‘রিয়েলাইজিং ডিজিটাল ন্যাশন’ স্লোগান নিয়ে ১-৩ ডিসেম্বর ২০১১-এ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় ‘ই-এশিয়া ২০১১’ শীর্ষক বড় মাপের আন্তর্জাতিক আইসিটি উন্নয়নবিষয়ক মিলনমেলা। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি খাত, প্রযুক্তিগত সেবা ও কর্মকান্ড তুলে ধরার অন্যতম বড় ও মর্যাদাপূর্ণ আয়োজন এই ই-এশিয়ায় ছিল একই সাথে একটি সম্মেলন ও তথ্যমেলা। এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল প্রযুক্তির সরবরাহ বাড়ানো এবং জ্ঞানভিত্তিক ক্রমোন্নতি। ই-এশিয়ায় জনগণের সেবা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত আইসিটিসংশি¬ষ্ট বিভিন্ন কাজ বা প্রকল্পকে পুরস্কৃত করার উদ্যোগও নেয়া হয় এই ই-এশিয়া আয়োজনের মাধ্যমে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রস্তাব করা হয় দারিদ্র্য নির্মূল করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে মূলধারায় আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিত করে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সবার জন্য সমআইন প্রয়োগ করা। এছাড়া প্রস্তাব করা হয়, দেশের নাগরিকদেরকে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রস্ত্তত রাখা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম আইসিটি ব্যবহার করে দারিদ্র্য কমানো এবং মানবউন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এই ধারণাকে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদেরা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন এবং সাধারণ মানুষের মাঝেও এ উদ্যোগ ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে।
ই-এশিয়া হলো এশীয় অঞ্চলের এ ধরনের প্রথম আইসিটিবিষয়ক আয়োজন, যা এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ২০০৬ সাল থেকে, প্রথম ই-এশিয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০৬ সালে। থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককে। এরপর তিনটি ই-এশিয়া সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর দু’টি অনুষ্ঠিত হয় মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া ও কুয়ালালামপুরে, যথাক্রমে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে। এসব সম্মেলনের বিশেষ প্রতিফলনের বিষয়গুলো ছিল ই-গভর্ন্যান্স টেলিসেন্টার, ডিজিটাল লার্নিং, ই-হেলথ, এম-সার্ভ ইত্যাদি। ই-এশিয়া ২০০৯-এর স্লোগান ছিল ‘অপরচুনিটিজ ফর ডিজিটাল এশিয়া’। এটি আয়োজিত হয় শ্রীলঙ্কার কলম্বোয়। এর থিম ছিল ই-এশিয়া ডিজিটাল লার্নিং, ই-হেলথ টেলিসেন্টার ফোরাম এবং ইমার্জিং ই-টেকনোলজি। গোলমেলে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ২০১০ সালে ফিলিপাইনে ই-এশিয়া সম্মেলন হতে পারেনি। ভারতের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএসডিএমএস তথা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ’ এই উদ্যোগের মূল আয়োজক। তবে প্রতিবছর ই-এশিয়ার স্বাগতিক দেশের একটি সংস্থা এর ব্যবস্থাপনায় থাকে।
ই-এশিয়া ২০১১-র মূল আয়োজক বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), সহ-আয়োজক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশনে (এটুআই) প্রকল্প, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপি এবং ইলেটস। সহযোগিতায় ছিল অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর অব বাংলাদেশ (অ্যামটব), এশিয়ান-ওশেনিয়ান কমপিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশন (অ্যাসোসিও), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বিএসিসি), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলদেশে (আইএসপিএবি), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি প্রভৃতি সংগঠন।
এই ইভেন্টে অংশগ্রহণকারীরা আরো গভীরভাবে আইসিটির ক্ষেত্রে সর্বসাম্প্রতিক অগ্রগতি সম্পর্কে জানার সুযোগ পান। এর আগের বছরগুলোয় অনুষ্ঠিত ই-এশিয়া সম্মেলনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পৃষ্ঠপোষক বা স্পন্সর ও সহায়তাকারী ছিল কয়েকটি আন্তর্জাতিক সুপরিচিত কোম্পানি : স্যামসাং, ইন্টেল, মাইক্রোসফট, আইবিএম, ওরাকল, এভারন, ইএমসি, ইএমসি স্যাপসহ আরো কয়েকটি।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত তিনদিনব্যাপী ই-এশিয়া সম্মেলনটি এ ধরনের পঞ্চম সম্মেলন বা মেলা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতি মো: জিল¬ুর রহমান।
ই-এশিয়া মেলা ও সম্মেলন স্টেকহোল্ডারদের জন্য বয়ে আনে এক অনুপম সুযোগ, যাতে এরা সক্রিয়ভাবে মেলায় উপস্থিত থেকে এবং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরস্পরের আরো কাছাকাছি আসার সুযোগ পান। অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন। তিনদিনের এই আয়োজনে সমন্বিত হয় মৌল ধারণাগত এক সারি পরস্পর সম্পর্কিত কিছু কনফারেন্স, যেখানে রয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশনের চারটি মূল থিম: বিল্ডিং ক্যাপাসিটি, কানেকটিং পিপল, সার্ভিং সিটিজেন এবং ড্রাইভিং ইকোনমি। মূলত, একটি ডিজিটাল জাতি গঠন করার ক্ষেত্রে এই চারটি বিষয় হচ্ছে মূল চাবিকাঠি।
ই-এশিয়ার মূল উদ্দেশ্য আইসিটিভিত্তিক উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য ও সক্ষমতা উপস্থাপন, দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নে এশীয় দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করা। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ, শীর্ষস্থানীয় আইসিটি প্রতিষ্ঠান এবং বরেণ্য আইসিটি নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৭০০-৮০০ প্রতিনিধি এ প্রোগ্রামে অংশ নেন।
ই-এশিয়ায় বিভিন্ন দেশের আইসিটি পণ্য ও সেবা প্রদর্শনী, আইসিটিনির্ভর উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের উপস্থাপন ছিল। ই-এশিয়া সম্মেলনে ছিল বেশ কয়েকটি প¬্যানারি এবং টেকনিক্যাল সেশন, ওয়ার্কশপ ও সেমিনার, গোলটেবিল আলোচনা, বিতর্ক এবং ব্যাপক প্রদর্শনী। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বা এজেন্সির বিভিন্ন প্রকল্প প্রদর্শনের চমৎকার সুযোগ ছিল এ প্রদর্শনীতে। ফলে ই-এশিয়া হয়ে উঠেছিল সবার জন্য এক অনন্য সংযোগসূত্র ও শেখার অনন্য এক সুযোগ।
ই-এশিয়ার উদ্বোধন
ঢাকার আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তিন দিনব্যাপী পঞ্চম এই আসর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ই-গভ: প্রকল্পের সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী অজয় সোহানি, প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, জিপিআইটির সিইও পিটার ড্যানিয়েল, বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ ও বাংলাদেশের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আইসিটিবিষয়ক ই-এশিয়ার পঞ্চম আসর উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত করে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে চায়। কেননা, দেশ-বিদেশে এক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির বিপুল চাহিদা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন স্বাধীনতার ৪০ বছরে পা দিয়েছে। স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল শিক্ষায় সুশিক্ষিত হতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে আইসিটিভিত্তিক তথ্যসেবা ও জনসেবা দিতে বাংলাদেশ নিজেকে প্রস্ত্তত করেছে। এরই মধ্যে মোবাইল ফোন ইন্টারনেট সেবা সাধারণ মানুষের নাগালে এসেছে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ২০২১ সাল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশের ৪৫০১টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্রে এখন প্রতিমাসে ৪০ লাখ মানুষ তথ্যসেবা পাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, দেশের এক হাজার ছয়শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ এবং প্রায় তিন হাজার আইটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আগামী বছরে ত্রিশ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের শ্রেণীকক্ষ স্থাপন করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তির এই ডিসেম্বর মাসে ই-এশিয়ার আয়োজনকে ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে একটি উলে¬খযোগ্য অগ্রযাত্রা হিসেবে উলে¬খ করেন।
ভারতের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ই-গভ: প্রকল্পের সভাপতি এবং সিইও অজয় সোহানি বলেন, বাংলাদেশ আইসিটি খাতে দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতও বাংলাদেশের অংশীদার হতে চায়। আইসিটি খাতের উন্নয়নে ভারত বাংলাদেশকে সবধরনের সহযোগিতা ও সহায়তা করবে বলে তিনি জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞান ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, তিন বছর আগেও তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিং বাংলাদেশে ছিল স্বপ্নের মতো। এখন আউটসোর্সিংয়ের কাজে বাংলাদেশের অবস্থান ওপরের দিকে। তিনি আরো বলেন, আমরা বাংলাদেশকে একটি তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগস্থলে তথা হাবে পরিণত করতে পারি, যা ভারত করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কিছু করতে পারব। বাংলাদেশ এখন তথ্যপ্রযুক্তির আউটসোর্সিং হাব।
সম্মেলনে সহ-আয়োজক সেন্টার ফর সায়েন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের (সিএসডিএমএস) প্রেসিডেন্ট এন কে নারায়ণ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশে এ সম্মেলন হচ্ছে।
ঢাকাকে তথ্যপ্রযুক্তির উৎপাদক হতে হবে: রাষ্ট্রপতি
ই-এশিয়ার সমাপনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জিল¬ুর রহমান বলেন, আমাদেরকে তথ্যপ্রযুক্তির ক্রেতা হওয়ার পরিবর্তে তথ্যপ্রযুক্তির প্রধান উৎপাদক হতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, সময় এসেছে জ্ঞানভিত্তিক এ কাজে নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে নেয়ার। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ই-এশিয়া ২০১১-র সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণদানকালে এ কথা বলেন।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এশিয়ার পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান বিনিময়ের পাশাপাশি আইসিটি উপকরণ সহজলভ্য করতে এই প্রথমবারের মতো ঢাকা এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের সহায়তায় বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির অধীনে বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রোগ্রাম কো-অর্গানাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিজ্ঞান ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন, তথ্য এবং যোগাযোগ সচিব রফিকুল ইসলাম এবং ভারতের সিএসডিএমএসের প্রেসিডেন্ট এন কে নারায়ণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নাগরিক সেবাগুলো সহজে, স্বল্পসময়ে ও স্বল্পখরচে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তথ্যপ্রযুক্তির ভূমিকা অপরিসীম।
তিনি বলেন, গ্রামপ্রধান বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের জনগণকে তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা আজ শুধু সময়ের দাবি নয়, বরং এটি জনগণের অধিকার।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার উলে¬খ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমার বিশ্বাস, দেশের জনগণ অচিরেই তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে বাংলাদেশের প্রতিটি সেবা খাতের সুফল পাবে। রাষ্ট্রপতি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নির্ধারিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ আইসিটিভিত্তিক একটি ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
ই-এশিয়া ২০১১ : নানা সফল উদ্যোগ
স্বাধীনতার ৪০ বছর উদযাপনকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ই-এশিয়া ২০১১ আয়োজনের দায়িত্ব নেয়। এজন্য ই-এশিয়ার ফোল্ডার আলাদাভাবে দেখানো হয় স্বাধীনতার চার দশক পূর্তিকে। ভারতের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিএসডিএমএস এই উদ্যোগের মূল আয়োজক। তবে প্রতিবছর স্বাগতিক দেশের একটি সংস্থা এর ব্যবস্থাপনায় থাকে। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কায় ই-এশিয়া সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে তৎকালীন মুখ্যসচিব আব্দুল করিমের নেতৃত্বে একটি দল অংশ নেয়। তারা ২০১১-এর সম্মেলনটি বাংলাদেশে আয়োজনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিএসডিএমএসের প্রতিনিধি ঢাকায় এসে ভেন্যু ও অন্যান্য সুবিধা দেখে বাংলাদেশের স্বাগতিক দেশ হওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানায়। বাংলাদেশে ই-এশিয়ার আয়োজন করেছে বিজ্ঞান ও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল।
বাংলাদেশে কমপিউটার কাউন্সিল ই-এশিয়া সফল ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সাতটি আলাদা কমিটি কাজ করে। বিসিসিতে স্থাপন করা হয় ই-এশিয়া সচিবালয়। এ কমিটি মূলত ই-এশিয়ার কাজ তদারকি ও সমন্বয় করে। প্রতিটি কমিটি আলাদাভাবে কাজ করে। কমিটিগুলোর নেতৃত্ব দেন সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব, বিসিএস এবং বেসিস সভাপতি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব।
এশিয়ার অন্যতম বড় তথ্যপ্রযুক্তি মেলা ই-এশিয়া শুরু হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৩০ নভেম্বর ২০১১ এক সংবাদ সম্মেলনে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যে হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিভিত্তিক আইসিটি উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অর্জিত সাফল্য ও সক্ষমতা বহির্বিশ্বের প্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করা, দেশের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পথ খোঁজা এবং প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়নে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করা।
এ সম্মেলনে জানানো হয়, তিন দিনের মেলায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাঁচটি কক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে ৩০টি সেমিনার ও কর্মশালা হবে। এতে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার তুলে ধরা হবে। বিভিন্ন বিষয়ের সেমিনার থেকে পাওয়া তথ্য ও সবার সামনে তুলে ধরা বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানানো হয়। এ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, ই-এশিয়া ২০১১ প্রদর্শনীতে মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, জাপান, থাইল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের কান্ট্রি প্যাভিলিয়ন থাকবে। এছাড়া তাঁবুতেও স্টল থাকবে, যেখানে বাংলাদেশের আউটসোর্সিংয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সক্ষমতা তুলে ধরবে। এ সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, এবারের ই-এশিয়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, দেশ ও বিদেশের শীর্ষস্থানীয় আইসিটি প্রতিষ্ঠান এবং আইসিটির বরেণ্য নেতাসহ প্রায় দুই হাজার জনপ্রতিনিধি অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনাও তৈরি হবে। এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো: রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক ড. জ্ঞানেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, পিপিআইটির প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা রনি রিয়াদ রশিদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেসেস টু ইনফরমেশন প্রোগ্রামের নীতি উপদেষ্টা আনির চৌধুরী ও বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরামর্শক মুনীর হাসান।
পঞ্চম ই-এশিয়ার তিন দিনের এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হয় সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের ৩০টি সেমিনার ও কর্মশালায়। সেমিনারগুলো ভাগ করা হয় চারটি ভাগে। যেমন- বিল্ডিং ক্যাপাসিটি, কানেকটিং পিপল, সার্ভিং সিটিজেন এবং ড্রাইভিং ইকোনমি। এসব সেমিনারের মাধ্যমে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সক্ষমতা বাড়িয়ে কিভাবে সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
সেমিনারের পাশাপাশি ছয়টি কারিগরি বিষয় সমন্বিত ছিল। যেমন- আইসিটি অ্যাজ অ্যা ক্যারিয়ার পাথ ফর উইমেন : অপরচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস, মেকিং লাইফ প্রোডাক্টিভ ফর পার্সনস উইথ ডিজ্যাবিলিটিস ইউজিং আইসিটি, বিল্ডিং ন্যাশনাল ই-গভর্ন্যান্স আর্কিটেকচার ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ, অ্যাপি¬কেশন ডেভেলপমেন্ট ফর মোবাইল প¬্যাটফরম, প্রিশেয়ারিং ফর আইপিভিউ এবং বিল্ডিং ইউ আর ক্লাউড।
ই-এশিয়ার মৌল ধারণা
ই-এশিয়া সম্মেলনের মূল থিম বা মৌল ধারণা ছিল পাঁচটি। ০১. তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে সক্ষমতা বাড়ানো (বিল্ডিং ক্যাপাসিটি)। ০২. জনগণের সাথে তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া (কানেকটিং পিপল)। ০৩. জনগণের দোরগোড়ায় তথ্যপ্রযুক্তির সেবা পৌঁছে দেয়া (সার্ভিং সিটিজেন)। ০৪. আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নেয়া (ড্রাইভিং ইকোনমি)। ০৫. ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করা (ব্রেকিং ব্যারিয়ার)।
বিল্ডিং ক্যাপাসিটি
সক্ষমতা বাড়ানো বা বিল্ডিং ক্যাপাসিটির মূল লক্ষ্য হলো নতুন প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করা, যাতে করে একুশ শতকের সবক্ষেত্রে উপযোগী বিশ্বমানের মানবসম্পদ তৈরি করা যায়। এ লক্ষ্যে মৌলিক বিষয় তথা গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজির মতো বিষয়গুলো শেখার ওপর জোর দেয়া এবং সাশ্রয়ী দামের যন্ত্রপাতি ও ডিজিটাল শিক্ষার উপকরণ সরবরাহ করা। এগুলো কাজ করবে তরুণ ও বয়স্কদের জন্য বৃত্তিমূলক এবং জীবনমেয়াদি শিক্ষাদানের সুযোগ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে, যাতে করে তরুণ ও বয়স্করা পরবর্তী পর্যায়ে তরুণ ও বয়স্কদের একইভাবে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারেন। এর ফলে সময়োপযোগী দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার পাশাপাশি উৎপাদনশীলতাও বাড়বে। আমরা তখন একুশ শতকের বিশ্বায়নের প্রয়োজন মেটাতে পারব যথাযথভাবে।
এই সক্ষমতা সৃষ্টির থিমটির শক্তি হচ্ছে টেকনোলজি, ইন্ধন হচ্ছে ইনফরমেশন আর চালক হচ্ছে নলেজ। এই কনফারেন্সের লক্ষ্য- প্রযুক্তিসংশি¬ষ্ট বিভিন্ন ইস্যু পরিবর্তনের প্রবণতা বোঝার সক্ষমতা অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সৃষ্টি করা। এর অন্যান্য লক্ষ্য হলো অন বোর্ড কেস স্টাডি, অর্জিত শিক্ষা এবং সর্বোত্তম সেবার অনুশীলন, যা স্টেকহোল্ডারসহ সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারীদের জন্য সহায়ক হবে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এবং নীতি-পরামর্শ ও কৌশল অবলম্বনে।
কানেকটিং পিপল
কানেকটিং পিপল কথাটির সরল অর্থ জনগণকে সংশি¬ষ্ট করা। এই থিমের লক্ষ্য ডিজিটাল জাতির সুবিধা নিশ্চিত করতে সুদৃঢ় আইসিটি সেবার সাথে জনগণকে সংশি¬ষ্ট করার স্থিতিশীল উপায় খুঁজে বের করা এবং সেই সাথে এক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলো কমিয়ে আনা। টেলিসেন্টারের মতো অংশীদারিত্ব ও উদ্ভাবনীমূলক অ্যাক্সেস আউটলেট সৃষ্টি, পাবলিক ই-সার্ভিস নেয়ার জন্য স্থানীয় সমাজে সচেতনতা ও সক্ষমতা সৃষ্টি, কর্মপন্থা প্রণয়নে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য দ্বিমুখী চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করা। স্টেকহোল্ডারদের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সারাবিশ্বে ব্যবহার হয়ে আসছে তথাকথিত পুরনো আইসিটি পণ্য : টিভি এবং রেডিও। জীবন নির্বাহের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যথাসময়ে যথাস্থানে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এগুলো দিয়ে। নতুন আইসিটি পণ্য : কমিউনিটি রেডিও, মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ইত্যাদি অধিকতর ব্যক্তিগত যোগাযোগের উপায়। এগুলোর মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন সরবরাহ করা যায়, তেমনি সরবরাহ করা যায় সেবা।
এই থিম বা ধারণা থেকেই ই-এশিয়ায় সমাবেশ ঘটানো হয় বিভিন্ন দেশের নীতি-নির্ধারক ও দায়িত্বরতদের। এরা আসেন বিভিন্ন দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজ থেকে। এরা বিনিময় করেন এক্ষেত্রে তাদের সর্বোত্তম অনুশীলন ও অভিজ্ঞতা।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অর্জিত শিক্ষা ও কেস স্টাডি অংশগ্রহণকারীরা তাদের নিজেদের দেশের কাজে লাগাতে পারবেন । ই-এশিয়ার প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয় বিকাশমান প্রযুক্তি ও কৌশল, যেগুলোর মাধ্যমে জনগণ ও সমাজকে প্রযুক্তিসংশি¬ষ্ট করা যায়।
সার্ভিং সিটিজেন
এই থিমের মূল লক্ষ্য হলো আইসিটির সুবিধা সরকারি সব কর্মক্ষেত্রে প্রসার ঘটানো, যাতে কম সুবিধাভোগীদের যথাযথ সেবা যোগানো নিশ্চিত হয়। আইসিটি ব্যবহার করে ই-প্রশাসন প্লাটফরম গড়ে তোলা এবং আইসিটি ব্যবহার করে গ্রহণযোগ্য স্বচ্ছ ই-সার্ভিস সৃষ্টি করা, যেগুলো ইতোমধ্যে লাখ লাখ মানুষের হাতেই রয়েছে; যেমন- মোবাইল ফোন, রেডিও, টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদি। লক্ষ রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলো হলো স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, ভূমি প্রশাসন, পানি সম্পদ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সংস্থা, বিচার ব্যবস্থা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা ও বিচারসংক্রান্ত এবং আকস্মিক দুর্ঘটনা ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি।
এই থিম স্টেকহোল্ডারদের জন্য একটি প্লাটফরমের সুযোগ করে দেবে। এ স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আছেন নীতিনির্ধারক, কর্মলিপ্ত ব্যক্তিবর্গ, শিল্পখাতে নেতৃবর্গ শিক্ষাবিদ এবং সরকারি প্রকল্পের মূল ব্যক্তিবর্গ। এরা অর্জিত সাফল্যের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এই ই-এশিয়া মেলায়। এ মেলায় তারা ই-গভর্ন্যান্স বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো জানতে ও শেখার সুযোগ পান। ই-এশিয়ার সার্ভিং সিটিজেন্স থিমের সংশি¬ষ্ট কনফারেন্স এবং প্রদর্শনী এবার হয়ে ওঠে এক চমৎকার ফোরাম, যেখানে প্রদর্শিত হয় সেরা প্রযুক্তি টেকনোলজি ও আইসিটি সমস্যার সমাধান।
ড্রাইভিং ইকোনমি
ডিজিটাল জাতি গঠনের জন্য এই থিম কাজ করে অর্থনীতির তিনটি বড় বিষয়ে :
০১. আইসিটিভিত্তিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা এবং কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির জন্য আইসিটি খাত রফতানিমুখী হিসেবে উন্নীত করা।
০২. মার্কেটে অ্যাক্সেস এবং সোর্স মেটেরিয়ালের সম্প্রসারণের মাধ্যমে এমএসএমইএসের ক্রমোন্নতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আইসিটি ব্যবহার এবং
০৩. ই-সার্ভিস এবং ই-পেমেন্ট সুযোগ-সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ব্যবসায় বাণিজ্যকে সাবলীল করা।
এই থিম টার্গেট করেছে সফটওয়্যার এবং আইটিইএস ইন্ডাস্ট্রি, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ক্রেতা এবং আইসিটি ও আইটিইএস আউটসোর্সিং ইন্ডাস্ট্রি, মাইক্রো এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজকে।
ব্রেকিং ব্যারিয়ার
বিল্ডিং ডিজিটাল ন্যাশন গঠনের জন্য পুরনো বিষয়গুলোকে শুধু নতুনভাবে করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং নতুন নতুন কিছু করাকেও বোঝায়। জনগণের কাছে সেবা পৌঁছানোর জন্য জনগণের সাথে পার্টনার হয়ে কাজ করার প্রবণতা উদ্ভূত হচ্ছে নতুন থিম হিসেবে, যা সেবা সরবরাহের খরচ কমাবে। বাড়াবে অংশগ্রহণ। ফলে জনগণের ক্ষমতার অধিকারী হবে। জাতীয় ডিজিটাল কনটেন্ট ভান্ডার ন্যাশনাল ই-গভর্ন্যান্স আর্কিটেকচার, ক্লাউড কমপিউটিং, ওপেনসোর্স টেকনোলজিস, বায়োইনফরমেটিক্স, রোবটিক্স ইত্যাদি সবই ই-টেকনোলজি, যা ব্যবহার হচ্ছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে। এক্ষেত্রে পুরনো বাধা দূরত্ব, ব্যয়বহুল, ভাষা, শারীরিক অক্ষমতা প্রাতিষ্ঠানিক বিভাজনতা ইত্যাদি দূর করতে ব্যবহার হচ্ছে ই-টেকনোলজি। এক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য জীবনের সবক্ষেত্রেই উদ্ভাবনের সংস্কৃতি গড়ে তোলা।
ই-এশিয়া ২০১১ পুরস্কারের জন্য প্রকল্প ও উদ্যোগ আহবান
ই-এশিয়ায় জনগণের সেবা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে আইসিটিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ বা প্রকল্পে সম্মাননা ও পুরস্কার দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এবারই প্রথম এ পুরস্কার চালু করা হয়েছে। পুরস্কারের জন্য আইসিটি প্রকল্প বা উদ্যোগগুলোকে ই-এশিয়ার প্রতিপাদ্য বিষয়গুলোর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হয়। পুরস্কারে চূড়ান্ত পর্বের জন্য ৩৭টি উদ্যোগকে ফাইনালিস্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। চারটি বিভাগে সর্বমোট ২০৭টি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান থেকে এই মনোনয়ন বাছাই করা হয়েছে। মনোনীত ৩৭টি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান থেকে ১৭টি প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠানকে ‘ই-এশিয়া পুরস্কার ২০১১’ দেয়া হয়।
পাঁচটি বিষয়ে ই-এশিয়া পুরস্কারে অংশ নেয়া হয়। বিষয়গুলো হলো-
০১. বিল্ডিং ক্যাপাসিটি;
০২. কানেক্টিং পিপল;
০৩. সার্ভিং সিটিজেন;
০৪. ড্রাইভিং ইকোনমি ও
০৫. ব্রেকিং ব্যারিয়ার।
প্রতিযোগিতায় মনোনয়ন পাওয়া উদ্যোগ বা প্রকল্পগুলো একটি আন্তর্জাতিক বিচারকমন্ডলী দিয়ে বিচার করা হয় এবং নির্বাচিত প্রকল্পকে ওয়ার্ল্ড এডুকেশন জুরি চয়েস পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
ই-এশিয়া পুরস্কারের জন্য প্রকল্প মনোনয়নের জন্য অনলাইনে ফমর পূরণ করে জমা দিতে হয়। পাওয়া প্রকল্প বা উদ্যোগ প্রথমে ই-এশিয়া পুরস্কার সংক্রান্ত কমিটি পর্যালোচনা করে এবং ওই প্রকল্পের জন্য যদি আরো কোনো তথ্যের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা চেয়ে নেয়া হবে।
যেকোনো সংস্থা প্রতিযোগিতায় নিজ নিজ প্রকল্পকে মনোনয়ন দেয়ার সুযোগ পায়। এজন্য http//www.e-asia.org ওয়েবসাইটে নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হয়। এছাড়া তৃতীয় পক্ষও কোনো প্রকল্পকে মনোনয়ন দিতে পারে। এজন্য তৃতীয় পক্ষ নিজের পরিচয় প্রকাশ করে ওয়েবসাইটের নির্ধারিত ফমরটি পূরণ করতে পারবে। প্রতিটি মনোনয়নপত্র অনলাইনে ইংরেজিতে পূরণ করে জমা দিতে হয়। প্রকল্পগুলোকে সম্পন্ন বা কার্যকর অবস্থায় থাকতে হয়। ফরমে প্রতিটি বাধ্যতামূলক তথ্য অবশ্যই ঠিকভাবে দিতে হয়। প্রদত্ত প্রকল্পে আইসিটির ব্যবহার কিভাবে মানুষের জীবনকে সহজতর ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে, কিভাবে মানুষের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে উদ্বুদ্ধ করছে এবং কতটুকু ব্যবহারোপযোগী তা উলে¬খ করতে হবে। প্রকল্প বা সংস্থাকে অবশ্যই তার যোগ্যতা প্রমাণের জন্য তৃতীয় পক্ষের রেফারেন্স দিতে হবে।
ই-এশিয়ার প্রচার
এশিয়ার অন্যতম বড় তথ্যপ্রযুক্তি আয়োজন ই-এশিয়ার প্রচার চালানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। ই-এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো টেলিভিশন ও ওয়েবে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ই-এশিয়াতে অনুষ্ঠিত ৩০টি সেমিনার www.e-asia.org, www.comjagat.com ও www.drikatv-তে সরাসরি ওয়েবকাস্ট করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন, অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার এটিএন নিউজসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল এই প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করে। বাংলাদেশ বেতার ও এফএম রেডিওগুলোতে সম্মেলন স্থান থেকে সরাসরি ধারাভাষ্য সম্প্রচার করা হয়।
comjagat.com-এ শীর্ষপাঁচ প্রোগ্রামে অনলাইন দর্শনার্থীসংখ্যা
প্রোগ্রাম শিরোনাম ও দর্শনার্থীর সংখ্যা
০১. ফিউচার ক্লাসরুমস : ইনক্রিজিং লার্নিং ৫৭০৩৯ জন
অ্যাচিভমেন্ট
০২. মেকিং লাইফ প্রোডাক্টিভ ফর পার্সনস ৫০৬৫৬ জন
উইথ ডিজ্যাবিলিটিস ইউজিং আইসিটি
০৩. ই-এশিয়া ২০১১ রিয়ালাইজিং ডিজিটাল ৪২৯৭২ জন
নেশন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে
০৪. আইসিটি অ্যাজ অ্যা ক্যারিয়ার পাথ ফর ৪১৫২৪ জন
উইমেন : অপরচুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস
০৫. স্ট্র্যাটেজিক পজিশন অব বাংলাদেশ অ্যাজ ৩৪৪১৩ জন
অ্যা লিডিং আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশন
দেশি-বিদেশি সবাই যাতে ই-এশিয়া দেখতে, জানতে এবং সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে পারেন সেজন্য ইন্টারনেট মাধ্যমকে ব্যবহার করা হয়। ই-এশিয়ার লাইভ স্ট্রিমিং পার্টনার কমপিউটার জগৎ-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান কমজগৎডটকম এবং দৃক আইসিটির মাধ্যমে সারা বিশ্বের কয়েক লাখ মানুষ সরাসরি উপভোগ ও মন্তব্য করার সুযোগ পান। ফেসবুক ও টুইটারেও ব্যাপক সাড়া ফেলে এই ই-এশিয়ার ইভেন্ট।
ই-এশিয়ার যেসব প্রোগ্রামে সারা বিশ্ব থেকে সবচেয়ে বেশি লাইভ অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়, তা নিচে তুলে ধরা হলো :
সেমিনারে বক্তাদের অভিমত
ই-এশিয়ার আউটসোর্সিং বিষয়ে বিশেষ সেমিনারে বক্তাদের অভিমত হলো- প্রয়োজনীয় কার্যকর কিছু পদক্ষেপ বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় আউটসোর্সিং দেশ হিসেবে পরিচিত করতে পারে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ৫ থেকে ১০ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়ন, ইন্টারনেটের দাম কমানো ও মূল সাবমেরিন ক্যাবলের পাশাপাশি বিকল্প লাইন চালু করা দরকার।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ই-এশিয়ার ‘স্ট্র্যাটেজিক পজিশন অব বাংলাদেশ অ্যাজ অ্যা লিডিং আউটসোর্সিং ডেস্টিনেশন’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির ড. রাজিব নাগ। তিনি বাংলাদেশের আউটসোর্সিং খাতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন। বিশেষ বক্তা হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি গত তিন বছরে সরকারি পর্যায়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আইসিটি অবকাঠামোর উন্নয়নচিত্র তুলে ধরেন। তিনি আরো বলেন, আগামী বছরের শুরুর দিকে সাবমেরিন ক্যাবলের বিকল্প লাইন চালু হবে। তিনি সেমিনারে বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নত করার ব্যাপারে বিশেষ জোর দিতে বলেন এবং এ খাতের উন্নয়নের জন্য মিসর ও শ্রীলঙ্কার মতো বিশেষ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে অবকাঠামো উন্নয়নে ইন্টারনেট সংযোগ ও সরকারি নীতির সম্মিলিত প্রয়োগের বিকল্প নেই ফলে মন্তব্য করেন স্পিনোভিশনের প্রধান নির্বাহী টিএম নূরুল কবীর। সেমিনারে আরো জানানো হয়, দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ তথা কানেক্টিভিটি সুবিধায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। সরকারি নীতিনির্ধারণী ও প্রায়োগিক জটিলতায় তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যসেবা দেয়াসহ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
শেষ দিনে মেলায় উপস্থিত ছিলেন কমপিউটার চিপ ও প্রসেসর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইন্টেল ওয়ার্ল্ড অ্যাহেড প্রকল্পের প্রধান জন ই-ডেভিস এবং ফ্রিল্যান্সে কাজ করার ওয়েবসাইট ওডেস্ক ডটকমের চিফ অপারেটিং অফিসার ম্যাট কুপার।
এ উপলক্ষে আয়োজিত ‘মিট দ্য টেকনোলজি লিডার’ শিরোনামের অধিবেশনে জন ই-ডেভিসের সাথে কথোপকথনে অংশ নেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। শেষ দিনে অনুষ্ঠিত অন্যান্য সেমিনারের মধ্যে উলে¬খযোগ্য ছিলো ‘বায়োমেট্রিক্স : দ্য ফিউচার প্রসপেক্টাস অব এশিয়া’, ‘প্রিপেয়ারিং ফর আইপিভি৬’ ও ‘বিল্ড ইওর ওউন ক্লাউড’।
‘মিট দ্য টেকনোলজি লিডার’-এ বক্তা হিসেবে জন ই-ডেভিস বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি খাতের প্রশংসা করেন এবং আগামীতে ইন্টেলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে কাজ করার আশ্বাস দেন।
ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে কয়েকটি সেমিনার
ই-এশিয়া ২০১১-এর অন্যতম আকর্ষণ ছিল ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে বিভিন্ন সেমিনার। ই-এশিয়া উপলক্ষে বেসিসের উদ্যোগে ঢাকায় ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ‘ফ্রিল্যান্সিং থ্রু অনলাইন প্লাটফর্মস নিউ আউটসোর্সিং ট্রেন্ড’ শীর্ষক সেমিনারে মূল বক্তব্য দেন ওডেস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট কুপার। এ সেমিনার পরিচালনা করেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি একেএম ফাহিম মাশরুর। এছাড়া বেসিসের সেমিনার কক্ষে ‘সোশ্যাল মিডিয়া ফর এসএমইএস গেটিং ইয়োর বিজনেস নোটিসড’ শীর্ষক অপর এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যার মূল বক্তব্য উপস্থাপক ছিলেন আইটি ডিসিশনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক হিলারি। এছাড়া বেসিস মিলনায়তনে পরের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার আরো দুটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘ক্রাউডসোর্সিং : বেনিফিটস অ্যান্ড পেরিলস অব দিস নিউ প্রকিউরমেন্ট মডেল’ এবং ‘হাউ টু গেট ইয়োর কোম্পানি প্রিপেয়ার্ড ফর অফশোর আইটি জবস ইন স্ক্যান্ডিনেভিয়ান মার্কেট’ শীর্ষক দু’টি সেমিনার।
মেলায় যা প্রদর্শিত হয়
ই-এশিয়ায় এ মহাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও উদ্ভাবনী দেখানো হয়। এ মেলায় বাংলাদেশের বাইরে ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডের প্যাভিলিয়ন ও ঢাকার নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের একটি স্টল ছিল। এ মেলায় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি, সেবা ও সফটওয়্যার দেখানো হয়। জাপানের প্যাভিলিয়নে শোভা পায় এনটিটি কমিউনিকেশন, এন ওয়েব, সনি, কিউশু বিশ্ববিদ্যালয়, জাইকা ও জেওসিভি। জাপানের প্যাভিলিয়নে দেখানো হয় সে দেশের ই-কৃষির নানা দিক। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জাপানি কৃষকদের সফলতা দেখানো হয়। ভারত তাদের স্টলে বিভিন্ন ই-সেবা আগত দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করে। শ্রীলঙ্কার প্যাভিলিয়নে স্টক ব্রোকার, নেটওয়ার্কিং, প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার দেখানো হয়। একইভাবে হল্যান্ড দূতাবাস, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডের স্টলগুলোতে তথ্যপ্রযুক্তির বহুমুখী ব্যবহার উপস্থাপন করা হয়।
এ মেলায় বাংলাদেশের তৈরি ল্যাপটপ দোয়েলের তিনটি মডেল প্রদর্শন ও বিক্রি হয়। তাছাড়া চড়ুই নামের আরেক ধরনের ট্যাবলেট পিসি নিয়ে আসে কমপিউটার গ্রাফিক্স অ্যান্ড ডিজাইন। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তিপণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান ফ্লোরার স্টলে উপস্থাপিত হয় তাদের সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড।
এ মেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা এক স্টলে তাদের নানা ধরনের কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দেখানো হয়। ঋণ নেয়া, অফিস ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করছে তাও উপস্থাপন করা হয় এ মেলায়।
মেলায় দর্শকদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে বাংলাদেশের বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা। ই-পুর্জি, ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র, কৃষি ও স্বাস্থ্যসেবায় মোবাইল টেলিমেডিসিনসহ নানা ধরনের ডিজিটাল সেবা। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদফতরের স্টলে দেখানো হয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেবার মান উন্নত করার কর্মকান্ড। র্যা ব এবং পুলিশ বিভাগ উপস্থাপন করে প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন কর্মকান্ড।
সাক্ষাৎকার
ই-এশিয়ায় উপস্থাপন করতে পেরেছি বাংলাদেশের ডিজিটাল উদ্যোগকে’
আনির চৌধুরী, নীতি-উপদেষ্টা, এটুআই প্রোগ্রাম,
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়
ই-এশিয়া হচ্ছে একটি বার্ষিক আন্তর্জাতিক আইসিটি উন্নয়নবিষয়ক সম্মেলন। আইসিটিবিষয়ক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্লাটফরম। একটি আইসিটি মেলা। বাংলাদেশ এবার ই-এশিয়ার স্বাগতিক দেশ। এটি ই-এশিয়ার পঞ্চমবারের আয়োজন। বাংলাদেশে এ আয়োজন প্রথমবারের মতো। এর মাধ্যমে আমরা প্রথমবারের মতো সবচেয়ে সফলভাবে বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রগতি ও অভিজ্ঞতা যেমনি বাইরের দেশগুলোর সামনে তুলে ধরতে পেরেছি, তেমনি অন্যদের অভিজ্ঞতা ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এ দিকটা বিবেচনায় ই-এশিয়া ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য সুযোগের নাম। ই-এশিয়াতে শুধু এশিয়ার দেশগুলোই অংশ নেয়নি, ইউরোপের কয়েকটি দেশও অংশ নেয়। ই-এশিয়ায় কয়েকটি দেশের প্যাভিলিয়ন ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল অভিজ্ঞ আইসিটি বক্তাদের। অতএব তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার রাজ্যে আমরা ভাগ বসাতে পেরেছি। তেমনি আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ সূত্রে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তাদের জানাতে পেরেছি। সব মিলিয়ে বলা যায় ই-এশিয়া ছিল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের একটি উপায়।
আপনারা জানেন, আমাদের স্বপ্ন একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ। সেটুকু মাথায় রেখে আমরা ই-এশিয়া ২০১১ ডিজাইন করেছি। এর স্লোগান হিসেবে নিয়েছি ‘রিয়েলাইজিং ডিজিটাল নেশন’ শব্দগুচ্ছকে। ই-এশিয়া ২০১১-র ছিল ৫টি মৌল ধারণা বা থিম : বিল্ডিং ক্যাপাসিটি, কানেকটিং পিপল, সার্ভিং সিটিজেন, ড্রাইভিং ইকোনমি ও ব্রেকিং ব্যারিয়ার। এর মধ্যে চারটিই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনায়। বলা যায়, ই-এশিয়ার যাবতীয় অর্জনকে আমরা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সহায়ক করে তুলতে চেয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি সফল হয়েছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের দরকার ছিল অন্যদের কাছ থেকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়। সেজন্য আমরা এ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি সেমিনারের আয়োজন করেছি। এই সেমিনারগুলোর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এসব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থাও আমরা করেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা নলেজ পার্টনার হিসেবে নিয়ে এসেছি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিকে। এই বিশ্ববিদ্যালয় সেমিনারগুলোর র্যা পোর্টিয়ারের দায়িত্ব পালন করেছে। তাছাড়া তাদের মাধ্যমে এ সম্মেলনে আহৃত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাগুলোকে বই ও অন্যান্য আকারে প্রকাশ করার ব্যবস্থা নিয়েছি। এর বাইরে কমজগৎ ডটকম পুরো সম্মেলন ও সেমিনারগুলো অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিংসহ এর আর্কাইভ তৈরি করেছে। আমরা তাই এ সম্মেলনকে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আহরণের স্থায়ী উৎস হিসেবে কাজে লাগাতে পারব।
আরেকটি বিষয় বিশেষ করে এখানে উলে¬খ করতে চাই। আমরা শুধু অন্যদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাতেই ভাগ বসিয়েছি এ সম্মেলনের মাধ্যমে, তেমনটি নয়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অনুশীলনের মাধ্যমে যে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও অগ্রগতি অর্জন করেছি, তাও অন্যদের জানাতে পেরেছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা যে সামাজিক নেটওয়ার্ক তৃণমূল পর্যায়ে গড়ে তুলতে পেরেছি যত দ্রুত, তা অন্য কোনো দেশ বা জাতি পারেনি। তৃণমূল পর্যায়ে এ ক্ষেত্রে আমরা যে ব¬গ বা টুল উদ্ভাবন করেছি, ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব তথ্যকেন্দ্র গড়ে তুলতে পেরেছি, তা জেনে বিদেশিরা অবাক হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য অপরিহার্য হচ্ছে সর্বস্তরের জনগণ ও সরকারি কর্মকর্তা পর্যায়ে আইসিটি বিষয়ে সার্বিক সচেতনতা সৃষ্টি। ই-এশিয়ার মাধ্যমে সে সচেতনতা সৃষ্টির কাজকে এগিয়ে নেয়াও ছিল আমাদের একটা অন্যতম লক্ষ্য। ই-এশিয়ায় আমরা তা অর্জনে সফল হয়েছি। ই-এশিয়ায় দর্শক সমাগম ছিল অভাবনীয়। সেমিনারগুলোতে তাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেমিনারের বক্তব্য শোনা, তাও আবার আইসিটির মতো কাঠখোট্টা বিষয়ে- তা দেখা গেছে এই ই-এশিয়ায়। সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণও ছিল আশা জাগানিয়া। সার্বিক জনসচেতনতা যে এগিয়ে যাচ্ছে, তা ই-এশিয়ায় প্রমাণ পাওয়া গেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় এই ই-এশিয়া যে বড় মাপের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই।
সবশেষে আমি তিনটি বিশেষ দিকের উলে¬খ করতে চাই। প্রথমত, বিদেশিদের কাছে আমরা আমাদের সক্ষমতা তুলে ধরতে পেরেছি। দ্বিতীয়ত, আমরা অন্যান্য দেশের সাথে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের বিনিময় করতে পেরেছি। তৃতীয়ত, এই ই-এশিয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের আইসিটি খাতের ব্যক্তিবর্গ, সরকারের কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদদের একসাথে এনে দাঁড় করাতে পেরেছি। আর এগুলো হবে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য ভবিষ্যতের বড় পুঁজি।
............................................................................................................................................................................
ই-এশিয়া ২০১১ : আইসিটি থট লিডারদের অনন্য সম্মিলন
মুনীর হাসান, পরামর্শক,
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
ই-এশিয়া ২০১১’ একটি আইসিটি মেলা। একটি সম্মেলন। জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আহরণের উৎস। আইসিটি থট লিডারদের সম্মিলন। পুরস্কারের মাধ্যমে যোগ্যদের প্রতি স্বীকৃতিদানের উৎসব। এবারের ই-এশিয়া মেলা অনুষ্ঠিত হয় ‘রিয়েলাইজিং ডিজিটাল নেশন’ স্লোগান ধারণ করে। এর সরল অর্থ ডিজিটাল জাতির বাস্তবায়ন। আমরা লড়ছি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য। সে জন্য ই-এশিয়া ২০০১ আয়োজন যথার্থ প্রাসঙ্গিক ও সময়োচিত।
এই একুশ শতকে প্রতিটি জাতি হয়ে উঠছে ডিজিটাল। আমাদের লক্ষ্যও তাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ২০২১ সালের মধ্যে আমাদেরকে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেয়া। আমরা কাজ করছি তার আগেই এই আরাধ্য লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য। এ জন্য আমাদের কাজ করতে হচ্ছে সুস্পষ্ট মৌলধারণা বা থিমকে বিবেচনায় রেখে।
আপনারা লক্ষ করেছেন, ই-এশিয়া ২০১১ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো ৫টি থিমকে সামনে রেখে। এগুলো ছিল : বিল্ডিং ক্যাপাসিটি, কানেকটিং পিপল, সার্ভিং সিটিজেন, ড্রাইভিং ইকোনমি এবং ব্রেকিং ব্যারিয়ার। লক্ষ করুন, সর্বশেষ থিমটি হচ্ছে ‘ব্রেকিং ব্যারিয়ার’। অর্থাৎ একটি ডিজিটাল জাতি গড়ায় বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করা। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন জনগণের সক্ষমতা বাড়ানো, আইসিটি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, ডিজিটাল ডিভাইড দূর করা, সর্বোপরি জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা। ই-এশিয়া ২০১১ সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে সে সচেতনতা সৃষ্টির কাজটাকে এগিয়ে নেয়া ছিল আমাদের একটা বড় লক্ষ্য। এ জন্য ই-এশিয়া সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালাই। ঢাকার বাইরে বিলবোর্ড টানাই। সরকারি কর্মকর্তাদের যথাসম্ভব বেশি সংখ্যায় সম্মেলনে হাজির করতে চেষ্টা করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এক্ষেত্রে আমরা শতভাগ সফল হয়েছি। মেলায় লোক সমাগম হয়েছে আমাদের প্রত্যাশার সীমা ছাড়িয়ে। বিশেষ করে মেলায় আয়োজিত সেমিনারগুলোতে শ্রোতারা বসার জায়গা না পেলেও ঠায় দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করেছেন। মেলায় আসা দর্শকদের সামাল দেয়াটাও কোনো কোনো সময় আমদের জন্য মুশকিল হয়ে পড়ে। সবিশেষ উলে¬খ্য, ই-এশিয়ার নানা আয়োজন ও সেমিনারগুলো অনলাইনে সরাসরি উপভোগ করেছেন দেশের ভেতরের ও বাইরের পাঁচ লাখেরও বেশি দর্শক। ‘কমজগৎ ডটকম’-এর সার্বিক সহায়তায় তা সম্ভব হয়। এতে অনুমান করতে অসুবিধা হয় না, দেশে মানুষের মধ্যে আইসিটি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় সচেতনতা আসছে দ্রুত, যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ব্যাপারে আমাদের আশাবাদী করে তোলে।
আইসিটি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে না পারলে আইসিটির বিকাশ ঘটানো অসম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। তা ছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ ছাড়া আমরা গ্লোবাল সিটিজেন হতে পারব না। প্রশ্ন আসতে পারে, আমাদের গ্লোবাল সিটিজেন হওয়ার প্রয়োজনটা কী? মনে রাখতে হবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম একটি লক্ষ্য দেশে বেকার মানুষের জন্য চাকরি ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা। ভুললে চলবে না, জনবহুল এই বাংলাদেশের ভেতরে প্রতিটি মানুষের জন্য চাকরি আর কাজের সংস্থান করা সম্ভব নয়। তাই আমাদের কাজের ক্ষেত্র করে তুলতে হবে এই বিশ্বটাকে। আমাদের হতে হবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ গ্লোবাল সিটিজেন। অন্যান্য দেশের মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করে কাজ আদায়ে সক্ষম হতে হবে আমাদের। আইসিটি জ্ঞান আর অভিজ্ঞতা আহরণ করা ছাড়া সে সক্ষমতা অর্জন করতে পারব না। ই-এশিয়া ২০১১ সম্মেলন আমাদেরকে অন্যদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় ভাগ বসাবার সুযোগ করে দেয়।
আপনারা জানেন, আমরা সে লক্ষ্য নিয়ে এ মেলায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের আয়োজন করি। আমরা পয়সা খরচ করে ই-এশিয়া কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্মিলন ঘটাতে চেয়েছি ডিজিটাল থট লিডারদের। কারণ, আমরা এ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রয়াসী ছিলাম নলেজ ক্যাপচারের। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ডিজিটাল থট লিডারেরা এই সম্মেলনে মূল্যবান ধারণা উপস্থাপন করে গেছেন। এগুলো আমাদের মূল্যবান লার্নিং টুল। তাই আমরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আসি আমাদের নলেজ পার্টনার হিসেবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এসব মূল্যবান ধারণা আমাদের ব¬গে উপস্থাপন করেছি। সেই সাথে এগুলো সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছি। সব মিলিয়ে ই-এশিয়া ছিল একটি অনন্য আইসিটি ইভেন্ট, যা আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াসকে আরো বেগবান করবে।
বাংলাদেশের শিক্ষাভিত্তিক ওয়েবসাইট চ্যামস ২১-এর স্টলে মজার মজার কার্টুন দিয়ে গণিত শেখানোর সফটওয়্যার দেখানো হয় তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য। আর ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর বিষয়গুলো সহজে আয়ত্ত করার কৌশলে দেখানো হয়।
দোহাটেক মেলায় তাদের সেবামূলক বিভিন্ন কর্মকান্ড ও অর্জন উপস্থাপন করে। অগ্নি সিস্টেম তুলে ধরে তাদের আইপি টেলিফোনি সেবা। স্যামসাং উপস্থাপন করে কম খরচে প্রিন্টিংয়ের সুবিধাসংবলিত প্রিন্টার। টাইগার আইটি বিডি ডটকম উপস্থাপন করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচিং টেকনোলজি TigerAFIS.
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mahmood@comjagat.com‘