• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > কতটুকু র‍্যাম আমাদের দরকার?
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: লুৎফুন্নেছা রহমান
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
র‌্যাম
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
কতটুকু র‍্যাম আমাদের দরকার?
বেশিরভাগ পিসি ব্যবহারকারীর বদ্ধমূল ধারণা- যত বেশি র্যা ম, তত বেশি দ্রুতগতির পিসি। আসলে এটি একটি ভুল ধারণ বা মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, পিসিতে বেশি র্যা ম ইনস্টল করার অর্থ এই নয়, পিসি অধিকতর দ্রুতগতিতে তার কমপিউটিংয়ের কাজ সম্পাদন করতে পারবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা যায়। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত র্যািম ইনস্টল করার মানে হলো, অর্থ অপচয় ছাড়া তেমন কিছু নয়। কেননা অনেক সময় তুলনামূলকভাবে বড় র্যািম চিপ অপেক্ষাকৃত ছোট র্যা ম চিপের চেয়ে ধীরগতির বাস স্পিডে রান করে। সুতরাং তত্ত্বীয়ভাবে বলা যায়, র্যা ম অনেক সময় পারফরম্যান্সের জন্য সামান্য হলেও ক্ষতিকর। এ বিষয়টি সহজভাবে ব্যাখ্যা করা যায় এভাবে- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডুয়াল চ্যানেল বনাম ত্রিপল চ্যানেল ইস্যু। যদি ত্রিপল চ্যানেলে ব্যবহৃত ১২ গিগাবাইট র্যাযম ও ডুয়াল চ্যানেলে ব্যবহৃত ১৬ গিগাবাইট র্যাামের মধ্যে কোনটি বেশি গতিসম্পন্ন প্রশ্ন করা হয়, তাহলে উত্তর হবে ১২ গিগাবাইটের র‍্যাম।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে, বেশি মেমরি হলেই যে সবসময় অপেক্ষা ভালো পারফরম্যান্স হবে, তা কিন্তু নয়। ইদানীং বাজেট পিসির সাথে সমন্বিত থাকে সাধারণত ৪ গিগাবাইট র্যামম। মধ্যম মানের পিসির কনফিগারেশনে অফার করা হয় এর দ্বিগুণ র্যাকম এবং হাই-এন্ড গেমিং সিস্টেম ও ওয়ার্কস্টেশনের জন্য দরকার ন্যূনতম ১৬ গিগাবাইট।
বর্তমানে প্রযুক্তিবিশ্বে বাতাস কোন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে সে ব্যাপারে মোটামুটিভাবে আমাদের সবারই ধারণা আছে। উইন্ডোজ ৮ সাপোর্ট করে সর্বোচ্চ ১২৮ গিগাবাইট ফিজিক্যাল মেমরি, যদি ৬৪ বিট ভার্সন ব্যবহার করেন। আর উইন্ডোজ ৮ প্রো ভার্সন ব্যবহার করতে পারে সর্বোচ্চ ৫১২ গিগাবাইট ফিজিক্যাল মেমরি।
র্যা ম যেভাবে ব্যবহার হয়, তার আলোকে বলা যায়, এটি বর্তমানে তেমন ব্যয়বহুল নয়। এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়, আসলেই কী পরিমাণ রযাব ম আপনার জন্য দরকার।
বেশি র্যাযম কি গতি বাড়ায়?
কমপিউটার ব্যবহারকারীদের অনেকেই মনে করেন, বেশি মেমরি যুক্ত করলে পিসি উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুতগতিতে রান করে, পিসির পারফরম্যান্স বাড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স কিছুটা উন্নতও হয়। অতিরিক্ত এক জোড়া ডিআইএমএম র্যাপম মাদারবোর্ডে স্থাপন করলে পিসির গতির কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয় না যে গতিতে প্রসেসর কোড এক্সিকিউট করে। তবে এটি অন্যভাবে সহায়তা করতে পারে, বিশেষ করে ২ গিগাবাইট বা আরও কম র্যা মবিশিষ্ট পুরনো সিস্টেমে। কেননা বাড়তি র্যা ম যুক্ত করলে ভার্চুয়াল মেমরির ওপর উইন্ডোজের নির্ভরশীলতা কমে যায়।

কমপিউটার ব্যবহারকারীদের অনেকেই মনে করেন, বেশি মেমরি যুক্ত করলে পিসি উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুতগতিতে রান করে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনটি ঠিকই হয়। ভার্চুয়াল মেমরি হলো হার্ডডিস্কে আরোপিত এক ফাইল, যা টেম্পোরারি স্টোরেজ হিসেবে কাজ করে, যখন পিসির প্রকৃত মেমরি পূর্ণ হয়ে যায়। ধরুন, আপনাকে কয়েকটি হেভিওয়েট অ্যাপ্লিকেশন একসাথে রান করাতে হবে, এমনকি সেগুলো যুগপৎভাবে র্যা মে ফিট না হলেও ভার্চুয়াল মেমরির কারণে অপনার এ ধরনের কাজ সম্ভব হয়ে উঠেছে। যখন এক অ্যাপ্লিকেশন থেকে আরেক অ্যাপ্লিকেশনে যাবেন, তখন উইন্ডোজ দ্রুতগতিতে ডিস্ক থেকে প্রকৃত মেমরির সংশ্লিষ্ট ডাটায় সোয়াপ করবে, যা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেয়, কেনো ভার্চুয়াল মেমরি ফাইলকে মাঝেমধ্যে সোয়াপ ফাইল বলে। যদি লুকানো ফাইলকে দেখার জন্য উইন্ডোজ এক্সপ্লরারকে সেট করেন, তাহলে সোয়াপকে সিস্টেম ডিস্কের রুট ডিরেক্টরিতে দেখতে পাবেন। এটি নির্ভর করে উইন্ডোজের কোন ভার্সন ব্যবহার করছেন এর ওপর। একে বলা হয় pagefile.sys অথবা swapfile.sys।

১৯৯০ বা ২০০০ সালের প্রথম দিকের সমসাময়িক ৩২ বিটের পিসি তত্ত্বীয়ভাবে ৪ গিগাবাইট পর্যন্ত র্যা ম অ্যাড্রেস করতে সক্ষম। এ সময় মেমরি ছিল খুব ব্যয়বহুল। এ সময়ের হাই-এন্ড পিসির সাথে র্যা ম ইনস্টল করা থাকত ২৫৬ মেগাবাইট। ভার্চুয়াল মেমরির ওপর নির্ভরশীলতা ছিল বাসত্মবতা। এ সময় বলা হতো, যত বেশি সম্ভব মেমরি ইনস্টল করা উচিত।
ডিমিনিশিং রিটার্নস
এখানে উল্লিখিত নিয়ম এক যুগ আগে যেভাবে প্রয়োগ হতো, এখন তার চেয়ে অনেক কম প্রয়োগ বা ব্যবহার হতে দেখা যায়। এখনকার নতুন পিসির সাথে সম্পৃক্ত থাকে মাল্টিপল গিগাবাইট র্যাপম। সুতরাং উইন্ডোজ এখন আগের চেয়ে অনেক কম ভার্চুয়াল মেমরির ওপর নির্ভরশীল। এখনকার প্রায় সব পিসিই মেকানিক্যাল ড্রাইভের পরিবর্তে সলিড স্টেট সিস্টেম ড্রাইভ সংবলিত হওয়ায় র্যা্ম ও ভার্চুয়াল মেমরির মাঝে ডাটা সোয়াপিং প্রসেস অনেক সাবলীল হয়ে উঠেছে। একটি ফ্ল্যাশ মেমরি সেল থেকে ডাটা রিড করতে কোনো সমস্যা হয় না, যখন ভিন্ন আরেকটিতে ডাটা রাইট করা হয়। এগুলো কার্যকরভাবে থ্র্যাসিং সমস্যাগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে।

যা-ই হোক, প্রকৃত মেমরি অনেক দ্রুতগতিসম্পন্ন, যেখানে হাই-এন্ড এসএসডি ডাটা রিড ও রাইট করতে পারে প্রায় ৬০০ মেগাবাইট/সেকেন্ডে, সেখানে ডিডিআর থ্রি ডিম (DDR3 dim) ১৩৩৩ মেগাহার্টজ গতিতে ১০ গিগাবাইট/সেকেন্ডের বেশি ডাটা ট্রান্সফার করে। এর অর্থ হলো, যদি ফিজিক্যাল মেমরিতে সব অ্যাপ্লিকেশন ও ডকুমেন্ট ফিট করাতে পারেন, তাহলে সিস্টেম হবে আরও বেশি রেসপন্সিভ।

সিস্টেমে প্রচুর র্যা ম থাকায় দ্বিতীয় আরেকটি সুবিধা রয়েছে। ভিসত্মার পর থেকে উইন্ডোজ SuperFetch নামে বিশেষ এক ফিচার সম্পৃক্ত করেছে, যা অনুমান করার চেষ্টা করে কোন অ্যাপ্লিকেশন ও লাইব্রেরিগুলো ব্যবহার করতে বেশি পছন্দ করে। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, পরবর্তী যে অ্যাপ্লিকেশন ওপেন করবেন, তা প্রি-ক্যাশ হবে ও অ্যাপ্লিকেশনকে ডিস্ক থেকে লোড না করে প্রায় তাৎক্ষণিক এনাবল করা।
এর উপকারিতা বর্ণনা করার জন্য বিশেষজ্ঞেরা সিস্টেমে রান করেন রিয়েল ওয়ার্ল্ড বেঞ্চমার্ক টেস্ট, যেগুলো সজ্জিত ২ জিবি, ৪ জিবি ও ৮ জিবি র্যাতম দিয়ে।

এখানে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, বেশি মেমরি যুক্ত করলে স্পিড বাড়ে, এমনকি এসএসডিতেও। বিশেষজ্ঞেরা উইন্ডোজ টেস্টে এর স্পষ্ট প্রভাব দেখতে পান। এখানে অ্যাপ্লিকেশনগুলোর মাঝে বারবার ওপেনিং ও সুইচিং করা হয়। মাত্র ২ জিবি অনবোর্ড মেমরিতে উইন্ডোজ ব্যবহার করে প্রথানুযায়ী ভার্চুয়াল মেমরি। ৪ জিবি পর্যন্ত সবকিছুই মেমরিতে পরীক্ষা করা হয়। এ ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স ১১ শতাংশ বাড়ে। আরও ৪ জিবি মেমরি যোগ করার ফলে সুপারফেচ (SuperFetch)-এর জন্য দেবে ফাঁকা জায়গা, যা পারফরম্যান্সকে আরও ৫ শতাংশ উন্নত করবে।

মাল্টি-অ্যাপস টেস্টে এ বিষয়টি তেমন স্পষ্ট নয়। ২ জিবি থেকে সরে এসে ৪ জিবির একই স্পিড ইমপ্রভমেন্ট টেস্টে দেয় ১০ শতাংশ। তবে এ সীমার বাইরে আরও র্যা ম যুক্ত করলে কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না। সাময়িকভাবে মেনে নেয়া যায়, কেননা সিস্টেম দীর্ঘ সময় ধরে অলসভাবে থাকে না সুপারফেচ সমর্থন করার জন্য।

কতটুকু র‍্যাম দরকার?

সুপারফেচ ফিচার ততটুকু মেমরি ব্যবহার করতে পারবে, যত বেশি মেমরি এতে ছুঁড়তে পারবেন। কেননা এটি বুদ্ধিমত্তার সাথে আগে থেকেই বুঝতে পারে পরবর্তী সময়ে আপনি কোন প্রোগ্রাম ওপেন করতে যাচ্ছেন। এটি কার্যকর করার জন্য উপরোল্লিখত টেস্টের বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন হয়নি ডজনখানেক গিগাবাইটের। ৪ ও ৮ গিগাবাইট সিস্টেমের মধ্যে সার্বিক পার্থক্যের একটি ছিল মাত্র ৩ শতাংশ। যখন সম্পূর্ণ ওয়ার্কলোডকে মেমরিতে ধারণ করার জন্য পর্যাপ্ত র্যা ম থাকবে, তখন ভার্চুয়াল মেমরি হয়ে উঠবে নন-ইস্যু, তথা অপ্রয়োজনীয় বিষয়। সুতরাং প্রশ্ন হলো, কোনো অর্থ খরচ না করে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স পাওয়ার জন্য কতটুকু র্যায়ম আপনার দরকার হতে পারে?

এমন প্রশ্নের জবাবে প্রযুক্তির ভাষায় বলা যায়, ‘one size fits all’ বলতে কিছু নেই। একেক জনের কাজের ধরন একেক রকম। তাই স্বাভাবিকভাবেই বলা যায়, প্রত্যেকের ওয়ার্কলোডও ভিন্ন। আপনার বর্তমান কাজের ধরন ও সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলেও কখনই অনুমান করতে পারবেন না আগামীকাল আপনার সিস্টেম রিকোয়ারমেন্টের চাহিদা কেমন হবে। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কতটুকু মেমরি ব্যবহার হচ্ছে, তা উন্মোচন করার মাধ্যমে ধারণা করতে পারবেন কতটুকু র্যাবম ব্যবহার করছেন। এ কাজটি খুব সহজেই করতে পারবেন ‘উইন্ডোজ পারফরম্যান্স মনিটর’ নামে এক সহায়ক টুল ব্যবহার করে। এই টুল দিয়ে ‘committed bytes’সহ ডজনের বেশি গুরুত্বপূর্ণ অপারেটিং মেট্রিক্সের ওপর নজর রাখতে পারবেন। এই টুল উপস্থাপন করে আপনার অ্যাপ্লিকেন এবং ওএস কম্পোনেন্টে অ্যালোকেট করা মোট মেমরি। (এতে সম্পৃক্ত নেই সুপারফেচ ক্যাশ, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে উদ্দীপ্ত হয় ‘real’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে, যদি র্যা মের দরকার হয়।

উপসংহার

বিশেষজ্ঞেরা রিয়েল ওয়ার্ল্ড মাল্টি-অ্যাপস টেস্টে কয়েকটি প্রধান অ্যাপ্লিকেশন ওপেন করার পর দেখতে পান, সিস্টেমে মোট র্যা্মের ব্যবহার কখনই ৪ গিগাবাইট ছাড়িয়ে যায়নি। অর্থাৎ কোনো এক পর্যায়ে শেষ অবলম্বন হিসেবে উইন্ডোজের প্রয়োজন হয়নি ভার্চুয়াল মেমরির এবং এটি আরও ইঙ্গিত দেয় যে বেশি র্যাড়ম ইনস্টল করা হলে স্পিড খুব সামান্য হলেও উন্নত হয়।

এর অর্থ এই নয়, আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে ৪ গিগাবাইটের বেশি মেমরির জন্য অর্থ খরচ করার বিষয়কে এড়িয়ে যেতে হবে। যদি আপনার সিস্টেমের ডিমান্ড বাড়িয়ে নেন, তাহলে বেশি মেমরি থেকে আরও ভালোভাবে উপকৃত হতে পারবেন। এর মানে হতে পারে- ৪-কে ভিডিও ফাইল প্রসেসিং, বড় ধরনের ডাটাবেজ ফাইল নিয়ে কাজ করা, সমভাবে এর অর্থ হতে পারে- ওয়েব ব্রাউজারে অনেকগুলো ট্যাব ওপেন করে কাজ করা, ২০টি ট্যাব ওপেন রাখলে তাৎক্ষণিক ব্রাউজারের র্যারমের ব্যবহার ২ গিগাবাইট পর্যন্ত উন্নীত হতে পারে বা ছাড়িয়ে যেতে পারে। যদি আপনি বর্তমানে কোনো নতুন সিস্টেম কিনতে চান, তাহলে আপনার জন্য উচিত হবে ৮ গিগাবাইটের মডেল কেনা। এর ফলে ভবিষ্যতে আরও কিছু দিনের জন্য নিশ্চিত থাকতে পারবেন প্রয়োজনীয় র্যালমের ব্যাপারে। লক্ষণীয়, স্লিম ল্যাপটপগুলো ইউজার আপগ্রেডেবল নয়।

যাই হোক, বর্তমান কাজের জন্য ৪ গিগাবাইটের পর আরও মেমরি যুক্ত করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতের কাজের প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় রেখে ব্যাপকভাবে ডাটা প্রসেসিং ক্ষমতাসম্পন্ন ১৬ গিগাবাইট মেমরি ব্যবহার করা উচিত।

ফিডব্যাক : swapan52002@yhahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস