সচরাচর এখন একটি সিম খুব কম মানুষই ব্যবহার করেন। ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক কারণে একাধিক ফোন নম্বর অনেককেই ব্যবহার করতে হয়। এক সময় একাধিক সিম ব্যবহার করার জন্য একাধিক ফোনসেট ব্যবহার করতে হতো, যা বেশ ঝামেলার কাজ ছিল। একটা সময় মোবাইল ফোন বা সেলফোন ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। সমাজের উঁচুশ্রেণীর লোকজনই শুধু এটি ব্যবহার করতো। ধীরে ধীরে এ যন্ত্রটি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনে পরিণত হয়। তবে এখন এটি নিত্যপ্রয়োজনকেও হার মানিয়েছে। এতে যুক্ত হয়েছে ফ্যাশনের ব্যাপার-স্যাপারও।
আমাদের দেশে এখন এমন অনেক মানুষ পাওয়া যাবে, যারা নিয়মিত কিছুদিন পর পর মোবাইল ফোন পরিবর্তন করে থাকেন। অনেকে আবার প্রয়োজনের খাতিরেই একসাথে একাধিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকেন। মানুষের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়ে মোবাইল ফোন নির্মাতারাও আনছে তাদের পণ্যের ফিচার এবং বিশেষত পরিবর্তন। যারা একসাথে দুই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন, তাদের সুবিধার্থে মোবাইল ফোনে ডুয়াল সিম ব্যবহারের সুবিধা তুলে ধরে এই লেখা সাজানো হয়েছে।
ডুয়াল সিম ফোনের কনসেপ্ট হচ্ছে একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দুটি লাইন সচল রাখা। দুটি লাইন সচল রাখার বিভিন্ন অর্থ হতে পারে। একটি হচ্ছে একসাথে যেকোনো একটি লাইন সচল থাকবে। অন্যটি হচ্ছে একসাথে দুইটি লাইনই সচল থাকবে। এই দুই ধরনের ফোনেরই আবার অনেক ধরন রয়েছে। যেমন- একটি লাইন সচল ব্যবস্থার ক্ষেত্রে দুইটি সিমে নাকি একটি সিমে লাইন পরিবর্তন থাকবে, লাইন কিভাবে পরিবর্তিত হবে তা ফোন সচল অবস্থায় নাকি বন্ধ অবস্থায় ইত্যাদি। আবার দুইটি লাইন সচল ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও অনেক ধরন আছে। যেমন- একটি ব্যস্ত থাকলে অন্যটি সচল থাকবে, নাকি বন্ধ থাকবে ইত্যাদি।
কিছুদিন আগেও ফোনের সিম কেটে বা ঘোস্ট সিম হোল্ডার ব্যবহার করে বা সিম হ্যাক করে একটি ফোনেই একাধিক সিম ব্যবহার করা যেত। এসব প্রযুক্তির কিছু ঝামেলা আছে। এই ঝামেলার মধ্যে অন্যতম ছিল নেটওয়ার্ক না পাওয়া থেকে শুরু করে নানাবিধ সমস্যা। সেসব ঝামেলা থেকে মুক্তি দিতেই এক ফোনে একাধিক সিম ব্যবহারের প্রযুক্তি প্রথমে নিয়ে আসে চীনের তৈরি কিছু ননব্র্যান্ড ফোনসেট। এসব ফোনসেটের ক্রমাগত জনপ্রিয়তার ফলে ননব্র্যান্ড ফোনসেটের নির্মাতারাও ডুয়াল সিমসহ ফোনসেট তৈরি করে।
আমাদের দেশে নোকিয়ার ফোনসেট ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়া ফোনসেট। সম্প্রতি এই নোকিয়াও এ ধরনের ডুয়াল সিমবিশিষ্ট ফোনসেট তৈরি করছে। এর আগেই এলজি ও স্যামসাং তাদের ডুয়াল সিমবিশিষ্ট ফোনসেট তৈরি করেছে, যা ভোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক চাহিদা তৈরি করেছিল।
চীনের তৈরি বেশিরভাগ ফোনসেট দুইটি লাইন চালানোর সুযোগ দেয়। এই ফোনসেটগুলো একসাথে দুটি সিম ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। এগুলোর মধ্যে একটি ব্যাপার হলো- যখন একটি লাইনে ফোন কল রিসিভ করা হবে, তখন অন্য লাইনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এই ব্যাপারটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের ফোনসেট কেনার আগে এ ব্যাপারটি যাচাই করে কেনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আরেক ধরনের ডুয়াল সিম ফোন আছে যেগুলো একটি লাইনে কল রিসিভ করলে অন্য লাইন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েটিংয়ে চলে যাবে এবং কল রিসিভারকে জানিয়ে দেবে অন্য লাইনে কল এসেছে। যাতে করে প্রয়োজন অনুসারে কল রিসিভার লাইন শিফট করতে পারেন।
এবারে আসা যাক একসাথে দুটি লাইন চালু রাখা যায় এমন সুবিধা দেয়া ফোনসেটের কথায়। ডব্লিউ এন ডি-র কিছু ফোনসেট আছে যেগুলো একসাথে দুটি ফোনের সম্মিলিত রূপ। ক্যান্ডি বার স্টাইলের এই সেটের দুই দিকে দুটি আলাদা ফোন পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এই সেটের কোনো উল্টাপাল্টা নেই। এই সেট তৈরি করা হয়েছে দুটি ডিসপ্লে, দুটি কি-প্যাড, দুটি আলাদা নেটওয়ার্ক এবং একটি ব্যাটারি দিয়ে। একটি লাইন ব্যস্ত থাকার সময়েও এই সেটে অন্য লাইন দিয়ে কথা বলা বা অন্য কোনো কাজ করা যায়। এই সেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, একই ব্যাটারি দিয়ে দুটি সেট চালানো। তাই ব্যাটারির উপরে প্রচন্ড চাপ পড়ে। তাই এর পাওয়ার ব্যাকআপ এবং স্ট্যান্ডবাই টাইম বেশ কম। বারবার চার্জ দেবার ঝামেলায় পড়তে হবে। শুধু তাই নয়, এর টকটাইমও বেশ কমে যায় এই প্রযুক্তির কারণে। আর আরেকটি সমস্যা আছে এই সেটে তা হচ্ছে যখন কথা বলা হয় একটি লাইনে তখন ব্যাটারির উপরে এত চাপ পড়ে যে ফোনসেট খুব গরম হয়ে যায়।
এসব ফোনের বেশিরভাগেই ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুবিধা থাকে। ইন্টারনেটে আমাদের সবচেয়ে জরুরি কাজগুলোর মধ্যে আছে ওয়েব সার্ফিং, ডাউনলোড, ই-মেইল চেক ইত্যাদি। এগুলোর চেয়ে একটি বড় কাজ আমাদের দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহারের চাহিদা বাড়িয়ে চলেছে। সেটি হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা। অনেকেই যোগাযোগের জন্য প্রধান মাধ্যম হিসেবে ইদানীং ইন্টারনেটকে বেছে নিচ্ছেন। ইন্টারনেটকে বেছে নেবার জন্য অবশ্যই অনেক যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এমন একটি কারণ হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগের খরচ বেশ কম। তবে এ ধরনের ফোনসেটে সাধারণত একটি সিম ব্যবহার করে ইন্টারনেট কনফিগার করা হয়। ইন্টারনেট ব্যবহার করার ইচ্ছে থাকলে কেনার সময় জেনে নিতে হবে এই সম্পর্কিত আনুষঙ্গিক বিষয়াদি।
তবে আগামীতে একই ফোনসেটে তিনটি বা চারটি সিম লাগানো যায় এমন ফোন আসতে যাচ্ছে। বরাবরের মতোই এ ধরনের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি চীনের তৈরি হ্যান্ডসেটগুলোতেই দেখা যায় বেশি। তবে ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুসারে অনেক নামীদামী মোবাইল ফোন নির্মাতারাও তাদের ব্যবসায়িক বা ফোনসেট তৈরির নীতি পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। মোবাইল ফোনে এমন নতুন নতুন প্রযুক্তির সমাহার যত বেশি হবে, তত বেশি লাভবান হবেন ক্রেতারা-এ বিষয়ে সবাই একমত।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : javedcse1982@yahoo.com