• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আইডব্লিউপিএসডি এবং বাংলাদেশের প্রত্যাশা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: অনির্বাণ ইসলাম
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
বাংলাদেশ->প্রকল্প
তথ্যসূত্র:
ইভেন্ট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আইডব্লিউপিএসডি এবং বাংলাদেশের প্রত্যাশা



১৯৪৮ সালে উইলিয়ামস ব্যাডফোর্ট সকলি, জন বার্ডেন আর ওয়াল্টার ব্রাটেইন উদ্ভাবন করেন ট্রানজিস্টর৷ তাদের এ ট্রানজিস্টর উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তড়িৎ বিপ্লব৷ আর এর ফসল আমাদের আজকের এই আইসিটি৷ এই আইসিটির প্রধান চালিকাশক্তিই হচ্ছে অর্ধপরিবাহী ডিভাইস৷ অর্ধপরিবাহী ডিভাইস এবং ম্যাটেরিয়ালের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সর্বশেষ তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য কিছুদিন আগে ভারতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল চৌদ্দতম ইন্টারন্যাশনাল ওয়ার্কশপ অন দি ফিজিক্স অব সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইসেস সংক্ষেপে আইডবি­উপিএসডি৷ কর্মশালাটি উপলক্ষতে ভারতের ঐতিহ্যবাহী ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি তথা আইআইটি পরিণত হয়েছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের মিলনমেলায়৷ ১৯৮১ সালে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে সর্বপ্রথম আইডবি­উপিএসডি অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর থেকে নিয়মিতভাবে এটি এক বছর পর পর ভারতের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে৷ আর তারই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হয় সর্বশেষ এই চৌদ্দতম আইডবি­উপিএসডি৷ সর্বশেষে এ আন্তর্জাতিক কর্মশালায় লেখকদের উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল৷ সে সূত্রেই এ কর্মশালার ওপর কিছুটা আলোকপাতের প্রয়াস পাবো৷ এবং এ ধরণের ওয়ার্কশপে বাংলাদেশের যোগদানের তাগিদটা রাখবারও চেষ্টা করবো৷

আইডবি­উপিএসডি ২০০৭

সর্বশেষ আইডবি­উপিএসডি ২০০৭ সালের ১৬-২০ ডিসেম্বরে ভারতের বিনোদন নগরী মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ মূল ওয়ার্কশপটি শুরু হয় ১৭ ডিসেম্বর ২০০৭-এ৷ এর আগের দিন অর্থাৎ ১৬ ডিসেম্বরে টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ অর্থাৎ টিআইএফআর-এ অনুষ্ঠিত হয় টিউটোরিয়াল সেশন, যা দুটি সেশনে বিভক্ত ছিল : সকালের সেশন ও বিকালের সেশন৷

সকালের সেশনে তিনটি বিষয়বস্তু ছিল :

০১. অর্ধপরিবাহী স্পিনট্রনিক্স : অ্যান ওভারভিউ৷ ০২. থিন্‌ ফিল্ম ফটোভোলটায়িক এনার্জি কনভারশন : সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি৷ এবং ০৩. ওভারভিউ অব ডেভেলপমেন্ট ইন পাওয়ার সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইসেস অ্যান্ড টেকনোলজি৷

বিকালের সেশনে ছিল মোট চারটি বিষয় :

০১. সার্ফেস প্লাজমোনিক্স : অপটিক্স অ্যান্ড ফোটনিক্স৷ ০২. জৈব অর্ধপরিবাহী৷ ০৩. অপটিমাইজেশন স্ট্র্যাটেজি ফর ইএসডি রোবাস্ট সিস্টেম৷ এবং ০৪. মাইক্রো-ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল সিস্টেমস : টুওয়ার্ডস ইবিকিউটাস সেনসরিং টেকনোলজি৷

প্রতিটি বক্তৃতায় সংশ্লিষ্ট বক্তারা আলোচ্য বিষয়গুলোর ওপর বর্তমান গবেষণার অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন৷ এরপর আইআইটি, মুম্বাইয়ের সুবিশাল ও সুসজ্জিত কনভোকেশন হলে ডিসেম্বর ১৭, ২০০৭-এ সম্মেলনের মধ্যমণি বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সের অধ্যাপক ফেদরিকো কাপাসসোর কোয়ান্টাম কাসকেড লেজারস : ডিজাইন, টেকনোলজি অ্যান্ড কমার্শিয়ালাইজেশন শীর্ষক প্লেনারি বক্তৃতার মাধ্যরে মূল ওয়ার্কশপটি শুরু হয়৷ অধ্যাপক কাপাসসো বিশ্বখ্যাত বেল গবেষণাগার ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লব্ধ অভিজ্ঞতা ও গভীর জ্ঞানের মাধ্যমে কোয়ান্টাম কাসকেড লেজারের মতো জটিল বিষয়ের তাত্ত্বিক ও প্রাযুক্তিগত ব্যাখ্যা দেন৷ এ ওয়ার্কশপে চারদিনে সর্বমোট ৮টি গুরুত্বপূর্ণ প্লেনারি বক্তৃতা ছিল৷

প্রতিদিন চা বিরতির মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্লেনারি সেশন৷ এরপর ছিল মৌখিক উপস্থাপনা, মধ্যাহ্নভোজের বিরতি ও এরপর মৌখিক উপস্থাপনার পাশাপাশি পোস্টার সেশন৷ এবার ৫০টি গবেষণাপত্র মৌখিক উপস্থাপনা ও ১৫০টি পোস্টার সেশনের জন্য মনোনীত হয়৷ এছাড়া একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেশনও পোস্টার সেশনের পাশাপাশি স্থান পায়৷ এবারের আইডবি­উপিএসডিতে গৃহীত গবেষণাপত্রগুলো মূলত বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ছিল : ০১. সিলিকন ডিভাইসেস এবং টেকনোলজি, ০২. যৌগিক অর্ধপরিবাহী, ০৩. জৈব অর্ধপরিবাহী, ০৪. পাওয়ার ডিভাইসেস, ০৫. এমইএমএস ও সংবেদক এবং ০৬. ইমার্জিং টেকনোলজিস৷ ২০ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখের ৠাপআপ সেশনের মাধ্যমে কর্মশালাটি শেষ হয়৷

আইডবি­উপিএসডি ও বাংলাদেশ

এই চতুর্দশ আইডবি­উপিএসডিতে জাহিদ হাসান মাহমুদের একটি গবেষণাপত্র আই-ভি-টি,সিভি অ্যান্ড ফটোইলেকট্রিক ক্যারেক্টারিস্টিক্স অব নিকেল- গ্যালিয়াম নাইট্রাইড সটকি অ্যান্ড এন+ ইনডিয়াম-নাইট্রাইড গ্যালিয়াম নাইট্রাইড হিটারোস্ট্রাকচার ইন্টারফেস শীর্ষক শিরোনারে মৌখিক উপস্থাপনার জন্য মনোনীত হয়৷ এতে সহ-লেখক হিসেবে ছিলেন টিআইএফআর-এর কনডেন্স ম্যাটার ফিজিক্স এবং ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স বিভাগের এ. পি. শাহ, আব্দুল কাদির, এম. আর. গোখলে, সন্দীপ ঘোষ, অর্ণব ভট্টাচার্য এবং বি. এম. অরোরা৷ এর ফলে এগারোতম আইডবি­উপিএসডি থেকে আজ পর্যন্ত নিয়মিতভাবে জাহিদ হাসান মাহমুদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হলো৷ এছাড়া এই আইডবি­উপিএসডিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের চারজন ছাত্রছাত্রী : চতুর্থ বর্ষের শরীফ সালাদীন সরকার, মেহেবুব রেহমান খান ও শারমীন হক তটিনী এবং দ্বিতীয় বর্ষের মো: অনির্বাণ ইসলামসহ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো: জালালউদ্দীন কয়েকটি টিউটোরিয়াল ও অন্যান্য সেশনে অংশ নেন৷

এই ওয়ার্কশপটিতে বাংলাদেশ দলটির পক্ষ থেকে ঢাকা ফিজিক্স গ্রুপ-এর প্রকাশিত আওয়ার আলমা মেটার ফ্রম বোস-আইনস্টাইন টু সালাম-ভাইনবার্গ অ্যান্ড দি বিয়ন্ডস বইটি বিভিন্ন সম্মানিত ব্যক্তিরে উপহার দেয়া হয়৷

উল্লিখিত এ আইডবি­উপিএসডিতে একটি অধিবেশন ছিল নবায়নযোগ্য সৌরশক্তির ওপর৷ বিশ্বের ক্রমবর্ধমান শক্তির চাহিদার প্রেক্ষাপটে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষত বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের জন্য৷

ওয়ার্কশপটির বিভিন্ন পর্বে উপস্থিত থাকা ছাড়াও আমরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা টিআইএফআর-এর স্ফটিক তৈরির একটি অত্যাধুনিক মেটাল অরগ্যানিক ভ্যাপর ফেজ এপিট্যাক্সি (থমাসসোয়ান) গবেষণাগার ও অর্ধপরিবাহী ওয়েফার-এর জন্য নির্মিত একটি অত্যাধুনিক পরিষ্কার কক্ষ (ক্লিন রুম) এবং ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ দেখার সুযোগ পাই৷ এছাড়া সমুদ্র তীরের টিআইএফআর-এর মনোমুন্ধকর পরিবেশ ও মুম্বাইয়ের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ছিল অসাধারণ৷ ওয়ার্কশপটির শেষে মুম্বাইয়ের আইআইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উল্লিখিত ওয়ার্কশপটির প্রসিডিংস উপহার দেয়৷

আমাদের প্রত্যাশা

আগামী আইডবি­উপিএসডি অনুষ্ঠিত হবে ২০০৯ সালে, ভারতের রাজধানী দিল্লীতে৷ আশা করা যায়, আরো অধিকসংখ্যক বাংলাদেশী গবেষক এতে অংশ নেবেন৷ কিন্তু এ জাতীয় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সম্মেলনে অংশ নেয়ার জন্য যে ধরণের গবেষণাগার ও বিনিয়োগ দরকার, তা আমাদের দেশে অতি নগণ্য এবং বিদ্যমান বেশিরভাগ গবেষণাগারই যুগোপযোগী নয়৷ ফলে আগ্রহীদের গবেষণা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে৷ ফলে গবেষণামুখী সংস্কৃতিও গড়ে উঠছে না৷ আর আমরা আমাদের মেধাবীদের ব্যবহারে অনেকক্ষেত্রেই অসমর্থ হচ্ছি৷ এ সমস্যা নিরসনে তাই একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণাগার নির্মাণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যুগপোযোগী পাঠক্রম ও সর্বোপরি প্রকৃত শিক্ষা-সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে৷ এজন্য সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে৷ তাছাড়া আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বের অন্যান্য উন্নত গবেষণাগার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথ কাজের প্রতি গুরুত্ব দেয়া দরকার৷ অন্যদিকে আমাদের সাধ্যের মধ্যে এ জাতীয় আন্তর্জাতিক মানের সম্মেলন আয়োজনের চেষ্টা করতে হবে৷ কজ
লেখক : জাহিদ হাসান মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান, ইলেক্ট্রনিক্স ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং মো: অনির্বাণ ইসলাম একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র৷


ফিডব্যাক : zhmjami@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
২০০৮ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা