লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
এস.এম. গোলাম রাব্বি
মোট লেখা:৭২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - সেপ্টেম্বর
কেমন হবে ওয়েব ৩.০
একটি সিনেমা দেখবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সিনেমা দেখার পরে কিছু খাবার খাবেন। কিছু মেক্সিকান খাবার খাবেন বলে ঠিক করেছেন। থিয়েটার, সিনেমা এবং রেস্টুরেন্টের তথ্য খোঁজার জন্য আপনার ব্যক্তিগত কমপিউটারটি চালু করলেন এবং ওয়েব ব্রাউজার খুলে সরাসরি গুগলের শরণাপন্ন হলেন। এখন জানা প্রয়োজন, আপনার কাছাকাছি থিয়েটারগুলোতে কোন কোন সিনেমা চলছে। কোন সিনেমা দেখবেন তা পছন্দ করার আগে প্রতিটি সিনেমা সম্পর্কে কিছু সংক্ষিপ্ত ধারণাও নেয়া প্রয়োজন। এ ছাড়াও জানা প্রয়োজন, এসব থিয়েটারের কাছাকাছি ভালো মেক্সিকান রেস্টুরেন্ট কোনগুলো। প্রতিটি রেস্টুরেন্টের গ্রাহক-সুবিধা সম্পর্কেও কিছু জানা দরকার। মোটকথা বাসা থেকে বের হওয়ার আগে অন্তত আধা ডজন ওয়েবসাইট আপনাকে ভিজিট করতে হবে।
কিছু কিছু ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞের মতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওয়েব অর্থাৎ ওয়েব ৩.০ এ কাজগুলো, অর্থাৎ সিনেমা ও খাবার খোঁজা আরো সহজ করে তুলবে। একাধিক সার্চের পরিবর্তে শুধু একটি বা দুটি জটিল বাক্য ওয়েব ৩.০ ব্রাউজারে টাইপ করতে হবে। বাকি কাজগুলো ওয়েব নিজেই করে দেবে। যেমন, আপনাকে টাইপ করতে হতে পারে ‘I want to see a funny movie and then eat at a good Mexican Restaurant. What are my options?’ ওয়েব ৩.০ ব্রাউজার তখন এ বাক্যগুলো বিশ্লেষণ করবে এবং সম্ভাব্য উত্তরের জন্য ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করবে। এরপর ফলগুলো আপনার জন্য সুবিন্যস্ত করবে। শুধু তাই-ই নয়, অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, ওয়েব ৩.০ ব্রাউজার ব্যক্তিগত সহকারীর মতো কাজ করবে। যেহেতু আপনি ওয়েব সার্চ করেন, সেহেতু ব্রাউজার জেনে নেবে আপনি কোন বিষয়গুলোতে আগ্রহী। আপনি যত বেশি ওয়েব ব্যবহার করবেন, ব্রাউজার আপনার সম্পর্কে তত বেশি জানবে এবং আপনার প্রশ্নগুলো আরো সুনির্দিষ্ট হবে। ফলে আপনি ব্রাউজারকে সরাসরি এমন প্রশ্নও করতে পারেন- ‘Where should I go for lunch?’ ব্রাউজার তখন তার রেকর্ডগুলো পর্যালোচনা করে দেখবে, আপনি কী পছন্দ করেন, কী অপছন্দ করেন। এরপর সে আপনার বর্তমান অবস্থানের ভিত্তিতে কিছু রেস্টুরেন্টের তালিকার পরামর্শ দেবে। ওয়েব কোথায় যাচ্ছে, তা জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন, এটি বর্তমানে কোন অবস্থানে আছে। আর তাই ওয়েবের বিবর্তন সম্পর্কে এখানে কিছু ধারণা দেয়া হলো।
ওয়েব ৩.০-এর পথে :
ওয়েব জগতে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ওয়েব ২.০। মূলত ওয়েব বিবর্তনে এটিই বেশি পরিচিত নাম। ওয়েব ২.০-এর নাম অনেকে শুনলেও এর সম্পর্কে ধারণা নেই সবার। ওয়েব ২.০-এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে ব্যবহারকারীদের ওয়েব পেজে পরিবর্তন আনার ক্ষমতা। যেমন- আমাজনের সাইটে গিয়ে যেকোনো ব্যবহারকারী একটি অনলাইন ফরম ব্যবহার করে তাতে তথ্য যোগ করতে পারেন, যা পরে যেকোনো ব্যবহারকারী পড়তে পারবেন। ওয়েব ২.০-তে একজন ব্যবহারকারী ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অনেক ব্যবহারকারীর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। যেমন- ফেসবুক এবং মাইস্পেস। ওয়েব ২.০-তে রয়েছে দ্রুত ও কর্মদক্ষভাবে কনটেন্ট শেয়ার করার পদ্ধতি। যেমন- ইউটিউব, ওয়েব ২.০-এর রিয়্যালি সিম্পল সিন্ডিকেশন (আরএসএস) ব্যবহার করে একটা ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্যাদি পাওয়া সম্ভব। ওয়েব ২.০-তে কমপিউটার ছাড়াও মোবাইল ফোন বা ভিডিও গেম কনসোলের মতো ডিভাইস ব্যবহার করে ইন্টারনেট পাওয়া যায়।
ওয়েব ২.০-এর আগে এসেছিল ওয়েব ১.০। ওয়েব ১.০ একটি লাইব্রেরির মতো। আপনি একটি লাইব্রেরিকে তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু কোনোভাবেই এর কোনো তথ্য পরিবর্তন করতে পারবেন না। ওয়েব ২.০ থেকে তথ্য পেতে পারেন এবং এসব তথ্য পরিবর্তনে অবদানও রাখতে পারেন। ওয়েব ২.০ নিয়ে এখনও অনেক লোক চিন্তাভাবনা করলেও অনেকেই আবার পরবর্তী প্রযুক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছেন। ওয়েব ৩.০ কী রকম হবে? আজকের ব্যবহৃত ওয়েব থেকে এটি কতটা আলাদা হবে? বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় বর্তমান ওয়েব ২.০ থেকে এর পার্থক্য কি খুব সামান্য হবে? ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (www) নিয়ে কী ভাবছেন? এসব প্রশ্নের অনেকটা জবাব পাওয়া যাবে এ লেখাতেই।
ওয়েব ৩.০-এর মূল ধারণা :
ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওয়েব ৩.০ হবে একজন ব্যক্তিগত সহকারীর মতো যে আপনার সম্পর্কে সবই জানে এবং যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে ইন্টারনেটে সব তথ্যাদিতে অ্যাকসেস (access) করতে পারে। অনেকে ওয়েব ৩.০-কে একটি শক্তিশালী ডাটাবেজের সাথে তুলনা করেন। যেখানে ওয়েব ২.০ লোকজনের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, সেখানে ওয়েব ৩.০ ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্যাদির মধ্যে সংযোগ ঘটাতে পারে। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের ধারণা, ওয়েব ৩.০ বর্তমান ওয়েবকে প্রতিস্থাপন করবে। আবার কারো কারো ধারণা, এটি আলাদা নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করবে।
একটি উদাহরণের মাধ্যমে এ ধারণাটি সহজে বুঝা যাবে। ধরুন, ছুটি কাটাতে কোথাও যেতে চাচ্ছেন। এমন কোথাও যেতে চাচ্ছেন, যে জায়গাটি অবকাশযাপনের জন্য খুবই চমৎকার। এ সফরের জন্য আপনার বাজেট তিন হাজার টাকা। আপনার থাকার জন্য একটা চমৎকার জায়গা দরকার। কিন্তু কোনোভাবেই আপনার পক্ষে এ বাজেট অতিক্রম করা সম্ভব নয়। চলাচলের জন্য চমৎকার একটি গাড়িও চাচ্ছেন।
বর্তমান প্রযুক্তিতে একটি চমৎকার ছুটি কাটানোর উপায় খুঁজতে অনেক গবেষণা করা লাগবে। সফরের জায়গা, হোটেল ভাড়া, খাওয়া খরচ, গাড়ি ভাড়া ইত্যাদি প্রতিটি খাতের জন্য আলাদা আলাদা সার্চ করতে হবে এবং ফল পেতে প্রচুর সময় লাগবে। ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়েব ৩.০ আপনার এসব কাজ খুব অল্প সময়ে করে দেবে। একটি সার্চ সার্ভিসের মাধ্যমে উপযুক্ত সার্চ প্যারামিটার ব্যবহার করে পেয়ে যাবেন কাঙ্ক্ষিত ফল। কারণ, ওয়েব ৩.০ ইন্টারনেটের তথ্য বুঝতে সক্ষম হবে।
বর্তমানে সার্চ ইঞ্জিনগুলো আসলেই আপনার সার্চ আইটেমগুলো বুঝতে সমর্থ নয়। সার্চ ইঞ্জিন বলতে পারে না ওইসব ওয়েব পেজ আপনার সার্চের সাথে আসলেই সম্পর্কযুক্ত কি না। এটা শুধু বলতে পারে, সার্চের কী-ওয়ার্ডগুলো ওইসব ওয়েব পেজে আছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ‘Saturn’ কী-ওয়ার্ড দিতে সার্চ করেন, তাহলে কিছু ওয়েব পেজ পাবেন গ্রহসম্পর্কিত এবং কিছু পাবেন গাড়ি প্রস্ত্ততকারী কোম্পানি সম্পর্কিত।
ওয়েব ৩.০-এর সার্চ ইঞ্জিন হবে এমন, যা শুধু সার্চের কী-ওয়ার্ডগুলোই খুঁজবে না, বরং সার্চের বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হবে। এটা আপনার সার্চ টিম সম্পর্কিত ফল সরবরাহ করবে এবং অন্য কিছু কনটেন্টের পরামর্শও দেবে। ছুটি কাটানোর উদাহরণানুযায়ী, যদি আপনি সার্চ আইটেম হিসেবে ‘tropical vacation destinations under 3000 BDT’ দিয়ে থাকেন, তাহলে ওয়েব ৩.০ ব্রাউজারে সার্চ ফল হিসেবে একগাদা মজার কাজের তালিকা অথবা কিছু ভালো হোটেলের তথ্য দেবে। ওয়েব ৩.০ সব ইন্টারনেটকে একটি বড় ডাটাবেজ হিসেবে চিন্তা করবে।
ওয়েব ৩.০-এর পেছনে :
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ নোভা স্পাইভ্যাকের মতে, ওয়েবের উন্নয়ন প্রতি ১০ বছর পর পর পরিবর্তিত হয়। ওয়েবের প্রথম দশকে সব উন্নয়ন অবকাঠামোগত দিকগুলো নিয়ে ছিল। ওয়েব পেজ তৈরি করার জন্য তখন প্রোগ্রামাররা প্রোটোকল এবং কোড ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করত। দ্বিতীয় দশকে ফোকাস চলে গেল সামনের প্রান্তে (Front End)। এখান থেকে ওয়েব ২.০-এর যাত্রা শুরু। এখন লোকজন অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনের প্লাটফর্ম হিসেবে ওয়েব পেজ ব্যবহার করে। বর্তমানে আমরা ওয়েব ২.০ দশকের শেষের দিকে আছি। পরবর্তী দশক শুরু হবে ওয়েব ৩.০ দিয়ে। তখন ফোকাস আবার চলে যাবে পেছনের প্রান্তে (Back End)। প্রোগ্রামাররা তখন ওয়েব ৩.০ ব্রাউজারের অগ্রগামী সামর্থ্যগুলো সাপোর্টের জন্য ইন্টারনেট অবকাঠামো নিয়ে গবেষণা করবে। এর পরে আসবে ওয়েব ৪.০। ফোকাস চলে যাবে আবার সম্মুখভাগে এবং আমরা তখন দেখতে পাব হাজার হাজার নতুন প্রোগ্রাম, যা ওয়েব ৩.০-কে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : rabbi1982@yahoo.com