লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
এক ডজন তরুণ : বদলে দিচ্ছে দুনিয়া
নাথান হ্যান
আমাদের প্রজন্মের সর্বসাম্প্রতিক উইজ্জকিড তথা উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিভাধর বুদ্ধিদীপ্ত এক তরুণ এই নাথান হ্যান। সে বোস্টন ল্যাটিন স্কুলের ছাত্র। সে নিজেকে প্রতিভাধর বলে প্রমাণ করতে পেরেছে চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রকৌশল মেলা ২০১৪’-এ প্রথম স্থান অধিকার করে। সে পাবলিকলি অ্যাভেইলেবল ডাটাবেজ ব্যবহার করে বিআরসিএআই টিউমার সাপ্রেসর জিনের বিভিন্ন মিউটেশন প্রকৃতি পরীক্ষা করেছে তার সফটওয়্যার সৃষ্টির জন্য। ডাটা ব্যবহার করে এই সফটওয়্যারকে শেখানো হয়েছে কী করে বিভিন্ন জিন মিউটেশনের পার্থক্য নির্ধারণ করা যায়, যাতে ক্যান্সার সৃষ্টিকর জিনকে চিহ্নিত করা যায়। বায়োলজি, সফটওয়্যার ও পরিসংখ্যানকে একসাথে যূথবদ্ধ করে তার উদ্ভাবনী উদ্যোগের ফলে বিজ্ঞানীরা আজ হাতে পেয়েছেন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্পূর্ণ নতুন এক উপায়। নবম গ্রেডের ছাত্র এই নাথান স্কুলের গ-- না পার হলেও এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠেছে। একজন তরুণের ল্যাপটপ থেকে যে কী অসাধারণ উদ্ভাবনা বেরিয়ে আসতে পারে, তার যথার্থ স্বাক্ষর রেখেছে এই নাথান। তার মেধা, চিমত্মাশক্তি, উদ্ভাবনী ক্ষমতা, একাগ্রতা ও দৃঢ়তাই এই বিস্ময়কর উদ্ভাবনার পেছনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
সারা ভোল্জ
২০১৩ সালে সারা ভোল্জ যখন ‘ইন্টেল সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চ’-এ বিজয়ী হয়, তখন তার বয়স মাত্র ১৭। রসিকতা করে তাকে বলা হতো ধষমধব বহঃযঁংরধংঃ। এর সরল অর্থ শৈবাল বিষয়ে ছিল তার প্রবল আগ্রহ আর ঔৎসুক্য। তার খাটের নিচে সে চাষ করত শৈবাল, আর সারাক্ষণ মেতে থাকত শৈবাল নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। এই ট্যালেন্ট সার্চে বিজয়ী হওয়ার সময় সে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর চিয়েন্নে মাউন্টেন স্কুলের ছাত্রী। তার প্রকল্প ট্যালেন্ট সার্চ ও ১ লাখ ডলারের পুরস্কার বিজয়ের সময় সেখানে সে ছিল গ্র্যাজুয়েট হওয়ার অপেক্ষায়। তখন সে মাঝে মাঝে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি তথা এমআইটিতে যাওয়া-আসা করত। এই তরুণ গবেষক তখন প্রচারাভিযান চালায় ফসিল জ্বালানির বিকল্প হিসেবে শৈবালভিত্তিক জৈব জ্বালানি ব্যবহারের পক্ষে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও এমনকি টেড টকে বক্তব্য রেখে সে এই প্রচার কাজ চালাত। তার কাজের সবচেয়ে বড় প্রতিফলন সম্ভবত দেখা যাবে শৈবালভিত্তিক জৈব জ্বালানি তৈরির উপায় উদ্ভাবনে এবং ‘আর্টিফিসিয়াল সিলেকশন টেকনোলজি’ ব্যবহার করে কার্যকরভাবে শৈবাল জন্মানোর ক্ষেত্রে। তার প্রতিশ্রম্নতিশীল অবদানের ফলে এরই মধ্যে এ ক্ষেত্রে প্রচুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার। আর এ কাজটি সে শুরু করেছে মাত্র।
অ্যারি ডিকোভস্কি
অ্যারি ডিকোভস্কি ছয় বছর বয়সেই জাটল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে শুরু করে। আর ১৮ বছর বয়সে সে ডুবে যায় লন্ডন অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সে কোয়ান্টাম মেকানিকস নিয়ে নড়াচড়া করার কাজে। ১৮ বছর বয়সেই চযুংরপং জবারব--এ ছাপা হয় তার একটি নিবন্ধ। এর মাধ্যমে কোয়ান্টাম কমপিউটার সৃষ্টি ও কোয়ান্টাম পদার্থদ্যিা সম্পর্কে তার গবেষণায় সংশ্লিষ্ট থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়। তার ইচ্ছা একটি ‘ইনস্টেনটেনিয়াস ডাটা ট্রান্সফার টেকনোলজি’ উদ্ভাবনের, যে টেকনোলজি গতি ও নিরাপত্তা (স্পিড অ্যান্ড সিকিউরিটি) সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান দেবে। সে স্ট্যানফোর্ডের পড়া ছেড়ে অৎশঃড়ং নামে একটি কোম্পানি খোলে। সে এখন কাটিং অ্যাজ ডাটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন প্রোগ্রাম তৈরি করে পালস্না দিচ্ছে মাইক্রোসফটের মতো বড় বড় কোম্পানির সাথে। ডিকোভস্কির উদ্ভাবন এরই মধ্যে বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিসত্মৃতির আভাস দিচ্ছে।
অ্যাঞ্জেলা ঝেং
১৫ বছর বয়সে নবম গ্রেড পড়ার সময়ই অ্যাঞ্জেলা ঝেং বায়োইঞ্জিনিয়ারিং তথা জৈব প্রকৌশল বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠে। একাদশ গ্রেডে পড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিমেন্স সায়েন্স কনটেস্টে বিজয়ী হয়ে লাভ করে ১ লাখ ডলারের অর্থ পুরস্কার। ক্যান্সার নিরাময় সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞান প্রকল্প তৈরির জন্য তাকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। স্ট্যানফোর্ডের গবেষণাগারে তার প্রবেশের সুযোগ ছিল। সেখানে সে একটি ন্যানোপার্টিকল তৈরির আগে পর্যন্ত এক হাজার ঘণ্টা কাটায় গবেষণার পেছনে। এই ন্যানোপার্টিকল ক্যান্সার কোষে আক্রমণ চালাতে সক্ষম। এ ছাড়া এটি রোগ নির্ণয় সংক্রান্ত নানা তথ্য দিতেও সক্ষম। এই ন্যানোপার্টিকলের সাথে লাগানো পলিমারের সাহায্যে সে জানতে পারে, কী করে ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়। ইঁদুরের ওপর প্রাথমিক পরীক্ষা করে সে ক্যান্সার নিরাময়ের উপায় জানতে পেরেছে। আশা করা হচ্ছে, কয়েক বছরের মধ্যে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সে বড় ধরনের স্বীকৃতি লাভ করবে।
টেলর উইলসন
মাত্র ১৬ বছর বয়সে টেলর উইলসন ২০১০ সালে তার ‘ফিশন ভিশন : দি ডিটেকশন অব প্রমপ্ট অ্যান্ড ডিলেইড ইনডিউজড ফিউশন গামা, রেডিয়েশন, অ্যান্ড দ্য অ্যাপ্লিকেশন টু দ্য ডিটেকশন অব প্রলিফারেটেড নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়ালস’ নামের প্রকল্প নিয়ে ইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফেয়ারে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতে নেয়। এই প্রকল্পটি সাধারণভাবে আমাদের কাছে রেডিয়েশন ডিটেকটর নামে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এবং এনার্জি ডিপার্টমেন্ট তার কাছে প্রস্তাব দেয় সীমান্ত নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী হুমকি মোকাবেলার জন্য কম খরচে চেরেনকভ রেডিয়েশন ডিটেকটর নির্মাণের জন্য। এর মাধ্যমে টেলর তখন মাত্র ১৮ বছর বয়সেই হয়ে ওঠে একজন প্রকৃত পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানী। সে এখন কাজ করছে স্বল্পব্যয়ের জ্বালানির পারমাণবিক চুল্লির ওপর। আর এটাই তার অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র।
আয়োনুট বুদিস্টিয়ানু
আয়োনুট বুদিস্টিয়ানু হচ্ছে রুমানিয়ান হাই স্কুলের এক ছাত্র। সে উদ্ভাবন করেছে একটি স্বচালিত তথা সেলফ ড্রাইভিং কার। সে লাভ করেছে ৭৫ হাজার ডলারের একটি বৃত্তি। বিশ্বব্যাপী সে আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছে। সে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রোগ্রামিং ব্যবহার করে একটি গাড়ি তৈরি করেছে। এ গাড়িটি গুগলের তৈরি গাড়িগুলোর চেয়েও কম খরচের। তার ডিজাইন করা গাড়ি তৈরি করতে খরচ হয় মাত্র ৪০০০ ডলার, যেখানে একই মানের অন্য ডিজাইনের গাড়ির জন্য খরচ পড়ে ৭৫ হাজার ডলার। এতে বুদিস্টিয়ানু ব্যবহার করেছে পাঁচটি ল্যাপটপ- চারটি রয়েছে রিয়েল টাইম ডাটা কালেকশনের জন্য, আর পঞ্চমটি ব্যবহার হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ডিসিশন মেকিংয়ের জন্য। এসব ল্যাপটপ ব্যবহার করে বুদিস্টিয়ানু একটি প্রোগ্রাম বানাতে সক্ষম হয়, যা ট্রাফিক চলাচল, রোড, পথচারী, বাধা ও অন্যান্য বিষয়ের আকারে ডাটা নিতে পারে একটি কম রেজিস্ট্যান্সের থ্রিডি খরউঅজ (Light Detection and Ranging) থেকে। এর মাধ্যমে গাড়িটি দ্রুত নিরাপদে চালানো সম্ভব। এ ছাড়া সে এখন একটি বৈপস্নবিক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরির পথে, যার মাধ্যমে অন্ধ লোকেরা অনায়াসে একা রাস্তায় চলাচল করতে পারবে নিরাপদে।
ব্রিটানি উইঙ্গার
একাদশ গ্রেড পড়ার সময়েই ব্রিটানি উইঙ্গার আগ্রহী হয়ে ওঠে কমপিউটার প্রোগ্রামিংয়ের ব্যাপারে এবং তা প্রয়োগ করে ক্যান্সারে। সে এমন একটি অ্যালগরিদম লেখে, যার ক্যান্সার ডিটেকশন রেট ৯৯ শতাংশের চেয়েও বেশি। তার রিসার্চ প্রজেক্টের নাম ‘গ্লোবাল নিউরাল নেটওয়ার্ক ক্লাউড সার্ভিস ফর ব্রেস্ট ক্যান্সার’। ২০১২ সালে গুগল সায়েন্স ফেয়ারে এ প্রকল্পটি গ্র্যান্ড প্রাইজ জিতে নেয়। ২০১৩ সালের মধ্যে সে তার নিউরাল ক্লাউড নেটওয়ার্ক প্রোগ্রাম আরও এগিয়ে নিয়ে লিউকেমিয়া ডিটেকশনের বিষয়টিও এতে অন্তর্ভুক্ত করে এবং লাভ করে মাল্টিপল অ্যাওয়ার্ড। এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ইন্টেল সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চ পুরস্কারটিও। তার প্রোগ্রামটি ডিজাইন করা হয়েছে বিশ্বব্যাপী বায়োপসিস থেকে অ্যাগ্রিগেট ডাটা ব্যবহারের জন্য, যাতে শেখা যায়- কী করে মানবদেহের ক্যান্সার ও টিউমার চিহ্নিত করা যায়। ‘ক্লাউড৪ক্যান্সার’ সার্ভিস নামে এটি এখন পরিচিত। এটি বিশ্বব্যাপী পাওয়া যায় নিখরচায়। এর অর্থ বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ রোগী সুযোগ পাবে কম ব্যথার ইনভেসিভ সার্জিক্যাল টেস্টের। আর এর মাধ্যমে অনেক আগেই ক্যান্সার ও টিউমার ধরা পড়বে। অতএব তার এ উদ্ভাবনের ফলে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ রক্ষা পাবে।