লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মইন উদ্দীন মাহমুদ
মোট লেখা:২৭
লেখা সম্পর্কিত
দুনিয়া পাল্টে দেয়ার ৭ প্রযুক্তি
বিশ্ব পরিবর্তনশীল। আধুনিক বিশ্বের প্রতিটি পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় বিজারক সম্ভবত প্রযুক্তি। তবে প্রযুক্তিবিশ্বের কোনো পরিবর্তনই পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত নয়। আমাদের প্রতিদিনের চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখেই যেকোনো ধরনের বড় উদ্ভাবন। বলা যায়, সম্ভাব্য গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সমাধানই হলো নিত্য-নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন। প্রাযুক্তিক সাফল্যই প্রতিশ্রম্নতি দেয় বর্তমান সময়ের গ্লোবাল চ্যালেঞ্জের সবচেয়ে বড় সমাধান, যা হতে পারে হাইড্রোজেনচালিত জিরো-ইমিশন গাড়ি থেকে শুরু করে মানবমসিত্মষ্কে কমপিউটার চিপ মডেল করা পর্যন্ত সব কিছু। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্ভূত হওয়া ৮ টেকনোলজি এমন সব সুযোগ-সুবিধা হাজির করছে, যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। এসব টেকনোলজির মধ্যে আছে পাওয়ার উদ্ভাবন, ইন্ডাস্ট্রি ট্রান্সফরমেশন, আমাদের গ্রহের সুরক্ষা দেয়ার প্রযুক্তিসহ বেশ কিছু প্রযুক্তি।
সম্প্রতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিপ্রবণতার তালিকা সঙ্কলন করতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইমার্জিং টেকনোলজির মেটা কাউন্সিলের ১৮ জন বিশেষজ্ঞের এক প্যানেল যৌথভাবে চেষ্টা করে। মেটা কাউন্সিলের লক্ষ এসব উদ্ভূত উদ্ভাবনের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানো, এসব প্রযুক্তির উন্নয়নে বিনিয়োগের যে ঘাটতি আছে তা কমিয়ে আনা, সাধারণত উন্নয়নকে ব্যাহত করে যে বিধিবিধান তা সহজ করা এবং জনগণের কাছে বোধগম্য করে উপস্থাপন করা।
নেক্সট জেনারেশন রোবটিক্স
প্রোডাকশন লাইন থেকে গুটিয়ে ফেলা
আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার প্রতিটি কাজই করে দেবে রোবট- মানুষের এমন স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। এমন রোবট এখনও কারখানার সংযোজন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য কাজের মধ্যে সীমিত। তবে রোবট এখন ব্যাপকভাবে ব্যবহার হচ্ছে স্বয়ংক্রিয় কারখানাতে। এই রোবটগুলো বর্তমানে মানবকর্মীদের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোকে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য আলাদা করে রাখা উচিত।
রোবটিক্স টেকনোলজির উন্নয়ন আমাদের প্রতিদিনের জীবনের বাস্তবতায় সৃষ্টি করেছে হিউম্যান মেশিনের সহযোগীরূপে। উন্নততর ও সস্তাতর সেন্সর রোবটকে করেছে অধিকতর বোধক্ষম এবং পরিবেশে সাড়া দেয়ার উপযোগী। রোবট বডি হচ্ছে অধিকতর মানানসই ও নমনীয়। এ ক্ষেত্রে ডিজাইনারেরা অনুপ্রাণিত হন অতিরিক্ত নমনীয়তা ও জটিল জৈব কাঠামো থেকে, যেমন- মানুষের হাত। বর্তমানের রোবটগুলো ক্লাউড কমপিউটিং বিপ্লবের সাথে অনেক বেশি কানেকটেড হওয়ার মাধ্যমে দূর-দূরান্ত থেকে তথ্যে ও ইনস্ট্রাকশনে প্রবেশযোগ্য হয়েছে পুরোপুরি অটোনোমাস ইউনিট হিসেবে প্রোগ্রাম করার পরিবর্তে।
রোবটিক্সের এ নতুন যুগ এই মেশিনগুলোকে বড় ধরনের উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় ব্যাপক বিস্তৃত কাজে। জিপিএস টেকনোলজি ব্যবহার করে ঠিক স্মার্টফোনের মতো রোবটগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার হতে শুরু হয়েছে কৃষিক্ষেত্রে আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও ফসল কাটার কাজে। জাপানে পরীক্ষামূলকভাবে নার্সিং স্কুলে ব্যবহার হচ্ছে। এগুলো রোগীদেরকে বিছানার বাইরে সহায়তা দিয়ে থাকে এবং পক্ষাঘাতে শিকার রোগীদের সহায়তা দেয়, যাতে তাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেও নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসে। ক্ষুদ্রতর ও অধিকতর নমনীয় ডেক্সটোরাস রোবট বট, ডেক্সটার বট, বেক্সটার এবং খইজ ররধি ইত্যাদিকে ডিজাইন করা হয়েছে সহজে প্রোগ্রামযোগ্য এবং ম্যানুফেকচারিংয়ের কাজ হ্যান্ডেল করার জন্য, যেগুলো মানুষের জন্য শ্রমসাধ্য ও অসুবিধাজনক।
প্রকৃতপক্ষে রোবটগুলো কিছু কাজের জন্য আদর্শ, যেগুলো খুব বেশি পুনরাবৃত্তিমূলক বা মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং মানবকর্মীদের চেয়ে কম খরচে দিনে ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে পারে। বাস্তবতা হলো, নতুন প্রজন্মের রোবটিক্স মেশিন মানুষের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে এগুলোকে প্রতিস্থাপন না করে।
রোবটের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি হলো মানবকর্মীদের কর্মক্ষেত্র দখল করে নেয়া। যদিও অটোমেশনের আগের জেনারেশনের প্রোডাক্টিভিটি ও ক্রমোবৃদ্ধি ছিল লাভজনক। এক যুগের পুরনো ভীতি ছিল নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত রোবট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের রোবেরাটিক্স লিঙ্ক ওয়েবে থাকবে। যেহেতু সাধারণ মানুষ গৃহস্থালি কাজে রোবটকে বেশি বেশি করে কাজে লাগাবে। তাই রোবট সম্পর্কিত ভয়ভীতি কমিয়ে রোবটের ভক্ত হয়ে পড়বে সবাই। সামাজিক রোবটের ওপর নতুন গবেষণায় জানা যায়- এরা জানে মানুষের সাথে সহযোগীরূপে কাজ করা যায় এবং মানুষের সাথে মিত্র হওয়া যায়। এর অর্থ হচ্ছে ভবিষ্যতে মানুষ ও রোবট একসাথে কাজ করবে এবং প্রত্যেকে তাদের সেরা কাজটি করবে। তবে যাই হোক, পরবর্তী প্রজন্মের রোবটিক্স এক অভিনব প্রশ্নের জন্ম দেবে যে মানুষের সাথে মেশিনের সম্পর্কের।
বিকাশমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কী ঘটবে যখন কমপিউটার কাজ জানতে পারবে?
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টি আইসিটি জগতে বহুল আলোচিত ও চর্চিত এক বিষয়। সাধারণ মানুষ যেমন সব কাজ নিজের সহজাত বুদ্ধি খাটিয়ে করে থাকে, সেসব কাজ কমপিউটারের মাধ্যমে করার বিজ্ঞানকে সাধারণত আর্টিফিয়াল ইন্টেলিজেন্স বলা হয়। গত কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সে। আধুনিক তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগই স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এগুলো মানুষের বলা কথা চিনতে পারে বা ইমেজ রিকগনিশন টেকনোলজি ব্যবহার করে এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন কিউই কাজে ব্যবহার হয়। নিজে নিজে চালিত গাড়ি এবং স্বয়ংক্রিয় উড়ে চলা ড্রোন এখন ব্যাপক বিস্তৃতভাবে ব্যবহারের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে। সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে বেশ কিছু লার্নিং ও মেমরি টাস্ক সম্পন্ন হয়, যেখানে যন্ত্র মানুষের চেয়ে ভালো কাজ করছে। ওয়াটসন একটি আর্টিফিসিয়ালি ইন্টেলিজেন্ট কমপিউটার সিস্টেম। এটি সম্প্রতি এক ক্যুইজ গেম জিওপারডিতে (Jeopardy) সেরা মানব প্রার্থীকে হারিয়ে দেয়।
স্বাভাবিক হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের তুলনায় আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স একটি যন্ত্রকে বেশি করে সক্ষম করে তোলে পরিবর্তিত পরিবেশ বোঝা ও সে অনুযায়ী সাড়া দেয়ার ব্যাপারে। এআই ধাপকে আরও এগিয়ে নেয় যন্ত্র থেকে সৃষ্টি হওয়া অগ্রগতির সাথে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেখে বিপুল পরিমাণের তথ্য অঙ্গীভূত করে। এর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো নেভার এন্ডিং ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং (এনইএলএল) প্রজেক্ট। এটি কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রকল্প। মূলত একটি কমপিউটার সিস্টেম, যা শুধু লাখ লাখ ওয়েব পেজ থেকে তথ্য পাঠ করে না, বরং ভবিষ্যতে প্রসেসে আরও ভালো পারফরম্যান্সের জন্য পাঠ ও বোঝার সক্ষমতা উন্নত করতে চেষ্টা করে।
পরবর্তী প্রজন্মের রোবটিক্সের মতো উন্নত করা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রোডাক্টিভিটিকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় এগিয়ে নেবে, যেহেতু যন্ত্র দায়িত্বভার নেয় বিশেষ কিছু কাজ মানুষের চেয়ে নিখুঁতভাবে করার। সড়ক পরিবহনে স্ব-চালিত গাড়ি দুর্ঘটনা কমিয়ে দেবে। এর ফলে নিহত ও আহতের হার অনেক কমে যাবে। বাস্তবে এমন নজির প্রচুর আছে। কেননা, যন্ত্রে অন্যান্য সমস্যার মতো হিউম্যান এররের সম্ভাবনা নেই। মনোযোগে বিচ্যুতি নেই, নেই দৃষ্টিভ্রমের মতো সমস্যা। ইন্টেলিজেন্স যন্ত্র বিশাল তথ্যের ভা-ারে অনেক দ্রুত ঢুকে যেতে পারে এবং মানুষের আবেগপ্রসূত পক্ষপাতপূর্ণ আসক্তি ছাড়াই সাড়া দিতে সক্ষম হবে। অসুখ-বিসুখ চিহ্নিত করতে চিকিৎসক পেশাজীবীদের চেয়ে ভালো কাজ করতে পারবে। ওয়াটসন সিস্টেম বর্তমানে অনকোলজিতে বিস্তৃত হয়েছে যাতে ক্যান্সার রোগীদের রোগের লক্ষণ ও রোগ চিহ্নিত করাসহ চিকিৎসা সহায়তা দিতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির রয়েছে সুস্পষ্ট কিছু ঝুঁকি। কেননা, এই সুপার ইন্টেলিজেন্ট মেশিন এক সময় মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে, মানবজাতিকে পরিণত করবে ক্রীতদাসে। অবশ্য এমন ঝুঁকি এখনও কল্পিত এবং বাস্তবতার চেয়ে অনেক দূরে হলেও বিশেষজ্ঞেরা এখন থেকে তা গুরুত্বের সাথে নিতে শুরু করেছেন। অধিকতর বাস্তববতা হলো এআই অর্থনীতির পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। ইন্টেলিজেন্স কমপিউটার দিয়ে মানবকর্মীদেরকে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে সৃষ্টি করে সামাজিক অসমতা এবং বিদ্যমান পেশার জন্য এক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় ড্রোন জায়গা দখল করতে পারে বেশিরভাগ মানব চালককে এবং সেলফ ড্রাইভেন শর্ট-হায়ার স্বল্প সময়ের জন্য ভাড়া করা নিজে চালিত গাড়ি ধীরে ধীরে প্রচলিত ট্যাক্সিকেও প্রয়োজনাতিরিক্ত করে ফেলবে।
সেন্স অ্যান্ড এভয়ড ড্রোন
উড়ন্ত রোবট চেক করবে পাওয়ারলাইন বা সরবরাহ করবে জরুরি সহায়তা
চালকবিহীন অ্যারিয়েল ভেহিকল বা ড্রোন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিলিটারি ক্যাপাসিটিতে হয়ে উঠেছে এক গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত অংশ। এগুলো বর্তমানে কৃষিতেও ব্যবহার হয় ফিল্মিং এবং অন্যান্য বহুবিধ অ্যাপ্লিকেশনে, যা দরকার হয় সস্তা এবং বিস্তৃত অ্যারিয়েল সার্ভিলেন্সে। তবে যতটুকু সম্ভব এসব ড্রোনে থাকে মানব পাইলট বা চালক, তবে পার্থক্য হলো এসব ক্ষেত্রের পাইলট বা চালক থাকেন ভূমিতে এবং তাদের বিমান চালনা করেন দূর থেকে।
ড্রোন টেকনোলজির পরবর্তী ধাপ হলো এমন মেশিন ডেভেলপ করা, যা নিজে নিজেই উড়তে পারবে, আরও ব্যাপক-বিস্তৃত রেঞ্জের অ্যাপ্লিকেশনে যাবে। এ কাজগুলো যেন সম্পন্ন হয়, সেজন্য ড্রোনকে অবশ্যই স্থানীয় পরিবেশ বোঝার এবং সাড়া দেয়ার সক্ষমতা বা সেন্স থাকতে হবে। তাদের চলার পথে অন্যান্য বস্ত্তর সাথে সব ধরনের সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য উচ্চতা এবং ফ্লাইং ট্রেজেক্টরি পরিবর্তনের সক্ষম হবে। প্রকৃতিতে পাখি, মাছ এবং কীটপতঙ্গ সব একত্রে জড়ো হতে পারে, প্রতিটি প্রাণী প্রতিবেশীদের সাড়া দিতে পারে মুহূর্তের মধ্যে, যাতে কীটপতঙ্গের বা মাছের ঝাঁক একটি সিঙ্গেল ইউনিটে উড়তে বা সাঁতার কাটতে পারে। ড্রোন এ বৈশিষ্ট্যকে ছাপিয়ে যেতে চেষ্টা করছে।
বিশ্বস্ত স্বায়ত্তশাসন এবং সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার সক্ষমতার কারণে বিপদসঙ্কুল বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের তথ্য সংগ্রহ করা, ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার লাইন চেক করা, জরুরি অবস্থায় মেডিক্যাল সাপ্লাই সরবরাহের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে ড্রোন খুবই সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। ড্রোন ডেলিভারি মেশিন তাদের কাঙিক্ষত গন্তব্যের পথ খুব সহজে খুঁজে বের করতে পারে, যা অন্যান্য ফ্লাইং ভেহিকল বা উড়ন্ত যান এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতায় বেশ গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেয়া হয়। কৃষি ক্ষেত্রে অটোনোমাস তথা স্বায়ত্তশাসিত ড্রোন আকাশ থেকে বিপুল পরিমাণের জমির ভিজ্যুয়াল ডাটা সংগ্রহ করে প্রসেস করে যথাযথ এবং কার্যকরভাবে সার ও কৃষিকাজে ব্যবহার করার জন্য।
ইন্টেল ও অ্যাসেন্ডিং টেকনোলজি ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রদর্শন করে এক প্রোটোটাইপ মাল্টি-কপ্টার ড্রোন, যা নেভিগেট করতে পারে বাধাসমূহ এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে জনগণকে এড়িয়ে যেতে পারে। এ মেশিনে ব্যবহার হয় ইন্টেলের তৈরি রিয়েলসেন্স ক্যামেরা মডিউল, যার ওজন মাত্র ৪ গ্রাম এবং পুরুত্ব ৪ মিমির চেয়ে কম। ড্রোন অপরিহার্যভাবে টু ডাইমেনশনের পরিবর্তে থ্রি ডাইমেনশন অপারেটিং রোবট। রোবটিক্সের এ অগ্রযাত্রার প্রবণতা পরবর্তী প্রজন্মের রোবটিক্সের আগমনকে ত্বরান্বিত করবে।
লক্ষণীয়, উড়ন্ত যান কখনই ঝুঁকিমুক্ত হতে পারে না, হোক না সেগুলো মানুষ বা ইন্টেলিজেন্ট মেশিনের মাধ্যমে পরিচালিত। ড্রোনকে অবশ্যই সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতিতে অপারেট করতে হবে বিশ্বস্ততার সাথে।
ডিজিটাল জেনম
যুগের স্বাস্থ্যসেবা, যখন জেনেটিক কোড আপনার ইউএসবি স্টিকে থাকবে
৩২০ কোটি ডিএনএ’র বেজ পেয়ারের প্রথম অনুবর্তিতা মানব জেনম তৈরি করতে কয়েক বছর সময় নয় এবং খরচ হয় ১০০ কোটি ডলার। এখন আপনার জেনম অনুবর্তিত ও ডিজিটাইজ হতে পারে মিনিটে এবং তা মাত্র কয়েক ডলার খরচে। এ ফলাফলকে আপনার ল্যাপটপে ইউএবি স্টিকে ডেলিভার করা যাবে এবং খুব সহজে ইন্টারনেটের মাধ্যমে শেয়ার করা যাবে। এ সক্ষমতা দ্রুততার সাথে এবং সস্তায় নির্দিষ্ট করতে পারে আমাদের স্বতন্ত্র ইউনিক জেনেটিক গঠন, প্রতিশ্রম্নতি দেয় অধিকতর পার্সোনালাইজ ও কার্যকর হেলথ কেয়ার।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই রয়েছে একগুঁয়ে জেনেটিক কম্পোনেন্ট হৃদরোগ থেকে ক্যান্সার পর্যন্ত হেলথ চ্যালেঞ্জে। প্রকৃতপক্ষে ক্যান্সার হলো সেরা জেনম ডিজিজের উদাহরণ। ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে ডাক্তার রোগীর ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন টিউমারের জেনেটিক গঠনের তথ্যের মাধ্যমে। এই নতুন জ্ঞান অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে চিকিৎসা খাতের উন্নয়নের লক্ষণ বহন করে, বিশেষ করে রোগীদের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা দেয়। সব পার্সোনাল তথ্যের মতো, এক ব্যক্তির ডিজিটাল জেনমের সেইফগার্ড দরকার প্রাইভেসির কারণে
রিসাইকেলযোগ্য থার্মোসেট প্লাস্টিক
ল্যান্ডফিল ওয়েস্ট কমানোর জন্য নতুন ধরনের প্লাস্টিক
প্লাস্টিক সাধারণত থার্মোপ্লাস্টিক ও থার্মোসেট প্লাস্টিক- এই দুই শ্রেণীর। থার্মোপ্লাস্টিককে গরম করা যায় ও নানা আকার দেয়া যায় এবং আধুনিক বিশ্বে এটি সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাচ্চাদের খেলনা থেকে শুরু করে গোসলখানা পর্যন্ত সবকিছুই। কেননা, এগুলো গলিয়ে নতুন আকার দেয়া যায়। অর্থাৎ থার্মোপ্লাস্টিক রিসাইকেলযোগ্য। পক্ষান্তরে থার্মোসেট প্লাস্টিক শুধু গরম করা যায় এবং একবারই নতুন আকার দেয়া যায়। এরপর মলিক্যুলারের পরিবর্তন বলতে বোঝায়, এগুলো তাদের আকার ধরে রাখে। থার্মোসেট প্লাস্টিক তাদের আকার ও শক্তি ধরে রাখে, এমনকি প্রচ- তাপে ও চাপে।
এই স্থায়িত্বে থার্মোসেট প্লাস্টিক আধুনিক বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি মোবাইল ফোন, সার্কিট বোর্ড থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ ইত্যাদি সবকিছুতে ব্যবহার হয়। থার্মোসেট প্লাস্টিকের এই বৈশিষ্ট্যই আধুনিক ম্যানুফেকচারিংয়ে এগুলোকে অপরিহার্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং সেই সাথে এগুলোকে রিসাইকেল করাও অসম্ভব করে ফেলেছে। এর ফলে বেশিরভাগ থার্মোসেট পলিমার প্রতিকূল অবস্থায়ও ল্যান্ডফিল হিসেবে টিকে থাকে।
এ ক্ষেত্রে ২০১৪ সালে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি পরিলক্ষেত হয়। নতুন শ্রেণীর থার্মোসেটিং পলিমার আবিষ্কারের ঘোষণা প্রথম প্রকাশিত হয় ‘সায়েন্স’ জার্নালে, যা রিসাইকেলযোগ্য। পলি হেক্সাহাইড্রোট্রায়োজিন বা পিএইচটি শক্তিশালী অ্যাসিডে দ্রবীভূত হয়, পলিমার চেইনকে ভেঙে মনোমার কম্পোনেন্টে পরিণত করে, যা একত্রিত করতে পারে নতুন পণ্যে। সম্ভাব্য একই অ্যাপ্লিকেশনে এদের অগ্রদূত আনরিসাইকেলে যেতে গতানুগতিক আনরিসাইকেলেবেল থার্মোসেটে এই নতুন স্ট্রাকচার কঠোর তাপ প্রতিরোধক ও কঠিন। যদিও কোনো রিসাইকেলই শতভাগ দক্ষ নয়। এই উদ্ভাবন যদি ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটে, তাহলে?
ডিস্ট্রিবিউটেড ম্যানুফ্যাকচারিং
ভবিষ্যতের কারখানা হবে অনলাইনভিত্তিক ও থাকবে মানুষের দোরগোড়ায়
আমরা যেভাবে পণ্য তৈরি ও পরিবেশন করি ডিস্ট্রিবিউটেড ম্যানুফ্যাকচারিং সেদিকে দ্রুতবেগে ধাবিত হবে। গতানুগতিক বৃহদাকার উৎপাদনে অরূপান্তরিত উপাদানকে একত্রে আনা হয়, কেন্দ্রীভূত কারখানাতে সংযোজিত ও সজ্জিত করা হয় এবং একটি একই ধরনের পণ্যে পরিণত করা হয়। এরপর সেগুলোকে গ্রাহকের কাছে পরিবেশন করা হয়। ডিস্ট্রিবিউটেড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে অরূপান্তরিত উপাদান এবং ফেব্রিকেশনের প্রক্রিয়া বিকেন্দ্রীকরণ করা হয় এবং চূড়ান্ত পণ্য প্রস্ত্তত হয়, যা চূড়ান্ত গ্রাহকের খুব কাছাকাছি।
ডিস্ট্রিবিউটেড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের বর্তমান ব্যবহার ব্যাপকভাবে নির্ভর করে উওণ ‘সধশবৎ সড়াবসবহঃ’-এর ওপর, যেখানে আগ্রহীরা ব্যবহার করেন তাদের নিজস্ব লোকাল থ্রিডি প্রিন্টার ও স্থানীয় উপাদান থেকে তৈরি পণ্য। ওপেন সোর্স চিন্তাভাবনায় এ ধরনের কিছু উপাদান আছে যেখানে ভোক্তাসাধারণ তাদের প্রয়োজন এবং পছন্দানুযায়ী পণ্যগুলোকে কাস্টোমাইজ করতে পারবে। এখানে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করার পরিবর্তে সৃজনশীল ডিজাইনের উপাদান অধিকতর ক্রাউডসোর্স করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে পণ্য হতে পারে অধিকতর বিবর্তনমূলক বৈশিষ্ট্যের, যেহেতু ভিজ্যুয়ালাইজেশনে প্রচুর লোক নিয়োজিত এবং সেগুলো তৈরি করছে।
ডিস্ট্রিবিউটেড ম্যানুফ্যাকচারিং প্রত্যাশা করছে রিসোর্সের ব্যবহার অধিকতর কার্যকরভাবে সক্রিয় হবে, সেন্ট্রালাইজ ফ্যাক্টরিতে ওয়েস্টেড ক্যাপাসিটি কম হবে। প্রথম প্রটোটাইপ এবং পণ্য তৈরি করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, তা কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে মার্কেট এন্ট্রিতে ব্যাটারির খরচ কমিয়ে দেয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে পরিবেশের ওপর সার্বিকভাবে প্রভাব কম পড়ে। ডিজিটাল তথ্য, ফিজিক্যাল পণ্যের মতো স্থল, নৌ বা আকাশপথে সরবরাহ না হয়ে ওয়েবের মাধ্যমে শিপ হয় এবং মধ্যবর্তী উপাদান স্থানীয়ভাবে সোর্স করা হয়। এর ফলে পরিবহনের প্রয়োজনীয় জ্বালানি বা শক্তির ব্যবহার কম হবে।
যদি এটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে, তাহলে ডিস্ট্রিবিউটেড ম্যানুফ্যাকচারিং চূর্ণ-বিচূর্ণ করবে গতানুগতিক শ্রমবাজার এবং অর্থনীতিকে। এতে যথেষ্ট ঝুঁকি আছে। এটি হয়তো দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। যেমন, মেডিক্যাল ডিভাইস। পক্ষান্তরে অস্ত্রের মতো পণ্য হতে পারে অবৈধ ও মারাত্মক। সুতরাং, ডিস্ট্রিবিউটেড ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের মাধ্যমে সবকিছুই তৈরি করা যাবে না এবং গতানুগতিক ম্যানুফ্যাকচারিং ও সাপ্লাই চেইন এখনও কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল কনজ্যুমার পণ্যের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
নিউরোমরফিক টেকনোলজি
কমপিউটার চিপ, যা হিউম্যান ব্রেনের মতো আচরণ করে
বলা হয়, বিশ্বের যেকোনো ধরনের জটিল গাণিতিক সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় আধুনিক সুপার কমপিউটারে। এ সুপার কমপিউটারও উন্মোচন করতে পারে না মানব মসিত্মষ্কের জটিল রহস্য। অর্জন করতে পারেনি হিউম্যান ব্রেনের সোফিস্টিকেশন। কমপিউটার হলো লিনিয়ার, ডাটা মেমরি চিপ এবং সেন্ট্রাল প্রসেসের মাঝে হাইস্পিড ব্যাকবোনে সামনে-পেছনে মুভ করে। পক্ষান্তরে ব্রেন সম্পূর্ণরূপে ইন্টারকানেকটেড থাকে কোটি কোটি গুণ বেশি নিবিড়ভাবে লজিক এবং অভ্যন্তরীণভাবে মেমরি ক্রস লিঙ্ক দিয়ে। এর ফলে আধুনিক এ কমপিউটারে পাওয়া যায় ডাইভারসিটি বা ভিন্নতা। নিউরোমরফিক চিপের লক্ষ গতানুগতিক হার্ডওয়্যার থেকে মৌলিকভাবে একটি ভিন্ন উপায়ে তথ্য প্রসেস করা, ব্রেনের আর্কিটেকচারের মতো অনুকরণ করে যাতে ডেলিভার করতে পারে কমপিউটারের চিন্তা ও সাড়া দেয়ার ক্ষমতার।
বছরের পর বছর ধরে গতানুগতিক কমপিউটিং ক্ষমতা ক্ষুদ্রকায় ডেলিভার করছে অনেক বেশি। তবে এ ক্ষেত্রে অচলাবস্থা হলো অবিরতভাবে স্টোর করা মেমরি এবং সেন্ট্রাল প্রসেসরের মাঝে ডাটা শিফটিংয়ের মাঝে। কেননা, প্রসেসর ব্যবহার করে প্রচুর জ্বালানি। সৃষ্টি করে অনাকাঙিক্ষত তাপ, যা উন্নয়নকে আরও সীমিত করে। পক্ষান্তরে, নিউরোমরফিক চিপ হতে পারে আরও অনেক বেশি জ্বালানিসাশ্রয়ী ও শক্তিশালী। এখানে ডাটা স্টোরেজ ও ডাটা প্রসেসিং কম্পোনেন্টকে কম্বাইন তথা যুক্ত করা হয়েছে একই ইন্টারকানেক্টেড মডিউলের ভেতরে। এই বোধশক্তিতে সিস্টেম কপি করে নেটওয়ার্ক করা নিউরন যাদের কোটি কোটি সংগ্রহই মানব মসিত্মষ্ক।
নিউরোমরফিক টেকনোলজি হবে পরবর্তী শক্তিশালী কমপিউটিং ধাপ, যা আরও অনেক দ্রুতগতিতে ডাটা প্রসেসিংকে কার্যকর করবে এবং মেশিন লার্নিং ক্যাপাসিটি বাড়াবে। আইবিএমের মিলিয়ন-নিউরন ট্রুনর্থ (TrueNorth) চিপ আগস্ট ২০১৪-এ আদিরূপে তথা প্রোটোটাইপে উন্মোচিত হয়। এর রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট কাজে পাওয়ার ইফেসিয়েন্সি, যা গতানুগতিক সিপিইউ পাওয়ারের চেয়ে শতগুণ ভালো এবং প্রথমবারের মতো হিউম্যান করটেক্সের সাথে অনেক বেশি তুলনা করার যোগ্য। নিউরোমরফিক চিপ অনুমোদন করে অধিকতর ইন্টেলিজেন্ট স্মল-স্কেল মেশিন, যা চালনা করবে পরবর্তী ধাপের ছোট আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স। এটি হবে অনেক কম বিদ্যুৎশক্তি ও ভলিউমের অধিকতর কমপিউট ক্ষমতার মেশিন।