• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > এবারের বিশ্ব আইটি রিপোর্টে কোন দেশ কোন অবস্থানে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: গোলাপ মুনীর
মোট লেখা:২৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
থ্র্রীডি
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
এবারের বিশ্ব আইটি রিপোর্টে কোন দেশ কোন অবস্থানে


গত বছর আন্তর্জাতিক বিজনেস স্কুল INSEAD-এর সহযোগিতা নিয়ে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ‘গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্ট’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে পালন করে এ ধরনের বার্ষিক ব্যাপকধর্মী রিপোর্ট প্রকাশের দশম বার্ষিকী। ‘গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্ট : ২০১২’ হচ্ছে এর একাদশ সংস্করণ। এবারের এ রিপোর্টের শিরোনাম : Living in a Hyper-connected world। এবারের এ রিপোর্টে বিশ্বের ১৪২ দেশের আইসিটি কর্মকান্ডকে জরিপের আওতায় এনে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম তৈরি করেছে এসব দেশের এনআরআই তথা ‘নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স’। বিশ্ব অর্থনীতির ৯৮ শতাংশ জিডিপির অধিকারী এই ১৪২ দেশ। প্রাথমিকভাবে এই আইসিটি রিপোর্ট প্রকল্প শুরু হয়েছিল বিভিন্ন দেশের উৎপাদন ও উন্নয়নের ওপর আইসিটির প্রভাব পরিমাপের জন্য। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এই সাংবাৎসরিক রিপোর্ট সূত্রে যে এনআরআই তৈরি করে আসছে, তা দিয়ে পরিমাপ করা যাচ্ছে একটি দেশ তার আইসিটির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করতে কতটুকু সক্ষমতা অর্জন করেছে, সংশ্লিষ্ট দেশটি তার অর্থনীতি ও সামগ্রিক উন্নয়নে আইসিটিকে কতটুকু ব্যবহার করতে পারছে এবং দেশটির অর্থনৈতিক তথা সামগ্রিক উন্নয়নে আইসিটি ব্যবহারের জন্য নিজেকে কতটুকু প্রস্ত্তত করতে পেরেছে। বেশ কিছু দেশের সরকার ইতোমধ্যেই তাদের প্রতিযোগিতার ও উন্নয়নের মাত্রা নির্ণয়ে এনআরআইকে মূল্যবান নির্ণায়ক যন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রতিবছর এই বিশ্ব আইসিটি রিপোর্ট প্রকাশ করে বিভিন্ন দেশের সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের সহযোগিতা করছে তাদের আইসিটি ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও সফলতা চিহ্নিত করতে এবং সে অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় নির্দেশে।

২০০২ সাল থেকে এই রিপোর্ট প্রণীত ও প্রকাশ হয়ে আসছে নিয়মিত। সেই থেকে লক্ষ করা গেছে, মোটামুটি নেটওয়ার্ক রেডিনেস ফ্রেমওয়ার্ক স্থিতিশীল রয়েছে। তা সত্ত্বেও এই সময়ে আইসিটি শিল্পে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। এবং পরিবর্তনের এ পথ ধরেই বিশ্বের প্রতিটি দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে চলছে ব্যাপক বদলে দেয়ার পালা। সোজা কথায় বিগত এই এক দশক সময়ে আমাদের পৃথিবী হয়ে উঠেছে আরো ‘হাইপারকানেকটেড’। আজ আমরা এমন একটা পরিবেশে বসবাস করছি, যেখানে ইন্টারনেট ও এর সহযোগী সেবায় আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রবেশ করতে পারি, যেখানে মানুষ তার ব্যবসায়িক যোগাযোগ সম্পন্ন করতে পারে চাওয়া মাত্রই এবং যেখানে যন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আন্তঃসংযোগ। এটাই হচ্ছে হাইপারকানেকটিভিটি। মোবাইল যন্ত্র, বিগ ডাটা ও সোশ্যাল মিডিয়ার নজির সৃষ্টিকারী অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এই হাইপারকানেকটিভিটির চালিকাশক্তি। এরই প্রভাবে আমরা সমাজে মৌল পরিবর্তন দেখতে শুরু করেছি। হাইপারকানেকটিভিটি ব্যক্তিবিশেষের মধ্যে সম্পর্কের সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে। তেমনি নতুন করে সংজ্ঞায়িত হচ্ছে ভোক্তা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের নাগরিকের মধ্যে সম্পর্ক। এর ফলে নতুন নতুন সুযোগের দুয়ার খুলছে উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে। সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে ব্যবসায়ের ধরন-ধারণ পাল্টে নতুন পণ্য ও সেবা সৃষ্টি করে ভোক্তার কল্যাণ সাধনের। তা সত্ত্বেও হাইপারকানেকটিভিটি আমাদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জেরও। এ চ্যালেঞ্জ আসতে পারে নিরাপত্তা, সাইবার অপরাধ, গোপনীয়তা, ব্যক্তিগত তথ্যপ্রবাহ, ব্যক্তিবিশেষের অধিকার ও তথ্যে প্রবেশের ক্ষেত্রে। প্রচলিত সংগঠনগুলো এবং শিল্পকাঠামো ও ইন্ডাস্ট্রি কনভার্জের ক্ষেত্রে মোকাবেলা করে চলেছে চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ অপরিহার্যভাবে প্রভাব ফেলবে নীতিপ্রণয়ন ও বিধিবিধান রচনায়। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এই হাইপারকানেকটিভিটির চ্যালেঞ্জের প্রভাব পড়বে ইনভেনটরি, পরিবহন ব্যবস্থাপনা, তারবিহীন লেনদেন, নৌ-যন্ত্রপাতি এবং আরো নানা কিছুর ওপর। জীবন ও কর্মে আইসিটির প্রভাবও দিনদিন বাড়বে, তা সুনিশ্চিত।

আলোচ্য গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্ট তথা জিআইটিআর প্রণয়নের লক্ষ্য হচ্ছে- আইসিটি ব্যবহার করে কোন দেশ এ প্রতিযোগিতায় কতটুকু এগিয়ে গেছে ও নাগরিক কল্যাণ কতটুকু করতে পেরেছে, তা পরিমাপ, চিহ্নিত ও বেঞ্চমার্ক করা। এই রিপোর্টে রয়েছে চারটি ধারণাগত (থিমেটিক) অংশ। প্রথম অংশে বর্ণনা রয়েছে ধারণাগত কাঠামো ও ২০১২ সালের এনআরআইয়ের সাথে এর সম্পর্কের। এ ছাড়া প্রথম অংশে হাইপারকানেকটিভিটির জেনারেল থিম সম্পর্কে বাছাই করা কিছু বিশেষজ্ঞের লেখাও সংযোজিত হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে দু’টি কেস স্টাডি, যাতে আজারবাইজান ও মৌরিতিয়াসের হাইপারকানেকটিভিটির উদ্যোগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তৃতীয় অংশে রয়েছে ১৪২ দেশের আলাদা আলাদা প্রোফাইল। এতে প্রতিটি দেশের নেটওয়ার্ক রেডিনেস চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বেশ কিছু চলকের বা ভেরিয়েবলের আন্তর্জাতিক তুলনাও দেখানো হয়েছে। রয়েছে এনআরআইয়ের উল্লেখ। চতুর্থ অংশে আছে ৫৩টি চলকের উপাত্ত-ছক বা ডাটা টেবল আর র‌্যাঙ্কিং। দুই শতাধিক পৃষ্ঠারও বেশি দীর্ঘ রিপোর্টের বিস্তারিত একটিমাত্র প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে তুলে ধরা একেবারেই অসম্ভব। তাই আমরা এ প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে আলোচ্য রিপোর্টির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ‘নেটওয়ার্ক রেডিনেস রিপোর্ট : ২০১২’-র ওপরই আলোচনা মূলত কেন্দ্রীভূত রাখার প্রয়াস পাব। তবে সেই সাথে থাকছে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিকের উল্লেখ। থাকছে এই রিপোর্টের আলোকে উঠে আসা বাংলাদেশ সম্পর্কিত প্রোফাইল।

এনআরআই : ২০১২

আগের বছরের রিপোর্টের মতো এবারের নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স তথা এনআরআই তৈরি করতে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন তথা আইটিইউ এবং জাতিসংঘ ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাগত উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। পাশাপাশি অবলম্বন করা হয়েছে এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভের ওপর। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রতিবছর এ সার্ভে বা মতামত জরিপ পরিচালনা করে। সার্ভে চলে আলোচ্য আইসিটি রিপোর্টের আওতাধীন সব দেশে। ২০১২ সালে এনআরআই প্রণয়নের ক্ষেত্রে এ সার্ভে চলেছে বিশ্বের ১৪২ দেশে, যা বিশ্বের ৯৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির ধারক-বাহক।

এনআরআই ফলাফলে সেরা সূচকধারী দশটি দেশই অগ্রসর অর্থনীতির দেশ। এই সেরা দশে প্রাধান্য রয়েছে নরডিক (প্রধানত স্ক্যান্ডিনেভীয় ও উত্তর ইংল্যান্ড) অঞ্চলের দেশগুলোর। সাথে আছে সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও নরওয়ে। এনআরআই তালিকার শীর্ষে রয়েছে সুইডেন। সেবা দশের দেশগুলো মোটামুটি কাছাকাছি দেশ। এসব দেশ সব বিবেচনায়ই মোটামুটি ভালো করেছে। সেরা দশের তালিকায় এসেছে যথাক্রমে : সুইডেন, সিঙ্গাপুর, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য। লক্ষণীয়, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অবস্থান এ ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৮ ও ১০ নম্বরে।

উপ-সাহারা ও আফ্রিকা অঞ্চল

রিপোর্ট মতে, আইসিটি রেডিনেসে উপ-সাহারীয় অঞ্চলের দেশগুলো এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এসব দেশের বেশিরভাগই বেশ পিছিয়ে আছে কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে। কারণ, সেখানে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে আইসিটি অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। এর ফলে ইন্টারনেট সংযোগ-ব্যয় সেখানে খুবই বেশি। এই পিছিয়ে থাকার পেছনের অন্যান্য কারণ হলো দক্ষতার অভাব এবং, ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব। উপ-সাহারীয় আফ্রিকীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আইসিটি রেডিনেসে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে মৌরিতিয়াস। রেডিনেস ইনডেক্সে এ দেশটির অবস্থান ৫৩তম অবস্থানে। এরপর এ অঞ্চলের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা রয়েছে ৭১তম স্থানে এবং নাইজেরিয়া ১১২তম স্থানে। এর আগে রয়েছে আফ্রিকীয় দেশ রুয়ান্ডা (৮২তম), বতসোয়ানা (৮৯তম), কেনিয়া (৯৩তম) এবং সেনেগাল (১০০তম) স্থানে। রিপোর্ট মতে, আফ্রিকার দেশগুলো রেডিনেস সূচকের সব উপাদানেই দুর্বল ফল প্রদর্শন করেছে। এর মধ্যে প্রধান প্রধান হলো অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, নিম্নমানের আইসিটি অবকাঠামো, দক্ষতার অভাব, প্রযুক্তিসমৃদ্ধ কর্মকান্ড প্রসারের সুযোগের অভাব।

তালিকার শীর্ষদেশ সুইডেন সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রদর্শন করেছে। রেডিনেস ইনডেক্সের ১০টি স্তম্ভের চারটিতেই সবার শীর্ষে রয়েছে এ দেশ। এ চারটি স্তম্ভ হচ্ছে : অবকাঠামো ও ডিজিটাল কনটেন্ট, ব্যক্তিগত ব্যবহার, ব্যবসায়িক ব্যবহার এবং অর্থনৈতিক প্রভাব। সুইডেনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। সিঙ্গাপুর এশীয় টাইগারদের মধ্যে সেরা অবস্থানে। তাইওয়ান ১১তম অবস্থানে। কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ১২তম এবং হংকং ১৩তম স্থানে। সুইডেনের তুলনায় সিঙ্গাপুরের পারফরম্যান্স প্রায় কাছাকাছি। নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর রাজনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক স্তম্ভসহ ১০ স্তম্ভের পাঁচটিতেই রয়েছে সবার শীর্ষে।

অষ্টম অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের পারফরম্যান্সও বেশ জোরালো। দেশটি আইসিটি ব্যবহার করছে সফলতার সাথে। তারপরও রাজনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দেশটিতে রয়েছে কিছু বাধা-বিপত্তি। এর ফলে এ ক্ষেত্রে দেশটির অবস্থান ২১তম স্থানে। আইন প্রণয়ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডে আছে দুর্বলতা।

ইউরোপ অঞ্চল

অর্থনৈতিক পরিবর্তনে আইসিটিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে গোটা ইউরোপ সবার আগে। রিপোর্টের র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা দশের সাতটিই ইউরোপের দেশ, যেখানে সুইডেনের অবস্থান শীর্ষে। তা সত্ত্বেও ইউরোপ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈষম্য। ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলের সামনে রয়েছে বিভিন্ন প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ। এসব অঞ্চল হচ্ছে : নরডিক দেশগুলো, অগ্রসর অর্থনীতির দেশ, পশ্চিম ইউরোপ, দক্ষিণ ইউরোপ এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপ। আইসিটি ব্যবহারে স্ক্যান্ডেনেভীয়, তথা নরডিক অঞ্চলের দেশগুলো খুবই সফল। এরা প্রতিযোগিতা কৌশলের সাথে আইসিটিকে পুরোপুরি সমন্বিত করতে পেরেছে। উদ্ভাবনের প্রসার ঘটাতে পেরেছে। সমাজের সব স্তরে সব জায়গায় আইসিটি পৌঁছাতে পেরেছে। শিক্ষায় ও স্বাস্থ্যসেবায় আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পেরেছে। সুইজারল্যান্ড (পঞ্চম), নেদারল্যান্ডস (ষষ্ঠ) ও যুক্তরাজ্য ছাড়া পশ্চিম ইউরোপের বাকি পাঁচটি দেশ-জার্মানি (১৬তম), অস্ট্রিয়া (১৯তম), লুক্সেমবার্গ (২১তম), বেলজিয়াম (২২তম) ও ফ্রান্স (২৩তম)-তালিকার ওপরের দিকেই রয়েছে। ১৬তম থেকে ২৩তম অবস্থানের মধ্যে থাকা এসব দেশ সার্বিকভাবে আইসিটি উন্নয়নে ভালো অবস্থানেই রয়েছে। তবে নরডিক দেশগুলোর পর্যায়ে নয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের দক্ষিণাংশের চারটি দেশের সব কটি-পর্তুগাল, স্পেন, ইতালি ও গ্রিস আইসিটির ক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে রয়েছে। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর আইসিটির চিত্রটা মিশ্র প্রকৃতির। চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্রের তুলনায় সামান্য কিছুটা পিছিয়ে আছে রুমানিয়া ও বুলগেরিয়া (যথাক্রমে ৪২তম, ৪৩তম, ৪৯তম, ৬৪তম, ৬৭তম এবং ৭০তম)। আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নে এসব দেশ অবশ্য বেশ ভালোই করেছে। তবে আইসিটি সেবার দাম এখনো এসব দেশে বেশি রয়ে গেছে, বিশেষত চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাক প্রজাতন্ত্রে।

কাজখস্তান, রাশিয়া, আজারবাইজান-এগুলো কমনওয়েলথ অব ইন্ডিপেনডেন্ট স্টেটস তথা সিআইএসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করতে পেরেছে। এগুলোর অবস্থান যথাক্রমে ৫৫তম, ৫৬তম ও ৬১তম স্থানে। এই তিনটি দেশেই সহনীয় ব্যয়ে আইসিটি অবকাঠামো ব্যবহার করা যায়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে আইসিটি ব্যবহারে সরকারের প্রতিশ্রুতি এখনো নিম্নপর্যায়েই রয়ে গেছে রাশিয়ায়।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির সম্পদশালী, উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন ডিজিটায়িত দেশ। সেই সাথে এ অঞ্চলে আছে বেশ কয়েকটি অতি গরিব দেশও। এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশে কানেকটিভিটি পরিস্থিতি খুবই নাজুক পর্যায়ের। সিঙ্গাপুর ছাড়া এ অঞ্চলের আরো ৬টি দেশের অবস্থান রেডিনেস ইনডেক্স তালিকার সেরা বিশে। তাইওয়ান ১১তম, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র ১২তম, হংকং ১৩তম, নিউজিল্যান্ড ১৪তম, অস্ট্রেলিয়া ১৭তম ও জাপান ১৮তম স্থানে। ৫১তম স্থানে থাকা চীন বিকাশমান অর্থনৈতিক দেশগুলোর জোট BRICS-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সেরা অবস্থানে রয়েছে। এরপরও চীনের সামনে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। এর ফলে দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে আইসিটিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। চীনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, বিশেষত এর ব্যবসায়িক পরিবেশে বেশ কিছু ঘাটতি বিদ্যমান, যার ফলে সেখানে প্রত্যাশিত মাত্রায় উদ্ভাবনা ও উদ্যোগ সংঘটিত হতে পারছে না। দেশটিতে আছে অতিরিক্ত মাত্রায় লাল ফিতার দৌরাত্ম্য, সুদীর্ঘ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া, অত্যুচ্চ করারোপ (মুনাফার ৬৪ শতাংশ) ও মেধাস্বত্বের অনিশ্চিত সুরক্ষা। অনুমিত হিসাব মতে, চীনে ইনস্টল করা সফটওয়্যারের ৮০ শতাংশই পাইরেটেড। আর সে দেশে নতুন টেকনোলজি পাওয়া যায় যেমনি সীমিত আকারে, তেমনি দেরিতে। রেডিনেস ইনডেক্সের অবকাঠামো ও ডিজিটাল কনটেন্ট স্তম্ভের ক্ষেত্রে চীনের অবস্থান ১০০তম স্থানে, যার প্রধান কারণ অনুন্নত ইন্টারনেট অবকাঠামো।

চীনের চেয়ে ২০ স্থান পেছনের ৬৯তম স্থানে রয়েছে ভারত। আইসিটি রেডিনেসে ভারতের পারফরম্যান্স ভালো-মন্দ মিলিয়ে মিশ্র পর্যায়ের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আছে উৎসাহব্যঞ্জক ফল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনের অনেক কিছুই করার বাকি। বেশ পিছিয়ে আছে রাজনৈতিক ও বিধিনিষেধ আরোপ পরিবেশের ক্ষেত্রে (৭১তম)। তেমনি পিছিয়ে ব্যবসায় ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে (৯১তম)। ব্যবসায়ের পথে বাধা হচ্ছে পরিব্যাপক লাল ফিতার দৌরাত্ম্য। দেশটিতে কর্পোরেট ট্যাক্স সবচেয়ে বেশি। ভারতে একটি চুক্তি কার্যকর পর্যায়ে নিয়ে পৌঁছাতে সময় নেয় ৪ বছর। একটি ব্যবসায় শুরু করতে প্রয়োজন সুদীর্ঘ সময় ও প্রচুর কাগজপত্র তৈরির। ব্যক্তিপর্যায়ের আইসিটি ব্যবহারের স্তম্ভে ভারত ১১৭তম স্থানে। প্রতি ১০০ জনে সেখানে ৬১ জন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। সাড়ে ৭ শতাংশ লোক ব্যবহার করে ইন্টারনেট। ৬ শতাংশ পরিবারের রয়েছে পিসি। প্রতি ১০০ জনে মাত্র ১ জন ব্রডব্যান্ডের গ্রাহক। এসব ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জনের জন্য প্রয়োজন দক্ষতা ও অবকাঠামোর উন্নয়ন। অবশ্য অ্যাফর্ডেবিলিটির ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান খুবই ভালো। কারণ, এ ক্ষেত্রে আছে তুমুল প্রতিযোগিতা। এর ফলে দেশটিতে আইসিটি রেডিনেসে বেশ একটা গতি এসেছে, যদিও পেনিট্রেশন এখনো বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মাঝে খুবই সীমিত। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোই এগিয়ে আসে সবার আগে। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানে দেশটির সরকার আইসিটি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করছে। এসব সমস্যার মধ্যে আছে কর্মসংস্থান, দুর্নীতি, লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ও শিক্ষা সম্পর্কিত সমস্যা। অর্থনীতি ও সমাজ পরিবর্তনের ব্যাপারে আইসিটির ওপর ভারত গুরুত্বারোপ করছে কি না, তা এখনো দেখার অপেক্ষায়। তবে ভারতে আইসিটি ছোট আকারে হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। দেশটির অর্থনৈতিক প্রভাব স্তম্ভে ৪১তম স্থানে অবস্থানের অবস্থাদৃষ্টে এ বিষয়টি স্পষ্ট।

নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে মালয়েশিয়ার অবস্থান ২৯তম স্থানে। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার অবস্থান সবার শীর্ষে। মালয়েশিয়ার চেষ্টা কোরিয়া ও অন্য এশীয় টাইগারদের সমকক্ষতা অর্জন। দেশটির সরকার লক্ষ্য বাস্তবায়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। চলতি দশক শেষ হওয়ার আগেই মালয়েশিয়া উঁচুমাত্রার আয়ের দেশ হতে চায়, আর এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে আইসিটির। সরকারসংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ সূচকে মালয়েশিয়ার এই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন রয়েছে। সরকারের আইসিটি ব্যবহারবিষয়ক স্তম্ভে মালয়েশিয়ার অবস্থান ষষ্ঠ স্থানে। এ অবস্থান অন্যান্য এশীয় টাইগারের কাছাকাছি। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো আগ বাড়িয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে। ক্রমবর্ধমান হারে এ ক্ষেত্রে এরা উদ্ভাবনীমূলক। আইসিটির ক্ষেত্রে সরকারের নেয়া এসব পদক্ষেপ দেশটির অর্থনীতি পাল্টে দেয়ার ওপর প্রভাব ফেলছে বলেই মনে হয়। সমাজেও আইসিটির প্রভাব সুস্পষ্ট। তবে ব্যক্তিপর্যায়ে আইসিটি ব্যবহারবিষয়ক স্তম্ভে দেশটির অবস্থান একটু পেছনেই, ৪৭তম স্থানে।

জাপানকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সুখ্যাত ‘ইনোভেশন পাওয়ারহাউস’। আইসিটি রেডিনেস সূচকে এ দেশটির অবস্থান ১৮তম স্থানে। নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সের পরিবেশগত উপসূচকে কিছু ঘাটতি থাকার কারণে জাপানের এই অবস্থান। সাথে আছে লাল ফিতার দৌরাত্ম্যের অভিযোগ। প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে জাপানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এর ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের ইনোভেশন প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন (তৃতীয় অবস্থান)। প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন জাপানকে করে তুলেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাপের উৎপাদনশীল অর্থনীতির দেশে। এই অর্থনৈতিক প্রভাব ছাড়া সমাজের ক্ষেত্রে সে অনুযায়ী প্রভাব ফেলতে পারেনি জাপান (২৬তম)। ব্যবসায়িক পরিবেশ খুবই অনুকূল। ডিজিটাল বিপ্লবের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রতিশ্রুতি আসছে সরকারের কাছ থেকে। এর ফলে জাপান হয়তো সৃষ্টি করতে পারে উন্নয়নের নতুন কোনো মডেল।

রেডিনেস সূচকে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ১৭তম স্থানে। দেশটির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও ব্যবসায়িক পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের অনুকূলে। পরিবেশগত উপসূচকে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ১২তম স্থানে। অস্ট্রেলিয়ার রেডিনেস অবস্থান আরো অনেক ওপরে উঠতে পারত, যদি না থাকত এর দুর্বল নীতিগত অবস্থান। ১০০তম স্থানে রয়েছে এর অ্যাফর্ডেবিলিটি স্তম্ভের অবস্থান। তবে সরকারের আইসিটি ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে বেশ ভালো নম্বর (অষ্টম অবস্থান)। তেমনি ভালো নম্বর সামাজিক স্তম্ভের। অষ্টম অবস্থানে থাকতে পেরেছে এ ক্ষেত্রেও।

তাইওয়ান রেডিনেসে ১১তম স্থানে। ১৯৮০-র দশকের পর থেকেই দেশটি সবার নজর কাড়ে ইলেকট্রনিক ও হাইটেক প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে। তখন থেকেই আইসিটি ছিল এর অর্থনৈতিক উন্নয়নের মুখ্য বিজারক। রেডিনেসে ভালো অবস্থান ধরে রাখার পেছনে তাইওয়ান সরকারের ভূমিকা বড় মাপের। সরকারের আইসিটি ব্যবহার স্তম্ভে তাইওয়ানের অবস্থান তৃতীয়, অর্থনৈতিক প্রভাব স্তম্ভে সপ্তম এবং সামাজিক প্রভাব স্তম্ভে দ্বিতীয়। তবে তাইওয়ান এর পলিটিক্যাল ও রেগুলেটরি স্তম্ভে সে অনুযায়ী ততটা ভালো নম্বর পায়নি (৩৭তম), যদিও ব্যবসায়িক ও উদ্ভাবনা স্তম্ভে দেশটির অবস্থান ষষ্ঠ স্থানে।

লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল

আইসিটিকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো বেশ পিছিয়ে রয়েছে। আইসিটি রেডিনেস র‌্যাঙ্কিংয়ে এ অঞ্চলের একটি দেশ সেরা ত্রিশে স্থান করে নিতে পারেনি। মাত্র সামান্য কয়টি দেশ প্রথম ৫০টি দেশের তালিকায় আসতে পেরেছে। বার্বাডোজ, পুয়ের্তোরিকো, চিলি ও উরুগুয়ে রেডিনেস সূচক তালিকায় যথাক্রমে ৩৫তম, ৩৬তম, ৩৯তম ও ৪৪তম স্থানে রয়েছে। আইসিটি রেডিনেসে পিছিয়ে থাকার পেছনে এ অঞ্চলের দেশগুলোর তিনটি প্রধান দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়েছে : আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ, দুর্বল দক্ষতা এবং আইসিটি ব্যবহারে সমাজের সক্ষমতার অভাব। সেই সাথে আছে উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবনার ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ। এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতিযোগিতার ক্ষমতা বাড়াতে হলে জ্ঞানভিত্তিক কর্মকান্ড আরো জোরদার করে তুলতে হবে।

দু’টি ছোট্ট ক্যারিবীয় দ্বীপদেশ বার্বাডোজ (৩৫তম) ও পুয়ের্তোরিকো (৩৬তম) এ অঞ্চলের মধ্যে আইসিটি ব্যবহারের সক্ষমতার সবচেয়ে এগিয়ে। উভয় দেশে রয়েছে উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকূল পরিবেশ। দেশ দু’টি উপকৃত হয়েছে এর উন্নত আইসিটি অবকাঠামো থেকে। তবে পুয়ের্তোরিকো মোবাইল কভারেজে (১২৩তম স্থান) বেশ পিছিয়ে আছে। বার্বাডোজের দক্ষতার মানের ভিত্তি (১০তম) খুবই ভালো অবস্থানে। তবে আইসিটি ব্যবহারের খরচ সেখানে এখানো বেশি (১০২তম)। পুয়ের্তোরিকোতে আইসিটি দক্ষতা আরো বাড়ানো প্রয়োজন (৭৮তম)। উভয় দেশের ক্ষেত্রেই আইসিটির উন্নয়ন ঘটেছে মূলত বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। বিশেষ করে এটি বেশি সত্য পুয়ের্তোরিকোর বেলায়। উভয় দেশে সরকারি পর্যায়ে আইসিটির উন্নয়ন পদক্ষেপ দুর্বল।

চিলির আইসিটি রেডিনেস অবস্থান ৩৮তম স্থানে। লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের তুলনায় এ অবস্থানকে ভালোই ধরতে হবে। উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ ও সুষ্ঠু আইনি কাঠামো থেকে দেশটি উপকৃত হয়েছে। এ দেশটিতে উদ্ভাবনা ব্যবস্থা সম্প্রতি উন্নত হতে শুরু করলেও তা এখনো রয়ে গেছে অপর্যাপ্ত পর্যায়ে। দেশটির আইসিটি উন্নয়নে এখনো বিরাজ করছে বেশ কিছু দুর্বলতা, যার জন্য দেশটির উন্নয়নে আইসিটিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। কোনো কোনো মাত্রায় অবশ্য এর আইসিটি অবকাঠামো ভালো স্কোর অর্জন করতে পেরেছে। বিশেষ করে মোবাইল কভারেজে এর স্কোর সর্বোচ্চ স্থানে (প্রথম)। তবে প্রযুক্তিগত প্রস্ত্ততিতে দেশটি বেশ পিছিয়ে। দেশটিকে আইসিটি সেবা পেতে হয় প্রচুর অর্থ খরচ করে (৮৯তম)। সর্বোপরি শিক্ষার মান খুবই নিচু। দক্ষতার ভিত্তি (৮৩তম) বতর্মান স্তর থেকে অনেক উপরে তুলে আনা না হলে আইসিটির উপকার ভোগ করা দেশটির পক্ষে সম্ভব হবে না। অনলাইন সার্ভিসের সুযোগ খুবই ভালো (১৮তম) হলেও বাসাবাড়িতে এর প্রবেশ এখনো সীমিত।

উরুগুয়ের অবস্থান ৪৪তম স্থানে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যেগুলো আইসিটির ওপর বেশ গুরুত্বারোপ করছে উরুগুয়ে এগুলোর মধ্যে অন্যতম। আইসিটি উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সরকারের ভূমিকাই এখানে প্রধান। সরকার দেশে একটি ভালো মানের আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তোলায় উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে। স্কুলছাত্রদের জন্য আইসিটি ব্যবহারের সুযোগ বিবেচনায় দেশটির অবস্থা ১১তম স্থানে। এ ক্ষেত্রে সরকারের নীতি হচ্ছে প্রতি ছাত্রের জন্য একটি কমপিউটার। এসব উদ্যোগ সত্ত্বে টেকনোলজিক্যাল রেডিনেসে দেশটির বর্তমান ৬৩তম স্থান থেকে আরো উপরে আসার দাবি রাখে। বিশেষ করে উন্নয়ন ঘটাতে হবে শিক্ষার মানে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান দুর্বলতার কারণে দেশটি আইসিটির সুফল পুরোমাত্রায় কাজে লাগাতে পারছে না। এ ছাড়া দুর্বলতা আছে ইনোভেশনে সিস্টেমে। বিশেষ করে কর্পোরেট পর্যায়ের দুর্বলতা দেশটির জ্ঞান-ঘন উদ্যোগে আশানুরূপ সক্ষমতা গড়ে উঠছে না।

পানামা ও কোস্টারিকা রেডিনেস ইনডেক্সে যথাক্রমে ৫৭তম ও ৫৮তম স্থানে। আইসিটি ব্যবহারে মোটামুটি একই স্কোর ও লেভেলে (৫৬তম ও ৬৩তম) থাকলেও দেশ দু’টির সামনে রয়েছে আলাদা আলাদা চ্যালেঞ্জ। আইসিটি রেডিনেসে উন্নয়ন ঘটাতে হলে উভয় দেশকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। উভয় দেশের রয়েছে আইসিটি অবকাঠামোর দুর্বলতা। পানামার দক্ষতার ভিত্তি নড়বড়ে। উরুগুয়ের দক্ষতার ভিত্তি ভালো।

রেডিনেস র‌্যাঙ্কিংয়ে ব্রাজিল ৬৫তম স্থানে। দেশটিতে ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আইসিটির ভালো ব্যবহার হচ্ছে (৩৩তম)। প্রাযুক্তিক সক্ষমতাও ভালো (৩১তম)। ইনোভেশন সিস্টেম সুষ্ঠু (২৯তম)। এসব শক্তিমত্তা থাকার পরও নতুন ব্যবসায় শুরু করার পরিবেশ ভালো নয় (১৩৮তম)। বলা ভালো খুবই খারাপ।

র‌্যাঙ্কিংয়ে কলম্বিয়া ৭৩তম স্থানে। দেশটিতে সরকারি সেবা অনলাইনে পাওয়ার ব্যাপক সুযোগ (নবম) রয়েছে। ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য নাগরিক সাধারণকে আইসিটি সেবায় অংশ নেয়াকে উৎসাহিত করছে (২৬তম)। তা ছাড়া তুলনামূলকভাবে দক্ষ আইসিটি জনগোষ্ঠী থাকায় (৫৮তম) দেশটি আইসিটি উন্নয়নে তা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তবে আইসিটির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করার মতো সক্ষমতার অভাব রয়েছে। ঘাটতি আছে আইসিটি অবকাঠামো ও ডিজিটাল কনটেন্টের ক্ষেত্রে (৮৮তম)। সেই সাথে রয়েছে উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের জন্য প্রতিকূল অবকাঠামোগত শর্ত। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নিচুমাত্রায় ব্যবহার হচ্ছে আইসিটি (৭১তম)। ব্যক্তিপর্যায়ে আইসিটি ব্যবহারের মাত্রাও কম (৭৬তম)। বাড়িতে মাত্র ২০ শতাংশ লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

মেক্সিকোর র‌্যাঙ্কিং ৭৬তম স্থানে। দেশটির সরকার অনলাইনে সেবা বাড়াতে জোরদার পদক্ষেপ নিয়েছে (৩৮তম)। উঁচুমানের সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট খুলে দেশটির নাগরিকদের ই-পার্টিসিপেশন বাড়িয়েছে। তারপরও দেশটিতে রয়েছে নানা দুর্বলতা। আইসিটি অবকাঠামো অপর্যাপ্ত (৮১তম)। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের ক্ষেত্রে ৮৭তম। টেলিযোগাযোগ ব্যয়বহুল (১০০তম)। শিক্ষার মান নিচু (১০৭তম)। এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে আইসিটির উৎপাদনশীল ব্যবহারের ওপর।

আর্জেন্টিনার অবস্থান ৯২তম স্থানে। এখানে আইসিটি অবকাঠামোর অবস্থা বেশ ভালোই (৫৮তম)। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারে দেশটির ৪১তম অবস্থানে। সাক্ষরতা বিচারে অবস্থান ৫১তম স্থানে। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহারে দেশটি পিছিয়ে (৮৬তম) থাকলেও ব্যক্তিপর্যায়ে কিছুটা এগিয়ে (৫৮তম)। আইসিটি ব্যবহার দেশটিতে প্রাধান্য পায়নি (১৩৪তম)। আইসিটি ব্যবহার খরচ ব্যয়বহুল (১০৩তম)। রাজনৈতিক ও রেগুলেটরি পরিবেশ ভালো নয় (১২২তম)। উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকের মুখোমুখি নানা অবকাঠামোগত বিধিনিষেধ।

এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে অবস্থান হচ্ছে : পেরু ১০৬তম, ভেনেজুয়েলা ১০৭তম, প্যারাগুয়ে ১১১তম, বলিভিয়া ১২৭তম, নিকারাগুয়া ১৩১তম ও হাইতি ১১২তম।

বাংলাদেশ প্রোফাইল

রেডিনেস ইনডেক্স তালিকায় আমাদের বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২ দেশের মধ্যে ১১৩তম। যেখানে ভারত ৬৯তম এবং পাকিস্তান ১০২তম স্থানে। মালয়েশিয়া ২৯তম। শ্রীলঙ্কা ও নেপাল যথাক্রমে ৭৩তম ও ১২৮তম স্থানে। এবং তালিকার সর্বনিম্ন ১৪২তম স্থানে রয়েছে হাইতি।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের চলতি বছরের গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্টে নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সে মোট স্কোর ৭-এর মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ৩.২। নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সকে আবার চারটি সাব-ইনডেক্স এবং মোট ১০টি পিলারে ভাগ করে প্রত্যেকটি দেশের আইসিটি পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয়েছে। চারটি সাব-ইনডেক্স হচ্ছে : এনভায়রনমেন্ট সাব-ইনডেক্স, রেডিনেস সাব-ইনডেক্স, ইউজেস সাব-ইনডেক্স এবং ইমপ্যাক্ট সাব-ইনডেক্স। আর পিলার বা স্তম্ভ ১০টি হচ্ছে : পলিটিক্যাল অ্যান্ড রেগুলেটরি এনভায়রনমেন্ট, বিজনেস অ্যান্ড ইনোভেটিভ, ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট, অ্যাফর্ডেবিলিটি, স্কিলনেস, ইন্ডিভিজুয়াল ইউজেস, বিজনেস ইউজেস, গভর্নমেন্ট ইউজেস, ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট এবং সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ স্কোর ৭ বিবেচনা করে প্রতিটি দেশের অবস্থান ও সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে।

উল্লিখিত চারটি সাব-ইনডেক্স বিবেচনায় দেখা গেছে : এনভায়রনমেন্ট সাব-ইনডেক্সে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্ক ১২৩তম এবং স্কোর ৩.২। রেডিনেস সাব-ইনডেক্সে র‌্যাঙ্ক ১০৩তম এবং স্কোর ৩.৯। ইউজেস সাব-ইনডেক্সে র‌্যাঙ্ক ১০৮তম এবং স্কোর ৩.০। আর ইমপ্যাক্ট সাব-ইনডেক্সে র‌্যাঙ্ক ১২৫তম এবং স্কোর ২.৭।

এনভায়রনমেন্ট সাব-ইনডেক্সের মধ্যে রয়েছে দুটি পিলার। এর প্রথম পিলার পলিটিক্যাল অ্যান্ড রেগুলেটরি এনভায়রনমেন্ট এবং দ্বিতীয় পিলার হচ্ছে বিজনেস অ্যান্ড ইনোভেশন এনভায়রনমেন্ট। এ দুই পিলারে বাংলাদেশের স্কোর যথাক্রমে ২.৭ ও ৩.৭ এবং অবস্থান যথাক্রমে ১৩০ ও ১০০। রেডিনেস সাব-ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তিনটি পিলার : ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট, অ্যাফর্ডেবিলিটি ও স্কিল। এই তিনটি পিলারে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্ক যথাক্রমে ১১৪তম, ৫৮তম ও ১২৫তম স্থানে এবং স্কোর যথাক্রমে ২.৯, ৫.৪ এবং ৩.৩। ইউজেস সাব-ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তিনটি পিলার : ইন্ডিভিজুয়াল ইউজেস, বিজনেস ইউজেস ও গভর্নমেন্ট ইউজেস। এই তিনটি ইউজেস পিলারে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্ক যথাক্রমে ১২৫তম, ১১৮তম ও ৫৬তম স্থানে আর স্কোর যথাক্রমে ১.৮, ৩.১ ও ৪.১।

অপরদিকে ইমপ্যাক্ট সাব-ইনডেক্সে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে দুটি পিলার : ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট ও সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট। এ দু’টি পিলারে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্ক যথাক্রমে ১২৫তম ও ১২০তম স্থানে এবং স্কোর যথাক্রমে ২.৫ ও ২.৯।

উল্লেখ্য, বর্ণিত ১০টি পিলারকে আবার বেশ কয়েকটি ইনডিকেটর বা নির্দেশকে ভাগ করে প্রতিটি ইনডিকেটরে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্ক ও স্কোর তুলে ধরা হয়েছে আলোচ্য গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্ট ২০১২-এ। নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্সের বিস্তারিত ছকে এর বিবরণ উল্লেখ রয়েছে।

শেষ কথা

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রণীত গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্টটি খতিয়ে দেখা প্রতিটি দেশের নীতি-নির্ধারকদের জন্য অপরিহার্য এক বিষয়। এই রিপোর্ট মনোযোগ দিয়ে পড়লে প্রতিটি দেশ আইসিটি জগতে তাদের নিজ নিজ অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে পারবে। স্পষ্ট হয়ে যায়, কোন কোন ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশটির দুর্বলতা রয়েছে, আর কোন কোন ক্ষেত্রে কতটুকু সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছে। আর সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারলে দেশের আইসিটি উন্নয়ন সঠিক পথে প্রবাহিত করা যায়। উন্নয়নের কথামালার এই বাংলাদেশে আইসিটি খাতের উন্নয়নের ও আইসিটিকে উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অনেক কথাই শুনি, কিন্তু বাস্তবতার সাথে এর ফারাক বিস্তর। এ বিভ্রান্তি থেকে বাঁচতে হলে ও আইসিটি জগতে আমাদের সত্যিকারের অবস্থান জানতে হলে আলোচ্য ‘গ্লোবাল ইনফরমেশন টেকনোলজি রিপোর্ট ২০১২’ একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এ লেখায় আলোচ্য টেকনোলজি রিপোর্ট থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সূচক, স্কোর ও আমাদের অবস্থান উল্লিখিত হয়েছে, তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় আর দশটি দেশের তুলনায় আমরা কতটুকু পিছিয়ে। আইসিটিকে সত্যিকার অর্থে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে আমাদের আরো কতটুকু পথ হাটতে হবে, তাও স্পষ্ট হয়ে যায়। অতএব আমাদের তাগিদ হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই রিপোর্টটি গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। আমরা যদি আমাদের আইসিটি খাতের সত্যিকার উন্নয়ন চাই, তবে এই রিপোর্টকে আমলে নিতেই হবে। মনে রাখতে হবে, শুধু কথামালা রচনা করে আইসিটি খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
নেটওয়ার্ক রেডিনেস ইনডেক্স ২০১২
সেরা দশ

০০১. সুইডেন.............০০৬. নেদারল্যান্ডস
০০২. সিঙ্গাপুর............০০৭. নরওয়ে
০০৩. ফিনল্যান্ড...........০০৮. যুক্তরাষ্ট্র
০০৪. ডেনমার্ক............০০৯. কানাডা
০০৫. সুইজারল্যান্ড........০১০. যুক্তরাজ্য

সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দশ

১৩৪. মাদাগাস্কার..............১৩৯. মৌরিতানিয়া
১৩৫. বার্কিনা ফাসো...........১৩৩. লেসোথো
১৩৬. সুয়াজিল্যান্ড..............১৪০. অ্যাঙ্গোলা
১৩৭. বুরুন্ডি...................১৪১. ইয়েমেন
১৩৮. চাদ......................১৪২. হাইতি

সূত্র : ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম

কজ ওয়েব
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা