কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার গেমের প্রথম নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ছিলো ওয়েস্টউড স্টুডিও, কিন্তু তাদের কাছ থেকে এ গেম সিরিজের স্বত্ব কিনে নেয় বিখ্যাত গেম নির্মাতা কোম্পানি ইলেক্ট্রনিক আর্টস। এ সিরিজের সূত্রপাত ঘটে ১৯৯৫ সালে কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার- টাইবেরিয়াম ডন-এর মধ্য দিয়ে। কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার সিরিজের গেমগুলো তিন ভাগে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে- টাইবেরিয়াম, রেড অ্যালার্ট ও জেনারেলস সিরিজ। টাইবেরিয়াম সিরিজের গেমে মূলত দুটি জাতি- গ্লোবাল ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভস (জিডিআই) ও ব্রাদারহুড অব নড। এদের যেকোনো একটিকে নিয়ে ভবিষ্যতের পৃথিবীতে ক্ষমতার আসন নিয়ে লড়াই করতে হবে। এতে ভিনগ্রহের একটি জাতিও রয়েছে- যার নাম স্ক্রিন। এ সিরিজের মুক্তি পাওয়া গেমগুলো হচ্ছে- টাইবেরিয়াম ডন, টাইবেরিয়াম সান, রেনেগেড, টাইবেরিয়াম ওয়ারস ৩ ও এর এক্সপানশন কেইন’স রেথ। দিবতীয় বিশ্বযুদ্ধের কাহিনীর ওপরে নির্মিত রেড অ্যালার্ট সিরিজের গেমের মধ্যে রয়েছে কাউন্টার স্ট্রাইক, দ্য আফটারম্যাথ, রেটালিয়শন, ইয়ুরিস রেভেঞ্জ (রেড অ্যালার্ট ২), রেড অ্যালার্ট ৩ এবং রেড অ্যালার্ট ৩-এর এক্সপানশন রাইজিং সান। জেনারেল সিরিজের গেমে যুদ্ধে লিপ্ত হতে হবে ইউএসএ, চীন ও গ্লোবাল লিবারেশন আর্মি- এ তিন বাহিনী নিয়ে। এ সিরিজের মাত্র একটি এক্সপানশন রয়েছে জিরো আওয়ার নামে।
প্লট
কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার সিরিজের নতুন সংযোজন সম্প্রতি অবমুক্ত করা হয়েছে এবং এটি হচ্ছে কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার ৪ টাইবেরিয়ান টোয়াইলাইট। গেমের কাহিনীর পটভূমি হচ্ছে ২০৬২ সাল। এখানে দেখানো হয়েছে মানবজাতির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। কারণ মহামূল্যবান টাইবেরিয়াম ক্রিস্টালকে কেন্দ্র করে গ্লোবাল ডিফেন্স ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই) ও ব্রাদারহুড অব নডের মধ্যকার লড়াইয়ের ফলে পুরো পৃথিবী ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে নডের কর্ণধার কেইন একটি সিস্টেম বা ব্যবস্থা আবিষ্কার করেন, যার নাম ‘টাইবেরিয়াম কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক’, যা ঠিকমতো বানানো গেলে টাইবেরিয়ামের শক্তির নিয়ন্ত্রণ ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে, কিন্তু নডের পক্ষে একা এ বিশাল কাজ করা সম্ভব নয়, তাই কেইন জিডিআইয়ের সাথে সন্ধিচুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং উভয় প্রতিষ্ঠান মিলে ১৫ বছরের কঠিন সাধনার পর টাইবেরিয়াম কন্ট্রোল নেটওয়ার্ক বানাতে সক্ষম হয়। কিন্তু এতদিন পরে প্রশ্ন ওঠে কেইন কেন জিডিআইকে এ কাজে সাহায্য করেছে এবং সাহায্যের বিনিময়ে তার দাবি কি? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে গেমারকে নতুন এ গেমটি খুবই মনোযোগ দিয়ে খেলতে হবে।
নতুন ফিচার
এবারের পর্বে মূল দুটি ফ্যাকশন বা জাতি অর্থাৎ জিডিআই ও নডকে রাখা হয়েছে। এ গেমে আগের গেমগুলোর মতো ভিনগ্রহের জাতি স্ক্রিনকে রাখা হয়নি। নড ও জিডিআই উভয় পক্ষকেই আবার তিনটি ক্লাসে ভাগ করা হয়েছে, যেমন- অফেন্স, ডিফেন্স ও সাপোর্ট। এবারই প্রথম গেমটিতে আগের পুরনো গেমগুলোর মতো ঘাঁটি বা বেইজ স্থাপন করে টাইবেরিয়াম সংগ্রহের কাজ করার প্রয়োজন পড়বে না। আবার একস্থানে ঘাঁটি বানানোরও প্রয়োজন পড়বে না। এছাড়া নতুন গেমটি শুধু বিপরীত পক্ষের আক্রমণ ঠেকানো ও তাদের সমূলে নির্মূল করার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেনি, বরং এবারের গেমটি বানানো হয়েছে ডন অব ওয়ার সিরিজের গেমের মতো করে, যেখানে প্লেয়ারকে ম্যাপের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা কন্ট্রোল পয়েন্টগুলো দখল নিয়ে সেগুলোর সুরক্ষা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত যার দখলে বেশিসংখ্যক কন্ট্রোল পয়েন্ট থাকবে তার জয় সুনিশ্চিত। এছাড়াও মাল্টিপ্লেয়ার ও কো-অপারেটিভ মোডে গেমটি খেলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অনলাইন মোডে সর্বোচ্চ ১০ জন একসাথে গেমটি খেলতে পারবে।
সুবিধা
গেমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে প্রতিটি ফ্যাকশনের ক্লাসগুলো। গেমার তার পছন্দের ক্লাস নিয়ে গেম খেলা শুরু করতে পারবেন। যে সবসময় আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য অফেন্স ক্লাস নিয়ে খেলাই হবে যুক্তিযুক্ত। এ ক্লাসে বাড়তি সুবিধা হিসেবে পাওয়া যাবে শক্তিশালী ট্যাঙ্ক ও অন্যান্য ভারি অস্ত্রযুক্ত যুদ্ধযান যা কি-না বিপরীত পক্ষের সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে আক্রমণে অনেক সহায়তা করবে। আবার যারা ডিফেন্স ক্লাস নিয়ে খেলবেন তাদের বাড়তি সুবিধা হিসেবে ঘাঁটি সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী কামান, অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ও পারমাণবিক বোমা বা সুপার উইপন ব্যবহার করার সুবিধা।
জিডিআইতে যুক্ত নতুন ও আপগ্রেডেড কিছু ট্রুপ ও যুদ্ধযান হচ্ছে- হান্টার নামের মূল ব্যাটেল ট্যাঙ্ক, ক্রাউলার নামের চলমান ছোট কনস্ট্রাকশন ভেহিকেল, Orca Mk V নামের মাঝারি আকারের এয়ারক্রাফট, স্যান্ডস্টার্ম নামের একটি মাল্টিমিসাইল লঞ্চার, মাস্টোডন নামের চার পাওয়ালা বিশাল আকারের চলমান বেইস, রিফ্রাক্টর নামের হ্যাভি ট্যাঙ্ক ও টাইটান নামের দুই পায়ে চলা রোবট। এছাড়া নডের বাহিনীতে নতুনের মধ্যে রয়েছে নড অ্যাভাটার, যা আগের গেমের অ্যাভাটার রোবটটির আপগ্রেডেড ভার্সন। এছাড়া রয়েছে সাইবোর্গ কমান্ডো নামের খুব শক্তিশালী পদাতিক বাহিনী, আপগ্রেডেড ফ্লেম ট্যাঙ্ক, ওবেলিস্ক অব লাইট নামের ডিফেন্স টাওয়ার, নড স্যালামান্ডার নামের হ্যাভি এয়ারক্রাফট, স্করপিয়ন ট্যাঙ্ক ও স্টিলথ ট্যাংক।
অসুবিধা
গেমের গ্রাফিক্স এককথায় অসাধারণ। তাই গেমটির সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট কিছুটা বেশিই চাওয়া হয়েছে। গেমটি চালাতে ন্যূনতম ইন্টেলের কোর টু ডুয়ো বা এএমডির অ্যাথলন এক্স মানের প্রসেসরের দরকার হবে। এর চেয়ে নিম্নমানের প্রসেসরে গেমটি চলতে পারে, তবে তাতে গেম চলার সময় আটকাতে পারে বা গ্রাফিক্স কোয়ালিটি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রেখে খেলতে হবে। গেমটিতে যুদ্ধের জন্য শুধু আকাশপথ ও স্থলপথ ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু জলপথে যুদ্ধ করা যায় না। যদিও এ সিরিজের আগের গেমগুলোতেও এ সুবিধা ছিল না, তবে কমান্ড অ্যান্ড কনকোয়ার-রেড অ্যালার্ট সিরিজে জলপথে যুদ্ধ করাটাই হচ্ছে মূল আকর্ষণ।
সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট
ইন্টেল কোর টু ডুয়ো ২.৪ গি.হা. বা এএমডি ৬৪ এক্স-২ ৪২০০+ প্রসেসর হলেই গেমটি মোটামুটি ফুল ডিটেইলসে খেলা যাবে। গেমটি এক্সপিতে চালাতে ১ গিগাবাইট র্যাকম ও ভিসতাতে চালানোর জন্য ১.৫ গিগাবাইট র্যাতমের প্রয়োজন হবে। কিন্তু ভালো পারফরমেন্স পেতে হলে ৩ গিগাবাইট র্যাডম লাগবে। পিক্সেল শ্রেডার ৩.০ সাপোর্টেড ২৫৬ মেগাবাইট গ্রাফিক্স কার্ড হলেই গেমটি চালানো যাবে, তবে ন্যূনতম জিফোর্স ৭৯০০ জিটিএক্স বা রেডিওন এক্স১৯০০ সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ড হলে গেমটির পুরো স্বাদ উপভোগ করা যাবে। গেমটি ইনস্টল করার জন্য হার্ডডিস্কে ১০ গিগাবাইট ফাঁকা স্থান লাগবে। ডিরেক্ট-এক্স ১০ সাপোর্টেড গ্রাফিক্স কার্ডে ফুল ডিটেইলসে গেমটি খেললে গেমের গ্রাফিক্স প্রায় বাস্তব বলে মনে হবে। গেমে সাউন্ড ইফেক্টের কোয়ালিটিও খুবই উন্নতমানের। ভালোমানের গ্রাফিক্স চিপসেটসম্পন্ন ল্যাপটপেও গেমটি চালানো যাবে। তাই আর দেরি কেন, আজই গেমটি কিনে ভবিষ্যতের কাল্পনিক ও অত্যাধুনিক যুদ্ধে মত্ত হয়ে যান ডেস্কটপে কিংবা ল্যাপটপে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : shmt_15@yahoo.com