আন্তর্জাতিক মানের ফটোরিয়েলিস্টিক মডেল বা সিন তৈরির জন্য একজন থ্রিডি আর্টিস্টকে মোট ৪টি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। যেমন : নিখুঁত মডেলিং, মেটিরিয়াল ও টেক্সারিং, লাইটিং ও ক্যামেরা সেটিং এবং রেন্ডারিং। চলতি সংখ্যায় রেন্ডারিংয়ের ৩য় ধাপ থেকে আলোচনা করা হয়েছে।
৩য় ধাপ
চিত্র-০৭
চিত্র-০৮
অপশন্স :
এটি রেন্ডারিংয়ের অতিরিক্ত কিছু কন্ট্রোলিং অপশন দিয়ে সাজানো। যেখান থেকে ফাইলটি কিভাবে রেন্ডার হবে সেই বিষয়টি নির্ধারণ করা যায়। বাই-ডিফল্ট এখানে অ্যাটমোসফিয়ারিকস্, ইফেক্টস এবং ডিসপ্লেসমেন্ট অপশন তিনটি চেক করা থাকে। টেস্ট রেন্ডারিংয়ের সময় অপশনগুলো আনচেক করে দেয়াই ভালো; এতে রেন্ডারিংয়ের সময় অনেকটাই কম লাগবে। ডানদিকের ‘ফোর্স টু-সাইডেড’ অপশনটি আনচেক থাকে। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে এটি চেক থাকা বেশ জরুরি। অয়ার ফ্রেম রেন্ডারিং অথবা কোনো অবজেক্টের ভেতরের পাশে দেখার জন্য এটা চেক থাকা বাঞ্ছনীয়। মেটিরিয়াল থেকেও কাজটি করা যায়, কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি মেটিরিয়ালের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে টু-সাইডেড অপশনকে চেক করতে হয়। ৭নং চিত্রে লক্ষ করুন টু-সাইডেড অপশনকে আনচেক রেখে করায় পেছনের দিকের অয়ার ফ্রেম দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু টু-সাইডেড চেক থাকায় ৮নং চিত্রে পেছনের অয়ার ফ্রেম দেখা যাচ্ছে; চিত্র-০৭, ০৮। সুতরাং প্রত্যেক মেটিরিয়ালে টু-সাইডেড অপশন চেক করার পরিবর্তে রেন্ডারিং অপশনের টু-সাইডেডকে চেক করাই ভালো এবং নিরাপদ। ভিডিও কালার চেক অপশন চেক করে দিলে ভিডিও আউটপুটের সময় ভিডিও ফরমেট যেসব কালার দেখাতে পারে না সেগুলোকে বাদ দিয়ে দেবে।
৪র্থ ধাপ
চিত্র-০৯
অ্যাডভান্স লাইটিং :
এ প্যানেলে প্রয়োজন অনুসারে অ্যাডভান্স লাইটিং বা কমপিউটার লাইটিংয়ের সুবিধা দেবে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে কমপিউটার এই লাইটিং কমপিউটিং করতে দীর্ঘ সময় নিতে পারে। সুতরাং অপশন দুটি অন-অফের বিষয় আপনার ওপরেই নির্ভর করছে; চিত্র-০৯।
৫ম ধাপ
চিত্র-১০
চিত্র-১১
রেন্ডার আউটপুট :
রেন্ডারের এই মেনুটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কোনো সিঙ্গেল ইমেজকে আপনি রেন্ডার করা ইমেজের উইন্ডো (রেন্ডার ফ্রেম) থেকে ‘সেভ বিটম্যাপ’ বাটন ক্লিক করে সেভ করতে পারবেন, কিন্তু কোনো ইমেজ সিকুয়েন্স বা মুভি ফাইলকে পেতে চাইলে আউটপুট পাথ না চিনিয়ে রেন্ডার করলে আউটপুট ফাইল পাওয়া অসম্ভব। সুতরাং ফাইনাল রেন্ডারের আগে ফাইলটি কোন ফরমেটে কোথায় সেভ হবে তা নির্ধারণ করে দিতে হবে। সেভ ফাইলের ডানের ‘ফাইলস’ বাটনে ক্লিক করলে ‘রেন্ডার আউটপুট ফাইল’ ডায়ালগ পাবেন। এখান থেকে লোকেশন, নাম, ফাইল ফরমেট ইত্যাদি লিখে ও চিনিয়ে সেভ বাটনে ক্লিক করুন। পরবর্তী ডায়ালগ বা মেসেজকে ওকে করে বেরিয়ে আসলে ফাইল সেভের কাজটি শেষ হবে; চিত্র-১০। সাধারণত ‘রেন্ডার ফ্রেম উইন্ডো’ চেক থাকে। এর ফলে রেন্ডার ইমেজকে আমরা একটি উইন্ডোতে দেখতে পাই। এটাতেও কয়েকটি টুলস্ রয়েছে যেগুলোর সাহায্যে রেন্ডার ফ্রেম/ইমেজকে সেভ, কোলন এমনকি আলফা চ্যানেলেও আউটপুট নিতে পারব; চিত্র-১১। ‘নেট রেন্ডার’ দিয়ে একই ফাইলের বিভিন্ন অংশকে একাধিক কমপিউটারে নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে রেন্ডার করা যায়।
৬ষ্ঠ ধাপ
চিত্র-১২
অ্যাসাইন রেন্ডারার :
অ্যাসাইন রেন্ডারার রোল আউটের প্রোডাকশন > রেডিও বাটনে ক্লিক করলে ‘চুজ’ রেন্ডার ডায়ালগ বক্স ওপেন হয়। এখান থেকে রেন্ডারিং মেথডকে অ্যাসাইন করা যায়, যেমন মেন্টাল-রে, ভি-রে ইত্যাদি। ‘সেভএজ ডিফল্ট’ বাটনে ক্লিক করে কারেন্ট সেটআপকে ডিফল্ট করা যাবে; চিত্র-১২।
৭ম ধাপ
চিত্র-১৩
ফাইনাল অপশন :
এই অপশনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ফিচার রয়েছে। ‘প্রোডাকশন’ অপশন সর্বোচ্চ কোয়ালিটির আউটপুট দেয়। আর ‘অ্যাকটিভ সেড’ ড্রাফট আউটপুট দেয় এবং অল্প সময় খরচ করে। ‘ভিউপোর্ট’ অপশন থেকে সিনে ভিউপোর্ট সিলেক্ট না করেও এখানে টপ, লেফট, পারস্পেকটিভ, ক্যামেরা ইত্যাদির যেকোনোটি চিনিয়ে দিলে সেই ভিউপোর্টকে রেন্ডার করবে। আর ডানের লক বাটনটি অ্যাকটিভ করলে অন্য ভিউপোর্ট সিলেক্ট থাকলেও লক করা ভিউপোর্টকে রেন্ডার করবে; চিত্র-১৩।
৮ম ধাপ
চিত্র-১৪
চিত্র-১৫
এ পর্যায়ে ‘রেন্ডারার’ ট্যাবের অধীন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে একটি মাত্র রোল-আউট ‘ডিফল্ট স্ক্যানলাইন রেন্ডারার’ রয়েছে যার প্রথমেই রয়েছে অপশন্স। এই সেকশনে কয়েকটি অন-অফ চেক বক্স রয়েছে। বাই-ডিফল্ট ‘ম্যাপিং’, ‘অটোরিফ্লেক্ট/রিফ্রাক্ট অ্যান্ড মিররস’ ও ‘স্যাডো’ এই তিনটি চেক বক্স অন থাকে। টেস্ট রেন্ডারকে স্পিড আপ করার জন্য এগুলো অফ রাখা উচিত। এখানকার ‘ফোর্স অয়ার ফ্রেম’ অপশনটি কখনও কখনও দরকার হয়। এটাকে চেক করে দিলে সিনের সব অবজেক্ট অয়ার মোডে রেন্ডার হবে। অয়ার থিকনেস অপশনের মান কমবেশি করে অয়ারকে মোটা-চিকন করা যায়; চিত্র-১৪, ১৫।
৯ম ধাপ
চিত্র-১৬
অ্যান্টিএলাইজিং :
অ্যান্টিএলাইজিং কন্ট্রোলার দিয়ে কোনো অবজেক্টের টেক্সার ম্যাপ এবং তার এজগুলোর অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এটাকে অফ করে দিলে রেন্ডারিং সময় অনেক কম লাগে সত্য, কিন্তু ইমেজের মান অনেকটাই খারাপ হবে। যেমন- এজগুলো ভাঙ্গা ভাঙ্গা দেখাবে; চিত্র-১৬।
চিত্র-১৭
ফিল্টার :
ম্যাক্স ৯ ভার্সন পর্যন্ত মোট ১২ ধরনের অ্যান্টিএলাইজিং ফিল্টার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে; চিত্র-১৭। এগুলোকে ইমেজ বা ভিডিওর চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করা যায়। আর মনে রাখা উচিত আউটপুটের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এখানে খুব সংক্ষেপে বিশেষ বিশেষ ফিল্টারগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
এরিয়া, কোয়াড্রাটিক ও কিউবিক :
চিত্র-১৮
চিত্র-১৯
এই ফিল্টার তিনটি প্রায় একই ধরনের অ্যান্টিএলাইজিং তৈরি করে। অবজেক্টের ওপর ব্লারি ইফেক্ট প্রয়োগ করে অবজেক্টকে মসৃণ করে। এরিয়া ও কোয়াড্রাটিক অনেক কম সময়ে রেন্ডার করে এবং যথাক্রমে ২ ও ৩ মাত্রার ফিল্টার সাইজ ব্যবহার করে। কিউবিক ৪ মাত্রার ফিল্টার সাইজ ব্যবহার করে। এতে কিছুটা সময় বেশি নিলেও ইমেজ কোয়ালিটি এরিয়া ও কোয়াড্রাটিক থেকে ভালো হয়। অবশ্য এরিয়া ফিল্টারটি ফিল্টার সাইজকে কমবেশি করার অপশন দেয়। যে কারণে ইমেজের ব্লারি ইফেক্টকে কন্ট্রোল করা সম্ভব হয়; চিত্র-১৮, ১৯।
ব্ল্যাক ম্যান :
চিত্র-২০
এই ফিল্টারটি সার্প কোয়ালিটির ইমেজ আউটপুট দেয়; চিত্র-২০।
ব্লেন্ড :
চিত্র-২১
ব্লেন্ড ফিল্টারটি বেশ কার্যকর একটা ফিল্টার। এরিয়া ফিল্টারের মতো এর ফিল্টার সাইজ কমবেশি করা যায়। আবার ব্লেন্ডের মানকে কমবেশি করে অবজেক্টের স্মুথনেসকে কন্ট্রোল করা যায়; ফলে প্রয়োজনমতো ইমেজ পেতে ফিল্টারটি খুবই কার্যকর; চিত্র-২১।
ক্যাটমূল-রম :
চিত্র-২২
এই ফিল্টারটি সার্প ইমেজ তৈরি করে। তবে এর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো অবজেক্টের এজগুলোকে বাড়িয়ে দেয়। মুলিয়ন বা গ্রুপযুক্ত ব্লিডিং বা অবজেক্টের আউটপুটের ক্ষেত্রে ফিল্টারটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী; চিত্র-২২।
কুক-ভ্যারিবল :
ফিল্টারটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটা ব্লারি ইমেজকে সার্প করে। এতে ফিল্টার সাইজকে পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। সুতরাং সার্প বা ব্লারির পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
মিচেল-নেন্ট্রাভ্যালি :
ফিল্টারটিতে দুটি ভ্যারিবল- ব্লার ও রিংগিং ব্যবহার করা হয়েছে। এই দুটি অপশনের মান পরিবর্তন করে অ্যান্টিএলাইজিংকে কন্ট্রোল করা সম্ভব। ফলে ফিল্টারটির মাধ্যমে পছন্দমতো ইমেজ পাওয়া যেতে পারে। এর মাধ্যমে রেন্ডার করতে সময় কিছুটা বেশি লাগে, কিন্তু সে তুলনায় ইমেজ মান অনেকটাই উন্নত হয়।
সফটেন :
ইমেজে সফট-ব্লারি ইফেক্ট প্রয়োগ করার জন্য ফিল্টারটি ব্যবহার করতে পারেন।
ভিডিও :
ভিডিও ফিল্টার দিয়ে NTSC ও PAL ফরমেটের ভিডিও আউটপুটের সময় ফুটেজের সময় ব্লারি ইফেক্ট প্রয়োগ করা যায়।
উপরের আলোচিত ফিল্টারগুলো ছাড়াও আরও কয়েকটি ফিল্টার রয়েছে, যেগুলোর ব্যবহার তেমন একটা প্রয়োজন হয় না অথবা আলোচিত ফিল্টারগুলোর খুব কাছাকাছি ইফেক্টযুক্ত। তাই সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়নি।
টিপস হিসেবে জেনে রাখতে পারেন ড্রাফট রেন্ডারিংয়ের জন্য এরিয়া, প্রোডাক্টের (ইনটেরিয়র) জন্য মিচেল-নেন্ট্রাভ্যালি, ইনটেরিয়র সিনের জন্য ব্ল্যাকম্যান আর এক্সটেরিয়রের (আর্কিটেকচারাল) জন্য ক্যাটমূল-রম ফিল্টার ব্যবহার করতে পারেন (বাকি অংশ পরবর্তী সংখ্যায়)।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : tanku3da@yahoo.com