লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মর্তুজা মিনহাজ আহ্মেদ
মোট লেখা:৪
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
মোবাইলপ্রযুক্তি
বাংলালিংকের পোস্টপেইড রোমিং
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন অপারেটররা তাদের গ্রাহকদের জন্য আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস চালু করেছে। পোস্টপেইডে গ্রাহকদের জন্য এ সেবা প্রায় শুরু থেকেই চালু আছে। গত সংখ্যায় প্রিপেইড রোমিং সেবা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবার বাংলালিংকের পোস্টপেইড রোমিং সার্ভিস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলালিংকের আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিসের যেসব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তা নিচে তুলে ধরা হয়েছে:
০১. বাংলালিংক আন্তর্জাতিক রোমিংয়ের সুবিধা
বাংলালিংক আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিসের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন- কেউ যখন নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে ভ্রমণ করেন, তখন নিরাপদে সেই দেশে পৌঁছার জন্য একটি নোটিফিকেশন এসএমএস পাঠাতে পারেন। সেজন্য গ্রাহককে ডায়াল করতে হবে *১১১* পছন্দসই মোবাইল নম্বর#-এ। তাহলে এসএমএস গ্রহণকারী ভ্রমণকারী নিরাপদে ভ্রমণের জন্য একটি নিশ্চিতকরণ এসএমএস পাবেন। আর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক অথবা সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রোমিং বিল দেয়ার জন্য একটি স্ট্যান্ডিং অর্ডার নিয়মাবলী ফর্মে সাইন করতে হবে।
এ ছাড়াও বাংলালিংকের পোস্টপেইড গ্রাহকরা যখন বিদেশে গিয়ে রোমিং সার্ভিস ব্যবহার করবেন, তখন তিনি ইচ্ছে করলে জিপিআরএস রোমিং সার্ভিস চালু করার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্রাউজ ও ই-মেইল চেক করতে পারবেন। এর জন্য প্রয়োজন একটি সমর্থিত নেটওয়ার্ক নির্বাচন করা। এ ব্যাপারে আগ্রহী গ্রাহকরা যদি ইন্টারনেট থেকে কম্প্যাটিবল অপারেটরের তালিকা সংগ্রহ করেন, তাহলে খুব সহজ হবে।
এছাড়াও রোমিং কাভারেজ, ট্যারিফসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন এসএমএসের মাধ্যমে। আর স্থানীয় মুদ্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে আগ্রহীকে ডায়াল করতে হবে *৭৮৯*১০# নম্বরে এবং পরবর্তী নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। এছাড়াও আপনি পাবেন স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হারসহ স্থানীয় মুদ্রার বাংলাদেশী টাকায় পরিবর্তনের খবর। এছাড়াও বাংলালিংক পোস্টপেইড গ্রাহকদের জন্য সবচেয়ে নিম্নহারে সিকিউরিটি ডিপোজিট করতে হবে। তবে কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য সিকিউরিটি ডিপোজিটের কোনো প্রয়োজন নেই। এরই সাথে কোনো বাড়তি মাসিক চার্জের প্রয়োজন নেই।
০২. রোমিং সার্ভিস পেতে যা প্রয়োজন
বাংলালিংক গ্রাহকদের আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস ব্যবহার করতে চাইলে কিছু অতিগুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। যেমন- গ্রাহকের সংযোগ অবশ্যই বাংলালিংক এন্টারপ্রাইজ পার্সোনাল অথবা কর্পোরেট সংযোগ (কল অ্যান্ড কন্ট্রোল) আইএসডি (ISD) সংযোগসহ হতে হবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিময় অনুসারে সিকিউরিটি ডিপোজিট এবং রোমিং বিল প্রদান দেয়ার কমপক্ষে তিন মাসের বৈধতাসহ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড থাকতে হবে, জাতীয়তা প্রমাণ করতে হবে। যেমন- পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের প্রদেয় সিকিউরিটি ডিপোজিট থাকতে হবে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকার সমপরিমাণ আমেরিকান ডলার, কর্পোরেট গ্রাহকদের কোনো সিকিউরিটি ডিপোজিটের প্রয়োজন নেই। এছাড়াও কর্পোরেট গ্রাহকরা রোমিং সাবস্ক্রিপশন ফরম ও রোমিং ডিপোজিটের বিল ফরম পূরণের ব্যাপারে এন্টারপ্রাইজ রিলেশন ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করলে পুরো প্রক্রিয়াটি খুব সহজ হবে।
০৩. প্রয়োজনীয় নির্দেশনা
কোনো বাংলালিংক পোস্টপেইড গ্রাহক আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস ব্যবহার করতে চাইলে কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে, যা নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে :
প্রথমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে বাংলালিংকের যেকোনো কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে আসতে হবে, আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে রোমিং ডিপোজিট দিতে হবে, রোমিং ডিপোজিট স্লিপ ও দরকারি কাগজপত্র নিয়ে যেকোনো কাস্টমার কেয়ার রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছে জানালে গ্রাহকের বাংলালিংক ফোনের আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস কার্যকর হবে এবং গ্রাহককে বিনা খরচে একটি নতুন সিমকার্ড দেয়া হবে, যাতে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস উপভোগ করতে পারেন। তবে মজার বিষয় হলো, গ্রাহককে নতুন সিম দেয়া হলেও মোবাইল ফোনের নম্বর পরিবর্তন হবে না। আগে যে নম্বর ছিলো, সেই নম্বরই থাকবে।
০৪. সঠিক নেটওয়ার্ক নির্বাচন
বাংলালিংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মোবাইল অপারেটরের সাথে রোমিং পার্টনার হিসেবে চুক্তি করেছে। গ্রাহকরা প্রথমে মোবাইল ফোন চালু করে সেখানকার স্থানীয় নেটওয়ার্ক নির্বাচন করবেন। মোবাইল ফোনে পিন কোড (PIN Code)-এর প্রয়োজন হলে গ্রাহকরা যেন সাধারণ পিন কোর্ড (১২৩৪) ব্যবহার করেন। এরপর গ্রাহকরা যদি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নেটওয়ার্ক নির্বাচন করেন, তাহলে খুব ভালো হয়। কেননা এ পদ্ধতিতে দ্রুত এবং সহজেই নেটওয়ার্ক নির্বাচন করা যায়। আর জিপিআরএস ব্যবহার করতে চাইলে জিপিআরএস সমর্থিত নেটওয়ার্ক নির্বাচন করতে হবে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নেটওয়ার্ক নির্বাচন করতে হলে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণীয় :
০১. Nokia : Menu>Settings>Phone Settings>Network Settings>Manual >Preferred Operator.
০২. Motorola : Menu>Network Selection>AvailableNetwork>Preferred Operator.
০৩. Sony Ericsson : Menu>Settings>Connectivity>Mobile Network>Selected work>Preferred Operator.
০৪. Siemens : Menu>GSM service>Network Info>Manual Select>Preferred Operator.
০৫. বাড়ি ফিরে আসা
বাংলালিংকের যেসব গ্রাহক বিদেশে থাকার সময় আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস ব্যবহার করছিলেন, সেসব গ্রাহককে দেশে ফিরে এসে মোবাইল ফোনের রোমিং সেটিংয়ে আবার কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন- গ্রাহক যখন পিন কোড ‘১২৩৪’ ব্যবহার করেছিলেন অথবা Banglalink>Roaming>Roam এই সেটিং নির্বাচন করেছিলেন, তখন ওই গ্রাহককে ‘১২৩৪’ পিন কোড অথবা মোবাইল ফোনের বাংলালিংক মেনু থেকে “Banglalink” আবার নির্বাচন করতে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে গ্রাহকরা দেশে এসে সব মোবাইল ফোন অথবা বিটিসিএল নম্বরে ফোন করতে পারবেন।
০৬. বিদেশে থেকে ফোন কল করা
যদি কোনো বাংলালিংক গ্রাহক বিদেশে গিয়ে আন্তর্জাতিক রোমিং সার্ভিস ব্যবহার করেন এবং কোনো নম্বরে ফোন করতে চাইলে কাঙ্ক্ষিত নম্বরে ওই ফোন করলেই হবে। যদি ল্যান্ডফোন নম্বরে কল করতে হয়, তাহলে প্রথমে এরিয়া কোড এবং তারপর ফোন নম্বরে কল করতে হবে। আর বিদেশ থেকে বাংলাদেশের ল্যান্ডফোনে কল করতে চাইলে প্রথমে কান্ট্রি কোড, তারপর এরিয়া কোড, তারপর ল্যান্ডফোন নম্বরে কল করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ল্যান্ডফোনের নম্বর যদি ৯৮৮৮৩৭০ হয়, তাহলে +৮৮০২৯৮৮৮৩৭০ নম্বরে ফোন করতে হবে।
বাংলালিংক পোস্টপেইড আন্তর্জাতিক রোমিং সম্পর্কে সম্পূর্ণ লেখা এক পর্বে সম্ভব নয় বলে আগামী পর্বে অর্থাৎ এপ্রিল সংখ্যায় বাকি অংশ প্রকাশের আশা রাখি।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : minhaz777@gmail.com