• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ওয়েবসাইটে মানবমস্তিষ্কের কার্যক্রম
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সুমন ‍ইসলাম
মোট লেখা:৮৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১১ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ওয়েবসাইট
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ওয়েবসাইটে মানবমস্তিষ্কের কার্যক্রম

মানবদেহের সবচেয়ে জটিল ও রহস্যময় এলাকা হলো মস্তিষ্ক। এ সম্পর্কে আদ্যপান্ত এখনো কব্জায় আসেনি চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের। তবে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করা হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে মানব মস্তিষ্কের জটিল কর্মকা পরিচালন পদ্ধতি তাদের আয়ত্তে এসে যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যের আলঝেইমার্স রিসার্চ অবমুক্ত করেছে দ্য ব্রেইন ট্যুর নামে একটি অনলাইন ইন্টারেক্টিভ ওয়েবসাইট। এই সাইটের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে দেখা যাবে মানব মস্তিষ্ক ঠিক কিভাবে কাজ করে। এর ফলে মনোবৈকল্য এবং আলঝেইমার্সের মতো মানসিক রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে যত ধরনের মিথ বা ভুল ধারণা রয়েছে তা দূর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তারা বুঝতে পারবে মনোবৈকল্য হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো ব্যাপার নয়, এটি আসলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঘটতে থাকা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ওই ওয়েবসাইটে লগইন করলে ভিজিটর মস্তিষ্কের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে সক্ষম হবে। মস্তাষ্ককে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে তার কার্যক্রম ও নানা সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। ভিজিটর তার ইচ্ছেনুযায়ী অংশে ক্লিক করে মস্তিষ্কের সেই অংশ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং তার নিজের সাথে তা মিলিয়ে দেখতে পারবেন। তার নিজের মস্তাষ্ক ঠিকমতো কাজ করছে কি না সেটা তার পক্ষে বুঝতে পারা কিছুটা হয়তো সম্ভব হবে।

দ্য ব্রেইন ট্যুর ওয়েবসাইটে মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে এবং আলঝেইমার্স ও অন্যান্য মনোবৈকল্যের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কী হয় এবং এসবের উপসর্গ কেমন হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যাতে করে মানুষ এসব রোগকে অভিশাপ মনে না করে রোগের প্রকৃত কারণ বুঝতে সক্ষম হয়।



সংগঠনটির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা মূলত মস্তিষ্ককে ভালোভাবে বোঝার জন্যই এমন একটি ওয়েবসাইট করতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। মস্তিষ্কের জটিল ও রহস্যময় গতিবিধি যাতে সহজভাবে এবং আনন্দের মাধ্যমে সবাই বুঝতে পারে এটাই আসলে প্রধান লক্ষ্য। এই সাইটটি ব্যবহারকারীদের মনোবৈকল্য নিয়ে অনেকগুলো ভুল ধারণার অবসান করবে। তারা সহজে বুঝতে পারবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে মনোবৈকল্য ঘটা প্রায় অবশ্যম্ভাবী একটি বিষয়।

আলঝেইমার্স রিসার্চ ইউকের প্রধান বিজ্ঞানবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট প্রজননশাস্ত্রবিদ প্রফেসর জুলি উইলিয়ামস বলেছেন, সংগঠনটি আশা করছে ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের কোন অঞ্চল দিয়ে মনোবৈকল্যের সূচনা হয় তা উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। মূলত মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে মনোবৈকল্যের উদ্ভব হতে শুরু করে। প্রফেসর জুলির খুঁজে পাওয়া আলঝেইমার্স সংক্রান্ত প্রথম জিন ২০০৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের করা সায়েন্টিফিক ডিসকভারির তালিকায় স্থান পায়।

প্রফেসর জুলি বলেন, মস্তিষ্ক আমাদের স্মৃতি ধরে রাখার এবং চিন্তা ও আবেগের বাসস্থান। আমাদের সব কিছুর নিয়ন্ত্রকও ওই মস্তাষ্ক। আবার একই সাথে এটি আলঝেইমার্স এবং অন্যান্য মনোবৈকল্য রোগের উৎপত্তিস্থলও বটে। দ্য নিউ ব্রেইন ট্যুর মস্তাষ্কের বিভিন্ন অংশ অনুসন্ধানের সুযোগ দেবে এবং একই সাথে জানা যাবে মনোবৈকল্যের জন্য এটি কিভাবে সংক্রমিত হয়। গবেষকেরা এখান থেকে তথ্য নিয়ে মনোবৈকল্য নির্মূলের উপায় নিয়েও কাজ করতে সক্ষম হবেন। তাদের গবেষণা থেকে হয়তো বেরিয়ে আসবে মস্তিষ্কবিষয়ক যাবতীয় রোগের মহৌষধ। এটা মনে রাখা দরকার, মস্তিষ্কের রোগের কারণেই মনোবৈকল্য হয়ে থাকে। অর্থাৎ মস্তাষ্কের কোনো অনিয়মের কারণে এ ধরনের রোগ হয়। বিষয়টি নিয়ে যথাযথভাবে গবেষণা চালিয়ে এই রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিষেধক উদ্ভাবন করা সম্ভব।

প্রফেসর জুলি বলেন, মনোবৈকল্যকে অনিবার্য ভাবার কোনো প্রয়োজন নেই। ব্রিটেনে বহু প্রতিভাবান বিজ্ঞানী রয়েছেন যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন এবং তারা বুঝতে চাইছেন, মনোবৈকল্য ঠিক কিভাবে আমাদের মস্তিষ্ককে পরিবর্তন করে দেয়। ওয়েবসাইটের ভিজিটররা ফেসবুক এবং টুইটে লিঙ্ক করতে এবং আলঝেইমার্স রিসার্চ ইউকে ফান্ডে দান করতে পারবেন।

একটি প্রাপ্তবয়স্ক মস্তিষ্কের ওজন প্রায় দেড় কেজি অর্থাৎ ৩.৩ পাউন্ড। এতে থাকে ৯ হাজার কোটি নার্ভ সেল বা স্নায়ুকোষ। এ ছাড়া রয়েছে ৯ হাজার কোটি অন্যান্য কোষ। মনোবৈকল্যের সময় মস্তিষ্কের বিভিন্ন এলাকার স্নায়ুকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমনকি মরেও যায়। এই কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং মরে যাওয়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে নিরলস গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।

মস্তিষ্কের ৯ হাজার কোটি স্নায়ুকোষ একে অপরের কাছে বার্তা পাঠায়। আর এটি আমাদের যেকোনো বিষয়ে সাড়া দিতে বা বিষয়টি বুঝতে সহায়তা করে। স্নায়ুকোষগুলো একে অপরের সাথে বার্তা বিনিময়ের জন্য ব্যবহার করে ক্ষুদ্র ইলেকট্রিক্যাল ইমপালস এবং স্পেশালাইজড কেমিক্যাল। মনোবৈকল্যের সময় ওই কোষগুলো একে অপরের সাথে যোগাযোগ ক্ষমতা হারায় এবং কার্যত মরে যায়। তাই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, স্নায়ুকোষের এই অবস্থা মনোবৈকলের কারণ। আর এটি যখন ঘটে তখন মস্তিষ্ক স্মৃতি ধরে রাখতে পারে না। মানুষ ক্রমেই স্মৃতিশক্তিহীন হয়ে যায়। কিন্তু কেন এই কোষরা মরে যায় বা অকার্যকর হয়ে পড়ে সেই কারণ এখনো অজানা। বিজ্ঞানীরা এই বিষয়টি জানার জন্যই এখন জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা প্রতিদিনই এ বিষয়ে কিছু না কিছু শিখছেন এবং এগিয়ে যাচ্ছেন মনোবৈকল্য প্রতিরোধের উপায় উদ্ভাবনের দিকে।

নিত্যনতুন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজকের চিকিৎসা বিজ্ঞান ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। এসব ওয়েবসাইটে মস্তিষ্কের মতো জটিল বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপন করা তারই ধারাবাহিকতা। মস্তিষ্ক স্ক্যান করে ওই সাইটে দেয়া তথ্যের সাথে মিলিয়ে ঘটে যাওয়া ডিজঅর্ডার বা অনিয়ম খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব। তাই একটা সময় হয়তো আসবে, যখন মস্তিষ্ক থাকবে চিরসজীব। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাতে পড়বে না কোনো ক্লান্তির ছাপ। ডিজিটাল দুনিয়ায় সেই মস্তিষ্ক যে কত কি আবিষ্কারে মত্ত হবে তা ভবিষ্যৎই বলে দেবে।

এদিকে মানুষ-মেশিন ইন্টারফেসের দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে। যদিও মানুষের পক্ষে পুরোপুরি ইলেকট্রনিক দেহ ধারণ এখনই সম্ভব হচ্ছে না। মেশিন বা রোবট যেখানে কাজ করে বা পরিচালিত হয় ইলেকট্রন ব্যবহার করে, সেখানে মানুষ পরিচালিত হয় প্রোটন এবং আয়ন ব্যবহার করে। তাই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন নতুন প্রোটনভিত্তিক ট্রানজিস্টর, যা তৈরি হয়েছে কাঁকড়া থেকে। মেশিন এবং বায়োলজিক্যাল সিস্টেমের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় এই সিস্টেম নতুন ম্যাথড বা তত্ত্বের জন্ম দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। মানবদেহে সিগনাল বা সঙ্কেত যেভাবে দেয়া হয় এবং যেভাবে তা কার্যকর হয়, সেই একইভাবে যদি মেশিনেও সিগনাল পরিচালনা করা যায় তাহলে মেশিনের কাছ থেকে আরো ভালো সাড়া পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য তারা চাইছেন এমন সিস্টেমের উন্নয়ন, যাতে করে মানুষের মতো মেশিনও একই প্রক্রিয়ায় সিগনাল বিনিময় করতে পারে। এই কাজটা করে দিতে পারে প্রোটনভিত্তিক ট্রানজিস্টর। মেশিনের মধ্যে এটির সফল সংযোগ এনে দেবে তাৎপর্যপূর্ণ ফল। এর পথ ধরে উদ্ভাবিত হবে নানা ধরনের ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জাম।

এর চেয়ে উন্নত ব্যবস্থার কথাও ভাবা হচ্ছে। আর সেটি হচ্ছে সাইনেপটিক ট্রানজিস্টর এবং ন্যানোস্কেল ডিভাইস। এগুলোতে ব্যবহার হবে প্রোটন কনডাক্টিভ প্রোটিন। তবে এটি তৈরি করা খুবই জটিল বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাও ঝং এবং তার সহকর্মীরা। নেচার কমিউনিকেশন সাময়িকীতে তারা বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তারা অবশ্য ইতোমধ্যেই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তৈরি করেছেন প্রোটনিক ফিল্ড ইফেক্ট ট্রানজিস্টর। এটি এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাদের বিশ্বাস একটা সময় আসবে যখন মানুষ আর যন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : sumonislam7@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস