• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > বিশ্ব আইটি রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান যখন ১১৩তম
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সম্পাদক
মোট লেখা:৩১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রতিবেদন
তথ্যসূত্র:
সম্পাদকীয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
বিশ্ব আইটি রিপোর্টে বাংলাদেশের অবস্থান যখন ১১৩তম

পিছিয়ে থাকাটাই যেনো আমাদের জাতীয় জীবনে অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, জাতীয় ভাবমর্যাদা, স্বনির্ভরতাসহ এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে আমাদের অবস্থান সামনের সারিতে বলে দাবি করতে পারি। তবুও কথামালার যেনো শেষ নেই। যে সরকারই ক্ষমতায় আসে সবারই এক দাবি, যা কিছু ভালো সবই আমরা করেছি। মন্দ সবই তাদেরই কারণে। বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পরপর ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ও নীতিমতো শোরগোল শুরু হয়ে গেল। নতুন কোনো টেলিসার্ভিস বা ইন্টারনেট সার্ভিস শুরু বা সম্প্রসারিত হলেই সরকারি মহলে প্রচারের ধুম পড়ে যায়। বলা হয়, দেশে ডিজিটাল উন্নয়ন চলছে গতিশীলভাবে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রায় গড়ে ফেলেছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে সেই উপলব্ধি নেই মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক গুটিকয়েক সার্ভিস সূচিত হলেই একটি দেশ ডিজিটাল দেশ বলে গণ্য হতে পারে না। সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদেরকে অনেক কিছুই করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু এগিয়েছি তা পরিমাপ করতে হলে আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব সৃষ্টিকর করে তোলার জন্য কতটুকু প্রস্ত্তত করতে পেরেছি। এ জন্য জানা দরকার আইসিটিকে জাতীয় উন্নয়নের ব্যবহার উপযোগী করে তোলার জন্য : দেশের রাজনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিবিধানের পরিবেশ কেমন, ব্যবসায় ও উদ্ভাবনী পরিস্থিতি কেমন, অবকাঠামো কতটুকু উন্নত, ডিজিটাল কনটেন্ট কতটুকু সহজলভ্য, আইসিটি সেবা নাগরিক সাধারণের কতটুকু নাগালের মধ্যে, ব্যক্তি পর্যায়ে আইসিটির ব্যবহার কোন পর্যায়ে, ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আইসিটি কতটুকু ব্যবহার হচ্ছে, সরকার ব্যবস্থায় কী মাত্রায় আইসিটি সেবা ব্যবহার হচ্ছে, অর্থনীতির ওপর আইসিটি কতটুকু প্রভাব ফেলছে এবং সামাজিক ক্ষেত্রেই আইসিটির প্রভাব কতটুকু। এসব সার্বিক দিক গভীরভাবে খতিয়ে দেখার মাধ্যমেই শুধু সম্ভব একটি দেশের আইসিটির অগ্রযাত্রা পরিমাপ করা। এসব বিষয় খতিয়ে দেখার মতো একটি কার্যকর ব্যবস্থা এখনো আমাদের দেশে দুঃখজনকভাবে অনুপস্থিত। ফলে এ ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য ও ব্যর্থতা যতটুকু জানি বা শুনি, সবই আন্দাজ-অনুমানভিত্তিক। এ ব্যাপারে যে যা বলছেন তাই আমরা বিশ্বাস করছি। ভুল-শুদ্ধ যাই হোক, তাই আমাদের হজম করতে হচ্ছে।

সুখের কথা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এসব বিষয় গভীরভাবে খতিয়ে দেখে প্রতিবছর একটি করে সাংবাৎসারিক বিশ্ব আইসিটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এই রিপোর্টের ২০১২ সালের সংস্করণটি এর একাদশ সংস্করণ। এই রিপোর্ট প্রণয়ন করতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামকে সহযোগিতা করেছে আন্তর্জাতিক বিজনেস স্কুল INSEAD। এই রিপোর্টে বিভিন্ন সূচক, উপসূচক ও স্তম্ভ বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে একটি ‘নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স’। ২০১২ সালের গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্টে ১৪২ দেশ ও টেরিটরির জন্য এই ‘নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স’ তথা এনআরআই তৈরি করেছে। এসব দেশ বিশ্বের ৯৮ শতাংশ জিডিপির অধিকারী। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্বের প্রায় সব দেশের জন্য আলাদা আলাদা আইসিটি প্রোফাইল তৈরি করে আসছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। সেই সাথে তৈরি করছে নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স। এই প্রোফাইল ও ইনডেক্স কার্যত একটি দেশের আইসিটি খাতের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে। এই প্রোফাইল ও ইনডেক্স সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার ও নীতিনির্ধারকদের জন্য নিজেদের অবস্থান চিহ্নিত করা ও সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় করণীয় নির্দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। আমরা এ থেকে ব্যতিক্রম কিছু নই।

নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে দুঃখজনকভাবে আমাদের অবস্থান ১১৩তম স্থানে। শীর্ষ অবস্থানে সুইডেন। সর্বনিম্ন ১৪২তম অবস্থানে হাইতি। যেসব ক্ষেত্রকে এ রিপোর্টের বিবেচ্য করে তোলা হয়েছে প্রায় সব ক্ষেত্রে আমাদের দেশের অবস্থান শততম স্থানেরও নিচে। এ থেকে সহজেই বুঝা যায়, আইসিটির ক্ষেত্রে কিংবা বলা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে কতটুকু পিছিয়ে রয়েছি। বাংলাদেশ প্রোফাইলটি দেখলেই এর সভ্যতা মিলে। তাই আমরা কমপিউার জগৎ-এর এবারের প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের অনুষঙ্গ করেছি ‘গ্লোবাল আইটি রিপোর্ট ২০১২’-কে। আমাদের বিশ্বাস যেকোনো পাঠক এ লেখা পড়লে আইসিটি খাতে আমাদের দুর্বল অবস্থানগুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন। তবে আমাদের সবিশেষ তাগিদ দেশের নীতিনির্ধারকদের প্রতি। তারা যেনো এই রিপোর্টটির আদ্যোপান্ত মনোযোগের সাথে পড়ে ও বাস্তব চিত্র অনুধাবন করে আমাদের আইসিটি খাতের পরবর্তী করণীয় তালিকাটি প্রণয়নে সচেতন ভূমিকা পালন করে। নইলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় আমাদের অবস্থান থেকে যাবে বর্তমানের ১১৩তম স্থানেই। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সরকারি প্রতিশ্রুতিও থেকে যাবে অপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথা, শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়াই শেষ কথা নয়, অনেক জাতি এখন চলে গেছে তথ্যপ্রযুক্তির হাইব্রিড বা সঙ্কর যুগে। আমাদেরকেও উন্নয়ন ঘটাতে হবে সে যুগে।

কজ ওয়েব
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা