‘টম ক্ল্যান্সি’ গেমের জগতে এক অবিস্মরণীয় নাম। তিনি কোনো গেম ডেভেলপার বা গেম নির্মাতা কোম্পানির প্রধানও নন। তবে কেনো গেমের জগতে তার এত নামডাক? এ প্রশ্ন মনে জাগাটাই স্বাভাবিক। থমাস লিও টম ক্ল্যান্সি জুনিয়র একজন আমেরিকান ঔপন্যাসিক। তিনি টেকনো-থ্রিলার, ক্রাইম ফিকশন, মিলিটারি ফিকশন এবং সেই সাথে নন-ফিকশন ধাঁচের লেখার জন্য বিখ্যাত। গেমে তার উপন্যাসের টেকনিক্যাল দিকগুলো তুলে ধরা হয় তাই গেমের প্রথমে তার নাম দেয়া হয়। তার নামটি এখন অনেকটা ব্যান্ড নেম হয়ে গেছে কিছু গেমের জন্য। সেরকম কিছু গেমের তালিকায় রয়েছে- রেইনবো সিক্স, স্প্লিন্টার সেল, হাউক্স, ঘোস্ট রেকন ও ইন্ডওয়ার। স্প্লিন্টার সেল, প্যানডোরা টুমরো, ক্যাওস থিওরি ও ডাবল এজেন্টের পরে স্প্লিন্টার সেল গেম সিরিজের পঞ্চম সংযোজন হিসেবে বের হয়েছে কনভিকশন। শিগগিরই বের হতে যাচ্ছে এ সিরিজের ষষ্ঠ পর্ব ইন্ডগেম এবং স্প্লিন্টার সেল মুভি।
টম ক্ল্যান্সির লেখা উপন্যাসের এক মূল চরিত্র হচ্ছে স্যাম ফিশার। স্যাম ফিশারকে কেন্দ্র করেই টমের উপন্যাসের কিছুটা আবহ নিয়ে স্প্লিন্টার সেল সিরিজের গেমগুলো বানানো হয়। স্যাম ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাজেন্সির (এনএসএ) এক গোপন শাখা থার্ড ইচেলন সদস্য। সেই প্রথম ব্যক্তি যে থার্ড ইচেলনের গোপন এক মিশন স্প্লিন্টার সেল প্রোগ্রামের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়। শত্রুপক্ষের চোখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা (স্টিলথ), ছদ্মবেশ ধারণ, অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী ও হাতাহাতি লড়াইয়ে বেশ দক্ষ। ৬ ফুট লম্বা, ১৭০ পাউন্ড ওজন ও খয়েরি বর্ণের চোখের অধিকারী এ যোদ্ধা ইসরাইলের মার্শাল আর্ট ক্রাভ মাগা (হিব্রু) বা ক্লোজ কমব্যাটে বেজায় পটু। তাকে সামনাসামনি লড়াইয়ে হারাতে শত্রুপক্ষের বেশ বেগ পেতে হবে। যদিও গেমে তেমন একটা মারামারি করতে হবে না গেমারকে। এলিট ইন্টেলিজেন্সের অধিকারী স্যাম ফিশারকে নিয়ে মিশন শেষ করতে হবে শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে। গেমে মূল কাজ হচ্ছে শত্রুপক্ষের চোখে অদৃশ্য থেকে গোপনে নির্দিষ্ট মিশনের কাজ সমাধা করা। কিন্তু পথে কোনো বাধা আসলে তা খুবই সতর্কতার সাথে এবং নিঃশব্দে নির্মূল করতে হবে, যাতে কাকপক্ষীও টের না পায়। নীরবে লুকিয়ে ঘর সাফ করে যাওয়ার সাথে গেম খেলার সাদৃশ্য রয়েছে। এ ধরনের গেমপ্লে স্টাইলকে বলা হয়ে থাকে স্টিলথ গেমপ্লে। নতুন বানানো গেম কনভিকশনে স্টিলথ স্টাইলের আরো ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা গেছে, যা অনেকটা বিখ্যাত মুভি দ্য বর্ন আইডেনটিটি ও তার সিক্যুয়ালগুলোর সাথে বেশ মিলে যায়।
কনভিকশনে স্যাম ফিশারকে দেখা যাবে নতুন এক রূপে। ঠান্ডা মাথার দক্ষ এ এজেন্টকে এবারে দেখা যাবে রাগে উন্মত্ত ও প্রতিশোধের আগুনে দগ্ধ এক বাবার চরিত্রে। গেমের কাহিনী গড়ে উঠেছে গেম সিরিজের আগের পর্ব ডাবল এজেন্টের ধারাবাহিকতায়। যারা আগের গেমটি খেলেননি তাদের চিন্তার কিছু নেই, কারণ গেমের মাঝে মুভি আকারে সেই গেমের কিছু ঘটনার রিপ্লে দেখানো হবে। তাই গেমের কাহিনীর ধারাবাহিকতায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন সহজেই। মেয়ের মৃত্যু এবং নিজ হাতে নিজের প্রিয় বন্ধু ল্যাম্বার্টকে হত্যা করার পর শোকাহত স্যাম থার্ড ইচেলন থেকে অবসর নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে যায়। অনেক দিন পর তার আবার ডাক পরে। তাকে বলা হয় একদল সন্ত্রাসী ওয়াশিংটন ডিসিতে হামলা করার পাঁয়তারা করছে এবং তারা স্যামের মেয়ে সারাহ ফিশারের হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত। তাই স্যাম প্রতিশোধ নেবার জন্য আবার ফিরে আসে মিশনে তবে আগের চেয়ে অনেক বেশি উদ্যম ও গতি নিয়ে।
থার্ড ইচেলনের পুরনো সহযোগী অ্যানা গ্রিমের সহায়তায় সে খুঁজে পায় তার মেয়ের হত্যাকারীর সন্ধান। তাকে মেরে ফেলার জন্য পাঠানো একদল হিটম্যানের সবাইকে মজা দেখানোর পর তাদের গ্রুপ লিডার ডিমিত্রি গ্রামকসকে পাকড়াও করে স্যাম। তারপর ডিমিত্রিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সে জানতে পারে আন্দ্রে কোবিন নামের ড্রাগ ব্যবসায়ী সারার মৃত্যুর জন্য দায়ী। সে লুকিয়ে আছে তার সুরক্ষিত প্রাসাদে। আগের গেমের মতো চোরের মতো শত্রুপক্ষের এলাকায় হানা দিয়ে নয়- এবারে শিকারির বেশে ক্ষিপ্রতা ও হাতাহাতি লড়াইয়ের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে শত্রুপক্ষের বাধা ডিঙ্গিয়ে পৌঁছতে হবে তার লক্ষ্যে। সামনে দশ-বারোজন গার্ড পড়লে স্যামকে নিয়ে খেলার সময় গেমারের কোনো ভয় নেই, কারণ ভয় স্যাম নয় গার্ডদের পাবার কথা। কারণ তাদের সামনে যে তাদের যমরাজ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ওপরে স্যাম এমনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে যেভাবে একদল হরিণের ওপরে বাঘ ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আগের স্টিলথ স্টাইলে খেলতে হবে ঠিকই, তবে এবার নিজে বাঁচার জন্য নয় অন্যকে ধরাশায়ী করার লক্ষ্যে। তাই ধরা পড়ে যাবার ভয়ে বুকে ধুঁকপুকানি করার পরিবর্তে এবারের গেমের শত্রুকে দ্রুতগতিতে পরাজিত করার উত্তেজনা বেশি উপভোগ্য মনে হবে। গেমে কোনো লোডিং স্ক্রিন নেই, যাতে গেমারকে খেলা বাদ দিয়ে পিসির সামনে অপেক্ষা করতে হয়। পুরো গেমটি একটানা চলতে থাকবে, তবে গেম লোড হবে কাট-সিনগুলো দেখানোর সময়ে, তাই খেলাটি আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়েছে। গেমে মারামারির নৈপুণ্যতা ও বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ বেশ নজরকাড়া। থার্ড ইচেলনে স্যামের কোডনেম হচ্ছে প্যানথার। এ গেমে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে তার কোডনেমের সার্থকতা। কিছু ক্ষেত্রে তার গতি প্রিন্স অব পারসিয়ার প্রিন্সের গতিকেও ছাড়িয়ে গেছে। গেমের গ্রাফিক্স ও শব্দশৈলী এতটাই প্রাণবন্ত ও মনোরম হয়েছে যে, গেমারের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ গেম খেলা দেখলে মনে করবে সে জেমস বন্ড বা বর্ন আইডেনটিটি ধাঁচের কোনো মুভি দেখছে। গেমের চমৎকার ধারাবাহিকতা, ডায়ালগ, গেমপ্লে ও কমব্যাট স্টাইলের জন্য স্প্লিন্টার সেল সিরিজের সেরা গেম হিসেবে স্থান দখল করে নিয়েছে। ।
ডেভেলপার : ইউবিসফট মনট্রেয়াল
পাবলিশার : ইউবিসফট
সিরিজ : টম ক্ল্যান্সি’স স্প্লিন্টার সেল
গেম ইঞ্জিন : এলইএডি
ক্যাটাগরি : স্টিলথ অ্যাকশন
মোড : সিঙ্গেল/মাল্টিপ্লেয়ার, কো-অপারেটিভ
সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট
প্রসেসর : ১.৮ গিগাহার্টজ ইন্টেল কোর টু ডুয়ো
র্যাম : ১.৫ গিগাবাইট (ভিসতা/সেভেনে ২ গিগাবাইট)
গ্রাফিক্স কার্ড : ৫১২ মেগাবাইট (পিক্সেল শ্রেডার ৩.০ সাপোর্টেড)
হার্ডডিস্ক স্পেস : ১০ গিগাবাইট
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : shmt_21@yahoo.com