• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > প্রযুক্তি আসছে : আমাদের চাই সুযোগ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: আবীর হাসান
মোট লেখা:১৫০
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
প্রযুক্তি
তথ্যসূত্র:
প্রযুক্তি বিপ্লব
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
প্রযুক্তি আসছে : আমাদের চাই সুযোগ
আইসিটি এখন হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসভিত্তিক হয়ে ওঠার সন্ধিক্ষণ পেরুচ্ছে। সন্ধিক্ষণ বলছি এ কারণে, তারবিহীন ইন্টারনেট আর মোবাইল ফোন ধরনের ডিভাইস প্রাথমিকভাবে নতুন ধারার যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ার পরীক্ষায় উতরে গেছে। টুজি থেকে থ্রিজিতে উত্তরণ সর্বব্যাপী হয়ে উঠতে না পারলেও উপযোগী প্রযুক্তি হিসেবে এর মূল্যায়ন সর্বত্রই হচ্ছে। কিন্তু যে হিসাবগুলো এখনও মিলছে না সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইডথ এবং ডিভাইসের উন্নতি। বিশ্বব্যাপী গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন প্রধানত এ বিষয় দুটো নিয়েই বেশি ব্যস্ত। কারণ, গত তিন বছরে চাহিদার বিষয়টি জানা হয়ে গেছে।

টুজির উন্নততর মোবাইল হ্যান্ডসেটের সাথে অ্যান্ড্রয়িড সমৃদ্ধ হ্যান্ডসেটের পার্থক্যটা সহজেই যেমন চোখে পড়ার মতো, তেমনি চলতি পথে ব্যবহারযোগ্য ইন্টারনেট থেকে পাওয়া সুবিধার সীমাবদ্ধতা অনেক সময়ই ব্যবহারকারীদের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে উঠছে। কারণ পিসি, ল্যাপটপ এবং ট্র্যাডিশনাল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা শুধু বিনোদন নয়, নতুন এই ব্যবস্থা থেকে পেশাগত সুবিধা চাচ্ছেন। সমস্যাটার উদ্ভব হয়েছে অ্যান্ড্রয়িডনির্ভর ডিভাইস এবং প্রাথমিক থ্রিজি কানেক্টিভিটি বিনোদন বিষয়ক ধারণা নিয়েই তৈরি হয়েছে। যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এখানে প্রাধান্য পাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। স্বাভাবতই অডিও কানেক্টিভিটি এ ক্ষেত্রে গৌণ হয়ে গেছে।

যদিও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে থ্রিজির যাত্রা মাত্র শুরু হয়েছে, সেখান থেকে এখনই বিষয়টা উপলব্ধি করা কষ্টকর। কিন্তু উন্নত দেশেগুলোতে তো বটেই, অনেক দ্রুত উন্নয়নশীল দেশেও এখন মানুষের দৈনন্দিন অভ্যাসের মধ্যে তারবিহীন ইন্টারনেটের প্রযুক্তি বেশি প্রভাব ফেলতে শুরম্ন করেছে। মানুষের এই পরিবর্তনশীল অভ্যাস চাহিদারও পরিবর্তন ঘটিয়ে চলেছে ক্রমাগত এবং সে কারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি অ্যাপসের বৈচিত্র্য আর নেটওয়ার্কে বিভিন্ন সেবার বহুমাত্রিকতা। এ সময় উন্নত দেশগুলোতে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকের উপযোগিতাতেও পরিবর্তন এসেছে। উন্নত দেশগুলোতে ফেসবুক এখন আর শুধু তরুণদের ক্রেজ নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ জানিয়েছে, দেশের ৬৪ শতাংশ প্রবীণ নাগরিক এখন ফেসবুক ব্যবহার করে নিত্যদিন সংবাদ পাঠ করেন। আর পশ্চিমা বিশ্বের অর্ধেক বয়স্ক মানুষ তাদের তথ্যের উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন ফেসবুককে। এক সময় সামাজিক যোগাযোগের কৌতূহল নিয়ে ফেসবুকে প্রবেশ করলেও এখন সংবাদ উৎস হিসেবেই তাদের কাছে ফেসবুকের উপযোগিতা বেশি। কাজেই বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, নতুন প্রযুক্তি একদিকে যেমন শুধু তরুণদের হাতেও থাকেনি। তেমনি প্রতিটি প্রযুক্তিই হয়ে উঠেছে বহুমাত্রিক। আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে- অনলাইন পরিসংখ্যান পোর্টাল স্ট্যাটিস্টা জানাচ্ছে : ইন্টারনেটে ছবি দেখা, মানচিত্রের ব্যবহার, আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা এবং সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন কাজে পিসির চেয়ে হ্যান্ডহেল্ড ডিভাইসই বেশি ব্যবহার হচ্ছে। একই লোক যে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারে অভ্যস্ত সে ৬৫ শতাংশ সময় ব্যয় করে স্মার্ট মোবাইল ফোনে। আর ইন্টারনেটে ছবি দেখার জন্য এ হারটা আরও বেশি, ৯২ শতাংশ। এরপর জিপিএস ব্যবহার। এ ক্ষেত্রে ৮৬ শতাংশই ব্যবহার হয় স্মার্টফোন। ৬৯ শতাংশ ব্যবহারকারী আবহাওয়ার খবর নেন মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।
এসব তথ্য এটাই বলে দিচ্ছে, তারবিহীন ইন্টারনেট আর স্মার্টফোন ব্যবহার পিসিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবার বিনোদনমূলক বিষয়কে সামনে রেখে বা গুরুত্ব দিয়ে স্মার্টফোনের ফিচার তৈরি করা হলেও এ ক্ষেত্রে কিন্তু ডেস্কটপই এখনও এগিয়ে রয়েছে। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে ও এখনও ডেস্কটপই জনপ্রিয়।

স্মার্টফোন আর তারবিহীন ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সন্ধিক্ষণ পেরম্ননোর বিষয়টি তাই আর ধারণা নয়, বাসত্মবতা। বর্তমান বিশ্বের প্রযুক্তি গবেষণা এগুচ্ছে এই বাসত্মব অবস্থার চাহিদাকে সামনে রেখে। মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইডথ বাড়ানোর অর্থ ই-কমার্সের সাথে যুক্ত এবং অন্য পেশাজীবীরা আর্থিক ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য যাতে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন। এ সুবিধাটি অর্জন করতে পারলেই নিঃসন্দেহে পিসির ব্যবহারকে টপকে যাবে নতুন প্রযুক্তি। এ বিষয়ে প্রধান প্রতিবন্ধকতাগুলোও চিহ্নিত করেছেন প্রযুক্তি গবেষকেরা। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই এরা টুজি প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। আবার ডেস্কটপ এবং ক্যাবলভিত্তিক ইন্টারনেট থেকে যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর স্মার্টফোন ভার্সন তৈরির প্রতিবন্ধকতাগুলোকেও এখন চিহ্নিত করার কাজ চলছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে মানুষের চাহিদার বিষয়টি। কারণ এটাও ঠিক, পাঁচ বছর আগে পিসি থেকে মানুষ যে ধরনের সুবিধা চাইত, এখন নিশ্চয়ই সে ধরনের সুবিধা চায় না। আবার যে আশা নিয়ে এখন তারা থ্রিজি ব্যবহার করছে, আগামী বছরই ঠিক সেখানেই আটকে থাকতে চাইবে না। তবে মূল বিষয় থেকে প্রযুক্তিটি সরছে না, সেই তথ্যের বিষয়টিই প্রধান রয়ে গেছে এবং আরও বহুদিন এ তথ্যই থেকে যাবে প্রধান প্রাধান্যের বিষয়। তবে তথ্যকে নানাভাবে ব্যবহার করা এবং তথ্যকে কার্যকর অর্থনৈতিক ভিত্তির সাথে যুক্ত করাটাই হবে মূল লক্ষ্য ।
অন্যদিক পৃথিবীর কোনো মানুষ যেনো এ নেটওয়ার্কের বাইরে না থাকে এবং তথ্য থেকে বঞ্চিত না থাকে, সেটাও পাচ্ছেন তথ্য সেবাদানকারীরা। ইয়াহু-গুগলের মতো সংস্থাগুলোও নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক তথ্য সরবরাহ কৌশল উদ্ভাবনে তৎপর। শুধু প্রযুক্তি উন্নত হলেই তো হবে না, তা সব ধরনের মানুষের ব্যবহারোপযোগী হতে হবে। প্রযুক্তি ও তথ্য সেবার আওতা বাড়াতে না পারলে মূল সমস্যা যে মিটবে না, তা বলাইবাহল্য। এ নতুন গবেষকদের মাথায় এটা আসছে, যতই প্রযুক্তি অভিনব হয়ে উঠুক কিংবা ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করুক, এখন পর্যন্ত পৃথিবীর অর্ধেক মানুষের কাছেও এ সেবা পৌঁছতে পারেনি। এর একটি কারণ দারিদ্র্য, অন্য কারণ অসচেতনতা। সে কারণে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেও মোবাইলভিত্তিক আইসিটি সেবা পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। সম্প্রতি ইয়াহু টেক্সট ম্যাসেজভিত্তিক তথ্যসেবা সার্ভিস প্রচলনের ঘোষণা দিয়েছে। যেসব দেশে স্মার্টফোনভিত্তিক নেটওয়ার্ক প্রচলনের সম্ভাবনা সহসা নেই, সেসব দেশের মানুষের জন্য এ টেক্সট ম্যাসেজভিত্তিক তথ্যসেবা দান করবে ইয়াহু। এ উদ্যোগের নানা উপযোগিতা আছে। প্রথমত স্বল্পোন্নত দেশের মানুষ যারা তথ্যের জন্য উদগ্রীব, তাদের ন্যূনতম চাহিদা মিটবে। দ্বিতীয়ত ডিজিটাল ডিভাইস দূর হবে। তৃতীয়ত তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। এ ধরনের প্রযুক্তিবিদেরা এও আশা করছেন, আগামী বছর তিনেকের মধ্যে সারাবিশ্ব থেকেই টুজি প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত হয়ে যাবে এবং ডেস্কটপের ব্যবহারও ৫০ শতাংশ কমে যাবে। আর পাশাপাশি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আওতার বাইরে থাকা মানুষের আরও ৩০ শতাংশ যুক্ত হবে বর্তমান ব্যবহারকারীদের সাথে।

কাজেই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না বিরাট সম্ভাবনা এবং আরও বিপুল পরিমাণ তথ্য নিয়ে কাজ করতে হবে প্রযুক্তিবিদ, সেবাদানকারী এবং ব্যবসায়ীদের। এর জন্যই এখন তৈরি হচ্ছেন সবাই। প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রেই তাই দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের বিচিত্র কর্মকা-। বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান যেমন একসাথে মিলছে, তেমনি নিত্যনতুন সম্ভাবনাময় প্রযুক্তির বাজারজাত করার প্রচেষ্টাও লক্ষণীয়।

তবে সবচেয়ে দুর্মর হওয়া উঠেছে অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা এবং ভাষা-সংস্কৃতির বাধা দূর করে দারিদ্র্যসীমিত মানুষকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আওতায় আনার চেষ্টা। বাংলাদেশেও এ চেষ্টা চলছে, তবে গতিটা ততটা প্রবল নয় এখন পর্যন্ত। নানা ধরনের পরিকল্পনা এবং ক্ষুদ্র প্রয়াস দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সেগুলো বড় এবং গণমুখী হয়ে উঠতে পারছে না। মূল সমস্যা সম্ভবত অবকাঠামো এবং আবশ্যিক অন্যান্য শর্ত। যেমন বিদ্যুৎ এবং তথ্য সম্পর্কে সচেতন-প্রশিক্ষিত জনবল নিয়ে সমস্যাই প্রবল। এ বাধাটিও নতুন প্রযুক্তি দিয়ে দূর করার উদ্যোগ একেবারে যে নেই তা নয়, তবে উপযুক্ত প্রয়াস খুবই অপ্রতুল।
যদিও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি তথা ইউএনডিপি অর্থায়ন করছে সাপোর্ট টু ডিজিটাল বাংলাদেশ বা এটুআই প্রকল্পে, কিন্তু সরকারি কোনো ওয়েবসাইটই বলতে গেলে সচল হয়। বাংলাদেশ সরকার ভাগ্যবান, কারণ জাতিসংঘ সহযোগিতা দিচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার প্রচারণা চালাচ্ছে এই বলে- কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, মানবাধিকার, কর্মসংস্থান ও পর্যটনের সব তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে আইসিটির মাধ্যমে। কিন্তু ২০১১ সালে চালু হওয়া www.infokosh.bangladesh.gov.bd ওয়েবসাইটটি হালনাগাদ করা হয়নি। ই-সেবার যে লিঙ্কগুলো আছে সেগুলোতে ঢোকা যাচ্ছে না। অন্যান্য সরকারি ওয়েবসাইটের অবস্থা প্রায় একই। অথচ এটুআই প্রকল্পের যে পরিকল্পনা তা অত্যন্ত মহৎ এবং জনহিতকর। এসব পরিকল্পনা বিশেষত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন, মানবাধিকারের আইসিটি সেবা বাস্তবায়ন করতে পারলে ডিজিটাল ডিভাইড থেকে বাংলাদেশের মানুষ বেঁচে যাবে। নতুন প্রযুক্তির সন্ধিক্ষণ পার হতে পারবে জাতিগতভাবেই। পাশ্চাত্যের সাথে ভাষা মিলিয়ে এ দেশের জনগণ যে চলার উপযুক্ত তার ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে। এখন চাই যথাযথ সুযোক্ষণ।

ফিডব্যাক : abir59@gmail.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৩ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা