লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
মোবাইলপ্রযুক্তি
স্মার্টফোন দিয়ে যেভাবে ভালো ছবি তুলবেন
বর্তমানের স্মার্টফোনগুলোকে তুলনা করা হচ্ছে কমপিউটারের সাথে। কিন্তু, শুধুই কি কমপিউটার? স্মার্টফোনের আরও অনেক উপযোগিতার মাঝে একটি হলো এটি দিয়ে চিত্র ধারণ করা যায়- স্থির কিংবা চলমান। আপনার ছোট্ট সন্তানটি দুলু দুলু পায়ে প্রথমবারের মতো একপা-দু’পা করে হেঁটে গেল, সেই মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করতে চান। কি করবেন? ক্যামেরার খোঁজে লেগে পড়বেন? ততক্ষণে সেই আনন্দঘন মুহূর্তটি থাকবে? হাতের নাগালের মাঝেই রয়েছে স্মার্টফোন, সেটি কেনো ব্যবহার করছেন না? তবে এখানে একটি ‘কিন্তু’ আছে। ফোনের ক্যামেরার ছবির মান নিয়ে থেকে যায় সংশয়। প্রফেশনাল ডিজিটাল সিঙ্গল লেন্স রিফ্লেক্স বা ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ছবি হয়তো পাওয়া যাবে না, তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে স্মার্টফোনের ছবিটি হয়ে উঠবে ফটো অ্যালবামে সাজিয়ে রাখার মতো। স্মার্টফোনের ক্যামেরা দিয়ে কীভাবে ভালো ছবি তোলা যায়, তাই নিয়ে এ লেখা।
বিভিন্ন ফোনের মাঝে ক্যামেরার মানের তারতম্য আছে। তাই এখানে মোটামুটি ভালো মানের ফোনগুলোতে যে সুবিধা দেয়া থাকে, তাই নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা অনেকেই স্বীকার করবেন, ফোনের ক্যামেরার প্রধান সমস্যা হলো কম আলোয় ভালো ছবি ধারণ করা সম্ভব হয় না। নিচের টিপগুলোতে তারই কিছু সমাধান দেয়া হয়েছে।
ফটোগ্রাফির সাধারণ নিয়ম
প্রফেশনাল ক্যামেরা হোক আর স্মার্টফোন- ফটোগ্রাফির সাধারণ নিয়মগুলো তো মাথায় রাখতেই হবে। এখানে ফটোগ্রাফির সাধারণ কিছু নিয়ম দেয়া হলো :
০১. ফোনের ক্যামেরা লেন্স সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। অবাক হওয়ার কিছু নেই। ফোনের ক্যামেরার আলাদা লেন্স সাধারণত না থাকলেও পকেট থেকে হাতে, হাত থেকে পকেটে, সারাদিনে এতবার ব্যবহার করা হয় যে লেন্সের ওপর ময়লা পড়া খুবই স্বাভাবিক। তাই ছবি তোলার আগে নরম কাপড় দিয়ে মুছে নিলে ছবি অনেক পরিষ্কার আসবে, ঘোলাটে ভাবটা থাকবে না।
০২. আজকাল মোটামুটি ভালো মানের যেকোনো স্মার্টফোন ক্যামেরার সাথে ফ্ল্যাশ থাকে। স্মার্টফোনের সাথে সাথে এই ফ্ল্যাশেরও আধুনিকায়ন হয়েছে। কিন্তু ফ্ল্যাশ কি সবসময় ভালো ফল দেয়? না। তবে কম আলোয় অন্তত ছবি তোলা যায় ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে। আর বর্তমানের এলইডি ফ্ল্যাশ বেশ তীব্র আলো বর্ষণ করে, যা ছবিকে অতিরিক্ত সাদা করে, ছবিতে চোখ লাল দেখায়, অনেক সময় আলোর ঝলকে ছবির বিষয়বস্ত্ত নষ্ট হয়ে যায়। তাই অটো ফ্ল্যাশ না রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্ল্যাশ চালু কিংবা বন্ধ রাখুন। আর যে ক্ষেত্রে ফ্ল্যাশে ছবি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, আলো কম থাকার জন্য ছবি ভালো আসছে না, সে ক্ষেত্রে ফ্ল্যাশ চালু রেখে হাতের আঙুল দিয়ে কিছুটা অংশ ঢেকে রাখতে পারেন বা টিসু পেপারের মতো নরম কিছু দিয়ে ঢেকে দিলে ফ্ল্যাশের তীব্রতা অনেক কমে যাবে।
০৩. প্রত্যেক ফোনের ক্যামেরার সাথেই ডিজিটাল জুম করার সুবিধা থাকে। কিন্তু এই জুম মোটেই কোনো কাজের জিনিস নয়। কমপিউটারে কোনো ছবি জুম করে দেখা আর ক্যামেরার ডিজিটাল জুম একই কথা। এতে ছবি ঘোলাটে ও ফেটে যায়। তাই ডিজিটাল জুম করা থেকে বিরত থাকুন। কোনো ছবি কাছ থেকে তুলতে হলে এর কাছে এগিয়ে যান। যদি তা সম্ভব না হয়, পরে তা জুম করে দেখার অপশন তো থাকছেই। আর যদি আশপাশের ছবি বাদ দিতে চান, তো পরে সেটা ক্রপ করে নিলেই হলো। এখানে মনে রাখা দরকার, অপটিক্যাল জুম আর ডিজিটাল জুম এক নয়। অপটিক্যাল জুমে ছবির মান নষ্ট হয় না।
০৪. যে ছবি তুলতে চান সেটি আলোক উৎসের দিকে মুখ করে রাখুন। মানুষের ক্ষেত্রে সহজেই তা করা যায়। অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে কিছুটা সময় নিয়ে এই কাজটি করুন। এতে স্মার্টফোনের ছবি কয়েকগুণ বেশি পরিষ্কার দেখাবে।
ক্যামেরা অ্যাপের সেটিং ঠিক করে নিন
ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে ফটোগ্রাফির কিছু সাধারণ নিয়ম নিয়ে, যা সব ধরনের ছবি তোলার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। স্মার্টফোনে ছবি তোলার সময় এর ক্যামেরায় বেশ কিছু অপশন আছে, যা ব্যবহার করে ছবির মান ভালো করা যায়।
০১. অনেক স্মার্টফোন ক্যামেরার অপশনেই ছবির রেজ্যুলেশন ঠিক করে দেয়ার ব্যবস্থা আছে। কম রেজ্যুলেশনের ছবি হয়তো বা এমএমএসের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেশি রেজ্যুলেশনের ছবির প্রয়োজন হয়। ছবি তোলার আগে তাই মেমরি কার্ডের আকার বিবেচনায় রেখে ক্যামেরা রেজ্যুলেশন ঠিক করে নিন। বেশি রেজ্যুলেশনের ছবি প্রয়োজনমতো ছোট করে নেয়া যায়। কিন্তু এর উল্টোটা করা সম্ভব নয়। অনেক অ্যাপে ছবির মান ঠিক করে দেয়ার অপশন থাকে, সেটা সর্বোচ্চ দিয়ে রাখুন।
০২. ছবি তোলার সময় হাত যথা সম্ভব স্থির রাখতে হয়। তারপরও কিছু ক্ষেত্রে হাত নড়ে যেতে পারে। আর স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে এটি হরহামেশা হয়ে থাকে। কাঁপা ছবি না তুলে স্থির ছবি তোলার এ অপশনের নাম ‘স্ট্যাবিলিটি’। অনেক ক্যামেরা অ্যাপে স্ট্যাবিলিটি সেট করে দেয়া যায়। ছবি তোলার আগে এ অপশনটি দেখে নিন।
০৩. ফোনে ক্যামেরা চালু করেই ছবি তুললে ছবির মান বেশ খারাপ হয়, অনেকটা লালচে দেখায়। কারণ ওই পরিবেশের আলোর পরিমাণ বুঝে নিতে ক্যামেরার কিছুটা সময় লাগে। তাই ক্যামেরা অ্যাপ চালু করে স্মার্টফোনটিকে ৫ থেকে ১০ সেকেন্ড স্থির রেখে দিতে হয়। এতেও অনেক সময় কাঙিক্ষত ফল পাওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে ক্যামেরার ‘হোয়াইট ব্যালান্স’ ঠিক করে নিতে হয়। এ অপশনটি মোটামুটি সব ফোনেই পাওয়া যায় এবং এতে ভালো ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
০৪. ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, ফোনের ক্যামেরার সবচেয়ে বড় সমস্যা কম আলোয় ছবি ভালো আসে না। এ সমস্যা সমাধানে ‘এক্সপোজার’ অপশনটি অনেক বড় সহায়ক। কম আলোয় এক্সপোজার বেশি রাখলে অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল ছবি পাওয়া যায়।
পরে ছবি সম্পাদনা করা
ক্যামেরার সেটিং পরিবর্তন করে ছবি তোলার পরও অনেক সময় ছবিটি নিজের মনের মতো হয় না। সে ক্ষেত্রে ছবিটি কমপিউটারে স্থানান্তর করে ফটো এডিটর দিয়ে সম্পাদনার কাজ করে নিতে পারেন। ছবি সম্পাদনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে সাধারণ কিছু বিষয় মনে রাখা উচিত।
হালের স্মার্টফোনগুলোর ক্যামেরা যথেষ্ট উন্নত। এসব ক্যামেরার ছবির মান যথেষ্ট ভালো। তবে অনেক ক্যামেরায় যে সমস্যাটি এখনও পাওয়া যায়, তা হলো ‘পারফেক্ট কালার’-এর অভাব। ছবি সম্পাদনার সফটওয়্যারে রংয়ের ভারসাম্য ঠিক করা যায়। আর যদি একান্তই ঠিক করা সম্ভব না হয়, তবে সেটি সাদা-কালো করে দিতে পারেন। অনেকে ছবিটি তোলার সময়ই সাদা-কালো করে নেন। তাদের মনে রাখা উচিত, একটি রঙিন ছবি যেকোনো সময় সাদা-কালো করতে পারবেন, তবে সাদা-কালো ছবি কখনও রঙিন করতে পারবেন না। এ ছাড়া ফিল্টার ব্যবহারের সুযোগ তো থাকছেই। আর ছবি সম্পাদনার জন্য আপনাকে সেই বিষয়ে পেশাদার হতে হবে না, ফটোশপেও দক্ষ হতে হবে না। সাধারণ যেকোনো ফটো এডিটর দিয়েই এ কাজগুলো করতে পারবেন। গুগলের পিকাসা নতুনদের জন্য সহজ ফিচারসমৃদ্ধ একটি সফটওয়্যার। এ ছাড়া স্মার্টফোনেও সম্পাদনা করা সম্ভব। অ্যান্ড্রয়িডে ছবি সম্পাদনার জন্য ‘পিক্সলার এক্সপ্রেস’ একটি ভালো অ্যাপ। এতে অনেক ইফেক্ট তো আছেই, নতুন করে নামিয়ে নেয়ার সুযোগও থাকছে। অ্যাপটি পাওয়া যাবে http://goo.gl/Ifp1GM ঠিকানায়।
দরকারি ক্যামেরা অ্যাপ
স্মার্টফোনের বিল্ট-ইন ক্যামেরা অ্যাপ ছবি তোলার জন্য যথেষ্ট। তবে কেউ যদি আরও কিছু বেশি সুবিধা, বেশি ইফেক্ট কিংবা ভিন্নধর্মী কিছু চান, তবে এ ক্যামেরা অ্যাপগুলো ইনস্টল করে নিতে পারেন।
খুব বেশি ফিচারসমৃদ্ধ না হলেও ‘ক্যামেরা ফর অ্যান্ড্রয়িড’ সহজে ব্যবহার করা যায়। এই ফ্রি অ্যাপটি অনেকটা অ্যান্ড্রয়িডের বিল্ট-ইন ক্যামেরা অ্যাপের মতো। নতুন অ্যান্ড্রয়িড ব্যবহারকারীর জন্য সুবিধার তো বটেই। ডাউনলোড করতে পারবেন http://goo.gl/imQsAK সাইট থেকে।
অপরদিকে ‘ক্যামেরা ৩৬০ আল্টিমেট’ অনেক বেশি ফিচারসমৃদ্ধ। ইফেক্ট, ফিল্টার, ক্লাউড সেবা, ফটো অ্যালবাম- সব মিলিয়ে চমৎকার একটি ফ্রি ক্যামেরা অ্যাপ। পাওয়া যাবে http://goo.gl/oGDBO8 ঠিকানায়।
উপরের দুটি বিনামূল্যের অ্যাপ। যদি কেউ পকেটের অর্থ খরচ করে অ্যাপ কিনতে চান, তবে ‘ক্যামেরা জুম এফএক্স’-এর নামটাই প্রথমে আসে। সম্ভবত এটিই গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া সবচেয়ে ফিচারসমৃদ্ধ ক্যামেরা অ্যাপ। বর্তমানে এটি ১.৬৮ মার্কিন ডলারে পাওয়া যাচ্ছে। ঠিকানা : http://goo.gl/4WmABK। এর একটি বিনামূল্যের সংস্করণও পাওয়া যায়।
আইফোন ব্যবহারকারীরা যদি বিনামূল্যের অ্যাপ চান, তবে ‘স্ন্যাপসিড’ ব্যবহার করতে পারেন (ঠিকানা : http://goo.gl/MjqpB0)। অপরদিকে প্রিমিয়াম অ্যাপ কিনতে চাইলে ‘প্রো ক্যামেরা ৭’ কিংবা ‘ক্যামেরা+’ তুলনামূলক ভালো। ২.৯৯ ডলারের প্রো ক্যামেরা ৭ পাওয়া যাবে http://goo.gl/a2fkU3 ঠিকানায়। অপরদিকে ১.৯৯ ডলারের ক্যামেরা+ পাওয়া যাবে http://goo.gl/MahlMa ঠিকানায়
বাজারের ভালো ক্যামেরা ফোন
স্মার্টফোনের বাজার খুবই প্রগতিশীল। প্রস্ত্ততকারকদের মাঝে প্রতিযোগিতার কারণেই নিত্যনতুন স্মার্টফোন আমরা হাতে পাই। তবে সম্প্রতি দাম বাড়ার কারণে স্মার্টফোনপ্রেমীরা পড়েছেন কিছুটা বিপাকে। এবার কিছু স্মার্টফোনের কথা জেনে নেয়া যাক। ফটোগ্রাফির জন্য যেগুলোর আছে বিশেষ খ্যাতি।
প্রত্যেকটি স্মার্টফোনের রয়েছে অনন্য কিছু সুবিধা। তাই একটিকে অপরটির উপরে রাখা যায় না। অ্যান্ড্রয়িডচালিত স্মার্টফোনের মাঝে স্যামসাংয়ের ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন ‘গ্যালাক্সি এস৫’-এর ক্যামেরার রয়েছে আলাদা অবস্থান। সবচেয়ে ফিচার সমৃদ্ধ ক্যামেরা বলে স্বীকৃত এটি। অপরদিকে অ্যাপল এর পণ্যে যাদের আস্থা, তাদের জন্য নিঃসন্দেহে ‘আইফোন ৫এস’ একটি ভালো পছন্দ। সামগ্রিক বিবেচনায় এটিও থাকবে পছন্দের শীর্ষে। কিছুটা আগের হলেও ‘নোকিয়া লুমিয়া ১০২০’ স্মার্টফোনটিকে অনেক মোবাইল ফটোগ্রাফার তাদের পছন্দের শীর্ষে রাখেন। কারণ, এতে আছে ৪১ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। কম আলোয় ছবি তুলতে এইচটিসির নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোন ‘এইচটিসি ওয়ান এম৮’ এবং আউটডোর ফটোগ্রাফির জন্য সনির ‘এক্সপেরিয়া জেড২’ কিনতে পারেন। তবে এখানে উল্লিখিত প্রত্যেকটি স্মার্টফোনের দামই বেশিরভাগ ক্রেতার হাতের নাগালের বাইরে। তাই ভালো কিছু পাওয়ার জন্য তো অর্থ খরচ করতেই হবে
ফিডব্যাক : m_hasan@ovi.com