লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গণিতের অলিগলি
গণিতের অলিগলি পর্ব : ১০৭
দ্রুত গুণের আরেকটি বিশেষ নিয়ম
আমরা গত সংখ্যায় জেনেছি, কী করে কোনো সংখ্যাকে ১১, ২১, ৩১, ৪১, ৫১, ৬১, ৭১, ৮১, ৯১ দিয়ে দ্রুত গুণ করা যায়। এবার আমরা জানব, কী করে কোনো সংখ্যাকে ৯, ১৯, ২৯, ৩৯, ৪৯, ৫৯, ৬৯, ৭৯, ৮৯ ও ৯৯ দিয়ে দ্রুত সংক্ষেপে গুণ করা যায়। যারা গত সংখ্যায় দেয়া নিয়মটি বুঝতে ও আয়ত্ত করতে পেরেছেন, তাদের জন্য এ নিয়মটি আয়ত্ত করা সহজতর হবে। যারা এখনও আগের নিয়মটি পড়েননি, তারা এ লেখা পড়ার আগে গত সংখ্যার লেখাটি পড়ে নিলে ভালো হয়। তবে তা অবশ্যই পড়তে হবে, এমন নয়। তাহলে শুরু করা যাক এবারের নিয়মটি জানার কাজ।
কোনো সংখ্যাকে ৯ দিয়ে গুণ : যে সংখ্যাটিকে ৯ দিয়ে গুণ করতে হবে, সে সংখ্যাটির ডানে শূন্য বসিয়ে পাওয়া সংখ্যা থেকে ওই সংখ্যাটি বিয়োগ করলেই আমরা পেয়ে যাব আমাদের কাঙিক্ষত গুণফল।
উদাহরণ : ধরা যাক, ৪৭ x ৯ = কত, তা আমরা জানতে চাই। উপরে বর্ণিত নিয়মে ৪৭-এর ডানে শূন্য বসালে হয় ৪৭০। এখন এই ৪৭০ থেকে ৪৭ বিয়োগ করলে বিয়োগফল হয় ৪২৩, যা আমাদের নির্ণেয় গুণফল। অর্থাৎ ৪৭ x ৯ = ৪২৩। আবার ধরা যাক, জানতে চাই ৪৩২৭-কে ৯ দিয়ে গুণ করলে গুণফল কত। বর্ণিত নিয়ম মতে, ৪৩২৭-এর ডানে শূন্য বসালে হয় ৪৩২৭০। আর ৪৩২৭০ - ৪৩২৭ = ৩৮৯৪৩। অতএব আমাদের নির্ণেয় গুণফল হচ্ছে ৩৮৯৪৩। অর্থাৎ ৪৩২৭ x ৯ = ৩৮৯৪৩।
কোনো সংখ্যাকে ১৯ দিয়ে গুণ : যে সংখ্যাটিকে ১৯ দিয়ে গুণ করতে চাই, সে সংখ্যাটিকে দ্বিগুণ করে পাওয়া গুণফলের ডানে একটি সংখ্যা বসাতে হবে। শূন্য বসানোর পর পাওয়া সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যাটি বিয়োগ করলেই পেয়ে যাব নির্ণেয় গুণফল।
উদাহরণ : ধরা যাক, জানতে চাই ৫১৭-কে ১৯ দিয়ে গুণ করলে গুণফল কত হয়। এখন ৫১৭-এর দ্বিগুণ ১০৩৪। এর ডানে শূন্য বসালে হয় ১০৩৪০। এই ১০৩৪০ থেকে মূলসংখ্যা ৫১৭ বিয়োগ করে পাই ৯৮২৩। অতএব এই ৯৮২৩ আমাদের নির্ণেয় গুণফল। অর্থাৎ ৫১৭ x ১৯ = ৯৮২৩। আবার ধরা যাক, ২২২ x ১৯ = কত, জানতে চাই। আগের নিয়মানুসারে, ২২২ x ১৯ = ৪৪৪০ - ২২২ = ৪২১৮।
কোনো সংখ্যাকে ২৯ দিয়ে গুণ : যে সংখ্যাটিকে ২৯ দিয়ে গুণ করতে চাই, প্রথমে সে সংখ্যাটির তিনগুণ করে গুণফলের ডানে শূন্য বসাতে হবে। শূন্য বসানোর পর পাওয়া সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যাটি বিয়োগ করলেই কাঙিক্ষত গুণফল পাওয়া যাবে।
উদাহরণ : ধরি, জানতে চাই ৩২১ x ২৯ = কত। উপরে বর্ণিত নিয়মে প্রথমেই ৩২১-এর তিনগুণ পাই ৯৬৩। ৯৬৩-এর ডানে শূন্য বসালে হয় ৯৬৩০। এই ৯৬৩০ থেকে মূলসংখ্যা ৩২১ বিয়োগ করলেই বেরিয়ে আসবে নির্ণেয় গুণফল। অর্থাৎ ৩২১ x ২৯ = ৯৬৩০ - ৩২১ = ৯৩০৯। একইভাবে, ৩৩৩ x ২৯ = ৯৯৯০ - ৩৩৩ = ৯৯৫৭।
কোনো সংখ্যাকে ৩৯ দিয়ে গুণ : যে সংখ্যাটিকে ৩৯ দিয়ে গুণ করতে হবে, প্রথমে সে সংখ্যাটিকে চারগুণ করে পাওয়া সংখ্যার ডানে একটি শূন্য বসাতে হবে। শূন্য বসানোর পর পাওয়া সংখ্যা থেকে মূল সংখ্যাটি বিয়োগ করলেই আমরা পেয়ে যাব নির্ণেয় গুণফল।
উদাহরণ : ধরা যাক, জানতে চাই ৫৩২১ x ৩৯ = কত। এখানে মূল সংখ্যা ৫৩২১-এর চারগুণ হলো ২১২৮৪। এর ডানে শূন্য বসালে হয় ২১২৮৪০। এর সাথে মূলসংখ্যা ৫৩২১ বিয়োগ করলে বিয়োগফল হয় ২১২৮৪০ - ৫৩২১ = ২০৭৫১৯, যা আমাদের নির্ণেয় গুণফল, অর্থাৎ ৫৩২১ x ৩৯ = ২০৭৫১৯।
কোনো সংখ্যাকে ৪৯ দিয়ে গুণ : কোনো সংখ্যাকে ৪৯ দিয়ে গুণ করতে হলে প্রথমে এ সংখ্যাটিকে পাঁচগুণ করে পাওয়া সংখ্যার ডানে শূন্য বসাতে হবে। শূন্য বসানোর পর পাওয়া সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যাটি বিয়োগ করলেই নির্ণেয় গুণফল বেরিয়ে আসবে।
উদাহরণ : ধরা যাক, জানতে চাই ১১১১-কে ৪৯ দিয়ে গুণ করলে গুণফল কত হবে। এখানে মূলসংখ্যা ১১১১-এর পাঁচগুণ ৫৫৫৫। এর ডানে শূন্য বসালে পাই ৫৫৫৫০। এই ৫৫৫৫০ থেকে মূলসংখ্যা ১১১১ বিয়োগ করলে বিয়োগফল দাঁড়ায় ৫৪৪৩৯। অতএব ১১১১ x ৪৯ = ৫৪৪৩৯, যা আমাদের নির্ণেয় গুণফল। একইভাবে ১৭ী ৪৯ = ৮৫০ - ১৭ = ৮৩৩।
কোনো সংখ্যাকে ৫৯ দিয়ে গুণ : যে মূলসংখ্যাটিকে ৫৯ দিয়ে গুণ করতে হবে, সে সংখ্যাটিকে ছয়গুণ করে গুণফলের ডানে শূন্য বসাতে হবে। শূন্য বসানোর পর পাওয়া সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যাটি বিয়োগ করলে কাঙিক্ষত গুণফল আমরা পেয়ে যাব।
উদাহরণ : মনে করি, আমরা জানতে চাই ১১১১-কে ৫৯ দিয়ে গুণ করলে গুণফল কত হবে। এখানে প্রথমেই ১১১১-কে ৬ দিয়ে করে পাই ৬৬৬৬। এর ডানে শূন্য বসালে হয় ৬৬৬৬০। এই ৬৬৬৬০ থেকে মূলসংখ্যা ১১১১ বিয়োগ করলেই পেয়ে যাব নির্ণেয় গুণফল। অতএব ১১১১ x ৫৯ = ৬৬৬৬০ - ১১১১ = ৬৫৫৪৯। একইভাবে, ২০ x ৫৯ = ১২০০ - ২০ = ১১৮০। এখানে আমরা ১২০০ সংখ্যাটি পেয়েছি ২০-কে ছয়গুণ করে এর ডানে একটি শূন্য বসিয়ে।
কোনো সংখ্যাকে ৬৯ দিয়ে গুণ : যেকোনো সংখ্যাকে ৬৯ দিয়ে গুণ করতে হলে প্রথমে মূলসংখ্যাকে ৭ দিয়ে গুণ করে পাওয়া গুণফলের ডানে একটি শূন্য বসাতে হবে। শূন্য বসানোর পর পাওয়া সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যাটি বিয়োগ করলেই নির্ণেয় গুণফল পাওয়া যাবে।
উদাহরণ : ধরি, আমরা জানতে চাই ১২৩৪ x ৬৯ = কত। এখানে প্রথমে মূলসংখ্যা ১২৩৪-এর সাতগুণ করলে পাই ৮৬৩৮। এখন এর ডানে শূন্য বসালে হয় ৮৬৩৮০। এ সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যা ১২৩৪ বিয়োগ করলে বিয়োগফল হয় ৮৬৩৮০ - ১২৩৪ = ৮৫১৪৬ । অতএব আমাদের নির্ণেয় গুণফল ৮৫১৪৬। অর্থাৎ ১২৩৪ x ৬৯ = ৮৫১৪৬। একইভাবে ২২ x ৬৯ = ১৫৪০ - ২২ = ১৫১৮৮। এখানে ১৫৪০ সংখ্যটি পেয়েছি মূলসংখ্যা ২২-এর ৭ গুণ করে গুণফলের ডানে একটি শূন্য বসিয়ে।
কোনো সংখ্যাকে ৭৯ দিয়ে গুণ : যে সংখ্যাটিকে ৭৯ দিয়ে গুণ করতে হবে সেই মূলসংখ্যার আটগুণ করে পাওয়া সংখ্যার ডানে একটি শূন্য বসাতে হবে। শূন্য বসানোর পর পাওয়া সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যা বিয়াগ করলে নির্ণেয় গুণফল পাওয়া যাবে।
উদাহরণ : ধরা যাক, আমরা জানতে চাই ১২৩৪ x ৭৯ = কত। প্রথমে মূলসংখ্যা ১২৩৪-এর ৮ গুণ হলো ৯৮৭২। এর ডানে শূন্য বসিয়ে পাই ৯৮৭২০। এই সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যা ১২৩৪ বিয়োগ করলে বিয়োগফল হয় ৯৮৭২০ - ১২৩৪ = ৯৭৪৮৬। অতএব ৯৭৪৮৬ হচ্ছে আমাদের নির্ণেয় গুণফল। অর্থাৎ ১২৩৪ x ৭৮ = ৯৭৪৮৬। একইভাবে ৩৩ x ৭৯ = ২৬৪০ - ৩৩ = ২৬০৭।
কোনো সংখ্যাকে ৮৯ দিয়ে গুণ : যে মূলসংখ্যাটিকে ৮৯ দিয়ে গুণ করতে হবে, প্রথমে সে সংখ্যাটির ৯ গুণ করে পাওয়া সংখ্যার ডানে একটি শূন্য বসাতে হবে। শূন্য বসানোর পর পাওয়া সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যা বিয়োগ করলেই নির্ণেয় গুণফল পাওয়া যাবে।
উদাহরণ : ধরি, আমরা ১২৩৪-কে ৮৯ দিয়ে গুণ করতে চাই। এখানে প্রথমে মূলসংখ্যা ১২৩৪-এর ৯ গুণ করে পাই ১১১০৬। এই ১১১০৬-এর ডানে শূন্য বসিয়ে পাই ১১১০৬০। এই সংখ্যা থেকে মূলসংখ্যা ১২৩৪ বিয়োগ করলে বিয়োগফল হয় ১১১০৬০ - ১২৩৪ = ১০৯২৬। অতএব নির্ণেয় গুণফল ১৩৮২৬। অর্থাৎ ১২৩৪ x ৮৯ = ১০৯৮২৬।
কোনো সংখ্যাকে ৯৯ দিয়ে গুণ : যে সংখ্যাটিকে ৯৯ দিয়ে গুণ করতে হতে হবে, সে সংখ্যার ডানে দুটি শূন্য বসিয়ে পাওয়া সংখ্যা থেকে ওই সংখ্যা বিয়োগ করলেই নির্ণেয় গুণফল পাওয়া যাবে।
উদাহরণ :
১২৩৪ x ৯৯ = ১২৩৪০০ - ১২৩৪ = ১২২১৬৬
৪৩২১ x ৯৯ = ৪৩২১০০ - ৪৩২১ = ৪২৭৭৭৯
৩৩৩৩ x ৯৯ = ৩৩৩৩০০ - ৩৩৩৩ = ৩২৯৯৬৭
২৩ x ৯৯ = ২৩০০ - ২৩ = ২২৬৭ ইত্যাদি।
গণিতদাদু