লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
কমপিউটার জগৎই বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ
আমি কমপিউটার জগৎ-এর অনেক পুরনো ও নিয়মিত পাঠক। বলতে পারেন এ পত্রিকার শুরু থেকেই আমি এর পাঠক। প্রতিটি সংখ্যা আমি নিয়মিত পড়ে থাকি। সুতরাং আমার কমবেশি মনে আছে বাংলাদেশের কমপিউটার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংবাদ ও ঘটনাপ্রবাহের কথা। সে সূত্রে বলা যায়, কমপিউটার জগৎ নিঃসন্দেহে এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ।
কমপিউটার জগৎ-এর দীর্ঘ তেইশ বছরের পথ পরিক্রমায় বিভিন্ন প্রচ্ছদ প্রতিবেদন, সংবাদ সম্মেলন, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। কমপিউটার জগৎ বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে কেনো সর্বমহলে স্বীকৃত, তার উল্লেখযোগ্য কিছু পর্যায়ক্রমে তুলে ধারায় কমপিউটার জগৎ পত্রিকার সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ, কেননা এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আমরা যারা কমপিউটার জগৎ পড়ে আসছি, তাদের অনেকেই বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির অঙ্গনে কার কেমন অবদান বা কৃতিত্ব রয়েছে, তা ভুলতে বসেছে। এ ঘটনাপঞ্জির মাধ্যমে একদিকে যেমন বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিকাশের প্রকৃত ইতিহাস যেমন উন্মোচিত হলো, তেমনি তরুণ প্রজন্মও জানতে পারল এ দেশে তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনে কমপিউটার জগৎ-এর অবদান।
আমি মনে করি, তথ্য সংবলিত লেখাটি কমপিউটার জগৎ মাঝেমধ্যেই প্রকাশ করবে লিফলেট আকারে, যাতে সবাই জানতে পারে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিকাশের প্রকৃত ইতিহাস। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যারা দেখেনি বাংলাদেশে কমপিউটারের ব্যাপক ব্যবহার ও সম্প্রসারণের সূচনা পর্বটি কত বন্ধুর ছিল। বিশেষ করে, ৯০-এর দশকের শুরুতে কমপিউটার জগৎ-এর যাত্রার সূচনা পর্বটি যখন প্রকাশিত হয় ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ স্লোগান দিয়ে তখনকার অবস্থা। কমপিউটার জগৎ-এর সূচনা পর্বটি যখন প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে, তখন বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়। কেননা কমপিউটার জগৎ যখন ‘জনগণের হাতে কমপিউটার চাই’ স্লোগানগান দিয়ে যাত্রা শুরু করে, তখন দেশের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে শুরু করে সবাই মনে করত এ দেশে কমপিউটারের ব্যাপক বিস্তার ঘটলে দেশের বেকারত্ব বেড়ে যাবে। তাই সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের কেউ কেউ কমপিউটারকে ‘শয়তানের বাক্স’ বলে অভিহিত করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। এমনই এক প্রতিকূল পরিবেশ পরিস্থিতিতে কমপিউটার জগৎ-এর যাত্রা শুরু।
কমপিউটার জগৎ যখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সেমিনার সিপোজিয়াম করে, তখন এ দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো সেসব বিষয়ের ওপর কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি। কেননা, তখন সবাই মনে করত কমপিউটারের ব্যাপক বিস্তার ঘটলে দেশের লোকজন কর্মহীন হয়ে পড়বে কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গুরুত্ব তারা অনুধাবন করতে পারেনি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ কমপিউটার জগৎ আয়োজিত প্রথম প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার প্রেস রিলিজ কোনো % দৈনিক পত্রিকা ছাপায়নি। ফাইবার অপটিক ক্যাবল যখন বাংলাদেশের বঙ্গপোসাগরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল, সে সময় কমপিউটার জগৎ প্রেস কনফারেন্স করে এ বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করে, যাতে ফাইবার অপটিক ক্যাবল সংযোগ নিতে সরকার উদ্যোগী হয়। কেননা, তখন সরকার তথ্য পাচার হওয়ার ভয়ে নামমাত্র মূল্যের ফাইবার অপটিক ক্যাবলে সংযুক্ত হতে চায়নি। সে সময় ফাইবার অপটিক সংযোগ মূল্য ছিল প্রায় বিনামূল্যে। সে সময় কমপিউটার জগৎকে সমর্থন দিয়ে কোনো সংবাদই প্রকাশ করেনি এ দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো। যার ফলে এ সংযোগ পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় দশ বছর।
তখন তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেনি এ দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো। বিস্ময়কর হলেও সত্য, এ ধারা চলতে থাকে ১৯৯৭-৯৮ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে আইসিটি সংশ্লিষ্ট যা তথ্য-সংবাদ প্রকাশিত হতো, তা কমপিউটার জগৎ ও আইসিটি সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মাসিক পত্রিকাগুলোতে। মজার বিষয়, সে সময় আইসিটি সংশ্লিষ্ট যেসব পত্রিকা প্রকাশিত হতে শুরু করে, সেগুলো পরিচালিত হতো কমপিউটার জগৎ-এর সাথে জড়িত শীর্ষস্থানীয় কিছু সাবেক সাংবাদিকের মাধ্যমে। অর্থাৎ এসব পত্রিকার প্রেরণা বা হাতেখড়িও হলো কমপিউটার জগৎ। কমপিউটার জগৎ-এর প্রেরণা ও ব্যাপক জনপ্রিয়তায় এসব পত্রিকার আগমন ঘটে।
এক কথায় বলা যায়, শুধু আইসিটি বিষয়ে যে সাংবাদিকতার জন্ম হয়েছে, তা-ও কমপিউটার জগৎ-এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও সফলতার কারণে। এখন দেশের প্রায় সব দৈনিক পত্রিকায় আইসিটির জন্য আলাদা একটি বিভাগ বরাদ্দ হয়েছে, তার পেছনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে কমপিউটার জগৎই। বর্তমানে বাংলাদেশের দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকার আইটি পাতা বের করার জন্য যে সাংবাদিকতার অভাব হয় না, তার প্রথম ও প্রধান কৃতিত্ব কমপিউটার জগৎ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা মরহুম অধ্যাপক আবদুল কাদেরের। কেননা বর্তমানে যারা সিনিয়র সাংবাদিক আইসিটি বিষয়ে লেখালেখি করেন, তাদের হাতেখড়ি অধ্যাপক আবদুল কাদের তথা কমপিউটার জগৎ-এ। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, কমপিউটার জগৎই এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের পথিকৃৎ।
হাসান শাহিদ ফেরদৌস
কলাবাগান, ঢাকা
নারী ফ্রিল্যান্সার তৈরির কার্যক্রমে চাই আন্তরিকতা
যেকোনো ক্ষেত্রে উৎসাহ ও প্রেরণায় যদি সরকার থাকে আমত্মরিক, তাহলে তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দেয়ায় তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিল, তা কিছুটা হলেও ম্লান হয়েছে সরকারের ঘোষিত কার্যকলাপের আন্তরিকতার অভাবের কারণে তা নির্দিবধায় বলা যায়। এজন্য আমরা কিছুটা হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের কার্যকলাপে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আরও পিছিয়ে পড়েছি।
সরকারের লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আইটি শিল্পকে উন্নীত করা ও দেশের বাইরে আইটি দক্ষতাসম্পন্ন শ্রমিক পাঠানো। সরকার আয়োজিত আইটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণ-তরুণীরা তাদের বেকার সমস্যা দূর করবে। সম্প্রতি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে ই-ফাইলিং সিস্টেম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে যদি আইসিটিতে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ভিশন ২০২১ পূরণে অনেকখানি সহায়ক হবে। এ সত্য উপলব্ধিতে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, সারাদেশে ৫০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা হবে। ফলে নারীরা ঘরে বসে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে উপার্জন করতে পারবে। এতে কিছুটা হলেও ভিশন ২০২১ পূরণে এগিয়ে যাবে।
দেশে অর্ধলক্ষ নারী ফ্রিল্যান্সার তৈরি করা হবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে। এ লক্ষ পূরণ আপাতদৃষ্টিতে অনেকের কাছে কঠিন মনে হলেও আসলে কঠিন কিছুই নয়। একটু আন্তরিক হলে এ লক্ষ পূরণ করা অসম্ভব কিছুই নয়। এ ক্ষেত্রে আন্তরিক হওয়ার অর্থ হলো অর্ধলক্ষ নারী ফ্রিল্যান্সার তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা ও তা বাসত্মবায়ন করা। এ অবকাঠামো তৈরি ও বাস্তবায়নে আন্তরিক হলে এ লক্ষ পূরণ করা সম্ভব। অন্যথায় তা শুধু মুখের বুলি হিসেবে থেকে যাবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না।
শামীম আক্তার
গোপালপুর, টাঙ্গাইল