দিন দিন প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক কাজ সহজ হয়ে গেছে। যেমন আজকাল ইন্টারনেটে ওয়েব সার্ফিং বা ই-মেইল চেক করে দেখার জন্য কমপিউটার অবশ্যই প্রয়োজন, তা বলা যাবে না। কেননা অনেক কিছুই এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করা যাচ্ছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে কমপিউটারের সব কাজ মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই করা যাবে। ইন্টারনেটে আমাদের সবচেয়ে জরুরি কাজগুলোর মধ্যে আছে ওয়েব সার্ফিং, ডাউনলোড, ই-মেইল চেক ইত্যাদি। এগুলোর চেয়ে একটি বড় কাজ আমাদের দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহারের চাহিদা বাড়িয়ে চলেছে। সেটি হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। অনেকেই যোগাযোগের জন্য প্রধান মাধ্যম হিসেবে ইদানীং ইন্টারনেটকে বেছে নিচ্ছেন কিছু যৌক্তিক কারণে। এমন একটি কারণ হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগের খরচ কমানো। মোবাইল সেকশনের এই সংখ্যায় আমরা দেখবো কী উপায়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কম খরচে যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব।
একসময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করার প্রধান উপায় ছিল ই-মেইল। এ ই-মেইলকে কেন্দ্র করে বর্তমানে যোগাযোগের আরো নতুন নতুন উপায় বের হয়েছে। তার মধ্যে মেসেঞ্জার, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল কমিউনিকেশন ইউটিলিটি উল্লেখযোগ্য। তবে এতকিছুর পরও তৎক্ষণাৎ যোগাযোগের জন্য মেসেঞ্জার খুব কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে অন্যান্য নানা ধরনের যোগাযোগের মাধ্যমকে একই মেসেঞ্জারের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সবাই এখন উঠেপড়ে লেগেছে। যার ফলে ফেসবুকের মতো সোশ্যাল ইউটিলিটিও এখন মেসেঞ্জারে সম্পৃক্ত হচ্ছে। আর এখনকার মেসেঞ্জারগুলো বেশ আধুনিক। শুধু মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ভয়েস কল, চ্যাট বা ভিডিও কনফারেন্সিং করা যাচ্ছে। মোবাইল প্রযুক্তি বিভাগে এ সংখ্যায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মেসেঞ্জার চালানো এবং যোগাযোগ রক্ষা করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মেসেঞ্জার হচ্ছে একটি জনপ্রিয় ইন্টারনেটভিত্তিক তাৎক্ষণিক বার্তা প্রেরক (instant messaging) সফটওয়্যার। মোবাইল ফোনেও এখন এর ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। মোবাইল ফোনে অনেক ধরনের মেসেঞ্জার জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার মধ্যে ই-বাডি সবচেয়ে আলোচিত এক নাম। ই-বাডি মেসেঞ্জার চালানোর জন্য মোবাইল ফোনে জাভা সাপোর্ট থাকতে হবে। এই মেসেঞ্জার উইন্ডোজ লাইভ মেসেঞ্জার, ইয়াহু, এইম, গুগল টক, আইসিকিউ, ফেসবুক, মাইস্পেস ইত্যাদি সাপোর্ট করে।
ই-বাডি মেসেঞ্জার তার যাত্রা শুরু করে ২০০৩ সালে ওয়েব ব্রাউজারভিত্তিক ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং সার্ভিস চালু করে। এটাই সর্বপ্রথম স্বাধীন ওয়েব মেসেঞ্জার হিসেবে নিজেদের যাত্রা শুরু করে। প্রথমদিকে এর নাম ছিল ই-মেসেঞ্জার। ২০০৬ সালে এরা নিজেদেরকে ই-বাডি মেসেঞ্জার হিসেবে নতুন নামে প্রতিষ্ঠিত করে। এর সুবিধাগুলো হচ্ছে- ইনস্টলেশনের কোনো ঝামেলা নেই, স্ক্রিনেই চ্যাটের লিস্ট, মাল্টিনেটওয়ার্ক, চ্যাট হিস্টোরি, অফলাইন মেসেজ পাবার সুবিধা, বিভিন্ন ভাষায় চ্যাটের সুবিধা, ভয়েস চ্যাটের পাশাপাশি ভিডিও চ্যাট, উন্নত ইউজার চ্যাট ইত্যাদি। তবে এর মোবাইল ভার্সনে কম বিদ্যুৎ খরচ করে, কম ডাটা নিয়েই কাজ করার সুবিধাসহ সাউন্ড ও ভাইব্রেশনের সুবিধাও আছে। এতে ভিডিও চ্যাটের সুবিধা এখনও যোগ করা হয়নি। তবে অচিরেই ই-বাডি মেসেঞ্জারের মোবাইল ভার্সনে এর ব্যবহার দেখতে পাওয়া যাবে।
ই-বাডি মেসেঞ্জারের মোবাইল ভার্সন ব্যবহার করার জন্য www.ebuddy.com/mobilebeta/ সাইট থেকে মোবাইল ফোনের উপযুক্ত ভার্সন ডাউনলোড করতে হবে। ডাউনলোড করার পর তা মোবাইল ফোনে ইনস্টল করতে হবে। সাধারণত ইনস্টল করার পর তা অ্যাপ্লিকেশনের মধ্য থেকে চালু করতে হয়। এটা মোবাইল ফোনের ভিন্নতা অনুযায়ী আলাদা আলাদা হয়। এটাকে মোবাইল ফোনের মেমরিতে বা মেমরি কার্ডেও ইনস্টল করা যাবে।
ই-বাডি মেসেঞ্জারের মোবাইল ভার্সন অন্যান্য মেসেঞ্জারের থেকে একটু আলাদা। এখানে প্রথমে একটি আইডি খুলতে হয়। যেটি সরাসরি ই-বাডি মেসেঞ্জারের ওয়েবসাইটেও খোলা সম্ভব। একবার একটি আইডি খোলা হয়ে গেলে তা ই-বাডি মেসেঞ্জারের মোবাইল ভার্সন এবং ডেস্কটপ ভার্সনেও চালানো যায়। সুতরাং এখানে আইডি খোলাটাই মূল কথা। এই আইডি খোলার জন্য একটি ই-মেইল আইডির প্রয়োজন পড়বে। এই ই-মেইল আইডি লাগবে ই-বাডি মেসেঞ্জারের আইডিসংশ্লিষ্ট বৈধতার জন্য। এই বৈধতা শুধু পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের জন্যই কাজে লাগে। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে তা উদ্ধারের জন্য মূল ই-মেইল আইডি লাগবে।
একটি আইডি দিয়ে অ্যাকাউন্ট খোলার পর সেখানে অন্যান্য অনেক ই-মেইল আইডি যুক্ত করা যাবে। যার সাহায্যে মেসেঞ্জারে লগইন অবস্থায় থাকতে পারবেন। আর যে অ্যাকাউন্ট দিয়ে আইডি খোলা হয়েছে ই-বাডি মেসেঞ্জারে সেই অ্যাকাউন্টও লগইন করা যায়। আর মাল্টিপল অ্যাকাউন্ট ম্যানেজ করার সুবিধাও এতে রয়েছে।
শুধু ই-মেইলের মেসেঞ্জারই নয়, অন্যান্য কমিউনিকেশন মেসেঞ্জারও যেমন- ফেসবুক, মাইস্পেস ইত্যাদিও যোগ করা যায় এবং একইসাথে লগইন বা লগআউট বা ম্যানেজ করা যায়। সেই সাথে অফলাইন মেসেজ দেখার বা দেবার মতো অনেক সুবিধা এতে থাকছে। আর ই-বাডি মেসেঞ্জারের একই সাথে মোবাইল ভার্সন এবং ডেস্কটপ ভার্সন থাকায় যখন মোবাইল ফোনে সুবিধা তখন মোবাইল ফোনে আর যখন ডেস্কটপে সুবিধা তখন ডেস্কটপে ব্যবহার করা যায়। অন্তত যোগাযোগের জন্য আর অন্য কোনো মেসেঞ্জার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
যেসব সেট মোবাইল মেসেঞ্জার সাপোর্ট করে
সাধারণত জাভা সাপোর্টেড যেকোনো মোবাইল ফোনেই এই সফটওয়্যার চালানো যাবে। এমনকি চীনের তৈরি নন ব্র্যান্ড মোবাইল ফোনেও যদি জাভার সাপোর্ট থাকে তাহলে এই মেসেঞ্জার তাতে চালানো যাবে। তারপরও কোন কোন মোবাইল ফোনে ই-বাডি মোবাইল ফোনের মেসেঞ্জার অফিসিয়ালি সাপোর্ট করবে তা দেখে নেয়া যাক :
Nokia মডেলগুলো : 6300, 6021, 6230, 6230i, 5140, 3220, 3155, 3155i, 5140i, 6020, 6030, 6060, 6070, 6101, 6102, 6111, 6170, 6260, 7260, 7270, 7360, 6822, 6235, 8800, 8801
Sony Ericsson মডেলগুলো : K600, K750i, K800i, W800, W810i, Z520
Samsung মডেলগুলো : D500, D600, D900, E530 E720 E620
Motorola মডেলগুলো : যেকোনো RAZR, যেকোনো KRAZR, যেকোনো SLVR, যেকোনো ROKR, যেকোনো RIZR
LG মডেল : KG800
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : javedcse1982@yahoo.com