• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > প্রযুক্তি বাজারে নিঃশব্দে অনুপ্রবেশ অ্যাথলন ২
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: প্রকৌশলী মর্তুজা আশীষ আহমেদ
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - ফেব্রুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রসেসর
তথ্যসূত্র:
প্র্রডাক্ট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
প্রযুক্তি বাজারে নিঃশব্দে অনুপ্রবেশ অ্যাথলন ২

এএমডি নতুন কোনো প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নয়। বাজেট সাশ্রয়ী প্রসেসর উৎপাদনের জন্য এএমডি’র সুনাম রয়েছে। এএমডি কম দামে ভালো মানের প্রসেসর ভোক্তাদের সরবরাহ করে এসেছে। এই স্ট্র্যাটেজি দিয়েই এএমডি তার নতুন প্রসেসর অ্যাথলন ২ বাজারে ছেড়েছে। এই অ্যাথলন ২ প্রসেসর হচ্ছে বেশ কম দামী কোয়াড কোরের প্রসেসর। তবে অ্যাথলন ২ শুধুই কোয়াড কোরের প্রসেসর হিসেবে তৈরি করা হয়নি। অ্যাথলন ২ ডুয়াল কোরের প্রসেসরও পাওয়া যাচ্ছে।



যারা নতুন পিসি কেনেন, তারা এখন আর এক কোরের প্রসেসরসম্পন্ন সিস্টেম কেনেন না। এমনকি যারা বাজেট পিসি কেনেন তারাও অন্তত দুই কোরসম্পন্ন প্রসেসর সংবলিত পিসি কিনে থাকেন। ইদানীং চার কোরের সিস্টেমও অনেকেই কিনছেন- যাদের প্রয়োজন এবং সামর্থ্য আছে। গত কয়েক বছরে ৬৪ বিট প্রসেসর, মাল্টি কোর প্রসেসর নিয়ে সিপিইউ দুনিয়াতে বেশ মাতামাতি ছিল। এর কারণ ছিল সিপিইউর জন্য এগুলো নতুন নতুন প্রযুক্তি। তবে মাল্টি কোর প্রসেসর তৈরি করার পর দুই এবং চার কোরের প্রসেসরের কথা বহুল আলোচিত। এই দুই এবং চার কোরের নতুন প্রসেসর হচ্ছে অ্যাথলন ২।

এএমডির এই অ্যাথলন ২ হচ্ছে অ্যাথলন ঘরানার দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রসেসর। এর ইনস্ট্রাকশন সেট উন্নত করা হয়েছে এবং পূর্ববর্তী অ্যাথলন প্রসেসর থেকে এটি দ্রুতগতিতে কাজ করতে সক্ষম। অ্যাথলন সিরিজের প্রথম প্রসেসর হচ্ছে কে-৭। এরপর একে একে একই সিরিজের অ্যাথলন ৬৪ অবমুক্ত হয় ২০০৩ সালে। তারপর অ্যাথলন এফএক্স-এর হাত ঘুরে ২০০৭ সালে ৬৫ ন্যানোমিটারের নতুন প্রসেসর বের হয় অ্যাথলন ৬৪ অরলিয়ানস এবং মোবাইল ভার্সনের নাম দেয়া হয় অ্যাথলন নিও। আর এই সিরিজের সর্বশেষ প্রসেসর হচ্ছে অ্যাথলন-২ যা ৪৫ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি। নতুন এই প্রযুক্তির জন্য নতুন প্রসেসর সকেট তৈরি করেছে এএমডি। এটি হচ্ছে এএম-৩ সকেট।

এএমডির এই নতুন অ্যাথলন ২ প্রসেসর ৪৫ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে এবং ২ ও ৪ কোরের প্রসেসর পাওয়া যাবে অ্যাথলন ২ প্রসেসর লাইনআপে। এখন পর্যন্ত এতে কোনো লেভেল ৩ ক্যাশ মেমরি ব্যবহার করা হয়নি এবং এই প্রসেসরে কোনো সলো এবং তিন কোর ব্যবহার করা হয়নি। তবে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এএমডি প্রসেসর ডিজাইনে তিন কোরের ব্যবস্থা রেখেছে।

২০০০ সালে যখন প্রথম অ্যাথলন প্রসেসর বাজারে ছাড়ল এএমডি, তখন একেবারে সাড়া ফেলে দিয়েছিল প্রযুক্তিবিদদের কাছে। তখন অ্যাথলন প্রসেসরের পূর্বসূরি কে৬ উত্তরসূরি হিসেবে কে৭ বা অ্যাথলন প্রসেসর হিসেবে বেশ শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে বাজারের অন্যান্য প্রসেসরের মাঝে। এখনকার অ্যাথলন ২ প্রসেসরকে বলা হচ্ছে কে১০। অর্থাৎ এরই মধ্যে অ্যাথলন আরো দুটি জেনারেশন পার করে ফেলেছে। এগুলোর হচ্ছে ৬৪ বিট প্রযুক্তি এবং মাল্টি কোর প্রযুক্তি।

অ্যাথলন ২ হচ্ছে প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এএমডির তৈরি করা মিডিয়াম অ্যান্ড সিরিজের প্রসেসর। অ্যাথলন ২ তৈরি করা হয়েছে দুই এবং চার কোরের ওপরে ভিত্তি করে। অ্যাথলন ২ হচ্ছে ডেস্কটপ পিসির জন্য তৈরি করা প্রসেসর। অ্যাথলন প্রসেসরের সফল উত্তরসূরি অ্যাথলন ২ প্রসেসর বাজারে ছাড়া হয়েছে এ বছরেই। অ্যাথলন ২ এখন পাওয়া যাচ্ছে দুই কোরের এক্স ২ এবং চার কোরের এক্স ৪ নামে। তবে ভবিষ্যতে অ্যাথলন ২ তিন কোরেও পাওয়া যাবে।

অ্যাথলন ২ সিরিজ তৈরি করা হয়েছে ৪৫ ন্যানোমিটার মাইক্রো আর্কিটেকচার টেকনোলজি দিয়ে। এই ৪৫ ন্যানোমিটার টেকনোলজির কিছু গুণাগুণ আছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে খুব কম বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করবে এবং কম তাপ উৎপন্ন করবে। এ সিরিজের সব প্রসেসরের জন্যই একথা প্রযোজ্য। আর এএম ৩ সকেট ব্যবহার করা হয়েছে বলে এখন ডিডিআর ৩ র্যা ম ব্যবহার করা যাবে। অবশ্য এএম ৩ সকেট ডিডিআর ২ এবং ডিডিআর ৩ দুই ধরনের র্যাএমই সাপোর্ট করে। এর সাথে পুরনো এএম ২ এবং এএম সকেট প্রসেসরের সাপোর্টিং লিস্ট থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। তাই মাদারবোর্ড নির্মাতারা এখন ইচ্ছেমতো র্যা মের সাপোর্টিং ব্যবস্থা রেখে এএমডি কম্প্যাটিবল মাদারবোর্ড প্রস্তুত করতে পারবেন।

নতুন এ প্রসেসর সিরিজে দূর করা হয়েছে কোল্ড বাগ সমস্যা। কোল্ড বাগ সমস্যা অনেক সিস্টেমেরই একটি সাধারণ সমস্যা। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রার নিচে সিস্টেম কাজ করতে চায় না। এ সমস্যার ফলে প্রযুক্তিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে প্রসেসরে এক্সট্রিম কুলিং ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে পারেননি। এ সমস্যা দূর করার ফলে এ ধরনের কুলিং এখন সহজেই ব্যবহার করা সম্ভব। অবশ্য এ ব্যবস্থা তাদেরই দরকার, যারা খুব বেশি ওভারক্লকিং করতে চান বা যারা উঁচুমানের গবেষণা করতে চান। এ প্রসেসর সিরিজে ৬ গিগাহার্টজ পর্যন্ত ওভারক্লকিং করা গেছে। তবে কেউ যেন ঘরে বসে নিজের সিস্টেম ওভারক্লকিং না করেন। ওভারক্লকিংয়ের কাজ করতে চাইলে সম্পূর্ণ নিজ দায়িত্বে করতে হবে। ওভারক্লক করলে ওয়ারেন্টি বাতিল হয়ে যায়।

অনেকদিন ধরেই এএমডি তুলনামূলক কম ক্যাশ মেমরি ব্যবহার করে আসছে। যার ফলে গেমিংয়ের মতো অ্যাপ্লিকেশনে অ্যাথলন ২ আরো সক্ষমতা দেখাতে পারবে। এ সিরিজের প্রসেসরে যেসব ফিচার আছে সেগুলো হচ্ছে MMX, Extended 3DNow!, SSE, SSE2, SSE3, SSE4a, AMD64, CoolnQuiet, NX bit, AMD-V ইত্যাদি। সেই সাথে এএমডির বিখ্যাত হাইপার ট্রান্সপোর্ট প্রযুক্তি তো থাকছেই, যার ফলে সিস্টেমের মেমরি কন্ট্রোলার মাদারবোর্ডের চিপসেটে যুক্ত না করে সরাসরি প্রসেসরে যুক্ত করা হয়েছে। এতে শুধু sse ৫ ইনস্ট্রাকশন সেট ব্যবহার করা হয়নি, যা অ্যাথলন ২-এর চেয়ে শক্তিশালী প্রসেসর ফেনম ২-তে ব্যবহার করা হয়েছে।

এখনকার নতুন প্রসেসরগুলোতে লেভেল ৩ নামে নতুন এক ধরনের ক্যাশ মেমরি ব্যবহার করা হচ্ছে। এই লেভেল ৩ মেমরি লেভেল ২ মেমরির চেয়ে কম দামী। তাই প্রসেসরে লেভেল ৩ মেমরি বেশি পরিমাণে যুক্ত করা যাচ্ছে। তবে অ্যাথলন ২ মাঝারি মানের ডেস্কটপ ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে বলে এতে কোনো লেভেল ৩ ক্যাশ মেমরির ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

এই প্রসেসর সিরিজে আগের সিরিজগুলোর মতোই যথারীতি হাইপার ট্রান্সপোর্ট টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। হাইপার ট্রান্সপোর্ট টেকনোলজি হচ্ছে এককথায় র্যা ম কন্ট্রোলার, যা সরাসরি প্রসেসরের সাথে যুক্ত করার প্রযুক্তি। এর ফলে প্রসেসরের সাথে র্যাজমের যোগাযোগ দ্রুত হয় এবং পুরো সিস্টেম বেশ গতিশীল হয়।

অ্যাথলন ২ প্রসেসরগুলো আগের অ্যাথলন প্রসেসরের মতোই ৬৪ বিট সাপোর্ট করে। এর ফলে যেকোনো ৬৪ অ্যাপ্লিকেশন দক্ষতার সাথে এবং দ্রুততার সাথেই চালাতে পারবে এই প্রসেসর। গ্রাফিক্স এবং গেমের ইনস্ট্রাকশন বেশ দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে পারবে এই প্রসেসর।

এটা ঠিক, অ্যাথলন যেভাবে সাড়া দিয়ে প্রযুক্তি বাজারে প্রবেশ করেছিল অ্যাথলন ২ হয়ত সেভাবে না প্রবেশ করে একেবারে নিঃশব্দে এসেছে। তারপরও যারা বাজেট পিসি কিনতে চান তাদের কাছে অ্যাথলন ২ হতে যাচ্ছে ভালো অপশন।

কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : mortuzacsepm@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস