স্মার্টফোনের মতো আধুনিক মোবাইল যন্ত্রের ব্যবহার উত্তরোত্তর বেড়েই চলছে। একই সাথে এই ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা তার দিয়ে সংযুক্ত ডেস্কটপ কমপিউটারের পরিবর্তে মোবাইল তথা স্মার্টফোনের মতো ডিভাইস দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সুপরিচিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনে প্রকাশিত হয়েছে এ তথ্য। এতে উল্লেখ করা হয়েছে স্মার্টফোন ও মিডিয়া ট্যাবলেটের বিক্রি যেভাবে বাড়ছে, এর ফলে ২০১৫ সাল নাগাদ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১৭ ভাগ বাড়বে। গবেষকদের ধারণা, আগামী ৫ বছরে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ ভাগ হবে। যেখানে ২০১০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা ২ বিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ২.৭ বিলিয়নে । সুতরাং একথা নিশ্চিত করে বলা যেতে পারে, মোবাইলভিত্তিক ওয়েবসাইটের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি হবে ভবিষ্যতে।
গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান থেকে এ বিষয়টি লক্ষ করা গেছে, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ২০১৫ সাল নাগাদ বিশ্বের শতকরা ৪০ ভাগ ইন্টারনেটের ব্যবহার হবে মোবাইলের মাধ্যমে। এই বিষয়টির বিশ্বাসযোগ্যতা আরো বেশি পরিষ্কার হয় যখন দেখা যায় অনলাইনভিত্তিক বিজ্ঞাপন ব্যয়ের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে। ২০১৫ সাল নাগাদ এর পরিমাণ হবে প্রায় দ্বিগুণ।
ব্যবসায়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে নতুন নতুন ক্ষেত্র সৃষ্টি করে ভোক্তাদের এর সাথে সম্পৃক্ত করা। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে যেকেউ চাইবেন নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে অভিনব কিছু উদ্ভাবন করতে। প্রযুক্তির কল্যাণে দিন দিন এর পরিসর খুব সহজেই বিস্তার ঘটছে। এজন্যই প্রযুক্তিবিষয়ক উদ্যোক্তারা খুব সহজে এ ধরনের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারেন অন্যদের তুলনায়। যেসব প্রতিষ্ঠান ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করে থাকে তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও বেশি ফলপ্রসূ।
ধরুন, আপনার ডেভেলপ করা পণ্য ব্যবহারকারী একজনের মনে হলো তার এখনকার ওয়েবসাইটটির একটি মোবাইল সংস্করণ তৈরি করা দরকার। তিনি যেন সেই সাইটটি সহজে মোবাইলের সাহায্যে ব্রাউজ করতে পারেন। আধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহারের সাথে সাথেই তিনি তার প্রতিযোগী কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আরো একধাপ এগিয়ে গেলেন। ডেভেলপাররা বিভিন্ন পদ্ধতিতেই এই ধরনের মোবাইলভিত্তিক সাইট তৈরি করতে পারেন। এছাড়াও এমন অনেক টুল রয়েছে যেসব দিয়ে খুব সহজে মোবাইল ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। এর মধ্যে নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টুলের নাম উল্লেখ করা হলো। এগুলোর বেশিরভাগই গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসভিত্তিক। এর সাহায্যে খুব সহজেই কপি পেস্ট পদ্ধতিতে মোবাইলের উপযোগী ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। তাছাড়া যেকেউ চাইলেই তার ওই ওয়েবসাইটগুলোতে গুগল অ্যানালাইটিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ টুলও এখানে ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এই টুল দিয়ে তৈরি সাইটগুলো খুব সহজেই ভিজিটরদের শনাক্ত করতে সক্ষম। ভিজিটর যদি মোবাইল ফোনের সাহায্যে ওয়েবসাইটটি ব্রাউজার ব্যবহার করেন তবে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাইটটির মোবাইল ভার্সনে পাঠিয়ে দেবে।
মোবিফাই :
মোবিফাই একটি ব্যবহারবান্ধব গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস। এর সাহায্যে কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি সাইট তৈরি করা যায়। মোবাইলের জন্য ই-স্টোর বা ই-কমার্স সাইট তৈরির জন্য রয়েছে মোবাইল কমার্স প্লাটফরম। মোবিফাই টুলের ফ্রি ভার্সনের পাশাপাশি এর একটি প্রিমিয়াম ভার্সনও রয়েছে। অন্যান্য সুবিধা ছাড়াও এতে রয়েছে সাইটের ট্রাফিক জানার জন্য একটি টুল এবং নিজস্ব লোগো ব্যবহারের সুযোগ। এর দাম ২৪০ ডলার। ওয়েবসাইট : http://mobify.me
ওয়ারনোড :
ফোর্ড, নোকিয়া ও রীবুকের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানসহ ৫০ হাজারের বেশি মোবাইলবান্ধব ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে ওয়ারনোড দিয়ে। এর ফ্রি ভার্সনে রয়েছে চমৎকার একটি ব্যবহারবান্ধব এডিটর। একই সাথে অন্যান্য সুবিধা ছাড়াও থাকছে হোস্টিংসহ তিনটি ফ্রি মোবাইল সাইট ও ওয়েবসাইট স্ট্যাটিসটিক রিপোর্ট পাওয়ার সুযোগ। এর প্রিমিয়াম ভার্সন ব্যবহার করতে প্রতি মাসে প্রায় ১৯ ডলার পরিশোধ করতে হয়। এর ফ্রি ভার্সনে Wirenode-এর বিজ্ঞাপন থাকলেও প্রিমিয়াম ভার্সনে কোনো বিজ্ঞাপন থাকবে না। ওয়েবসাইট : http://www.wirenode.com/
মিপ্পিন মবিলাইজার :
এই টুলটি দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ সাইট তৈরি করা সম্ভব। টুলটি দিয়ে মোবাইল সাইট তৈরি করতে কিছু কোড আপনার সাইটে ইনস্টল করতে হবে। আর এর বিস্তারিত তথ্যের জন্য অফিসিয়াল ওয়েবসাইট http://mippin.com/ ভিজিট করে পরিপূর্ণ নির্দেশনা পাবেন।
অনবিল :
পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে একটি সাইটের মোবাইল ভার্সন তৈরি করা সম্ভব অনবিল টুল দিয়ে। এতে রয়েছে একটি চমৎকার স্বয়ংক্রিয় ইউজার ইন্টারফেস যা সাইটের প্রয়োজনীয় স্ক্রিপ্ট তৈরিতে সহায়তা করে। এই স্ক্রিপ্ট মূল ওয়েবসাইটের ইনডেক্স পেজে স্থাপন করতে হয়। এর ফলে মোবাইল ভিজিটরকে সহজেই মোবাইল সাইটে রিডাইরেক্ট করতে সহায়তা করে। এছাড়াও সাইটে ব্যবহার করার জন্য এতে রয়েছে ১৩টি কাস্টমাইজেবল টেমপ্লেট। ওয়েবসাইট : www.onbile.com
উইঙ্কসাইট :
ওয়েবসাইটভিত্তিক মোবাইল কমিউনিটি সাইট তৈরি করতে উইঙ্কসাইট হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী টুল। এতে রয়েছে কিউআর তথা কুইক রেসপন্স টেকনোলজি। এই কিউআর স্ক্যানার প্রযুক্তির মোবাইল ডিভাইসকে দ্বিমাত্রিক কোড পড়তে সাহায্য করে। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেক্সট, ফটো, ভিডিও, গান ও ইউআরএল পড়তে সহায়তা করে। কিউআর প্রযুক্তি ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিপণনে ব্যবহার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিউআর কোড বিজনেস কার্ড, বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য ব্র্যান্ডিং উপাদানে প্রিন্ট করে রাখা যেতে পারে। যখন মোবাইল ব্যবহারকারীরা সাইটটি ভিজিট করবেন তখন এর মোবাইলের ক্যামেরা কিউআর স্ক্যান করতে সহায়তা করে। ওয়েবসাইট : http://winksite.com/
মোবাইলপ্রেস :
জনপ্রিয় পাবলিশিং সফটওয়্যার ওয়ার্ডপ্রেসের সাথে অনেকই পরিচিত। এর অনেক প্লাগ-ইনস রয়েছে। এর মধ্যে মোবাইলপ্রেস দিয়ে সহজেই মোবাইলভিত্তিক ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। ওয়েবসাইট : http://wordpress.org/extend/plugins/wordpress-mobile-edition
আই-ওয়েবকিট :
এটি একটি সাধারণ ফ্রেমওয়ার্ক যা দিয়ে আইফোন বা আইপড টাচ অ্যাপস ডেভেলপ করা যায়। এর ইউজার ইন্টারফেস এতই সমৃদ্ধ যা দিয়ে সাইট তৈরি করতে এইচটিএমএলও জানতে হবে না। এর ইউজার গাইড থেকে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। ওয়েবসাইট : http://iwebkit.net/tag/user-guide
মোফিউস :
অনেক বেশি সুবিধা ও ফিচার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই টুলটি। এর সাহায্যে একটি মোবাইল সাইট তৈরির পাশাপাশি একে সহজেই রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব। বিশেষ করে এই টুলটি তৈরি করা হয়েছে বড় ধরনের প্রতিষ্ঠান, যেমন- এজেন্সি, নিউজ-মিডিয়া, ক্ষুদ্র-মাঝারি বা বড় ধরনের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে। এই টুল ব্যবহার করতে হলে প্রতি মাসে ৮-১৯৯ ডলার পরিশোধ করতে হবে। ওয়েবসাইট : http://www.mofuse.com/
এই ধরনের আরও অনেক টুল আছে যা দিয়ে সহজেই সব ধরনের মোবাইল ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব। তবে অভিজ্ঞ ডেভেলপার ইচ্ছে করলেই এই ধরনের প্রযুক্তির ও অধিক ফিচার নিয়ে সাইট তৈরি করতে পারেন সহজেই।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : animesh@letbd.com