নতুন কমপিউটার কিনব, কিন্তু প্রসেসর কোনটা কিনব? স্পিড কত নেব? হ্যাঁ, নতুন কমপিউটার কেনার চিন্তা থাকলে প্রসেসর নিয়ে একটু ভাবতেই হয়। কারণ কমপিউটারের প্রসেসর ছাড়া কিছুই তো প্রসেস হবে না। তা ছাড়া যারা কমপিউটার আপগ্রেডের কথা ভাবছেন তাদের জন্যও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে এখন অনেক রকমের প্রসেসরের ছড়াছড়ি। আর ব্যবহারকারীদের অনেক রকমের চাহিদার কথা মাথায় রেখে অ্যাডভান্স মাইক্রো ডিভাইস (AMD) কোম্পানিও নানারকম প্রসেসর বাজারে ছাড়ছে। একই সাথে জিপিইউ ও সিপিইউ তৈরি করাতে এ কোম্পানির তৈরি করা প্রসেসরের সাথে গ্রাফিক্স প্রসেসরের সামঞ্জস্য হয় অনেক বেশি। যার কারণে এএমডির গ্রাফিক্সের একটি সুনাম তৈরি হচ্ছে।
গত ৬ মাসে এএমডি কোম্পানির ৬টিরও বেশি প্রসেসর বাজারে এসেছে। গত ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় এএমডির বুলডোজার প্রসেসর নিয়ে লেখা ছাপা হয়েছিল। বাজারে আসা প্রসেসরগুলোর মধ্যে ফেনম-২ সিরিজের এক্স-৪ ৯৬৫, ৯৭৫, ৯৮০ ও এক্স-৬ সিরিজের ১১০০টি ব্ল্যাক অডিশন অন্যতম। এপ্রিল ২০১১-এ বাজারে আসা ১১০০টি প্রসেসরের কোডনেম থুবান। আর ৯৮০ প্রসেসরের কোডনেম ডেনিব। অন্যদিকে সার্ভারে কাজ করার উপযোগী প্রসেসরেরও এএমডি এনেছে নতুনত্ব। হোম ইউজারদের জন্য যেখানে ৪ কোরের ও ৬ কোরের প্রসেসর তৈরি করেছে, সার্ভারের জন্য তৈরি করেছে ৮ কোরের প্রসেসর। যার কোডনেম সেন্তটিগার।
দ্বিতীয় প্রজন্মের ৯৭৫, ৯৮০, ১১০০টি প্রসেসরগুলোর জন্য নতুন ধরনের সকেট ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে পূর্বের AM2, AM2+ সকেটগুলোতে এ প্রসেসরগুলো ব্যবহার করা যাবে না। এ প্রসেসরগুলোর জন্য আরো বেশি পিনবিশিষ্ট AM3, AM3+ সকেট ব্যবহার করা হয়েছে। AM2, AM2+ সকেটে মোট পিনসংখ্যা ছিল ৯৩৮টি সেখানে AM3, AM3+ এ পিনসংখ্যা ৯৪১টি। ফলে আগের মাদারবোর্ডগুলোতে নতুন ধরনের এ প্রসেসরগুলো ব্যবহার করা যাবে না। যদিও আসুস, গিগাবাইটের মতো কোম্পানিগুলো আগের AM2/AM2+ সকেটযুক্ত মাদারবোর্ডগুলোতে ‘AM3 রেডি’ নামের লোগো বসিয়ে AM3 সকেটের উপযোগী মাদারবোর্ড বাজারে ছেড়েছে।
এ সব প্রসেসরই ৪৫ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এ প্রসেসরগুলোর বাড়তি সুবিধা হলো একই সাথে ডিডিআর-২ এবং ডিডিআর-৩ মেমরি সমর্থন করে। প্রসেসরগুলোর গতিতে খুব একটা তফাৎ না থাকলেও এগুলোতে কোরের সংখ্যা কম-বেশি আছে। ৯৭৫ প্রসেসরের ক্লকস্পিড ৩.৬ গিগাহার্টজ। আবার ৯৮০-র ক্লকস্পিড ৩.৭ গিগাহার্টজ। অন্যদিকে ১১০০টি-এর ক্লকস্পিড ৩.৩ গিগাহার্টজ। যদিও এ প্রসেসরগুলো সর্বোচ্চ কাজের সময় কিছু বাড়তি গতি দিতে পারে। কিন্তু ১১০০টি প্রসেসরে শুধু নতুন ধরনের টার্বো মোড যুক্ত করেছে এএমডি। ১১০০টি টার্বো মোডে ৩.৭-৩.৯ গিগাহার্টজ পর্যন্ত স্পিড প্রদর্শন করে। এক্স-৪, এক্স-৬, এক্স-৮ দিয়ে বোঝানো হয় এসব প্রসেসরের কোর সংখ্যা।
১১০০টি প্রসেসরে ৬টি কোর থাকা সত্ত্বেও এর ফ্রিকোয়েন্সি ৯৬৫ থেকে কম। ৯৬৫-তে প্রতিকোরে ফ্রিকোয়েন্সি ৩৪১৪, সেখানে ১১০০টি-তে প্রতিকোরে ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায় ৩৩১০। আবার এ প্রসেসরগুলোতে প্রায় ১২৫ ওয়াট টিডিপি (থারমাল ডিজাইন পাওয়ার) ব্যবহার হয়। ইন্টেলের কোর আই ফাইভে প্রতিকোরে ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায় ৩৩৩০। এজন্য কোর আই ফাইভ ও ১১০০টি প্রায় সমতুল্য ধরা হয়। ৪ কোরের প্রসেসরগুলো L3 ক্যাশ মেমরি খুব দ্রুততার সাথে ব্যবহার করতে পারত না। কিন্তু ১১০০টি ৬ কোরের প্রসেসরে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। ফলে ১১০০টি প্রসেসর L3 ক্যাশ মেমরিকে নিয়ে খুব দ্রুততার সাথে কাজ করতে পারে। আর এ কাজকে এএমডি ডিপ হারভেস্টিং টেকনোলজি নামে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে প্রসেসরের হাইপার ট্রান্সপোর্ট ক্ষমতাও অনেক বাড়ানো হয়েছে। ৯৮০-তে সর্বোচ্চ হাইপার ট্রান্সপোর্ট ক্ষমতা ছিল ২ গিগাহার্টজ। সেখানে ১১০০টি-তে সর্বনিম্ন ২ গিগাহার্টজ। উল্লেখ্য, হাইপার ট্রান্সপোর্ট হলো প্রসেসরের অভ্যন্তরীণ কাজ সংশোধনের এক বিশেষ ক্ষমতা এবং যে প্রসেসরের হাইপার ট্রান্সপোর্ট ক্ষমতা যত বেশি সেটি তত দ্রুত কাজ করতে পারে। ১১০০টি ও ৯৮০- এ দুটি প্রসেসরেই L3 ক্যাশ মেমরি রাখা হয়েছে ৬ মেগাবাইট করে।
এএমডির টেকনোলজি অ্যানালিস্ট ডে-এর মতে, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ২০১৩ সাল নাগাদ প্রসেসরের টিডিপি অনেক কমিয়ে আনা।’ বাজারে আসা প্রসেসরগুলোতে সে ছাপ বিদ্যমান। যেখানে এক্স-২ সিরিজের প্রসেসরগুলোর গড় টিডিপি ছিল ১২০ থেকে ১৫০ ওয়াট, সেখানে ১১০০টি-তে ১২৫। পাশাপাশি ববকাট প্রসেসরে প্রতি ওয়াটে ৬-১৮ টিডিপি, অন্টেরিও প্রসেসরে গড় ৯ ওয়াট প্রতি টিডিপি, জাকেটে ১৮ ওয়াট, লাইনিক্সে ৬৫ ওয়াট ও ডেন্সনাতে ৬ ওয়াট। এএমডির লক্ষ্য ভবিষ্যতে নোটবুক ও ডেস্কটপ কমপিউটারের প্রসেসর ১৮ ওয়াট/টিডিপির নিচে নামিয়ে আনা।
অন্যদিকে এএমডি ও ইন্টেল তাদের প্রসেসরের আকার কমিয়ে আনছে। ২০১৩ সাল নাগাদ বাজারে আসবে এএমডির ২৮ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির প্রসেসর। ফিউশন প্রসেসরগুলোর দুটো ভাগ বিদ্যমান। একটি K10 সিরিজের প্রসেসর, অন্যটি ববকাট সিরিজের প্রসেসর। এএমডির ভাষ্যমতে, এ সিরিজের প্রসেসরগুলো হবে এভারগ্রিন। অর্থাৎ এ প্রসেসরগুলো একদিকে যেমন বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হবে, অন্যদিকে এগুলোর কার্বন নিঃসরণ হবে অন্যান্য প্রসেসরের তুলনায় অনেক কম। যার কারণে এ প্রসেসরগুলো বিশেষভাবে পরিবেশ উপযোগী। বর্তমানে ব্যবহার হওয়া ৪৫ ন্যানোমিটারের প্রসেসরের পর আসছে ৪০ ন্যানোমিটরের প্রসেসর। এসব প্রসেসরের বেশিরভাগই ববকাট সিরিজের অন্তর্গত।
লাইনিক্স সিরিজের প্রসেসরগুলোতে নতুন ৩২ ন্যানোমিটার টেকনোলজি যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি এসওআই (সিলিকন অন ইন্সুলেটর) প্রযুক্তিতে প্রসেসরের ট্রানজিস্টরগুলো তৈরি করা হয়েছে। ফলে এ প্রসেসরগুলোর রেডিয়েশন আগের প্রসেসরগুলো থেকে কমে যাবে এবং প্রসেসরের অভ্যন্তরীণ এক ট্রানজিস্টর থেকে অন্য ট্রানজিস্টরে ডাটা আদানপ্রদান গতি আরো বাড়বে।
বরাবরই এএমডির গ্রাফিক্স প্রদর্শন ক্ষমতা প্রশংসার দাবিদার। তার নতুন প্রমাণ পাওয়া যায় অন্টরিও/জাকেট সিরিজের প্রসেসরগুলোতে। অবশ্য এজন্য এএমডিকে ইউভিডির (ইউনিফায়েড ভিডিও ডিকোডার) উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হয়েছে। এর উন্নতির ফলে থ্রিডি নাও যুক্ত হয়েছে প্রসেসরে। ফলে থ্রিডি ছবি আরো জীবন্ত মনে হবে। গত এক বছরে এই ইউভিডির তিনটি সংস্করণ যুক্ত হয়েছে (UVD, UVD+, UVD2)। বর্তমানে ইউভিডি৩-এর উন্নয়ন চলছে। যেখানে নতুন করে যুক্ত হবে ব্লুরে থ্রিডি। ফলে ব্যবহারকারীরা গ্রাফিক্সে ব্লুরের ছবি নিয়ে কাজ করতে ও আরো বেশি বিটরেটে ব্লুরে ছবি ডিসপ্লে করতে পারবেন।
পরিশেষে ২০১২ সালে হোন্ডো, কৃষ্ণা, উইচিতা নামের এএমডি প্রসেসর বাজারে আসার প্রত্যাশায় রইলাম।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : minitohid@yahoo.com