লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
আইসিটি খাতের নানা অনিয়ম
আইসিটি খাতের নানা অনিয়ম
আমরা, সেই সাথে দেশে প্রযুক্তিপ্রেমী সাধারণ মানুষ বরাবর প্রত্যাশায় থাকি আমাদের আইসিটি খাতে আশা জাগানিয়া সুসংবাদ শোনার জন্য। কখনও কখনও সেই সুসংবাদ যে আমাদের দরজায় এসে কড়া নাড়ে না তা নয়। যেমন অতি সম্প্রতি আমরা প্রবেশ করেছি থ্রিজির যুগে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভারত, মালদ্বীপের পর বাংলাদেশ সবে মাত্র থ্রিজি মোবাইল প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করল। বাকি রইল এ অঞ্চলের দেশ পাকিসত্মান। তবে খুব শিগগিরই পাকিসত্মান থ্রিজি যুগে পদার্পণের অপেক্ষায়। সে যা-ই হোক, একটু দেরিতে হলেও থ্রিজি যুগে উত্তরণ করেছি, আমাদের জন্য সেটাই সুসংবাদ। কিন্তু এই একটি মাত্র জায়মান শুভ সংবাদের বিপরীতে আমাদের আইসিটি খাতে ছড়াছড়ি নানা দুঃসংবাদের, যা সত্যিই আমাদের হতাশ করে। সর্বসম্প্রতি এমনি কয়টি দুঃসংবাদে অন্তর্ভুক্ত আছে : বিটিআরসির ১২০০ কোটি টাকা পাওনা আইজিডব্লিউগুলোর পরিশোধ না করা, চার মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি সিমট্যাক্স ফাঁকি দেয়া এবং লাইসেন্স ছাড়া ট্রান্সমিশন ব্যবসায় অবাধে চলতে দেয়া। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার, এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন মহল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের মতো অপরাধ অব্যাহতভাবে অনেকটা অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক প্রকাশ করে ‘১২০০ কোটি টাকা আইজিডব্লিউর পকেটে’ শীর্ষক একটি খবর। খবরে বলা হয়- রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন গেটওয়ে অপারেটরসের (আইজিডব্লিউ) কাছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা দাঁড়িয়েছে ১২০০ কোটি টাকা। বেশ কয়েকটি আইজিডব্লিউর কাছে বিটিআরসির হিসাব মতে, গত ডিসেম্বর শেষে পাওনার পরিমাণ ছিল ৩৭৭ কোটি টাকা। মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৩ কোটিতে, জুন শেষে ৯৪৭ কোটি টাকায়। আর গত আগস্ট পর্যন্ত তা হয় ১২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান সামান্য পরিমাণে তাদের পাওনা পরিশোধ করেছে। তারপরও পাওনার পরিমাণ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এক সময় কয়েকটি কোম্পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও রাজনৈতিক তদবিরে তা আবার ছেড়ে দেয়া হয়। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক প্রভাব-বলয় না থাকলে বিটিআরসির পাওনা এত বেশি পরিমাণ বকেয়া পড়ত না। আশা করব, সবকিছু উপেক্ষা করে বিটিআরসি এই বকেয়া পাওনা আদায়ে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
সম্প্রতি আরেকটি দুঃসংবাদ, চার মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিপুল পরিমাণ সিমট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছে ও দিচ্ছে। এর ফলে এসব ফোন অপারেটর কোম্পানির কাছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। সবচেয়ে দুঃখজনক, এই টাকা আদায় হবে কি হবে না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। কারণ, অপারেটরদের দাবি রাজস্ব বোর্ড তাদের কাছে কোনো টাকাই পায় না। অন্যদিকে এনবিআর বলেছে, অপারেটরেরা ৩ লাখ সিম রিপ্লেসমেন্ট কর পরিশোধ করেনি। এনবিআরের সবচেয়ে বড় করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) হিসাব মতে, কর বাবদ গ্রামীণফোনের কাছে ১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা, বাংলালিংকের কাছে ৭৭৪ কোটি টাকা, রবির কাছে ৬৬৫ কোটি টাকা ও এয়ারটেলের কাছে ৮৫ কোটি টাকা পাবে রাজস্ব বোর্ড। এনবিআরের দাবি, সিম পরিবর্তনের নামে নতুন সিম বিক্রি করলে নির্ধারিত অঙ্কে শুল্ক ও ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু কোনো অপারেটর তা পরিশোধ করেনি। এ কারণে রাজস্ব ফাঁকির বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাটের টাকার ওপর আরও ২ শতাংশ অতিরিক্ত কর ধরে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা পাওনা দাবি করেছে এনবিআর। কিন্তু অপারেটরেরা বলেছে ভিন্ন কথা। ২০০৫ সালের ১৩ জুনে করা আইন অনুযায়ী সিম বদল বা প্রতিস্থাপনের জন্য কোনো কর দিতে বাধ্য নয় তারা। ফলে সিমট্যাক্স ফাঁকির অর্থ আদায় নিয়ে শঙ্কা দাঁড়িয়েছে। এর একটা সুরাহা হওয়া দরকার।
সম্প্রতি আরও একটি দৈনিকের খবর মতে, লাইসেন্স ছাড়াই চলছে ট্রান্সমিশন ব্যবসায়। এ ব্যাপারে বিটিআরসি আইন-কানুনের কোনো তোয়াক্কা করছে না। বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না বিটিআরসি। অভিযোগ উঠেছে, আদালতের রায়ের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিটিআরসির একটি মহল একটি প্রতিষ্ঠানকে ট্রান্সমিশন ব্যবসায় করার অবারিত সুযোগ করে দেয়। অভিযোগ মতে, মন্ত্রণালয় ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বিটিআরসির একটি মহল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে অবৈধভাবে ট্রান্সমিশন ব্যবসায়ের সুযোগ দেয়। এসব অনিয়মের একটা সুরাহা হওয়া দরকার। নইলে আইসিটি খাতকে এগিয়ে নেয়া যাবে না।
আর ক’দিন পর পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। মহান ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত ঈদ উৎসবের প্রাক্কালে আমাদের সম্মানিত লেখক, পাঠক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা, পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি রইল আমত্মরিক শুভেচ্ছা। ঈদ বয়ে আনুক সবার জীবনে ও কর্মে অনাবিল আনন্দ। আল্লাহ আমাদের সবার সহায় হোন।