দেহকে সুগঠিত রাখতে মানুষ কত কিছুই না করে। কেউ যায় জিমে, কেউবা পার্কে বা খোলা জায়গায় করে দৌড়ঝাঁপ। কিছু মানুষের এই প্রচেষ্টার সাথে এখন যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি। তাই অনেক কম পরিশ্রমে হেঁটে বা দৌড়ে পৌঁছে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে। এসব ব্যয়সাশ্রয়ীও বটে।
এমনি একটি প্রযুক্তিপণ্যের নাম পেসার। এই যন্ত্রটি বসানো থাকে কেডস বা জুতার নিচে, পায়ের তলায়। আকারে ছোট হওয়ায় পায়ের নিচে পড়ে থাকলেও অস্বস্তি লাগে না। ব্যয়বহুল জিমে গিয়ে যে কাজটি করা যেতো, ওই পেসারের কল্যাণে তা এখন করা যাচ্ছে ঘরে বসেই। প্রতিটি পদক্ষেপে হৃদস্পন্দনসহ দেহের অন্যান্য বিষয় মনিটর করে এই পেসার। একই সাথে দেয় শ্রুতিগ্রাহ্য নির্দেশনা। বলে দেবে আপনার কী প্রয়োজন এবং যা করছেন তা সঠিক হচ্ছে, নাকি বেঠিক।
ওই পেসার ইউএসবি সংযোগের মাধ্যমে যুক্ত থাকবে একটি কমপিউটারের সাথে। পেসারের সাথে যুক্ত থাকা আরো দুটি যন্ত্র থেকেও তথ্য সংগৃহীত হবে। থাকবে এমপিথ্রি প্লেয়ার। তাই শ্রুতিগ্রাহ্য নির্দেশনার পাশাপাশি গানও শোনা যাবে। বুকে বাঁধা থাকবে একটি বেল্ট। দৌড়ানোর সময় সেই বেল্টে থাকা যন্ত্র মনিটর করবে হৃদস্পন্দন। স্ট্রাইড সেন্সর বসানো থাকবে কেডস বা জুতার ফিতার সাথে। এটি পদক্ষেপ পরিমাপ করবে।
পেসারের মূল অংশের সাথে প্যাকেজে আরো থাকছে একটি হার্ট রেট মনিটর এবং একটি স্ট্রাইড সেন্সর। মূল অংশটি এদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। অ্যাডিডাসের মাইকোচ পেসারে রয়েছে কিছু মেমরি। সেখানে নানা তথ্য মজুদ থাকে। এটি ক্লিপ দিয়ে আটকানো থাকতে পারে বাহুবন্ধনী কিংবা শার্টের সাথে। বহনযোগ্য মিউজিক প্লেয়ারের মাধ্যমে এটি দিয়ে জনপ্রিয় গানও শোনা যাবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে www.adidas.com/in/micoach ওয়েবসাইটে।
কেডস পরে দৌড় শুরুর আগে হার্ট রেট মনিটরকে একটি বেল্টের সাহায্যে বাঁধতে হবে বুকের সাথে। স্ট্রাইড সেন্সর যুক্ত করতে হবে জুতার ফিতায়। এর পর অন করতে হবে মাইকোচ পেসার।
এ পর্যায়ে কার্যসূচি নির্ধারণ করতে হবে এবং দাঁড়াতে হবে জগিং ট্র্যাকে। দৌড় শুরুর পর থেকেই মাইকোচ পেসার শ্রুতিগ্রাহ্য নির্দেশনা দিতে থাকবে। দৌড়ানোটা খুব দ্রুত হচ্ছে, নাকি ধীর সেটাই জানাতে থাকবে সারাক্ষণ। অবশ্য এই নির্দেশনার বিষয়টি নির্ভর করবে আপনি এর রুটিন কি ধরনের সেট করেছেন তার ওপর। দৌড় শেষে বাসায় ফিরে লগ অন করতে হবে মাইকোচ অ্যাকাউন্টে এবং ইউএসবির মাধ্যমে পেসারের সংযোগ দিতে হবে কমপিউটারে। তখন অনলাইনে বিশ্লেষণ হবে আপনার ট্র্যাকিং অগ্রগতি।
কেডস বা জুতাপ্রযুক্তিতে অনেকদূর এগিয়ে গেছে অপর বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান নাইকি। এরা তৈরি করেছে নাইকি+। এটি কেবল একটি যন্ত্রই নয়, দৌড়বিদ এবং অ্যাথলেটদের দৌড়, গড় গতি, ক্যালরি ক্ষয়ের হার এবং দূরত্ব মনিটরে সাহায্য করে। অনলাইনে রয়েছে নাইকি+ কমিউনিটি। দুই ধরনের কেডস তারা বাজারে ছেড়েছে। একটি হলো নাইকি ফ্রি রান+ এবং অপরটি নাইকি+ আইপড স্পোর্ট কিট।
যারা মিউজিক ছাড়াই দৌড়াতে চান তাদের জন্য নাইকি ফ্রি রান+। এতে রয়েছে নাইকি+ বাহুবন্ধনী, এটি মূলত সেন্সর এবং রিসিভার। আর যারা দৌড়ের সময় মিউজিকও শুনতে চান, তাদের জন্য নাইকি+ আইপড স্পোর্ট কিট। নাইকি+ অ্যানাবল্ড আইপড বা থ্রিজি আইফোনে এটি ব্যবহার করা যাবে।
সেন্সরটি চালু করতে হলে সেটি ৩ সেকেন্ড চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হবে। চালু হয়ে গেলে বাম পায়ের কেডসের ভেতরে মাঝামাঝি সেটি বসাতে হবে। এরপর এটি দৌড় শুরুর জন্য তৈরি হয়ে যাবে। এ পর্যায়ে নাইকি+ যন্ত্রের মাঝের বোতাম ৩ সেকেন্ড চাপ দিয়ে রাখলে স্ক্রিনে ‘রান’ লেখা আসবে এবং তখন দৌড় শুরু করতে হবে। ক্লিপ দিয়ে যন্ত্রটি বাহুবন্ধনীতে রাখতে হবে। হাঁটা বা দৌড়ানো শুরু করলে সেন্সরের ডাটা তারহীন ব্যবস্থায় রিসিভার যন্ত্রে যাবে এবং সেখানে তা রেকর্ড হতে থাকবে। এটি চালু, বন্ধ এবং পড়া বা স্থির করার ব্যবস্থা থাকবে। এই ডাটা উদ্ধারের জন্য বাহুবন্ধনী থেকে যন্ত্রটি খুলে ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে কমপিউটারে যুক্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে nikeplus.com ওয়েবসাইটে। আপনার দেয়া ডাটার পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে অনলাইনে।
নাইকি+ পণ্য নতুন দৌড়বিদদের জন্য প্রযোজ্য নয়। ফিটনেস সচেতন, দৌড়বিদ এবং অ্যাথলেটরা তাদের দৌড় মনিটর করার জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন।
রিবক থেমে নেই। এরা উদ্ভাবন করেছে ইজিটোন স্যু। এটি পেশিকে সুদৃঢ় করে। এতে রয়েছে ব্যালেন্স পড নামের উপকরণ। পায়ের গোড়ালি এবং সামনের অংশ পর্যন্ত এটি থাকে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে পাওয়া প্রযুক্তি সহায়তায় এটি তৈরি করা হয়েছে।
এই কেডস আসলে তৈরি করা হয়েছে হাঁটার জন্য, দৌড়ানোর জন্য নয়। রিবকের সনদ পাওয়া প্রশিক্ষক এবং ইউকে ফিটনেসের পরিচালক করুণা ওয়াগমেয়ার জোর দিয়ে বলেছেন, জুতাকে কার্যকর করতে চাইলে এগুলো ৬০ দিন ৯০ মিনিট করে পরতে হবে। এটি তৈরি করা হয়েছে মূলত মহিলাদের জন্য। তবে পুরুষদের জন্যও পৃথক ইজিটোন জুতা রয়েছে। এগুলো পরা আরামদায়ক। প্রথম দিকে এই জুতা পরে হাঁটা অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। তবে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার পর এতে অভ্যস্ত হওয়া যাবে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা এবং দৌড়ানোর সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
জিগটেকের আনা জুতা পায়ের পেশির ওপর চাপ কমায়। এই জুতার নকশা করা হয়েছে দৌড়বিদদের প্রতি লক্ষ রেখে। কেউ কেউ এই জুতাকে বলে থাকে এনার্জি সেভার। সোলে ব্যবহার হয়েছে জিগ-জ্যাগ ফোম। অ্যাথলেটরা স্প্রিন্টের সময় এখান থেকে সুবিধা আদায় করতে পারবে। রিবক এই জুতাকে বলেছে ‘পায়ের এনার্জি ড্রিঙ্ক’। নানা ডিজাইনের এ জুতা মহিলা ও পুরুষদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
জিগটেক জুতায় এমন ব্যবস্থাযুক্ত করা হয়েছে, যা ব্যবহার করলে অ্যাথলেটরা পাবে স্প্রিংয়ের মতো অনুভূতি। পায়ের গোড়ালি মাটিতে পড়লে যে প্রতিক্রিয়া হয়, এই জুতায় তা হবে না। প্রতিটি পদক্ষেপে অ্যাথলেটরা পাবে বাড়তি শক্তি। ফলে দীর্ঘ সময় দৌড়ালেও ক্লান্তি আসবে না। পারফরমেন্স বাড়বে। ম্যারাথনের মতো দীর্ঘ দৌড়ের ক্ষেত্রে অ্যাথলেটরা এই জুতা থেকে সুবিধা আদায় করতে পারবে।
ভারতীয় ক্রিকেটার এবং রিবকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর রবিন উথাপ্পা বলেছেন, নতুন জিগটেক তার পায়ের জন্য এনার্জি ড্রিঙ্কের মতো কাজ করে। যারা দৌড়ানোর সময় শক্তি মজুদ রাখতে চায় তাদের জন্য এই জুতা অনেক সহায়ক।
এদের ওয়েবসাইটেও দেয়া হয়েছে নানা পরামর্শ, ব্যবহারবিধি, সতর্কতা ইত্যাদি। ফলে প্রযুক্তিপণ্য যথাযথ কাজ না করলে আলোচনা করা যাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে। এ সবকিছুই মানুষের কল্যাণের জন্য। ভবিষ্যতে এমন আরো বহু প্রযুক্তিপণ্য হয়তো কড়া নাড়বে আপনার দরজায়।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com