লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মর্তুজা আশীষ আহমেদ
মোট লেখা:৭৭
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
সিস্টিম সিকিউরিটি
লিনআক্সের কয়েকটি সাধারণ সমস্যার সমাধান
মজার ত্রিভুজীয় সংখ্যা
‘ত্রিভুজীয় সংখ্যা’র ইংরেজি নাম ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার। যে সংখ্যাগুলোকে সাজানো সম্ভব একটি পারস্পরিক শর্তযুক্ত ত্রিভুজীয় আকারে সেগুলোকে বলা হয় ‘ত্রিভুজীয় সংখ্যা’ বা ‘ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার’। এই ত্রিভুজীয় সংখ্যা গঠন করা হয় ১+২+৩+৪+৫+৬+৭+...+ n সিরিজের আংশিক যোগফলের মাধ্যমে। আমরা যদি এক একটি ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বারকে T দিয়ে নির্দেশ করি। তবে-
T1 = 1
T2 = 1+2 = 3
T3 = 1+2+3 = 6
T4 = 1+2+3+4 = 10
T5 = 1+2+3+4+5 = 15
T6 = 1+2+3+4+5+6 = 21
............
Tn = 1+2+3+4+... +n = n(n+1)/2
এখানে n যেকোনো স্বাভাবিক সংখ্যা। তা হলে ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বারগুলো নিয়ে আমরা যে সিরিজ পাই তা হলো ১, ৩, ৬, ১০, ১৫, ২১, ২৮ ...
পাখির ঝাঁক যখন আকাশে ওড়ে, তখন মাঝেমধ্যে এই ত্রিভুজীয় আকার অনুসরণ করে ওড়ে। এমন কি যখন বেশ কয়েকটি বিমান একসাথে আকাশে ওড়ে, তখন এই ধরন বা প্যাটার্ন অনুসরণ করে থাকে। এ ধরনের সংখ্যার গুণাবলী প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন গণিতবিদরা, বিশেষ করে পিথাগোরিয়ানরা।
আপনি কি কার্ল এফ. গসের সেই বিখ্যাত গল্পটি শুনেছেন। একবার বালক গসের শিক্ষক ক্লাসের সবাইকে ১ থেকে ১০০ পর্যমত্ম সংখ্যাগুলো লিখে এ সংখ্যাগুলোর যোগফল বের করতে বলেন। আসলে শিক্ষক ক্লাসের গোলমাল থামাতে ছাত্রদের এই কঠিন কাজটি করতে দিয়েছিলেন। কারণ, একটির পর একটি সংখ্যা গুনে গুনে ১ থেকে ১০০ পর্যমত্ম সংখ্যার যোগফল বের করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু সবাইকে অবাক করে বালক গস ঝটপট বলে দেন এই যোগফলটা হচ্ছে ৫০৫০। শিক্ষক বালক গসকে জিজ্ঞেস করেন, কী করে এত তাড়াতাড়ি তিনি এই যোগফলটা বের করতে পারলেন। গস জানান, সব সংখ্যা একের পর এক যোগফল বের না করে তিনি যোগ করেছেন প্রথম পদ ও শেষ পদ অর্থাৎ ১+১০০ = ১০১। এরপর যোগ করেছেন প্রথম থেকে দ্বিতীয় ও শেষ দিক থেকে দ্বিতীয় পদটি অর্থাৎ ২+৯৯ = ১০১, এরপর যোগ করেছেন প্রথম থেকে তৃতীয় পদ ও শেষ থেকে তৃতীয় পদ অর্থা ৩+৯৮= ১০১। এভাবে সব সংখ্যা জোড়ার সমষ্টি করতে তিনি ৫০ বার এ যোগফল করে ১০১ পেলেন। অতএব উদ্দিষ্ট সংখ্যাটি হবে ১০১X৫০=৫০৫০। তা হলে ১ থেকে n পর্যমত্ম সংখ্যার যোগফলের সূত্রটি দাঁড়ায় n(n+1)/2। এখানে উল্লিখিত জোড়া সংখ্যা হবে n/2 এবং প্রতিটি জোড়ার যোগফল হবে n+1।
যাই হোক আলোচ্য ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার বা ত্রিভুজীয় সংখ্যার বেশ কিছু মজার ধর্ম রয়েছে। এখানে ত্রিভুজীয় সংখ্যার কয়েকটি আকর্ষণীয় ধর্মের কথা উল্লেখ করার প্রয়াস পাবো।
০১. প্রথমেই দেখা যাবে পর্যায়ক্রমে পর পর দুটি ত্রিভুজীয় সংখ্যার যোগফল সব সময় একটি বর্গসংখ্যা হয়। যেমন T1+ T2= 1+3=4=22 এবং T2+ T3= 3+6 = 9 = 32
০২. যেকোনো ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বারকে ৯ দিয়ে গুণ করে এর সাথে ১ যোগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে, সে সংখ্যাটিও হবে একটি ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার। অর্থাৎ T যদি হয় একটি ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার তবে 9T+1 হবে একটি ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার। যেমন 9T1+1=9X1+1= 9+1=10= T4 এবং 9T2+1 = 9X3+1 = 28 = T7
০৩. ত্রিভুজীয় সংখ্যার শেষে ২, ৪, ৭ অথবা ৯ কখনোই থাকবে না। ত্রিভুজীয় সংখ্যা সিরিজের দিকে তাকালেই এর সত্য মিলবে। ত্রিভুজীয় সংখ্যার সিরিজটি হচ্ছে ১, ৩, ৬, ১০, ১৫, ২১, ২৮, ...।
০৪. যদি T হয় একটি ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার তবে 8T+1 হবে একটি পূর্ণ বর্গসংখ্যা। যেমন 8T1+1=8X1+1=9=32 এবং 8T2+1=8X3+1=25=52
০৫. ধারাবাহিকভাবে n সংখ্যক সংখ্যার ঘনের যোগফল n-এর ত্রিভুজীয় সংখ্যার বর্গের সমান।
Tn2 = 13+23+33+43... +n3
T42 = 102=12+23+33+43
T52 = 152 = 12+33+33+43+53
Tn2=13+23+33+43+53+ ... +n3
০৬. ১ ছাড়া অন্য কোনো ত্রিভুজীয় সংখ্যাকে কোনো সংখ্যা ত্রিঘাত, চতুর্ঘাত কিংবা পঞ্চঘাত আকারে প্রকাশ করা যাবে না।
০৭. স্কয়ার ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার : অসংখ্য ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার আছে, যেগুলো আবার বর্গসংখ্যাও। এগুলোর নাম স্কয়ার ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার। এ ধরনের স্কয়ার ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বারের সিরিজ বা ধারাটি হচ্ছে ১, ৩৬, ১২২৫, ৪১৬১৬, ১৪১৩৭২১, ৪৮০২৪৯০০, ১৬৩১৪৩২৮৮১, ৫৫৪২০৬৯৩০৫৬ ইত্যাদি। এগুলোর এক-একটি স্কয়ার ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বারে যদি nth স্কয়ার ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার Kn হয়, তবে ওই Kn সহজেই এই পরবর্তী রাশি নির্ণায়ক বা রিকারসিভ ফর্মুলা দিয়ে নির্ণয় করা যাবে।
Kn = 34Kn-1 - Kn-2 + 2
অতএব প্রথম দুটি স্কয়ার ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার অর্থাৎ K1=1 এবং K2=36, বাকি সব ধারাবাহিক স্কয়ার ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বারগুলো সহজেই জেনে নিতে পারব। যেমন-
K3 = 34K2 - K1+2 = 34X36-1+2 = 1225
K4 = 34K3-K2+2 = 32X1225- 36+2=41616
তবে পরবর্তী পদ বা রাশি নির্ণায়ক অর্থাৎ নিচের নন-রিকারসিভ ফর্মুলা ব্যবহার করে n-তম স্কয়ার ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার চলক n-এর আকারে পাওয়া যাবে।
Kn=[{(1+21/2)2n -(-21/2)2n} /4X215]2
০৮. এমন কিছু জোড়া ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার রয়েছে যেখানে এগুলোর যোগফল কিংবা বিয়োগফলও ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার। যেমন (১৫, ২১), (১০৫, ১৭১), (৩৭৮, ৭০৩), (৭৮০, ৯৯০), (১৪৮৫, ৪১৮৬), (২১৪৫, ৩৭৪১), (৫৪৬০, ৬৭৮৬), (৭৮৭৫, ৮৭৭৮) ... জোড়া ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বারগুলো এ নিয়ম মেনে চলে।
21+15=36 = T8; 21-15 = 6 = T1
171+105=276=T23; 171-105=66 = T11
703+378=1081=T46; 703-378=325=T25
০৯. কিছু কিছু ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার আছে যেগুলো তিনটি ক্রমিক সংখ্যার গুণফলের সমান।
T3 = 6 = 1X2X3
T15 = 120 = 4X5X6
T20 = 210 = 5X6X7
T44 = 990 = 9X10X11
T608 = 185136 = 56X57 X 58
T22736 = 258474216 = 636X637X638
১০. ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার ১২০ হচ্ছে তিনটি, চারটি কিংবা পাঁচটি ক্রমিক সংখ্যার গুণফলের সমান। অন্য আর কোনো ট্রায়াঙ্গুলার নাম ৩-এর অধিক ক্রমিক সংখ্যার গুণফলের সমান নয়।
120 = 4X5X6=2X3X4X5=1X2X3X4X5
১১. এমন কতগুলো ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার রয়েছে যেগুলো দুইটি ক্রমিক সংখ্যার গুণফলের সমান। যেমন তৃতীয় ট্রায়াঙ্গুলার নাম ৬ হচ্ছে ক্রমিক সংখ্যা ২ ও ৩-এর গুণফলের সমান।
2X3=6=T3
14X15=210=T20
84X85=7140=T119
492X493=242556=T695
2870X2871=8239770=T4059
16730X16731=279909630=T23660
97512X97513=9508687656=T137903
568344X568345=323015470680=T803760
3312554X3312555=10973017315470=T4684659
19306982X19306983=372759573255306=T27304196
১২. এমন অনেক জোড়া ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার রয়েছে, যেগুলোর গুণফল সবসময় পূর্ণ বর্গ হয়।
T1XT24=3X300=900=302
T2XT242=3X29403=88209=2972
T3XT98=6X1176=7056=842
T6XT168=21X14196=298116=5462
T11XT528=66X139656=9217296=30362
T12XT624=78X195000=15210000=39002
ট্রায়াঙ্গুলার নাম্বার নিয়ে এমন আরো অনেক মজার মজার বিষয় রয়েছে।