• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আগামীর বিদ্যুৎ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৯ - জুলাই
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইলেক্ট্রনিক কমিউনিকেশন
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আগামীর বিদ্যুৎ




ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালির বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি হতে শুরু করে মহাকাশে ঘূর্ণায়মান স্যাটেলাইটসমূহ পর্যন্ত সব কিছুরই সক্রিয় থাকাটা নির্ভর করছে বিদ্যুতের ওপর। আর এই বিদ্যুতের একটা বড় অংশই আসছে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর সেই বিদ্যুৎ বড় আকারে ধরে রাখা বা সংরক্ষণ করা যায় না। উৎপাদনের কমবেশি প্রায় পুরোটাই ব্যবহার করতে হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বহুদূর এলাকায় বিদ্যুৎ দিতে হলে প্রয়োজন পড়ে তার এবং ট্রান্সফরমারের কিংবা বিতরণ কেন্দ্রের। এই পুরো ব্যবস্থায় বড় ধরনের ত্রুটি ও সমস্যা রয়েছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এই ব্যবস্থা সুবিধাজনক নয়। বিজ্ঞানীরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ে উদ্ভাবন করছেন নানা পদ্ধতি।

বিদ্যুতের একটি অন্যতম সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হচ্ছে সোলার সেল ব্যবস্থা। ১৯৮০ সালের আগে জ্বালানি তেলের সঙ্কট চলার সময় এ বিষয়ে প্রচুর গবেষণা হয়েছে। কিন্তু ১৯৮০-র দশকের প্রথম দিকে যখন দাম পড়ে যায়, তখন ওই গবেষণা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। সোলার সেলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। সৌরশক্তির খুব কম অংশকেই এটি বিদ্যুতে রূপান্তর করতে পারে। যদিও ভারতের ছোট ও প্রত্যন্ত গ্রামগুলো সম্পূর্ণভাবে ওই সোলার প্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুতের ওপরই নির্ভরশীল। সেখানে গ্রিড লাইন নিতে হয়নি, ফলে অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির আরেকটি অন্যতম উৎস হচ্ছে উইন্ডমিল ব্যবহার করে পাওয়া উইন্ড এনার্জি বা বায়ু শক্তি। সাম্প্রতিক সময়ে ছোট আকারের নয়, বরং বড় আকারের উইন্ডমিল স্থাপনকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে। উইন্ডমিল ফার্ম স্থাপনের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলকে আদর্শ স্থান বলে বিবেচনা করা হয়। ভবিষ্যতে মহাসমুদ্রে উইন্ডমিল স্থাপন হতে পারে।

ইদানীং বিদ্যুতের মাইক্রোজেনারেশন ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর অর্থ হলো প্রতিটি বাড়ি, ক্ষুদ্র সম্প্রদায় কিংবা শিল্প এলাকা নিজেদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ নিজেরাই উৎপাদন করবে। কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনটি ইতোমধ্যেই হচ্ছে। কানাডা সরকার ব্যক্তিগত খাতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনে চাহিদা পূরণ করছে। যুক্তরাজ্য সরকার মাইক্রোজেনারেটিং প্রকল্পকে উৎসাহিত ও ভর্তুকি দেয়ার নীতি নিয়েছে।

নিউক্লিয়ার এনার্জি বা পরমাণু জ্বালানি আরেকটি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা। বড় আকারে না করে বেশকিছু কোম্পানি এখন ক্ষুদ্র আকারের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। তোশিবা নিজেদের ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১৫ ফুট বাই ১০ ফুট পরমাণু চুল্লি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। এটা অবশ্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। যদিও নিশ্চিতভাবেই এর সুফল পাওয়া যাবে অন্তত ৪০ বছর। মেক্সিকোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হাইপেরিয়ন নিউক্লিয়ার মাইক্রোজেনারেশনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। তারা এখন ক্ষুদ্র পরমাণু চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা করছে, যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হবে। প্রতিটি চুল্লিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আলোকিত করবে ২০ হাজার বাড়ি। এই পরমাণু কেন্দ্রের আয়তন হবে একটি গ্যারেজের সমান এবং এটি থাকবে মাটির নিচে কংক্রিটের আবরণের ভেতরে। প্রতি ৫ বছর পর একবার করে তাকে জ্বালানি দিতে হবে। নিউক্লিয়ার ফিউশন নিয়েও কাজ হচ্ছে। এটি অনেক চাঞ্চল্যকর এবং অর্থনৈতিক দিয়ে লাভজনক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিউশন পাওয়ার পরীক্ষা করেও দেখা হয়েছে। কিন্তু এই প্রযুক্তিটি জটিল এবং এর উন্নয়ন ঘটানো সহজসাধ্য নয়। একটি সমস্যার উত্তরণ ঘটলে আরেকটি সমস্যা সামনে এসে দাঁড়ায়। ফিউশনের জন্য প্রয়োজনীয় অত্যন্ত উত্তপ্ত প্লাজমা ধারণ করার বিষয়টিই সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ কাজে এখন ব্যবহার হচ্ছে ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড। ফিউশনের কাঁচামাল হলো ডিউটেরিয়াম এবং ট্রাইটিয়াম। ফিউশন পাওয়ার টেকসই বিদ্যুতের উৎস। ফিউশন পাওয়ার একাই বিশ্বের মানুষের বিদ্যুৎ চাহিদা দীর্ঘমেয়াদে পূরণ করতে সক্ষম।

বর্তমানে যে পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার হচ্ছে তার একটি বড় অংশই অপচয় হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদনের বড় অংশই চূড়ান্ত ভোগে কাজে লাগছে না। একটি সোলার ওয়াটার হিটার বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও ভোগের বিভিন্ন পর্যায়ে জ্বালানির অপচয় এবং গ্রিড রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় হ্রাস করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সড়ক এবং ট্র্যাফিক সিগনাল বাতি জ্বালাতে সোলার প্যানেল ব্যবহার হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের এখন ভাবতে হবে কিভাবে অপচয় রোধ করে উৎপাদনের সবটুকু বিদ্যুৎই ব্যবহার করা সম্ভব তার উপায় নিয়ে।

এমন কিছু উপাদান রয়েছে যার ওপর চাপ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। রাস্তার নিচে ধাতব প্লেট স্থাপন করে তাত্ত্বিকভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সড়ক বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা যায়। দিনের বেলায় বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে রেখে রাতে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে। একইভাবে রেললাইনের নিচেও প্লেট রাখা যেতে পারে। সেখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ স্বয়ং রেল চালনাতেই ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত যন্ত্র ব্যবহার করে রেলের সিগনাল বাতি, ফ্যান, লাইট, ইন্ডিকেটর এবং দরজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতে পারে। অন্যান্য যানবাহন ও প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সংগ্রহ করতে পারে গতিশক্তি থেকে। টয়োটার প্রাইয়াস নামের হাইব্রিড কার এ কাজটিই করছে। ক্ষুদ্রাকারে বিদ্যুতের জন্য নির্দিষ্ট কাঁচের ওপর চাপ দিয়েও বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। এই পদ্ধতিতে মোবাইল ফোন, কমপিউটার এবং অন্যান্য ক্ষুদ্রযন্ত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেতে পারে।

মানুষের দেহের নড়াচড়াকে ভিত্তি করে বহনযোগ্য যন্ত্রের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। গতিশীল রোটর ঘড়ি চলতে এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র যন্ত্র চালাতে সহায়ক হচ্ছে। মানুষের নড়াচড়া থেকে বেরিয়ে আসা গতিশক্তি ব্যবহার করে আরো যা কিছু পরিচালনা করা যাবে তার মধ্যে রয়েছে টর্চ, রেডিও, মোবাইল ফোন এবং ক্যামেরা। এই প্রযুক্তি এখনি রয়েছে, কিন্তু ব্যয়বহুল। তাই প্রচলিত ব্যাটারির জায়গা দখল করতে পারছে না।

গবেষকরা বলছেন, মানুষ, আলু, গাছ, গরু এবং ব্যাকটেরিয়া হতে পারে বিদ্যুতের সম্ভাব্য উৎস। মানবদেহের সঙ্গে তার যুক্ত করে বাতি জ্বালানোর প্রত্যাশা করা যায় না, তবে মানুষ যে একদিন ব্যাটারি হবে না তাও কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায় না। যেকোনো ধরনের বায়োলজিক্যাল বা জীববস্ত্ত থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করতে পারে যে প্রযুক্তি সেটি হচ্ছে মাইক্রোবায়াল ফুয়েল সেল টেকনোলজি। ব্যাকটেরিয়া অর্গানিক বস্ত্ত পরিচয় দেয়। এই পচানোর প্রক্রিয়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তা ব্যাটারিতে সংরক্ষণ করা সম্ভব। পচে যাওয়া খাদ্য, বর্জ্য এবং মানুষসহ অন্য যেকোনো পশুর পচে যাওয়া দেহ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। জৈব প্রকৌশলের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া যেকোনো কিছু গ্রহণ করতে পারে এবং তাকে বিদ্যুতে পরিণত করতে পারে। দূষণভুক ব্যাকটেরিয়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। ভেজা আবর্জনা এবং নর্দমা এমন রাসায়নিক উপাদনসমৃদ্ধ, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হতে পারে। মানব মূত্রের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কয়েকদিন চলবে এমন ব্যাটারির কাজ করা যাবে। গবাদিপশুর বর্জ্য থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। মানব এবং গবাদিপশুর বর্জ্য ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে পচিয়ে তা ইথানল তৈরিতে এবং সেই ইথানল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার হতে পারে। এগুলো নতুন কোনো ধারণা নয়। তবে এসব ধারণার বাস্তবায়নের উদ্যোগ দীর্ঘদিনেও নেয়া হয়নি।

একটি বিষয়ে বিজ্ঞানীরা একমত, বিদ্যুতের জন্য আমাদের সূর্যের ওপরই অনেকটা নির্ভর করতে হবে। সোলার প্যানেল ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে সূর্য থেকেই সংগ্রহ করতে হবে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ। পাশাপাশি কাজে লাগাতে হবে আধুনিক প্রযুক্তি।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস