• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > রোবটিক্স গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্লানেটর বাংলাদেশ’
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
রোবট
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
রোবটিক্স গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্লানেটর বাংলাদেশ’
বেশ কয়েক বছর ধরে রোবটিক্স চর্চা চলছে দেশে। তবে তা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। এই ল্যাব হয়ে এখন তা চলে আসছে বাণিজ্যিক আবহে। নিজস্ব উদ্ভাবন আর নকশায় তৈরি করেছেন আবেগ-অনুভূতিহীন যন্ত্রমানব ‘মানবগাড়ি’ ও ‘টেলিপ্রেজেন্স’। রাকিব রেজা ও রিনি ঈশান খুশবু- এই স্বপ্নবাজ রোবট দম্পতির প্রচেষ্টায় প্রথমবারের মতো দেশে স্থাপিত হয়েছে রোবটিক্স গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘প্লানেটর বাংলাদেশ’।
চার বছর আগের কথা। ২০১০ সাল। রিনি ঈশান খুশবু তখন চট্টগ্রাম প্রৌকশল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। সে সময় আইসক্রিমের বক্সে খুব সাধারণ একটি রোবট তৈরির মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার রোবট মিশন। ছোটবেলায় সায়েন্স ফিকশন মুভি ‘রোবকন’ এবং কিশোর সাহিত্যিক জাফর ইকবাল রচিত কল্পবিজ্ঞানের বই পড়তে পড়তে মনের অজামেত্ম বাসা বাঁধা স্বপ্নের ডানায় লাগে অন্য শিহরণ। বাবা-মায়ের উৎসাহে টিউশনির টাকায় আগ্রাবাদের বাসার একটি কক্ষে গড়ে তোলা হয় একটি ছোট্ট ল্যাব। এই ল্যাবে যোগ দিতে শুরু করেন বন্ধু শায়খ, নাহিন ও রাকিব। দিন দিন চর্চা বাড়তে থাকে সেই ল্যাবটিকে কেন্দ্র করে। একই বছর ২২-২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম রোবটিক্স প্রতিযোগিতা ‘রোবোরেস-১’-এ ২৪টি দলের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান লাভ করেন রাকিব রেজা ও রিনি ঈশান খুশবু।
এ সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্মিলিত এই রোবোটিক্স চর্চা বাড়তে থাকে। একে একে তৈরি হতে থাকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটিক আর্ম, মোবাইল নিয়ন্ত্রিত জিএসএম রোবট, রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি কমিউনিকেটেড রোবট, অবস্ট্র্যাকল অ্যাভোয়েডিং রোবট, গোলোকধাঁধা সমাধানকারী রোবট। বেসিক এই রোবটগুলো তৈরি করে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা লাভ করেন। ২০১৩ সালের ২০-২৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় অবস্থিত বিশ্বখ্যাত মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ‘নাসা’ আয়োজিত লুনাবোটিক্স মাইনিং প্রতিযোগিতায় চাঁদে খননকাজ করতে সক্ষম রোবট নিয়ে অংশ নেয় খুশবু’র দল।
প্লানেটর বাংলাদেশ
ক্যাম্পাসের গল্প-আড্ডার পুরোভাগে থাকা যন্ত্রমানব কারিগর তৈরির স্বপ্নকে আরও এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে ‘প্লানেটর বাংলাদেশ’ নামে একটি গবেষণা দল গড়ে তোলেন খুশবু ও রাকিব। এই দল নিয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী রিনি ঈশান খুশবু জানালেন, চট্টগ্রামের জিইসি সার্কেলে ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে প্লানেটর বাংলাদেশ। প্লানেটর হচ্ছে প্রথম উপনিবেশ স্থাপনকারী, অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রথম রোবটিক্স গবেষণাকেন্দ্র, যেখানে গ্র্যাজুয়েটদের পক্ষে রোবট গবেষণাকে পেশা হিসেবে নেয়ার সুযোগ থাকছে এবং কেউ রোবট বিষয়ে গবেষণা করতে চাইলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও থাকছে। এই সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে রফতানিযোগ্য রোবট তৈরি করতে কাজ করছেন এই দলের সদস্যরা। প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা রাকিব রেজা আর খুশবু’র ব্যক্তিগত ফান্ডে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানে এখন রোবটিক্স ও মাইক্রোকন্ট্রোলার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। রোবট নিয়ে আগ্রহী তরুণদের সংখ্যা বাড়ায় গত বছরের ১৬ জানুয়ারি ঢাকার আজিমপুরেও প্লানেটর বাংলাদেশের একটি শাখা খোলা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে ৬ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ইতোমধ্যেই এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বলে জানালেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা রাকিব রেজা। তিনি জানান, এখানকার বেশিরভাগ প্রশিক্ষণার্থীই এসেছেন বুয়েট থেকে। ট্রেনিং নিয়ে সবাই তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের একাডেমিক প্রজেক্টে রোবটসহ উন্নতমানের প্রজেক্ট করতে সক্ষম হচ্ছেন নিজেদের হাতেই। দেশে বসে রফতানিযোগ্য রোবট তৈরি করতে চট্টগ্রামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে এই কাজে পুরোপুরি নিজেকে নিয়োজিত করেছেন রিনি ঈশান খুশবু।
মাস দুয়েক আগে রাকিবের সাথে জুটি বাঁধা খুশবু জানালেন, প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত পারিশ্রমিক শখের বশে বানানো ছোটখাটো রোবটগুলোর ফান্ডিংয়ের জন্য যথেষ্ট হলেও কোনো বড় মাপের ও বেশি দক্ষতাসম্পন্ন উন্নতমানের রোবট তৈরি অথবা বাজারজাত করার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। রোবটিক্স চর্চা ও দারুণ সব রোবট বানিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার উপযুক্ত ফান্ড, প্ল্যাটফর্ম, যন্ত্রপাতি, পৃষ্ঠপোষক। যার কোনোটি তাদের নেই। তাদের যা আছে, তা হলো আগ্রহ, প্রচেষ্টা, অভিজ্ঞতা, মেধা আর স্বপ্ন! তাই এই মুহূর্তে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান অথবা সরকারি সহযোগিতা খুব বেশি প্রয়োজন।
তবে এই সীমাবদ্ধতাকে মাড়িয়েই এগিয়ে চলছে প্লানেটর বাংলাদেশ দল। প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে এই মিশনের খুশবু ও রেজার সহযাত্রী হয়েছেন চুয়েটের সপ্তম ব্যাচের ছাত্র হাসানুল ইসলাম রেজা। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের কায়সার রাইহান। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যেই তৈরি করেছেন ‘মানবগাড়ি’, ‘ওয়েল্ডিং’ করতে সক্ষম রোবট ও ‘টেলিপ্রেজেন্স’ নামে তিনটি রোবট। এর পাশাপাশি এখন চলছে বাড়ির দেয়াল রং করতে সক্ষম রোবট তৈরির কাজ। আর এগুলোর বেশিরভাগই রাকিবের হাতে তৈরি বলে জানালেন রিনি ঈশান খুশবু। তিনি জানান, অত্যন্ত ধীরস্থির ও স্বল্পভাষী রাকিব রেজা বর্তমানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়। পাশাপাশি আমাকে সহায়তা করে। ও যদি প্ল্যানেটরের সিটিও না হতো, তাহলে হয়তো এতগুলো রোবট তৈরি হতো না।
মানবগাড়ি
তুমুল জনপ্রিয় ‘ট্রান্সফরমার’ সায়েন্স ফিকশন মুভিটি আমাদের অনেকেরই দেখা। এই ছবিতে দেখা গিয়েছিল এমন এক রোবট, যা মানুষের আকৃতি থেকে প্রয়োজনে বদলে গিয়ে হয়ে উঠে গাড়ি। একই চেসিস; কিন্তু মুহূর্তে তা পরিবর্তিত হয় নতুন অবয়বে। দুই ধরনের চেহারায়। কাজও এদের ভিন্ন। এমন দৃশ্য দেখতে দেখতে অনুসন্ধিৎসু মন খুঁজেছে কীভাবে সম্ভব এই পরিবর্তন। অনেকে হয়তো কল্প-কাহিনী আর রুপালি পর্দার অবাস্তবতা ভেবে গা করেননি। শুধু উত্তেজিত হয়েছেন। তবে সেই শিহরণ রক্তে বয়ে নিয়ে; কল্পনার সেই রোবটটি তৈরি করেছে প্লানেটর বাংলাদেশ। এই রোবটটি প্রথমত একটি হিউম্যানয়েড রোবট। তাই আকৃতিতে একজন সাধারণ মানুষের মতোই এর রয়েছে দুই হাত, দুই পা, চোখ, নাক, মুখ কান- সবই। কিন্তু প্রয়োজনে এই যন্ত্রমানবটি নিজের আকৃতি বদলে হয়ে যেতে পারে গাড়ি। এই মানবগাড়িটি প্রসঙ্গে খুশবু জানান, প্রথমে এর ভার্সন-১ তৈরি করা হয়। কিন্তু সেটিতে ভারসাম্যগত সমস্যার কারণে পরে কার্যকর ভার্সন-২ তৈরি করা হয়। এই রোবটটি এক ধরনের এন্টারটেইনমেন্ট রোবট হলেও একে সিকিউরিটি রোবট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ইনস্পেকশন এবং স্পাইং রোবট হিসেবেও এই রোবটটি উপযোগী। এই মানবগাড়ি তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশে ‘সেলফ রিকনফিগারেবল’ রোবট নিয়ে গবেষণার সূত্রপাত ঘটাল প্লানেটর বাংলাদেশ।
টেলিপ্রেজেন্স
অফিসের বাইরে থেকেও অফিসে কে কী করছেন অফিসের প্রধান নির্বাহী সহজেই নজরে রাখতে পারবেন প্লানেটর বাংলাদেশের তৈরি টেলিপ্রেজেন্স রোবটের মাধ্যমে। চার চাকায় ভর করে ওয়েবক্যাম সমন্বিত এই রোবটটিকে তিনি ইচ্ছেমতো প্রতিটি রুমে হাঁটিয়ে নিতে পারেন। টেলিপ্রেজেন্স রোবট সম্পর্কে বলতে গিয়ে খুশবু জানান, ইতোমধ্যেই কয়েকটি দেশে এ ধরনের রোবট ব্যবহার হচ্ছে। এর মাধ্যমে চিকিৎসকেরা অন্য স্থানে থেকেও রোগীকে পরামর্শ দিতে পারেন, কর্মরত মায়েরা অফিসে বসে ঘরে সমত্মানদের দেখে রাখতে পারবেন।
ওয়েল্ডিং রোবট
জাহাজ নির্মাণসহ বিভিন্ন শিল্পে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ হয় প্রচুর। এই কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকদের চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অথচ রোবট দিয়ে এই কাজ করানো যেতে পারে বলে জানান প্লানেটর বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী রিনি ঈশান খুশবু।
লক্ষ্য রফতানির
প্লানেটর বাংলাদেশের এই রোবটগুলোর বিষয়ে ইতোমধ্যেই দেশ-বিদেশ থেকে দুই-একজন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান এর সিইও রিনি ঈশান খুশবু। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই চট্টগ্রামের তিনটি প্রতিষ্ঠান আমাদের তৈরি রোবট নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শ্রমের মূল্য কম বিবেচনায় কয়েক দিন আগে জাপান থেকে ই-মেইল করে বাংলাদেশ থেকে রোবট আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে সেখানকার একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি আরও জানান, অশিক্ষিত বা কম শিক্ষিত মানুষেরা রফতানিতে শীর্ষস্থানে থেকে আমাদের পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রাখলে রোবট রফতানি করে আমরা শিক্ষিতরা কেনো অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা করতে পারব না। অবশ্যই পারব। কেননা, সামনে এই বাজারটা ক্রমেই বড় হতে চলেছে

ফিডব্যক : netdut@gmail.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস