• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ২০০৭ সালের সালতামামি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোস্তাফা জব্বার
মোট লেখা:১৩৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইটি
তথ্যসূত্র:
ফিরে দেখা
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
২০০৭ সালের সালতামামি

নতুন বছরে পা ফেলে বিদায়ী বছরের হিসাবনিকাশটার প্রতি আমাদের নজর পড়াটা স্বাভাবিক৷ পুরো বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আমাদের অর্জন ও ব্যর্থতার পাশাপাশি পরের বছরের প্রত্যাশার পরিমাপটিরও প্রয়োজন৷ অবশ্য এবার আমাদের অবস্থাটি একটু ভিন্ন৷ কারণ এ বছরটায় ক্ষমতায় একটি ভিন্নধর্মী অরাজনৈতিক সরকার৷ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এই সরকারের দায়িত্ব হবে দেশের বর্তমানের অচল চাকাটিকে একুশ শতকের চাকায় রূপান্তরিত করে সামনের দিকে ধাবিত করা৷ এর জন্য সরকারকে এই দেশটিকে অতীতের ঔপনিবেশিক ও অথর্বতার ছক থেকে বের করে কমপিউটার প্রযুক্তিকে অবলম্বন করা৷ এই প্রযুক্তিকে এ জাতির আগামী দিন নির্মাণের হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই হবে৷ এটি এখনো আমাদের প্রত্যাশা৷ যাহোক, ২০০৮ সালের প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলার আগে আমরা একটু নজর দিতে পারি, কী ভীষণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমরা বিগত এক বছরে৷

আমরা লক্ষ করেছি, দুর্নীতি দমনের জন্য বিগত সময়কালে সরকার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি৷ শুধু কিছু রুই-কাতলাকে গ্রেফতার করে দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি চমক সৃষ্টি করা গেলেও দুর্নীতি প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা হলো সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বচ্ছতার পরিবেশ সৃষ্টি করা৷ একমাত্র কমপিউটার ব্যবস্থা প্রচলন করেই দুর্নীতি প্রতিরোধ করার স্থায়ী ব্যবস্থা করা যায়৷ কথায় বলে, দরজা খুলে ঘুমিয়ে থেকে যদি চোরকে চুরি না করতে সাধুবাক্য আওড়ানো হয় তবে কি চোর চুরি করা বন্ধ করবে৷ আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থাও তাই৷ এগুলোতে দুর্নীতি করার সব ব্যবস্থা সাজানো আছে৷ এখানে দুর্নীতি না করাটাই বরং কঠিন৷ প্রশাসনে স্বচ্ছতা না থাকাটি এখানে নিয়ম৷ যদি কমপিউটার ব্যবহার করা হয় তবেই এই বদ্ধ দশাটি থেকে মুক্তি পেয়ে আমরা স্বচ্ছতার যুগে পা দিতে পারি৷ কিন্তু আমরা দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দেবার জন্য আইনের সামনে হাজির করার অবস্থা দেখলেও এই সরকারকে পদ্ধতি পাল্টানোর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি৷

সরকার যদি প্রশাসনে কমপিউটার ব্যবস্থা চালু করতো তবে ফাইল আটকে ঘুষ নেয়ার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হতো৷ সরকার যদি তার সব তথ্য ইন্টারনেটে প্রকাশ করতো তবেই ঘুষ খাওয়ার পথ রুদ্ধ হতো৷ ফলে জরুরি অবস্থার সরকারের হাতে এই সময়ে বড় ভিত্তি হতে পারতো কমপিউটারকে ভিত্তি করে দুর্নীতি প্রতিরোধ, স্বচ্ছতা আনা, দক্ষতা বাড়ানো ও জাতিকে সামনে নিয়ে যাওয়া৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, জরুরি অবস্থা জারির পর এই সুযোগটি গত এক বছরে সরকার গ্রহণ করেনি৷ বিশেষ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সরকারের দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকার যে পরিবর্তন করতে পারতো তা মোটেই করা হয়নি৷ আমার নিজের কাছে এটিকে একটি ভালো সুযোগ নষ্ট করা বলে মনে হয়েছে৷ এই সময় থেকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করতে পারতাম৷ সেটি পিছিয়ে গেলো- এটিও কষ্টের৷ কিন্তু কষ্ট তো ওখানেই থেমে থাকেনি৷ বরং বলা যায় সেই সব কষ্ট আরো বেড়েছে, যা জরুরি অবস্থায় বিদায় হওয়া উচিত ছিলো৷

বিগত বছরে আমরা আমাদের স্বপ্নের সাবমেরিন ক্যাবল নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় কাটিয়েছি৷ জন্মের পর বিগত বছর পর্যন্ত এই ক্যাবল লাইন ২৮ বার কাটা পড়েছে৷ এর প্রতিবাদে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের লোকজন চিত্কার করে কাটা বন্ধ করার দাবি তুলতে বাধ্য হয়েছেন৷ মোট ২৮৫ ঘণ্টা কাটার ফলে এতে জাতীয় ক্ষতির পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা৷ বছরের শেষ প্রান্তে এসে আমরা বিটিআরসির চেয়ারম্যানের মুখ থেকে শুনলাম ২৮ বার কাটার পর তারা নাকি জানতে পেরেছেন, কারা এই ক্যাবল লাইন কেটেছে৷ কি উদ্দেশ্যে এই ক্যাবল লাইন কাটা হয়েছে সেটিও তারা নাকি জানেন৷ অথচ এনআরবি সম্মেলনে প্রদত্ত বিটিআরসি চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পরও সাবমেরিন ক্যাবল লাইন কাটার দায়ে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শুনিনি৷ অন্যদিকে এই সাবমেরিন ক্যাবল লাইন ব্যবহার করতে গিয়ে ব্যবহারকারীদের যে আর কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা এখনো গ্রহণ করা হয়নি৷

আমরা সবাই স্মরণ করতে পারি, এই সাবমেরিন ক্যাবল লাইন আরো ১৪ বছর আগে পাবার কথা ছিলো৷ সেটি আমরা যখন পাই তখন এই ক্যাবল লাইন স্থাপনে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে৷ বিশেষত চট্টগ্রাম থেকে কেনো এটি কক্সবাজার নেয়া হয় তার কোনো সদুত্তর সরকারের কাছে নেই৷ জরুরি অবস্থা জারির পর এসব বিষয়ে তদন্ত হওয়ার প্রত্যাশা ছিলো৷ আমরা ভেবেছিলাম, সরকার এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করবে ও অপরাধীদের শাস্তি দেবে৷ কিন্তু সেই ব্যবস্থাও হয়নি৷ একই সাথে আমরা স্মরণ করতে পারি যে, খালেদা জিয়ার সরকারের মন্ত্রী মঈন খানের দুর্নীতিরও কোনো তদন্ত হয়নি গত বছরে৷ গবেষণার টাকার বেপরোয়া বরাদ্দ দেয়া ছাড়াও নিজেরাই আত্মসাত করার বিষয়ে বার বার পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলেও জরুরি অবস্থা জারির পর কোনো কোনো পত্রিকায় তাকে সৎ রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ আমাকে অবশ্যই একথা মনে করিয়ে দিতে হবে, সরকারের ইইএফ ফান্ড নিয়ে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির কোনো তদন্ত না করেই আবারো সেই ফান্ড থেকে অর্থ বরাদ্দের পাঁয়তারা চলছে৷ রাজনৈতিক কারণে যেসব প্রকল্পে অর্থ প্রদান করা হয় তার কোনো হিসাবও জনগণের কাছে প্রকাশ করা হয়নি৷ ফলে জরুরি অবস্থা জারির পর যে জাতীয় আকাক্ষা প্রকাশিত হয়েছে যথা- দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করা সেটি কমপিউটার প্রযুক্তি বা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাতের জন্য গত বছরে প্রযোজ্য ছিলো না৷

বিগত এক বছরে সরকার কমপিউটার প্রযুক্তিকে সামান্য গুরুত্ব দেয়নি৷ জোট সরকারের আমলের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন আইসিটি টাস্কফোর্সের কোনো সভা হয়নি৷ আমরা ভেবেছিলাম, এই সরকার সেই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠবে৷ কিন্তু সেটিও হয়নি৷ বরং সরকার ২০০৭ সালের শেষ দিকে বেটার বিজনেস ফোরাম নামের একটি সংস্থার জন্ম দিয়ে এই শিল্পের নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধকে সেখানে না রেখে একজন সাধারণ কমপিউটার ব্যবসায়ীকে তাতে অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ এমনকি এটিও দুর্ভাগ্যজনক, সরকার অতীতের সব প্রত্যাশাকে নষ্ট করে এবার কমপিউটারের ওপর শতকরা ৫ ভাগ শুল্ক ও অ্যাডভান্স ভ্যাট আরোপ করেছে৷ এতে সরকারের অনেক আয় হয়েছে সেটি অবশ্যই বলা যাবে না৷ কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সরকার আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ সর্ম্পকে একটি ভুল সঙ্কেত দিয়েছে৷ এর ফলে আমাদের নতুন প্রজন্ম অবশ্যই হতাশ হয়েছে৷ এক্ষেত্রে বড়ো অদ্ভুত ছিলো সরকারের কাজকর্মে৷ এই সরকার এআইটি নামের ব্যবসায়ীদের আকাঙ্খিত করটি আরোপ করেনি৷ কিন্তু শুল্ক আরোপ করেছে৷ সাথে অ্যাডভান্স ভ্যাটও আরোপ করেছে৷ জোটসরকার কাজকর্ম যাই করুক কাগজেকলমে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলো৷ কথাবার্তায়ও তাদের তুলনা বিরল ছিলো৷

২০০৩ সালেই জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিলেন৷ কিন্তু ঘোষণার পরই সেই সরকার জ্ঞানভিত্তিক সমাজের কথা ভুলে যায়৷ আমাদের জরুরি অবস্থার সরকারও দায়িত্ব নেবার সাথে সাথে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের প্রতি আগ্রহী ছিলো৷ কিন্তু বছরের শেষ দিকে তারা সেই সব শব্দই ভুলে যায়৷ খুব স্বাভাবিক কারণেই অতীতের সরকারের কমপিউটার সংগ্রহের আগ্রহটি হাওয়ায় উড়ে যায়৷ শিক্ষা খাতে কমপিউটার কেনার ব্যাপারটিও সরকার ভুলে যায়৷ জোট সরকারের তৈরি করা আইসিটি পলিসিতে উন্নয়ন বাজেটের শতকরা ২ ভাগ ব্যয় করার যে প্রতিশ্রুতি ছিলো বর্তমান সরকার সেটিও বাস্তবায়ন করেনি৷ কমপিউটারের যেসব খাতে সরকারের যথেষ্ট করণীয় ছিলো, খুব সঙ্গতকারণেই তা ঘটেনি৷ কালিয়াকৈরে হাইটেক পার্ক নির্মাণে সরকারের ব্যর্থতা ছিলো অমার্জনীয়৷ স্কুল-কলেজে কমপিউটার শিক্ষার দুরবস্থার কোনো অগ্রগতি হয়নি বিগত বছরে৷

তবে এই সরকার গত বছর একটি যুগান্তকারী ঘটনার জন্ম দিয়েছে৷ প্রায় দশ হাজার ল্যাপটপ কমপিউটার দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরির সিদ্ধান্তটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের কমপিউটার খাতকে অনেকে দূর পর্যন্ত নিয়ে যাবে এবং দীর্ঘদিন যাবত এর প্রভাব আমাদের সমাজে বিরাজ করবে৷ যদিও এই প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় নানা ত্রুটির কথা শোনা গেছে, তথাপি এমন একটি কাজ সফলতার সাথে সমাপ্ত করাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিরাট সাফল্য বলে মনে করি৷ এখন পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি লোকের তথ্য ও চিত্র সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে আমাদের নতুন প্রজন্মের সাধারণ তরুণ-তরুণীরা যে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে তার কোনো তুলনা হতে পারে না৷ এই প্রকল্পের জন্য সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার সংগ্রহের বিষয়ে নানা প্রশ্ন থাকার পাশাপাশি কপিরাইট লঘনের অভিযোগ থাকলেও এই প্রকল্প সারা বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছে যে বাঙালিরা সুযোগ পেলে দেখিয়ে দিতে পারে, এরা অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে৷ প্রাতিষ্ঠানিক কমপিউটার শিক্ষা ছাড়াই ল্যাপটপ কমপিউটার ব্যবহার করে জটিলতম প্রক্রিয়ায় আমাদের ছেলেমেয়েরা সময়ের আগেই তাদের জন্য নির্দিষ্ট করা কাজ শেষ করতে পারছে৷ এমনটি খুব কম প্রকল্পেই দেখা যায়৷ এর ফলে যারা ভেবেছিলো যে এই জাতি কোনোদিন ডিজিটাল ভোটার তালিকায় যেতে পারবে না তাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের সাফল্য দেখানো সম্ভব হয়েছে৷

গত বছরের একটি বড় সাফল্য ছিলো মোবাইল ইন্টারনেটের শুভারম্ভ৷ যদিও মোবাইল নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটের ব্যবহারের নানা জটিলতা আছে এবং ভোক্তাদের নানা সঙ্কট এখনো অপারেটররা দূর করেনি, তথাপি এর ফলে সারাদেশে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটার একটি বিশাল অবকাঠামোর জন্ম হলো৷ যদিও বিগত বছরে প্রত্যাশা অনুসারে ইন্টারনেটের দাম কমেনি এবং এর ফলে মাত্র সাড়ে চার লাখের মাঝে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা সীমিত হয়ে আছে তবুও মোবাইল ইন্টারনেট একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে৷ আমরা গত বছরে ভিওআইপি বৈধ হবার ঘোষণা শুনেছি৷ কিন্তু এটি কার্যকর করার বাস্তব কোনো উপায় সেই বছরে দেখানো হয়নি৷ যার ফলে জনগণ এখনো আশা করতে পারছে না যে এই প্রযুক্তির সুফল আমরা খুব সহসাই পাবো৷ অন্যদিকে কল সেন্টার ও ওয়াইম্যাক্সপ্রযুক্তি নিষিদ্ধ থাকার ফলে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি কারাগারে বন্দী থেকে গেলো৷ দেশের সফটওয়্যার, প্রশিক্ষণ ও কমপিউটার শিক্ষা খাতে বিগত বছরটিকে আরো একটি ব্যর্থ বছরই মনে করতে হবে৷ কমপিউটার বিষয়ে উচ্চশিক্ষার প্রতি আমাদের নতুন প্রজন্মের অনাগ্রহ হতাশাজনক৷ শিক্ষার মানেরও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করা যায় না৷ দেশের অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ খাতে হতাশা আগের বছরের চাইতে আরো গভীর হয়েছে৷ সফটওয়্যার রফতানির মাত্রা বাড়লেও দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সফটওয়্যারের বাজার তেমন উন্নত হয়নি৷ বিগত বছরেও মেধাস্বত্ব পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি৷ বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবার ফলে সামগ্রিক ইমেজ আরো নষ্ট হয়েছে৷ তবে সেবা খাতে নতুন আশার আলো দেখা গেছে৷ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে আইটি সার্ভিসেস রফতানির ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে গত বছরে৷ তবে সার্বিকভাবে এই শিল্পের বিড়ম্বনার কথা মনে করলে মনে হয় সময়টি ছিলো দুঃস্বপ্নের৷ গত বছর বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তিতে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ইন্টেলের চেয়ারম্যান ড. ক্রেইগ ব্যারেটের বাংলাদেশ সফর৷ তিনি দেশের একটি তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে গেছেন৷ এ চুক্তির আওতায় শিক্ষকদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া, স্কুল পর্যায়ে কমপিউটার বিতরণ করা ছাড়াও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ ২০১১ সালের মধ্যে সারাদেশে ৪০ হাজার টেলিসেন্টার স্থাপনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ টেলিসেন্টার নেটওয়ার্কের মিশন ২০১১-এর যাত্রা গত বছরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা৷ এছাড়াও এ বছরের শেষের দিকে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় বুয়েটের শীর্ষস্থান অর্জন, যা ছিল গত কয়েক বছর ধরে চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে৷

যদি আমরা ২০০৮ সালের প্রত্যাশা বিষয়ে কিছু বলতে চাই, তাহলে প্রথমেই একথা মনে করতে হবে যে বিগত বছরের স্থবিরতা থেকে প্রথমেই সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে৷ বিগত বছরে কমপিউটার প্রযুক্তির সব খাতে যেসব ব্যর্থতা ছিলো তার পুনরাবৃত্তি কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়৷ বরং আমরা চাই সরকার ২০০৮ সালটি ক্ষমতায় থাকলেও এমন কিছু কাজের সচনা করবে যাতে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের সচনা হয়৷ আমি প্রথমেই সরকারকে অনুরোধ করবো তার নিজের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য ব্যাপকভাবে সর্বপর্যায়ে কমপিউটার ব্যবহার করার জন্য৷ এজন্য সরকারকে তার শতবর্ষের আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভাঙতে হবে৷ সরকারকে ফাইল চালাচালির বদলে ডিজিটাল ইনফরমেশন প্রসেসিং পদ্ধতিতে সরকার পরিচালনা করতে হবে৷ সর্বিনু স্তরের কেরানি থেকে শুরু করে সরকারের সচিব বা মন্ত্রী/উপদেষ্টাকে ডিজিটালি একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে৷ সরকারের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করার পাশাপাশি সরকারকে তার দক্ষতা বাড়ানোর ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে৷ সরকার যাকে ই-গভর্নেন্স বলে আমি তাকে আরো সামনে দেখতে চাই৷ একটি বিভাগ, মন্ত্রণালয় বা অফিসের একটি ওয়েব পেজ তৈরি করাকেই আমাদের আরাধ্য কাজ বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না৷ সরকার বরং ডিজিটাল সরকার হোক এবং তার অঙ্গের সর্বত্রই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহৃত হোক৷ আমরা এরই মাঝে এমনটি শুনেছি যে অটোমেশন করা বা কমপিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার সরকারের রাজস্ব আয়কে শতগুণ বাড়াতে পারে৷ একইভাবে সরকার শিক্ষায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে৷ সরকারি অফিসে ডিজিটাল যোগাযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি আমাদের চিকিত্সা ব্যবস্থা ডিজিটাল হতে পারে৷ সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও তথ্য সংরক্ষণ হতে পারে ডিজিটাল৷ আরো স্পষ্ট করে বলতে হলে বলতে হবে, সরকারকে তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উন্নয়ন বাজেটের শতকরা ২ ভাগ কমপিউটার খাতে ব্যবহার করতে হবে৷ সম্ভব হলে বিগত বছরগুলোতে এই খাতে যে পর্যাপ্ত বা প্রতিশ্রুত ব্যয় করা হয়নি সেটিও পুষিয়ে নিতে হবে৷ চলতি বছর থেকেই এই কার্যক্রম শুরু করতে হবে৷ আশা করবো, সরকার এ বছরেই আইসিটি পলিসি নবায়ন করবে এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যানের প্রতিশ্রুতি অনুসারে ওয়াইম্যাক্স, কল সেন্টার পলিসি তৈরি করবে এবং ঝুলে থাকা ভিওআইপির কার্যক্রম চালু করাসহ আইপি টেলিফোনি চালু করবে৷ আমরা আশা করবো, এই সময়ে সরকার দেশের ভেতরের ও বাইরের ইন্টারনেট যোগাযোগের মল্য অন্তত ২৫ গুণ কমাবে- কারণ আমরা এখন তেমনটি পিছিয়েই আছি৷

সামগ্রিকভাবে আমরা ২০০৮ সালকে তথ্যপ্রযুক্তির জন্য আশাবাদের সময় হিসেবে পেতে চাই৷ একই সাথে এই শিল্পের সাথে জড়িত সকলেই চাই সরকারকে এই খাতে আন্তরিকভাবে সহায়তা করতে৷

ফিডব্যাক : mustafajabbar@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - জানুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস