অনেক সময়ে ছবিতে ফ্রেম দেয়ার ফলে ছবির ধরন এবং ছবি সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে যায়। অনেক সময় খুব সাধারণ মানের কোনো ছবিও একটি সুন্দর ফ্রেমের কারণে তা হয়ে ওঠে অসাধারণ। যখন ছবি প্রিন্ট করা হয়, তখন তা সাধারণত দু’ভাবে করা যায়। একটি গতানুগতিকভাবে, অন্যটি হলো ছবিতে কোনো বর্ডার রেখে প্রিন্ট করা। আমাদের দেশের ফটো স্টুডিওর পর্দার কথা বললে ছবির চারপাশে সাদা একটি বর্ডার বা ফ্রেম দিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এখনকার ডিজিটাল যুগে খুব সহসাই ছবি স্টুডিও থেকে প্রিন্ট করা হয়। তাই বলে কি ডিজিটাল ছবিতে ফ্রেম দেয়া যাবে না? অবশ্যই যাবে। ফটোশপের মাধ্যমে খুব সহজেই ডিজিটাল ছবিতে ফ্রেম দেয়া যেতে পারে। তবে ফটো স্টুডিও থেকে যে ধরনের ফ্রেম দেয়া হয় তার থেকে অনেক সুন্দর এবং কাস্টোমাইজযোগ্য ফ্রেম তৈরি করা সম্ভব। কমপিউটার জগৎ-এর নিয়মিত গ্রাফিক্স বিভাগের এবারের পর্বে দেখানো হয়েছে কীভাবে ফটোশপ ব্যবহার করে খুব সহজেই ছবিতে ফ্রেম যুক্ত করা যায়।
ফ্রেম তৈরি করার জন্য প্রথমেই ভালো রেজ্যুলেশনের একটি ছবি নির্বাচন করতে হবে যার। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, খুব বেশি নয়েজ আছে এমন ছবি নির্বাচন না করাই ভালো হবে। কারণ অনেক সময়েই দেখা গেছে, একটু নয়েজ থাকা ছবি বা হাই আইএসও-এ তোলা ছবিতে ফ্রেম দিলে তা ভালো লাগার বদলে আরো খারাপ লাগে ও ছবির সৌন্দর্যহানি হয়। আর কাজ করার সুবিধার্থে এমন একটি ছবি বেছে নিতে হবে যেখানে অনেক দূর পর্যন্ত খোলা মাঠ দেখা যায় এবং কোনো নদীর তীর বা কোনো ধু ধু প্রান্তর যেখানে খুব বেশি অবজেক্ট নেই। এমন ছবি নির্বাচন করলে ভালো। নিজের ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবিতে এ কাজ করতে চাইলে পর্যাপ্ত আলো থাকা অবস্থায় ছবি তুলতে হবে। এক্ষেত্রে একটু বেশি রেজ্যুলেশনের ছবি হলে কাজ করতে সুবিধা হয়। ছবির রেজ্যুলেশন কম হলে ছবিটি ফটোশপে ওপেন করে এর Image Properties থেকে DPI বাড়িয়ে দিলে ছবির সূক্ষ্মতা বাড়বে।
প্রথমে ছবিটি ফটোশপে ওপেন করুন। ছবিটি একটু কন্ট্রাস্টি করতে Brightness/Contrast-এ প্রথমে এর কন্ট্রাস্ট বাড়িয়ে দিতে হবে। এটি করতে Edit-এ ক্লিক করুন। কন্ট্রাস্ট ছবিতে মেঘের ভাঁজগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এবার বাকি কাজ শুরু করার আগে ছবির লেয়ারটি কপি করতে হবে। এর জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড লেয়ার ড্র্যাগ করে লেয়ার প্যালেটের নিচের New Layer আইকনের ওপর ছেড়ে দিন। অথবা অরিজিনাল লেয়ার সিলেক্টেড রেখে একটি Frame layer খুলুন। এটি করতে লেয়ার Pallate-এর নিচ থেকে New layer খুলুন এবং এটিকে রিনেম করে ফ্রেম করে দিন। এটির Criteria box থেকে Differance সিলেক্ট করে দিন। এবার মূল ছবিতে এবং Frame layer-এ Layer mask সংযোগ করুন। এটি করতে লেয়ার প্যালেটের নিচে একটি পতাকার মতো আইকনে ক্লিক করুন। এবার কাজ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্ত্তত। লক্ষ রাখবেন, মূল ছবিতে কোনো কাজ করা ঠিক হবে না। সব সময় ডুপ্লিকেট লেয়ার তৈরি করে কাজ করা ভালো। লেয়ারটি সিলেক্টেড অবস্থায় Ctrl+M চাপলে কার্ভের প্যালেট সামনে আসবে। Curve একটি ছবির Red, Green এবং Blue এই তিনটি চ্যানেলকে বেজ করে ছবির টোন নির্ধারণ করে। এবার এই কার্ভকে কাজে লাগিয়ে ছবিটিকে খুব কড়া কন্ট্রাস্টি ছবিতে রূপান্তর করতে হবে। এখানে Input ১৩৩ এবং Output মাত্র ৩৭-এ রাখা হয়েছে। এবার লেয়ারজুড়ে ২ পিক্সেল Gaussian Blur প্রয়োগ করুন। এজন্য FilterBlurGaussian Blur-এ ক্লিক করুন। ব্লারের কারণে ছবিটি একটু নমনীয় হবে।
New Adjustment Layer তৈরি করে এর Layer Settings থেকে Levels-এ ক্লিক করতে হবে। লেভেলগুলোর Histogram থেকে সাদা ত্রিভুজ অংশটি মাঝের দিকে টেনে দিতে হবে। ফলে ইমেজের উজ্জ্বল অংশগুলো হাইলাইটেড হবে না এবং কার্ভ ও গাঢ় অংশগুলো আরো অন্ধকারময় হবে। এখন এটি একটি Blank Adjustment Layer রূপে স্থাপিত হয়েছে। এটি কালো করে তুলতে Layer dialoge box থেকে White layer mask-এর ওপরে ক্লিক করে Ctrl+i চাপুন, যা পুরো layer অংশটিকে কালো করে দেবে। RGB Level থেকে এর নিচের Output Levels-এর Slider-এর সাদা ত্রিভুজ মাঝখান বরাবর নিলে কালারটুকুর হাইলাইটেড অংশ বোঝা যাবে। এবার মিডটোন কমিয়ে দেয়ার জন্য ধূসর ত্রিভুজটি ডান দিকে সরিয়ে দিন। এবার ড্রপডাউন থেকে সবুজ রং সিলেক্ট করুন। এর Output Levels-এর সাদা ত্রিভুজটি বাম দিকে নিয়ে আসুন, যা সবুজ রংকে আরো গাঢ় করে তুলবে। তাই হালকা কিছু রং-এর টেক্সচারে পরিবর্তনে ভালো লাগবে। জলজ ভাব দেখাতে কিছুটা সবুজাভ আনতে হবে। এ কাজ করার প্রক্রিয়া আগের মতোই New Adjustment Layer নিয়ে শুরু করতে হবে, যার Criteria হবে Levels। এর পর মাস্কিং করে Invert করতে হবে আগের নিয়মে। এবার ছবি অনুযায়ী রং নির্বাচন করুন কালার প্যালেট থেকে। ১৫ থেকে ২০ পিক্সেল সফট ব্রাশ দিয়ে পেইন্ট করুন। ঠিক একইভাবে নীল রং সিলেক্ট করে হাইলাইট কমিয়ে দিন। এখানে কিছুটা বেগুনি লাল রংয়ের কম্বিনেশন নেবার জন্য নীল রং একেবারে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এবার Ok করে বেরিয়ে আসুন। এখন Adjustment Layer Maskটি সিলেক্ট করুন। আগের মতো Control+i চেপে invert করুন। অর্থাৎ কালো mask-এ নিয়ে আসুন। এবার লাল রংয়ের পেইন্ট ব্যবহার করার উপযুক্ত সময় এসেছে। এভাবে ছবিটিকে ইচ্ছেমতো রূপ দেয়া গেলে ছবির ফ্রেমিং আকর্ষণীয় মনে হবে। আর যদি কোনো রকম এডিট করতে না চান, তাহলে এডিটের দরকার নেই। তবে ছবিকে কন্ট্রাস্টি করতে চাইলে এভাবে করা সম্ভব।
এবারে আসা যাক, ফ্রেমিং নিয়ে। প্রথমেই নতুন আরেকটি লেয়ার নিতে হবে। বাকি লেয়ারগুলো ডিজ্যাবল করে নিলে কাজ করতে সুবিধা হবে। তারপরে পুরো লেয়ারটি সিলেক্ট করে নিতে হবে। এখান থেকে ফ্রেমিংয়ের অংশটুকু রেখে বাকি অংশ বাদ দিতে হবে। তবে তার আগে কি রংয়ের ফ্রেম চান তা কালার প্যালেট থেকে সিলেক্ট করতে হবে। এর পরে পেইন্ট ব্রাশ দিয়ে লেয়ারের পুরো অংশ ভালোভাবে পেইন্ট করে নিতে হবে। অথবা গ্রাডিয়েন্ট টুলে ডান বাটন ক্লিক করে পেইন্ট বাকেট টুল সিলেক্ট করে পুরো লেয়ারে সমানভাবে কালার ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে।
এরপরে যতটুকু অংশ ছবিতে থাকবে তা সিলেক্ট করে বাদ দিতে হবে। বাদ দেয়ার পর Shift+F6 চেপে ফেদারিং করে নিতে হবে। কতটুকু ফেদারিং করতে হবে তা নির্ভর করে ছবির আকারের ওপর। এটা পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে কি অবস্থায় ছবি আছে তার উপরে। এবারে আগের লেয়ার এনাবল করে নিলেই হয়ে যাবে ফ্রেমসহ পছন্দের ছবিটি।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : ashraf.icab@gmail.com