• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > পিসির ক্ষতিকর ৩ উপাদান
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: তাসনীম মাহ্‌মুদ
মোট লেখা:১২৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
পিসি
তথ্যসূত্র:
ব্যবহারকারীর পাতা
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
পিসির ক্ষতিকর ৩ উপাদান

কমপিউটার জগৎ-এর নিয়মিত বিভাগ ব্যবহারকারীর পাতায় সাধারণত এমন বিষয় উপস্থাপন করা হয় যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী তাদের দৈনন্দিন কমপিউটিং জীবনের উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যার কারণ ও সমাধান, প্রয়োজনীয় বিভিন্ন টুলের ব্যবহারবিধি ও পরিচিতিসহ ব্যবহারকারীর জন্য করণীয় দিকনির্দেশনাসমূহ জানতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। মাঝেমধ্যে এমন সব বিষয় এ বিভাগে উপস্থাপন করা হয়, যা খুবই সাদামাটা মনে হলেও বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই সে বিষয়ে হয়তো তেমন স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না। অনেকটা অন্ধের মতো কাজ চালিয়ে যান। এ সত্য উপলব্ধিতে এবারের ব্যবহারকারীর পাতায় এমন বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যা আমাদের অনেকেরই জানা থাকলেও বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই কাছেই অজানা। যেমন পিসির বিভিন্ন উপাদানে ব্যবহার হওয়া রাসায়নিক পদার্থের সরাসরি সংস্পর্শ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য যেমনি ক্ষতিকর, তেমনি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর ও মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

যদি আপনি পিসির বিভিন্ন অংশ খুলে উন্মুক্ত করে রাখেন, তাহলে টক্সিক ধাতু যেমন সীসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, বেরিয়াম, ক্রোমিয়াম এবং তামার প্রভৃতির মাধ্যমে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদানসম্বলিত কমপিউটার কম্পোনেন্ট মস্তিষ্ক, কিডনি, ভ্রূণ ও রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেমের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে কমপিউটার প্রস্ত্ততকারীদের ন্যূনতম আরওএইচএস (রেসট্রিকশন অন হ্যাজারডাস সাবস্ট্যান্সেস ডাইরেক্টিভ) নীতিমালা অনুসরণ করে কমপিউটার ও কমপিউটারসংশ্লিষ্ট পণ্য তৈরি করতে হয়, যাতে করে সেগুলো হয় পরিবেশবান্ধব। এ নীতিমালায় কমপিউটারসংশ্লিষ্ট পণ্যে টক্সিক কম্পোনেন্টের ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করা হয়েছে। কমপিউটারসংশ্লিষ্ট পণ্য প্রস্ত্ততকারীদেরকে অবশ্যই তৈরি করতে হবে সীসামুক্ত সোল্ডার ও সীসামুক্ত কম্পোনেন্ট। আর ক্রেতাসাধারণকে অবশ্যই কমপিউটার ও কমপিউটারসংশ্লিষ্ট পণ্য কেনার ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে সেগুলো পরিবেশবান্ধব ও ক্ষতিকর ধাতুমুক্ত কি না।

পিসির বিভিন্ন উপাদানে ব্যাপকভাবে ক্ষতিকর যে বিষাক্ত উপাদান রয়েছে তার ক্ষতিকর প্রভাব ও প্রতিকার নিম্নরূপ :

০১. সিআরটি মনিটর-



সীসা, ফসফোরাস, ক্যাডমিয়াম : টেলিভিশন সেট ও মনিটরে ব্যবহার করা হয় সিআরটি তথা ক্যাথোড রে টিউব। এতে ইমেজ তৈরি হয় ইলেক্ট্রন বিমের মাধ্যমে, যা টিউবের মধ্যে ফসফরাস কোটকে আঘাত করে। ফসফরাস ছাড়াও সিআরটি মনিটর ধারণ করে ক্যাডমিয়াম ও প্রায় তিন কেজি ওজনের সীসা। সিআরটি মনিটরের ছোট ছোট কম্পোনেন্ট সুরক্ষিত করার জন্য ব্যবহার হয় এই সীসা। এ সীসা যখন ভূমির সংস্পর্শে আসে তখনই ক্ষতিকর পরিস্থিত সৃষ্টি হয়।

০২. এলসিডি মনিটর-



সীসা, পারদ, তামা : এলসিডি মনিটর ও টেলিভিশন ফ্লোরেসেন্ট ব্যাকলাইট সম্বলিত। এগুলো প্রচুর পরিমাণে সীসা, পারদ এবং তামাসমৃদ্ধ। এলসিডি তথা লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে মনিটর পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে দিলে সিআরটি মনিটরের চেয়ে কম ক্ষতি করে। এছাড়া এলসিডি মনিটর অধিকতর বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর নিরাপদ। সিআরটি মনিটর যে পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে এলসিডি মনিটর তার অর্ধেক পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার করে। এছাড়া এলসিডি মনিটর সিআরটি মনিটরের মতো ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নিঃসরণ করে না।

০৩. ব্যাটারি-



পারদ, ক্যাডমিয়াম : বেশিরভাগ ব্যাটারিই ধারণ করে টক্সিক কেমিক্যাল। এই ব্যাটারি লিক করলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। বায়োসে ব্যবহার হওয়া বাটন শেল শিশুদের নাগালে থাকলে তা শিশুরাও গিলে ফেলতে পারে। এর ফলে পেটের ভেতরে লিক হয়ে যেতে পারে গ্যাসট্রিক জুসের কারণে। আলসার বা বমি হতে পারে। আর অ্যালকাইন ব্যাটারিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পারদ থাকে।

০৪. মাদারবোর্ড ও এক্সপানশন কার্ড-



সীসা, ক্যাডমিয়াম : মাদারবোর্ড ও গ্রাফিক্সকার্ডে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক উপাদানজুড়ে দেয়ার জন্য সোল্ডারে সীসা ব্যবহার করা হয়। ইলেক্ট্রনিক উপাদান যেমন রেজিস্টর ক্যাপাসিটর এবং সেমিকন্ডাক্টরে যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতিকর সীসা ও ক্যাডমিয়াম থাকে। সুপ্রতিষ্ঠিত ও বিখ্যাত কোম্পানিগুলো বর্তমানে সীসামুক্ত সোল্ডার তৈরি করে এবং বিভিন্ন উপাদানে কম ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান ব্যবহার করে।

৫. ইঙ্ক ও টোনার কার্ট্রিজ, প্রিন্টার ড্রাম (ফটো কপিয়ার)-



ইঙ্ক ও টোনার কার্ট্রিজ, প্রিন্টার ড্রাম প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর উপাদান ক্যাডমিয়াম ব্যবহার হয়। তাই পরিত্যক্ত বা খালি পুরনো প্রিন্টার ড্রাম, ইঙ্কজেট ও লেজার প্রিন্টার কার্ট্রিজ যেখানে সেখানে ফেলা উচিত নয়। কেননা ক্যাডমিয়াম দীর্ঘদিন অনাবৃত অবস্থায় থাকলে কিডনির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কার্ট্রিজ প্রস্ত্ততের জন্য যে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয় তাও তেমন মানসম্মত নয়। এগুলো টক্সিক কেমিক্যালের যৌগ যা মৃত্তিকা, বায়ুমন্ডল এবং পানির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

৬. টেপ ও ফ্লপি ডিস্ক-

ক্রোমিয়াম ম্যাগনেটিক মিডিয়া, যেমন টেপ ও ফ্লপি ডিস্কে ব্যবহার হয় ক্রোমিয়াম ডাইঅক্সাইড ম্যাগনেটিক রেকর্ডিং পার্টিকেল হিসেবে। যদিও ক্যাসেট টেপ এখন বাতিল হয়ে গেছে, তবে টেপ এখনো ব্যবহার হয় এন্টারপ্রাইজ শ্রেণীর শক্তিশালী স্টোরেজ সিস্টেমে। ক্রোমিয়াম একটি ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান, যা খুব সহজে মানবদেহে শোষিত হতে পারে। এটি ডিএনএ ধ্বংস করতে পারে, যা মানবদেহ বিকাশে সহায়ক। ক্রোমিয়াম দীর্ঘদিন উন্মুক্ত অবস্থায় থাকলে ফুসফুস ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কর্মক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় ক্রোমিয়াম থাকলে হাঁপানির কারণ হতে পারে, সৃষ্টি হতে পারে অ্যালার্জিও।

কমপিউটারের ক্ষতিকর ধাতুসমূহ

সীসা :
কমপিউটারে ব্যবহার হওয়া এই উপাদান আমাদের মস্তিষ্ক স্নায়ুকে আক্রান্ত করে। বয়ঃসন্ধিকালে এই উপাদান শিশুদের শরীরের বিভিন্ন অর্গানকে বিষাক্ত করতে পারে। যদি কোনো ব্যক্তি নিয়মিতভাবে প্রতিদিন শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে গুঁড়া সীসা বা সূক্ষ্ম কণা গ্রহণ করে অথবা সীসা গলাধঃকরণ করে, তাহলে তার বেশকিছু শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হবে, যেমন মাথা ব্যথা, বধিরতা, নিদ্রাহীনতা, স্মৃতিভ্রষ্টতা এবং আইকিউ কমে যাবে।

পারদ :
কমপিউটারে ব্যবহার হওয়া পারদ মস্তিষ্কের বেশ ক্ষতি করে। গর্ভবতী মায়ের ভ্রূণ নষ্টও করতে পারে। এর ফলে শিশু ভূমিষ্ঠ হতে পারে বিকলাঙ্গ, মস্তিষ্ক বিকৃতি বা স্মৃতিসংক্রান্ত সমস্যায়। যদি গর্ভবতী মহিলা বিপুল পরিমাণে উন্মুক্ত অর্গানিক পারদ নিয়ে নিয়মিতভাবে কাজ করেন, তাহলে ভূমিষ্ঠতব্য শিশুর ব্রেন ড্যামেজ হতে পারে।

ক্যাডমিয়াম :
এর প্রভাবে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা ও জ্বরবোধ হয়, শরীর নিসেত্মজ হয়ে পড়ে, পেশী ব্যথা করে, যা ক্যাডমিয়াম ব্লু হিসেবে পরিচিত। শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে ক্যাডমিয়াম গুঁড়া গেলে শ্বাসতন্ত্রে ও কিডনির ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, এমনকি ধমনী কার্যকারিতা হারাতে পারে। ব্যাপক পরিমাণে ক্যাডমিয়াম দেহে ঢুকে পড়লে অনেক সময় তাৎক্ষণিকভাবে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এতে করে লিভার ও কিডনি অকেজো হয়ে যেতে পারে।

বেরিয়াম :
বেরিয়ামের বিশেষ যৌগ যেমন বেরিয়াম কার্বনেট, বেরিয়াম ফ্লোরাইড প্রভৃতির প্রভাবে পাকস্থলী সংক্রান্ত সমস্যা যেমন বমি বমি ভাব, অ্যাবডুমিনাল পেইন, ডায়রিয়া ইত্যাদির প্রকোপ দেখা দিতে পারে।

ক্রোমিয়াম :
শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে উচ্চমাত্রায় ক্রোমিয়াম শরীরে ঢুকলে নাকে বিরক্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়। হাঁচি, ঠান্ডা, কাশি, আলসার, নাকে রক্তক্ষরণ, নাকে ক্ষত প্রভৃতি সৃষ্টি হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ীভাবে উন্মুক্ত ক্রোমিয়ামের সংস্পর্শে থাকলে ফুসফুস ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : swapan52002@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস