পথটি শিগগিরই বন্ধ হয়ে আসছে বলে মমত্মব্য করেছেন আমেরিকার কার্নেগি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। একজন মানুষের মনে কি সুখ, দুঃখ, রাগ নাকি ঈর্ষা বিরাজ করছে, তা ব্রেন স্ক্যানের মাধ্যমে মুহূর্তেই জানা যাবে বলে জানান তারা। তবে এর মধ্যে কারও মনে সুখী অবস্থা বিরাজ করলে তা নাকি খুব সহজেই নির্ণয় করা যায়। কিন্তু কেউ ঈর্ষান্বিত থাকলে তা ব্রেন স্ক্যানের মাধ্যমে নির্ণয় করা তুলনামূলকভাবে কঠিন বলে গবেষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মানুষের মনের প্রকৃত অবস্থা জানার এ আবিষ্কারের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। কোনো ব্যক্তি নিজের মনের সঠিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে তাদের আবিষ্কৃত পদ্ধতির মাধ্যমে নিমিষে এবং সহজে তা জানা যাবে বলে জানান কার্নেগি বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল অ্যান্ড ডিসিশন সায়েন্সের সহকারী অধ্যাপক এবং গবেষক দলের প্রধান কারিম কাসাম। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি তার মনের অবস্থা প্রকাশ করতে পারে না এবং বাইরে থেকে যা নির্ণয় করাও কঠিন, তা ব্রেন স্ক্যানের মাধ্যমে জানা যাবে। কোন ধরনের আচরণের কারণে ওই ব্যক্তি কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তা স্বল্প প্রয়াসেই জানা যাবে।

১০ জন অভিনেতার ওপর এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে বলে গবেষক দল জানিয়েছে। ওই ১০ জন অভিনেতাকে রাগ, বিরক্তি, ঈর্ষা, ভয়, সুখ, দুঃখ, দম্ভ এবং লজ্জা ইত্যাদি অবস্থা দেখানোর জন্য বলা হয়। আর ওই সময় তাদের মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা হয়। একজন অভিনেতার একটি আবেগীয় অবস্থাকে ছয়বার করে পরীক্ষা করা হয়। আর বেশিরভাগ সময়ই প্রকৃত মানসিক অবস্থা ভেসে ওঠে। গবেষকদের তথ্যমতে, অভিনেতাদের ব্রেন স্ক্যান করানোর পর প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সত্যি এবং সঠিক মানসিক অবস্থা জানা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া মনের খারাপ এবং ভালো অবস্থার মধ্যে একটি জটিলতা তৈরি হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল, তার হারও তুলনামূলকভাবে কম বলে গবেষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এ গবেষণার নাড়ি-নক্ষত্র পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার পরই ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে। চারদিক থেকে মানুষ এ গবেষণা সম্পর্কে জানতে চাইছে এবং কীভাবে তা সম্ভব, সে সম্পর্কেও জানতে চাইছে। উলেস্নখ্য, এ ব্রেন স্ক্যানের মাধ্যমে মানসিক অবস্থা জানার এ পদ্ধতিকে আরও সমৃদ্ধ করে চিকিৎসা ব্যবস্থায় সংযোজন করা হবে বলে জানান গবেষক দলের প্রধান কারিম কাসাম।

ফিডব্যাক : bmtuhin@comjagat.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস