• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > থ্রিডি’র পর এবার ফোর-কে টেকনোলজি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
কমিউনিটি রেডিও
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
থ্রিডি’র পর এবার ফোর-কে টেকনোলজি

ইন্টেলের মিডিয়া বক্স

সাধারণ মানুষের কাছে ফোর-কে পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে ইন্টেলের মিডিয়া বক্সই হতে পারে আশার আলো। বলা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের সামনে ফোর-কে সমাধান আনবে ইন্টেলের মিডিয়া বক্স। গত ৮ মে ইন্টেল ঘোষণা দিয়েছে, এর নতুন হাসওয়েল প্রসেসরগুলো ফোর-কে রেজ্যুলেশন সাপোর্ট করবে। যদি এসব চিপ ইন্টেলের আগামী সেট-টপ বক্সে ব্যবহার করা যায়, তবে আমরা শেষ পর্যন্ত দেখতে পাব ফোর-কে বক্স সংযুক্ত হয়েছে নতুন সব আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভির ফোর-কে কনটেন্টের সাথে। ইন্টেল বরাবর গভীর আগ্রহী ছিল টিভি বাজারে প্রবেশের জন্য একটি অল-ইন-অল সেট-টপ বক্স ভোক্তাদের উপহার দিতে।

চলতি বছরে ডিসপ্লে ম্যানুফেকচারেরা আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টেলিভিশন নিয়ে বেশ চেষ্টা করে যাচ্ছে। বেশ কয়েক ধরনের আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি এখন বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে আছে- সেকি’র ১৩০০ ডলার দামের আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি এবং সনি’র ৫ হাজার ডলার দামের ফোর-কে টিভি। এই গ্রীষ্মে সনি বাজারে ছাড়তে যাচ্ছে ৭০০ ডলার দামের ফোর-কে মিডিয়া প্লেয়ার। কিন্তু এখনো মনে করা হচ্ছে, এটি শুধু কাজ করবে সনি’র ফোর-কে টিভিতেই। তা ছাড়া মনে হচ্ছে, এটি সীমিত থাকবে এর প্রাথমিক মুভি লঞ্চ লাইনআপে। ইন্টেল সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে অবশিষ্ট নন-সনি মার্কেটে একটি সার্বজনীন সেট-টপ বক্স নিয়ে আসার ক্ষেত্রে।

ইন্টেলের মিডিয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক হাগার্স বলেছেন, তাদের সেট-টপ বক্স নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজানের মতো স্ট্রিমিং অ্যাপ্লিকেশনও সাপোর্ট করবে। এরিক হাগার্স এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ফোর-কে ডেলিভারির জন্য। নেটফ্লিক্সের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার নেইল হান্ট বলেছেন, স্ট্রিমিং হবে ফোর-কে ভিডিও পাওয়ার সর্বোত্তম উপায়। আর এর এ সুযোগ আমরা পেতে যাচ্ছি এক-দুই বছরের মধ্যে।

ইন্টেলের ডিভাইসটির সুবাধে আমরা ফোর-কে ভিডিওর সুযোগ পাব এইচডিএমআই ও বিদ্যমান ব্রডব্যান্ড কানেকশন ব্যবহার করে। নতুন অনুমোদিত বা অনুসমর্থিত হাই এফিসিয়েন্সি ভিডিও কোডিং বা এইচইভিসি কোডেক ব্যবহার করলে ফোর-কে ডাটার ৫০ এমবিপিএস থেকে ১০ এমবিপিএসে নেমে আসে, যা বেশিরভাগ আইএসপি’র জন্য বহন করা সম্ভব অথবা কমপক্ষে চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে।

আশা করতে পারেন, অনবরত চালানোর উপযোগী ফোর-কে টিভি আপনার ঘরে আসছে, আর ইন্টেল নিয়ে আসছে সেই হার্ডওয়্যার, যা তা সম্ভব করে তুলবে।

সে-কি আল্ট্রা এইচডি টিভি

চীনা OM Seiki (সে-কি) ৫০ ইঞ্চি ফোর-কে আল্ট্রা এইচডি টিভির আনুষ্ঠানিক দাম ধরা হয়েছে মাত্র ১৫০০ ডলার। একটি গেম চেঞ্জিং ব্যাপার বৈকি, যেখানে অন্যান্য আল্ট্রা এইচডি টিভির দাম একটি কারের দামের চেয়েও বেশি। সে-কি’র এই সস্তাতর দামের টিভির পর সবচেয়ে সস্তা আল্ট্রা এইচডি টিভির দাম শুরু ১৫,০০০ ডলার থেকে। সে-কি হচ্ছে প্রথম ব্র্যান্ড, যা আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টেকনোলজি সাধারণ গ্রাহকদের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছে। আর আমরা এখনই তা কিনতে পারি অ্যামাজন থেকে। এই কম দাম, এই নতুন ও কম পরিচিত ব্র্যান্ড নেম সম্পর্কে ব্যাপক সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। হতে পারে সস্তা দাম = সস্তা মান।

এর প্রতিযোগীদের তুলনায় এর দাম কম হওয়ার একটি কারণ হচ্ছে, এর মধ্যে মূলধারার ব্র্যান্ডগুলোর সাথে যেসব অতিরিক্ত ফ্যান্সি পণ্য থাকে, তা এতে নেই। যেমন এর সাথে ভয়েস রিকগনিশন নেই। এই সে-কি টিভি যেসব সুযোগ দেয়, এর মধ্যে আছে ৩৮৪০ × ২১৬০ রেজ্যুলেশন, তিনটি এইচডিএমআই ১.৪বি পোর্ট (৩০ হার্টজে ফোর-কে ডাটা সঞ্চালনে সক্ষম), ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট আর একটি অতি সাধারণ রিমোট কন্ট্রোল। এরপর ৪৯ পাউন্ড ওজনের এই আল্ট্রা এইচডি টিভির সাথে থাকছে এক বছরের একটি প্রশ্নাতীত (নো কুয়েশ্চন) ওয়ান ইয়ার ওয়ারেন্টি। এই কোম্পানি খুব শিগগিরই একটি ৬৫ ইঞ্চি মডেল আল্ট্রা এইচডি টিভি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা করছে। স্পষ্টতই এরা সনি, এলজি, শার্প, স্যামসাং ও অন্যান্য সুপরিচিত কোম্পানিকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।

সনি ফোর-কে টিভি

সনি গত জানুয়ারিতেই ঘোষণা দেয় চলতি বছরের প্রথমার্ধেই বাজারে আসবে এর দু’টি নতুন আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি সেট : XBR-55X900a (55-inch) এবং XBR-65X900A (65-inch) ফোর-কে আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন এলইডি টিভি। এগুলোর দাম যথাক্রমে ৪,৯৯৯ ডলার ও ৬,৯৯৯ ডলার। সনি প্রথমবারের মতো ফোর-কে মিডিয়া প্লেয়ার FMR-XI এবং ভিডিও ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিসের ঘোষণাও দেয়। সনি ইলেকট্রনিকস হোম ডিভিশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক লুকাস বলেছেন, এ নতুন মডেলের টিভি সেটগুলো এই গ্রীষ্মেই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছবে এবং নিশ্চিত অর্থেই দর্শক-শ্রোতারা ফোর-কে টিভি দেখার নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। আমাদের টিভি সেটগুলোর দর্শকেরা উচ্চতর ডেফিনিশনের তুলনায় চারগুণ স্পষ্ট ও প্রকৃত ছবি দেখতে পারবেন। এর পরের মৌসুমেই আসছে আমাদের ফোর-কে ভিডিও ডিস্ট্রিবিউশন সার্ভিস। তখন দর্শকেরা বুঝতে পারবেন সনি কীভাবে ভিডিও এন্টারটেইনমেন্ট দেখানোর অভিজ্ঞতায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।
তোশিবা সিইভিও ফোর-কে

সিইভিও ৪-কে হচ্ছে তোশিবার আসল টিভি টেকনোলজি, যা টেলিভিশনের ছবির মানের উন্নয়ন ঘটায় এবং ছবির যথার্থতা রক্ষা করে। এটি বস্নু-রে, এইচডি টিভি ও ফোর-কে ভিডিও কনটেন্টের মতো সুপিরিয়র মানের পিকচার দিতে সক্ষম। এটি ফোর-কে ভিডিও ফরম্যাটের আরো জোরালো উন্নয়ন, যার সূচনা হয়েছিল ২০১১ সালে। সাধারণ দর্শকদের কাছে এটি হচ্ছে অনস্ক্রিনে বাস্তব জীবনের ছবি দেখার মতো। তোশিবা জাপানের ব্র্যান্ড ম্যানেজার প্রকৌশলী উজি মতোমুরার মতে, তাদের অনন্য দর্শন হচ্ছে ব্রিংগিং আউট দ্য ন্যাচারাল লুক অ্যান্ড ফিল দ্য রিয়েল লাইফ। সিইভিও ফোর-কে হচ্ছে দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ফোর-কে ভিডিও প্রসেসিং ইঞ্জিন। যত বড় পর্দা, তত বড় বিস্ময়। শুধু পর্দা বড় করলেই চলবে না, এর সাথে চাই এমন প্রযুক্তির সংযোজন যা দর্শকদের টিভি দেখার অভিজ্ঞতাতে আকর্ষণীয় করে তোলার মতো ছবির মান। আপনি যদি বস্নু-রে অথবা এইচডিতে প্রোগ্রাম দেখেন, তবে সিইভিও ফোর-কে টেকনোলজি ইমেজ কোয়ালিটি বাড়িয়ে তা ফোর-কে পিকচার কোয়ালিটির পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম। আর এটিই হচ্ছে এই টেকনোলজির বিস্ময়।

তোশিবা’র সিইভিও ফোর-কে’র মাঝে নতুন কী আছে? এর নতুনত্ব হচ্ছে এর ফাইন টেক্সচার রেস্টোরেশন। এটি হচ্ছে একটি অ্যালগরিদম, যা একটি ইনপুট ইমেজ থেকে বের করে নিয়ে আসে তিনটি উপাদান : texure, edge, and flat portions । ইমেজের টেক্সচার এমন প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়, যাতে করে ফোর-কে পর্যায়ের যথার্থ ইমেজ পাওয়া যায়। ব্রিলিয়েন্স রেস্টোরেশন ব্রিলিয়েন্সি বিভাজন ও পুনরুদ্ধার করে ব্রাইটনেস সৃষ্টি ও প্রকৃত দেখা যথাযথ করার মাধ্যমে। সিইভিও ফোর-কে’র ডায়নামিক গামা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমেজ বিশেস্নষণ করে লুমিনেন্স ও কালারের ত্রম্নটি দূর করে। এর ডিজিটাল নয়েজ ডিটেকশন কিনারার দিকের ফ্ল্যাট পরশনের লিঙ্কিং নয়েজ চিহ্নিত করে তা দূর করে। সাধারণত অ্যানিমেটেড মুভিতে এ সমস্যা দেখা যায়। ডিজিটাল নয়েজ কারেকশন তা সারিয়ে আরও স্পষ্ট ছবি ফুটিয়ে তোলে। অনেক সময় গায়কের কণ্ঠের স্বরের তীব্রতার কারণে স্বরস্পন্দনে ত্রম্নটি দেখা দেয়। এর নাম জাডারিং অ্যাফেক্ট। সাধারণত বস্নু-রে কনটেন্টে এই ত্রম্নটি লক্ষ করা যায়। ডিজাডার তা দূর করে আরো স্পষ্ট ইমেজ দেয়। সিইভিও ফোর-কে’র ক্লিয়ার ফ্রেমে রয়েছে ডাবল সার্কিটের সুযোগ, যা প্রতি সেকেন্ডে সৃষ্টি করে ১২০টি পর্যন্ত ফ্রেম। এটি ইমেজ লেগ দূর করে অ্যাকশন স্ক্রিনে রেজ্যুলেশন বাড়ায়।

থ্রিডি টেলিভিশন উৎপাদনের প্রতি ইলেকট্রনিক কোম্পানিগুলোর আগ্রহ সময়ের সাথে কমে আসছে। এসব কোম্পানির যাবতীয় আগ্রহ এখন আরেকটি বস্নকবুস্টার পণ্য তৈরির ব্যাপারে, যা বাজারে আসা মাত্র ভোক্তারা যেনো লুফে নেয়। আর এক্ষেত্রে এরা হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাতে চায় একটি ডিসপ্লে টেকনোলজি। এর নাম আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টেকনোলজি। এর ডিসপ্লের মাধ্যমে আজকের দিনের সবচেয়ে অগ্রসর মানের ১০৮০ পিক্সেল হাই ডেফিনিশন টিভির তুলনায় চার গুণ বেশি রেজ্যুলেশনের ছবি দেখানো সম্ভব। আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টেলিভিশনের ছবিগুলো অপূর্বসুন্দর চিত্তচমৎকারী। বিশেষ করে যখন কনটেন্টগুলো তৈরি করা হয় নতুন ফোর-কে ভিডিও ফরম্যাটে, তখন ছবি আসে অপূর্ব আকর্ষণীয় হয়ে। দুর্ভাগ্য, শুধু হাতেগোনা দ্য অ্যামেজিং স্পাইডারম্যান, প্রমিথিউস এবং দ্য হবিট ছাড়া এখন পর্যন্ত আমরা খুব কমসংখ্যক ছবিই নির্মাণ করতে পেরেছি এই ফোর-কে ভিডিও ফরম্যাটের ছবি ধারণে সক্ষম ক্যামেরা দিয়ে।

ফোর-কে’র আবির্ভাবে থ্রিডি যে ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে, একদিন ফোর-কেও কি অন্য কোনো অগ্রসর মানের ডিসপ্লে প্রযুক্তির আগমনে একই ধরনের ভাগ্য বরণ করবে? এ প্রশ্নের জবাব পেতে আমাদেরকে আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে ফোর-কে সিনেমার তুলনায় ফোর-কে টেলিভিশনকে আরো বেশি মাত্রায় ভয়াবহ ধরনের বাধার মুখোমুখি হতে হবে। থ্রিডি টেলিভিশনের মতোই নতুন ফোর-কে টেলিভিশনের তুলনায় এগিয়ে আছে হলিউডের সিনেমা। আজকের দিনের ক্যামেরায় যে ওয়াইড-স্ক্রিন ফরম্যাট ব্যবহার হয়, তা ১৯৯৮ পিক্সেল ওয়াইড এবং ১০৮০ পিক্সেল টল। কিন্তু ফোর-কে স্ট্যান্ডার্ডের ফিল্মে রয়েছে ভার্টিক্যালিও হরাইজেন্টালি দ্বিগুণ রেজ্যুলেশন। অর্থাৎ ফিল্মের ক্ষেত্রে ফ্রেম বরাবর ৩৯৯৬ পিক্সেল ও ডাউনের দিকে ২১৬০ পিক্সেল। এর ফলে এর ছবিগুলো হয়ে উঠেছে চারগুণ স্পষ্টতর। অপরদিকে টেলিভিশনে ব্যবহার ফোর-কে ফরম্যাট কিছুটা ন্যারো। এর রয়েছে ফ্রেম বরাবর ৩৮৪০ পিক্সেল ও ডাউনের দিকে ২১৬০। স্ক্রিনের চওড়া কম রাখা হয়েছে এর ১৯২০ × ১০৮০ পিক্সেল কাউন্টের এইচডি (হাই ডেফিনিশন) টিভির অ্যাসপেক্ট রেশিও ১৬ : ৯ বজায় রাখার জন্য। এর ফলে বিদ্যমান ভিডিও কনটেন্ট যেগুলো আপস্কেল করা হয়েছে, সেগুলোও আল্ট্রা হাই ডেফিনিশনের জন্য দেখানো সম্ভব হয়েছে ছবির উপরে ও নিচে ব্ল্যাক ‘লেটার স্কেল’ প্রয়োজন ছাড়াই।

কাদের প্রয়োজন সুপার-শার্প ফোর-কে টেলিভিশন?

এমনকি ১০৪০ স্ক্যান্ড লাইনসমৃদ্ধ (অনবরত ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত) একটি এইচডি টিভি বেশিরভাগ দর্শকের জন্য অপচয় মাত্র। বেশিরভাগ লোক স্ক্রিন থেকে অনেক দূরে বসেন এর দেয়া সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য। কয়েক বছর আগে পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বাড়িতে দর্শকদের চোখ থেকে স্ক্রিনের দূরত্ব ৯ ফুট বা ২.৭ মিটার। কিন্তু গবেষকেরা দেখেছেন, যদি ডিসপ্লের ডিটেইল আলাদা করতে চান, তবে মানুষের চোখের তীক্ষ্ণতাদৃষ্টে ২০/২০ দৃষ্টিসম্পন্ন লোকদের উচিত নয় স্ক্রিনের চওড়ার ১.৮ গুণের বেশি দূরে বসা।

এমনকি স্ক্রিন থেকে ৯ ফুট দূরে বসে একজন দর্শককে আজকের দিনের হাই ডেফিনিশন টিভি সেটের রেজ্যুলেশন থেকে উপকার পেতে হলে প্রয়োজন হবে কোনাকুনি মাপে ৭০ ইঞ্চি স্ক্রিন। এর চেয়ে কম দূরত্বে ছবিতে অস্পষ্ট কালো দাগ দেখা যাবে। তবে চিন্তা নেই, হরাইজেন্টালি ও ভার্টিক্যালি দ্বিগুণ পরিমাণের রেজ্যুলেশন নিলে ৯ ফুট দূরে থাকা একটি আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন স্ক্রিনে খুবই চমৎকার ছবি দেখা যাবে। অতএব আল্ট্রা হাই ডেফিনিশনে চলে যাওয়ার পক্ষে সবচেয়ে ভালো যুক্তি হচ্ছে, সাধারণত বৃহত্তর স্ক্রিন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়া। আজকের দিনের হাই ডেফিনিশন টিভি সেটে দাগ দেখা যেতে শুরু করে, যখন এর অপ্রচুর ২.১এম পিক্সেল ৮০ ইঞ্চির চেয়ে বড় স্ক্রিনে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ৮.৩এম পিক্সেল ব্যবহার করতে চাইলে হাই ডেফিনিশন স্ক্রিন আগের চেয়ে দ্বিগুণ বড় করতে হবে, যাতে করে ছবি রুচিহীন তীব্র উজ্জ্বল পর্যায়ে না চলে যায়।

ধরা যাক, আপনার ঘরে প্রচুর জায়গা আছে, বড় বাজেটও আছে, ৮০ ইঞ্চির চেয়ে বড় পর্দার টিভি ব্যবহারে আপনার কোনো অসুবিধা নেই। এরপরও একটি বাধা আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে, আপনি স্ক্রিনে ন্যাটিভ ফোর-কে কনটেন্ট পাবেন না। অপরিপক্ব আকারে (in a raw form) আড়াই ঘণ্টার প্রতি সেকেন্ডে ২৪ ফ্রেমের স্বাভাবিক একটি ফোর-কে ফিল্ম শুটে ধারণ করে ২১৬,০০০ ফ্রেম। এ ফিল্মের প্রতিটি ফ্রেমে থাকে ৮.৬ পিক্সেল এবং প্রতিটি পিক্সেলে থাকে ২৪ বিট কালার ইনফরমেশন। এর ফলে পাওয়া ভিডিও ফাইলে থাকে ৫.৬ টেরাবাইট ডাটা। এমনকি কমপ্রেশন করেও এই মহা বড় ফাইল বায়ু কিংবা তারের মাধ্যমে সঞ্চালন করার জন্য প্রয়োজন হবে অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ। বাড়াবে অবকাঠামো খরচ, যা ব্রডকাস্টারদের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ফোর-কে ফিচার ফিল্ম ইন্টারনেটে স্ট্রিমিং করতে একই ধরনের ব্যান্ডউইডথ সমস্যার মুখে পড়বে। এ ক্ষেত্রে ডাটা ট্রান্সপোর্ট করতে উচ্চগতির ইন্টারনেট কানেকশন দরকার, যার গতি হবে প্রতি সেকেন্ডে ১ গিগাবিট। কোনো কোনো বাড়িতে এ ধরনের দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড কানেকশন রয়েছে।

এর বিকল্প হচ্ছে, বস্নু-রে ডিস্ক হিসেবে ফোর-কে ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউট করা, ঠিক যেমনটি কনভেনশনাল ফিল্ম বিক্রি হয়ে থাকে। অথবা যতদিন মানুষ ফোর-কে ফিল্ম স্ট্রিমিং শুরু না করে, এর পরিবর্তে তা নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, আইটিউনস ও অন্যসব অনলাইন থেকে নেয়া। বস্নু-রে ডিস্কে প্রকাশ করা একটি টু-কে ফিল্ম এর দু’টি রেকর্ডিং লেয়ারের পুরো ৫০ গিগাবাইট কাজে লাগায়। একটি ফোর-কে ফিল্মের জন্য প্রয়োজন হবে একটি তৃতীয় অথবা চতুর্থ লেয়ার বা স্তর। এমনকি তখন একটি বস্নু-রে ডিস্কের ওপর একটি ফোর-কে ফিল্ম শোহর্ন (shoehorn) করার জন্য প্রয়োজন হবে বর্তমান এইচ.২৬৪ স্ট্যান্ডার্ডের তুলনায় আরও বেশি কার্যকর কমপ্রেশন মেথডের।

ফোর-কে’র জন্য তৈরি হোন

অতএব স্পষ্টতই একটি নয়া কমপ্রেশন মেথড প্রয়োজন হবে। কমপ্রেশন স্ট্যান্ডার্ন্ডের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক কমিটিগুলো এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা করে আসছে এইচ.২৬৪-এর একটি উত্তরসূরির ব্যাপারে। ‘হাই এফিসিয়েন্সি ভিডিও কোডিং’ নামে পরিচিত সর্বশেষ খসড়াকে বলা হয় ইমেজ কোয়ালিটি না হারিয়ে এইচ.২৬৪-এর কমপ্রেশন রেশিও ডাবল করার কথা। এমনকি যদি কাজের মাধ্যমে প্রমাণ হয় যে, নতুন কমপ্রেশন স্ট্যান্ডার্ড (এইচ.২৬৫) আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে। শিল্পসংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করেন, ফোর-কে টেলিভিশন সফলতা পাবে। আর এর জন্য প্রয়োজন হবে এর এনকোডিং ও কনটেন্ট ডেলিভারির সম্পূর্ণ নতুন একটি উপায়।

সনি’র সমাধান হচ্ছে, প্রথম প্রজন্মের আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টেলিভিশন সেটের সাথে একটি মিডিয়া সার্ভার জুড়ে দেয়া। সার্ভারে আগে থেকেই এর কয়েকটি সুবিন্যস্ত হার্ডডিস্কে প্রিলোড করা থাকবে ১০টি ফিল্ম। সেই সাথে থাকবে বাছাই করা কিছু শর্ট ভিডিও। সনি জানিয়েছে, অন্তর্ভুক্ত করা ফিল্মগুলো সরাসরি আসল ফোর-কে মাস্টার কপি। কিন্তু কেউ বলেনি, গ্রাহকেরা কী করে তাদের সার্ভারে নতুন টাইটেল যোগ করবে। স্পষ্টতই এটি একটি সাময়িক পদক্ষেপ। এ ধরনের পদক্ষেপকে সাধারণত ‘স্টপগ্যাপমেজার’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। সনি’র এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার উদ্দেশ্য প্রথম দিকের ধনী গ্রাহকদের অর্থাৎ আর্লি-অ্যাডাপ্টারদেরকে হালনাগাদ ভিডিও ফ্যাডগুলো সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা। উল্লেখ্য, সনি’র ৮৪ ইঞ্চি আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি সেটের দাম পড়ে ২৫ হাজার ডলারের মতো। আর ক্রেতাদের ঋণের আওতায় একটি মিডিয়া সার্ভারও দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভিকে যদি হাই ডেফিনিশন টিভির উত্তরসূরি করতে হয়, তবে আজ হোক কাল হোক ক্যাবল ও স্যাটেলাইট টিভি প্রোভাইডারদের এবং স্ট্রিমিং ভিডিও সার্ভিসগুলোকে ফোর-কে কনটেন্ট আস্থার সাথে ও সস্তায় সরবরাহ করার একটি উপায় বের করতেই হবে। সন্দেহ নেই, এরা এক সময় তা পারবে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কখন?

হাই ডেফিনিশন টিভির পেনিট্রেশন হচ্ছে সর্বোত্তম নির্দেশনা। ডিজিটাল হাই ডেফিনিশনে আমেরিকার প্রথম দেশব্যাপী ব্রডকাস্ট ছিল ১৯৯৮ সালে জন গেস্ননের মহাকাশ খেয়াযান ডিসকভারির লিফট-অফ বা উৎক্ষেপণ। এরপর আরও ১২ বছর সময় লেগেছে হাই ডেফিনিশন টিভিকে মূলধারায় নিয়ে আসতে। সে কথা স্মরণ রেখে বলা যায়, ২০২৫ সালের দিকে অর্ধেক আমেরিকানের বাড়িঘরে আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি পৌঁছে যাবে।
আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন

আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন বিভিন্ন নামে পরিচিত : Ultra High Definition / Ultra HD / Ultra HDTV / Super Hi-Vision / UHD / UHDTV / 4K / 8K । এটি একটি ভিডিও ফরম্যাট। এর ধারণার সূচনা করে জাপানের সরকারি সম্প্রচার নেটওয়ার্ক এনএইচকে। ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর দ্য কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস অ্যাসোসিয়েশন (সিইএ) ঘোষণা দেয়, একটি ১৬ × ৯ রেশিওর জন্য কমপক্ষে ১ ডিজিট ইনপুট ক্যাবল ক্যারিংয়ে মিনিমাম রেজ্যুলেশন ৩৮৪০ × ২১৬০ স্কয়ার পিক্সেল হলে অফিসিয়াল টার্ম হিসেবে Ultra HD পদবাচ্যটি ব্যবহার করা হবে।

আগেই বলা হয়েছে, আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন আর ফোর-কে একই কথা। কারিগরি দিক থেকে বলতে গেলে বলতে হয়, ফোর-কে বলতে বুঝব সুনির্দিষ্ট ৪০৯৬ × ২১৬০ পিক্সেল রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লেকে। এটিই হচ্ছে সব ফোর-কে রেকর্ডিংয়ের রেজ্যুলেশন, যদিও অনেকেই ফোর-কে বলতে মোটামুটি ৪০০০ হরাইজেন্টাল পিক্সেলের রেজ্যুলেশনকে বোঝান। আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভির রেজ্যুলেশনের চেয়ে সামান্য কম- ৩৮৪০ × ২১৬০ পিক্সেল। এটি পুরো এইচডি রেজ্যুলেশন ১৯২০ × ১০৮০-এর ঠিক চার গুণ। আজকের দিনের অনেক মুভি ক্যামেরা ফোর-কে রেজ্যুলেশনের চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারে। যেমন RED Epic ক্যামেরা নিতে পারে ৫১২০ × ২৭০০ পিক্সেলের ফাইভ-কে রেজ্যুলেশনের ছবি। আর সনি এফ৬৫এইট-কে ক্যামেরা নিতে পারে ৮১৯২ × ৪৩২০ পিক্সেল রেজ্যুলেশনের ছবি।

প্রশ্ন হচ্ছে, কত বড় হবে এই আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি? এ পর্যন্ত আমরা যেসব আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি পেয়েছি, এগুলোর সবই দৈত্যাকার। সনি থেকে পেয়েছি ৮৪ ইঞ্চি টিভি, এলজি’র টিভিও ৮৪ ইঞ্চি। তোশিবার টিভির আকার কিছুটা ছোট, ৫৫ ইঞ্চি। তোশিবার দাবি, তাদেরটি চশমা ছাড়া দেখার উপযোগী থ্রিডি টিভি। এ ধরনের টিভি আমরা পেয়েছি ফিলিপস থেকেও। আমরা এ ক্ষেত্রে ভুলে যেতে পারি না প্যানাসনিক প্লাজমা টিভির কথাও। এটি হচ্ছে আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন রেজ্যুলেশন বিকশিত করার ক্ষেত্রে প্রথম টিভি। ২০১৩ সালে আমরা আশা করতে পারি সহনীয় দামে কিছু আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি, যদিও এগুলোর অনেকগুলোই থেকে যাবে আকারে আগের মতোই বড়। তবে এই ২০১৩ সালে আরো ছোট আকারের আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি আমরা পাব না, তা-ও কিন্তু নয়। আমরা এ বছরের প্রথমার্ধেই পেতে যাচ্ছি তোশিবা থেকে ৫৮ ইঞ্চি ও ৬৫ ইঞ্চি আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি। আর সনি থেকে পেতে যাচ্ছি ৫৫ ইঞ্চি ও ৬৫ ইঞ্চির দু’টি আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি। স্যামসাং বাজারে আনবে একটি ৫৫ ইঞ্চি আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি। শোনা যাচ্ছে, এর দাম পড়বে ৩৭,৯০০ ডলার। তাছাড়া ২০১৩ সালেই আমরা এলজি এবং সিইএস থেকে পেতে যাচ্ছি ওএলইডি টিভি। এতে থাকছে ওএলইডি আর এইচডির সমন্বয়। সনি ও প্যানাসনিক থেকেও আসবে ৫৬ ইঞ্চি ওএলইডি টিভি। এসব টিভি জাপানের দু’টি করপোরেশনের গবেষণার ফসল।
আইটিইউ রিকমেন্ডেশন

আল্ট্রা এইচডিটিভি সম্পর্কে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) রিকমেন্ডেশন ‘BT.2020’ আইটিইউ ওয়েবসাইটে পোস্ট করা হয় ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট। এই রিকমেন্ডেশন ‘রিকমেন্ডেশন ২০২০’ নামেও পরিচিত। এতে হাই ডেফিনিশন টিভির বিভিন্ন বিষয় সংজ্ঞায়িত করা হয়। যেমন এতে সংজ্ঞায়িত করা হয় ডিসপ্লে রেজ্যুলেশন, ফ্রেম রেট, ক্রোমা সাবস্যাম্পলিং, কালার ডেপথ, কালার স্পেস ইত্যাদি।
আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন টিভি রেজ্যুলেশন : বর্তমানে দুই ধরনের আল্ট্রা এইচডি/ফোর-কে রয়েছে। উভয়ের আসপেক্ট রেশিও ১৬ : ৯। ফোর-কে আল্ট্রা এইচডির (১৬০পি) রেজ্যুলেশন ৩৮৪০ × ২১৬০ (৮.৩ মেগাপিক্সেল), যা মোটামুটিভাবে ফোর-কে সিনেমার সমান অথবা ফুল এইচডি ফরম্যাটের (১০৮০পি) পিক্সেল নম্বরের চার গুণ। এইট-কে আল্ট্রা এইচডি (৯৪৩২০পি) সৃষ্টি করে ৭৬৮০ × ৪৩২০ পিক্সেল (৩৩.২ মেগাপিক্সেল) রেজ্যুলেশন, যা মোটামুটি একটি আইএমএক্স ফিল্মের সমান অথবা ফুল এইচডি (১০৮০পি) ফরম্যাটের পিক্সেল নম্বরের ১৬ গুণ। কারো কারো বিশ্বাস আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন প্রযুক্তি আল্ট্রা এইচডিটিভি সম্পর্কিত স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দিয়েছে।

আল্ট্রা এইচডি ফ্রেম রেট : Rec.2020-এ অনুমেদিত আল্ট্রা এইচডিটিভির ফ্রেম রেট হচ্ছে ১২০পি, ৬০পি, ৫৯.৯৪পি, ৫০পি, ৩০পি, ২৯.৯৭পি, ২৫পি, ২৪পি এবং ২৩.৯৭পি। শুধু প্রগ্রেসিভ ফ্রেম রেটগুলোরই অনুমোদন আছে।

আউটার ট্রায়াঙ্গেলে Rec. 2020 (UHDTV) কালার স্পেস এবং ইনার ট্রায়াঙ্গেলে Rec.709 (HDTV) কালার স্পেস : Rec. 2020 সংজ্ঞায়িত করে ১০ বিট অথবা ১২ বিটের একটি আল্ট্রা এইচডিটিভি কালার ডেপথ ।

১০ বিট পার কম্পোনেন্ট Rec. 2020 ব্যবহার করে সেসব ভিডিও লেভেল, যেখানে ব্ল্যাক লেভেল সংজ্ঞায়িত করা হয় কোড ৬৪ হিসেবে এবং নমিনাল পিক সংজ্ঞায়িত করা হয় কোড ৯৪০ হিসেবে। কোড ০-৩ এবং ১০২০-১০২৩ ব্যবহার হয় টাইমিং রেফারেন্স হিসেবে। কোড ৪ থেকে ৬৩ পর্যন্ত ব্ল্যাক লেভেলের নিচের ভিডিও ডাটা প্রোভাইড করে। অপরদিকে কোড ৯৪১ থেকে ১০১৯ পর্যন্ত প্রোভাইড করে নমিনাল পিকের উপরের ভিডিও ডাটা।

১২ বিট পার কম্পোনেন্ট Rec. 2020 ব্যবহার করে সেসব ভিডিও লেভেল, যেখানে ব্ল্যাক লেভেল সংজ্ঞায়িত হয় কোড ২৫৬ হিসেবে এবং নমিনাল পিক সংজ্ঞায়িত হয় কোড ৩৭৬০ হিসেবে। কোড ০-১৫ এবং ৪০৮০-৪০৯৫ ব্যবহার হয় টাইমিং রেফারেন্স হিসেবে। কোড ১৬ থেকে ২৫৫ পর্যন্ত প্রোভাইড করে ব্ল্যাক লেভেলের নিচের ভিডিও ডাটা। অপরদিকে কোড ৩৭৬১ থেকে ৪০৭৯ পর্যন্ত প্রোভাইড করে নমিনাল পিকের উপরের ভিডিও ডাটা।

আল্ট্রা এইচডি কালার স্পেস : Rec.2020 কালার স্পেস এমন সব কালার তৈরি করতে পারে, যা দেখানো যাবে না Rec.709 (HDTV) কালার স্পেসের সাথে। সিআইই ১৯৩১ কভারেজে Rec.2020 কালারস্পেস কভার করে ৭৫.৮ শতাংশ, ডিজিটাল সিনেমা কভার করে ৫৩.৬ শতাংশ, অ্যাডোবি আরজিবি কালার স্পেস কভার করে ৫২.১ শতাংশ এবং Rec. 709 কভার করে ৩৫.৯ শতাংশ।

আল্ট্রা এইচডি ট্রান্সফার ক্যারেক্টারিস্টিক : Rec.2020 সংজ্ঞায়িত করেছে নন-লিনিয়ার ট্রান্সফার ফাংশন, যা গামা কারেকশনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। ১০ বিট পার কম্পোনেন্ট Rec.2020 একই ফর্মুলা ব্যবহার করে, যা ব্যবহার হয় Rec.709-এ। ১২ বিট পার কম্পোনেন্ট Rec.2020 ফর্মুলায় একটি মাত্র পরিবর্তন আনে আলোর তীব্রতার ক্ষেত্রে। Rec.2020 এবং Rec.709 উভয়েই হোয়াইট পয়েন্টের জন্য ব্যবহার করে ইলুমিন্যান্ট ডি ৬৫।

আল্ট্রা এইচডি আপস্কেলিং : আল্ট্রা এইচডি ফোর-কে রেজ্যুলেশন ৩৮৪০ × ২১৬০ পপুলার এইচডি সোর্স ফরম্যাট ৭২০পি ও ১০৮০পি থেকে ভিডিও স্কেলিং সিমপ্লিফাই করে। ১০৮০ পিক্সেলের একটি ভিডিও সোর্সকে ১০৮০ পিক্সেল সোর্স থেকে আল্ট্রা এইচডি ফোর-কে’র ওপর ৪ পিক্সেল ব্যবহার করে পরিপূর্ণভাবে স্কেল করা যাবে শুধু হরাইজেন্টালি (আনুভূমিক) ও ভার্টিক্যালি (আনুলম্বিক) পিক্সেল দ্বিগুণ করে। একইভাবে একটি ৭২০ পিক্সেল সোর্সকে ১০৮০ পিক্সেল সোর্স থেকে আল্ট্রা এইচডি ফোর-কে’র ওপর ৯ পিক্সেল ব্যবহার করে হরাইজেন্টালি ও ভার্টিক্যালি পিক্সেলকে তিনগুণ করা যবে। ৭২০পি ও ১০৮০পি রেজ্যুলেশন এইট-কে রেজ্যুলেশন ৭৬৮০ × ৪৩২০ সমভাবে বিভাজন করবে ।

আল্ট্রা এইচডি টিভি : জানার বিষয়

আল্ট্রা এইচডি টিভিতে শুধু ভিডিও কোয়ালিটিই অনেক উন্নত হয় তা নয়, সাউন্ড কোয়ালিটিরও ব্যাপক উন্নতি ঘটে। অডিওর ২৪টি চ্যানেল ব্যবহার করা যাবে ২৪টি স্পিকারের সাথে। এর ফলে আল্ট্রা এইচডি ভিডিও রেজ্যুলেশনের সাথে তুলনা করার মতো পার্থক্য বোঝা যাবে। বর্তমানে মাত্র তিনটি ক্যামেরা রয়েছে, যেগুলো আল্ট্রা এইচডি টিভি ফরম্যাটের ভিডিও ক্যাপচার করতে পারে। এগুলো দিয়ে দিনে মাত্র ২০ মিনিটের ভিডিও ক্যাপচার করা যায়, যার জন্য প্রয়োজন হয় ৪ টেরাবাইট ডাটা। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের বর্তমান অবকাঠামো আল্ট্রা এইচডি টিভির চাহিদা মেটানোর উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি। বিভিন্ন সূত্রের পরামর্শ ছিল, ২০১২ সালের অলিম্পিকে সুপার হাই-ভিশন টেকনোলজি ব্যবহারের এবং এই টেকনোলজিকে ব্যাপক ব্যবহারের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া ২০২০ সালের মধ্যে।

২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এনএইচকে ও বিবিসি সাফল্যের সাথে ইংল্যান্ড থেকে জাপানে সুপার হাই-ভিশন সিগন্যাল সম্প্রচার করে। এরপর ২০১১ সালের ১৯ মে শার্প উন্মোচন করে এর ৪৫ ইঞ্চি আল্ট্রা এইচডি টিভির প্রটোটাইপ বা আদি সংস্করণ। ২০১২ সালের ২৮ এপ্রিল উন্মোচন করে এর ১৪৫ ইঞ্চি আল্ট্রা এইচডি ডিসপ্লে। এর ২০ দিনের মধ্যে ১৭ মে এনএইচকে আল্ট্রা এইচডি সঞ্চালন করে। ২০১২ সালের ২৮ মে আইটিইউ আনুষ্ঠানিকভাবে এর নাম দেয় আল্ট্র হাই ডেফিনিশন টেলিভিশন। ২০১২ সালে শেষ চতুর্থক বা কোয়ার্টারে এসে দেখা গেছে এলজি, সনি, শার্প ও স্যামসাংসহ বেশ কিছু উৎপাদক প্রতিষ্ঠান আল্ট্রা এইচডি টেলিভিশন উৎপাদন করার কথা ঘোষণা করে। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক শোতে বেশ কিছু আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন ডিভাইস প্রদর্শিত হয়।

হাই ডেফিনিশন টিভি আসে দু’টি ফ্ল্যাভারে : ৭২০পি (এইচডি রেডি) এবং ১০৮০পি (ফুল এইচডি)। উভয়টিই স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন ফরম্যাটের চেয়ে বেশি পিকচার ইনফরমেশন দেয়। ইমেজটি যত বেশি পিক্সেলে তৈরি করা হবে, তত বেশি পিকচার ডিটেইল পাবেন। কার্ভড ও ডায়াগনাল লাইনে ছবি তত বেশি মসৃণ দেখতে পাবেন। বেশিমাত্রার পিক্সেলের ছবি ভেঙে যাওয়ার আগে অধিকতর বড় করা যায়। ফলে এটি অধিকতর বড় পর্দার টিভির জন্য উপযোগী। ডিজিটাল ক্যামেরার জন্য আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন খুলে দিচ্ছে বড় দুয়ার। আজকাল প্রায় সব হলিউড মুভি ও টিভি শো নির্মিত হচ্ছে ফোর-কে, এমনকি ফাইভ-কে টেকনোলজিতে।

ফোর-কে’র শেকড়টি থিয়েটারেই। জর্জ লুকাস ১৯৯০-এর দশকে যখন তৈরি হচ্ছিলেন তার দীর্ঘ প্রতিশ্রম্নত ‘স্টার ওয়ারস’ মুভি নির্মাণের জন্য, তখন তিনি ফিল্মের বদলে একটি নতুন ডিজিটাল ফরম্যাটের জন্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। ফিল্ম স্টক গড়ে তোলা, স্থানান্তর সংরক্ষণ অবিশ্বাস্যভাবে ব্যয়বহুল। যদি মুভি হাউসগুলো শুধু একটি ডিজিটাল মুভি ফাইল ডাউনলোড ও তা একটি ডিজিটাল প্রজেক্টরে প্রদর্শন করতে পারত, তবে তা প্রচুর অর্থ সাশ্রয় করতে পারত। এক সময় যখন সিনেমা চলে এসেছে অন-ডিমান্ড ক্যাবল সার্ভিস ও ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের আওতায়, তখন ব্যয় কমে তাদেরকে প্রতিযোগিতায় থাকতে সাহায্য করেছে।

জর্জ লুকাস আংশিকভাবে হাই ডেফিনিশনে ‘দ্য ফ্যান্টম মিনেক’ মুভিটি শুটিং করার পর ১০৮০ পিক্সেলে ডিজিটালি শুটিং করলেন ‘অ্যাটাক অন দ্য ক্লোন’ মুভির। এটি ছিল ভবিষ্যৎ বস্নু-রে রিলিজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিজ্ঞানীরা শিগগিরই ধরতে পারলেন, খুব বড় আকারের সিনেমার পর্দার জন্য ১০৮০পি বড় মাপের রেজ্যুলেশন নয়। ১০৮০পির কনটেন্টের মুভি দেখানোর সময় আপনি যদি সিনেমা হলের সামনের কাতারের আসনে বসেন, তখন আপনার কাছে ছবি বিক্ষিপ্ত মনে হতে পারে। সিনেমা শিল্পের জন্য প্রয়োজন পড়ে এমন একটি রেজ্যুলেশন, যা সেসব দর্শকের জন্য কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করবে না, যারা পর্দার উচ্চতার সর্বোচ্চ দেড়গুণ দূরে বসেন। এর জন্য প্রয়োজন ছিল ১০৮০পি’র চেয়ে বেশি পিক্সেলের রেজ্যুলেশনের। একটা ডিজিটাল স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণের জন্য ২০০২ সালে গঠন করা হয় ডিজিটাল সিনেমা ইনিশিয়েটিভ (ডিসিআই)। এসব উদ্যোগের ওপর ভিত্তি করেই আসে দু’টি নতুন রেজ্যুলেশন : একটি হচ্ছে টু-কে স্পেসিফিকেশন এবং অপরটি হচ্ছে ফোর-কে ফরম্যাট, যা আসে ২০০৫ সালে।
আমরা প্রথম হাই প্রোফাইল ফোর-কে সিনেমা পাই ২০০৭ সালে, যখন রিলিজ হয় বেস্নড রানার : দ্য ফাইনাল কাট। এটি ছিল ১৯৮২ সালের মাস্টার পিসের একটি কাট অ্যান্ড প্রিন্ট। দুর্ভাগ্য, সে সময়ে খুব কম সংখ্যক সিনেমা থিয়েটারই এর ফুল রেজ্যুলশনে সিনেমা দেখাতে সক্ষম ছিল।

হাই এফিসিয়েন্সি ভিডিও কোডিং

হাই এফিসিয়েন্সি ভিডিও কোডিং। সংক্ষেপে এইচইভিসি। ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারিতে আইটিইউ অনুমোদন করে এইচইভিসি স্ট্যান্ডার্ড এইচ.২৬৫। হাই এফিসিয়েন্সি ভিডিও কোডিং হচ্ছে একটি ভিডিও কমপ্রেশন স্ট্যান্ডার্ড। এটি এইচ.২৬৪/ এমপিইজ-৪এভিসি (অ্যাডভান্স ভিডিও কোডিং)-এর উত্তরসূরি। বলা হচ্ছে, এইচভিইসি ভিডিও কোয়ালিটির উন্নয়ন ঘটাবে এবং তা এইচ.২৬৪/এমপিইজি-৪এভিসি’র তুলনায় ডাটা কমপ্রেশন রেশিও দ্বিগুণ করবে। তা সাপোর্ট করবে ৮-কে ইউএসডি এবং ৮১৯২ বাই ৪৩২০ পর্যন্ত রেজ্যুলেশন।

বেশিরভাগ ভিডিও কোডিং স্ট্যান্ডার্ডের ডিজাইনের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল সর্বোচ্চ কোডিং এফিসিয়েন্সি পাওয়া। কোডিং এফিসিয়েন্সি হচ্ছে ভিডিওর সুনির্দিষ্ট মান বজায় রেখে সম্ভাব্য সবচেয়ে কম বাইট রেটে ভিডিও এনকোড করার সক্ষমতা। ভিডিও কোডিং স্টান্ডার্ড পরিমাপের আদর্শ উপায় রয়েছে। একটিতে ব্যবহার হয় অবজেকটিভ মেট্রিক, যেমন পিএসএনআর (peak signal-to-noise ratio) মাপা। অপরটিতে ব্যবহার হয় ভিডিও কোয়ালিটির সাবজেকটিভ অ্যাসেসমেন্ট। ভিডিও কোডিং স্ট্যান্ডার্ড পরিমাপে দ্বিতীয় উপায়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মানুষ ভিডিও উপভোগ করে সাবজেকটিভলি অর্থাৎ বৈষয়িকভাবে।

এইচইভিসি উপকৃত হয় বৃহত্তর কোডিং ট্রি বস্নক (সিটিবি) সাইজ ব্যবহার থেকে। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে এইচএম-৮.০এইচইভিসি এনকোডার দিয়ে পিএসএনআর টেস্টের মাধ্যমে, যেখানে একে বাধ্য করা হয়েছে ক্ষুদ্রতর সিটিবি সাইজ ব্যবহারে। সব টেস্ট সিকুয়েন্সের জন্য যখন একটি ৬৪ × ৬৪ সিটিবি সাইজের সাথে তুলনা করা হয় তখন দেখা গেছে, এইচইভিসি বিটের হার (বিট রেট) ২.২ শতাংশ বাড়ে, যখন ৩২ × ৩২ সিটিবি সাইজ ব্যবহারে বাধ্য করা হয় । আর ১৬ × ১৬ সিটিবি সাইজ ব্যবহারে বাধ্য করা হলে এইচইভিসি বিট রেট ১১ শতাংশ বাড়ে। ক্লাস ‘এ’ টেস্ট সিকুয়েন্সগুলোতে, যেখানে ভিডিও রেজ্যুলেশন ছিল ২৫৬০ × ১৬০০, যখন ৬৪ × ৬৪ সিটিবি সাইজের সাথে তুলনা করা হলো তখন দেখা গেল ৩২ × ৩২ সিটিবি সাইজ ব্যবহারে বাধ্য করা হলে এইচইভিসি বিট রেট ৫.৭ শতাংশ বাড়ে। আর ১৬ × ১৬ সিটিবি সাইজ ব্যবহারে বাধ্য করা হলে এইচইভিসি বিট রেট ২৮.২ শতাংশ বাড়ে। এসব টেস্ট থেকে দেখা গেছে, বড় সিটিবি সাইজ কোডিং এফিসিয়েন্সি বাড়ায়, একই সাথে কমায় কোডিং টাইম।

এইচইভিসি মেইন প্রোফাইলের অর্থাৎ এমপি’র তুলনা করা হয়েছে এইচ.২৬৪/এমপিইজি-৪ এভিসি হাই প্রোফাইল (এইচপি), এমপিইজি-৪ অ্যাডভান্স সিম্পল প্রোফাইল (এএসপি), এইচ.২৬৩ হাই ল্যাটেন্সি প্রোপাইল (এইচএলপি) এবং এইচ.২৬২/এমপিইজি-২ মেইন প্রোফাইলের (এমপি) কোডিং ফ্রিকুয়েন্সির সাথে। ভিডিও কোডিং করা হয়েছিল এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাপ্লিকেশনের জন্য এবং এইচএম-৮.০ এইচইভিসি এনকোডার ব্যবহার করে ৯টি টেস্ট সিকুয়েন্সের জন্য ১২টি আলাদা বিট রেট তৈরি করা হয়েছিল। এই পাঁচটি টেস্ট সিকুয়েন্সের মধ্যে পাঁচটি ছিল হাই ডেফিনিশন রেজ্যুলেশনে, অপরদিকে চারটি ছিল ডব্লিউভিজিএ (৮০০ × ৪৮০) রেজ্যুলেশনে। এইচইভিসির বিট রেট রিডাকশন রেট নির্ণয় করা হয়েছে পিএসএনআরের ওপর ভিত্তি করে।

সাবজেকটিভ ভিডিও কোয়ালিটির জন্য এইচইভিসি এমপি তুলনা করা হয়েছে এইচ.২৬৪/এমপিইজি-৪ এভিসি এইচডি’র সাথেও। ভিডিও এনকোডিং করা হয়েছিল এন্টারটেইনমেন্ট অ্যাপ্লিকেশনের জন্য। আর একটি এইচএম-৫.০ এইচইভিসি এনকোডার ব্যবহার করে ৯টি ভিডিও টেস্ট সিকুয়েন্সের জন্য ৪টি আলাদা আলাদা বিট রেট তৈরি করা হয়েছিল। সাবজেকটিভ অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছিল পিএসএনআরের আগের একটি তারিখে, যেখানে ব্যবহার হয়েছিল এইচইভিসি এনকোডারের পুরনো সংস্করণ, যার পারফরম্যান্স ছিল কিছুটা কম। বিট রেট রিডাকশন নির্ণয় করা হয়েছিল গড় অপিনিয়ন স্কোর ভ্যালু ব্যবহার করে সাবজেকটিভ অ্যাসেসমেন্টের ওপর ভিত্তি করে। এইচ.২৬৪/এমপিইজি-৪এভিসি এইচপি’র তুলনায় এইচইভিসি এমপি’র সার্বিক বিট রেট রিডাকশন ছিল ৪৯.৩ শতাংশ।

Ecole Polytechnique Federale de Lausanne (EPFL) এইচডি টিভির রেজ্যুলেশনের চেয়ে বেশি রেজ্যুলেশনে এইচইভিসির সাবজেকটিভ ভিডিও কোয়ালিটি মূল্যাবধারণের জন্য এই সমীক্ষা চালিয়েছিল। সমীক্ষাটি চালনা করা হয় তিনটি ভিডিও দিয়ে। এগুলোর রেজ্যুলেশন ছিল যথাক্রমে ২৪ এফপিএসে ৩৮৪০ × ১৭৪৪। ৩০ এফপিএসে ৩৮৪০ × ২০৪৮। ৩০ এফপিএসে ৩৮৪০ × ২১৬০। পাঁচ সেকেন্ডের ভিডিও সিকুয়েন্সগুলো রাস্তায় লোকজনকে দেখানো হয়। আর একটি সিন দেখানো হলো ওপেন সোর্স কমপিউটার অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ‘সিন্টেল’ থেকে। এইচএম-৬.১.১ এইচইভিসি এনকোডার আর জেএম-১৮.৩ এইচ.২৬৪/এমপিইজি-৪এভিসি এনকোডার ব্যবহার করে পাঁচটি ভিন্ন বিট রেটে ভিডিও সিকুয়েন্স এনকোড করা হয়। সাবজেকটিভ বিট রেট নির্ণয় করা হয় গড় অপিনিয়ন স্কোর ভ্যালু ব্যবহার করে সাবজেকটিভ অ্যাসেসমেন্টের ওপর ভিত্তি করে। এই সমীক্ষায় এইচ.২৬৪/এমপিইজি-৪ এভিসি এনকোডারের সাথে এইচইভিসি এমপি’র তুলনা করা হয় এবং এতে দেখানো হয়, এইচইভিসি এমপি’র জন্য পিএসএনআরভিত্তিক গড় বিট রেট রিডাকশনের হার ছিল ৪৪.৪ শতাংশ। উপর দিকে সাবজেকটিভ ভিডিও কোয়ালিটিভিত্তিক গড় বিট রেট রিডাকশন ছিল ৬৬.৫ শতাংশ।
আজ ও আগামীর ফোর-কে
আগামী কয়েক বছর ফোর-কে টিভির আকার যেমন থাকবে বড়, তেমনি দামও খুব একটা কমবে না। বেশিরভাগ কোম্পানিরই প্রতিশ্রম্নতি ২০১৩ সালেই বাজারে থাকবে তাদের ফোর-কে ডিসপ্লে। আজকের দিনে ফোর-কে মিডিয়ার যে অভাব বিদ্যমান, তা থেকে উপকৃত হচ্ছে থ্রিডি উৎপাদক কোম্পানিগুলো থ্রিডির মানোন্নয়নের মাধ্যমে। এলজি’র প্যাসিভ থ্রিডি সিস্টেমের রেজ্যুলেশন সমস্যা তাত্ত্বিকভাবে দূর করা যাবে হরাইজেন্টাল ও ভার্টিক্যাল পিক্সেল দ্বিগুণ করে প্যাসিভ ফোর-কে ডিসপ্লের সুযোগ সৃষ্টি করে। ঠিক এলজি৮৪এলএম৯৬০০-এর মতো, যা এই গ্রীষ্মেই বাজারে আসার কথা রয়েছে এবং তা উভয় চোখে ১০৮০পি ইমেজ পৌঁছাতে সক্ষম।

প্রথমবারের মতো কনজ্যুমার-গ্রেড ফোর-কে প্যানেল এলজি৮৪এলএম৯৬০০ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এসে গেছে। এর ফিচার হচ্ছে ৩৮৪০ × ২১৬০ পিক্সেল আল্ট্রা হাই ডেফিনিশন সলিউশন এবং বর্তমানে এর দাম ১৭ হাজার ডলার। অপরদিকে সনি’র ৮৪ ইঞ্চি এক্সবিআর৮৪এক্স৯০০ টিভি আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে আল্ট্রা হাই ডেফিনিশনের নতুন উচ্চতায়। আরো অনেক কোম্পানি ২০১৩ সালে উপহার দিতে যাচ্ছে আরো কয়েকটি হাই ডেফিনিশন টিভি।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সনি ঘোষণা দিয়েছিল ফোর-কে হোম থিয়েটার প্রজেক্টর ভিপিএল-ভিডব্লিউ১০০০ইএস-এর। কিন্তু এ কোম্পানি এই পণ্যটির ওয়েবসাইট বা স্টোরে পাওয়ার উপযোগী করেনি, এর পরিবর্তে তা সরাসরি বিক্রি করে কাস্টম ইনস্টলারদের কাছে। ২০১১ সালে জেভিসিও ঘোষণা দিয়েছিল ফোর-কে’তে ১০৮০পি কনটেন্ট আপস্কেল করার জন্য। কিন্তু আজ পর্যন্ত জেবিসি ন্যাটিভ কনটেন্ট ডিসপ্লে করতে সক্ষম হয়নি। ফোর-কে কনটেন্টের অবর্তমানে উচিত হবে ১০৮০পি অথবা কমপক্ষে স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন কনটেন্ট আপস্কেল করা। এ ক্ষেত্রে সনি’র রয়েছে একটি বস্নু-রে প্লেয়ার বিডিপি-এস৭৯০, যা আপস্কেল করে ফোর-কে পর্যন্ত কনটেন্ট। সনি একটি মুভি সার্ভার বান্ডেল সরবরাহ করবে এর এক্স৯০০টিভির সাথে, যাতে ফোর-কে ফিল্ম মজুদ থাকবে।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে সনি আগ্রহী এর আসন্ন ফোর-কে বস্নু-রে মুভি স্পাইডারম্যান রোবট-এর ব্যাপারে। এখন সনি কথা বলছে বস্নু-রে ডিস্ক অ্যাসোসিয়েশনের সাথে স্পেসিফিকেশন চূড়ান্ত করার জন্য। এলজি’র হোম ইলেকট্রনিকস ডেভেলপমেন্টের ডিরেক্টর টিম অ্যারেচি বলেছেন, তার বিশ্বাস এ ধরনের উন্নয়ন শুধু অপরিহার্যই নয়, বরং গুরুত্বপূর্ণও। তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা একটা পর্যায়ে এসে ফোর-কে যুক্ত হবে বস্নু-রে স্পেসিফিকেশনে। বাসাবাড়িতে এই কনটেন্ট পেতে চায় সাধারণ গ্রাহকেরা। আমরা এক সময় মনে করেছিলাম, ফোর-কে পেলে সব পাওয়া পূরণ হবে। কিন্তু রেজ্যুলেশনের জগতে ফোর-কেই শেষ কথা নয়। জাপানি সম্প্রচার কোম্পানি এনএইচকে প্রথমবারের মতো ২০০৮ সালে আমাদের প্রদর্শন করে এইট-কে রেজ্যুলেশন। ২০১২ সালের সিইএসে অন্তত একটি প্রটোটাইপ দেখা গেছে, যা প্রদর্শন করে ফোর-কে’র চেয়ে বেশি রেজ্যুলেশন।
শেষ কথা
ফোর-কে মুভিতে আমরা যে অতিরিক্ত রেজ্যুলেশন পাই, তা কি অধিকতর ভালো? আপনি বলতে পারেন, এটি নির্ভর করে অরিজিনাল ফিল্মের ফরম্যাটের ওপর। যেমন, দ্য বেস্নয়ার উইচ প্রজেক্ট এবং টুয়েন্টি ডেইজ লেইটার- এই উভয় ফিল্মই শুটিং করা হয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ডেফিনিশন ক্যামকর্ডার দিয়ে। আর যুক্তিসঙ্গত কারণেই ডিভিডি’র বদলে ন্যাটিভ ফরম্যাটের মুভি কিনলেই অতিরিক্ত সুযোগ মিলবে- অবশ্য আপনার ব্র্যান্ড নিউ স্ক্রিনের স্কেলারের মানের ওপর তা নির্ভর করবে। এমনকি যদি রেফারেন্স-কোয়ালিটির ন্যাটিভ ফোর-কে ম্যাটেরিয়েলও নেয়া হয়, তা সত্ত্বেও ফো-কে রেজ্যুলেশন টিভি অথবা প্রজেক্টরে স্ট্যান্ডার্ড ১০৮০পি মডেলের তুলনায় দৃশ্যমান কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হবে না। তা যথাযথভাবে উপলব্ধি করার জন্য আপনাকে বসতে হবে বড় পর্দার একদম কাছে। যেমন- মুভি থিয়েটারে একদম সামনের সারি থেকে সিনেমা দেখা হয়।

কজ

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস