সব অপারেটিং সিস্টেমই শুরুতে কমান্ডভিত্তিক ছিল। এখন মোটামুটি সব অপারেটিং সিস্টেম গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসভিত্তিক। তবে লিনআক্সের ক্ষেত্রে এই কথাটি সব সময়ের জন্যই আলোচিত, কারণ লিনআক্স গ্রাফিক্যাল হয়েছে ডেস্কটপ কমপিউটিংয়ে সবার শেষে। তবে যারা কমান্ড মোডে কাজ করতে চান, তাদের জন্য লিনআক্সের দরজা এখনও খোলা।
গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসের চেয়ে কমান্ডভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম অনেক শক্তিশালী। কারণ, কমান্ডগুলো সরাসরি অপারেটিং সিস্টেমের সাথে সম্পর্ক তৈরি করে। আর যারা শুধু কমান্ডের ওপর ভিত্তি করে অপারেটিং সিস্টেম চালান, তারা অন্যদের থেকে অনেক দ্রুত কাজ করতে পারেন। কমান্ড দিয়ে কাজ করার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে ব্যবহারকারীদের অনেক কমান্ড মনে রাখতে হয়।
লিনআক্সের কমান্ডগুলো কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। লিনআক্সের কমান্ড লাইন জানতে হলে শুরুতেই কয়েকটি জিনিস জানা প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে শেল, কন্সোল এবং টার্মিনাল। লিনআক্সের শেল বলতে বুঝায় বিশেষ এক ধরনের প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামটি নিজেই একটি কমান্ড ইন্টারপ্রেটর। ব্যবহারকারীর দেয়া কমান্ডকে সিস্টেম লেভেলের কার্যকরী কমান্ডে পরিণত করে তা সম্পাদন করাই শেলের কাজ। লিনআক্সে অনেক ধরনের শেল ব্যবহার হয়। এগুলোর মধ্যে sh, ksh, csh, bash প্রভৃতি খুব জনপ্রিয়। উইন্ডোজ ৯৫ বা ৯৮ অপারেটিং সিস্টেমে আমরা ডস মোডে সিস্টেম চালু করতে পারতাম। এই অপারেটিং সিস্টেমগুলোতে ডস ইন্টিগ্রেটেড অবস্থায় থাকত। লিনআক্সের কন্সোল অনেকটা একই ধরনের। যাবতীয় কমান্ড এই কন্সোলের মাধ্যমেই দিতে হয়। লিনআক্সে কন্সোলে প্রবেশের জন্য লগইন করার সময় সেশন থেকে কন্সোল সিলেক্ট করলেই এটি চালু হবে। আর টার্মিনাল হচ্ছে অন্য যেকোনো সেশন বা ডেস্কটপ যেমন- জিনোম, কেডিই বা অন্য কিছু চালু থাকা অবস্থায় আংশিকভাবে কন্সোলের কোনো কমান্ডকে চালানোর ব্যবস্থা। অনেকটা উইন্ডোজের কমান্ড প্রম্পটের মতো।
লিনআক্স ইনস্টল করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অটোমেটিক লগইন অপশন অ্যানাবল করে হয়ত সরাসরি ডেস্কটপে প্রবেশ করে থাকবেন। তাই লিনআক্সে বুট করে ডেস্কটপে লগআউট করে সেশন থেকে কন্সোল নির্বাচন করার মাধ্যমে কন্সোলে প্রবেশ করা যেতে পারে। সিস্টেমে ডুয়াল বুটিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে অনেক লিনআক্সের অপারেটিং সিস্টেম সিলেকশন মেনু থেকেও কন্সোলে প্রবেশ করানো যায়। লিনআক্সের ক্ষেত্রে একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন, লিনআক্স কেস সেনসেটিভ। ডস কেস সেনসেটিভ ছিল না। ডসে টাইপ করার সময় ছোট বা বড় হাতের অক্ষর নিয়ে কোনো সমস্যা হতো না। লিনআক্সে এই ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তাই কমান্ড ইনপুট করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। লিনআক্সের এ পর্বে কন্সোলের কিছু কমান্ড নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই কমান্ডগুলো ট্রাবলশূটিংয়ের জন্য কাজে লাগবে।
login :
লিনআক্সের মাল্টি ইউজার এবং মাল্টি টাস্কিং অত্যন্ত শক্তিশালী, তাই মাল্টি ইউজার সুবিধা এই কমান্ডের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। এই কমান্ড দিয়ে লগইন করা যাবে। লিনআক্স থেকে কন্সোলে প্রবেশ করে login কমান্ড দিলে লিনআক্স আপনার ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড চাইবে। ধরা যাক, ইউজার নেম x হিসেবে লগইন করলে প্রম্পটে বা কমান্ড লাইনে দেখাবে [x @ localhost x] ।
startx :
কন্সোল থেকে সরাসরি এক্স উইন্ডোজ বা লিনআক্সের গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসে এক্সেসের জন্য এই কমান্ড ব্যবহার করা হয়। লগইন এরপর এই কমান্ড দিয়ে গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেসে এক্সেস করে আবার লগআউট করলে আগের মোডে ফিরে যাওয়া যায়।
halt :
এই কমান্ড দিলে সিস্টেমের রান লেভেল ০ নির্ধারিত হয়। যেটা উইন্ডোজে শাটডাউন হিসেবে আমরা জানি।
Ctrl+Alt+Del :
সিস্টেম বন্ধ করে আবার চালু অর্থাৎ রিস্টার্ট করতে চাইলে এই তিনটি কী একসাথে একবার চাপলেই সিস্টেম রিস্টার্ট করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই কমান্ডের ফলে সিস্টেমের রান লেভেল ৬ নির্ধারিত হবে। উইন্ডোজেও এই কমান্ড একই।
শেল চালু করা :
আপনি যে শেল চালু করতে চান, সেই শেলের নাম কমান্ড হিসেবে লিখে দিলেই শেলটি চালু হবে। একেকটি শেল একেক ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে। যেমন, bash শেল চালু করতে চাইলে কমান্ড লাইনে bash লিখলেই এই শেল চালু হবে। একইভাবে অন্যান্য শেল চালু করা যায়।
ls :
যে ডিরেক্টরিতে অবস্থান করছেন সেই ডিরেক্টরিতে আরো কি কি আছে তা দেখার জন্য ls কমান্ডটি ব্যবহার করা হয়। ls-এর পুরো অর্থ হচ্ছে লিস্ট। উইন্ডোজে এটি cd অর্থাৎ কারেন্ট ডিরেক্টরি হিসেবে পরিচিত।
ls-a : হিডেন ফাইলের তালিকা দেখাবে।
ls-i : ফাইলের আইনোড তালিকা দেখাবে।
ls-l : ফাইলের ডিটেইল্ড তালিকা দেখাবে।
ls-s : ফাইলের সাইজ দেখাবে।
ls-t : ফাইলগুলো সময় অনুসারে তালিকা তৈরি করে দেখাবে।
ls-F : ফাইলের ধরন দেখাবে।
ls-R : ফাইলের ট্রি দেখাবে।
mkdir :
নতুন ডিরেক্টরি তৈরি করার জন্য এই কমান্ড ব্যবহার হয়। কমান্ড লাইনে এই কমান্ড লিখে একটি স্পেস দিয়ে যে নামে ডিরেক্টরি তৈরি করা হবে সেটি লিখলে নতুন ডিরেক্টরি তৈরি হবে। mkdir-এর পুরো অর্থ হচ্ছে মেক ডিরেক্টরি।
rmdir :
কোনো খালি ডিরেক্টরি মুছার জন্য এই কমান্ড ব্যবহার করা হয়। কমান্ড লাইনে এই কমান্ড লিখে একটি স্পেস দিয়ে যে নামে ডিরেক্টরি আছে সেটি লিখলে খালি ডিরেক্টরি মুছে যাবে। rmdir-এর পুরো অর্থ হচ্ছে রিমুভ ডিরেক্টরি। উইন্ডোজে এই কমান্ড হচ্ছে rd।
cd কমান্ড :
কমান্ড লাইনে অপারেটিং সিস্টেম চালানোর সময় ডিরেক্টরি নিয়ে কাজ করতে হয়। আপনাকে প্রত্যেকটি কাজে ডিরেক্টরি মনে রাখতে হবে। এজন্য অপারেটিং সিস্টেম নির্মাতারা কমান্ড লাইনে কারেন্ট ডিরেক্টরি দেখার ব্যবস্থা রেখেছেন। ডিরেক্টরি পরিবর্তন করার কমান্ড হচ্ছে cd।
TAB কী :
লিনআক্সে কমান্ড লেখার সময় বা কোনো ডিরেক্টরি এক্সেস করার সময় এর একাংশ লিখে বাকি অংশ ট্যাব কী চেপে সম্পন্ন করা যায়। ধরা যাক, কোনো ডিরেক্টরি এক্সেস করতে চাচ্ছেন যার নাম আপনি সম্পর্কে নিশ্চিত নন। তখন ডিরেক্টরির নামের শুরুর অংশ লিখে ট্যাব কী চাপলে পুরো ডিরেক্টরির নাম চলে আসবে। তখন এন্টার চেপে কমান্ডের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। কমান্ডের ক্ষেত্রেও এভাবে ট্যাব কী ব্যবহার করা যায়।
man কমান্ড :
এই কমান্ড অনেকটা উইন্ডোজের help কমান্ডের মতো। তবে এই কমান্ড help কমান্ডের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। এর মাধ্যমে সব কমান্ডের তালিকাসহ কমান্ড খুঁজে বের করা যায়। man-এর পুরো অর্থ হচ্ছে manual। কোনো কমান্ডের ম্যানুয়াল চাইলে man লিখে একটি স্পেস দিয়ে সেই কমান্ড লিখে এন্টার চাপতে হবে। এই কমান্ডের কয়েকটি শর্ট কী আছে। এগুলো হচ্ছে :
man-a : নির্দিষ্ট কমান্ডের সাথে কমান্ড মিলাবে। তারপর তা স্ক্রিনে দেখাবে।
man-n : হেল্প মেসেজ জেনারেট করবে।
man-k : ম্যানুয়াল পেজ খুঁজবে।
man-p : পাথ দিয়ে ম্যানুয়াল পেজ খুঁজবে।
man-s : সিস্টেম দিয়ে ম্যানুয়াল পেজ খুঁজবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mortuzacsepm@yahoo.com