বাংলাদেশে ইদানীং লিনআক্সের ব্যবহার ধীরে ধীরে বাড়ছে৷ অনেক পাঠক জানতে চেয়েছেন লিনআক্স কেমন রিসোর্স ব্যবহার করে, লিনআক্স সিস্টেমকে ধীরগতির করে দেয় কি না৷ সেসব কৌতূহলী পাঠকের উদ্দেশে বলছি লিনআক্স অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের তুলনায় বেশ কমই রিসোর্স নেয়৷ অনেক পুরনো সিস্টেম যেগুলোতে উইন্ডোজ চালানো সম্ভব নয়, সেগুলোতে লিনআক্স খুব সহজেই চালানো যায়৷ সেই সাথে সবার একটি ভুল ভাঙানো দরকার, লিনআক্সে একমাত্র গেমিং ছাড়া প্রায় সব ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের বিকল্প আছে৷ তবে গেমারদের হতাশ হবার কারণ নেই৷ লিনআক্সের জন্য এমন কিছু অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার আছে যেগুলো উইন্ডোজের অ্যাপ্লিকেশন চালানোর সুযোগ করে দেয়৷
লিনআক্স নিয়ে মূলত সবার বড় অভিযোগ মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট নিয়ে৷ লিনআক্সে গান শোনা বা ভিডিও দেখা নিয়ে বেশি সমস্যা হয়৷ এসব মিডিয়াজনিত সমস্যা থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায়৷ কোডেক সমস্যার সমাধান ইতোমধ্যে এই পত্রিকার মাধ্যমে দেয়া হয়েছে৷ লিনআক্সের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে- এ অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার সময় বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার আলাদাভাবে ইনস্টল করার প্রয়োজন হয় না৷ অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ইনস্টল হয়ে যায়৷
লিনআক্স যারা নতুন চালাচ্ছেন, তাদের অনেক অভিযোগ থাকে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার নিয়ে৷ কারণ, উইন্ডোজে চলে এমন অনেক সফটওয়্যার আছে, যেগুলোর লিনআক্স ভার্সন নেই৷ তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিকল্প সফটওয়্যার আছে যাতে করে লিনআক্স কমপিউটিংয়ে সমস্যা না হয়৷ তাই নবীনদের কিছুটা সমস্যা হলেও যারা নিয়মিত লিনআক্স ব্যবহার করেন তাদের সমস্যা হয় না৷ এমন একটি কমন সমস্যা হচ্ছে লিনআক্সে ব্রাউজার সমস্যা৷ একে ব্রাউজার সমস্যা না বলে ইন্টারনেট স্পিড সমস্যা বলাই ভালো৷ বাংলাদেশের ইন্টারনেট স্পিড কম থাকায় অনেকেই অপেরা ব্রাউজার ব্যবহার করেন৷ লিনআক্সেও অপেরা ব্যবহার করা যায়৷
লিনআক্সে অপেরা ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমেই লিনআক্স থেকে ইন্টারনেট কনফিগার করে নিতে হবে৷ এরপর http://www.opera.com/download/ সাইট থেকে লিনআক্সের পছন্দসই ভার্সন সিলেক্ট করে দিতে হবে৷ লিনআক্সের কম্প্রেসড ফরমেট হচ্ছে .tar.gz৷ টিক চিহ্ন দিয়ে এই সাইট থেকে কমপ্রেসড অবস্থায় অপেরা ডাউনলোড করুন৷ ডাউনলোড করার সময় সেভ অ্যাজ মেনু থেকে যেকোনো ফোল্ডার সিলেক্ট করে দিতে হবে৷
ডাউনলোড হয়ে গেলে প্রথমেই ফাইলে রাইট বাটন ক্লিক করে আনকমপ্রেসড করতে হবে৷ আনকমপ্রেসড হয়ে গেলে ফোল্ডারের মধ্যে install.sh নামে একটি ফাইল পাবেন৷ এ ফাইলে রাইট বাটন ক্লিক করে রান ইন টার্মিনাল সিলেক্ট করলে ইনস্টলেশন শুরু হবে৷
ইনস্টলেশনের শুরুতেই জানতে চাইবে পাথ ঠিক আছে কি-না৷ ডিফল্ট পাথ ছাড়া অন্য কোনো ইনস্টল করতে না চাইলে এন্টার চাপলেই ইনস্টলেশন শেষ হবে৷ এরপর ডেস্কটপ থেকেই অপেরা চালিয়ে ব্রাউজ করতে পারবেন৷
ইন্টারনেট কনফিগারের সাথে অপেরার কোনো সম্পর্ক নেই৷ আগে ইন্টারনেট কনফিগার করে তবেই অপেরা চালাতে হবে৷ কিভাবে ইন্টারনেট কনফিগার করা যায়, তা এর আগে কয়েক সংখ্যায় বলা হয়েছে৷ যদি ম্যাক স্পুফিং (ল্যানের ম্যাক ব্যবহার না করে অন্য ম্যাক ব্যবহার করতে চাইলে) করতে চান, তাহলে আগে ম্যাক স্পুফিং করে তারপর আইপি অ্যাড্রেস দিতে হবে৷ প্রথমেই জেনে নিতে হবে, আপনার আইপি অ্যাড্রেস কত, সার্ভারের ডিফল্ট গেটওয়ে কত, ডিএনএস সার্ভারের আইপি অ্যাড্রেস কত এবং আপনার পোর্ট কত৷ আর যদি আপনার আইএসপি উইনস সার্ভারের আইপি ব্যবহার করেন, তাহলে সেটিও আপনাকে জেনে নিতে হবে৷ প্রয়োজনীয় এসব ডাটা সংগ্রহ করার পর প্রথমেই দেখে নিতে হবে সিস্টেম ট্রেতে আপনার নিক (নেটওয়ার্কইন্টারফেস কার্ড বা ল্যান কার্ড)-এর আপলিঙ্ক এবং ডাউনলিঙ্ক আইকন দেখাচ্ছে কি-না৷ নিকের আইকনের উপর রাইট বাটন ক্লিক করে প্রথমে ল্যান ডিজ্যাবল করে নিতে হবে৷ তারপর সঠিকভাবে এসব ডাটা ইনপুট দিতে হবে৷
মনে রাখতে হবে, যদি একাধিক ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করা হয়, তাহলে আগে ইন্টারনেট সেটআপ করে তারপর ব্রাউজার ইনস্টল করাই ভালো৷ আর আমরা যারা একই ইন্টারনেট লাইন একাধিক সিস্টেমে ব্যবহার করি, তাদের ম্যাক অ্যাড্রেস বার বার পরিবর্তন করতে হয়৷ সাধারণত সিস্টেমে একাধিক ল্যান না থাকলে নিক কনফিগার করতে তেমন কোনো সমস্যা হয় না৷ কিন্তু অনেকেই কনফিগার করতে পারেননি শুধু সিস্টেমে একাধিক ল্যান থাকার কারণে বা আইএসপির অটোমেটিক আইপি ব্যবহার করার ফলে৷ আইএসপি যদি অটোমেটিক আইপি ব্যবহার করে, তাহলে সিস্টেমের জন্য DHCP সার্ভার সিলেক্ট করে দিতে হবে৷ ল্যান ডিজ্যাবল করা হয়ে গেলে নেটওয়ার্ক টুলস চালু করতে হবে৷
আইপি ইনফরমেশন থেকে আইপিভি৪ সিলেক্ট করার পর কনফিগার বাটনে ক্লিক করে নিক কনফিগার করতে হবে৷ ইদানীং অনেক আইএসপি এমনভাবে ইন্টারনেট সেটআপ করে দেয়, যাতে কোনো আইপি অ্যাড্রেস দেবার প্রয়োজন পড়ে না৷ ডায়ালআপ সার্ভিসের মতো শুধু ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড দিলেই ইন্টারনেট কনফিগার হয়ে যায়৷ এ ধরনের সার্ভিস দেয়া হয় DHCP সার্ভারের মাধ্যমে৷
এ ধরনের ইন্টারনেট কনফিগার করতে হলে সার্ভার টাইপ DHCP সিলেক্ট করে দিলেই সিস্টেম নিজে নিজেই আইপি অ্যাড্রেস ছাড়াই ইন্টারনেটে যুক্ত হবে৷ ইদানীং ঢাকার অনেকেই স্মাইল আইএসপি থেকে ইন্টারনেট কানেকশন নিচ্ছেন৷ স্মাইল থেকে অনেকেই ইন্টারনেট সেটআপ করতে পারেননি শুধু DHCP কানেকশন সিলেক্ট না করার কারণে৷ এ ধরনের কানেকশনে কোনো আইপি অ্যাড্রেস দেবার প্রয়োজন পড়ে না৷ ডায়ালআপ সার্ভিসের মতো শুধু ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড দিলেই ইন্টারনেট কনফিগার হয়ে যায়৷ এ ধরনের সার্ভিস দেয়া হয় DHCP সার্ভারের মাধ্যমে৷ এ ধরনের ইন্টারনেট কনফিগার করতে হলে সার্ভার টাইপ DHCP সিলেক্ট করে দিলেই সিস্টেম নিজে নিজেই আইপি অ্যাড্রেস ছাড়াই ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে যাবে৷
এভাবে প্রায় সব লিনআক্সেই অপেরা চালানো যাবে৷ ইনস্টলেশনের পর ফ্ল্যাশ প্লেয়ারের অভাববোধ করতে পারেন৷ লিনআক্সের জন্য ফ্ল্যাশ প্লেয়ার আছে যেটি সব ব্রাউজারে চালানো যাবে৷ পরবর্তী কোনো সংখ্যায় এ ফ্ল্যাশ প্লেয়ার ইনস্টলেশন দেখানো হবে৷
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mortuzacsepm@yahoo.com