• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > গণিত জানব প্রযুক্তির প্রয়োজনে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
গণিত
তথ্যসূত্র:
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
গণিত জানব প্রযুক্তির প্রয়োজনে
২০১২ সালে যুক্তরাজ্য সরকার চিহ্নিত করে ‘এইট গ্রেট টেকনোলজিস’, যে প্রযুক্তিগুলোতে যুক্তরাজ্য সরকার বিশ্বনেতৃত্বের স্থান দখল করার প্রত্যাশা করে। এই আটটি উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তির কথা প্রকাশ করা হয় সাবেক বিজ্ঞানমন্ত্রী ড্যাভিড উইলেটসের এক ভাষণে। এই ভাষণসূত্রে তৈরি হয় একটি ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্র্যাটেজি রিপোর্ট’ এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় এ সম্পর্কিত নানা কর্মকা--র কথা।
তখন লক্ষ করা যায়, উইলেটসের বক্তব্য, উল্লিখিত রিপোর্ট ও গৃহীত নানা কর্মকা-- গণিতের ভূমিকা সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র। এ থেকে এই আভাস মিলে, গণিত বিষয়টি এখনও এর ইমেজ প্রবলেমে ভুগছে। এখনও অনেকে গণিতকে ব্যাপকভাবে মনে করেন, আধুনিক জগতে গণিত একটি অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বিষয়। তবে এ ধারণা যে প্রকৃত অর্থে সত্য থেকে যোজন যোজন দূরে, তা সব ফলিত গণিতবিদ তথা অ্যাপ্লায়েড মেথমেথিশিয়ানেরা জানেন। নিশ্চিতভাবেই প্রায় সব আধুনিক প্রযুক্তির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে গণিতের স্থান। একইভাবে শিল্প ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দুতের আছে গণিতের স্থান।
এ লেখায় প্রয়াস পাব এটুকু তুলে ধরতে, কী করে আটটি বড় মাপের প্রযুক্তির জন্য গণিত এক অপরিহার্য বিষয়। এগুলো কীভাবে গণিতের সাথে সংশ্লিষ্ট। তবে জটিল গাণিতিক বিষয়গুলো এ লেখায় সাধারণ পাঠকদের সহজবোধ্য হবে না বলে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার প্রয়াস থাকবে। এ কথাও জোর দিয়ে বলা যায়, এই আটটি প্রযুক্তি হচ্ছে ‘গ্রেট মেথমেথিক্যাল টেকনোলজি’। আর এগুলো বিশুদ্ধ গণিতকে অনেকদূর এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। এই আটটি প্রযুক্তি হচ্ছে- ০১. বিগ ডাটা, ০২. স্যাটেলাইট ও স্পেস টেকনোলজি, ০৩. রোবটিকস ও অটোনোমাস সিস্টেম, ০৪. জেনোমিকস ও সিনথেটিক বায়োলজি, ০৫. রিজেনারেটিভ মেডিসিন, ০৬. অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্স, ০৭. অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়েল ও ০৮. এনার্জি ও এর স্টোরেজ।
অতি সম্প্রতি কোয়ান্টামভিত্তিক প্রযুক্তি এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তবে সে বিষয়ে আলোচনায় এ লেখায় যাব না। অতএব আলোকপাত করা যাক উল্লিখিত আটটি প্রযুক্তির সাথে গণিতের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ে।
বিগ ডাটা
আমরা যেসব বড় বড় চালেঞ্জের মুখোমুখি, এর মধ্যে একটি হচ্ছে বিগ ডাটার চালেঞ্জ। অনেকেরই বিশ্বাস, বিগ ডাটার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে উল্লিখিত আটটি প্রযুক্তির ওপর। এর কারণ খুবই সরল। আমরা এখন বসবাস করছি ইনফরমেশন এজ বা তথ্যযুগে। আমরা আজকের দিনে যা করি এর বেশিরভাগের ওপর রয়েছে আমাদের বিপুল পরিমাণ তথ্যে প্রবেশের মাধ্যমে। এসব তথ্য আমরা পেতে পারি ইন্টারনেট, কমপিউটার কিংবা মোবাইল ফোন থেকে। এ ধরনের বিপুল পরিমাণ ডাটায় প্রবেশের ফলে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের প্রাযুক্তিক ও নৈতিক সমস্যার। প্রথম সমস্যার সমাধানে আমাদের সহায়তা করতে পারে গণিত। আর দ্বিতীয় সমস্যাটি সম্পর্কে আমাদের সবার সচেতন থাকা অপরিহার্য।
এই সময়ে বিদ্যমান অনেক গাণিতিক কৌশল বিগ ডাটার বিষয়টি আরও ভালো করে জানা-বোঝার জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে প্রয়োগ হতে পারে। এর একটি মুখ্য উদাহরণ হলো ‘নেটওয়ার্ক থিওরির গণিত’। এটি প্রয়োগ করা যাবে সব ধরনের নেটওয়ার্কে। এই নেটওয়ার্ক হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক, যেমন- ফেসবুক ও টুইটার। হতে পারে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক, ট্র্যান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক, ইউটিলিটি নেটওয়ার্ক, এমনকি আমাদের মস্তিষ্কের নেটওয়ার্কও। নেটওয়ার্ক থিওরি ব্যাখ্যা করে একটি নেটওয়ার্কে থাকা অবজেক্টগুলোর মধ্যকার সংযোগকে। এটি আমাদের সুযোগ করে দেয় ডাটাগুলোর মাঝের কানেকশন সার্চ করার। একে বর্ণনা করা যায় নেটওয়ার্কের ভেতরে ইনফরমেশনের চলাচল হিসেবে। আমাদের দুনিয়াটা নেটওয়ার্ক আর নেটওয়ার্কে পরিপূর্ণ। এই নেটওয়ার্কে পরিপূর্ণ দুনিয়াকে জানা-বোঝার জন্য গাণিতিক কৌশলগুলো অপরিহার্য।
নেটওয়ার্ক সবখানে। নেটওয়ার্ক থিওরিতে বস্ত্তকে বর্ণনা করা হয় নোড (node) নামে, আর এগুলো যার মাধ্যমে একসাথে সংযুক্ত সেগুলোকে বলা হয় এজ (edge)। নোডগুলো হতে পারে কমপিউটার বা ওয়েবসাইট। আর এজগুলো সংযোগ গড়ে তোলে কমপিউটারগুলোর মধ্যে, কিংবা ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে। এই নোড হতে পারে মানুষও। আর তাদের কানেকশন গড়ে উঠতে পারে ফেসবুক বা টুইটারের বন্ধুদের মাঝে। নোড হতে পারে মোবাইল হ্যান্ডসেটও, আর এদের কানেকশন সৃষ্টি হতে পারে এদের কথোপকথনের মাধ্যমেও। নেটওয়ার্ক ব্যাখ্যা দেয় নেটওয়ার্কের প্রকৃতি সম্পর্কে। আর এটি আমাদের সুযোগ করে দেয় ডাটাসেটের ইন্ডিভিজ্যুয়াল পয়েন্টের মধ্যে কানেকশন সার্চ করার।
নেটওয়ার্ক থিওরি বিগ ডাটা সম্পর্কিত অনেক প্রশ্নের সমাধান দিতে পারে। যখন আপনি অনেক বড় নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করবেন, তখন ক্লাশ্চার চিহ্নিত করার কাজটি সব সময় সহজ হবে না। ক্লাশ্চার হচ্ছে একদল নোড, যেগুলো পরস্পর সংযুক্ত। কিংবা চিহ্নিত করা সহজ হবে না একই ধরনের বৈশিষ্ট্যের ডাটা সেগমেন্টগুলোর গ্রুপগুলোকে। ডাটা মাইনিং ও প্যাটার্ন রিকগনিশনে এ কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে এটি প্রাসঙ্গিক রিটেইল ইন্ডাস্ট্রিতে, যারা তাদের গ্রাহকদের আচরণ ও প্রবণতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। সামাজিক নেটওয়ার্কে ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপিং চিহ্নিত করার কাজেও এটি ব্যবহার হয়। এমনকি এটি ইউরোভিশন সং কনটেস্টে ব্যবহার হয় ভোটিং পাটার্ন চিহ্নিত করার কাজেও। নেটওয়ার্ক থিওরি সুযোগ করে দেয় ক্লাশ্চার ও সেগমেন্ট ডাটা চিহ্নিত করার আলগরিদমের।
.নেটওয়ার্ক থিওরি হচ্ছে গণিতের নানা কৌশলের একটি, যেটি বিগ ডাটা স্টাডির কাজে ব্যবহার হয়। বিগ ডাটার অনেকটা ইমেজের আকার ধারণ করে। অতএব যেসব গাণিতিক অ্যালগরিদম শ্রেণি বিভাজন, ব্যাখ্যা, বিশেস্নষণ ও ইমেজ সঙ্কোচন করে, সেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমেজ বিশেস্নষণ ও ব্যাখ্যায় পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি দীর্ঘকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি নোভেল মেথমেথিক্যাল অ্যালগরিদম উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে। এর আগে মানুষ ভাবত বাস্তব জগতে বিশুদ্ধ গণিতের তেমন কোনো প্রয়োগ নেই। এসব অ্যালগরিদম বেশকিছু জটিল সমীকরণভিত্তিক। এগুলো সমীকরণের তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত। এ ছাড়া বিগ ডাটায় গণিতের অনেক জটিল প্রয়োগ রয়েছে, যা সাধারণ পাঠকের জন্য অনুধাবন করা অনেকটা মুশকিল।
স্যাটেলাইট ও মহাকাশ
বিগ ডাটা নিয়ে কাজ করার পদ্ধতির স্বাভাবিক প্রয়োগ রয়েছে স্যাটেলাইট ও স্পেস টেকনোলজিতে। ডাটা বিপ্লবের প্রথম দিককার একটি বিজয় ছিল ১৯৭০-এর দশকে দূরবর্তী গ্রহ থেকে পৃথিবীতে কোনো ত্রুটি ছাড়াই ছবি পাঠানোর ক্ষেত্রে ‘মেথমেথিক্যাল এরর কারেকটিং কোড’ ব্যবহার করা। স্যাটেলাইটগুলো এখন অধিক থেকে অধিক পরিমাণে ইনফরমেশন পাঠাচ্ছে আমাদের পৃথিবীতে। এ অবস্থায় আমাদের প্রয়োজন আরও অভিজাত ধরনের গাণিতিক অ্যালগরিদম, যাতে ইনফরমেশন যথার্থ সঠিক ও নিরাপদ রাখা যায়। এই প্রয়াসের মাধ্যমে গাণিতিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।
স্যাটেলাইট সিস্টেমের ডিনামিকস তথা গতিবিধি বোঝা ও নিয়ন্ত্রণেও গণিত বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে। অনেক বেশি দূরত্বে অবস্থান করা স্যাটেলাইটের কক্ষপথ সম্পর্কিত যেসব জটিল হিসাব-নিকাশ পৃথিবীতে পাঠানো হয়, তা বোঝার জন্য প্রয়োজন গণিতের। সৌর ব্যবস্থার জটিল হিসাব-নিকাশেও প্রয়োজন গণিতের ব্যবহার। জটিল হিসাব-নিকাশেও চাই গণিতের সহায়তা। এ জন্য প্রয়োজন হয় ব্যবকলন সমীকরণ তথা ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন সমাধানের। জিপিএস নেভিগেশনের কাজে যেসব স্যাটেলাইট ব্যবহার হয়, সেগুলোর কক্ষপথ নির্ধারণের জন্য গাণিতিক হিসাব-নিকাশ কাজে লাগাতে হয়।
সম্প্রতি বিশ্বের মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখতে পাচ্ছে নাসার পাথ ফাইন্ডার মিশন সূত্রে পাওয়া মঙ্গলগ্রহ থেকে পাঠানো ছবি ও বৈজ্ঞানিক ডাটা। কয়েক দশক ধরেই অন্যান্য গ্রহ থেকেও পাঠানো ছবি ও ডাটা পেয়ে আসছি। যদিও এসব গ্রহে পাঠানো মহাকাশযানগুলোর রেডিও ট্রান্সমিটারের পাওয়ার মাত্র সামান্য কয়েক ওয়াট, যার সাথে তুলনা করা যায় ইলেকট্রিক ডিমলাইট বাল্বের পাওয়ারের সাথে। কী করে এসব ইনফরমেশন নির্ভরযোগ্যভাবে লাখ লাখ মাইল দূর থেকে আমাদের পৃথিবীতে পাঠানো হচ্ছে?
অনেক বিষয়ের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আমরা বিভিন্ন গ্রহ থেকে পাঠানো সিগন্যালগুলো পুনরুদ্ধার করে এই তথ্য ও ছবি পেতে সফল হয়েছি। এসব বিষয়ের মধ্যে আছে- ইলেকট্রনিক, ইঞ্জিনিয়ারিং, কমপিউটিং ও গণিত। কোডিং থিওরি হচ্ছে গণিতের একটি শাখা। এটি সংশ্লিষ্ট নয়েজি চ্যানেলের মাধ্যমে ডাটা ট্র্যান্সমিশন ও মেসেজ রিকভারির কাজের সাথে। কোডিং থিওরি মেসেজ পাঠকে সহজতর করে তোলে। এটি ক্রিপটোগ্রাফির বিপরীত, যা মেসেজের পাঠকে কঠিন করে তোলে।
ধরে নিই, আমাদের মেসেজটি হচ্ছে বাইনারি ডিজিট বা বিটস আকারের, ০ ও ১-এর কতগুলো স্ট্রিং। আমরা এই বিটস একটি চ্যানেলের মধ্য দিয়ে সঞ্চালন করতে চাই (টেলিফোন লাইনের মতো), যেখানে এলোপাতাড়ি ত্রুটি সংঘটিত হয় একটি প্রিডিকটেবল ওভারঅল রেটে। এই এররের ক্ষতি পোষাতে আমাদেরকে মূল মেসেজের চেয়ে বেশি হারে বিটস সঞ্চালন করতে হবে।.
বাইনারি ডাটায় ডাটা নির্ধারণের সবচেয়ে সরল পদ্ধতি হচ্ছে ‘প্যারিটি কোড’, যা মূল মেসেজ থেকে পাঠায় প্রতি ৭ বিটের পরপর একটি এক্সটা ‘প্যারিটি’ বিট। তা সত্ত্বেও এই পদ্ধতি শুধু এরর ধরতে পারে। এগুলো কারেক্ট করার একমাত্র উপায় হচ্ছে ডাটা আবার সঞ্চালন করতে চাওয়া। এরর ডিটেক্ট ও কারেক্ট করার সহজ উপায় হচ্ছে কয়েকবার প্রতিটি বিট রিপিট করা। গ্রাহক দেখতে পায় কোন ভ্যালু আবির্ভাব হয় অধিকতর বেশি এবং ধরে নেয় এটিই প্রত্যাশিত বিট। এই পরিকল্পনা বা স্কিমে মেনে নিতে পারে সঞ্চালিত ২ বিটের মধ্যে ১টি বিটের এরর রেট। এই রিপিটেশন স্কিমে বিট সঞ্চালন সংক্রান্ত একটি অসুবিধা ছিল। ১৯৪৮ সালে ক্লডি শ্যানন যুক্তরাষ্ট্রের বেল ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় কোড থিওরি পুরো বিষয় উন্মোচন করেন। তিনি দেখান, মেসেজ এনকোড করার সময় সঞ্চালন বিটের সংখ্যা যথাসম্ভব কমিয়ে আনা সম্ভব। দুর্ভাগ্য, তিনি তার প্রমাণে এসব ঐচ্ছিক কোডের জন্য কোনো সুস্পষ্ট রেসিপি দেননি। আরও কয়েক বছর পরে এই বেল ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় রিচার্ড হ্যামিং গবেষণা শুরু করেন সুস্পষ্ট এরর কারেক্টিং কোড নিয়ে। তার প্রথম প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয় এমন একটি কোড, যেখানে চার ডাটা বিট অনুসরণ করা হয় তিনটি চেক বিটের মাধ্যমে। এর ফলে সুযোগ সৃষ্টি হয় এরর ডিটেকশন ও কারেকশনের। রিপিটেশন কোডে তা অর্জন করতে প্রয়োজন হতো নাইন চেক বিট।
ইনফরমেশন সঞ্চালনের জন্য এরর-কারেক্টিং কোডগুলোর ভ্যালু পৃথিবীতে ও মহাকাশ থেকে এর পরই স্পষ্ট হয়ে উঠল এবং তখন নানা ধরনের কোড গঠন করা হলো, যেগুলোর রয়েছে এরর ডিটেক্টিং ও কারেক্টিং সক্ষমতাসহ অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী গুণ। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত নাসা ম্যারিনার প্রোব ব্যবহার করে শক্তিশালী জববফ-গঁষষবৎ কোড, যা সঞ্চালিত ৩২ বিটের মধ্যে কারেক্ট করে ৭টি এরর। কমপ্যাক্ট ডিস্ক এ কাজটিকে আরও সহজ করে তোলে।
গত দুই বছরে সুস্পষ্ট কোড পাওয়ার লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন হয় বিশুদ্ধ গণিতের নানা শাখার জ্ঞান। এ ক্ষেত্রে লিনিয়ার অ্যালজাবরা, থিওরি অব ফিল্ডস ও অ্যালজাবরিক জিওমেট্রি প্রভূত অবদান রাখে। কোডিং থিওরি শুধু গণিতের বাইরের জগতের সমস্যা সমাধানে অতি গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটি গণিতের অনেক শাখাকে সমৃদ্ধ করেছে। এটি নতুন নতুন সমস্যার নতুন নতুন সমাধান এনে দিয়েছে।
রোবটিকস ও অটোনোমাস সিস্টেম
একই ধরনের নিউমারিকাল মেথড বা সাংখ্যিক পদ্ধতি ব্যবহার হয় রোবটিক সিস্টেমের চলাচল সিমুলেট নিয়ন্ত্রণ করার কাজে। আর বড় মাপের টেকনোলজির মধ্যে এই রোবটিকস ও অটোনোমাস টেকনোলজির অবস্থান তৃতীয় স্থানে। রোবটিকসে গণিতে আরও যেসব ব্যবহার রয়েছে, তার মধ্যে আছে- মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম, প্যাটার্ন রিকগনিশন টেকনিক, নিউরাল নেটওয়ার্ক (সিম্পল নার্ভাস সিস্টেমের আর্টিফিসিয়াল ইমিটেশন) ও কমপিউটার ভিশন।
জেনোমিকস ও সিনথেটিক বায়োলজি
বিগ ডাটা এবং জেনোমিকস ও সিনেথেটিক বায়োলজির মধ্যে একটা স্বাভাবিক সংযোগ রয়েছে। বিশেষ করে এই প্রযুক্তি নির্ভরশীল হচ্ছে কী করে জ্বিন ও প্রোটিন আন্ত:ক্রিয়া সম্পন্ন করে, তা বোঝার ওপর। এটি জানা যাবে নেটওয়ার্ক থিওরি বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে এই নেটওয়ার্কের নোড বা সংযোগস্থলগুলো হচ্ছে জ্বিন বা প্রোটিনগুলো, যা নিয়ন্ত্রণ করে সুনির্দিষ্ট ফেনোটাইপ।
জেনোম এমন একটি সিকুয়েন্স, যা উপস্থাপন করা হয় ৩ী ১০৯ সংখ্যক বেজ দিয়ে। এটি অ, ঈ, এ ও ঞ-এর একটি সিকুয়েন্স, যাতে আছে ৩,০০০,০০০,০০০টি ডিজিট। এ ধরনের সুদীর্ঘ সংখ্যা দিয়ে জেনোম সিকুয়েন্সিংয়ের জটিল অর্গানিজম বায়োকেমিস্ট্রির জন্য একটি চ্যালেঞ্জই বটে। এটি একটি দিবাস্বপ্নও। গণিতের সিকুয়েন্সিং টেকনিক ডিএনএ’র সিকুয়েন্স করতে পারে ১০০০ বেস দীর্ঘ সিকুয়েন্সের। এর চেয়ে আরও দীর্ঘ বেজের সিকুয়েন্স নিয়ে কাজ করতে আপনাকে এগুলোকে টুকরো টুকরো করে ভাগ করে নিতে হবে এবং তা আবার পুনঃসংযোজন করতে হবে। এভাবে শত শত, হাজার হাজার জটিল ধাঁধা সমাধানের মতোই জটিল কাজ। এই সমসা সমাধানের জন্য কিছু নন-মিলিটারি কমপিউটার তৈরি করা হয়েছে। গণিতই এখানে সহায়ক ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে এসেছে।
রিজেনারেটিভ মেডিসিন
রিজেনারেটিভ মেডিসিন সংশ্লিষ্ট টিস্যু ইঞ্জনিয়ারিং ও মলিকুলার বায়োলজির সেইসব বিষয়ের সাথে, যেগুলোর ক্ষেত্রে মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনে মানবকোষ, টিস্যু বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিস্থাপন করতে হয়। এ সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে মেথমেথিক্যাল মডেলিং এবং বিশেষত এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে আদর্শ মানের নমনীয় বস্ত্ত তৈরির (দেখুন অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়ালের আলোচনাংশ) ক্ষেত্রে। অবশ্য মেডিসিনের ক্ষেত্রে গণিতের আরও বেশ কিছু প্রয়োগ রয়েছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মেডিক্যাল স্ট্যাটিস্টিকস (যার গভীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বিগ ডাটার সাথে), মডেলিং ও ক্যান্সার সারানোসহ মেডিক্যাল ইমেজিং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমসা সমাধানের বিষয়ও।
গণিত কি সত্যি সত্যিই আপনার জীবন রক্ষায় সহায়ক হতে পারে? অবশ্যই তা পারে। গণিত এমন অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে, যা মানুষকে সুস্থ ও সুখী রাখার জন্য সহায়ক। আমাদের জীবন রক্ষায় মেথমেটিকস অব টমোগ্রাফি গণিতের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ইমেজিং মেথডের ওপর, যার সূচনা ঘটেছিল বিশ্ব শতাব্দীর প্রথম পাদের এক্স-রে দিয়ে।
অপরিহার্যভাবে এসব ইমেজিং মেথড দুই ধরনের। এক্স-রে ও আল্ট্রা সাউন্ড মেথড ব্যবহার করে বিকিরণ উৎস, যা থাকে শরীরের বাইরে। রেডিয়েশন শরীরের ভেতর দিয়ে পাঠিয়ে তা ধারণ করা হয়। যখন এক্স-রে ব্যবহার করা হয়, তখন এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘কমপিউটারাইজড আক্সিয়েল টমোগ্রাফি’ বা সংক্ষেপে সিএটি। টমোগ্রাফি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘টমোস’ থেকে, যার অর্থ ‘কাট’ বা ‘সস্নাইস’।
অন্যান্য ইমেজিং মেথডে ব্যবহার হয় শরীরের ভেতরের উৎসে। এর মধ্যে আছে ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমের্জিং (এমআরআই), পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি (পিইটি) ও সিঙ্গল ফোটন ইমিশন কমপিউটেড টমোগ্রাফি (এসপিইসিটি)। এসব মেথডে সিএটি’র চেয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে নিরাপত্তা ও ইমেজ রেজ্যুলেশন, এই উভয় ক্ষেত্রেই। কারণ, এক্স-রে করার সময় কিছু কোমল টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। টমোগ্রাফির পেছনে মৌল গণিতটির উদঘাটন করেন গণিতবিদ জোহান রেডন ১৯১৭ সালে। এর আরও অনেক পরে ১৯৬০-এর দশকে অ্যালান মেকলিওড কোনাক যৌথভাবে গডফ্রে নিউবল্ড হাউন্সফিল্ডের সাথে কাজ করে উদ্ভাবন করেন প্রথম বাস্তব স্ক্যানিং ডিভাইস। এর নাম এইমআই স্ক্যানার। এই অবদানের জন্য কোনাক পান নোবেল পুরস্কার। প্রথম দিকের মডেলের স্ক্যানার দিয়ে শুধু মানুষের মাথাই স্ক্যান করা যেত। কিন্তু অল্প কিছুদিন পর আমরা পাই এমন স্ক্যানার, যা দিয়ে পুরো শরীরই স্ক্যান করা যায়।
মেডিক্যাল ইমেজিং কাজ করার পেছনে রয়েছে সচেতন কিছু মেজারমেন্ট টেকনিক, অভিজাত কমপিউটার অ্যালগরিদম ও শক্তিশালী গণিতের সম্মিলিত ব্যবহার। গণিতের টমোগ্রাফির আরও অনেক ব্যবহার রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বায়ুম-লের ইমেজিং, ল্যান্ডমাইন চিহ্নিতকরণ, এমনকি সদুকো সমস্যার সমাধানও।
অ্যাগ্রিকালচারাল সায়েন্স
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানুফেকচারিং ইন্ডাস্ট্রি (বৃহদাকার শিল্পখাত) হচ্ছে ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি বর্তমান হারে বিশ্বের জনসংখ্যা বেড়ে চলা অব্যাহত থাকে, তবে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন ৭০ শতাংশ অবশ্যই বাড়িয়ে তুলতে হবে। আর এ কাজটি হবে কৃষি বিজ্ঞানের জন্য রীতিমতো উল্লেখযোগ্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে কৃষি বিজ্ঞানে ও খাদ্য প্রযুক্তিতে গণিতের ব্যাপক প্রয়োগ রয়েছে। একই সাথে বিদ্যমান রয়েছে এ ক্ষেত্রে গণিতের প্রয়োগের বিপুল সম্ভাবনা।
খাদ্য উৎপাদনের মৌলিক প্রক্রিয়া (সেচ প্রক্রিয়াসহ), ফ্রিজিং, কোল্ড স্টোরিং, কুকিং, খাবার তৈরি, খাবার খাওয়া ও এমনকি খাবার হজম প্রক্রিয়ায় থার্মোডিনামিকস ও ফ্লুইড ডিনামিকসের মতো গণিতবিদ্যা ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। এইভাবে ক্রমবর্ধমান বিশ্বজনগোষ্ঠীর খাবারের জোগানোর আনুষঙ্গিক সুবিধা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন হয় প্যাকেজিং, পরিবহন এবং নিরাপদে ও দক্ষতার সাথে বর্জ্য অপসারণ। এসব কাজে প্রয়োগ করা হয় গণিতবিদ্যার অপটিমাইজেশন ও অপারেশন রিসার্চ এবং এ ক্ষেত্রে গণিতের নেটওয়ার্ক থিওরি ও বিগ ডাটারও প্রয়োগ রয়েছে। এমনকি মৌমাছির সংখ্যা (বিপপুলেশন) বাড়ানো কৃষির জন্য প্রয়োজনের ক্ষেত্রেও গণিত থেকে উপকার পাওয়া যায়। মৌমাছির চাক নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষকেরা সাহায্য নেন গণিতের। এরা ব্যবহার করেন টমোগ্রাফিক এক্স-রে ইমেজিং। এ ক্ষেত্রে পরিহার প্রবণতা মুক্ত উপায়ে মৌমাছি অবলোকন করে। এভাবে এরা প্রত্যাশিতভাবে এটুকু নিশ্চিত করে বি পপুলেশন বর্তমানের চেয়ে কমবে না।
অ্যাডভান্সড ম্যাটেরিয়াল
আমাদেরকে নির্ভর করতে হয় ম্যাটেরিয়াল বা বস্ত্তর ওপর। এই বস্ত্ত হতে পারে প্রাকৃতিক- পাথর, কাঠ ইত্যাদি। আবার হতে পারে মানুষের তৈরি- ইস্পাত, কাঁচ, সিমেন্ট ইত্যাদি। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা বস্ত্ত ডিজাইন ও ম্যানুফেকচার করতে পারি। এসব বস্ত্তর থাকে নানা ধরনের মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, থার্মাল ও অনান্য গুণাগুণ।
এ ধরনের কিছু আধুনিক ম্যাটেরিয়ালের উদাহরণ হচ্ছে ফটোনিক ক্রিস্টাল, যা ব্যবহার হয় লাইট সঞ্চালনের কাজে। প্রায় কোনো আলোর অপচয় না করেই তা আলো সঞ্চালন করতে পারে। এই কমপ্লেক্স কমপোজিট ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার হয় বিমানের ডানায়। লিকুইড ক্রিস্টাল ব্যবহার হয় নানা ধরনের ডিসপ্লেতে। এই বস্ত্ত ডিজাইন ও স্টাডির প্রয়োজনে যে গণিতের প্রয়োজন, তা খুবই সমৃদ্ধ ও চ্যালেঞ্জসম্পন্ন। গণিত যেমনি ব্যবহার হয় প্রাচীন পাথর পর্যবেক্ষণে, তেমনি ব্যবহার হয় আধুনিক সময়ের কার্বন ফাইবার পর্যবেক্ষণেও। এসব ক্ষেত্রে আধুনিক ফলিত গণিতের বিকাশ ভবিষ্যতে আরও ত্বরান্বিত হবে বলে অনেকের বিশ্বাস।
ন্যানো-ইঞ্জিনিয়ারদের একটি টিম নতুন একটি বস্ত্ত তৈরি করেছেন, যেটি টেনে প্রসারিত করলে পরে আর কুঞ্চিত হয় না। এরা একই ধরনের টিস্যু পেয়েছেন মানবদেহে। ফলে এরা তাদের নতুন উদ্ভাবিত বস্ত্তকে কাজে লাগাতে পারবেন মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হার্ট ওয়াল, রক্তকোষ ও চামড়ার ক্ষত সারিয়ে তুলতে। যখন আমরা একটি সাধারণ বস্ত্তকে সম্প্রসারিত করি, সেটি সাধারণত সঙ্কুচিত হয় বিপরীত দিকে। এটিকে বলা হয় চড়রংংড়হ বভভবপঃ, আর এটি পরিমাপ করা হয় পেশন রেশিওর মাধ্যমে। এখানেও আছে গণিতের ব্যবহার। গণিতের ব্যবহার করেই উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন বস্ত্ত তৈরির প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির সহায়ক গণিতের ব্যাখ্যা-বিশেস্নষণ সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য হবে না বলে এ বিষয়ের আলোচনার এখানেই সমাপ্তি টানতে হচ্ছে।
এনার্জি ও এর স্টোরেজ
ক্রিচ বাড হচ্ছেন বাথ ইউনিভার্সিটির ফলিত গণিতের অধ্যাপক, ইনস্টিউিট অব মেথমেটিকস অ্যান্ড ইটস অ্যাপ্লিকেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, রয়েল ইনস্টিটিউশনের চেয়ার অব মেথমেটিস, ব্রিটিশ সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের অনারারি ফেলো। তিনি বিশেষত আগ্রহী বাস্তব জগতে গণিতের প্রয়োগ ও গণিত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা উন্নয়নের ব্যাপারে। তিনি পপুলার মেথমেটিকসের বই ‘মেথমেটিকস গ্যালোর’র সহ-লেখক। বইটি প্রকাশ করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি বলেন- ‘আমি যেসব মজার কাজ সম্পন্ন করেছি, তার মধ্যে একটি হচ্ছে সিইজিবির রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করা। এটি ছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সেন্ট্রাল ইলেকট্রিক জেনারেশনের বোর্ডের (বর্তমানে বেসরকারি ও অনেক কোম্পানিতে বিভক্ত) যৌথ পদ। এটি আমাকে বিশেষভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শিল্পের সমস্যাগুলো উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়। সেই সাথে আমি উপলব্ধি করতে পারি এ শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে গণিত ব্যবহারের গুরুত্ব।’
বিদ্যুৎ সরবরাহ শিল্প খাতের কাজ হচ্ছে আমাদের কাছে আস্থার সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা, চাহিদার পরিমাণ যা-ই থাকুক না কেনো। সোজা কথায়, মানুষ চায় তার বাতিটা যেনো সব সময় জ্বালানোর উপযোগী থাকে। লোডশেডিং বিদায় নিক। তবে বাস্তবে এ কাজটি সব সময় সহজ নয়, কারণ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ সব সময় পর্যাপ্ত থাকে না। ফলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়াটা হয়ে ওঠে না। বাংলাদেশের উদাহরণ তেমনটিই। তা ছাড়া ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে যখন ইংল্যান্ড ও জার্মানির মধ্যে সেমিফাইনাল খেলা চলছিল, তখন বিদ্যুৎ চাহিদা বেশ বেড়ে যায়। এই শ্বাসরুদ্ধকর খেলার সময় বিদ্যুৎ চাহিদা মোট চাহিদার তুলনায় ১১ শতাংশ বেড়ে যায়। কিন্তু ইউকে ন্যাশনাল গ্রিড অপারেটরদের সুপরিকল্পনার কারণে বিদুৎ বিচ্ছিন্ন হয়নি। অপরদিকে ২০০৩ সালে কন্ট্রোল সিস্টেমের ব্যর্থতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিদ্যুৎ গ্রিড বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়। এর ফলে যে বস্নাকআউটের সৃষ্টি হয়, এতে করে অনুমিত হিসেবে ৫৫৫ কোটি ডলার ক্ষতি হয়।
যুক্তরাজ্যে বছরে বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ ৩০০ টেরাওয়াট-ঘণ্টা। এই বিদ্যুৎ সরবরাহ চলে একটি জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এরপর এই বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয় একটি হাই ভোল্টেজ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। এরপর ভোল্টেজ কমিয়ে তা বাণিজ্যিক, আবাসিক ও শিল্প খাতের ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে সব সময় অব্যাহত থাকে, তা নিশ্চিত করতে পরিকল্পনাকারীদেরকে বিপুল সংখ্যক গাণিতিক সমীকরণ সমাধান করতে হয়। এর মাধ্যমে বের করা হয় কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন, সরবরাহ ও মজুদ করা লাগবে। এই কাজটি খুব সহজ নয়, বিদ্যুৎ কেনার পরপরই তা ব্যবহার করতে হবে, কারণ তা ব্যাপক মাত্রায় মজুদ করে রাখা যাবে না।
এসব চ্যালেঞ্জ ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে, আরও বেশি তাগিদ আসবে নিমণমাত্রার কার্বন জেনারেশনের। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যবহার করতে হবে গণিতকেই

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস