• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বিশ্বের প্রথম ন্যানোটিউব কমপিউটার
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুনীর তৌসিফ
মোট লেখা:৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ন্যানো প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বিশ্বের প্রথম ন্যানোটিউব কমপিউটার
বিজ্ঞানীরা একটি নতুন ধরনের কমপিউটার উদ্ভাবন করেছেন। এটি ঠিক অন্যান্য কমপিউটারের মতো নয়। এটিই বিশ্বের প্রথম কার্বন ন্যানোটিউব কমপিউটার। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল এই নতুন ধরনের কমপিউটার উদ্ভাবন করেছেন। মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সিলিকনভিত্তিক কমপিউটারের বিকল্প যে কমপিউটারের কথা ভেবে আসছিল, এ কমপিউটার তেমনই একটি কমপিউটার। এটি তৈরি কার্বন ন্যানোটিউব দিয়ে। কার্বন ন্যানোটিউব একটি সেমিকন্ডাক্টর বস্ত্ত। প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এই ন্যানোটিউব দিয়ে নতুন ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস তৈরির। আর এসব ডিভাইস আরও দ্রুত চলবে এবং ব্যবহার করবে।
দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করে আসছেন কার্বন ন্যানোটিউব হতে পারে সিলিকন ট্র্যানজিস্টরের সম্ভাবনাময় উত্তরসূরি। কিন্তু এ সময়ের আগে পর্যন্ত গবেষকেরা নিশ্চিত ছিলেন না, কার্বন ন্যানোটিউব বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারবে কি না। একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গবেষকদের একজন সুভাশিষ মিত্র বলেন : সিলিকনের যুগ ছাড়িয়ে নতুন কার্বন ন্যানোটিউব ইলেকট্রনিকসের কথা মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে। কিন্তু এই অবাক করা ন্যানোটিউব টেকনোলজির নতুন যুগের প্রদর্শন ঘটেছে খুবই কম। কিন্তু এখন বিশ্বের প্রথম কার্বন ন্যানোটিউব কমপিউটার তৈরির মাধ্যমে এর সম্ভাবনার প্রমাণ মিলল।
কার্বন ন্যানোটিউব হচ্ছে কার্বন অ্যাটমের সুদীর্ঘ চেইন, যা চরমভাবে কার্যকর বিদ্যুৎ পরিবহন ও নিয়ন্ত্রণে। অধিকন্তু এগুলো খুবই পাতলা- হাজার হাজার কার্বন ন্যানোটিউব পাশাপাশি রাখা যাবে মানুষের একটি চুলের ভেতরে। এর অর্থ এগুলোর সুইস অফ করতে খুবই কম এনার্জি লাগবে। এইচএস ফিলিপ অংনাখের নামে এক গবেষক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন : বাগানে পানি ছিটানোর একটি পাইপের কথা ভাবুন। পাইপ যত বেশি চিকন হবে, তত বেশি সহজে এই পাইপ থেকে পানি প্রবাহ বন্ধ করা সহজ হবে।
আসলে কার্যকর কন্ডাকটিভিটি তথা পরিবাহিতা ও কম বিদ্যুৎ খরচের সুইচের সমন্বয়ে তৈরি কার্বন ন্যানোটিউব ইলেকট্রনিক ট্র্যানজিস্টর হিসেবে কাজের জন্য খুবই চমৎকার। বিজ্ঞানীরা এমনকি অনুমান করছেন, কার্বন ন্যানোটিউব কমপিউটার পারফরম্যান্সের দিক থেকে সিলিকন ট্র্যানজিস্টরভিত্তিক কমপিউটারের পারফরম্যান্সকে ছাড়িয়ে যাবে। সিলিকন ট্র্যানজিস্টর সম্পর্কিত প্রধান বিষয় হচ্ছে, এগুলো ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে। ইলেকট্রনিকের অগ্রগতির অর্থ ছিল প্রতিটি ট্র্যানজিস্টরের আকার ছোট হয়ে আসা, যাতে একটি চিপে বেশি থেকে বেশিসংখ্যক ট্র্যানজিস্টর প্যাক করা যায়। এগুলো যতই ছোট হয়ে আসে, তত বেশি বিদ্যুৎ অপচয় করে এবং ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর স্থানে আরও বেশি করে তাপ উৎপাদন করে। এর ফলে এক সময় সিলিকনভিত্তিক সিস্টেম তাপমাত্রার দিক থেকে সীমিত হয়ে পড়বে। কার্বন ন্যানোটিউবের পর্যাপ্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু অন্তর্নিহিত অপূর্ণতা তথা ইমপোরটেন্ট ইমপারফেকশনের ব্যবহারকে থামিয়ে রেখেছে। কার্বন ন্যানোটিউব অপরিহার্যভাবে চিপ ম্যাকারদের মনের মতো নিট প্যারালাল লাইনে উৎপাদিত হয় না। আর গবেষকেরা যখন একটি কৌশল বের করেছেন কার্বন ন্যানোটিউবের ৯৯.৫ শতাংশকেই সরলরেখায় উৎপাদনের ইমপারফেকশন দূর করার। এরপরও সমস্যার কারণ হয়ে থাকবে।
এখন গবেষকেরা খড়ের গাঁদায় সুচ খুঁজে পাওয়ার মতো মিসঅ্যালাইনড এবং অথবা মেটালিক কার্বন ন্যানোটিউব নিয়ে কাজ করার উপায় খুঁজে পেয়েছেন। নতুন এই দ্বিমুখী পদক্ষেপকে বলা হয় ‘ইমপারফেকশন ইমিউন ডিজাইন’। এটি অপসারণ করে তারের মতো অথবা ধাতব ন্যানোটিউব এবং এরপর এড়িয়ে চলে মিসঅ্যালাইনড ন্যানোটিউব। এর ফলে গবেষকেরা সুযোগ পান ১৭৮টি ট্র্যানজিস্টর দিয়ে একটি মৌলিক কমপিউটার সংযোজনের। এই সীমা আরোপিত হওয়ার কারণ গবেষকেরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফ্যাব্রিকেশন প্রসেসের বদলে ব্যবহার করেছেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চিপমেকিং ফ্যাসিলিটি।
তাদের অর্জন গবেষণাগারে প্রথমবারের মতো কার্বন ন্যানোটিউব তৈরি করে তা বাস্তব জগতে ব্যবহারোপযোগী করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদি কার্বন ন্যানোটিউব কমপিউটার ও ইলেকট্রনিকসে ব্যবহার করা যায়, তবে আমরা এসব ডিভাইসে এক বিপস্নব ঘটতেই দেখব।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সম্পূর্ণ কার্বন ন্যানোটিউব দিয়ে তৈরি কমপিউটার নতুন প্রজন্মের ডিজিটাল ডিভাইসের নতুন দুয়ার উন্মোচন করেছে। বিশ্বের প্রথম এই কার্বন ন্যানোটিউব কমপিউটারের নাম দেয়া হয়েছে সার্ডিক (Cerdic)। এটি শুধু একটি বেসিক প্রটোটাইপ তথা মূল নমুনা, তবে এটিকে একটি যন্ত্রে রূপ দেয়া যাবে, যা হবে আজকের সিলিক মডেলের কমপিউটারের চেয়ে ক্ষুদ্রতর, অধিকতর গতিশীল ও কার্যকর। এ পর্যন্ত কার্বনভিত্তিক যেসব ইলেকট্রনিক সিস্টেম মানুষ পেয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কমপ্লেক্স সিস্টেম হচ্ছে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সৃষ্টি বিশ্বের প্রথম কার্বন ন্যানোটিউব কমপিউটার ‘সার্ডিক’। এ কাজটি কি দ্রুতই সম্পন্ন হলো? মোটেও নয়। এটি সম্পন্ন হতে পারতো সেই ১৯৫৫ সালে। কমপিউটার কাজ করে ঠিক ১ বিট ইনফরমেশনের ওপর এবং তা পরিমাপ করা যায় ৩২ দিয়ে।
‘মানবিক পদবাচ্যে সার্ডিক হাতে গুনতে পারে এবং বাছাই করতে পারে বর্ণমালা। কিন্তু এটি ভালোভাবে বুঝে শব্দও, সার্ডিক সত্যিকারের একটি কমপিউটার’- বললেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট ম্যাক্স স্যুলাকার। তিনি আরও বলেন, যদি পর্যাপ্ত মেমরি থাকে, তবে সার্ডিকের পারফরম্যান্সের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকবে না।
কমপিউটিং পারল্যান্সে অর্থাৎ শব্দ ব্যবহার বা শব্দ নির্বাচন কিংবা বাচনভঙ্গিতে সার্ডিক হচ্ছে ‘Turing Complete’। একটি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজকে ‘তুরিং কমপ্লিট’ তখনই বলা হয়, যদি এটি তুরিং মেশিনের পর্যায়ের কমপিউটেশনাল শ্রেণীর হয়। অর্থাৎ এটি এমন যেকোনো ক্যালকুলেশন করতে সক্ষম, যা একটি ইউনিভার্সেল তুরিং মেশিনে পারে। সে যা-ই হোক, নীতিগতভাবে সার্ডিককে ব্যবহার করা যাবে যেকোনো ধরনের কমপিউটেশনাল সমস্যার সমাধানে। আগেকার কার্বনভিত্তিক কমপিউটার সব সময় সঠিক উত্তর দিতে পারত না, কিন্তু সার্ডিক প্রতিবারই দেবে সঠিক উত্তর।
সার্ডিকবিষয়ক পরিসংখ্যান
* ১ বিট প্রসেসর। * স্পিড ১ কিলোহার্টজ।
* ১৭৮ ট্র্যানজিস্টর। * তুরিং কমপ্লিট।
* প্রতি ট্র্যানজিটরে ১০-২০০ ন্যানোটিউব।
* মাল্টি টাস্কিং।
কত ছোট একটি কার্বন ন্যানোটিউব?
* ১০০ মাইক্রন- মানুষের চুলের সমান মোটা।
* ১০ মাইক্রন- পানির ফোঁটার মতো।
* ৮ মাইক্রন- সার্ডিকের ট্র্যানজিস্টর।
* ৬২৫ ন্যানোটিউব- আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য।
* ২০-৪৫০ ন্যানোটিউব- একক ভাইরাস।
* ২২ ন্যানোটিউব- সর্বশেষ সিলিকন চিপ।
* ৬ ন্যানোটিউব- সেল মেমব্রেন/পর্দা।
* ১ ন্যানোটিউব- একক কার্বন ন্যানোটিউব

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস