সম্প্রতি মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ৭ বাজারে আসার সাথে সাথে এর উন্নতমানের সিকিউরিটি ফিচারের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। উইন্ডোজ ৭-এ বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা ব্যবহার করে কমপিউটারকে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। নিচে উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে কমপিউটারকে সুরক্ষা দেয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেম মাইক্রোসফটের অন্যান্য ভার্সনের তুলনায় অধিক সিকিউরিটি ফিচারসমৃদ্ধ। এতে এমন কিছু ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যা আপনার কমপিউটারকে ম্যালওয়্যার, হ্যাকার ও অন্যান্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে। এ ধরনের সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রথমেই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে একটি অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করে আপডেট করে নিতে হবে এবং উইন্ডোজ ৭-এর বেশ কিছু ফিচার অ্যানাবল করে নিতে হবে। নিচে বেশ কিছু ফিচার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যা আপনার কমপিউটারের সিকিউরিটি লেভেলকে বাড়াতে সাহায্য করবে।
ধাপ-১ :
যেকোনো কমপিউটারকে সুরক্ষিত করার জন্য প্রথম, যা প্রয়োজন তা হচ্ছে ভালো মানের একটি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করা। প্রয়োজনে উইন্ডোজ ৭-কে আপগ্রেড করে নিন। আপগ্রেড করার পর স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে সার্চে Network টাইপ করে এন্টার চাপুন। Network and Sharing Center-এ ক্লিক করে নেটওয়ার্ক কানেকশনকে অ্যানাবল করে নিন। এবার কমপিউটারে ভালোমানের যেকোনো অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করে আপডেট করে নিন।
ধাপ-২ :
Network and Sharing Center-এর নিচের দিকে উইন্ডোজ ফায়ারওয়াল লিঙ্কে ক্লিক করুন। অথবা Windows Firewall Stateকে অ্যানাবল করে নিন। যখন আপনি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হবেন, তখন কোনো হ্যাকার আপনার কমপিউটারে অ্যাকসেস করতে চাইলে ফায়ারওয়াল তা প্রতিহত করবে।
ধাপ-৩ :
মাইক্রোসফট প্রতিনিয়ত সিকিউরিটি প্যাচ ইন্টারনেটে ছাড়ছে। তাই আপনার উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমের সিকিউরিটি বাড়ানোর জন্য আপডেটেড সিকিউরিটি প্যাচ ডাউনলোড করে ইনস্টল করে নিন।
ধাপ-৪ :
উইন্ডোজ ৭, উইন্ডোজ ভিসতার ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোলকে (UAC) পরিবর্তন করেছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের এরর পেলে এ অপারেটিং সিস্টেম উপেক্ষা করে যায়। এতে কমপিউটারের সিকিউরিটি লেভেল অনেকাংশ কমে যায়। UACকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে সার্চে UAC টাইপ করে এন্টার চাপুন। Change User Account Control সেটিংয়ে ক্লিক করুন। এখানে স্লাইডারকে উপরের দিকে নিয়ে ‘Always notify’ হিসেবে সেট করে ওকে বাটনে ক্লিক করুন। এতে প্রতিক্ষেত্রে যেকোনো এরর মেসেজ পেলেই মেসেজ দেখাবে।
ধাপ-৫ :
ম্যালওয়্যার ডিটেকশনের জন্য উইন্ডোজ ডিফেন্ডার উইন্ডোজ ৭-এর সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আপনি যদি কোনো অ্যান্টিভাইরাস টুল ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে একে ইনস্টল করার প্রয়োজন নেই। তবে অন্য কোনো অ্যান্টিভাইরাস না থাকলে ডিফেন্ডারকে অ্যানাবল করে আপডেট করে নিন। আপডেট করার জন্য স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে সার্চে Defender টাইপ করে এন্টার চাপলে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার লিঙ্ক খুলবে। এখানে চেক ফর আপডেট-এ ক্লিক করে উইন্ডোজ ডিফেন্ডারকে আপ-টু-ডেট করে নিন।
ধাপ-৬ :
আপনার পরিবারের শিশুদের রক্ষা করার জন্য উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমে Parental Controls System ফিচারটি যুক্ত করে নিতে পারেন। সাধারণত উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে Parental Control System, মেসেঞ্জার, মেইল, ফটো গ্যালারি, মুভি মেকার বিল্টইন নেই। তবে এগুলো ইন্টারনেট হতে ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে পারেন। ডাউনলোড করার জন্য স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে সার্চে Live টাইপ করে এন্টার প্রেস করুন। Go Online to get Windows Live Essentials link-এ ক্লিক করুন। http://download.live.com থেকে একটি উইন্ডো প্রদর্শিত হবে। Download লিঙ্কে ক্লিক করে আপনার প্রয়োজনীয় ফিচার ডাউনলোড করে নিন।
ধাপ-৭ :
কমপিউটারে উইন্ডোজ লাইভের সফটওয়্যারগুলো ডাউনলোড হয়ে গেলে ইনস্টল করার জন্য ক্লিক করুন। এতে যে উইন্ডো প্রদর্শিত হবে এখানে Family Safety বক্সে ক্লিক করুন এবং অন্য যেসব ফিচার আপনার প্রয়োজন তাতে ক্লিক করে ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া শুরু করুন। ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর স্টার্ট মেনুতে ক্লিক করে সার্চে Family লিখে এন্টার চাপুন। এখানে Family Safety Link-এ ক্লিক করুন। আপনার উইন্ডোজ লাইভ আইডি দিয়ে লগইন করুন। লাইভ আইডি না থাকলে সাইনআপ করে আইডি দিয়ে লগইন করুন। এবার উইন্ডোজ অ্যাকাউন্ট থেকে ঠিক করে দিন কী ধরনের সিকিউরিটি বা রেস্ট্রিকশন সেট করতে চাচ্ছেন বা ফ্যামিলি অ্যাকাউন্ট মনিটরিং করতে চাচ্ছেন।
ধাপ-৮ :
উইন্ডোজ ৭-এ ইতোমধ্যে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৮ ব্যবহার করা যাচ্ছে। এবার সিকিউরিটির জন্য ওয়েব ব্রাউজারকে কনফিগার করে নিতে হবে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৮ খুলুন। ALT কী-তে প্রেস করে টুল হতে Smart Screen Filter সিলেক্ট করে একে অ্যানাবল করুন। আবার ALT কী-তে প্রেস করে টুল থেকে ইন্টারনেট অপশনে ক্লিক করুন। এখন সিকিউরিটি ট্যাবে ক্লিক করুন। Enable Protected Mode সিলেক্ট করে দিন। এতে কোনো ম্যালিসিয়াস সাইট জোর করে কোনো স্পাইওয়্যার আপনার কমপিউটারে ডাউনলোড করাতে চাইলে আপনাকে পপ-আপ মেসেজে তা দেখাবে। এবার Privacy ট্যাবে ক্লিক করে Pop-up Blocker অ্যানাবল করে নিন।
উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমের জন্য বেশ কিছু প্রটেকশন নিতে পারছেন। কমপিউটারের সিকিউরিটির লেভেল আরো বাড়ানোর জন্য ব্যাকআপ পদ্ধতিটি এনাবল করতে হবে। আগের তুলনায় ব্যাকআপ পদ্ধতি উইন্ডোজ ৭-এ সহজ করা হয়েছে। এর জন্য স্টার্টে ক্লিক করে সার্চে Backup টাইপ করে এন্টার চাপুন। Backup and Restore লিঙ্কে ক্লিক করুন। ব্যাকআপে ক্লিক করুন। যে ড্রাইভকে ব্যাকআপ রাখতে চাচ্ছেন তাতে ক্লিক করে নেক্সট বাটনে ক্লিক করে Let Windows Choose অপশনটি সিলেক্ট করলে উক্ত ড্রাইভের সব ডাটা ব্যাকআপ হবে। আর নির্দিষ্ট কিছু ফাইল ব্যাকআপ নেয়ার জন্য Let me choose অপশনে ক্লিক করে আপনার প্রয়োজনীয় ফাইলসমূহ সিলেক্ট করে দিন। এবার নেক্সট বাটনে ক্লিক করে ব্যাকআপ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করুন। একবার ব্যাকআপ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিডিউলভিত্তিক ব্যাকআপ পদ্ধতি সিলেক্ট হয়ে যাবে, যা পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাটা ব্যাকআপ হতে থাকবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : rony446@yahoo.com