সিঙ্গুলারিটি গেমটি অনেকটা বায়োশক-২ গেমের আদলে বানানো। এটি মূলত অনেক গেমের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেমন- ডার্ক ভয়েড, হাফ লাইফ ২, ক্রাইসিস ইত্যাদি। গেমের কাহিনী বর্তমান কালের অর্থাৎ ২০১০ সালের। কিন্তু গেমারকে ১৯৫০ সালের আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে চলা স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালে গেম খেলতে হবে। এটি সম্ভব হবে একটি যন্ত্রের মাধ্যমে যা দিয়ে সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
গেমের পটভূমি হচ্ছে ক্যাটোর্গা-১২ নামের একটি কাল্পনিক রাশিয়ার দ্বীপকে কেন্দ্র করে। গেমের কাহিনীতে দেখানো হয়েছে ১৯৫০ সালে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন আমেরিকা পারমাণবিক বোমা বানানোর প্রযুক্তিতে রাশিয়ার থেকে এগিয়ে যায়। তাই সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্ট্যালিন রাশিয়ান বিজ্ঞানীদের পারমাণবিক প্রযুক্তির ওপর আরো বেশি গবেষণা করতে বলেন। গবেষণা কার্যক্রম খুবই গোপনীয় হওয়ায় বিজ্ঞানীরা রাশিয়ার কাছেই অবস্থিত ক্যাটোর্গা-১২ নামের ছোট একটি দ্বীপে ঘাঁটি স্থাপন করে। ভাগ্যক্রমে তারা সেই দ্বীপে ইলিমেন্ট-৯৯ নামের পদার্থ আবিষ্কার করে যা অসাধারণ পাওয়ার সোর্স হিসেবে কাজে লাগানো সম্ভব। এই বস্তুটির বাস্তবসম্মত ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিজ্ঞানীরা টানা ৫ বছর গবেষণাকার্য চালিয়ে যান। কিন্তু এক অজানা কারণে দুর্ভাগ্যবশত পুরো দ্বীপ ধ্বংস হয়ে যায়। তখন রাশিয়া সেই দ্বীপকে তাদের মানচিত্র থেকে মুছে দেয় এবং সর্বসাধারণের কাছ থেকে ইলিমেন্ট-৯৯ আবিষ্কারের কথা গোপন করে।
প্রায় ৫৫ বছর পরে অর্থাৎ ২০১০ সালে ক্যাটোর্গা-১২ দ্বীপের খোঁজ আবার পাওয়া যায়, যখন আমেরিকার একটি স্পাই স্যাটেলাইট সেই দ্বীপ থেকে বের হওয়া শক্তিশালী বিকিরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন আমেরিকা থেকে একটি কমান্ডো টিম পাঠানো হয় সেই দ্বীপে, কিন্তু দ্বীপের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় হেলিকপ্টারটি ক্র্যাশল্যান্ডিং করতে বাধ্য হয়। ক্র্যাশল্যান্ডিংয়ের ফলে শুধু দুইজন সৈন্য বেঁচে থাকে। তাদের একজন হচ্ছে ক্যাপ্টেন ন্যাটে রেনকো। গেমারকে ক্যাপ্টেন রেনকোকে নিয়ে খেলতে হবে এবং বেঁচে যাওয়া সৈন্যকে সাথে নিয়ে দ্বীপটি থেকে বের হওয়া বিকিরণের উৎস বের করতে হবে।
গেমটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে গেমে সময় পরিবর্তন করে খেলা সম্ভব এবং এ কাজটি করা সম্ভব গেমে ব্যবহার হওয়া একটি যন্ত্র বা আর্টিফ্যাক্টের জন্য। এই যন্ত্রটির নাম হচ্ছে টাইম ম্যানিপুলেশন ডিভাইস এবং যন্ত্রটির চালিকাশক্তি হিসেবে অফুরন্ত শক্তির আধার ইলিমেন্ট-৯৯ ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে গেমার রেনকোকে নিয়ে ২০১০ সাল থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যকার যেকোনো সময়ে মুহূর্তের মধ্যেই চলে যেতে পারবে। এই ডিভাইসটি দিয়ে শুধু নায়ক নিজেই ট্রান্সপোর্ট হবে না, সাথে সাথে অন্যান্য বস্তু এবং প্রাণীও ট্রান্সপোর্ট করতে পারবে এক সময় থেকে আরেক সময়ে। তবে সব বস্তু বা প্রাণী ট্রান্সপোর্ট করা সম্ভব হবে না, কেবল যেসব বস্তু ইলিমেন্ট-৯৯-এর সংস্পর্শে রয়েছে শুধু সেগুলো ট্রান্সপোর্ট করা যাবে। এছাড়া যন্ত্রটি থেকে বের হওয়া বিকিরণ ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রাণীকে সাময়িকভাবে অবশ বা অচেতন করে দেয়া যাবে। এমনকি এটি ব্যবহার করে অন্যান্য প্রাণীকে মেরেও ফেলা যাবে। অস্ত্রের পাশাপাশি এই যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার করতে পারলে ভালোমতো গেম খেলা যাবে।
গেমে শত্রু হিসেবে রয়েছে রাশিয়ান সোলজার, তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে আধুনিক ও ১৯৫৫ সালের রাশিয়ান সোলজারদের সাথেও মারামারি করতে হবে। কারণ, গেমার ইচ্ছে করলেই সময় পরিবর্তন করতে পারবেন, সেই সাথে তার চারপাশের পরিবেশ, লোকজন ও প্রাণীসহ সবকিছুই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। গেমে বেশিরভাগ প্রাণী ও দ্বীপের বাসিন্দারা জিনগতভাবে পরিবর্তিত হয়ে বিশাল ও অদ্ভুত আকার ধারণ করায় গেমে অনেকটা ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। গেমে গেমারকে বিভিন্ন ধাঁধার সমাধান করতে হবে পরবর্তী ধাপে যাবার জন্য। এছাড়া গেমে স্লো-মোশন ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে নায়ককে নিয়ে কোনো কিছু গুলি করার সময় স্লো-মোশন মোড ব্যবহার করে নিখুঁত নিশানায় গুলি করা সম্ভব। গেমে শত্রুপক্ষ ও প্রাণীদের ছুড়ে দেয়া ড্রাম ও অন্যান্য বস্ত্ত নায়ককে দিয়ে লুফে নেয়া যাবে এবং তাদের দিকে ছুড়ে মারা যাবে। এছাড়া গেমে স্নাইপার ব্যবহার করার সময়ও স্লো-মোশন মোড ব্যবহার করে অনেক দূর থেকে একসাথে একাধিক শত্রুকে গুপ্তহত্যা করা সম্ভব। খেলার সময় টাইম ম্যানিপুলেশন ডিভাইস ব্যবহার করে অতীত থেকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসা যাবে। যেমন কোন জায়গায় বিস্ফোরণের জন্য বিস্ফোরক ড্রামের প্রয়োজন, কিন্তু বর্তমানে আশপাশে কোথাও বিস্ফোরক ড্রামের অস্তিত্ব নেই। তখন ইচ্ছে করলে অতীত থেকে ড্রাম নিয়ে এসে বিস্ফোরণ ঘটানো যাবে। এছাড়া কোন স্থানে অনুসন্ধান চালাতে হবে কিন্তু সেটি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে গেছে, সে ধরনের পরিস্থিতিতেও টাইম ম্যানিপুলেশন ডিভাইস ব্যবহার করে সেই জায়গা যখন ঠিক ছিলো সেই সময়ে চলে যাওয়া যাবে।
গেমটিতে মাত্র দুটি মাল্টিপ্লেয়ার মোড সংযোজন করা হয়েছে। একটি মোড হচ্ছে ক্রিয়েচার ভার্সেস সোলজার, যা অনেকটা টিম ডেথম্যাচের মতো। এখানে ক্রিয়েচার বলতে ক্যাটোর্গা-১২ রেডিয়েশনের ফলে জিনগতভাবে পরিবর্তিত বিভিন্ন প্রাণীকে বোঝানো হয়েছে। গেমার ইচ্ছে করলে যেকোনো এক পক্ষের হয়ে খেলা শুরু করতে পারবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর কোন দল কত বেশি শত্রু নিধন করেছে তার ওপর নির্ভর করে বিজয়ী দল নির্ধারণ করা হবে। গেমে থাকা অন্য আরেকটি মাল্টিপ্লেয়ার মোডের নাম হচ্ছে এক্সটার্মিনেশন। এই মোডে প্রথমে সোলজার হয়ে খেলা শুরু করতে হবে এবং ম্যাপের নির্দেশিত বিভিন্ন ঘাঁটি ক্রিয়েচারদের হাত থেকে মুক্ত করে সেগুলোর দখল নিতে হবে। যখন সব ঘাঁটি সোলজারদের দখলে চলে আসবে, তখন আবার ক্রিয়েচার হয়ে খেলতে হবে এবং ঘাঁটিগুলোকে আবার ক্রিয়েচারদের দখলে নিয়ে আসতে হবে।
ফার্স্ট পারসন গেম বানানোর আদর্শ গেম ইঞ্জিন আনরিয়েল ইঞ্জিন ৩ ভার্সনের ছোঁয়ায় গেমটি হয়েছে বেশ প্রাণবন্ত এবং গ্রাফিক্সের মানও হয়েছে খুব উন্নতমানের। বর্তমানের পরিবেশ ও অতীতের পরিবেশের মাঝে আনা হয়েছে বেশ নজরকাড়া গ্রাফিক্সের কারুকাজ। সময় পরিবর্তন হওয়ার দৃশ্য ও দুটি সময়ের মাঝে পার্থক্য গ্রাফিক্সের সাহায্যে খুবই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গেমের সাউন্ডের মানও বেশ ভালো। সারাউন্ডিং সাউন্ড সিস্টেমে গেমটি খেলতে পারলে খেলার আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
ডেভেলপার : র্যাভেন সফটওয়্যার
পাবলিশার : অ্যাক্টিভিশন
ইঞ্জিন : আনরিয়েল ইঞ্জিন ৩
ক্যাটাগরি : ফার্স্ট পারসন শূটিং
মোড : সিঙ্গেল/মাল্টিপ্লেয়ার
সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট
প্রসেসর : পেন্টিয়াম ডি ২.৮ গিগাহার্টজ
র্যাম : ১.৫ গিগাবাইট
গ্রাফিক্স কার্ড : ২৫৬ মেগাবাইট (পিক্সেল শ্রেডার ৩ যুক্ত)
হার্ডডিস্ক স্পেস : ৮ গিগাবাইট
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com