বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু ১৯৯৩ সালে। শুরুতে তা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল না। ১৯৯৬ সালের ৬ জুন বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সে বছরই বাংলাদেশ প্রথম ভিস্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়। তখন প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের জন্য খরচ হতো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তখন সরকারিভাবে বিটিসিএল কোনো ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করত না। এরপরের ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা। দেশে দফায় দফায় ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো হলেও গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমেনি। বরং উল্টো নানা ধরনের প্যাকেজ আর অফারের পসরা সাজিয়ে গ্রাহকের পকেট কাটছে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং সেলফোন অপারেটরেরা। সম্প্রতি দেশে ইন্টারনেটের দাম কমানোর দাবিতে আন্দোলন চলছে। এরই মধ্যে কোনো কোনো অপারেটর ইন্টারনেটের দাম কমিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, যেসব প্যাকেজ সাধারণত ব্যবহার করা হয় না সেগুলোই কমিয়েছে অপারেটরগুলো। এদিকে দাম বেশি হলেও দেশের ইন্টারনেটের স্পিড ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে। গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো কার্যকর করার সরকারি উদ্যোগও লক্ষ করা যায় না। তাছাড়া দেশে কোটি কোটি টাকার ব্যান্ডউইডথ নষ্ট করা হলেও তা কোনোভাবেই কাজে লাগানো হচ্ছে না।
এদিকে দেশের মোবাইল অপারেটর সেবাদাতাদের অনেকেই মনে করে, এ খরচ কমে আসতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। বাজারে বহুমুখী প্রতিযোগিতায় এখনও ইন্টারনেট সেবাদাতারা প্রত্যাশিত মুনাফা থেকে অনেক দূরে। আর সে কারণেই ইন্টারনেট খরচ কমিয়ে আনতে সরকারকেই আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজনে এ খাতে ভর্তুকি দেয়ার কথাও চিন্তা করা যেতে পারে। দেশে ২০০৪ সালে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়। তখন মেগাবাইট পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) ব্যান্ডউইডথের দাম ৭২ হাজার টাকা ছিল। এর ৮ বছর পর এসে দাম হয়েছে ৪ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু দাম কমানোর বিপরীত চিত্রে কমেনি মোবাইলভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার ব্যয়। এদিকে ইন্টারনেটের দাম সাশ্রয়ী করতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন তথা বিটিআরসি নির্দেশনা জারির প্রক্রিয়া শুরু করলেও এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি। নিচে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম ও গতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হলো।
দেশে ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম
এখানে শুধু প্রি-পেইডের দামের তালিকা দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক অপারেটরের ইন্টারনেট থেকে এ তথ্যগুলো নেয়া হয়েছে। তবে স্পিড কত সে হিসেব বেশিরভাগ অপারেটর দেয়নি। নিচে এদের সর্বনিম্ন ও মাসিক প্যাকেজের তালিকা দেয়া হলো। এছাড়া যারা আরও বিস্তারিত জানতে চান তাদের জন্য প্রত্যেক অপারেটরের ইন্টারনেট প্যাকেজের বিস্তারিত লিঙ্ক দেয়া হলো।
প্রসঙ্গত, ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে সিটিসেল ও টেলিটক ছাড়া কোনো অপারেটরের প্যাকেজেই গতির বিষয়টি উল্লেখ নেই। ফলে আপলোড বা ডাউনলোডের গতি সম্বন্ধে কোনো ধরনের ধারণা পাওয়া যায় না। আগে থেকে ব্যবহার করছেন, এমন কারও কাছ থেকে জেনে নিয়ে অথবা নিজে ব্যবহার করে এসব অপারেটরের ইন্টারনেট সেবার গতি ও মানের বিষয়ে ধারণা পেতে হয়। খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সেলফোন অপারেটরদের দেয়া ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে ডাটা লস ছাড়াও বেশ কিছু অপ্রকাশ্য খরচ রয়েছে। এটা গ্রাহকের কাছ থেকেই আদায় করা হয়।
জিপির ১ জিবি ইন্টারনেটের দাম ২০৯৭১.৫২ টাকা!
* টেলিটক থ্রিজির ৪০ এমবি, মেয়াদ ৩ দিন প্যাকেজের দাম ২৫ টাকা। এর অর্থ ১ জিবির (১০২৪ এমবি) দাম ১৬৩৮.৪০ টাকা।
* গ্রামীণফোনের ১ কিলোবাইট প্যাকেজের দাম ২ পয়সা। তার মানে ১ এমবির (১০২৪ কিলোবাইট) দাম ২০.৪৮ টাকা এবং ১ জিবির দাম ২০৯৭১.৫২ টাকা।
* বাংলালিংকের ২ এমবি, মেয়াদ ১ দিন প্যাকেজের দাম ৪ টাকা। তার মানে ১ জিবির (১০২৪ এমবি) দাম ২০৪৮ টাকা।
* রবির ১ এমবি, মেয়াদ ১ দিন প্যাকেজের দাম ২ টাকা। তার মানে ১ জিবির (১০২৪ এমবি) দাম ২০৪৮ টাকা।
* এয়ারটেলের ১০ এমবি, মেয়াদ ১ দিন প্যাকেজের দাম ১১.৫০ টাকা। তার মানে ১ জিবির (১০২৪ এমবি) দাম ১১৭৭.৬০ টাকা।
* সিটিসেলের ২০০ এমবি, মেয়াদ ১ দিন প্যাকেজের দাম ৪০ টাকা। তার মানে ১ জিবির (১০২৪ এমবি) দাম ৫১২০ টাকা।
আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন
http://www.teletalk.com.bd/
http://grameenphone.com/bn/products-and-services/internet/
internet-packages
http://www.banglalinkgsm.com/en/value_added_services/
data_based_services/banglalink_internet
http://www.robi.com.bd/bangla/index.php/page/view/412
http://www.bd.airtel.com/services.php?cat_id=9&services_id=133
http://www.citycell.com/index.php/zoom_ultra/plan
http://www.banglalionwimax.com/index.php/ products-a-services/prepaid-plans
http://www.qubee.com.bd/prepay
ব্যান্ডউইডথের দাম কমলেও সুবিধা পান না গ্রাহক
বাংলাদেশে ইন্টারনেট যাত্রার ৯ বছরে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমেছে শতকরা ৮২ ভাগ। কিন্তু ভোক্তা পর্যায়ে এ হার ৪২ ভাগেরও কম। ওয়াইম্যাক্স অপারেটর কিউবি ও বাংলালায়ন এবং বিটিসিএল ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে আর কোনো ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যান্ডউইডথের দাম কমায়নি বললেই চলে। এ ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্যাকেজ আর অফার কিংবা গতি বাড়ানোর মধ্যেই কার্যত সীমাবদ্ধ সেলফোন অপারেটররা। বিভিন্ন সময়ে ব্যান্ডউইডথের দাম ছিল নিন্মরূপ :
সাল-----------------------দাম
১৯৯৩------------------প্রযোজ্য নয়
১৯৯৬------------------১ লাখ ২০ হাজার টাকা
২০০৪-------------------৭২ হাজার টাকা
২০০৮------------------ ২৭ হাজার টাকা
২০০৯-------------------১৮ হাজার টাকা
২০১১--------------------১২ হাজার টাকা
২০১১--------------------১০ হাজার টাকা
২০১২---------------------৮ হাজার টাকা
২০১৩---------------------৪ হাজার ৮০০ টাকা
ব্যান্ডউইডথের দাম কমিয়ে কী লাভ হলো
গত ১ মে থেকে ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো হয়েছে। ৮ হাজার টাকার ব্যান্ডউইডথের বর্তমান দাম ৪ হাজার ৮০০ টাকা। কিন্তু ৪ হাজার ৮০০ টাকার ব্যান্ডউইডথ ইন্টারনেট প্রোভাইডারেরা কত টাকায় বিক্রি করছে? নিচে এর একটি হিসাব দেয়া হলো :
টুজি
ইন্টারনেট প্রোভাইডার কিনে বিক্রি করে
গ্রামীণফোন ৪,৮০০ টাকায় ৪৩,৩৫০X৬০,০০০ টাকায়
বাংলালিংক ৪,৮০০ টাকায় ৩৩,২৮০X৪০,০০০ টাকায়
রবি ৪,৮০০ টাকায় ৩৮,২৫০X৫০,০০০ টাকায়
এয়ারটেল ৪,৮০০ টাকায় ৩৮,০৯৭X৪৫,০০০ টাকায়
টেলিটক ৪,৮০০ টাকায় ৩০,৬০০X৪০,০০০ টাকায়
থ্রিজি
ইন্টারনেট প্রোভাইডার কিনে বিক্রি করে
টেলিটক ৪,৮০০ টাকায় ২৪,০০০X২৮,০০০ টাকায়
ফোরজি
ইন্টারনেট প্রোভাইডার কিনে বিক্রি করে
বাংলালায়ন ৪,৮০০ টাকায় ২০,০০০ু২৩,০০০ টাকায়
কিউবি ৪,৮০০ টাকায় ২২,০০০ু২৫,০০০ টাকায়
দেশে মাত্র ২২ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার হয়
যতদিন পর্যন্ত আমাদের ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি ৪৫ গিগাবাইট ছিল, ততদিন আমরা এর মধ্যে মাত্র ১০ গিগাবাইট ব্যবহার করতাম। বিএসসিসিএলের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (ব্যান্ডউইডথ) জাকিরুল আলম জানান, এখন আমরা ১৪৫ গিগাবাইটের মধ্যে ব্যবহার করছি মাত্র ২৬ গিগাবাইট। বেসরকারি হিসেবে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির সিমিউই৪-এর কক্সবাজার সংযোগে ১৬৪ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ রয়েছে। সে হিসেব থেকে আমরা ব্যবহার করছি মাত্র ২২ গিগাবাইট। সরকারি হিসেব অনুযায়ী অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথের পরিমাণ প্রায় ১২০ গিগাবাইট। অভিযোগ উঠেছে, একটি সিন্ডিকেট অবশিষ্ট ১২০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ অবৈধ ভিওআইপি কলে গোপনে ডাইভার্ট করে প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি মিনিট আন্তর্জাতিক কল আনছে। এর মাধ্যম্যে মুষ্টিমেয় কিছু লোক আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ আছে, এর সাথে জড়িত প্রভাবশালী মহলের কারণেই বিটিআরসির কোনো উদ্যোগই ভিওআইপি বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারছে না। ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারকারী, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, একশ্রেণীর লোকের স্বার্থেই মহামূল্যবান ব্যান্ডউইডথ অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে সরকারেরই একটি মহল। এই ব্যান্ডউইডথ দিয়ে চলছে রমরমা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়। ফলে ভিওআইপি খাত থেকে দিন দিন সরকারের আয় কমছে। অন্যদিকে ব্যাপক অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে ওই ব্যবসায়ীরা। একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে এ ব্যবসায় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য। এদের যোগসাজশেই সাধারণ গ্রাহকেরা উচ্চমূল্যের ব্যান্ডউইডথের জাঁতাকলে চাপা পড়ে আছেন।
নতুন আরও ১৬০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ যোগ হচ্ছে
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড তথা বিএসসিসিএল জানিয়েছে, সিমিউই৫ ক্যাবল কনসোর্টিয়ামে যুক্ত হওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। এখন কাজ হচ্ছে অর্থ সংগ্রহ করা। দ্বিতীয় ক্যাবলটির সাথে যুক্ত হতে পারলে দেশে নিরবচ্ছিন্ন ব্যান্ডউইডথ থাকবে। কোনো কারণে একটি ক্যাবল কাটা বা বন্ধ থাকলে অন্য ক্যাবলের মাধ্যমে ব্যাকআপ রাখা যাবে। সব দিক চিন্তা করে মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে যুক্ত হওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এতে বাড়তি আরও ১৬০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ যোগ হবে। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন, নতুন গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ যোগ করে সাধারণ মানুষের লাভ কী? এটা হয় অব্যবহৃত থাকবে, নয়ত ভিওআইপির মতো কোনো প্রজেক্টে ব্যবহার করা হবে।
ব্যান্ডউইডথ জমানোর সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী
প্রতি সেকেন্ডে ১ মেগাবাইট ব্যান্ডউইডথের দাম এখন ৪ হাজার ৮০০ টাকা। এ হিসেবে শত কোটি টাকার ওপরে বহু মূল্যবান ব্যান্ডউইডথ সরকার ফেলে রেখেছে। আর ব্যবহার করছে মাত্র ২৬ কোটি টাকার ব্যান্ডউইডথ। অন্যদিকে কনটেন্টের হিসেব ধরলে এ ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। সরকারি হিসেব মতে, সাবমেরিন ক্যাবলে গত তিন বছরে প্রায় ৩০ লাখ টেরাবাইট কনটেন্ট অব্যবহৃত ছিল। অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথের পরিমাণের বাজার মূল্যটা অকল্পনীয়। ২.৫ গিগাবাইট কনটেন্ট ডাউনলোড করতে আমাদের দিতে হয় ৬০০ টাকা। এ হিসেবে প্রতি গিগাবাইট ন্যূনতম ১০০ টাকা করে ধরলেও এ ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার না করা মানে অপচয় করা। কারণ ব্যান্ডউইডথ সংরক্ষণ করার বস্ত্ত নয়। এটি টাকা নয় যে কোনো ব্যাংকে জমা করবেন। গ্রামীণের পি২ প্যাকেজ নিয়ে আপনি ব্যবহার না করলেও যেমন মাস শেষে থাকবে না, তেমনি ১৬৪ জিবিপিএসের ২২ জিবিপিএস ব্যবহার করলেও বাকিটুকু আমরা সঞ্চয় করতে পারব না। অথচ আমাদের নীতিনির্ধারকরা ব্যান্ডউইডথ সংরক্ষণের নীতি গ্রহণ করেন! আরও খবর, ওই মুহূর্তে সারাদেশে ২২ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার হচ্ছে এবং বাড়তি ব্যান্ডউইডথ সরকার ২০১৩-১৪ সাল পর্যন্ত চাহিদার কথা বিবেচনা করে সংরক্ষণ ও রফতানি করার চিন্তাভাবনা করছে। সরকার যদি পুরো ব্যান্ডউইডথ ব্যবহারকারীদের জন্য ছেড়ে দেয় তাহলে এখন দেশের ইন্টারনেট স্পিড সাতগুণ বেড়ে যাবে। প্রচুর পরিমাণ ব্যান্ডউইডথ অব্যবহৃত রাখার পরও দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। যদিও বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বিশ্বের সর্বনিম্ন গতিতে কাজ করেন। আবার দাম দেন সারাবিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার না করে মূর্খের মতো জমিয়ে রাখার আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের কারণেই এমনটা হচ্ছে। স্বাভাবিক উন্নয়নে এ অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথের পরিমাণ আরও বাড়বে।
৩ বছরে ব্যান্ডউইডথে ক্ষতির টাকায় একটি পদ্মা সেতু!
দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের অর্ধেক জনগণ নিয়েও এ মুহূর্তে ১১টি ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে ২৫ টেরাবিট/সেকেন্ড বা ২৫০০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ব্যবহার করছে। আর আমরা ১৬ কোটি জনগণের বাংলাদেশ মাত্র ১৬৪ জিবিপিএসের মধ্যে মাত্র ২৬ জিবিপিএস ব্যবহার করছি এবং ১৪২ জিবিপিএস ফেলে দিচ্ছি। সরকার যে হিসেব দিয়েছে সে মতেই এ ফেলে দেয়া বা অব্যবহৃত ব্যান্ডউইডথের পরিমাণটার বাজার মূল্য একটু দেখা যাক! সাবমেরিন ক্যাবলে গত ৩ বছরে (৩০*৬০*৬০*২৪*৩৬৫*৩) ভাগ ১০০০ = ২৮,৩৮,২৪০ টেরাবিট বা প্রায় ৩০ লাখ টেরাবিট কনটেন্ট অব্যবহৃত ছিল। এখন প্রতি জিবি ১০০ টাকা করে ধরলেও এ ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ২৮,৩৮,২৪০*১০০*১০০০ = ২৮৩,৮২,৪০,০০,০০০ টাকা বা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ টাকা দিয়ে পদ্মা সেতু বানানো হলেও বেশ কিছু টাকা থেকে যেত।
বাংলাদেশে ৪ হাজার টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৬০ টাকা!
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি মেগাবাইট/সেকেন্ড ব্যান্ডউইডথের দাম ৪ হাজার ৮০০ টাকা। যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৭ ডলার বা ৫৬০ টাকা। গ্রাহক পর্যায়ে এখানে ১ মেগাবাইট ডাউনলোড স্পিডের প্যাকেজ ২ হাজার ২০০ টাকার ওপরে। যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৪ ডলার বা ৩২০ টাকা। আবার বাংলাদেশে ডাউনলোডের সীমা দেয়া থাকে। ১ মেগাবাইটের গ্রাহককে সাবধান করে দেয়া হয় ৬০ গিগাবাইটের বেশি ডাউনলোড না করার জন্য। বেশি ডাউনলোড করলে এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের লাইন স্পিড কমিয়ে দেয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের কোনো বিধিনিষেধ নেই।
ইন্টারনেট প্যাকেজ : অতীত-বর্তমান
* সিটিসেল ইন্টারনেট সেবা চালু করে ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি। তখন ২৩৬ কেবিপিএস সংযোগের ৬ জিবির ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহারে গ্রাহককে খরচ করতে হতো ৭ হাজার টাকা। ২০০৫ সালে জুম আল্ট্রা ৫১২ কেবিপিএস প্যাকেজ দিয়ে ৫ জিবি সংযোগের দাম নির্ধারণ করা হয় ৩ হাজার ৫০০ টাকা। এখনও এ দামই বর্তমান রয়েছে।
* শুরুতে ১ হাজার টাকা দিয়ে ইন্টারনেট সেবা চালু করা সেলফোন অপারেটর রবি এক পর্যায়ে মাসে ৭৫০ টাকায় আনলিমিটেড ব্যবহারের একটি প্যাকেজ ছাড়ে। বর্তমানে এই প্যাকেজ ৫ জিবিতে সীমিত করে ৬৫০ টাকা করা হয়েছে।
* একই অবস্থা বাংলালিংক ইন্টারনেট সংযোগের। সর্বোচ্চ ২৩৬ কেবিপিএস সংযোগ মূল্য ৬৫০ টাকা। তবে এ প্যাকেজটি আনলিমিটেড।
* অপরদিকে টেলিটক থ্রিজি ৫১২ কেবিপিএসের দাম ১৫০০ টাকা এবং টুজির দাম ৬০০ টাকা।
মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমাল চার অপারেটর
বাংলাদেশে সম্প্রতি ইন্টারনেটের দাম কমানোর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের চার শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর তাদের ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের দাম কমিয়েছে। মূলত যারা কম পরিমাণে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ হারে গ্রামীণফোন রবি, বাংলালিংক এবং এয়ারটেল এ দাম কমিয়েছে। জুলাইয়ের শুরু থেকেই নতুন দামের তালিকা কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগে সব অপারেটরেরই ‘পি ওয়ান’ বা ‘পে অ্যাজ ইউ গো’ প্যাকেজের জন্য গ্রাহক প্রতি কিলোবাইটের দাম দিতেন ২.০ পয়সা হারে। ২০০৪ সালে নির্ধারিত এ দাম ২০১৩ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি গ্রামীণফোন ১.০ পয়সা এবং ১.৫ পয়সা নামিয়ে এনেছে রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল। একই সাথে আগে তারা প্রতি মেগাবাইট সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছে। এখন থেকে সেটি সর্বোচ্চ ১৫ টাকায় বিক্রি করবে। নিম্নে দাম কমানোর হার দেখানো হলো।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট : দামে শীর্ষে, গতিতে সবার নিচে!
বর্তমান শতাব্দীতে এসে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের যে গতি, তা বিশ্ব প্রেক্ষিতে দুঃখজনক। নববইয়ের দশকে ইউরোপ-আমেরিকা ছাড়াও এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার অনেক দেশ তাদের ডিজিটাল টেলিফোন লাইনগুলো অপটিক ক্যাবল দিয়ে প্রতিস্থাপন করে ব্যবহারকারীদের ১ এমবিপিএস গতির ব্যান্ডউইডথ দেয়া শুরু করে। ১৯৯৬ সালের মধ্যে সারাবিশ্বে মোবাইল ইন্টারনেট চলে আসায় জিপিআরএস ও ইডিজিই টেকনোলজিতে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদেরও ৪০ কিলোবাইট/সেকেন্ডের কম ব্যান্ডউইডথ পাওয়ার রেকর্ড নেই। এরপর আছে থ্রিজি, ফোরজি ব্যবস্থা। কিন্তু এত কিছুর পরও ২০১৩ সালে বাংলাদেশের জনগণ ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে ৩০ কেবিপিএস গতির ইন্টারনেট। তাও বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি দামের বিনিময়ে!
১ মেগাবাইট নিচের গতিকে ব্রডব্যান্ড বলা হয় না
আজকের দিনে ১ মেগাবাইট নিচের গতিকে ব্রডব্যান্ড বলা হয় না। ব্রডব্যান্ডের সংজ্ঞায় ৫ মেগাবাইট করার দাবি উঠছে আজকাল। সেখানে বাংলাদেশের টেলি আইনে ২৫৬ কিলোবাইট/সেকেন্ড ও এর বেশি গতিকে ব্রডব্যান্ড বলা হয়। কিছুদিন আগে বিটিআরসি থেকে এক প্রজ্ঞাপনেও বলা হয়েছে, ১ মেগাবাইটের নিচের গতিকে ব্রডব্যান্ড বলা যাবে। কিন্তু এর এখনও সমাধান হয়নি। ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কে ইন্টারনেটে অস্ট্রেলিয়া ২৪তম অবস্থানে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ইন্টারনেটের গড় গতি ৪.৯ মেগাবাইট/সেকেন্ড। আর আমাদের গড় গতি সেখানে ২৫৬ কিলোবাইট/সেকেন্ড মাত্র। অথচ সরকারি ভাষ্যমতে আমরা ফেলে রেখেছি প্রায় ১২০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইডথ।
মোবাইল ব্রডব্যান্ড গতিতে শীর্ষে কানাডা
বিশ্বে মোবাইল ব্রডব্যান্ড গতিতে শীর্ষে অবস্থান করছে কানাডা। সম্প্রতি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি সিসকো সিস্টেমস উচ্চগতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড সংযোগের বিশ্বের শীর্ষ ২০ দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। ৪ দশমিক ৫২৯ এমবি গতি নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে কানাডা। ২০১৭ সালে তাদের গতি ১৪ দশমিক ৫৮৫ এমবিতে উন্নীত হবে। তালিকায় শেষ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের পাশের দেশ ভারত। তাদের বর্তমান মোবাইল ব্রডব্যান্ড গতি শূন্য দশমিক ৯৯ এমবি এবং আগামী ২০১৭ সালে তাদের গতি হবে ২ দশমিক ৪৬২ এমবি। মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি সিসকো সিস্টেমস এভাবে উচ্চগতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড সংযোগ সংবলিত বিশ্বের শীর্ষ ২০ দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় একই সাথে ২০১৭ সাল নাগাদ দেশগুলোর সম্ভাব্য মোবাইল ব্রডব্যান্ড গতির গড় তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। তালিকায় থাকা দেশগুলোর নাম, ২০১২ সাল পর্যন্ত তাদের মোবাইল ব্রডব্যান্ড গতি এবং আগামী ২০১৭ সালে তাদের মোবাইল ব্রডব্যান্ড গতি কোন জায়গায় থাকবে তার বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
৩০ কোটি ডলার দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবার উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া ৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। এ উপলক্ষে গত ৬ জুন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের মধ্যে একটি কাঠামোগত ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটি বাস্তবায়িত হবে ২০১৪ সালের মধ্যে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেট ব্যবস্থায় যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হবে বলে মনে করে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার। বাংলাদেশের ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানো, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন, তারবিহীন ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক স্থাপন ও উপকূলীয় এলাকায় চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) নেটওয়ার্ক চালু করার লক্ষ্যে এ ঋণ সহায়তা দেবে দক্ষিণ কোরিয়া। এখন বাংলাদেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে আমলাদের ইন্টারনেট নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তের জন্য। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়লে এ প্রকল্পও আলোর মুখ দেখবে না।
সংশ্লিষ্টরা যা বললেন...
ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের নতুন দাম প্রসঙ্গে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসওএম কলিম উলস্নাহ জানান, সরকার ইন্টারনেটের দাম কমানোর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধাও ঘোষণা করেছে। মাসিক খরচ ৪ হাজার ৮০০ টাকার ওপর সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৫ শতাংশ, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্র, সামরিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশ এবং সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশ হারে ছাড় দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি মো: আক্তারুজ্জামান বলেন, ব্যান্ডউইডথের দাম কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমানোর খুব একটা সুযোগ নেই। আমাদের লক্ষ্য ভালো সেবা দেয়া। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো সেবা দিতে সবসময় প্রতিযোগিতার মধ্যেই থাকে। যত বেশি ভালো সেবা দেয়া সম্ভব, সেটাই আমরা চাই। তা ছাড়া সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতাও আছে। ব্যান্ডউইডথের পাশাপাশি ভ্যাটও কমাতে হবে। শুধু ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর বিষয়টিই মুখ্য নয়, পাশাপাশি অন্য বিষয়গুলো মাথায় রাখলে গ্রাহকদের উন্নত সেবা দিতে আমাদের সমস্যা থাকার কথা নয়। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম কমানোর সাথে ভোক্তাদের সেবার খরচও কমিয়ে আনা হচ্ছে। তবে মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে হিসেবটা একেবারেই ভিন্ন। দেশে এখন ইন্টারনেটভিত্তিক কনটেন্টের (অডিও, ভিডিও, লাইভ খবর-মিডিয়া) ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে ইন্টারনেট চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু ইন্টারনেট মোবাইলমুখী হওয়ায় তা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সাথে পালস্না দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান দামের প্রেক্ষাপটে ১ হাজার টাকায় ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের দাম ৭০০ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে পাড়া-মহলস্নাভিত্তিক ইন্টারনেট গতির প্রশ্নে অভিযোগ আছে, এটা সত্য।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মাওলা ভুঁইয়া বলেন, মোবাইলে ব্যবহৃত ইন্টারনেটের বিল কমানো হবে। তবে সেটা কতটা কমানো হবে তা এখন বলা যাচ্ছে না। মোবাইলে ব্যবহৃত ইন্টারনেট বিল কমাতে মোবাইল অপারেটরদের সাথে বৈঠক করা হচ্ছে। ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো হলেও মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবার দাম সে অনুযায়ী কমেনি। তবে ইতোমধ্যে কয়েকটি অপারেটর একটি প্যাকেজের দাম কমিয়েছে। আশা করি শিগগিরই অন্যান্য প্যাকেজের দামও কমানো হবে। আমি মোবাইল অপারেটরদের সাথে কথা বলেছি। তারা জানিয়েছে, তাদের নির্ধারিত ইন্টারনেট বিলের ব্যান্ডউইডথের খরচ ৪ শতাংশ। বাকিটা তাদের মেইনটেন্যান্স এবং অবকাঠামোতে ব্যয় হয়। দেশে যারা ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য আন্দোলন করছে তাদের সাথেও কথা বলেছি। তাদের দাবিগুলোও বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে হবে, আবেগ দিয়ে ফলাফল আসবে না।
বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মোস্তাফা জববার বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি, ইন্টারনেটের ওপর থেকে সরকারের ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমাতে হবে। কিন্তু এতদিনেও ব্যাপারটা সরকারের নজরে আসেনি। ইন্টারনেটের ওপর বছরের পর বছর ১৫ শতাংশ ভ্যাট রাখার কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য সরকার ও বিটিআরসিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দুঃখের বিষয়, মোবাইল অপারেটরগুলো নিজেদের ইচ্ছে মতো প্যাকেজ তৈরি করে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ এসব ব্যাপারে বিটিআরসি নীরব ভূমিকা পালন করছে। সরকার ব্যান্ডউইডথের দাম কমিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। অথচ ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো হলেই ইন্টারনেটের দাম কমানো সম্ভব নয়। এজন্য আনুষঙ্গিক অন্যান্য চার্জও কমাতে হবে। আমি মনে করি সরকার উদ্যোগী হলে ইন্টারনেটের দাম কমানো কঠিন কিছু নয়।
ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের কমপিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেকচারার মো: আনোয়ারুল আবেদীন বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে টেকসই উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা-২০০৯ নির্ধারণ করা হয়েছে। ইন্টারনেটের দাম বাড়বে না কমবে, কমলে কতটুকু কমবে- এসব সিদ্ধান্তে সেই নীতিমালার প্রতিফলন থাকা উচিত ছিল। ইন্টারনেটের দাম কমানো হলেই যে তথ্যপ্রযুক্তিতে টেকসই উন্নয়ন হবে, এমনটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। গ্রাহকদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইন্টারনেটের দাম কমানো ইতিবাচক একটি বিষয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে বলেই আমার বিশ্বাস। তবে যেসব কোম্পানি অনেক অর্থ বিনিয়োগ করে আইএসপি তথা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, আইআইজি তথা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে ইত্যাদি ব্যবসায় শুরু করেছে, তাদের প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসায়ের সুযোগ নিশ্চিত করাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে ইন্টারনেট সেবার খরচ কমিয়ে আনলে কী ধরনের ব্যবসায়ের সুযোগ তৈরি হবে এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি শামীম আহসান বলেন, দেশের ৫০ হাজার মানুষ এখন আউটসোর্সিংয়ে নির্ভরশীল। এ খাতে বাংলাদেশের বার্ষিক আয় এখন ৩ কোটি ডলার। সুতরাং, ইন্টারনেটের খরচ কমিয়ে আনলে এ খাতের উদ্যোক্তারা প্রণোদনা পেতেন। তিনি আরও বলেন, এর ফলে আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশে লাখেরও বেশি আউটসোর্স কর্মী তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর এ খাতের আয় তখন ১৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই দেশের আইসিটি শিল্পের দ্রম্নত বিকাশ এবং দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবার খরচ সাশ্রয়ী, সেবাবান্ধব এবং সহজলভ্য করতে হবে। বিপরীতে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া দেশে ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সেবাদাতা কিউবি এবং বাংলালায়ন এখনও গ্রাহকবান্ধব সেবা নিশ্চিত করতে পারেনি। ঢাকা শহরেই বিভিন্ন স্থানে এখনও ইন্টারনেট সেবায় বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন ওয়াইম্যাক্স গ্রাহকেরা। সুষ্ঠু নেটওয়ার্ক বিন্যাস ছাড়াই গ্রাহক বাড়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে ইন্টারনেট সেবা স্বল্পদামে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
সিটিসেলের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পিআর তাসলিম আহমেদ জানান, গত কয়েক বছরে যেভাবে ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো হয়েছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এ সেবা চালুর প্রথমদিকে প্যাকেজের যে দাম ছিল, তা এখন অনেকটাই কমে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রে দাম না কমানো হলেও ইন্টারনেটের গতি বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের অফার গ্রহণের সুযোগও রাখা হয়েছে গ্রাহকের জন্য। সব মিলিয়ে এ খাতে খরচের বিষয়গুলোকে সমন্বয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের সেবা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট সিটিসেল।
তথ্যপ্রযুক্তি আন্দোলনের সমন্বয়ক জুলিয়াস চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম অনুষঙ্গ ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় বাধা ফ্রিকোয়েন্সি বা স্পেকট্রামের উচ্চমূল্য। কিন্তু এ উচ্চমূল্য গ্রাহক পর্যায়ে কমাতে কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না। আর আইএসপিগুলো স্বেচ্ছাচারী ও প্রতারক। গ্রাহক ঠকানোই এদের কাজ। সেবা তো দূরের কথা, কলসেন্টারে ফোন করলে এরা মিউজিক শোনায়, অপেক্ষা করতে বলে, চার্জ কেটে নেয়। ইন্টারনেট সার্ভার ডাউন থাকলেও গ্রাহকদের জানার সুযোগ দেয় না। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিটকের কলসেন্টারে বেশিরভাগ সময়ই ফোন ধরে না। তিনি আরও বলেন, গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট ডাটা শেষ হয়ে গেলে আইএসপিগুলো জোর করে চাপিয়ে দেয়া পি-১ প্যাকেজের আওতায় প্রতি গিগাবাইট ২১ হাজার টাকা হিসেবে অ্যাকাউন্টে থাকা সমুদয় টাকা কেটে নেয়। বাংলালায়ন, কিউবি, ওলোসহ ওয়াইম্যাক্স কোম্পানি, ব্রডব্যান্ড ও টেলিকম আইএসপিগুলোর ৪/৫ দিন পর্যন্ত সার্ভিস বন্ধ থাকলেও মাসিক প্যাকেজ হিসেবে ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ওই সময়ের ডাটা বা তার দাম আত্মসাৎ করে ।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : mmrsohelbd@gmail.com