লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মইন উদ্দীন মাহমুদ
মোট লেখা:২৭
লেখা সম্পর্কিত
ল্যাপটপ চার্জ না হলে কী করবেন?
ল্যাপটপ বর্তমানে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের ক্রেজ। তাই প্রত্যেক ব্যবহারকারীই ল্যাপটপকে ব্যবহার করেন খুব যত্ন নিয়ে। এরপরও ব্যবহারকারীরা বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হন মাঝেমধ্যে। ল্যাপটপ ব্যবহারকারীরা প্রায় সময় যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ল্যাপটপ যথাযথভাবে চার্জ না হওয়া।
ল্যাপটপে প্লাগইন করার পর উজ্জ্বল লেড ইন্ডিকেটরের আলো এবং একটি ডিসপ্লে জাহির করে ল্যাপটপের সক্রিয়তা বা সজীবতা। অন্তত এ কারণে এটি কিছু কাজ করতে পারে। কখনও কখনও এর পরিবর্তে যা কিছু ঘটে তা এসি অ্যাডাপ্টার যুক্ত করার পর ঘটে থাকে। এর কারণ, ব্যাটারির কার্যকরীর ক্ষমতা প্রায় নিঃশেষিত হয়ে যাওয়া। এর ফলে ল্যাপটপ কোনো কিছুই করতে পারে না। কোনো উজ্জ্বল আলো নেই, কোনো ডিসপ্লে নেই এবং ব্যাটারি চার্জিংয়ের কোনো সঙ্কেতও নেই। কেনো এমন হলো? কেনো এটি কাজ করছে না? এর জন্য কি করা দরকার-এমন সব প্রশ্নের জবাব জানাতেই এ লেখা?
এ সমস্যার সহজ সমাধান হলো ল্যাপটপকে রিচার্জ করা। চার্জার প্লাগ করার সাথে সাথে কাজ করা শুরু করবে। লক্ষণীয়, ওয়াল আউটলেট এবং আপনার ব্যাটারির মাঝে কয়েকটি ধাপ ও অংশ রয়েছে, যা ফেল করতে পারে। এসব সমস্যার কোনো কোনোটি আপনি নিজে সহজেই সমাধান করতে পারবেন সফটওয়্যার টোয়েকের মাধ্যমে বা নতুন ব্যাটারি প্রতিস্থাপন করে। তবে কিছু সমস্যার জন্য দরকার হতে পারে রিপেয়ার সেন্টারের সহযোগিতা নেয়া অথবা পুরো সিস্টেমের প্রতিস্থাপন করা। কেনো সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা জানতে পারলে আপনার মূল্যবান শ্রমঘণ্টা যেমন বাঁচবে, তেমনি রিপেয়ারের বাড়তি খরচও বহন করতে হবে না। ইনসাইট-আউটসাইট অ্যাপ্রোচের মাধ্যমে খুব সহজেই চিহ্নিত করতে পারবেন কোথা থেকে সমস্যাটি হচ্ছে এবং খুব কম খরচে সমাধানের উপায়ও বের করতে পারবেন নিচের বর্ণিত ধাপগুলো অনুসরণ করে।
ল্যাপটপ প্লাগইন অবস্থায় আছে কী?
আপনার ল্যাপটপ প্লাগইন করেছেন কি না- এমন প্রশ্ন হাস্যকর হলেও চেক করে নিন ল্যাপটপ সত্যি সত্যিই প্লাগইন অবস্থায় আছে কিনা। কেননা, কোনো সফটওয়্যার টোয়েক বা হার্ডওয়্যার রিপেয়ার কৌশলই বিদ্যুৎ সংযোগহীন ল্যাপটপকে জাদুর ছোঁয়ায় পাওয়ার অন তথা সক্রিয় করাতে পারবে না। সুতরাং কোনো কিছু চেক করার আগে আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে এসি আউটলেট এবং ল্যাপটপ প্লাগ যথাযথভাবে বসানো আছে কিনা। এসি অ্যাডাপ্টার চেক করে দেখুন বা ভেরিফাই করুন যে, সব ধরনের রিমুভাল কর্ড ঠিকভাবে ঢুকানো আছে কিনা। এরপর নিশ্চিত করুন ব্যাটারির কম্প্যার্টমেন্টে যথাযথভাবে বসানো হয়েছে কিনা। এর সাথে আরও নিশ্চিত করুন ব্যাটারি বা ল্যাপটপ কন্টাক্ট পয়েন্টে কোনো সমস্যা নেই। সবশেষে খুঁজে দেখুন সমস্যাটি আদৌ ল্যাপটপের কিনা। এজন্য পাওয়ার কর্ডকে ভিন্ন কোনো আউটলেটে প্লাগইন করে দেখুন কোনো ফিউজ নষ্ট হয়ে গেছে কিনা।
এমন অবস্থায় বলা যায়, এ সমস্যাটি ব্যবহারকারীর ভুলের কারণে সৃষ্টি হয়নি। এ সমস্যার সূত্রপাত হলো ল্যাপটপের পাওয়ার-সংশ্লিষ্ট। এখন খুঁজে দেখা দরকার সমস্যাটি কোথা থেকে সৃষ্টি হয়েছে বা হতে পারে। কোথায় সমস্যাটি নেই সেসব ক্ষেত্র বাদ দিয়ে কাজটি শুরু করুন।
ব্যাটারি অপচয় হওয়া
ব্যাটারির বিশুদ্ধতা চেক করার জন্য ব্যাটারিকে পুরোপুরি অপসারণ করুন এবং ল্যাপটপে প্লাগইন করার চেষ্টা করুন। যদি ল্যাপটপের পাওয়ার যথাযথভাবে অন থাকে, তাহলে সমস্যাটি হতে পারে ব্যাটারির।
ব্রিকম, বার্নআউট ও শর্টস
ল্যাপটপ বা নোটবুকের পাওয়ার কর্ড সাধারণত বেশ দীর্ঘ হয়ে থাকে। দীর্ঘ পাওয়ার কর্ড যতটুকু সম্ভব বেস্নন্ডিং এবং ফ্লেক্সিং থাকে। সুতরাং চেক করে দেখা উচিত ফাঁসের মাঝে কোনো জায়গা ভেঙে বা ছিঁড়ে গেছে কিনা। যেকোনো ব্রোকেন কানেকশনের শেষ প্রান্ত চেক করে দেখা উচিত। যেমন প্লাগ টানা শিথিল কিনা। এসি ব্রিক্স পরখ করে দেখুন। এটি কী ডিসকালারড তথা বিবর্ণ হয়ে গেছে কি না। কোনো অংশ মোচড়ানো বা সম্প্রসারিত কিনা। জোড়ে শ্বাস টেনে দেখুন প্লাস্টিক পোড়া গন্ধ কিনা। যদি তাই হয়, তাহলে ধরে নিতে পারেন সমস্যাটি এখানেই।
কানেক্টর চেক করে দেখুন
যখন আপনি প্লাগইন করবেন ল্যাপটপের পাওয়ার কানেক্টর, সেই কানেক্টরকে মোটামুটিভাবে সলিড হতে হবে। যদি এটি হঠাৎ করে অনিশ্চিভাবে এদিক-ওদিক নড়াচড়া করে অথবা ঢিলা হয় বা রিসিভিং সকেট উন্মুক্ত হলে চেসিসের ভেতরে পাওয়ার জ্যাক ভেঙে যেতে পারে। ডিসকালারেশন বা পোড়া গন্ধ এলে ধরে নিতে পারেন পাওয়ার কানেক্টর ড্যামেজ হয়ে গেছে। রিপেয়ার করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
তাপকে পরাস্ত করা
নন-চার্জিং ব্যাটারির কারণে কখনও কখনও ল্যাপটপ অনেক গরম হয়ে ওঠে। এই সমস্যাটির দুই ভাঁজ। একটি হলো ব্যাটারির ওভার তথা খুব বেশি তাপ প্রতিরোধে সিস্টেম শাটডাউন হওয়া এবং আগুনের কারণ হতে পারে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায়। ব্যাটারি সেন্সর মিস ফায়ার করতে পারে, সিস্টেমকে অবহিত করবে যে ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ হয়ে গেছে অথবা সম্পূর্ণরূপে মিসিং হয়েছে, যার কারণে চার্জিংয়ে সমস্যা হচ্ছে। এ সমস্যা আরও অনেক প্রকট আকার হতে পারে পুরনো ল্যাপটপের ক্ষেত্রে, যেখানে ইদানীংকার মতো মানসম্মত কুলিং টেকনোলজি ব্যবহার হয় না। অথবা ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বা বালিশ-কম্বলসহ বিছানায় ব্যবহার করলে অনেক সময় কুলিং ভেন্ট আবৃত হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সিস্টেমকে ঠা-া করুন এবং নিশ্চিত হওয়ার জন্য সময় নিন যে সিস্টেমের এয়ার ভেন্ট পরিষ্কার এবং বাধাহীন অবস্থায় আছে।
কর্ড ও ব্যাটারি সোয়াপ আউট করা
এগুলো ল্যাপটপের সবচেয়ে সস্তা এবং সোয়াপ অংশ। একটি রিপ্লেসমেন্ট পাওয়ার ক্যাবল বেশ দামী এবং ব্যাটারি প্রতিস্থাপনও বেশ ব্যয়বহুল। ক্যাবল রিপ্লেসমেন্ট সবচেয়ে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় ল্যাপটপের মডেল নাম দিয়ে। ব্যাটারিতে সবসময় তাদের মডেল নাম্বার দেয়া থাকে। এই রিপ্লেসমেন্টের সময় খেয়াল রাখতে হবে এটি যেনো ল্যাপটপের ইক্যুইপমেন্টের ভোল্টেজ স্পেসিফিকেশনের সাথে ম্যাচ করে। রিপ্লেসমেন্টের সময় আরও সচেতন থাকতে হবে যে, সস্তায় রিপ্লেসমেন্টের অংশে যে থার্ড পার্টি ম্যানুফেকচারার পণ্য ব্যবহার হয় তা সবসময় মানসম্পন্ন হয় না। এ ক্ষেত্রে পরিহার করা হয়েছে ওইসব সমস্যা, যার কারণ কিন্তু কর্ড বা এনভায়রনমেন্টাল। এরপরও যদি আপনি নিজেকে খুব অসহায় মনে করেন, তাহলে সমস্যাটি কমপিউটারের। এ সমস্যাটি উদ্ভব হয়েছে হয় ত্রম্নটিপূর্ণ হার্ডওয়্যার বা ত্রম্নটিপূর্ণ সফটওয়্যারের কারণে।
সেটিং চেক করা
উইন্ডোজ ল্যাপটপের ক্ষেত্রে কন্ট্রোল প্যানেলে পাওয়ার অপশন ওপেন করুন। প্লান সেটিং ওপেন করে ভিজ্যুয়ালি চেক করে দেখুন সবকিছু যথাযথভাবে সেট করা আছে কিনা। পরখ করে দেখুন ব্যাটারি ডিসপ্লে এবং সিস্নপ অপশন ভুলভাবে সেট করা হয়েছে কিনা। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ব্যাটারি সেটিং সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যদি কমপিউটারকে সেট করেন শাটডাউনে, যখন ব্যাটারি লেভেল খুব নিচুতে নেমে যায় এবং নিচু ব্যাটারি লেভেলকে খুব উঁচু তথা হাই পার্সেন্টেজে সেট করা হয়। আপনি ইচ্ছে করলে সিস্নপ এবং শাটডাউন ধরনের অ্যাকশনকে অ্যাসাইন করতে পারেন যখন আপনার লিড বন্ধ থাকবে বা পাওয়ার বাটন চাপা থাকবে। যদি এই সেটিং পরিবর্তন করা হয় কিংবা ক্যাবল পরিবর্তন করা হয়, তাহলে ধারণা বা সন্দেহ করতে পারেন পাওয়ার ম্যালফাংশনের কারণেই এমন হয়েছে, এমনকি ব্যাটারির কোনো ফিজিক্যাল সমস্যা না থাকলেও। আপনার সেটিং কোনো সমস্যা সৃষ্টি করছে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পাওয়ার প্রোফাইলকে ডিফল্ট সেটিংয়ে রিস্টোর করা।
ম্যাক ল্যাপটপের ক্ষেত্রে
ম্যাক ল্যাপটপের সিস্টেম প্রেফারেন্সে সিলেক্ট করুন এনার্জি সার্ভার প্যান এবং রিভিউ করুন আপনার প্রেফারেন্স। ম্যাক সেটিং অ্যাডজাস্ট করা থাকে সস্নাইডার দিয়ে। এর মাধ্যমে আপনি সিলেক্ট করতে পারবেন কমপিউটার, কতক্ষণ পর্যন্ত আইডল থাকতে পারবেন সিস্নপ মোডে যাওয়ার আগে। যদি বিরতি খুব সংক্ষক্ষপ্ত হয়, তখন সন্দেহ করতে পারেন ব্যাটারি ইস্যুকে যে প্রকৃত সমস্যার কারণ হলো সেটিং। ব্যাটারি পাওয়ার এবং ওয়াল পাওয়ার সেটিং চেক করতে ভুলে গেলে হবে না। সেটিং পরিবর্তনের কারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে কিনা, তা পরখ করে দেখার জন্য ডিফল্ট সেটিংয়ে ফিরে যেতে পারেন।
ড্রাইভার আপডেট করা
উইন্ডোজ ল্যাপটপের ক্ষেত্রে কন্ট্রোল প্যানেলে ড্রাইভার ম্যানেজার ওপেন করুন। ব্যাটারির অন্তর্গত তিনটি আইটেম দেখা যায়। একটি ব্যাটারির জন্য, অপরটি চার্জারের জন্য। তৃতীয় ও শেষটি Microsoft ACPI Compliant Control Method Battery হিসেবে লিস্টেড হয়। প্রতিটি আইটেম ওপেন করলে প্রোপার্টিজ উইন্ডো আবির্ভূত হবে। ‘ড্রাইভার’ ট্যাবের অন্তর্গত ‘আপডেট ড্রাইভার’ লেবেল করা একটি বাটন পাবেন। এখানে উল্লিখিত তিনটি ফিচারের ড্রাইভারের আপডেট প্রসেসের জন্য এগিয়ে যান। সবগুলো ড্রাইভার আপডেট হওয়ার পর ল্যাপটপ রিবুট করুন এবং পরে আবার প্লাগ করুন। এতে সমস্যার সমাধান না হলে Microsoft ACPI Compliant Control Method Battery আনইনস্টল করে রিবুট করুন।
ম্যাক ল্যাপটপের ক্ষেত্রে : একটি ম্যাক ল্যাপটপে আপনাকে System Management Controller (SMC) ফিচারকে রিসেটিংয়ের চেষ্টা করতে হবে। রিমুভাল ব্যাটারি সংবলিত ল্যাপটপের জন্য এটি শাটিংডাউন পাওয়ার, রিমুভিং দ্য ব্যাটারি, ডিসকানেকটিং পাওয়ার এবং প্রেসিং দ্য পাওয়ার বাটন ফর পাঁচ সেকেন্ডের মতো সহজ-সরল। ব্যাটারিকে আবার ইনসার্ট করুন। এবার পাওয়ার যুক্ত করে ল্যাপটপ চালু করুন।
চেসিসের ভেতরে ব্যাটারি সিল করা থাকে, নতুন ম্যাকের ক্ষেত্রে কমপিউটার পাওয়ার অফের জন্য পাওয়ার চেপে ধরে থাকুন। এ কাজটি করার জন্য কীবোর্ডের বাম দিকে Shift+Control+Option চাপুন। এবার কী এবং পাওয়ার বাটন যুগপৎভাবে ছেড়ে দিন। এরপর চেষ্টা করুন ল্যাপটপের পাওয়ার অন করার।
অভ্যন্তরীণ সমস্যা
উপরে উল্লিখিত সব প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হলেন, অন্য পাওয়ার ক্যাবল ও ব্যাটারি দিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন, ব্যর্থ হলেন সেটিং চেক এবং রিচেক করেও, সম্ভাব্য সফটওয়্যার সমস্যাও সমাধান করলেন, এরপরও সমেত্মাষজনক ফলাফল পেলেন না। তাহলে ধরে নিতে পারেন সমস্যাটি হতে পারে মেশিনের ভেতরের। বেশ কিছু অভ্যন্তরীণ পার্টস সমস্যার কারণ হতে পারে, যখন সেগুলো ম্যালফাংশন বা ফেইল হয়। এ ক্ষেত্রে সমস্যার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হতে পারে ল্যাপটপের মাদারবোর্ড, লজিক বোর্ড, ভ্যামেজ চার্জিং সার্কিট এবং ম্যালফাংশন ব্যাটারি সেন্সর। এমন অবস্থায় ল্যাপটপ প্রস্ত্ততকারকের সাথে যোগাযোগ করুন এবং ওয়ারেন্টিতে রিপেয়ার অপশন কাভার করে কি না, অথবা স্থানীয় কমপিউটার রিপেয়ার সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করুন
ফিডব্যাক : mahmood@comjagat.com