• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি যেভাবে খুঁজে বের করবেন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: আরিফুল হাসান অপু
মোট লেখা:৫
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
হোস্টিং
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি যেভাবে খুঁজে বের করবেন



তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে বর্তমানে বড় মাধ্যমগুলোর একটি হচ্ছে ওয়েবসাইট। এর ব্যাপক ব্যবহার শুধু শহরে নয়, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও। ওয়েবের ব্যবহার এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি। এ ছাড়া রয়েছে ওয়েব অ্যাপি¬কেশন, ওয়েব পোর্টাল, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ই-কমার্স এবং আরো নানা ধরনের ওয়েব তৈরি ও ব্যবহার। ওয়েবভিত্তিক সলিউশন তৈরি করলে এর মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে ওয়েব হোস্টিং। বাংলাদেশে স্কুল, কলেজ, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব ওয়েবসাইটেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন হোস্টিং সার্ভিস কোম্পানি। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শুধু নিজেরা না জানার কারণে কোন টাইপের হোস্টিং কিনলে নিজের চাহিদা পূরণ হবে সে বিষয়ে জানে না। এ জন্যই অনেক সময় হোস্টিং নিচ্ছেন, কিন্তু পরবর্তী সময় দেখা যায় ভোক্তার চাহিদা পূরণ হচ্ছে না। আবার অনেক সময় না বুঝে বেশি দামে হোস্টিং কিনছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ অল্প টাকায় ভালো সার্ভিস পাওয়ার আশায় না বুঝেই হোস্টিং কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং পরবর্তী সময়ে সমস্যায় পড়েন। এসব সমস্যার সমাধানে আমরা আজ হোস্টিং নিয়ে বিশদভাবে তুলে ধরার প্রয়াস পাব। আপনি যদি কোনো কাজে সচেতন না হয়ে থাকেন, তবে দেখা যাবে হোস্টিংয়ের পেছনে অপ্রয়োজনীয় অনেক খরচ করছেন।



ডোমেইন নেম কী?

ডোমেইন নেম হচ্ছে এমন একটি ইউআরএল তথা ইউনিভার্সাল রিসোর্স লোকেটর, যা কোনো একটি ওযেবসাইটকে একক নামে নির্দেশ করে। এটি সব সময় ওই মালিকের নিজস্ব সম্পত্তি। যেকোনো ডোমেইন নেমের শুরু www দিয়ে, যা সার্ভারকে খুঁজে বের করতে সহায়তা করে এবং .com .net .edu ইত্যাদি হচ্ছে এক্সটেনশন। এর মাধ্যমে বুঝা যায় ডোমেইনটি কী ধরনের কাজে ব্যবহার হয়। যেমন com-কমার্শিয়াল, edu-এডুকেশন, net-নেটওয়ার্কিং ইত্যাদিসহ বর্তমানে ২৮০টিরও বেশি ডোমেইন এক্সটেনশন রয়েছে সারা বিশ্বে। আমাদের দেশের নিজস্ব এক্সটেনশন রয়েছে। যেমন .bd, এটি শুধু বাংলাদেশের এক্সটেনশন হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যবহার হবে।

বিশ্বে ডোমেইন নেম নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর নাম ICANN (ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নামবারর্স)। বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ডোমেইন ব্যবহার করে আমেরিকায় এর সংখ্যা ৭৮,২,৩৩,৭৮০টি।

হোস্টিং/ওয়েব হোস্টিং কী?

হোস্টিংকে আমরা অনেকেই ওয়েব হোস্টিংও বলি। সোজা কথায় ওয়েব হোস্টিং হচ্ছে তা, যেখানে আপনার তৈরি করা ওয়েব ফাইলগুলোকে সাজিয়ে রাখতে পারেন। প্রয়োজনে তা আবার ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো জায়গায় বসে দেখতে পাবেন।

কারিগরি ভাষায় হোস্টিং হচ্ছে একটি কমপিউটারের হার্ডডিস্কের জায়গা, যাকে আমরা সার্ভার বলি। এর খালি অংশে আমরা আমাদের তথ্যগুলোকে সাজিয়ে রাখি যাতে পরবর্তী সময়ে যেকেউ ইন্টারনেট সহযোগিতার মাধ্যমে তথ্যগুলো ব্রাউজ করেন। এ কাজটিকেই আমরা ওয়েবসাইট ব্রাউজিং বলি। বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং সার্ভিস রয়েছে।

কেস স্টাডি-১

কোনো এক ব্যক্তি একটি ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি খুঁজছেন তাদের অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটটি হোস্টিং করার জন্য। তার মূল কাজ ওই অ্যাসোসিয়েশনের সব মেম্বারকে একত্রিত করা এবং পরবর্তী সময়ে সবাইকে গ্রুপ ই-মেইলের মাধ্যমে সংগঠনের সব তথ্য জানানো। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একসাথে ৬০০ জনকে গ্রুপ ই-মেইল করতে গিয়ে দেখলেন একসাথে তো এত মেইল যাবে না। কারণ, ওই প্যাকেজে এক ঘণ্টায় ১৫০টির বেশি ই-মেইল একসাথে পাঠানোর সুযোগ নেই। এবং ওই সার্ভারে এরচেয়ে বেশি একসাথে ই-মেইল পাঠানোর জন্য চাইলেও কারিগরি সুবিধা নেই। এদিকে ওই ব্যক্তি দুই বছরের জন্য হোস্টিং স্পেস কিনেছেন এবং এই দুই বছরের টাকা দিয়ে এক মাসের মধ্যে অন্য কোম্পানিতে হোস্টিং ট্রান্সফার করতে বাধ্য হন।

কেস স্টাডি-২

নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী তার প্রতিষ্ঠানের জন্য চার বছর আগে একটি ডোমেইন কেনেন বাংলাদেশের একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে। পরপর তিন বছর ডোমেইনটি নবায়ন করে নেন। কিন্তু চতুর্থ বছরে এসে দেখলেন, ডোমেইন হোস্টিংয়ের দাম দ্বিগুণ ধরা হয়েছে। তিনি দাম কমাতে ব্যর্থ হয়ে ডোমেইনের কন্ট্রোল প্যানেল দিয়ে দিতে বলেন, কিন্তু অনেক দেন-দরবার করেও কোনো লাভ না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে খুবই প্রয়োজনীয় ডোমেইন নেমটি নবায়ন করাতে পারেননি। কারণ, ওই কোম্পানি ডোমেইনে কন্ট্রোল প্যানেল দেবে না বলে সরাসরি বলে দিয়েছে। ওই ব্যক্তির জানা নেই, এ ব্যাপারে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন কি না। অতএব সাবধান।

কেস স্টাডি-৩

আনিসুল হক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান। নিজের প্রতিষ্ঠানের নামে প্রায় পাঁচ বছর ধরে একটি ওয়েবসাইট এবং ওয়েবমেইল চালু ছিল। ষষ্ঠ বছরে ডোমেইন ও হোস্টিং নবায়ন করতে এসে দেখলেন, ওই কোম্পানিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আগের ঠিকানায় যোগাযোগ করলেন। পুরনো ই-মেইলে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানতে পারেন, ওই কোম্পানি সবকিছু বিক্রি করে বিদেশে চলে গেছে। তার হাতে ডোমেইনের কোনো কন্ট্রোল ছিল না। তাই পরবর্তী সময় ওই ডোমেইনটি বন্ধ হয়ে যায়। অতএব সাবধান।

এখানে আমাদের শেখার বিষয় হলো, আমাদের প্রয়োজনগুলো সবার আগে ভালো করে বুঝতে হবে। ভালো করে দেখে নিতে হবে হোস্টিং কোম্পানির দেয়া সব অফার। একটি ছোট ওয়েবসাইট হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে এটি একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা। একবার ভেবে দেখুন, আপনি যদি আরো জটিল ধরনের হোস্টিং কিনতে চান তখন কী হবে। যদি নিজে সাবধান না হন, তবে দেখা যাবে হোস্টিংয়ের জন্য আপনি অযথা টাকা খরচ করছেন।

অনেক বোঝার ব্যাপার আছে। অনেক কোম্পানি খুব ভালো সার্ভার অনেক ভালো দামে অফার করে। অতএব আপনাকে নিজে আগে সচেতন হতে হবে, তারপর ভালো করে জেনে নিন, কী নিচ্ছেন।

হোস্টিং সার্ভারের বিস্তারিত

ডেডিকেটেড সার্ভার ও শেয়ারড সার্ভার : সার্ভার নেয়ার আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন ধরনের সার্ভার আপনার জন্য প্রয়োজন। দুই ক্ষেত্রেই সুবিধা ও অসুবিধা আছে। শেয়ারড ও হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে সার্ভারের জায়গা ও অন্যান্য রিসোর্স অন্যদের সাথে শেয়ার করতে হবে। কিন্তু আপনার জায়গা ও অ্যাক্সেস সুবিধা আপনার হাতেই থাকবে। সার্ভারের হার্ডওয়্যারও একই ধরনের থাকে। শেয়ারড ও হোস্টিং ডেডিকেটেড সার্ভারের চেয়ে দাম অনেক কম। ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে সার্ভারের জায়গা ব্যান্ডউইডথসহ অন্যান্য সব রিসোর্স আপনি একাই ব্যবহার করবেন। ডেডিকেটেড সার্ভার শুধু বড় অ্যাপি¬কেশন এবং যেসব ওয়েবসাইটের অনেক বেশি রিসোর্স লাগে সেখানেই ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে শেয়ারড হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যদের সব রিসোর্স ভাগ করার কারণে ওই সার্ভারের কার্যক্রম স্লো হয়ে যায় এবং ভিজিটের ক্ষেত্রে দেখা যায় একটি ক্লিক দিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়। যদি আগে থেকেই জানেন অ্যাপি¬কেশনের খুব বেশি রিসোর্স দরকার নেই, তবে শেয়ারড হোস্টিংয়ে আসতে পারেন।

ডেডিকেটেড সার্ভারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান তার ইচ্ছেমতো সিকিউরিটি ব্যাকআপসহ অন্যান্য সুবিধা নিজের মতোই কনফিগার করে নিতে পারে। বিশেষত ইআরপি, সিএমএসসহ বড় অ্যাপি¬কেশনে এ ধরনের সার্ভার প্রয়োজন হয়। এসব জায়গায় অনেক বেশি রিসোর্স (জায়গা, র্যা ম, ব্যান্ডউইডথ ইত্যাদি) লাগে। অন্যদিকে শেয়ারড হোস্টিং ছোট অ্যাপি¬কেশন এবং ওয়েবসাইট হোস্টিংয়ের জন্য প্রয়োজন। সেখানে ডাটা সিকিউরিটি বেশি প্রয়োজন হয় না। অতএব, যেকোনো কোম্পানিরই উচিত তার অ্যাপি¬কেশনের ওপর ভিত্তি করে শেয়ারড অথবা ডেডিকেটেড সার্ভার প্লান নেয়া।

ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার : ভিপিএস তথা ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার খুবই আধুনিক ও যুগোপযোগী অপশন। এটি শেয়ারড ও ডেডিকেটেড সার্ভারের মাঝামাঝি একটি সার্ভিস। ভিপিএস নিজের মতো করেই তৈরি করে নেয়া যায় এবং হার্ডওয়্যার ও সফর্টওয়্যার-এ দুই জায়গায়ই আপনি অ্যাক্সেস করতে পারেন। নিজের প্রয়োজনে যেকোনো সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিতে পারবেন। ভিপিএস তাদের জন্য দরকার, যারা কম খরচের মধ্যে ডেডিকেটেড সার্ভারের মতোই সুবিধা চান। এ ক্ষেত্রে সার্ভিসটি নেয়ার আগে হার্ডওয়্যার সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেয়া দরকার।

ম্যানেজড ও আনম্যানেজেড সার্ভার : যখন আপনি ভিপিএস/ডেডিকেটেড হোস্টিং নেবেন, অবশ্যই সার্ভারের কনফিগারেশন দেখে নেবেন। নিজে সার্ভার কন্ট্রোল করলে সব দায়িত্বও আপনার হাতেই থাকবে। ভেন্ডর প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার, ব্যান্ডউইডথ ও কুলিং ব্যবস্থা নেবেন। সাথে থাকবে প্রয়োজনীয় অপারেটিং সিস্টেম সুবিধা। পরবর্তী সময়ে সার্ভারের অ্যাপি¬কেশনসহ সব দায়িত্ব নিজের মাথায় উঠবে।

এ ধরনের আনম্যানেজড সার্ভিসের ক্ষেত্রে নিজের একটি ভালো টিম লাগে ওই সার্ভার দেখাশোনা করার জন্য। এসব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেশিরভাগ ডাটা সেন্টার এখন ম্যানেজড সার্ভার অফার করে থাকে। এ ক্ষেত্রে মূল সার্ভারের সাথে কিছু বাড়তি খরচ গুনতে হয়। তাই নিজের যদি সার্ভার ম্যানেজ করার মতো দক্ষ লোকবল না থাকে, তবে ম্যানেজড সার্ভার নেয়া ভালো। ম্যানেজড সার্ভিসে সার্ভার সিকিউরিটি, ডাটা ব্যাকআপ এবং সব ধরনের সাপোর্ট দিয়ে থাকে। আনম্যানেজড সার্ভার এমন প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন, যাদের দক্ষ লোকবল আছে, কিন্তু নিজের অফিসে সার্ভার না রেখে ডাটা সেন্টারে রেখে দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কাজ করতে চায়। এটি ম্যানেজড সার্ভারের চেয়ে দামেও সস্তা।

কিভাবে নিজের জন্য সবচেয়ে ভালো হোস্টিং কোম্পানি খুঁজে বের করবেন? হোস্টিং কোম্পানি পছন্দ করার আগে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে, যা আপনার জন্য খুবই প্রয়োজন।

রেসপন্স টাইম : দু’টি ক্ষেত্রে এ ব্যাপারটি মনে রাখতে হবে। লিটেন্সি ও সার্ভার রেসপন্স টাইম। যদি আপনার অ্যাপি¬কেশনটি শুধু বাংলাদেশের জন্য চলে, তবে আমেরিকানভিত্তিক সার্ভারে হোস্টিং করলে লিটেন্সি সময় বেশি লাগবে। সার্ভার রেসপন্স টাইম সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা যায় শেয়ারড হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে। একসাথে অনেক বেশি ভিজিটর ভিজিট করলে সার্ভারের গতি কমে যায়। কিন্তু ওই সময় কিছুই করার থাকে না। অন্যদিকে ডেডিকেটেড সার্ভার থাকলে রিসোর্স যেকোনো সময় বাড়িয়ে নেয়া যায়। এ জন্য শেয়ারড হোস্টিং নেয়ার আগে হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানিকে জিজ্ঞাসা করে নিতে হবে, কী কী ধরনের ওয়েবসাইট/অ্যাপি-কেশন ইতোমধ্যেই সার্ভারে হোস্ট করা আছে।

সাপোর্ট ও ফিডব্যাক : যখন আপনি আপনার ওয়েবসাইটটি হোস্টিং করতে যাবেন, তখন সাপোর্ট হচ্ছে বড় একটি বিষয় :

০১. সার্ভারের আপটাইম গ্যারান্টি কতটুকু।
০২. ২৪/৭ সাপোর্ট আছে কি না, বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য ১৬-১৭ ঘণ্টা সাপোর্ট হলে চলে।
০৩. ওই কোম্পানি থেকে সার্ভিস নিচ্ছে এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া।
০৪. অনলাইনে বিভিন্ন ফোরামে সার্চ দিয়ে দেখা দরকার, তাদের সম্পর্কে কোনো মতামত আছে কি না।

বিশ্বাসযোগ্যতা : এটি খুবই প্রয়োজনীয় একটি দিক। আগে থেকেই ওই কোম্পানি সম্পর্কে জানতে হবে কোম্পানিটি কত বছর ধরে মার্কেটে আছে। তাদের পরিচিতি কেমন, বিশেষত বাংলাদেশে অনেকেই কোম্পানি খুলে কিছুদিন ব্যবসায় করে আবার বন্ধ করে চলে যায়। ফলে আপনাকে চরম বিপদে পড়তে হয়।

ফ্লেক্সিবেলিটি : আপনি মোটামুটি অনেক হোমওয়ার্কের পর কোনো হোস্টিং পছন্দ করলেন, কিন্তু পরবর্তী সময়ে আপগ্রেড করতে গিয়ে দেখলেন সব ওলটপালট। এজন্য হোস্টিংপ্লান পছন্দ করার সাথে সাথে প্লান পরিবর্তন করলে কী পরিমাণ খরচ যাবে, সেটাও ভালোভাবে দেখে নেয়া উচিত। কারণ, একই সার্ভারে সুযোগসুবিধা বাড়ালে কোনো ডাউনটাইম পাওয়া যায় না। অনেকেই হোস্টিং কেনার সময় এই বিষয়গুলো ভালোভাবে লক্ষ না করার কারণে পরবর্তী সময়ে অধিক টাকা গুনতে হয়।

ব্যান্ডউইডথ : বেশিরভাগ হোস্টিং কোম্পানি অধিক ব্যান্ডউইডথ দেয়ার অফার করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ কোম্পানি এ ধরনের কাজ করে। যেমন : ১০০ মেগা হোস্টিং জায়গা ১০০ গিগা ব্যান্ডউইডথ। কিছু দাম খুবই কম, এটা নিছক লোক দেখানো ছাড়া কিছু নয়। কারণ, সব সার্ভারের সীমিত ব্যান্ডউইডথ থাকে, ফলে কখনই এত অল্প টাকায় এ পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ দেয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আপনাকে আগেই বুঝতে হবে কী ধরনের ওয়েবসাইট অ্যাপি¬কেশন চালাবেন এবং ভিজিটর কেমন হতে পারে, ডাউনলোড হবে এরকম কোনো ফাইল আছে কি না। কারণ, আপনার হোস্টিংয়ের জায়গা অনেক আছে, কিন্তু ব্যান্ডউইডথ কম-এ অবস্থায় আপলোড অথবা ডাউনলোড কম হলে অথবা বেশি ভিজিটর হলে আপনার সাইট ডাউন হয়ে যাবে।

নিজের মতো করে সার্ভার বানানো : বাজারে অনেক কোম্পানি অনেক ধরনের সার্ভার অফার করে। যদি আপনার প্রয়োজনের সাথে না মিলে, তবে নিজের মতো সার্ভার কনফিগারেশন করে নিতে পারেন।



হোস্টিংয়ের তুলনামূলক চিত্র : বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পাওয়া সব প্যাকেজ একসাথে করে একটি তুলনামূলক চিত্র দাঁড় করাতে পারেন। যেমন : সার্ভার কনফিগারেশন, স্পেস, ব্যন্ডউইডথ ও অন্যান্য ফিচার। বাজারে অনেক কোম্পানি কাছাকাছি সুবিধা দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাম অফার করে। এ ক্ষেত্রে শুধু দামের দিকে না তাকিয়ে উলি¬খিত সব বিষয়ে একটি তুলনামূলক চিত্র দাঁড় করাতে পারেন। তারপর সিদ্ধান্ত নিন, কোন অফারটি সব দিক থেকে আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়। মনে রাখবেন, এ ক্ষেত্রে নিজে ভালোভাবে স্টাডি না করলে কম পরিমাণ সার্ভিস নিয়ে হয়তো দেখা যাবে আপনি বেশি টাকা খরচ করছেন অথবা অল্প টাকা হোস্টিং নিয়ে পরবর্তী সময়ে সার্ভিস সাপোর্ট কোনোটাই পাচ্ছেন না।

সার্ভারের টেকনিক্যাল বিষয় : সব ওয়েব হোস্টিং কোম্পানিই নিজেদেরকে ভালোভাবে উপস্থাপন করে বিভিন্ন প্যাকেজের মাধ্যমে। কিন্তু হোস্টিং প্যাকেজ চয়েজ করার পরও একটি বিষয়ে সবাই এড়িয়ে যায়। তা হলো যে সার্ভারে আপনি হোস্টিং করছেন তার টেকনিক্যাল ক্যাপাসাটি ও কনফিগারেশন কেমন, এসব বিষয় অবশ্যই ভালোভাবে জেনে নিতে হবে।

অপারেটিং সিস্টেম : আপনি কোন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের হোস্টিং কিনবেন তা নির্ভর করে কোন ধরনের স্ক্রিপ্টে ওয়েবসাইটটি ডেভেলপ করবেন তার ওপর। যদি পিএইচপি, মাইএসকিউএল হয়, তবে লিনআক্স সার্ভারের হোস্টিং নিতে পারেন। এছাড়া এই সার্ভারে রুবি, পাইথন, ফ্ল্যাশসহ অন্যান্য প্রোগ্রাম ব্যবহার করতে পারেন। অপারেটিং সিস্টেমের জন্য আরএইচইএল (রেডহার্ট লিনআক্স এন্টারপ্রাইজ) ব্যবহার হয়। এ ছাড়া সেন্টওএস, উবুন্টু, ফেডোরা ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

আর যদি ওয়েব অ্যাপি¬কেশনটি হয় এএসপি অথবা এএসপি ডট নেট, তবে উইন্ডোজ সার্ভার ব্যবহার করতে হবে। অপারেটিং সিস্টেমের জন্য উইন্ডোজ ২০০৩ বা ২০০৮ এবং ডাটাবেজ এমএসএসকিউএল ব্যবহার হবে।

হার্ডওয়্যার : সার্ভারের হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে এমনভাবে পছন্দ করতে হবে, যাতে আগামী দিনে কমপক্ষে ১২ মাস হার্ডওয়্যার সম্প্রসারণ করতে না হয়। আগে থেকে কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, যা আপনার প্রয়োজনের সাথে মিলে যায়, যেমন-প্রসেসিং ক্ষমতা, র্যা ম, হার্ডওয়্যার জায়গা ব্যাকআপের জন্য আলাদা হার্ডওয়্যার আছে কি না, ব্যান্ডউইডথ কেমন এবং হার্ডওয়্যারগুলোকে এক্সটেনশন করা যায় কি না।

ভৌগোলিক এলাকা : এলাকাভেদে সার্ভারের দাম অনেক বেশি ওঠানামা করে। ওয়েবসাইটি যদি হয় বাংলাদেশের জন্য, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে হোস্ট করতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে খুব কমসংখ্যক কোম্পানি হোস্টিং সার্ভিস দেয়। তবে বাংলাদেশের জন্য তৈরি ওয়েবসাইটের লিটেন্সি, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের চেয়ে ৩০ শতাংশ কমে। অর্থাৎ দ্রুত ওয়েবসাইটটি ওপেন হবে।

ব্যান্ডউইডথ : আপনার চাহিদা অনুযায়ী ব্যান্ডউইডথ ওই সার্ভারের রয়েছে কি না, পরবর্তী সময়ে বাড়াতে গেলে কী ধরনের পলিসি হবে, তা আগে থেকে দেখে নিতে হবে।

আইপি ঠিকানা : সব সার্ভারেরই রয়েছে আলাদা আলাদা আইপি তথা ইন্টারনেট প্রটোকল। সার্ভারের সাথে দেখে নিতে হবে কয়টি আইপি ঠিকানা দিচ্ছে। কারণ, বড় ধরনের এসইও এবং এসএসএলের ক্ষেত্রে আলাদা আইপি ঠিকানা প্রয়োজন হয়।

কন্ট্রোল প্যানেল : লিনআক্সের জন্য যেমন সি প্যানেল বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়, ঠিক তেমনি উইন্ডোজ সার্ভারের জন্য রয়েছে পে¬সক কন্ট্রোল প্যানেল। লক্ষণীয়, আপনি যদি আগে থেকে বুঝে হোস্টিং না কেনেন, তবে দেখা যাবে কন্ট্রোল প্যানেলের জন্য আলাদা ফি দিতে হচ্ছে।

সাপোর্ট ও বিল : সাপোর্ট অনেক বড় একটি বিষয়। সার্ভার নেয়ার পর যদি দেখা যায় সাপোর্টের জন্য আলাদা বিল দিতে হবে, তবে আপনি আসলেই বিপদে পড়লেন। এজন্য সপ্তাহে কত দিন আর কত ঘণ্টা সাপোর্ট দেবে জেনে নিন। বিলের ক্ষেত্রে অনেক সময় একসাথে ১২ মাসের বিল দিলে ভালো ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। তাই এই বিষয়েও লক্ষ রাখা উচিত।

ডাটা সেন্টার : সারা বিশ্বে রয়েছে অসংখ্য ডাটা সেন্টার। এর বেশিরভাগই আমেরিকায়। যেমন-হোস্ট গ্রেটর, লিকুইড ওয়েব, বুহোস্ট, দি প্লানেট ইত্যাদি। আমাদের দেশের অনেকেই হোস্ট গ্রেটর এবং লিকুইড ওয়েবের সার্ভার ব্যবহার করেন। এসব ডাটা সেন্টারে একসাথে লক্ষাধিক পর্যন্ত সার্ভার চলে। বাংলাদেশে হোস্টিং কোম্পানিগুলো হোস্টিং সেবা দিচ্ছে এসব ডাটা সেন্টার থেকে সার্ভার ভাড়া নিয়ে। বাংলাদেশে কিছু প্রথম সারির হোস্টিং সেবাদাতার মধ্যে আর্ফিটেক, ই-সফট, টেকনোবিডি, ইকরাসফট ইত্যাদি উলে¬খযোগ্য।

আজ আপনি যে ডোমেইন ও হোস্টিং নিচ্ছেন, পরে সেটি হতে পারে আপনার ব্যবসার মূল ভিত্তি। তাই সবাইকে উপরোক্ত বিষয়গুলোর ওপর লক্ষ রাখা উচিত।

....................................................................................................................................................................................................................................

সাক্ষাৎকার



এ. কে. এম ফাহিম মাশরুর
সিনিয়র সহ-সভাপতি, বেসিস

ওয়েব হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কী ধরনের কোম্পানি পছন্দ করা উচিত?

যেকোনো ক্রেতা ওয়েব হোস্টিং করার আগে অবশ্যই ওই কোম্পানিকে যাচাই করার প্রয়োজন আছে। যেমন-কোম্পানি কতদিন ধরে সার্ভিস দিচ্ছে। সম্ভব হলে সেবা নিচ্ছে এমন দুয়েকজনের সাথে কথা বলে নেয়া যেতে পারে। সেই সাথে কোনো অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কি না, দেখা যেতে পারে।

বাজারে প্রচলিত হোস্টিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে অনেকেই নামমাত্র মূল্যে হোস্টিং অফার করে, আবার অনেকেই ২-৩ ধরনের হোস্টিং সেবা দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আপনার বক্তব্য কী?

দেখুন, বিশ্বের সব ব্যবসায়ের এবং সব দেশেই যেকোনো সার্ভিসে প্রতিযোগিতা থাকবেই। কিন্তু সেখানে ক্রেতাদের আগে সাবধান হতে হবে। অনেক লোভনীয় অফার এবং কম দামে হোস্টিং দেখেই ওই কোম্পানির সাথে চুক্তি না করে আগে নিজেকে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে তারপর হোস্টিং কিনতে হবে। তা না হলে পরবর্তী সময়ে ঠিকই বিপদে পড়তে হবে। এ বিষয়ে নিজে না বুঝলে চেনাজানা কারো সহযোগিতা নিতে পারেন। এ ছাড়া অনলাইনে অনেক টিউটরিয়াল আছে, যেখান থেকে নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কোন ধরনের হোস্টিং আপনার প্রয়োজন।

ভালো হোস্টিং কোম্পানি খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে বেসিস কোনো সহযোগিতা করে কি না?

বেসিস ওয়েবসাইটে আমাদের সদস্যদের মধ্যে যেসব কোম্পানি হোস্টিং সার্ভিস দেয়, তাদের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা আছে। যেকেউ প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে ওই কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। পরবর্তী সময়ে যদি কোনো সমস্যা হয়, তবে বেসিস সমাধানের চেষ্টা করবে।

....................................................................................................................................................................................................................................




তারেক বরকতউল্লাহ
সিনিয়র সিস্টেমস অ্যানালিস্ট

বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল

আপনারা কোন ধরনের হোস্টিং সার্ভিস দিচ্ছেন?

বিসিসি মূলত বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটগুলো হোস্টিং করে। বর্তমানে ১৫০টির মতো ওয়েবসাইট হোস্টিং আছে, যার বেশিরভাগ লিনআক্স সার্ভারে চলে।

বাংলাদেশে প্রাইভেট ডাটা সেন্টার খুব বেশি গড়ে না ওঠার কারণ কী?

এখনো বাংলাদেশে ব্যান্ডউইডথের দাম উন্নত বিশ্ব থেকে অনেক বেশি, এটা একটা বিষয়। তা ছাড়া সাবমেরিন ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবলের বিকল্প লাইন না থাকায় আমাদের সবসময় ঝুঁকির মুখে থাকতে হয়। আরও রয়েছে ডাটা সেন্টারের জন্য গুণগতমানসম্পন্ন নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যা। তাই এখনো দেশে সেভাবে হোস্টিংয়ের জন্য ডাটা সেন্টার বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি হয়নি।

....................................................................................................................................................................................................................................



শাহ ইমরাউল কায়েস
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
টেকনোবিডি ওয়েব সল্যুশন লিমিটেড

ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি হিসেবে ক্রেতাদের সাথে কী ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়?

একটি প্রশ্ন প্রায়ই আসে। তা হলো হোস্টিংয়ের মূল্য তালিকা। বাজারে ছোটবড় ৪০টিরও বেশি কোম্পানি বাংলাদেশে হোস্টিং সেবা দিচ্ছে। কিন্তু একেক কোম্পানি একেক ধরনের প্যাকেজ ঘোষণা দেয়। এর ফলে ক্রেতা নিজেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন কোন কোম্পানিটি তার জন্য ভালো হবে। এ ক্ষেত্রে দাম নিয়ে বিভিন্নজনের বিভিন্ন অফার বিষয়ে ক্লায়েন্ট জানতে চায়। আমাদেরকেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় এবং বুঝিয়ে বলতে হয় কেনো হোস্টিংয়ের দাম ভিন্ন হয়।

যারা নতুন করে হোস্টিং কিনতে চান, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

হোস্টিং বিষয়ে আগে থেকে ধারণা রাখতে হবে। নিজে হোমওয়ার্ক করতে হবে। প্রথমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কী ধরনের সার্ভিসের জন্য হোস্টিং করতে হবে। সাধারণ মানের একটি ওয়েবসাইট হোস্টিং করলেও আপনাকে দুটো বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে : ০১. কোম্পানির আগের রেকর্ড এবং কোন কোন কোম্পানি বর্তমানে তাদের থেকে সার্ভিস নিচ্ছে এবং ০২. দামের দিকে না তাকিয়ে আগে দেখতে হবে আপনার নিজের চাহিদা কী। সে অনুযায়ী হোস্টিং বেছে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, যখন ডাটাবেজ ও ই-কমার্সসহ জটিল ধরনের হোস্টিং করবেন তখন টেকনিক্যাল অনেক প্রশ্ন আগে থেকে জেনে নিতে হবে। যেমন : সার্ভারের কনফিগারেশন, ডাটা ট্রান্সফার ব্যান্ডউইডথ, ডাটা ব্যাকআপ সুবিধা এবং সার্পোটসহ আরো কিছু তথ্য।

কজ ওয়েব


লেখক পরিচিতি : প্রধান নির্বাহী, ই-সফট

ফিডব্যাক : info@ahopu.com


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস