• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ভবিষ্যতের সেলফোন নোকিয়া মর্ফ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: যুগল মাহমুদ
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০০৮ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মোবাইল
তথ্যসূত্র:
উদ্ভাবন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ভবিষ্যতের সেলফোন নোকিয়া মর্ফ



বর্তমানে মোবাইল ফোন ছাড়া চলার কথা ভাবাই যায় না৷ মোবাইলপ্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ও ব্যবহারকারীদের চাহিদা মেটাতে মোবাইল ফোন বর্তমানে আর কথা বলার যন্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ চলতি পথে যানবাহনে চুপটি মেরে বসে থাকতে কারোরই ভালো লাগার কথা নয়৷ যানবাহনের বিরক্তিকর শব্দ, হকারের পণ্য সম্পর্কে বকবকানি - এসব থেকে মুক্তি পেতে অনেককেই দেখা যায় কানে হেডফোন লাগিয়ে নীরবে সেলফোনে গান শুনছেন৷ আবার হঠাৎ কোনো কিছুর ছবি তোলার দরকার হলো বা কারো কথা রেকর্ড করার দরকার হলে সেক্ষেত্রেও বর্তমান প্রযুক্তির সেলফোনের জুড়ি নেই৷ সেলফোনে আরো যুক্ত হয়েছে জিপিএস সিস্টেম, যা দিয়ে নির্দিষ্ট কিছুর অবস্থান বের করা, অচেনা এলাকায় পথ খুঁজে বের করা এখন তেমন কঠিন কিছু নয়, সেই সাথে সেলফোনে আরো যুক্ত হয়েছে মোবাইল ট্র্যাকার প্রযুক্তি, যা সেলফোনের চুরি রোধে ব্যাপক সহায়তা দিয়ে থাকে৷ তাই মোবাইলকে এখন শুধু কথা বলার যন্ত্র বললে ভুল বলা হবে৷ এটি এখন গান শোনা, ভিডিও দেখা, ছবি তোলা, গেম খেলা, ভয়েস রেকর্ড করা, ডাটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে ইনফ্রারেড, ব্লু-টুথের ব্যবহার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি আরো অনেক কাজে ব্যবহার করা হয়৷ সেলফোনের সাথে এত কিছু সংযুক্ত করেই সেলফোন নির্মাতারা হাল ছেড়ে দেননি৷ আরো নতুন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সেলফোনের সাথে নতুন কিছু যোগ করার জন্য মোবাইল কোম্পানিগুলো একজনের সাথে অন্যজন পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে৷



অদূর ভবিষ্যতে মোবাইল ফোনের জন্য যে যুগান্তকারী টেকনোলজির পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে তার নাম ন্যানোটেকনোলজি৷ সম্প্রতি নোকিয়া রিসার্চ সেন্টার এবং ক্যাম্বব্রিজ ইউনিভার্সিটির যৌথ প্রচেষ্টায় নোকিয়া মর্ফ নামের একটি মোবাইল ফোনের উদ্ভাবনের চিন্তাভাবনা করছে৷ ২০০৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মে নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট জাদুঘরে অনুষ্ঠিত ডিজাইন অ্যান্ড দ্য ইলাস্টিক মাইন্ড শীর্ষক প্রদর্শনীড়ে এরা নোকিয়া মর্ফ নামের এই নতুন মোবাইল ফোনের ডিজাইন ও এর কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে৷ যদিও এ মোবাইলের ডিজাইন ও এর কার্যপদ্ধতি এখন পর্যন্ত বাস্তবে রূপ পায়নি, শুধু কিছু বাস্তবায়নযোগ্য ধারণা দেয়া হয়েছে৷ তবে এই ধরনের প্রযুক্তি আগামী ৭ বছরের মধ্যেই কমিউনিকেশন ডিভাইসগুলোর সাথে যুক্ত করে বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে নির্মাতারা৷



নতুন এই কনসেপ্টে বলা হয়েছে, ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহারের ফলে সেলফোনকে ইচ্ছেমতো বাঁকানো, ভাঁজ করা বা ইচ্ছেমতো আকার দেয়া যাবে৷ এছাড়াও আরো যুক্ত হবে স্বচ্ছতা, ধুলাবালি ও পানির সংস্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল, সূর্যরশ্মি থেকে চার্জ হওয়া বা সোলার চার্জিং, বাতাসে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নির্দেশ করার অপূর্ব সব ক্ষমতা৷ ভবিষ্যতে ন্যানোটেকনোলজি সেলফোনের বাজারে দারুণ বিপ্লব ঘটানোর পাশাপাশি অন্যান্য যন্ত্রের ব্যবহারেও খুলে দেবে অপার সম্ভাবনার দুয়ার৷



নির্মাতাদের প্রাথমিক ধারণার প্রেক্ষিতে মর্ফ সেলফোনকে দেখানো হয়েছে হাল্কা সবুজ রঙের স্বচ্ছ পাতলা প্লেটের মতো একটি যন্ত্রে৷ যার আকার একটি ডিভিডি বক্সের চেয়ে খুব একটা বেশি নয়৷ এই ট্রান্সপারেন্ট প্লেটের ওপরে ভেসে উঠবে কাজ করার অপশন ও যাবতীয় তথ্য৷ এতে থাকবে ছবি তোলা, গান শোনা, ভিডিও দেখা ইত্যাদি সব রকমের সুবিধার পাশাপাশি আরো কিছু অবিশ্বাস্য সুবিধা, যা আমরা এতদিন সায়েন্স ফিকশন মুভিগুলোতে দেখে আসছি৷ এখন দেখা যাক নতুন এই মোবাইলে কী কী অনন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে৷

ন্যানোডিভাইস :

ন্যানোটেকনোলজির সাহায্যে যন্ত্রাংশের আকার অনেকগুণ ছোট করা সম্ভব হবে, যা দিয়ে ছোট পরিসরে অনেক বেশি যন্ত্রাংশ রাখা যাবে৷ উদাহরণস্বরূপ, এই যন্ত্রে ব্যবহার হওয়া ট্রানজিস্টরগুলোর আকার এতই সূক্ষ্ম হবে যে মাছির মাথার একটি পশমের ডগায় প্রায় ১০০০০টি ট্রানজিস্টর রাখা যাবে খুব সহজেই (চিত্র-১)৷

ফ্লেক্সিবিলিটি অ্যান্ড সেপ চেঞ্জ :

সেলফোনটির আকার-আকৃতি ইচ্ছে করলে সহজেই বদলে ফেলা যাবে৷ চিত্র-২-এ দেখানো মডেলটি হচ্ছে ডিভাইসটির মূল নকশা ও আকার, একে পাশাপাশি ভাঁজ করে চিত্র-৩-এর মতো গতানুগতিক মোবাইল ফোনের আকারে নিয়ে যাওয়া যাবে৷ আবার আড়াআড়িভাবে ভাঁজ করলে চিত্র-৪-এর মতো ফ্লেক্সিবল আকারের হয়ে যাবে, যা কি না হাতে ব্রেসলেট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে৷ যে আকারেই পরিবর্তন করা হোক না কেনো সেটিকে লক করে দিলে সেটি আনলক না করা পর্যন্ত সেই আকারেই থাকবে (চিত্র-৫)৷ডিভাইসটির সাথের ছোট গোল অংশটি ওয়্যারলেস হেডফোন ও মাইক্রোফোন হিসেবে কাজ করবে যা ৬ নং চিত্রের মহিলার কানে দেখা যাচ্ছে৷ যন্ত্রটিকে বাঁকানো বা ভাঁজ করার কাজটি সম্ভব হবে খুবই ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের ব্যবহারের ফলে৷ একধরনের খুবই সূক্ষ্ম জাল সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হয়ে যন্ত্রটিকে বাঁকানো বা ভাঁজ করার সময় ভেঙ্গে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে৷ এতে অতি ক্ষুদ্র ন্যানোস্কেল গঠন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যা সূক্ষ্ম ফাইবার দিয়ে তৈরি (চিত্র-৭)৷



সেলফ ক্লিনিং :

ডিভাইসটির উপরিভাগ পানিবিকর্ষী পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হবে, যার ফলে এর উপরে পানি জাতীয় কিছু ফেললে তা আপনি থেকেই গড়িয়ে পড়ে যাবে, ডিভাইসটির গায়ে লেগে থাকবে না৷ এছাড়া এটি ধুলাবালি থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে৷ তাই সেলফোনকে ধুলাবালির হাত থেকে বাঁচাতে ডাস্ট কভার ব্যবহারের কথা নিশ্চিত ভুলে যেতে হবে৷ পানি বা অন্যান্য তরল পদার্থের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যও আর চিন্তা করতে হবে না৷





ট্রান্সপারেন্সি :

ন্যানোটেকনোলজির এই মোবাইল ডিভাইসটি ট্রান্সপারেন্ট করে তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ এতে এমন ন্যানোডিভাইস ব্যবহার করা হবে, যা অ্যাক্টিভেট করলে ন্যানোডিভাইসগুলো মানুষের চোখে অদৃশ্য হয়ে যাবে৷ ফলে এর কাঁ চের মতো স্বচ্ছ আকৃতির ভেতর দিয়ে পেছনের দৃশ্য সহজেই দেখা যাবে (চিত্র-৮)৷ এই বৈশিষ্ট্য সত্যিই খুবই অভিনব একটি ব্যাপার, যা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য লাগতে পারে যতক্ষণ না তা স্বচক্ষে দেখছেন৷

বিল্ট-ইন সোলার চার্জার :

পুরো ডিভাইসের উপরে অতি ক্ষুদ্র আকারের ঘাসের মতো জিনিসের প্রলেপ দেয়া থাকবে, যা সূর্যরশ্মি থেকে আসা শক্তিকে ধরে রাখতে পারবে৷ ঘাসের মতো কভারিং তথা প্রলেপকে নির্মাতারা নাম দিয়েছেন ন্যানোগ্রাস (চিত্র-৯)৷ এর ফলে ব্যাটারির আকার হবে ছোট, কিন্তু চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়বে অনেকগুণে এবং সেই সাথে খুব দ্রুত চার্জ হতে পারবে এই ব্যাটারি৷ এই টেকনোলজির আরো উন্নতি সাধনের মাধ্যমে সোলার চার্জিং ডিভাইসগুলোর ব্যাপকতা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা৷



ইন্টিগ্রেটেড সেন্সর :

ডিভাইসের উপরিভাগে খুব সূক্ষ্ম সেন্সর লাগানো থাকবে এবং এটি বাতাসে ভেসে বেড়ানো মাইক্রো-অরগানিজম ও বিভিন্ন রাসায়নিক বস্তুকণা শনাক্ত করতে পারবে৷ যার ফলে আশপাশের পরিবেশে ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি সম্পর্কে অল্প সময়েই স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে (চিত্র-১০)৷



হেপটিক সারফেস :

ডিভাইসের সারফেসে দৃশ্যমান হওয়া বাটনগুলো মূলত টাচ-স্ক্রিন প্রযুক্তিতে কাজ করলেও এর অত্যাধুনিক হেপটিক সারফেস প্রযুক্তির কল্যাণে রিয়াল থ্রিডি বাটন সারফেসে ভেসে উঠবে, যা হাত দিয়ে অনুভব করা যাবে (চিত্র-১১)৷

কালার চেঞ্জ :

এছাড়াও এর সবুজ রঙ দেখতে একঘেয়ে লাগলে বা কারো পছন্দ না হলে ডিভাইসটি দিয়ে পছন্দের কোনো রঙ বা কোনো ডিজাইনের ছবি তুলে তা ওয়ালপেপার হিসেবে ব্যবহার করলে পুরো ডিভাইসটির চেহারা সেই রঙ বা ডিজাইনের মতো হয়ে যাবে৷ এতে করে ব্যবহারকারী তার পরিধেয় কাপড়ের সাথে ম্যাচ করে এর রঙ পরিবর্তন করতে পারবেন৷

মানুষ যা চিন্তা করে, তা বাস্তবায়নের জন্য উঠে পড়ে লাগে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ এই মর্ফ কনসেপ্ট৷ কারণ, এধরনের প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের কাছে কল্পনার বস্তু হতে পারে কিন্তু বিজ্ঞানীদের কাছে তা নয়৷ এই ধরনের সেলফোনের দাম যে খুব চড়া হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না, কিন্তু নির্মাতারা আশ্বাস দিয়েছেন, এ সেলফোনগুলোর দাম যথাসম্ভব কমিয়ে বাজারজাত করা হবে৷


ফিডব্যাক : quitehitman@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
২০০৮ - আগস্ট সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস